স্নেহের অবজেক্ট,Part : 3

স্নেহের অবজেক্ট,Part : 3
Write : Sabbir Ahmed

-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?(রাসিফ)
-…(ইয়াশা রাসিফ এর গালে মারলো এক চর)
,,
রাসিফ গাল ধরে ইয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইয়াশা রাগে ফুসছে।
-বুঝলাম না কি হলো এটা (রাসিফ)
-এটা কি করলি তুই? (ইয়াশা)
-তোর বিয়ে ভাঙলাম
-একটা ভেঙে তো আরেকটা জোরা দেওয়ার উপক্রম করলি
-কই না তো
-তুই যে কথা বললি, এখন যদি তোর আর আমার বিয়ে ঠিক করে উনারা
-তো কি হয়েছে বিয়ে হলে হবে
-জীবনেও না, আমি ফান করছি না রাসিফ। আমি সিরিয়াস, তুই কি করলি এটা?
-ভুল করেছি?
-বুঝতেছিস না তুই?
-শোন আমাদের যদি তারা ঠিক করে ফেলে তাহলে আমরা দু-বছর সময় নিবো। আর এই দু-বছরে তুই কারও সাথে সেট হয়ে নিস
-….(ইয়াশা চুপ)
-কি এখনও বুঝিস নাই?
-বুঝেছি
-হুদাই চর টা মারলি, সামনে থেকে সর রুমে যেতে দে
,,
রাসিফ রুমে চলে গেলো। ইয়াশা একটু হলেও হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এদিকে তাদের বাবা-মা খাবার টেবিলেই জরুরী মিটিং বসিয়েছে।
রাসিফ এর কথা মতো, রাসিফ আর ইয়াশার সম্পর্কটা সবাই মেনে নিয়ে এখন বিয়ে নিয়ে কথা চলছে।
-ভাই আপনার বাসায় মেয়ে নেই আপনি আর দেড়ি কইরেন না আমার মেয়ে টা রেখে দেন (ইয়াশার বাবা)
-আমিও তো তাই বলি কিন্তু…(রাসিফ এর বাবা)
-কিন্তু কি?
-ইয়াশার জন্য যে পাত্র ঠিক করা হয়েছে
-আরে আমি এখনি মানা করে দিচ্ছি
-বিয়েতে কি অনুষ্ঠান করবে?
-এখন যে পরিবেশ চলছে এর মধ্যে অনুষ্ঠান না করাটাই বেটার হবে। আমরা বরং নিজেদের মধ্যে কিছু লোক নিয়ে কাজ টা সেরে ফেলতে পারি
-হুমম সেটাই করেন
,,
কথাবার্তা শেষে সিদ্ধান্ত হলো এক সপ্তাহের ভেতরে তাদের বিয়ে। আর বিয়েটা রাসিফ দের বাসা থেকেই হবে। ওদিকে রাসিফ ইয়াশা তো জানেই না তাদের নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
,,
বড়জনেরা তাদের রাতে আর কিছু জানালো না। পরদিন সকাল বেলা রাসিফ এর বাবা ইয়াশা আর রাসিফ কে ডাকে সেখানে ইয়াশার বাবাও ছিলো।
-আচ্ছা তোমরা আমাদের আগে বললেই পারতে এত দেড়ি করলে কেনো? (রাসিফের বাবা)
-…(রাসিফ আর ইয়াশা দুজনই মাথা নিচের দিকে দিয়ে আছে)
-শোনো তোমাদের জন্য একটা ভালো খবর আছে, এই সপ্তাহেই তোমাদের বিয়ে
,,
কথাটা শোনা মাত্রই ইয়াশা আর রাসিফ চোখ বড় বড় করে ফেলল।
তাদের বুকের মধ্যে ধুকপুকানিও শুরু হয়ে গেছে।
-বাবা আমি বলি কি বছর দুয়েক পর বিয়েটা হলে… (রাসিফ)
-চুপ কর তুই, কাজ তো করিস না বিয়ে টাও করতে চাস না। বাসায় আটকিয়ে রাখার জন্য এখন তোকে বিয়ে করাচ্ছি (রাসিফের বাবা)
,,
ইয়াশা তো কিছু বলতেই পারবে না তার বাবার সামনে। যা বলার মা কে বলবে। তবে সে দিকটা ভেবেও সে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে কারণ তার মা ও এবার বেশ কঠোর।
,,
এমন চিপায় পরলো দুজন যে উঠে আসার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না তারা। একসময় বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসতে শুরু করে। ইয়াশা রাসিফ এর সাথে কথা বলা একদমই বন্ধ করে দেয়। দেখা হলেও কথা বলে না, ধাক্কা লাগলেও বলে না৷ রাসিফ চেষ্টা করেছিলে কথা বলার ইয়াশা পাত্তা দেয়নি।
,,
ইয়াশার বাবা মা এখানে থেকেই তার আত্মীয় স্বজনদের খবর দিলো। ছোট্ট একটা অনুষ্ঠানের মধ্যে আজ দুজনের বিয়ে হয়ে গেলো। ইয়াশা আর বাঁধা দেয় নি, নিজের ভেতরে কিছু রাগ জমিয়ে রেখেছে। বোঝাই যাচ্ছে সামনে রাসিফ এর দিন ততটা ভালো যাবে না।
,,
রাত তখন এক টা ছুঁইছুঁই। রাসিফ তার রুমে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে, ভেতরে যে ইয়াশা বসে আছে। তবুও মনে সাহস নিয়ে সে ভেতরে ঢুকে দেখে ইয়াশা শাড়ী খুলে ফেলেছে, সে এখন জিফ পরে আছে মানে জিন্স আর ফতুয়া।
,,
রাসিফ এর রুমে প্রবেশ করা দেখতে পেয়ে ইয়াশা বলল..
-তোর সাথে কথা বলারও ও কোনো ইচ্ছে নেই। একসাথে আছি দু একটা কথা না বললেই নয়। যা করেছিস ভালো করেছিস তবে আমার দিকে একদম তাকাবি না, আমার কোনো কিছু নিয়ে নাক গলাবি না৷ আমি কি করবো না করবো পুরোটাই আমার ব্যাপার। আর তুই কোথায় কি করবি না করবি তোর ব্যাপার। খালা খালুর সামনে ভালো ভাবে থাকতে পারি তোর সাথে কথা বলতে পারি কিন্তু তাদের আড়ালে যখন তুই থাকবি তখন তোকে আমি চিনি না (ইয়াশা)
-একটু পানি খেয়ে নি তারপর কথা বল গলা শুকিয়ে গেছে মন হয় (রাসিফ)
-তুই আমাকে তুই করে বলবি না, আপনি করে বলবি
-ঠিক আছে
,,
ইয়াশা বিছানা গুছিয়ে রাসিফ এর জন্য জায়গা রেখে সে শুয়ে পড়ে।
রাসিফ এসে নিজের জায়গায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলো।
-তুই কি রাজশাহী চলে যাবি?? (রাসিফ)
-আবার তুই বলিস(ইয়াশা)
-আপনি কি চলে যাবেন
-আমি যেতে চাইলেও আমাকে নিবে না
-তাহলে এখানে থেকে কি করবেন?
-কি করবো মানে? আর তোকে বলেছি না আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলবি না
-ওকে ওকে
,,
ইয়াশা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে তার চোখে ঘুম নেই রাসিফ এর ও একই অবস্থা। ইয়াশা বিড়বিড় করে কথা বলা শুরু করলো..
-দিলো আমার জীবনের বারোটা বাজিয়ে (ইয়াশা)
রাসিফ একটু শুনতে পেয়ে বলল..
-কয়টা বাজলে ভালো হতো?
,,
ইয়াশা মোচড় ঘুরে রাসিফ এর দিকে তাকিয়ে বলল..
-তোরে কথা বলতে আমি মানা করছি কিন্তু (ইয়াশা)
-তোর মুখ দিয়ে তুই কথা বল, আমার মুখ দিয়ে আমি বলব (রাসিফ)
-ধুররর…(ইয়াশা খারাপ ভাষায় একটা গালি দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো)
,,
তারপর ভাংচুর শুরু করলো, প্রথমে নিজের হাতের মোবাইলটা মেঝেতে ছুঁড়ে মারলো। তারপর টেবিলে থেকে কাঁচের জগ টা হাতে তুলতেই..
-ওটা আমার বাপের টাকায় কেনা, তোর ভাঙার কোনো অধিকার নেই (রাসিফ)
-…(ইয়াশা জগ টা টেবিলে রেখে দিলো)
-পাগল ছাগল নাকি, সবকিছু ভাঙতেছিস কি জন্য?
-আমার ইচ্ছে হইছে
-ধুররর কেন যে তোর কথা শুনতে গেলাম
-কেন? তখন কি অন্য বুদ্ধি মাথায় আসলো না?আমাদের মিথ্যে সম্পর্কের কথা বলতে হলো
-উনারা যেভাবে উঠে পরে লেগেছিলো, এ কথা ছাড়া আমার কিছুই মাথায় আসছিলো না
-শোন কান খুলে শোন আমি তোর সাথে সংসার করতে পারবো না
-আচ্ছা সংসার করতে হবে না, এখন এসে ঘুমা
-ঘুমাতেও ইচ্ছে করছে না
-হাইরে দেখ এত কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, ঘুমালে ঘুমা না ঘুমালে নাই।
,,
রাসিফের চোখে ঘুম চলে এসেছে। ইয়াশা খাটে বসলো। আজ কি ঘটল তার জীবনে সে সেটা নিয়ে ভাবছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে সে ঘুমিয়ে যায়।
,,
পরদিন সকাল বেলা আগে জাগনা পায় ইয়াশা। চোখ খুলে বামে তাকিয়ে দেখে রাসিফ নেই। সে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলো।
প্রথমেই মায়ের সাথে দেখা…
-রাসিফ উঠেনি? (ইয়াশার মা)
-আমি তো তাকে রুমে দেখলাম না, আগেই উঠেছে (ইয়াশা)
-তাহলে বাথরুমে মন হয়
-না আমি তো মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলাম
-ও তো বাসায় নেই
-আরে কোথাও মনে হয় গেছে
-না ওকে দরকার আছে
-কি দরকার?
-ওর বাবা ওকে খুঁজতেছে
-ফোন দিতে বলো
-তুই একটু দে
,,
ইয়াশা ফোন দিয়ে দেখে ফোন বন্ধ।
-মা ফোন তো অফ (ইয়াশা)
-ছেলেটা কই যে গেলো। আমি সকালে একবার বাইরে দেখেছিলাম। আবার ভাবছি যে রুমে হয়তো আসছে। তুই বলতেছিস রুমে নেই আবার ফোন অফ তাহলে গেলো কই
-তুমি তো ওরে চেনো ওর যাওয়ার জায়গার অভাব নেই খুদা লাগলে ঠিক চলে আসবে
-হুমমমম আচ্ছা
,,
ঠিক তাই হলো সকালের খাওয়ার সময় রাসিফ এসে হাজির। সে এসেই বাবার কাছ থেকে আলাদা করে বকুনি শুনলো তবে সেটা সবার আড়ালে। তারপর সবাই একসাথে খেয়ে নিলো।
,,
খাওয়া শেষে রাসিফ ইয়াশা তাদের রুমে…
-শুনলাম খালা খালু আজই চলে যাবে (রাসিফ)
-হুমম যাবে (ইয়াশা)
-তুই ও চলে যা
-আমাকে সাথে নিবে না
-কেনো??
-আমার তো বিয়ে হয়েছে
-হুমমম
-তুই আমার জীবনে পূর্ণতা আনতে দিলি না
-এখনও সময় আছে আমি তোকে আটকাইনি, তুই যা তোর বাবা মায়ের সাথে
-তুই ব্যবস্থা করে দে
-হুমমম দেখি চেষ্টা করে, তবে হ্যাঁ একটা লাইফ পার্টনার খুঁজে নিস কেমন
-আর তুই?
-আমি তোকে ছেড়ে দিবো। চিপায় ফেলেছি তোকে, সেখান থেকে ছাড়িয়ে দিবো
-সত্যি???
-তিন সত্যি
-হুমম
-তুই খুশি তো?
-খুব
-ওকে ডান কাজ হয়ে যাবে। খালা খালু কোথায়?
-আমার বাবা একটা কথা বলেছিলো তোর মনে আছে
-কি কথা?
-এ বাড়িতে মেয়ে নেই তাই সে একটা মেয়ে রেখে যাচ্ছে
-আচ্ছা তুই এখান থেকেই তো অনেক কিছু করতে পারিস আমি তোকে হেল্প করবো
-কথাটা খারাপ বলিস নি
-শোন যেভাবেই পারি আমি তোকে মুক্ত করে দিবো আর তোর জীবনে পূর্ণতা আনতে হেল্প করবো

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here