হঠাৎ_হাওয়া,২২,২৩

#হঠাৎ_হাওয়া,২২,২৩

(২২)

মায়া রাতের বেলাতেই শাওয়ার ছেড়ে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো,ও এত কঠিন কথা জীবনে কখনো শোনে নি, এভাবে কেউ ওকে অপমান করে নি আর আজ কি না হিমালয়!ওর সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ ওকে সবচেয়ে নির্মমভাবে আঘাত করলো! কথা দিয়ে আঘাত করার চেয়ে বাজে আর কি হতে পারে,প্রায় দু ঘন্টা পর মায়া ভেজা কাপড়েই বেরিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো,এতদিন হিমালয়কে ছেড়ে থাকতে মায়ার যতটা না কষ্ট হয়েছে তারচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে আজ হিমালয় কে দেখার পর,কতটা বিচ্ছিরি ভাবে মায়া কষ্ট দিয়েছে ওকে! ওর মত একটা ব্রাইট ছেলে যে কিনা নিজের কাজের প্রতি এত ডেডিকেটেড ছিল তার জীবনটা ও এভাবে নষ্ট করে দিয়েছে এটাতো মায়ার প্রাপ্য! মায়া খুব শব্দ করে কাদতে লাগলো,
সারা রাস্তা মায়া এতটাই কেদেছে যে সাহিত্য আর বাড়ি ফেরেনি এখন মায়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়ার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ওর বুকের ভেতর টা ছিড়ে যাচ্ছে তবে মায়াকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না, দরজায় হাত দিয়ে দেখলো দরজা খোলা,তবে মায়াকে দেখে ও ভেতরে ঢুকলো না,মাথা নিচু করে বলল,
—মায়া তুই এক্ষুণি ভেজা কাপড় পালটে ছাদে আসবি এই মুহুর্তেই
মায়া কান্না থামিয়ে চুপ করে গেলো,তবে নড়লো না, তোকে ভেজা কাপড়ে বিচ্ছিরি লাগছে তুই প্লিজ …
মায়া তরল গলায় বলল,
—তুই যা আমি আসছি।

মায়াদের ছাদের একপাশে রেলিং নেই সেখানে পা ঝুলিয়ে সাহিত্য বসে আছে মায়া এসে সাহিত্যের পাশে বসলো,মায়া বরাবর উচ্চতা খুব ভয় পেতো এই পাশটায় কখনোই মায়া আসে না অথচ এখন!সাহিত্য অবাক হয়ে মায়ার দিকে তাকালো ওর হাতে তোয়ালে, মাথা দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছস নাকটাও লাল হয়ে গেছে! মায়াকে অসম্ভব স্নিগ্ধ লাগছে,সাহিত্য মায়ার হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে মায়ার চুল ভালো করে পেচিয়ে দিলো তারপর নিঃশ্বাস ফেললো ছোট করে, এবার ঠিক আছে এত সৌন্দর্য দেখা যায় না।
—তুইও শেষমেস দেবদাসী হয়ে গেলি? দেবদাসী এর বাগধারা কি রে? দাসীদের দেবী?
মায়া মাথা নিচু করে রইলো,
—সিগারেট খাবি মায়া? এইটা সিগারেট খাওয়ার পার্ফেক্ট সময় এখন তুই ছ্যাকা খেয়ে আছিস সিগারেট খেয়ে দেখি ভাল্লাগবে।
মায়া মিনমিন করে বললো
—তোর কাছে সিগারেট আছে?
সাহিত্য আড়চোখে তাকালো তারপর কটকট করে বলল,
—এক থাবড়া মারব কানে কিচ্ছু শুনবি না যাস্ট কিচ্ছু না।
মায়া চুপ করে রইলো,সাহিত্য নিজেকে সামলে বলল,
—তুই যে এখানে এসে বসলি যদি পড়ে যাস
—পড়ে গেলে তুই ধরবি না?
—পড়ে গেলে আর ধরে কি হবে, পড়ে গেলে তো গেলিই।
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—একটা গান গাইবি সাহিত্য?
—না।তোর কি মনে হয় এখানে আমি তোকে এন্টারটেইন করতে এসেছি? আমি জোকার
—গাইতে হবে না
—তোর কথা মতো? তোর কথা আমার শুনতে হবে? তুই আমাকে মানা করার কে? তুই মানা করবি আর আমি চুপ থাকব? আমি গান গাইবো অবশ্যই গাইবো চুপ করে শোন,
মায়া জানে সাহিত্য ওর কথা ফেলে না শুধু বুঝতে দেয় না ও এত পাগল কেন!
সাহিত্যের গানের গলা খুব ভালো বরাবরই, ও খালি গলায় গান শুরু করলো

আমার ভিনদেশী তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্পো বলো কাকে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ী
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আদতে আনাড়ী
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি।।
আমার চোখ বেধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতই ভালো
আমি একলাটি পথ হাটি
আমার বিচ্ছিরি এক তারা
তুমি নাও না কথাখানি
তোমার কিসের এতো তাড়া
সে রাস্তা পার হবে
সাবধানি
তোমার গায়ে লাগেনা ধুলো
আমার দু-মুঠো চাল চুলো।।
রাখো শরীরে হাতে যদি
আর জল মাখো দুই হাতে
প্লীজ ঘুম হয়ে যাও চোখে
আমার মন খারাপের রাতে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার আকাশ ছোয়া বাড়ী
আমি পাইনা ছুতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী।।

শেষের লাইনগুলো গাইতে গিয়ে সাহিত্যের কন্ঠ অদ্ভুত ভাবে কেপে উঠলো, মায়া ঠিক বুঝলো। গান শেষ করার বেশ কিছুক্ষণ পর সাহিত্য বলল,
—এই মায়াকে আমি একটুও চিনি না, আমি জানি মায়া দোষ করলে স্বীকার করে ক্ষমা চায়,যেটা মায়ার সেটা মায়া কখনোই ছেড়ে দেয় না আমি যেই মায়াকে চিনতাম সে প্রাণবন্ত একটা মায়া যে কখনো হার মানে না এত সহজে সে ভেঙে পড়তো না,আচ্ছা তুই বল তুই কি আদৌ সেই মায়া আছিস যাকে হিমালয় ভালোবেসেছিল?

মায়া বিস্মিত হয়ে সাহিত্যের দিকে তাকালো,সাহিত্য উঠে চলে গেলো মায়া বসে রইলো সারা রাত সেখানেই বসে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো।

ভোর বেলায় দরজা খুলে হিমালয় দেখলো অর্না দাড়িয়ে আছে, হিমালয় একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
—আমি খুবই দুঃখিত অর্না আমি কাল যেতে পারলাম না, তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।
অর্না সাথে হিমালয়ের পরিচয় হয় বছর দেড়েক আগে, একদিন হিমালয় মাঝরাস্তায় ফিট হয়ে পড়ে যায় অর্না একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায় সেখান থেকে ফিরছিলো ও হিমালয় কে হসপিটালে নিয়ে যায়,তাপর হিমালয় একদিন ধন্যবাদ জানাতে অর্নার বাসায় যায় সেখানে কিছু বাচ্চাদের সাথে অর্নাকে খেলতে দেখে জানতে পারে পাশেই একটা আশ্রম অর্না চালায় এরপর থেকে ওদের বেশ ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

অর্না কিছুক্ষণ হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
—সারারাত তুমি ঘুমাও নি হিমালয়?
—ওই আর কি একটু কাজ করছিলাম?
চারপাশে চোখ বুলিয়ে অর্না দেখলো বাড়িঘর বেশ অগোছালো এলোমেলো এখানে সেখানে জিনিসপত্র ছড়ানো কাচের দরজা টা ভেঙে আছে।অর্না কিছু না বলে ঘর গোছাতে গোছাতে বলল,
—কি কাজ? বাড়িঘর ভাঙাচোড়া?
হিমালয় মাথার পেছনে চুলকে বলল,
—ওই আর কি।
দরজার কাচগুলি ঝাড়ু দিয়ে একপাশে করে কিছু কাচ হাত দিয়ে সড়াতে সড়াতে বলল,
—তোমাকে খুব টেনসড দেখাচ্ছে।
হিমালয় গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,
—মায়া এসেছিলো কাল..
হুট করে একটা কাচ অর্নার হাতে বিধে গেলো,হিমালয় পানি খাচ্ছিলো অর্না উফ শব্দ করে উঠতেই ও ছুটে গিয়ে অর্নার হাত ধরে ফেলল বলল,
—তুমি তো আচ্ছা পাগল এসব তোমাকে কেউ করতে বলেছে?

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

#হঠাৎ_হাওয়া (২৩)

খোলা দরজা দিয়ে মায়া গটগট করে ভেতরে ঢুকে পড়লো, হিমালয় কে অর্নার হাত ধরে থাকতে দেখে ডান ভ্রু উচিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,হিমালয় হাতটা ছেড়ে দিতেই মায়া আনমনে হেসে ফেললো,হিমালয় বুঝতে পেরে আবার অর্নার হাত ধরে বলল,
—এদিকে এসো অর্না আমি তোমার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি,
—আমি ঠিক আছি হিমালয় খুব বেশি কাটে নি।
মায়া এগিয়ে গিয়ে বললো,
—আমার সাথে আসুন অভিজ্ঞ ডাক্তার আছে হাতুড়ি ডাক্তারের আবোল তাবোল ওষুধ লাগালে ইনফেকশন করবে,
হিমালয় আহত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখলো মায়ার পেছনে ধ্রুব দাঁড়িয়ে,
—এক্সকিউজ মি, কে হাতুড়ি ডাক্তার?!
মায়া হিমালয়ের চোখে চোখ রেখে বললো
—আপনি,এই ধ্রুব দেখো তো এই আপুটার হাত টা কেটে গেছে,
মায়া রুম পরিষ্কার করতে থাকলো হিমালয় মায়ার পিছু পিছু ঘুরতে ঘুরতে বলল,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমায় হাতুড়ি ডাক্তার বলো! তুমি জানো আমার রেজাল্ট কি ছিল?আমি কোথা থেকে পিএইচডি করেছি আমার ড্রয়ারে কয়টা জয়েনিং লেটার পরে আছে,ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া?
মায়া ঝাড়ু হাতে হিমালয় দিকে ঘুরে দাড়ালো ওর মুখের সামনে ঝাড়ু নাচিয়ে বলল,
—যেহেতু আপনি কোথাও কর্মরত নন অতএব আপনার ওইসব রেজাল্টের কোনো ভ্যালু নাই।আর এই মুহুর্তে এক্ষুনি যদি সোফায় গিয়ে না বসেন এবং আগামী আধাঘন্টা আমি যদি একটা কথাও শুনি তাহলে বুঝবেন কি হয়, এখন বিদেয় হন।
হিমালয় তাজ্জব হয়ে দাড়িয়ে রইলো,ধ্রুব অর্নার হাত ড্রেসিং করে হিমালয় কে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে বলল,
—তুই তো জানিস এই মেয়ে কেমন দোহাই লাগে এখন কথা কইস না বাপ।
হিমালয় সোফায় গা এলিয়ে কটকট করে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে রইলো,মায়া সুন্দর করে ঘর পরিষ্কার করে ড্রয়িং রুমে এসে টেবিলে থাকা প্যাকেট টা নিয়ে ভেতরে গেলো এবং দশ মিনিটের মধ্যে চা নাস্তা নিয়ে ফিরে এলো,ধ্রুব দ্রুত নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
—সকাল বেলা মায়া আমার বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছে আমি নাস্তাও করি নি, এই বলে খাওয়া শুরু করলো,
মায়া অর্নার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
—আপনি অর্না আপু?
অর্নাও একটু হেসে বলল,
—হ্যা, তুমি মায়া?
মায়া সুন্দর করে হাসলো অনেকদিন পর ওর হাস্যার মধ্যে কান্না পেয়ে গেলো ও পানি আনার নাম করে উঠে রান্নাঘরে এসে কেদে ফেললো,অর্না ওকে চেনে তারমানে হিমালয় ওর কথা বলেছে অর্না মায়াকে কি হিসেবে জানে! মায়া একজন প্রতারক! অর্না মেয়েটা খুব সুন্দর ওর খুব কষ্ট হতে লাগলো! মানুষের এত কষ্ট কেন! মায়া এখানে আসার আগে ধ্রুবের বাসায় গিয়ে অর্নার ব্যাপারে সব খোজ নিয়েছে, মেয়েটার স্বভাব খুব শান্ত একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায় একটা আশ্রম আছে,বিয়ের দু বছরের মাথায় এক্সিডেন্ট করে হাজবেন্ড মারা যায় পালিয়ে বিয়ে করেছিলো বাপের বাড়ি শ্বশুর বাড়ি কোথাও জায়গা হয় নি মেয়েটার,এই এত বড় পৃথিবীতে এই মেয়েটার আপন বলতে কেউ নেই! এখন হিমালয় ওর একমাত্র বন্ধু।মায়া চোখ মুছে পেছনে ফিরতেই দেখলো হিমালয় অসহায় দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
—কাদছ কেন?
মায়া কিছুক্ষণ কঠিন চোখে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো, মনে মনে পঞ্চাশ টা গালি দিলো, কেন দিলো মায়া তা জানে না ওর খালি মনে হচ্ছে এই লোকটা হচ্ছে মহা বদ, বদের বাপ সব কষ্টের কারণ এই লোকটাই,মায়া রান্নাঘর বেরিয়ে যেতে লাগলেই হিমালয় মায়ার হাত ধরে ফেললো,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার কথার জবাব না দিয়ে চলে যাও,
মায়ার কি হলো ও সমস্ত রাগ অভিমান নিয়ে হিমালয়ের গালে একটা চুমু খেলো তারপর জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিলে ইচ্ছে করে অনেক বড় একটা দীর্ঘশ্বাস হিমালয়ের মুখের সামনে ছেড়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো এই তো মায়া সেই পাগল মেয়েটা যে কখন কি করে কেউ জানে না!

মায়া ঘর লক করে সোফায় বসে আছে ধ্রুব অর্নাকে বাসায় পৌঁছে দিতে গেছে হিমালয় অস্থির হয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে আর কিছুক্ষণ পরপর মায়ার সামনে এসে দাড়িয়ে বলছে
—চাবি দেবে কি না বলো
মায়া এই প্রশ্নের উত্তর আগেও বহুবার দিয়েছে এখন আর ওর ইচ্ছে করছে না, হিমালয় তেড়ে মায়ার কাছে এসে ওর হাত ধরে টেনে তুলে ওর কোমর জাপটে ধরে বলল,
—তোমার ভয় করে না? তুমি জানো আমি কি করতে পারি?
মায়া দুহাতে হিমালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—আপনি নিতান্তই ভদ্র মানুষ আমি জানি আপনি অনেক কিছুই পারেন কিন্তু কিছুই করবেন না, বরং আপনি ভয়ে আছেন আমি না কিছু করে ফেলি

হিমালয় সরু চোখে চাইলো,মায়া খুব শান্ত সহজ ভঙ্গিতে বলল,
—আপনি একজন ওয়েল কোয়ালফাইড ডক্টর আপনি কেনো বলুন তো এরকম পাগলামি করছেন? আপনি জানেন কত অসহায় মানুষের আপনাকে দরকার?
—হ্যা জানি তাতে কি জানলেই সবকিছু করতে হয়?আমার অসহায়তার কথাও অনেকে জানতো তারা কি করেছে?
মায়া মাথা নিচু করে ফেললো এক হাতে হিমালয়ের শার্টের বোতাম নাড়তে নাড়তে বলল,
—সবাই পাগল হলে আপনিও পাগল হবেন? সবাই গু খেলে আপনিও গু খাবেন?
—খাবো
মায়া হেসে ফেললো
—আপনি চাইলেই কিন্তু সামনের মাস থেকে ধ্রুবদের হসপিটালে জয়েন করতে পারেন, আর সেখানে তো আবির ভাইও আছে
—আমি চাই না
মায়া এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—কেন, কেন চান না? আপনি চাইলেই সব হবে? হু? আর কারো চাওয়ার কোনো দাম নেই? সব আপনার ইচ্ছা মতো?আপনি কেন বাসায় যান না? আঙ্কেল আন্টির ফোন রিসিভ করেন না? আপনার কোনো বন্ধু বন্ধবের সাথে যোগাযোগ করেন না, কেন?
—আমি চাইলেই সব হয় নাকি?আমি চেয়েছিলাম একটা মেয়ের তুমুল ভালোবাসা হতে আমি চেয়েছিলাম বাবা মায়ের সবচেয়ে ভালো সন্তান হতে আমি চেয়েছিলাম একজন বেস্ট ডক্টর হতে একটা ভালো বন্ধু হতে, এর কোনোটাই আমি কেন হতে পারলাম না মায়া?
মায়া মাথা নিচু করে ফেললো,
—তার জন্যে তো আমি ক্ষমা চেয়েছি আমার দোষ সব আমার ভুল আমি অন্যায় স্বীকার করছি তো,
—তাতে কি? আমি কখনোই এমন একজন দুর্বল মনের মানুষের সাথে আর নিজেকে জড়াবো না যে মাঝ পথে আমাকে ছেড়ে দেয়, সেদিন তোমায় আমি কতবার বলেছিলাম মায়া আমাকে বলো সমস্যাটা কোথায় আমি সব ঠিক করে দেব শুনেছিলে তুমি? কিচ্ছু শোনো নি, বন্ধ দরজার ভেতরে আমি তোমার পায়ে পর্যন্ত পড়েছিলাম তুমি বোঝো নি! তুমি আমাকে কখনোই বোঝো নি মায়া, তুমি মায়ের আবেগী কথায় বোকামি করে ফেললে আবেগ দিয়ে জীবন চলে না মায়া কখনোই না,আমি আর আগের হিমালয় নেই। অতএব এখন আমিই তোমাকে বলছি তুমি ফিরে
যেতে পারো কোনো বাধা নেই।
মায়া এবার উত্তেজিত হয়ে বলল,
—কোথায় ফিরে যাবো আমি! কোত্থাও যাবো না আপনি আগের হিমালয় ই আছেন আপনি আমার হিমালয়, আমার মহারাজ আপনি।
—এখন আর তোমাকে এসব পাগলামি তে মানায় না আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো ঠিকই বাচতে পারো, তুমি ঠিকই আছো মায়া শুধু আমার জীবন টা হঠাৎ করে এসেই গতি বদলে দিয়েছো
—মহারাজ…
হিমালয় মায়ার ওড়নার আচল থেকে চাবিটা খুলতে খুলতে বলল,
—আমার একটা নাম আছে সেটাতেই ডাকবে, আর অর্না খুব অসহায় ওর খুব আকড়ে ধরার স্বভাব, এই দুনিয়াতে আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই যাকে আকড়ে ও বাচতে পারবে, আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি ও আমায় ছেড়ে যাবে না,ওর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমি ছাড়া ওর কোনো দুর্বলতা নেই অর্না আবেগী নয় বাস্তব বুঝে ও হাল ছাড়বে না।

মায়া স্তব্ধ হয়ে গেলো, হিমালয় চাবি নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো মায়া ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here