স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ। (পর্ব-২২)

#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি।
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ। (পর্ব-২২)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

ঘড়ির কাটায় রাত দশটা। তারাবির নামাজ শেষ করে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে মুশরাফা। জিনিসপত্রের স্তুপ জমেছে ভেতরে। পাতিল, প্যান, কড়াই, বক্স, চুলো, ঝার, কার্টুন ভরতি ডিনার সেট, থালা বাসন, ছু/ রি, চা/ মচ, পিড়ি-বেলুন, রেক, পেঁয়াজ, রসুন, মসলার প্যাকেট, চালের বস্তা, আটা ময়দার প্যাকেট, সবজি ঢালা সিঙ্কের জিনিসপত্র আরও কত কী? সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নতুন সংসারের জন্য জিনিসপত্র আনা হলেও এখনো গুছানো হয়নি। এত এত জিনিস কোথা থেকে গোছানো শুরু করবে ভেবে পেল না মুশরাফা। কপালে চিন্তার ভাজ তুলে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহ তোমার নাম নিয়ে শুরু করছি, তুমি আমার কাজ সহজ এবং মঙ্গলজনক করে দাও।’

প্রথমে চুলো সেট করল। কোকারিজের জিনিস পত্র রে-কে রাখবার সময় বেগ পেতে হলো। এতগুলো জিনিস একা গুছাতে গিয়ে হিসসিম খেল। তাও মুখে আল্লাহর নাম ঝপে গুছাতে লাগল। সেই ক্ষণে কলিংবেল বাজল। চাপা শ্বাস ফেলে দরজা খুলল মুশরাফা। মায়মুনা দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়। পুত্রবধূর ক্লান্ত চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করছিলে?’
‘ কিচেন গোছাচ্ছিলাম।’

মায়মুনা রাতের খাবার নিয়ে এসেছেন। খাবারের বাটি এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এগুলো নিয়ে রাখো।’

মুশরাফা শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসল। বাসা শিফটিং এর ক্ষেত্রে মায়মুনা চমৎকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। দুই বউকে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছেন। তিন ছেলের জন্য আলাদা করে সব কেনা হয়েছে। বিবাহিত ছেলের সংসার তাদের বউরা সাজাবে, আর অবিবাহিত ছোটো ছেলের সংসার সাজাবেন তিনি। বড়ো দুই ছেলেকে স্পেচ দেবার মননে তারা স্বামী-স্ত্রী ছোটো ছেলের বাসায় থাকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছেলেটা একা, তাকে দেখভালের দায়িত্ব এখনো বাবা মায়ের কাধে। কাকন মুশরাফা তাদের স্বামীর খেয়াল রাখুন, তারা ছোটো ছেলের খেয়াল রাখবেন।
পুরনো বাসা একসাথে ছাড়তে দিলেন না মায়মুনা। আগের নিয়মে সব চলল। নতুন বাসায় প্রথমে পাঠিয়ে দিয়েছেন সংসারের অভিজ্ঞ বউ কাকনকে। সে অল্প সময়েই নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। বাসা শিফটের ব্যস্ততায় রান্নার ঝামেলা এড়াতে পুরনো বাসা থেকে খাবার পাঠানো হলো। জিহানকে ও রেখে দিলেন মায়মুনা। মায়ের কাজে না আবার ব্যাঘাত ঘটায়। কাকন সংসার গুছিয়ে উঠবার পর পুরনো বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠলেন তারা। এবার খাবার সরবারাহের দায়িত্ব পড়ল কাকনের উপর। মুশরাফা আর মায়মুনা বাসা গোছাচ্ছেন কাকন ইফতার, ডিনার, সেহরি বানিয়ে দিচ্ছে। এখন সেই ডিনার এনেছেন মায়মুনা। সারাদিন এত এত কাজের পর রান্না করবার সুযোগ বা শক্ত কোনটাই হয়ে উঠেনা মুশরাফার। আর রমজানে বাইরের খাবার খেতে অভ্যস্ত নয় ওরা কেউ। সে হিসেবে এখন খাবারটার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। মুশরাফা মনে মনে শ্বাশুড়ির বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করল। খাবার হাতে নিয়ে হেসে বলল,
‘জাযাকিল্লাহু খায়রান, মা।’

মায়মুনা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন। একা একা মেয়েটা পারছে কি না দেখা প্রয়োজন। রান্নাঘরের অবস্থা দেখে চাপা শ্বাস ফেলে নিজে ও হাত লাগালেন। মুশরাফা এসে শ্বাশুড়িকে কাজ করতে দেখে বলল,
‘মা, আপনি রেখে দিন, আমি করে নিব।’

মায়মুনা হাড়ি পাতিল গোছাতে গোছাতে বললেন, ‘ তুমি কেবিনেট সাজাও, আমি রেকটা বসাই।’

মুশরাফার হাজার জোরালো আবেদন গ্রহণ করলেন না মায়মুনা। অভিজ্ঞ হাতে কিয়ৎক্ষণেই হাড়ি পাতিল গুছিয়ে রাখলেন। রে-কে পেঁয়াজ, রসুন, আলু মেলে দিলেন। জাওয়াদের সংসারটা একবারে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। জয়নাল আবেদীন বাসা ভাড়া আর টুকটাক জিনিসপত্র কিনে দিয়েছেন তিন ছেলেকে। পুরনো বাসার যার যার রুমের আসবাবপত্র তার নতুন বাসায় পাঠানো হয়েছে। বাদবাকি ফার্নিচার কিনে দিতে চাইলে জাওয়াদ নেয়নি। সংসার যেহেতু তার, সাজানোর দায়িত্ব ও তার। তাই নিজের সাধ্যমত, একটা ফ্রিজ আর একটা খাবার টেবিল কিনেছে কেবল। বাকি সব ধীরে ধীরে কিনবে। মায়মুনা ফ্রিজে শাক, সবজি রাখলেন। চালের বস্তা খুলে ড্রামে রাখলেন। আটা ময়দা বক্সে ভরলে ও সাজালেন না। বললেন,
‘বক্স গুলো নিজের মতো রেখো, আমি রাখলে পাবে না। ‘

মুশরাফা তখন ডিনার সেটগুলো কেবিনেটে সাজাচ্ছিল। শ্বাশুড়ি কথা শুনে বলল, ‘মা আপনি আর বাবা এখানে চলে আসুন না!’
মায়মুনা ভ্রু কুঁচকালেন, ‘কেন?’
মুশরাফা ধীর স্বরে বলল, ‘এতদিন আপনাদের সাথে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন এ বাসায় আপনাদের ছাড়া থাকতে ভালো লাগছে না। কেমন যেন খালি খালি লাগছে। আপনার আদুরে শাসন মিস করছি আমি। চা খেতে গিয়ে বাবাকে মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে, আমার পাশ থেকে দুটো ছায়া সরে গেছে। ‘ মুশরাফা স্বর মলিন।

মায়মুনা অবিশ্বাস্য চোখে চাইলেন। ওই বাসায় কত অবিচার করেছেন এই মেয়ের উপর। ভালো করে দুটো কথাও বলেন নি, কথায় কথায় অপমান করেছেন, হেয় করেছেন, ভালো কাজে ও শাসন করেছেন। দিনের পর দিন শাসন নয় শোষণ করেছেন রীতিমতো । এই শোষনকে মেয়েটার কাছে আদুরে শাসন মনে হয়! ওর মনে হওয়ার খাতাটা এত ইতিবাচক কেন? অন্য কেউ হলে তো শ্বাশুড়ি থেকে আলাদা হওয়া আনন্দে মেতে থাকত। আর এই মেয়ে কি না আলাদা হবার পর তাকে সেধে আবার বাসায় আনতে চাইছে! এতটা ভালোমানুষ ও হয়! এত ভালো মানুষের সাথে করা অন্যায়গুলো মনে পড়ল মায়মুনার। এক ঝাঁক অনুশোচনা জাগল মনে। তিনি কোমল চোখে চাইলেন।
ধীর স্বরে বললেন, ‘ আমি চাইছিনা আগের মতো কিছু হোক। আমি চাইছি, সবকিছু নতুন করে হোক। আমার ছেলেরা সুখে থাকুক, সুখ হানা দিক পুত্রবধূদের মনেও। তোমরা নিজেদের মতো সময় কাটাও। আমরা পাশে আছি। পাশাপাশি বাসা, সকাল বিকেল এসে দেখে যাব।’

মুশরাফা আকুতি নিয়ে বলল, ‘ এমন আসায় কেমন যেন পর পর মনে হয়। আপনারা একবারে চলে আসুন মা। আমাদের ছায়া হয়ে থাকুন। আমার বাবা মাকে তো পাশে পাইনি। তাদের সেবা করার সুযোগ ও হয়নি। বিয়ের পর আপনারাই আমার মা বাবা হিসেবে পেয়েছি। অন্তত আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন মা! ‘

কী মায়া করে বলল মেয়েটা! মুশরাফার কথাগুলো মায়মুনার মনে প্রশান্তির জোগান দিল। পুত্রবধূর এহেন আগ্রহ শ্বাশুড়ি হিসেবে তার জন্য আনন্দদায়ক। প্রসন্নতায় মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে হলো তার। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে ইচ্ছে করল, ‘ মা, বাবাকে পাওনি, কিন্তু তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সবসময় পাশে পাবেন। তারা সুখে দুখে তোমার পাশে থাকবে, ছায়া হয়ে, মা বাবা হয়ে।’ কিন্তু তিনি বলতে পারলেন না। বাস্তবতায় অনেক কিছু বলা যায় না। তিনি স্মিত হাসলেন কেবল। প্রশ্ন করলেন,
‘বাসায় একটা মাত্র খাট। আমাদের আনলে এত জায়গা দিবে কোথায়?’

মুশরাফার উত্তর দিতে সময় লাগল না,
‘ আমাদের রুমের ফার্নিচার সব ছেড়ে দিব। আপনারা থাকবেন সেখানে। কাপড় চোপড় নিয়ে আমরা অন্যরুমে শিফট হবো, ওখানে ফ্লোরিং করে থাকব। আপনাদের কোন সমস্যা যাতে না হয়, তার খেয়াল আমি রাখব। আপনারা শুধু আসুন, তারপর বাকিটা আমি সামলে নিব। ‘

পুত্রবধূর এমন ত্যাগ মনোভাব মায়মুনাকে ভীষণ আনন্দিত করল। পাশাপাশি বাসা, চাইলেই যখন তখন দেখা হবে। মেয়েটা এতে ও সন্তুষ্ট না, একবারে কাছেপাশে থাকবে, খেয়াল রাখবে। মায়মুনা হেসে বললেন, ‘আমরা তোমাদের স্পেচ দিতে চাইছিলাম। ‘
‘স্পেচ লাগবে না আমার, কিছু লাগবে না। শুধু আপনারা ছায়া হয়ে থাকুন আমার সাথে। এ বাসায় কেউ আমার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে না, কেউ আমাকে চায়ের জন্য বলছে না। কাউকে আমি তেল লাগিয়ে দিতে পারছিনা, যখন তখন ‘বাবা’ বলে ডাকতে পারছি না কাউকে। ভালো লাগছে না এসব। কিচ্ছু লাগবে না আমার, বাবা মা হলেই হবে।’

কলিংবেল বেজে উঠল আবার। মায়মুনা বললেন, ‘ জাওয়াদ এসেছে বোধহয়। দরজাটা খুলে দিয়ে এসো।’

মুশরাফা আলাপের সমাপ্তি ঘড়িয়ে দরজার দিকে এগুলো। দরজা খুলে জাওয়াদের ক্লান্ত প্রফুল্ল মুখটা চোখে পড়ল। মুশরাফা মোলায়েম স্বরে বলে উঠল,
‘ আসসালামু আলাইকুম। ‘

সুতো শাড়ি পরনে তার , চুল হাত খোঁপা করা, মাথায় ঘোমটা নেই, ঘর্মাক্ত মুখ দেখে একমুহূর্তে বলা যায়, এ পাক্কা গিন্নি। স্ত্রীর এই গিন্নিরূপ দেখে জাওয়াদ চমকাল বেশ। বিয়ের পর থেকে মুশরাফাকে ওদের বাসায় কখনো এত ফ্রিলি চলতে দেখিনি জাওয়াদ। বাসায় বাবা ভাই থাকে বলে সর্বদা ঘোমটা থাকে মাথায়। তাকে এত চঞ্চল দেখায় না। জাওয়াদ হেসে বলল,
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। নতুন বাসায় পা রাখতে না রাখতেই হাওয়া বদল হয়ে গেছি দেখি!’

মুশরাফা নিজের দিকে তাকিয়ে হাসল খানিক।জাওয়াদ ভেতরে এসে দরজা লক করে বলল, ‘ নতুন বাসা, নতুন সংসারে, নতুন রূপ, নতুন জীবন, আপনার তো এখন সুখের দিন, মুক্তো পাখির মতো উড়ার দিন। ‘
মুশরাফা হেসে বলল, ‘ আপনি ও উড়ুন আমার সাথে। আমি আবার আপনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। আমার সবকিছুতেই আপনাকে চাই।’

স্ত্রীর উড়ো প্রেমের জড়ো কথায় বিস্তৃত হাসল জাওয়াদ। বলল, ‘ কাজ শেষ হয়েছে? আমি সাহায্য করব?’
মুশরাফা ধীরে বলল, ‘ না, মা এসেছেন।’

তারপর গলা খাদে নামিয়ে বলল, ‘ আমি মাকে বলতেছি এ বাসায় চলে আসতে। মা রাজি হচ্ছেন না। আপনি ও একটু বলুন না!’

মায়মুনা বেরিয়ে এলেন সেই ক্ষণে। ছেলের উদ্দেশ্যে হেসে বললেন,’ তোর বউ কী বলতেছে শুনবি?’
জাওয়াদ কোমল স্বরে জানতে চাইল, ‘কী বলতেছে আমার বউ?’
‘তোর বউ বলতেছে তোদের বেডরুম আমাদের জন্য ছেড়ে দিয়ে অন্য রুমে ফ্লোরিং করে থাকবে। আমরা যেন জিশানের বাসা ছেড়ে এই বাসায় উঠি। স্পেচ টেস্পেচ লাগবে না তার!’

মায়মুনা হাসছেন, প্রাণবন্ত। তার কথাগুলো অভিযোগের হলেও স্বরে প্রশান্তির আভা। তার মনোভাবে প্রকাশ পাচ্ছে পুত্রবধূর প্রতি তিনি কতটা সন্তুষ্ট। মায়ের মুখ দেখে জাওয়াদ বুক চিরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। সুখে বুকটা ছেয়ে গেছে। এমন একটা দিনের জন্য কত দিন, কত মাস অপেক্ষায় ছিল সে! অবশেষে এসেছে, তার জীবনের দুটো নারী এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে।
জাওয়াদ হেসে বলল, ‘ভালো তো। চলে আসো।’

মুশরাফা এসে আবার অনুরোধ করল, ‘প্লিজ মা, চলে আসুন না! আমি জিশান ভাইয়ার জন্য খাবার পাঠাব প্রতিদিন। উনার কোন সমস্যা হবে না।’

মায়মুনার হাতখানাকে আর আটকানো রাখা গেল না। উঠে গেল মুশরাফার মাথায়। মায়মুনা আলতো হাতে পুত্রবধূর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘ এ বাসায় তোমরা একে অপরের খেয়াল রাখার জন্য আছো। ওই বাসায় জিশানের খেয়াল রাখার মতো কেউ নেই। জিশানের খেয়াল রাখার সঙ্গী আসা অবধি বাবা মা হিসেবে ওর খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমাদের। আমরা তা পালন করি। জিশানের বউ এলে না হয় তোমাদের এখানে চলে আসব। ততদিন জিশানের বাসা থেকেই তোমাদের খেয়াল রাখি। পাশাপাশি বাসা, যখন তখন দেখা হবে। দিনের বেলায় আমি একা পড়ে যাই, কাল থেকে দিনটা এখানেই কাটাব । আর আগের মতোই চা বানিয়ে আমাদের ডাক দিবে। আমরা এসে চায়ের আলাপে বসব। তোমাদের সংসারে তোমরাই থাকো, আমরা জিশানের বাসা থেকে তোমাদের পাশে থাকবে। ‘

মুশরাফা আকুতি নিয়ে তাকাল। মায়মুনা হাসলেন। ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোর অবুঝ বউকে বুঝা। আমি গেলাম।’

মায়মুনা এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে। যেতে যেতে আনমনে প্রশ্ন করলেন, ‘আমার বাউণ্ডুলে ছেলেটা এই রত্ন খুঁজে পেল কিভাবে? আমি তো হাজার খুঁজে ও এই রত্নের খোঁজ পেতাম না। ছেলেটার চোখ ভালো।’

কিচেনের পর শোবার ঘর গুছোতে গিয়ে রাত বারোটা পেরিয়ে একটা ছুঁলো। সারাদিনের ধকলের পর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম নেমেছে মুশরাফার চোখে। জাওয়াদ ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল। ফোন বাজল সেই ক্ষণে। ধরতেই অপাশ থেকে ফরিদার কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। জাওয়াদ উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল, ‘কী হয়েছে মামী?’
‘তোমার মামা কেমন যেন করছে?’
‘আচ্ছা আমি আসছি।’

ফোন রেখে জাওয়াদ ঘুমন্ত স্ত্রীর পানে তাকাল। প্রাণপ্রিয় মামার অসুস্থতার কথা জানাবার ইচ্ছে হলো প্রিয়তমাকে। পরক্ষণেই সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে পর নেয়া বিশ্রামে ব্যাঘাত হবে বলে জানাল না। এখন শুনল কান্নাকাটি জুড়ে দিবে, তারচেয়ে না জানুক। জাওয়াদ মুশরাফাকে ঘুমে রেখে একাই বেরিয়ে গেল। অনিককে ফোন দিয়ে পাঠাল মামার বাসায়। নাজমুল সাহেবের অবস্থা তখন সঙ্কটাপন্ন। অনিক সেই ক্ষণে উনাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেল। জাওয়াদ ও এলো তারপরেই। ফরিদা প্রথম কলটা মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে করেছিলেন। কিন্তু ফাবিহারা শহরের বাইরে ছিল বিধায় তারা সেই ক্ষণে এসে পৌঁছাতে পারল না। অগত্যা জাওয়াদকেই ফোন করতে হলো তার। জাওয়াদের সার্বিক তত্তাবধানে নাজমুল সাহেবের চিকিৎসা চলল। মিনি স্ট্রোক করেছেন তিনি। মুশরাফা তখনো অজ্ঞাত। সেহরিতে উঠে জাওয়াদকে ফোন দিলে,জাওয়াদ জানাল এক পরিচিত অসুস্থ বলে তাকে দেখতে গিয়েছে।

পরদিন বিকেলে বাসায় ফিরল জাওয়াদ। মুশরাফাকে বলল,
‘একটু তৈরি হও, আমরা এক জায়গায় যাব।’
‘কোথায় যাব?’
জাওয়াদ রয়েসয়ে বলল,
‘মামা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দেখতে যাব।’
মুশরাফা উদ্ধিগ্ন হয়ে উঠল। কী হলো মামার? ঠিক আছেন? ‘
জাওয়াদ তাকে শান্ত করে বলল, ‘ওই একটু বুকে ব্যাথা হয়েছে। আর কিছু না। চলো দেখে আসি।’

হাসপাতালে যাবার পর অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুখের দেখা পেল মুশরাফা। কেবিনের সামনে করিডোরে রাখা চেয়ারে বসে আছেন লায়লা, তারিফ, সাফা, জায়ফা। প্রিয় মুখ গুলো চোখ পড়বার পর স্তম্ভিত হয়ে গেল মুশরাফা, পা থেমে গেল। বিস্ময়, অবিশ্বাস নিয়ে চেয়ে রইল সে। কতদিন বাদে দেখা! ইচ্ছে করল, মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পা আগাল না। অসাড় হয়ে গেছে যেন। মায়ের সাথে কথা বলবার ইচ্ছে হলো, কতদিন কথা হয়না। আজ কথা বলবে, সবার অবস্থা জানবে। জাওয়াদের শর্ত অনুযায়ী সামনে পড়লে কথা বলতে পারবে। সে হিসেবে জাওয়াদ ও বাধা দিবে না। মুশরাফা মনে মনে বেশ খুশি হলো। সেই খুশির ইতি ঘটল, যখন জাওয়াদ বলল,
‘ তোমার ইচ্ছে হলে কথা বলতে পারো, আমি কোন বাধা দিব না। তবে হ্যাঁ, তাদের আচরণে তোমার বিন্দুমাত্র অপমান দেখলে কিন্তু আমি চুপ থাকব না। ‘
জাওয়াদের চোয়াল অস্বাভাবিকতার লেশমাত্র নেই। যেন এমনটা হওয়ারই ছিল। মনে মনে এই দৃষ্টি দেখবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল কাল রাতেই।মুশরাফা ভীত ঢোক গিলল। দুই পক্ষকেই তার বেশ ভালো চেনা। তার মা, বোন তার সাথে ভালো ব্যবহার করবে না। তারা খারাপ ব্যবহার করলে জাওয়াদ ও চুপ থাকবে না। শেষে দেখা যাবে হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এ ভেবে কথা বলবার ইচ্ছে দমিয়ে ফেলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে আগাল। কেবিনের দরজায় আসতেই সবার চোখ পড়ল ওদের দিকে। চেনবার চেষ্টায় ভ্রু কুঁচকাল সবাই। খানিক বাদেই কপাল সোজা হলো। সাফার কপালে বিরক্তির আভা দেখা গেল। লায়লার দৃষ্টি শূন্য, না দেখার ভান করে চোখ ফেরালেন। তারিফ কোমল চোখে পরখ করছে তার আদরিণী মুশিকে। মুশরাফা আকুতি নিয়ে তাকাল সবার দিকে। কিন্তু কিছুই বলল না। জাওয়াদের অনুসরণ করে কেবিনে ডুকে গেল।

নাজমুল সাহেবের অবস্থা আগে থেকে ভালো আছে। কেবিনে শিফট করা হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছেন। জাওয়াদ মুশরাফাকে কেবিনে নিয়ে গেল। মামাকে দেখে মুশরাফা ডুকরে উঠল। জাওয়াদ কোমল স্বরে বলল, ‘ কান্না কোন কিছুর সমাধান নয়। নামাজ পড়ে আল্লাহকে বলো, আল্লাহ মামাকে ঠিক করে দিবেন। কেঁদো না। ‘

ফরিদা এগিয়ে এলেন মেয়ের দিকে। মুশরাফা চোখ মুছে অভিযোগ করে উঠল, ‘ মামার এই অবস্থা, আমাকে জানালে না কেন?’
ফরিদা বললেন, ‘ জাওয়াদকে তো প্রথমে জানিয়েছি। আমি ভেবেছি তুই জাওয়াদ থেকে জানতে পারবি।’
মুশরাফা অভিযোগ নিয়ে তাকাল স্বামীর দিকে।জাওয়াদ সেই দৃষ্টি অগ্রাহ্য করল। মুশরাফা মামার পাশে গিয়ে বসল। মামার দীর্ঘায়ু কামনা করল, তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করল।

রোগী দেখা একটি ফজিলতপূর্ণ নফল ইবাদত।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য রওয়ানা হয় তখন সে আল্লাহর রহ্‌মাতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকে। যে পর্যন্ত রোগীর বাড়ী গিয়ে না পৌঁছে। আর বাড়ী পৌঁছার পর রহ্‌মাতের সাগরে ডুব দেয়।

অপর এক বর্ণনায় এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোগীকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করতে থাকে।” জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করা কি? তিনি বললেন, “এর ফলমূল সংগ্রহ করা।” (মুসলিম ২৫৬৮)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন মালাক (ফেরেশতা) তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক তোমার পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি মনযিল তৈরি করে নিলে।

মুশরাফা মামার পাশে বসে আছে। জাওয়াদ ফরিদার সাথে কথা বলছে,
‘উনারা কখন এসেছে?’
‘তুমি যাবার পর । আসবার সময় রাফা কথা বলার চেষ্টা করেনি?’
‘না।’
ফরিদা অসন্তোষ গলায় বললেন, ‘না করাই ভালো। এদের ভাষা ঠিক নেই। কথা বলা মানেই অপমান করা।’
জাওয়াদ দৃঢ় স্বরে বলল, ‘অপমান করার চেষ্টা করে দেখুক শুধু। আমি মুখিয়ে আছি হিসেব চুকাবার জন্য। ‘

আসরের আজান ভেসে এলো। ফরিদা উত্তর দিলেন না। নিশ্চুপ আজান শুনলেন। আজান শেষ হতেই মুশরাফা বলল, ‘এখানে নামাজের ব্যবস্থা নেই, মামী?’
ফরিদা সায় জানালেন। জাওয়াদ বলল, ‘ আসো আমি নিয়ে যাব।’
মুশরাফা বলল, ‘আপনি মসজিদে যান, আমি মামীর সাথে গিয়ে পড়ে আসব। ‘

লায়লা আঞ্জুমানের উপস্থিতিতে মুশরাফাকে একা রেখে যেতে নারাজ জাওয়াদ। দৃঢ় স্বরে বলল, ‘ জামাতের দেরি আছে। আসো তুমি। ‘

ফরিদা বোধহয় জাওয়াদের মনের ভাব বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, ‘ তোর মামার কাছে একজন থাকতে হবে, আবার কখন ঘুম ভেঙে যায়। তুই নামাজ পড়ে আয়। তোকে রেখে আমি নামাজ পড়তে যাব। ‘

ফরিদার যুক্তিতে কাজ হলো। মুশরাফা জাওয়াদের সাথে যেতে রাজি হলো। কেবিন থেকে বেরিয়ে আবার দেখা হলো বহুপ্রতীক্ষিত মানুষগুলোর সাথে। আবার চোখাচোখি হলো, কেউ চোখ সরাল,কেউ তাকিয়ে রইল। সাফার পাশ কাটিয়ে যাবার সময় তাচ্ছিল্যের সুর টানল সাফা,’ আমি ভেবেছি, বিয়ের পর একটু স্মার্ট হবি। কিন্তু এখন দেখি এখনো সেই গ জ / ঙ্গ/লি আর গাঁইয়া ভূতই আছিস, আর ঠিক হলি নি।’

কথা ধীরেই বলেছে সাফা। ভেবেছে মুশরাফা ছাড়া কেউ শুনবেনা। কিন্তু জাওয়াদ শুনে গেল। তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে অগ্নিচোখে তাকাল সাফার দিকে। ক্ষুব্ধ গলায় বলল,
‘আমার স্ত্রীকে অপমানের অধিকার আমি নিজেকেও দিই নি, সেখানে আপনার সাহস কী করে হয় আমার সামনে আমার স্ত্রীকে অপমান করার? হু আর ইউ?’

জাওয়াদের রুদ্রভঙ্গিমায় থমকে গেল সবাই। কথা থামিয়ে বিস্মিত চোখে চাইল জাওয়াদের পানে। সাফা হতভম্ব হয়ে গেল। সে কল্পনা ও করেনি জাওয়াদ কেবিন ভরতি মানুষের সামনে ওকে এভাবে অপমান করবে। বিস্ময়ে কিছুই বলতে পারল না। ফরিদা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। কেন যেন ভেতরটা শান্তি লাগছে। মুশরাফার উপর যদি তাদের পরিবারে সবচেয়ে বেশি কেউ অ/ত্যা/চার, সবচেয়ে বেশি হেন/স্তা করে থাকে তবে সে সাফা। মুশরাফার শরীরের অর্ধেক আ/ ঘাত হয়েছে সাফার হাতে। ফরিদার অনেক ক্ষোভ এই মেয়ের উপর। কিন্তু ননাশের মেয়ে বলে কিছু বলতে পারেন নি কখনো। এই মেয়েকে উচিত শিক্ষা দেবার আফসোস রয়ে গেছে। আজ জাওয়াদকে প্রতিবাদ করতে দেখে খুশিই হলেন। মনে মনে বললেন, আরও কটা বলো, বেশি বাড় বেড়েছে এই মেয়ে। আমার রাফাটাকে দু’দন্ড শান্তি দেয়নি।

জাওয়াদ চোখ নামিয়ে ধীর স্বরে মুশরাফার উদ্দেশ্যে বলল,
‘ হু ইজ শি?’

মুশরাফা সময় নিয়ে ধীরে উত্তর দিল, ‘ সাফাপু।
‘ বিয়ে আগে তোমার উপর অত্যাচার করা সেই বর্বর মানুষগুলোর একজন?’

মুশরাফা অনুরোধের চোখে তাকাল। ওর চোখ বলছে, প্লিজ সিনক্রিয়েট করবেন না! জাওয়াদ আজ সেসব গ্রাহ্য করার মুডে নেই। আজ ওর দিন। এই দিনের অপেক্ষা করছিল কতদিন যাবত। হেলায় ছেড়ে দিবে? জাওয়াদ দৃঢ় গলায় সাফার উদ্দেশ্যে বলল,
‘ দেন ইউ আর নান অফ হার। আগে যত অপমান করার করছেন, কারণ তখন ও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তখন শুধুই ও ওই পরিবারের একটা অবহেলিত সদস্য ছিল। নাও সি ইজ মাই ওয়াইফ, নট ইউর ফ্যামিলি মেম্বার, ওর সো কল্ড সিস্টার। সো, ডোন্ট ইউ ডেয়ার ইনসাল্ট মাই ওয়াইফ। আদারওয়াইজ….

মুশরাফা হাত ধরে ফেলল জাওয়াদের। আকুতি করে বলল, ‘প্লিজ সিনক্রিয়েট করবেন না!’

জাওয়াদ গমগমে গলায় বলল, ‘ এখন আমার সামনে তোমার সাথে এমন আচরণ করছে, আল্লাহ জানে আগে কী করেছিল! ট্রাস্ট মি, ওই সময় আমি থাকলে আমি সবাইকে…

মুশরাফা হাতের বাধন শক্ত করল। কোমল স্বরে বলল, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি।’ সে কথা জাওয়াদ ছাড়া কেউ শুনল না। আকস্মিক প্রসঙ্গহীন কথা শুনে জাওয়াদ ভড়কে গেল। রাগ স্বরে বিস্ময় দেখা দিল। এখন ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দেবার সময়! কীসের প্রসঙ্গে কী বলছে এই মেয়ে! জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকাল। মুশরাফা প্রগাঢ় স্বরে বলল,
‘প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহর কাছে সে উত্তম।’
জাওয়াদ মুশরাফার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাল। মুশরাফা ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
‘আমি চাই আমার ভালোবাসার মানুষটা উত্তমের তালিকায় পড়ুক। ‘

জাওয়াদ এই ক্ষণে এসে বুঝল মুশরাফার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণ কেবল জাওয়াদকে সিনক্রিয়েট করা থেকে আটকানো। সে সফল। জাওয়াদের বহুপুরোনো ক্ষোভ আর সাজিয়ে রাখা কথারা সব দল ছুটেছে। দ্বিতীয়বার আর কিছু বলবার ইচ্ছে জাগল না। তপ্ত মস্তিষ্ক ও কেমন শীতল হয়ে এলো। আক্রোশ কমে গেল। মেয়েটা ভীষণ চালাক। সে ধমকায় না, রাগে না, চিৎকার করে না। কিন্তু কায়দা করে নিজের উদ্দেশ্য মানিয়ে ছাড়ে ঠিকই। জাওয়াদের রাগান্বিত স্বর হঠাৎ মিইয়ে এলো। ধীর স্বরে বলল, ‘চলো।’

মুশরাফা চোখ দিয়ে চমৎকার হেসে সামনে পা বাড়াল। জাওয়াদ চাপা শ্বাস ফেলল, এই মেয়েটার উপস্থিতিতে জয়ের হাসি কখনো জাওয়াদের মুখে উঠেনি , উঠাতে পারবে ও না বোধহয়। জয়ের হাসিটা সবসময় মুশরাফা নিজের ঠোঁটেই টানবে। আজও তার ঠোঁটেই উঠেছে সেই হাসি।

মুশরাফাকে নামাজঘরে রেখে মসজিদে গেল জাওয়াদ। যাবার সময় পাই পাই করে বলে গেল, ফিরে যেন এখানেই পায় তাকে। নামাজ থেকে ফিরে মুশরাফাকে নিয়ে নিচে নামল। নামাজ ঘর উপরতলায়। মুশরাফার জিলবাবটা অনেকটা বড়ো। হাঁটতে গেলে পায়ে লাগছে। সিড়ি বেয়ে নামবার সময় পা আটকে পড়তে ধরেছিল। জাওয়াদ হাত ধরে বলল, ‘দেখে হাঁটবে তো!’

মুশরাফা দাঁড়াল। জাওয়াদ ওর পেছনের জিলবাব সামনে এনে ওর হাতে দিয়ে বলল, ‘ধরে হাঁটো। আমি পথ দেখছি।’ মুশরাফা কবজি ধরে পথের দিশা দেখাল। কেবিনের কাছে আসবার সময় খেয়াল করল মুশরাফার নিকাবটা মাথা থেকে সরে গেছে। জাওয়াদ নিজ উদ্যোগে ঘোমটা টেনে ঠিক করে দিল। সে দৃশ্য দেখে করিডোরে বসা প্রতিটা মানুষ টের পেল মুশরাফার পর্দায় জাওয়াদের স্পষ্ট সমর্থন।

সাফা ওদের দিকে তাকিয়ে ক্ষুদ্ধ স্বরে বলল, ‘দেখলি তারিফ, ছেলেটার কত বড়ো সাহস, আমাকে হুমকি দেয়!’
তারিফের অন্তর্ভেদী নজর এই যুগলের দিকে। সাফার অভিযোগের উত্তরটা সেই দিল, ‘ বোন হিসেবে সম্মান দেয়াটা তোর কর্তব্য। ‘
সাফা অবিশ্বাস্য চোখে চাইল ভাইয়ের দিকে, ‘আমরা তো ওকে বোন মানি না। তুই মানিস?’
‘অবশ্যই মানি। তুই যেমন আমার বোন, মুশি ও আমার বোন।’
‘তুই ওকে কবে থেকে বোন মানতে শুরু করেছিস?’
তারিফ দৃঢ় স্বরে বলল,
‘ ধরে নে আজ থেকে। ‘
থেমে বলল, ‘ফারদার ওকে হেয় করে কথা বলবি না। ওকে সম্মান দিবি।’

সাফা, লায়লা বিস্মিত চোখে দেখে গেল তারিফের নতুন রূপ, বদলে গিয়ে ফিরে আসা এক ভাইয়ের রূপ।

চলবে..

আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here