স্যার I Love You,পর্ব_০৫,০৬

#গল্প_ স্যার I Love You,পর্ব_০৫,০৬
#লেখিকা_ শারমিন আক্তার বর্ষা
#পর্ব_০৫

স্যার– আপনাকে আমি কোথায় জেনো দেখেছি..

আমি– সকালেই তো দেখলি আর কি ঝগড়া টাই না করলি!
আর এখন ভাব ধরা হচ্ছে যে কিছুই মনে নাই!
(মনে মনে) (গত পর্বে)

স্যার– সকাল বেলা যে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদাপানিতে ফেলে দিছিলাম তার জন্য সরি! (সরি বলে মাথা নিচু করে রইলাম)

স্যার– হ্যা তাইতো আপনিই তো সেই মেয়েটা

আমি– স্যার আইএম সরি স্যার প্লিজ আম্মুর কাছে কমপ্লেন করবেন না প্লিজ স্যার!

স্যার— ইট’স ওকে! আপনি সরি বলছেন এটাই অনেক! আর আমি কারো নামে কমপ্লেন করা পছন্দ করি না! নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবেন এমন কারো সাথে করবেন না!

আমি– ওকে স্যার ধন্যবাদ! স্যারের প্রতিটা কথায় জেনো আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি! কি সুন্দর করে কথা বলে আর আপনি আপনি বলছে এত সম্মান আমাকে আগে আর কোনো স্যার দেয়নি
(মাথায় একটা আসতে করে চাটা মারলাম কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি)

আম্মু– আসবো বাবা?

(স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো!)

স্যার–আরে আন্টি আসুন না এটা তো আপনারই বাড়ি পারমিশন নেওয়ার কি আছে!

আম্মু– নাও বাবা পড়াতে পড়াতে কিছু খেয় নেও!

স্যার– আন্টি এত কিছু আনার কি ধরকার ছিলো?

আম্মু– বাবা এইসব তো কিচ্ছু না!

স্যার– আন্টি আমাকে এইসব আর দিবেন না প্লিজ আমি এখানে খেতে আসি না পড়াতে আসি,, যেদিন এমনি আসবো সেদিন না হয় খেতে দিবেন এখন শুধু কফি টা দিন! ( মৃদু সুরে বললো)

( মনে হলো কোকিল যেনো কুহু কুহু করছে)
ভাবনা থেকে বের হয়ে আমি– উনি কি সত্যিই এত ভালো নাকি নাটক করছে? যাই হোক আসতে ধীরে জানতে পারবো!

স্যার– তাছাড়া আন্টি আমি পড়াশোনার সময় খাওয়া দাওয়া একদম পছন্দ করি না কফির মগটা হাতে নিয়ে বললো!
আপনি প্লিজ কষ্ট পাবেন না!

আম্মু– ওকে বাবা! সায়েমা খাবার ট্রেটা নিয়ে কিচেনে রাখো!

আমি অনেক উঁকিঝুকি দিলাম বসে থাকার জন্য কিচ্ছু দেখতে পেলাম না আম্মু কি কি আনছে তাই বলেই উঠলাম–
আমি– আম্মু আমাকে কিছু একটা দিয়ে যাও আমি খাবো খুব সুন্দর স্মেইল আসছে!

স্যার– একদম না! পড়তে পড়তে খেলে সব খাবারের সাথে গিলে খেয়ে ফেলবেন!
আন্টি কিচ্ছু দিবেন না পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত!

আমার আম্মুও ফাজিল স্যারের সাথে তাল মিলালো!

আম্মু– ঠিক বলেছো বাবা! খেতে খেতে পড়ে তাই তো পড়াশোনা কিচ্ছু মনে থাকে! পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিচ্ছু পাবি না!

আমি– আম্মু একটা একটা একটা প্লিজ!
যাহ চলে গেলো
সব এই বজ্জাত স্যারের জন্য!

স্যার– কফি খাচ্ছে আর হাসছে! ( হাহাহা)

আমি– হাসিটা কি সুন্দর হাসলে কত কিউট লাগে
ধুর আবারও কি ভাবছি (মনে মনে)

আমি– আপনি ৩২টা দাঁত বাহির করপ বেটকাচ্ছেন কেনো?

(ইচ্ছে করছে একটা পাঞ্চ মেরে ৩২টা দাঁত ফালাই দেই কিন্তু সেটা তো করতে পারবো কারণ অত শক্তি আমার নাই ১টা দাঁতই ফালাইতে পারমু না আর কোই ৩২টা) এবার ভাবনার সাগর থেকে বের হই!

স্যার– হাসি থামিয়ে– এটা আপনার শাস্তি আমাকে সকালে কাঁদায় ফেলে দেওয়ার জন্য!

আমি– আপনি না কমপ্লেন করা পছন্দ করেন না তাহলে?

স্যার– কমপ্লেন কখন করলাম,,, ভুলের শাস্তি দিলাম!

আমি– আমার সাথে বজ্জাতগিরী,,,
দেখাচ্ছি মজা বজ্জাত স্যার কোথাকারের!
(মনে মনে)

আমি– স্যার আমার কলমের কালী শেষ! আপনি কি একটু কষ্ট করে আমাকে ওই টেবিলের ২নাম্বার ডয়ার থেকে একটা কলম এনে দিবেন প্লিজ!🥺

স্যার– ওকে আপনি বসেন,, আমি এখুনি এনে দিচ্ছি!
(স্যার খুঁজছে তো খুঁজছে!)

কোথায় ইতি এখানে তো আপনার কোনো কলম নেই!

আমি– নেই মানে কি স্যার আমি এখুনি আসছি! স্যারের সামনে গিয়ে স্যারের পায়ের উপরে পা দিলাম ইচ্ছে করেই হিল জুতো পরে ছিলাম শেষ স্যারের পা!
একটু খোঁজার এক্টিং করলাম,,, পরে বললাম কোই এখানে নাই তো অন্য কোথায় আছে হয়তো!

স্যার আর সহ্য করতে না পেরে!

স্যার– আআআআআ

আমি– কি হইছে স্যার আপনি ঠিক আছেন তো?

স্যার– ইতি আপনি আমার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছেন!

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি– ওও হ্যা তাইতো এমন একটা ভাব ধরি যে আমি কিছুই জানি না🥺

আমি– সরি স্যার আপনার বেশি লাগেনি তো?

স্যার– আহহ আহহ আহহহ করছে

আমার তো প্রচুর হাসি পাচ্ছে অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছি!

স্যারের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি স্যারের পা লাল হয়ে গেছে!
স্যার অনেক সুন্দর তাই লাল স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে!

আমি দৌঁড়ে নিচে আসলাম আর ফ্রিজ থেকে বরফ নিলাম আবার এক দৌঁড়ে রুমে আসলাম!

পরে নিজেই স্যারের পায়ে বরফ লাগিয়ে দিলাম!

আমি– সরি স্যার!

স্যার– ইট’স ওকে ইতি..!

প্রায় ১০ মিনিট পর—
আমি স্যার এখন কেমন লাগছে ব্যাথা কমছে?

স্যার– ধন্যবাদ আপনাকে! অনেকটাই কমে গেছে!
এখন চলুন পড়তে বসুন!

আমি– স্যার আপনি বাড়ি চলে যান,, কালকে পড়াতে আসবেন আর বাকিটা আমি পড়ে নিবো!

স্যার— না না! আজকের পড়া আজকেই পরতে হবে হাজার কষ্ট হলেও আমি কথা দিলে সেটা রাখি কথার খেলাফ করি না! আপনার আব্বুকে কথা দিয়েছি আর আমার কথা ভাঙতে পারবো না!

আমি জেনো আরও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি স্যারের প্রতি এত সৎ এখনো মানুষ আছে!

২ঘন্টা পড়ানো শেষ হলেই স্যার এখন চলে যাবে!

আমি স্যারকে বাড়ির গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যাই!

আমি চলে আসবো তখন–
স্যার– ইতি!
আমি পিছনে ঘুরে তাকাতেই উনি বললেন!

— আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই আমার পায়ের উপর পা দিয়েছিলেন! আপনাকে আগে যতগুলো স্যার পড়িয়ে ছিলো তারা ৩/৪ দিনের মধ্যে চলে যেতো আর আসতো না কেনো? সেটা জানার জন্য আমি তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তারা আমাকে সবটা বলেছিলো আর আপনাকে পড়াতে আসতে বারণও করে ছিলো! তবুও আমি আসছি কারণ আমরা মধ্যবিত্ত আমার বাবা নেই মা আর আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি একটা জব খুজছিলাম সেটা পাচ্ছিলাম না আর তখন আপনার বাবা বললো আপনাকে পড়ানোর কথা তাই আমি রাজি হয়ে যাই!
একেবারে কিছু না করার থেকে কিছু একটা করা ভালো!
সব কিছুর পর আজকে আমার একটা কাজের অফার আসছিলো অনেক খুশি ছিলাম আপনাকে চিনতাম না তবুও ভাগ্য সেই আপনার সাথে দেখা করিয়ে দেয় আর আপনি আমাকে কাঁদায় ফালিয়ে দেন! যে কারণে আমি ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারিনি! একটা অফার আসছিলো কাজের সেটাও চলে গেলো!
এখানে পড়াতে এসে দেখি আপনি আপনাকে যে পড়াবো শান্তি মতো এটা ভাবিনি তাই হলো আমার মা অসুস্থ আর মাকে সুস্থ করার জন্য টাকা প্রয়োজন!
আমি বুঝেছিলাম আপনি সকালে যেটা করেছিলেন সেটা ইচ্ছে করে করনেনি আপনার কলেজের জন্য লেইট হচ্ছিল তাই করেছিলেন!
কিন্তু এখন ইচ্ছে করে করেছেন!
আমি রাগ করিনি কারণ আমাকে আঘাত করে আবার আপনি নিজেই আমার আঘাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছেন!

আপনাকে দেখে এটা তো বুঝেছি, আপনি কাউকে কষ্ট দিলে তার চাইতে বেশি কষ্ট আপনি নিজে পান তাই
রাগ কনট্রোল করে ভেবে চিন্তা করে কাজ করবেন!
যাতে পরে নিজের কষ্ট পেতে না হয়!

চিন্তা করবেন না,, আমি এইসব কথা গুলো কাউকে বলবে না!
আসি!
ভালো থাকবেন,,, আল্লাহ হাফেজ…!
“আসসালামু আলাইকুম”

আমি কিছুই বলতে পারলাম না!
দুই চোখ বেয়ে অজড়ে পানি পরছে!
এইভাবে কেউ কখনো বলেনি কারো কথায় কখনো এত কষ্ট পাইনি!
কিন্তু স্যার যা বলে গেছে সবই তো সত্যি!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম চুপ করে
আর চোখ বেয়ে পানি পড়ছিলো
কিছুক্ষণ পর সায়েমা আন্টি আমার পিছনে দাড়িয়ে বললো–
আন্টি— ইতি মামনি তুমি এখানে এত রৌদ্রে কেনো দাঁড়িয়ে আছো বাড়ির ভেতরে চলে!

আমি কিছু না বলে বাহিরে থেকে সোজা রুমপ চলপ এলাম আর ঠাসসস করে রুমের দরজা আটকে দিলাম!
বিছানায় শুয়ে বালিশ চেপে কাঁদতে লাগলাম..!

.
চলবে?

#গল্প_স্যার_I_Love_You
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
#পর্ব_০৬
আমি কিছু না বলে বাহিরে থেকে সোজা রুমে চলে এলাম আর ঠাসসস করে রুমের দরজা আটকে দিলাম!
বিছানায় শুয়ে বালিশ চেপে কাঁদতে লাগলাম।
এই প্রথম কেউ আমার ভুল গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো!
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি তাই রাতে কেউ আর ডাক দেয়নি!
আম্মু রাতে রুমে খাবার রেখে গিয়েছিল হয়তো ভেবেছিল রাতে যখন ঘুম ভাঙবে উঠে খেয়ে নিব!

কিন্তু রাতে আর ঘুম ভাঙ্গেনি।

সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে ছিলাম সেজন্য খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে যায়,,, ঘুম থেকে উঠে দেখি আযান দিচ্ছে!

আযান শুনে আর শুয়ে থাকতে পারিনি জানি না কিভাবে বিছানা থেকে উঠি ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লাম!
নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলাম আমার সব ভুলের জন্য মোনাজাতেই কান্না করে দিলাম!

নামাজ শেষ করে কিচেনে গেলাম এক কাপ কফি বানালাম কফির মগ নিয়ে রুমে ডুকে বারান্দায় চলে গেলাম!

কি সুন্দর সকাল অন্তর জুড়িয়ে যায় মিষ্টি মিষ্টি রোদের আলো হালকা বাতাস অনেক দিন পর এত সকালে উঠলাম! সত্যিই সকাল সুন্দর!

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর নিচে চলে গেলাম গিয়ে দেখি!

আম্মু আর খালেদা আন্টি কিচেনে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে আমাকে দেখে আম্মু

আম্মু– কিরে তুই আজ এত সকালে কিভাবে উঠলি সূর্য কোন দিকে উঠছে।

আমি– আম্মু আমি তোমাকে নাস্তা বানাতে হেল্প করবো কি ( একটু হাসি দিয়ে)

আম্মু আর খালেদা আন্টি— কিহহহহ।

খালেদা– বড় আফা আমি কি ঠিক শুনতাছি নাকি?

আম্মু– আমিও তাই ভাবতেছি রে খালেদা।

আমি– কি এমন বললাম যে তোমরা দুজনে হা করে তাকিয়ে আছো।
আমি কি তোমাদের হেল্প করতে পারি না নাকি?

আম্মু আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার দুই গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলো আর বললো!

আম্মু– তোর কিচ্ছু করতে হবে না,, আমার সোনা মা তোর রান্না করতে কষ্ট হবে তুই রুমে গিয়ে পড়তে বস আমি আর খালেদাই পারবো তুই যে বলছিস তাতেই আমার অন্তর জুড়াই গেলো! আমাকে জড়াই ধরে কিছুক্ষণ চোখের তিতা পানি ফেললো

আমি– কি আম্মু কোনোদিন কিছু করি না বলে এত কথা বলো আর আজ করতে চাচ্ছি তুমি মানা করছো।

আম্মু– আচ্ছা যা ওই পিঁয়াজ গুলো কুঁচি কুঁচি করে কেটে দে.

আমি– ওকে ২ মিনিটে করে দিচ্ছি

২ মিনিট কি ৫ মিনিট পর!

আম্মু– কিরে তোর কাটা হয়নি এখনো? ( বলে পিছনে তাকিয়ে আম্মু অবাক)

খালেদা হিহিহি করে হাসছে।

আমি এদিকে ১টা পিঁয়াজ ও কাটতে পারি নাই।
চোখের জল নাকের জল মিলেমিশে একাকার

আম্মু আর খালেদা আন্টি দুজনে আমার এই অবস্থা দেখে জরে জরে হাসছে।
তাদের হাসির শব্দ বাহিরে ডায়িং রুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে,, তাদের হাসির শব্দ শুনে আব্বু নিউজ পেপার টা টেবিলের উপর রেখে,, কিচেনে এসে দেখে আমার এই অবস্থা আর তারা হাসছে!

আব্বু– চুপ করে তোমরা আমার মেয়েটা কাঁদছে আর তোমরা হাসছো? (আমাকে কাঁদতে দেখে আব্বু অনেকটা রেগে গেছে আর আব্বুর ধমক শুনে দুজনেই চুপ হয়ে গেছে)

আব্বু আমার কাছে এসে– তুমি এসব কেনো করছো মামনি উঠে নিজের কি অবস্থা করছো মামনি!

তোমাকে এসব করতে কে বলছে (আম্মুর দিকে তাকিয়ে)

খালেদা– স্যার আমরা কিচ্ছু বলি নাই ইতি মামনি নিজের ইচ্ছে তেই এসে বলছিলো বড় আফাকে হেলেপ
করবে!.

আব্বু– ওইটা হেলেপ না খালেদা ওটা হেল্প বলো হেল্প!

খালেদা — হেলেপ।

খালেদা আন্টির কথা শুনে আমি আর না হেসে থাকতে পারলাম তাই একটু হেসে দিলাম..
সবাই হাসছে.

তোমরা বাপ মেয়ে যাও বের হও আমাদের কাজ করতে দাও অনেক হইছে হাসিঠাট্টা!!! (আম্মু)

আজকে আমার ইতি মামনি নাস্তা বানাতে চাইছে তাই আজ ইতিই নাস্তা বানাবে,,,
তোমরা দু’জন বাহিরে যাও আর নয়তো গিয়ে টিভি দেখো।।

আমি– কিন্তু আব্বু আমি… ( আব্বু আমাকে আর কিছু বলতেই দিলো না নিজেই বলতে লাগলো)

আব্বু– আজ আমি আর আমার মামনি দু’জনে মিলে নাস্তা বানাবো যাও তোমরা

আমি– আব্বু তুমি পারবে?

খালেদা আন্টি– স্যার আপনি আর রান্না

আম্মু তো মহা খুশি….

আম্মু– ওকে চল খালেদা। (দুজনে চলে গেলো)

আব্বু আর আমি নাস্তা বানাচ্ছি পৃথিবীর বেস্ট ফিলিংস নিজের আব্বুর কাছ থেকে প্রথম রান্না শেখা
আমি অনেক খুশি! (প্রতিদিন দুষ্টামি ফাজলামি করে দিন পার করে দেই কিন্তু আজ মনে হচ্ছে জীবনটা নতুন ভাবে নতুন অধ্যায় থেকে শুরু হইছে সারাজীবন যেনো এমনই থাকে মনে মনে বললাম)
আব্বু আমাকে নিজের হাতে সব শিখিয়ে দিচ্ছে আমাদের নাস্তা বানানো প্রায় শেষের দিকে অনেক কিছু বানাচ্ছি আমি আর আব্বু মিলে

ওই দিকে —
আম্মু আর খালেদা আন্টি বসে বসে টিভি দেখছে!

খালেদা– আফা আমি একটা বার গিয়া দেইখা আহি ওনারা কি করতাছে আল্লাহই জানে আমার খুব ভয় লাগতাছে যদি উল্টাই পাল্টায় ফালায়

আম্মু– আরে খালেদা তুই তো জানিসই না তোর স্যার সব ধরনের রান্না পারে,, দেশি বিদেশি সব!
আমার মধ্যে যখন ছোট্ট ইতি প্রবেশ করে ছিলো তখন আমি বুঝিনি কিন্তু ওও ঠিক বুঝতে পেরেছিল আর তখন থেকেই আমার খেয়াল রাখত ৩মাস পর টেস্ট করাই রিপোর্ট পজিটিভ আসছিলো উনি তো খুশিতে হাত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো!
তারপর থেকে আমারে কিচেনে প্রবেশ করতে দেয়নি নিজেই সব করতো রান্না বান্না বাড়ির দেখ শোনা প্লাস আমার খেয়াল রাখা কখন কি লাগবে কি না লাগবে কি খেতে হবে প্রতিদিন একেক ধরনের খাবার বানাতো আর নিজের হাতে খাইয়ে দিতো আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম বাড়িত থেকে কেউ মেনে নেয়নি আমাদেরকে তাই পালাতে বাধ্য হই কিন্তু কেউ তার পরে আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি আজ উনি এতো বড় Business man হয়েছে শুধু আল্লাহর রহমতে আর উনার কষ্টের জন্য সারা রাত জেগে কাজ করতেন আর দিনে আমার সেবা করতেন দেখতে দেখতে ১০মাস চলে যা ইতির ও জন্মানোর সময় হয়ে যায় ইতি হওয়ার পর আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি! আল্লাহর রহমত আমাদের ইতি সেদিন সর্ব প্রথম ইতিকে ওর বাবাই কলে নিয়েছিলো আর নাম দিয়েছিলো ইতি… তার কষ্টের দিন শেষ আজ থেকে তোর হাত ধরে আমাদের সুখের দিন বলে ইতির কপালে চুমু দেয় ইতির ২বছর পর্যন্ত উনিই রান্না করতেন আর আমাকে ইতির দেখাশোনা ২মিনিট ও একা রেখে যেতে পারতাম না কোথাও…
তাইতো দেখিস না মেয়ে বলতে প্রাণ মেয়েকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না! কখনো আমাকে আমার ফ্যামিলির অভাব বুঝতে দেয়নি অনেক ভালোবাসে আমাদের আর আমরাও উনাকে অনেক ভালোবাসি উনার মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া।

খালেদা আন্টি আম্মুর কথা শুনতে শুনতে কান্না করে দেয় আর আম্মুও চোখের কোনায় থাকা জল টা মুছে নেয়!
তুই কাঁদছিস কেনো পাগলি আর শোন এই ব্যাপারে কিছুই জেনো ইতি জানতে না পারে! ইতি এই সব ব্যাপারে কিচ্ছু জানে না!

খালেদা আন্টি–ঠিক আছে!
( আবার টিভি দেখতে থাকা)

এই দিকে আমাদের নাস্তা রেডি আমি খুশিতে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
অনেক আইটেম বানিয়েছি আমরা সব গুলো খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম বাহ কেমন একটা ফিলিং আসতাছে এখন প্রথম রান্না বলে কথা।

(আইটেম গুলার নাম বলমু না আইটেমের নাম শুনে যদি তোমরা খেতে চাও তাই)

আমি– আম্মু আমাদের শেষ খেতে আসো!

আম্মু আর খালেদা আন্টি তো অভাক এত কিছু তাদের চোখ কপালে।

আব্বু– আমার মেয়ে প্রথম রান্না করছে খেয়ে দেখো!

সবাই খেতে খেতে অনেক প্রশংসা করলো আমার!
কিন্তু সব কিছু তো আব্বুই করেছে আমি তো শুধু
আমি আব্বুর প্রশংসা করলাম আব্বু বললো আমি কি করলাম সব তো তুমিই করলে।

আমি উঠে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম আর নাস্তা শেষ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম!!

স্যার আবার ঘুরছে নতুন ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আর চাকরির জন্য…!

কলেজের ক্যাম্পাসে বসে আছে সব গুলা ওদের দেখে আমিও গেলাম ওদের কাছে—–…!

রুবেল মুন্নী– কিরে তুই এত আগে আজ কিভাবে আসছি?
বাকি তিনজন কি চুপ থাকবে নাকি ওরাও বলছে।

আমি ভদ্র মেয়ের মতো ওদের কথার উত্তর দিলাম!

নাঈম আর মিম- কিরে তের ওই প্রাইভেট টিচারের কি খবর কি করলি ওনার সাথে নাকি কিছুই করিসনি।

আব্রু– আমাকেও বল!
(আর্জিনা নাম বাধ দিয়ে এখন আব্রু দিলাম,, আমার বেস্টির নাম তো দুইটা তাই আর্জিনা বাদ দিয়ে আব্রু দিতে বলছে তাই আমিও দিলাম)!

আগেই বলে দেই রুবেল আর মুন্নী বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড আর নাঈম আর মিম ওরাও গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ডেট করছে ওরা আর আব্রু বেচারি আমরা মতোই সিঙ্গেল।

আমি– ওদের সব গুলো বললাম ওই যে রামছাগল যাকে ধাক্কা দিয়া কাঁদায় ফালাইয়া দিছিলাম ওই ছেরাই আমার স্যার।

রুবেল মুন্নী নাঈম মিম—- কিহহহহহহ।

আব্রু– What a Coincidence.!
স্যারটা কেমন Handsome নাকি রে? (আর্জিনা নাম বাধ দিয়ে এখন আব্রু দিলাম,, আমার বেস্টির নাম তো দুইটা তাই আর্জিনা বাদ দিয়ে আব্রু দিতে বলছে তাই আমিও দিলাম)!

আমিও কিছু না বুঝেই বলে ফেললাম।
আমি– তা তো অবশ্যই যা কিউট আর হ্যান্ডসাম।

আমার কথা শুনে ওরা পাঁচ জনের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া অবস্থা।

আমরা বুঝতে সময় লাগেনি হায় আল্লাহ আমি কি বললাম( দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম)

সবাই এক সাথে– অনেক হ্যান্ডসাম তাই নারে।

আমি কি বলবো এই প্রথম কোনো ছেলের প্রশংসা করলাম তাই মাথাটা নিচু করেই রাখলাম কতক্ষণ আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওরাও সবাই চুপ হয়ে গেলো!
তারপর সবাই মিলে কলেজের ভেতরে গেলাম!
৬জন একসাথে আমিই সবার আগে দলের লিডার বলে কথা!

তারপর ওই সব মানুষের কাছে গেলাম যাদের সাথে দুষ্টামি ফাজলামি করেছিলাম যাদের যাদের কষ্ট দিয়েছিলাম সবার কাছে গিয়ে সরি বললাম ক্ষমা চাইলাম
সবাই খুশি হয়ে মাফ করে দিলো তারপর সকল টিচার্সদের কাছেও গেলাম তাদের সাথে কখনো ফাজলামো করি নাই তবুও তাদের কাছেও ক্ষমা চাইলাম!
সবাই তো অভাক এক রাতে কি এমন হলো ইতি পুরাই চেঞ্জ হয়ে গেলো!
সবাই ক্লাসে গেলাম কলেজ ছুটি কলেজের বাইরে গেইটের সামনে সবাই এক সাথে কি হয়েছে তোর তুই এতটা চেঞ্জ হলি কিভাবে?

আমি– ওদের কিছুই বললাম না শুধু বললাম তোদের আমার সাথে কোথাও যেতে হবে!

ওরাও সবাই রাজি হয়ে গেল!
তারপর সবাই এক সাথে আমার গাড়িতে উঠলাম আর ওরা ওদের গাড়িগুলো কে বাড়ি চলে যেতে বলে ড্রাইবাররা চলে যায়!

আমরাও যেতে থাকি.!

সবাই আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছে আমি কিছুই বলছি না!!
গাড়ি চলছে তো চলছেই,

গাড়ি থামাতে বললাম ড্রাইবার আঙ্কেল গাড়ি থামলেন!

সবাই গাড়ি থেকে নামলাম তারপর এক এক করে ওই ১০টা স্যারের বাড়ি খুঁজে তাদের বাড়ি গেলাম তাদের সবার কাছে আমার আগের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলাম তারাও অনেপ খুশি হয়ে ক্ষমা করে দিলেন!
এইভাবে যত মানুষের সাথে দুষ্টামি ফাজলামি করেছিলাম সবার কাছে ক্ষমা চাইলাম আমার বাড়ির আশে পাশের সবার থেকে ক্ষমা চাইলাম!
ওরা ৫জন আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছে না সবাইকে সরি বলা শেষ!
ড্রাইবার আঙ্কেল ও অনেক অভাক হয়েছেন!
বুঝতেই পারছি.!

আমি– তোদের তো খিদে লাগছে চল আমার সাথে!

সব– কোথায়!

কিছুই বললাম না আবার গাড়িতে উঠে চলে এলাম
একটা রেস্টুরেন্টে ভেতরে ডুকলাম ড্রাইবার আঙ্কেল আমাদের সাথে আসতে চায়নি কিন্তু আমিও ছাড়িনি জোর করে নিয়ে আসছি!
ড্রাইবার আঙ্কেলকে আমাদের বাড়িতে আমি ছোটে থেকেই দেখে আসছি আর আমাকে অনেক আদর করেন ছোটো থেকেই আমাদের ফ্যমিলির এক জন বলতে পারেন

ওরা সবাই খাচ্ছে আর আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!

আমি– কিছু কি বলতে চান আপনারা সবাই?

সব কয়ডা এক সাথে– এইসব কিছু কিভাবে সম্ভব আমাদের বল তুই এত চেঞ্জ.. কে করলো তোকে?
ড্রাইবার আঙ্কেল– আমিও অনেক অভাক হয়েছিল মামনি তুমি আজ কোনো দুষ্টামি ফাজলামি করো নাই আর যাদের যাদের সাথে করেছিলো তাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছো!

আমিও তাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম–

কাল স্যারের সাথে যা যা করেছি আর স্যার যাওয়ার আগে যা যা বলে গেছেন কানতে কানতে ঘুমাই গেছিলাম ওইটাও কইছি

সব গুলা– ওও নতুন স্যার আসতে না আসতেই তোকে চেঞ্জ করে ফেলছে বাহ স্যার তো মনে হয় জাদু জানে
ড্রাইবার আঙ্কেল– শাওন বাবা ছেলেটা অনেক ভালো তোমরা দেখলে বুঝবা! ইতি মামনি তুমি এখন যেমন আছো তেমনই সবসময় থেকো আর দুষ্টামি ফাজলামি কেনো করবা না এখনই তো এইাব করার বয়স কিন্তু কারো মনে কষ্ট দিয়ে কিছু করো না! ( বলে আঙ্কেল আঙ্কেল চলে গেলেন কারণ উনার খাওয়া শেষ)

মুন্নী, রুবেল, আব্রু, মিম, নাঈম— কুছ কুছ হোতা হে ইয়ার!

তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ওদেরকে ওদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাড়ি চলে এলাম!

.
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here