স্নেহের অবজেক্ট,6 END PART

স্নেহের অবজেক্ট,6 END PART
Write : Sabbir Ahmed

-আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ছেলের সাথে কথা বলবো না(ইয়াশা)
-এবার ঠিক আছে(রাসিফ)
,,
দুজন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। রাসিফ ইয়াশাকে কিছু বলার জন্য বিছানায় তার মুখোমুখি বসালো। তারপর..
-আমার কোনো মেয়ে বন্ধু নেই, আপনার কোনো ছেলে বন্ধু থাকুক এটা আমি চাই না, আমি কেমন ছেলে সেটা আপনি ভালো করে জানেন। অনেক ফাজলামো করি তবে সেগুলো মেয়ে রিলেটেড না (রাসিফ)
-আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ছেলের সাথে কথা বলব না (ইয়াশা)
-আমি রেগে গিয়েছি এখন হয়তো ভয়ে ভয়ে এসব বলছেন
-না সত্যি বলছি
-আচ্ছা একটা কথা বলেন তো ওর সাথে যে এতো কথা বলছেন, কি বলছেন এতো?
-শেয়ার করেছি
-কি শেয়ার করেছেন?
-আমার আপনার বিয়ের ব্যাপারে,
-মানে?
-এই যে আমাদের হঠাৎ করে কিভাবে বিয়ে হলো এটা
-আহা কি বন্ধু! এ তুই আমার রুম থেকে বের হ
-সরি! আর এমন হবে না
-তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা, না হলে আমি কিন্তু সব ভেঙে ফেলবো
,,
ইয়াশা উঠে গিয়ে রুমের জানালার পাশে দাঁড়ালো। রাসিফ বিছানায়ই বসে থাকলো। কিছুসময় থেকে রাসিফ বাইরে চলে গেলো আর আসলো সেই রাত এগারোটায়।
,,
ইয়াশা রাসিফের জন্য রাতের খাবার রুমে এনে রেখেছে। রাসিফ রুমে ঢুকে দেখে ইয়াশা এখনো ঘুমায়নি। ইয়াশা রাসিফ কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
-আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? (ইয়াশা)
-আপনি শুনে কি করবেন? আর ঘুমাননি কেনো?? (রাসিফ)
-আপনি আসছিলেন না
-তো কি হয়েছে আপনি আপনার মতো ঘুমালেই পারতেন
-আমার খাবার এনে রেখেছি খেয়ে নিন
-আমি বাইরে থেকে খাবার খেয়ে এসেছি, পেট ভরা আছে আমি এখন খাবো না
-ওহহহহ..
,,
ইয়াশা আর জোর করলো না। রাসিফ তার মতো শুয়ে পড়লো। ইয়াশাও তার জায়গায় শুয়ে পড়লো তবে বিপরীত দিকে মুখ করে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই রাসিফ বলল..
-আপনি খেয়েছেন? (রাসিফ)
-না (ইয়াশা ধীর গলায় বলল)
-কেনো?
-খুদা নেই
-আপনি তো এমনিতেই শুটকি শরীরে তো গোশত বেশি নেই। কোথায় একটু বেশি বেশি খাবেন, সেটা না করে না খেয়েই শুয়ে পড়েছেন। উঠেন খেয়ে নেন
-না আমার পেট ভরা আছে
-কি খেয়েছেন যে পেট ভরা আছে?
-কিছু না
-এমনি পেট ভরেছে
,,
রাসিফ বিছানা থেকে উঠলো। টেবিলে রাখা খাবার এর প্লেট টা নিয়ে ইয়াশার কাছে আসলো।
-এই উঠেন এখন খেতে হবে (রাসিফ)
-সত্যি আমার খুদা নেই (ইয়াশা)
-উঠতে বলছি কিন্তু
-…(ইয়াশা উঠে বসলো)
,,
রাসিফ হাত ধুয়ে নিজ হাতে খাবার মাখালো।
-আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি (রাসিফ)
-আপনাকেও খেতে হবে (ইয়াশা)
-তা তো জানি আমাকে খেতে হবে। আপনি আর আপনার বাচ্চার জন্য হলেও আমাকে খেতে হবে
-আমার বাচ্চার জন্য মানে
,,
ইয়াশা খাবার একবার মুখে নিলো, রাসিফ তখন বলতে শুরু করলো..
-আমি যদি না খাই তাহলে আপনি খাবেন না, আর আপনি না খেলে আরও শুকিয়ে যাবেন। কিছুদিন পর যে বাচ্চার মা হবেন তাকে সামলাবেন কিভাবে? ভালো স্বাস্থ্য তো দরকার তাই না?
,,
রাসিফ এর কথা শুনে ইয়াশা ভাত চিবানো বন্ধ করে দিয়েছে, এখন সে রাসিফ এর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? মুখের ভাত শেষ করেন (রাসিফ)
-আমার বাচ্চা হবে কবে? আপনি কি রিপোর্ট পেয়েছেন (ইয়াশা)
-মজা করেন তাই না? সামনে তো হবেই তাই এখনও সময় আছে শরীর টাকে একটু ভালো করেন
,,
ইয়াশা লজ্জায় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না রাসিফ কে জড়িয়ে ধরলো।
-আরে আমার হাতে ভাত আছে, আপনার শরীরে লেগে যাবে ছাড়েন (রাসিফ)
-…(ইয়াশা ছাড়লো)
-হঠাৎ করে এমন করলেন কেনো?
-আপনি এভাবে বলেন কেনো?
-তো কিভাবে বলব? সোজা কথা সোজা ভাবেই বলেছি
-হুমমম
,,
গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ হলো তাদের। এখন দুজনই খুব খুশি।
এরপর থেকে প্রত্যেকটা রাত ইয়াশা রাসিফের বুকেই কাঁটাতে শুরু করলো। তাদের সম্পর্ক যত গাঢ় হতে থাকে ততই বিয়ের আগের সম্পর্কের মতো হতে থাকলো। অনেকটা দা মাছের মতো। কেউ একজন ভুল খুঁজে পেলে সেটা নিয়ে মারামারি রাগারাগি, আর দিনশেষে দু’জন কান্না করে একে অপরের বুকে।
,,
তবে তাদের এই সুখ বেশিদিন টিকলো না। একদিন সকালে রাসিফ অফিসে যাচ্ছিলো সে যাওয়ার পথেই এক্সিডেন্ট করলো। এক্সিডেন্ট টা এতটাই মারাত্মক ছিলো যে তার জীবন খুব ঝুঁকিতে ছিলো আর তার একটা পা ও কেটে ফেলা হয়।
,,
সেই এক্সিডেন্টের ধকল সামাল দিতে ছয় মাস এর বেশি লেগে যায়৷ রাসিফ এখন স্টীক এর উপর ভর করে হাঁটে।
রাসিফ এর এই ছয় মাসের বেশি সময়ে এক মিনিট এর জন্যও আড়াল হয়নি ইয়াশা। ইয়াশার জন্যও সে এই সময়টুকুও বেশ ভালোভাবেই পার করেছে। অসুস্থ সময়ে ছিলো আগের মতো খুনসুটি, হাজার টা ভালোবাসা আর সেবা তো আছেই।
,,
একদিন রাসিফ ইয়াশাকে ডেকে তার সামনের চেয়ারে বসতে বলল৷ ইয়াশা বুঝতে পারলো সিরিয়াস কোনো কথা বলবে মনে হয় তাই ইয়াশা তার কথা শোনায় একটু বেশি মনোযোগী হলো।
-শোনেন আমি একটা কথা বলতে চাই আপনাকে (রাসিফ)
-জ্বি বলেন (ইয়াশা)
-আমি তো একটা অঙ্গ হারিয়েছি, চলে ফেরাও আগের মতো নেই। অনেক কিছুতে আপনার অসুবিধা হতে পারে। আমার তো আর নতুন পা হবে না সারাজীবন এভাবে থাকতে হবে। যদি আপনার অপছন্দ বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্বস্তি বোধ হয় তাহলে আমাকে বলবেন। আমি জানি না আপনার অসুবিধা হচ্ছে কি না, যদি হয় আমি আপনার চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো..
-দাঁড়ান আমি একটু আসি
-কোথায় যাবেন
-দা আনতে যাচ্ছি
-দা দিয়ে কি করবেন?
-আপনার আরেকটা পা কাটবো। তারপর ইচ্ছা মতো ভালোবাসবো সেবা করবো
-……..(রাসিফ চুপ)
-তোর সাহস হয় কি করে এত বড় কথা বলার? আমি গেলে তো ছয় মাস আগেই চলে যেতাম। আর তখনও যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তুই আমার সবকিছু আমি তোকে ছাড়া কই যাবো? আর তুই বলিস এগুলা কথা
-আমি তো..
-চুপপ তুই একটা কথা বলবি না। আজেকই খালুকে বলে ডক্টর এর কাছে নিয়ে গিয়ে আরকটা পা কেটে নিয়ে আসবো
-সরি
-কিসের সরি? এতদিনে এসে এসব কথা বলা তাই না? আমি তোর কলিজা এটা তুই বুঝিস না
-আমি তো একটু জানতে চাইলাম
-তুই জানতে চাইবি কেনো? এসব কথা তোর মনে আসবে কেনো? ওহ বুঝেছি আমার যদি এরকম একটা পা বা হাত না থাকে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি তাই না.
-কখনো না
-তাহলে নিজের বেলায় এসব ভাবিস কেনো
-আমার ভুল হয়েছে
-অনেক বেশি কষ্ট দিলেন, আমি কই আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি আর আপনি এখন এসব বলছেন
,,
ইয়াশা তো রাগে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। তারপর ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। রাসিফ স্টীকের উপর ভর করে উঠে দাঁড়ালো। হাত দিয়ে ইয়াশাকে নিজের কাছে টেনে বুকের একপাশে নিলো। ইয়াশা কান্না করে রাসিফ এর শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে৷
-এভাবে কান্না করে ভিজিয়ে দিচ্ছেন আমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে (রাসিফ)
-লাগুক (কথাটা বলে সেই আগের মতো কান্না)
-আমি আর কখনো এমনটা বলব না।
-বললে কেনো?
-আমি জানি না আমার ভুল হয়েছে
-হুমমমম
-এখন কান্না বন্ধ করো
-তাহলে ভালোবাসো একটু
,,
রাসিফ মিষ্টি হেঁসে ইয়াশার চোখের পানি মুছে, চোখে কপালে চুমু খেলো।
-আমি তোমাকে দেই? (ইয়াশা)
-হুমমম দাও (রাসিফ)
-…(ইয়াশাও রাসিফের চোখে কপালে চুমু খেলো)
-আরও লাগবে
-না এখন লাগবে না। আচ্ছা তুমি আজ অফিসে গেলে না কেনো? আজ তো অফ ডে ছিলো না
-তোমাকে জ্বালানোর জন্য
-ওহহ সারাদিন এসব কথা বলবা আর আমার মাথা গরম করিয়ে দিবা তাই না?
-শেষে আবার ভালোবাসবো তো
-না না আমার এমন ভালোবাসার দরকার নেই
-আমি এমন না করলে তুমিই আবার অভিযোগ করা শুরু করবে
-অভিযোগ বক্সে তো অনেক অভিযোগ পরে আছে, আমি কিছু বলছি না
-সেগুলো কি??
-গুরুত্বপূর্ণ দুইটা বলি
-বলো
-এক নম্বর হলো তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাও না। শেষ কবে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলে মনে নেই আর দ্বিতীয় টা হলো ঘরে আরও একজন লাগবে
-আরও একজন লাগবে মানে?
-বোঝো না
-না
-মানে নতুন সদস্য লাগবে
-তুমি আমাকে আরেকটা বিয়ে করতে বলছো!
-ওই ওই আমি কখন আরেকটা বিয়ে করতে বললাম
-এই যে নতুন সদস্য
-মানে আমার তোমার থেকে যেটা আসবে
-ওহহহ
-বুঝেছেন এবার (ইয়াশা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল)
-হুমম বুঝেছি
-আসবে তো??
-হুমম এখন তো নিয়ে আসা যায়
-ধন্যবাদ আপনাকে আমার কথাটা রাখার জন্য
-স্বাগতম
-চলো আড্ডা দেই
-কোথায়?
-ছাদে
-না ওখানে রোদ এখন
-তাহলে কোথায়?
-আমার বুকে এত জায়গা থাকতে জায়গা খুঁজে পাচ্ছো না?
-পাগল একটা
-স্নেহের অবজেক্ট একটা
-কি বললা?
-স্নেহের অবজেক্ট
-অর্থ কি?
-এটার অর্থ ব্যাখ্যা করা যাবে না। মানে আমি পারবো না ব্যাখ্যা করতে
-কেনো?
-আমি প্রতিদিন আমার ভালবাসার আপডেট ভার্সন পাই
-তাহলে তুমিও আমার স্নেহের অবজেক্ট, আমিও আমার ভালবাসার প্রতিদিন নতুন আপডেট পাই

END

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here