স্নেহের অবজেক্ট,Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
-কথাটা খারাপ বলিস নি (ইয়াশা)
-শোন যেভাবেই পারি আমি তোকে মুক্ত করে দিবো আর তোর জীবনে পূর্ণতা আনতে হেল্প করবো (রাসিফ)
-দেখা যাবে
-এই নিয়ে আর ঝগড়া করিস না
-ঠিক আছে
,,
এরপর থেকে দুজনের আর কোনো ঝগড়াঝাটি করলো না। রাসিফ বিয়ের পর ও আগের মতোই চলতে লাগলো, বাসায় এসে অতটা কথা বলে না ইয়াশার সাথে। ইয়াশাও তেমন কথা বলে না। একই বিছানায় থেকে হঠাৎ দু একটা কথা বলে৷
,,
একদিন রাসিফের বাবা রাসিফ কে ডেকে তার বাবার অফিসে বসার জন্য আদেশ করলো। প্রথমে রাসিফ নারাজ ছিলো, পরে বাবার গরমে ঠিকই রাজি হয়ে যায়। তারপর থেকে ইয়াশা আর রাসিফের কথা আরও কমতে থাকে।
এভাবে মাস খানেক যাওয়ার পর…
দুজনে রাতে বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে…
-তুই তো কিছুই করতেছিস না (ইয়াশা)
-কি করবো আমি? (রাসিফ)
-নিজে তো জব করতেছিস, আমার কি হবে?
-তুই ও কর
-কই পাবো
-খোঁজ কর
-তুই না হেল্প করবি
-তুই জবের জন্য এক পা এগিয়ে দেখ আমি দু পা এগিয়ে দিবো
-আচ্ছা জবের কথা পরে হবে, আমার বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে
-যা ঘুরে আয়
-আমাকে তো একা যেতে দিবে না, তুই সাথে চল
-আমি যেতে পারবো না, অনেক কাজ আছে
-খালু বলেছে দুদিন পর আমাকে আর তোকে রাজশাহী পাঠাবে
-আমার লাশ যাবে তবুও আমি যাবো না
-এত বড় কথা কেন?
-আমি কেন রাজশাহী যাবো? তোর দরকার তুই যা
-একা যেতে দিবে না
-আমার কিছু করার নেই
-তুই আমার উপর রেগে আছিস?
-তোর উপর রাগ করার কি আছে?
-মনে হয় রাগ করেছিস
-একই ছাদের নিচে থেকে যদি কথা না হয়, তার উপর রাগ না অন্য কিছু হয়
-কি হয়?
-ঘোড়ার ডিম হয় ঘোড়ার ডিম
-আচ্ছা আমরা এখন থেকে নিয়মিত কথা বলব
-তোর ন্যাকামো বাদ দে তো, ঝটপট একটা মনের মানুষ খুঁজতে থাক
-পাবো না
-কেনো?
-আমি বিয়ের পরে যা বলেছি সব ভুল। এখন আমাকে আর কে বিয়ে করবে, আমি তে বিবাহিত
-তাই?? (রাসিফ মুচকি হেঁসে)
-হুমম
-আমি যে তোকে রাখবো না
-কেনো আমি কি ডিস্টার্ব করেছি নাকি?
-ডিস্টার্ব না তবে এভাবে আমি আর কতদিন চলবো বিয়ে তো করতে হবে
-বিয়ে তো করেছিস আর কয়টা করতে চাস?
-তোকে বিয়ে করে আমার তো লাভ হয়নি, বউ এর আদর পাইনি৷ এই জন্য বিয়ে করবো
-ওকে ওকে পাত্রী খোঁজা শুরু কর
-তুই পাত্র পেলেই আমার কাজ আমি শুরু করে দিতে পারি
-আমি যে…
-কি?
-কিছু না
-অনেক কথা বলেছি আর না এখন ঘুমিয়ে যা
,,
দুজন বিছানায় শুয়ে আছে। ওদিকে রাসিফের ঘুমের ভাব হলেও ইয়াশার চোখে একটুও ঘুম নেই। রাসিফ কে সে কি যেন বলতে চায় কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। জড়তা ভেঙে বলেই ফেলল..
-আপনি কি ঘুমিয়ছেন? (ইয়াশা)
-উমমমম (রাসিফ)
-একটা কথা বলার ছিলো
-বল
-এদিকে ঘুরেন
-তোরে কি জ্বিনে ধরছে? আপনা আপনি শুরু করছিস কেন?
-একটা কথা বলব
-বল
-কাল আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হবেন৷ সেই যে বাসার ভেতরে ঢুকেছি আর বের হতেই পারছি না
-একা ঘুরতে পারবি না??
-একা যেতে দিবে না
-হুমমম যা সময় করে একদিন বের হবো
-না কাল চলেন
-না কাল কাজ আছে
-চলেন না একটু, আমার বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসে
-আচ্ছা সকাল হোক
-এখন কথা দেন
-ঠিক আছে
-হুমম আর শোনেন আপনাকে তুই করে বলা যাবে না, আপনি তো আমার বর
-…ওর মাথায় এসব কবে থেকে ঢুকতে শুরু করলো? (রাসিফ মনে মনে বলল)
-বুঝেছেন তো?
-হ্যাঁ বুঝেছি এখন ঘুমা
-আপনিও আমাকে তুই করে বলতে পারবেন না তুমি করে বলবেন হ্যাঁ
-না তুই করে বলব ঘুমা এখন
-তুমি করে না বললে ঘুমাবো না
-এটা কেমন কথা?
-এমনি কথা
-ঐ যে সেদিন চর মেরে যা যা বলেছিস সব মনে আছে কিচ্ছু ভুলিনি
-প্রতিশোধ নিবেন?
-কিসের প্রতিশোধ? তুই যা বলেছিস আমি তাই করবো
-আমি রাগে বলে ফেলেছি
-আচ্ছা তোর এমন পরিবর্তন কি জন্য? কি চাস তুই?
-আমি আপনার কাছে থাকতে চাই সারাজীবন
-মানে এখন কোথাও ঠাই হচ্ছে না তাই আমার কাছে আসার চেষ্টা তাই না?
-সত্যি করে বলতে গেলে আপনি যা বলেছেন তাই
-আমি তোকে রাখবো না না না
-এই কুত্তা এই কখন থেকে ভালো ভাবে বুঝাচ্ছি শুনতেছিস না? বলতেছি আমি রাগে সব বলেছি মন থেকে বলিনি। আমার জন্য তুই বর হিসেবে পারফেক্ট
-এ আমি কি দেখালাম! এত রাগ
-তুই জানিস আমি এমন
-সেই জন্য কাছে রাখতে চাই না
-পোড়া কপাল আমার! আমি ভাবছিলাম আমার বউটা অনেক কিউট হবে
-আমি কিউট না? (ইয়াশা বিছানা থেকে উঠে বসলো)
-কোনো দিক থেকেই না। চেহারা ভালো না গায়ের রং ভালো না, পোশাকের রুচি ভালো না
-…(ইয়াশা কান্না করবে এমন একটা ভাব)
,,
রাসিফ তো মজা করে যা পারছে বলেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ বলার পর ইয়াশা রাসিফ এর বুকের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লো। আপাতত রাসিফ এর মুখের কথা আটকানো গেছে সে আর কিছু বলছে না।
-এটা কি হলো??(রাসিফ)
-অনেক কিছু বলেছেন আর না, আমি যেমন-ই হই না কেনো দেখে শুনেই তো বিয়ে করেছেন। ভালো হলেও আপনার পঁচা হলেও আপনার
-…(রাসিফ কিছু বলতে পারছে না)
-এখন কথা বের হয় না কেনো?
-………..
-অজ্ঞান হলেন নাকি?
-উহুমমম
-হঠাৎ এভাবে চুপ হয়ে গেলেন কেনো?
-জানি না
-আমি এখানেই ঘুমাই?
-আপনার বালিশে গিয়ে ঘুমান
-না এখানে
-আমার তাহলে ঘুম হবে না
-কেনো?
-আপনি এভাবে আমার উপর শুয়ে আছেন
-এখন তো ঘুম আরও ভালো হওয়ার কথা
-হবে নাহহ
-ওহহহ
,,
ইয়াশা নেমে তার বালিশে এসে শুয়ে পড়লো।
-কাল সকালে নিয়ে যাচ্ছেন তো? (ইয়াশা)
-হুমম নিয়ে যাবো (রাসিফ)
,,
দুজনের হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে, সবে মাত্র পরিচয় হলো তাদের। অজানা অনুভূতির কারণে দুজনের মধ্যে এমন ভাব চলে আসছে।
,,
পরদিন সকাল বেলা…
-আপনি না আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন তাহলে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছেন কেনো? (ইয়াশা)
-ওহহ মনেই তো ছিলো না (রাসিফ)
-ঠিক আছে অফিসেই জান, আমি ঘুরতে যাবো
-সরি আমার মনে ছিলো না
-থাক আপনি অফিসেই জান
-সরি
-যাবো না বললাম তো
-শাড়ী টা পরে নেন
-…(ইয়াশা চুপ করে আছে)
-প্লিজজজজ
-দরজার বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করেন আমি শাড়ী টা পরে নেই। দরকার হলে আমি আপনাকে ডাকবো
-শাড়ী কি পরতে পারেন? নাকি মাকে ডাকবো
-পারি একটু একটু
-ওকে
,,
রাসিফ এরে রুমের বাইরে দাঁড়ালো। ইয়াশা ভেতরে শাড়ী পরছে। প্রায় বিশ মিনিট পর ইয়াশা রাসিফ কে ডাকলো।
রাসিফ ভেতরে ঢুকে নতুন সাঁজে কাউকে দেখতে পেলো।
বিয়ের দিন ভালো ভাবে দেখা হয়নি ইয়াশাকে, আর এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে।
-দেখুন তো সব ঠিক আছে? (ইয়াশা)
-আমি তো বুঝি না, মা কে ডাকি? (রাসিফ)
-আজ বাসায় ফিরে ইউটিউব দেখে শিখে নিবেন। এইটুকুর জন্য মা কে ডাকা যাবে না
-ঠিক আছে
-আচ্ছা আমি তো শাড়ী পরে হাঁটতেই পারবো না
-সমস্যা নেই যাবো তো গাড়িতে
-ঐতো সেই রিকশায় উঠা নামা
-আরে বাবার কার টা নিয়ে যাবো
-খালু অফিসে যায়নি?
-গিয়েছে, আমি ড্রাইভার কে ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছি
-তাহলে যেতে পারবো
-হুমমম
-আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখুন না কেমন লাগছে। খারাপ লাগছে না তো?
-না ভালোই লাগছে, খারাপ না
-বউ কে কিভাবে ইমপ্রেস করতে হয় সেটাও জানেন না
-আপনি তো আমার বউ না
-তো কি?
-খালাতো
-হইছে থাক আর বলতে হবে না পরের শব্দটা আমি শুনতে চাই না
-ঝগড়া করলে সময়টা রুমের ভেতরেই শেষ হয়ে যাবে, চলুন যাই
-হুমমম
,,
দুজন এখন গাড়িতে, রাসিফ ড্রাইভ করছে।
-অনেকদিন পর বাইরে বের হয়ে ভালোই লাগছে (ইয়াশা)
-….(রাসিফ চুপ)
-আপনি গাড়িটা স্লো করে এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করেন তো
-কেনো?
-আমি আপনার হাতে হাত রাখবো
চলবে