#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১০
#Mishmi_muntaha_moon
‘ আমার এইসব থেকে ব্রেক চাই সেহরিশ।আপনি বুঝতে পারছেন তো আমার কথা?’
উপমা কথাটা বলে মাথা নিচু করে চুপ করে যায়।অনেকক্ষণ পরেও কোনো আওয়াজ না শুনে সেহরিশের দিকে তাকায়।সেহরিশ নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপমার দিকে।উপমাও যেনো সেহরিশের গহীন চোখে ডুবে গেলো।সেহরিশ হঠাৎ উপমাকে বুকে মিশিয়ে নেয়ায় হতবাক হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে।
সেহরিশ বিনাবাক্যে উপমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।উপমা না পেরে সেহরিশের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল
‘আপনি কি শুনতে পান নি কি বললাম।আই নিড আ ব্রেক ফ্রম ইউ এন্ড ফ্রম অল অফ দিস।’
সেহরিশ শান্ত ভঙ্গিতে বলল
‘না আমি বুঝতে পারি নি তোমার কথা, বুঝতে চাই ও না।তুমি বলো কার মুখের কথা আওরাচ্ছো। তুমি এইসব বলার মেয়ে নও আমি জানি।’
সেহরিশের কথায় উপমা চুপ হলো।কিছুক্ষন বসে থেকে বলল
‘এইসব আমি বলছি আমার নিজের থেকে।’
উপমা চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।সেহরিশও দাঁড়িয়ে কফির বিল টেবিলে রেখে উপমার হাত ধরে হাটা ধরলো।উপমাকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে সেহরিশ গাড়ি চালাতে লাগলো।উপমা নামাতে বললে সেহরিশ কোনো জবাব দিলো না।কল আসায় কাটতে নিয়েও আবার রিসিভ করলো সেহরিশ।
‘হ্যালো?’
_________
‘তুই সামলে নে আমি আসতে পারবো না।’
বলে কেটে দিলো।উপমা সেহরিশকে এমন গম্ভীর দেখে কিছু বলার সাহস পেলো না।সেহরিশকে গাড়ি থামিয়ে নামতে দেখে উপমাও সাহস জুগিয়ে নামলো।আশেপাশে তাকাতেই দেখলো ফুলের বাগান। ফুলের বাগানের মাঝ বরাবর কিছুটা এগিয়ে একটা ১তলার বাড়ি ছোটোর মধ্যে খুবই সুন্দর।নিরব নিস্তব্ধতায় ঘেরা।শুধু ফুল গাছ না ডানে বামে অনেক বড় বড় ফল গাছ ও আছে।এক কথায় ছায়াময় নিবিড় জায়গা।
সামনে সেহরিশ কে দেখে উপমা বিরক্ত ফুটিয়ে তোলে মুখজুড়ে।কি করতে চাইছে সেহরিশ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।সেহরিশ উপমা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল
‘কি বলতে চাও বলো শুনি?’
সেহরিশের এমন স্বাভাবিক কথায়ও উপমা কিছুটা ঘাবড়ালো।কি বলবে না বলবে সব এলোমেলো হয়ে গেলো যেনো।গলা ঝেড়ে মৃদু কন্ঠে বলল
‘ আমি কোনো রিলেশন করতে চাই না।আপনি ভুলে যান সব আর আমাকেও।’
সেহরিশ ঠোঁট চেপে উপমার সামনের চুল কানে গুজে দিয়ে বলল
‘তো আমরা রিলেশনে আছি কে বললো তোমায়?আচ্ছা এইসব বাদ দাও কেনো এইসব বলছো তা বলো। কে কি বলেছে?’
‘কেউ কিছুই বলে নি আমি সব আমার থেকেই বলছি।আমার রিলেশন অথবা যাই বলেন না কেনো আর ভালো লাগছে না আমি শেষ করতে চাই সব এখানেই।আর এখন আমাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসুন।আমি এইখান থেকে যেতে চাই।’
বলে উপমা গাড়িতে গিয়ে বসলো।ভেবেছিলো একাই চলে যাবে কিন্তু কিছুই তো চিনে না তাই সেহরিশের সাথে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।
সেহরিশ ও কিছুক্ষন পর গাড়িতে এসে বসে।গম্ভীর কন্ঠে বলে।
‘তোমার বাবা কিছু বলেছে তাই তো?’
উপমা ঢোক গিললো। কথা পালটে বলল
‘নাহ এমন কিছুই না।যার কোনো মানে নেই তা ঘেটেও লাভ নেই।আপনি বাড়ি পৌছে দিন আমায়। ‘
সেহরিশ উপমাকে নিজের কাছে টেনে নিলো। হঠাৎ টানে উপমা সেহরিশের উপর গিয়ে পড়লো।সেহরিশ উপমাকে জরিয়ে ধরতেই উপমা কিছুক্ষন স্থব্দ থেকে মুচড়া মুচড়ি করতে থাকে
‘উপমা স্টপ। তোমার এইসব কথা বন্ধ করো।যা হচ্ছে হতে দাও আমি সামলে নিবো পরবর্তীতে যা হবে।’
সেহরিশের কথায় উপমা রেগে কিছুটা জোড়ে বলল
‘আমি চাই না আপনি সামলান কেনো জোড় করেন সবকিছুতে?’
‘তো কি চাচ্ছো তুমি?’
সেহরিশ দাতে দাত চেপে উপমাকে প্রশ্ন করলো।উপমা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলল
‘ আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই।’
‘তা হবে না কখনো।’
সেহরিশের সোজা জবাব।উপমা বিরক্ত হল সেহরিশের একই রেশ টানা কথায়।উপমা নিজেকে সামলাতে না পেরে রেগে গিয়ে বলল
‘কেনো হবে না।কেনো হবে না আমি চাওয়ার পরেও।’
উপমার কথায় সেহরিশও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।গাড়ির স্টিয়ারিং এ বার কয়েক বারি দিয়ে বলল
‘আমি হতে দেবো না তাই।’
বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।উপমা সেহরিশকে রেগে যেতে দেখে আর কোনো কথা বলল না।গাড়ির স্বাভাবিকভাবেই চালাচ্ছে সেহরিশ। রাগ গুলো যেনো দেখাতে চাইছে না।উপমাও তাই চুপ থাকলো কারণ উপমা সেহরিশের রাগ দেখতে চায় না একদম।
__
নিজের রুমে চুপটি মেরে বসে আছে উপমা সকালে খেয়েছে তারপর আর খেতে বের হয় নি রুম থেকে।সেহরিশ বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই উপমা নেমে পরেছিলো আর সেহরিশ কোনো রকম শব্দ করে নি কিছুই বলে নি।
উপমার একটু খারাপ লেগেছে কিন্তু স্বীকার করতে চাইলো না।বুকটা ভার হয়ে আছে সেহরিশ কি তাহলে তার কথা মেনে গেলো। চোখ জ্বালাপোড়া করছে।দরজার আওয়াজ শুনে চোখের পানি মুছে বইয়ে তাকিয়ে থাকলো।
‘উপমা?’
উপমা তার মার কন্ঠ শুনে বই বন্ধ করে তার মার দিকে তাকালো।ঠোঁট উলটে মন খারাপ করে বসে রইলো।
‘সেহরিশের সাথে দেখা করেছিলি?’
‘হুম?’
‘আমি যা বলতে বলেছিলাম বলেছিস?’
উপমা তার মার কথায় শুনে মাথা উচিয়ে উনার দিকে তাকালো।দাতে দাত চেপে বলল
‘রাজনীতি উনার পেশা নয় এইটা উনার নেশার।তার ছোটোবেলার একটা শখ আমি কি করে ছেড়ে দিতে বলি।উনি যদি সমাজের সেবা করতে চায় আমি তাকে কখনো বাধা দিবো না।’
উপমার কথা শুনে ওর মা চুপ করে গেলো।স্বামীকে নিজেও বুঝিয়েছে কিন্তু কারো কথা শুনতে রাজী না।কিছু ভেবে উপমার মা উপমাকে আবারও বলল
‘আচ্ছা সেহরিশের জন্মদিনে যে তুই আর সেহরিশ রাতে ফিরলি কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো সত্যি করে বলবি। ‘
উপমা তার মার কথা চমকালো।কিভাবে জেনে গেলো ভাবছে। তার মা আবারও তাড়া দেয়ায় মৃদু কন্ঠে বলল
‘হুম।কিন্তু আমি ব্যথা পাই নি উনি আমাকে কিছুই হতে দেয় নি।কিন্তু এই ঘটনা তো রাতে ঘটেছে, তোমাকে কে বলেছে?।’
উপমার কথা শুনে তার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
‘তোর বাবা বললো আমাকে।তোর বাবা কোথা থেকে শুনলো এই ব্যাপার টা তাহলে?’
উপমাও অবাক হলো।রাতের ব্যাপারটা তো তার আব্বুকে বলার মতো কেউ জানে না তাহলে!’
__
রাবেয়া বেগম চিন্তিত হয়ে হল জুরে পায়চারি করছেন।এতোমাস পর ছেলের হাতে সিগারেট দেখলো।তারউপর রুমে গিয়েও দরজা বন্ধ করে দিলো।মাঝে দুই তিনবার কিছু ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। ছেলেটার কি হলো।
প্রায় ১ঘন্টা পর সেহরিশ নিজের রুমের দরজা খুললো।দরজা খুলতেই রাবেয়া বেগম ছেলের নিচ উপর দেখতে লাগলো কিছু হলো কি না আবার।
উষ্কখুষ্ক চুল গায়ে নেভিব্লু রঙের শার্ট। সেহরিশ বারান্দায় গিয়ে তার মার উদ্দেশ্যে বলল
‘আমি ঠিক আছি যাও তুমি।’
ছেলের এমন অবস্থা দেখে রাবেয়া বেগম চিন্তিত। তবুও কিছু না বলে নিচের ভাঙা কিছু কাচ তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরুলো।
নিজের অজান্তে একের পর এক সিগারেটের ধোয়া উড়ালো।কাশি উঠতেই হাতের অর্ধেক সিগারেটের টুকরা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষলো।
বারান্দা থেকে বের হয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করে সেহরিশ,জানালার পর্দা সব বন্ধ করে ঘর পুরো অব্ধকার করে তুলে। বিছানায় এলোমেলো দেহ এলিয়ে দিতেই ফোন বাজে।রিসিভ করে কানে ধরতেই আওয়াজ শুনে অবাক হয়।
‘আসসালামু আলাইকুম আংকেল।কোনো জরুরি কথা?
অপরপক্ষের কথা মনোযোগ দিয়ে সেহরিশ শুনলো।কল কাটতেই কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো।দাতে দাত চেপে হাতের ফোন নিচে ছুরে ফেললো।ফোনের অংশবিশেষ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।চুল গুলো দুই হাত দিয়ে পিছে ঠেলে দিয়ে উঠে দাড়ালো।
মাত্র অন্ধকার ছরাচ্ছে গগনজুড়ে।রাবেয়া বেগম সোফায় মাথা এলিয়ে বসে আছে।সেহরিশকে বাড়ির শার্ট গায়েই বেরিয়ে যেতে দেখে দ্রুত দাঁড়িয়ে সেহরিশকে আটকাতে চায়।কিন্তু সেহরিশ কারো কথা শোনার অবস্থায় নেই আপাতত।
রাবেয়া বেগম বারকয়েক সেহরিশের মুঠোফোনে কল দেয়।মোবাইল বন্ধ পেয়ে শেষে না পেরে উপমার মার ফোনে কল লাগালো।উপমার মার কথা শুনে বুঝতে পারলেন সেহরিশের আচরনের কারণ। কিন্তু এতো রাতে যে রেগে ঘর থেকে বেরুলো এইটা তো খুবই চিন্তার বিষয়।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)