গল্পঃ#সময়টা_প্রতিশোধের (২য় পর্ব)
লেখায়ঃ#তাজরীন_খন্দকার
অভি নিজের বুকের উপরে হাত রেখে আশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে আর একটা সেনসেটিভ কথা বাকি আছে যেটা আশার মুখে শুনলে নিশ্চিত সে এখন হার্টঅ্যাটাক করবে!
এটা ভাবতে দেরি হয়েছে কিন্তু আশা বলতে দেরি করেনি। সাথে সাথে বলে ফেললো..
___ আপনি হয়তো ভালো করেই জানেন, কারো মনের বিরুদ্ধে কাজ করা কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও অভিন্ন হবেনা। আমি আপনাকে বিয়ে করলেও ভবিষ্যৎে পরকীয়ায় জড়ানোর সম্ভাবনা আছে। কারণ আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।
তৎক্ষনাৎ অভি পানি পানি বলে চিৎকার করে উঠলো। সামনে থেকে ড্রাইভার পানির বোতল পেছনে এগিয়ে বলল..
__ কি সমস্যা স্যার? আপনি ঠিক আছেন তো?
অভি কোনো কথা না বললে এক নিঃস্বাসে পুরো আধা কেজি পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।
তার মনে একটাই চাপা ব্যথা, এতো বছর পর বিয়ে করতে পারলাম,সেই বউ কিনা পরকীয়া করবে!
এদিকে আশার চোখেমুখে পাষবিক তৃপ্তি। এতদিনের ব্যথাতুর এই বাক্যগুলো বলে কিছুটা শোধ হাসিল হয়েছে। পুরো পাঁচটা বছর এই কথাগুলো আশার গায়ে প্রবল জ্বালা করেছে। অভিও তখন আশাকে বলেছিল..
__তাকে তার পছন্দ হয়নি, তাই বিয়ের পরে নিঃসন্দেহে পরকীয়ায় জড়াবে।
এসব শুনে কেই বা বিয়ে করতে রাজী হবে?
কিন্তু আশা এই অভি ছেলেটাকে গোপনে নিজের মনের আঙ্গিনাটা লিখে দিয়েছিলো৷ এরপর যখন তার কাছ থেকে জগণ্যভাবে বিতারিত হলো তখন সেই আঙ্গিনার রূপ দিয়েছে প্রতিশোধের স্পৃহায়।
বাকি রাস্তায় অভির কথা বলার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। পানি খেয়ে মুখ হা করে চোখ বন্ধ করে, কান বন্ধ করার ভান করে সিটের একপাশে পড়ে রইলো।
বাড়িতে পৌঁছে, গাড়ী থেকে নেমে অভি উধাও। তার কোনো খোঁজ নেই,কাউকে না বলেই সে বেপাত্তা।
অভির পরিবার জানতোনা এর আগে বিয়ের জন্য আসলে অভি দায়ী ছিল। তারা কোনোটাই জানতোনা। কারণ অভি একটা দুইটা নয়,অসংখ্য বিয়ে ভেঙেছে এভাবে। পছন্দ না হলে সে মেয়েকে এসব বলে,মেয়েপক্ষ থেকে বিয়ে বাতিল করেছে।
কারণ কনেপক্ষ রাজী হলে তার মায়ের জন্য হলেও তখন মাস্ট বিয়ে করে ফেলতে হতো। আবদারটা ছিল তার মায়ের।
এদিকে রাত ১১ টা বেজে গেছে। অভির কোনো পাত্তা নেই। আশাকে অভির রুমে বসিয়ে অভির ছোট বোন অনেক্ষণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু অভি আসছেনা বাসায়। রাত প্রায় ১ টা। সবাই যার যার রুমে চলে গেলো। আশাকেও ঘুমিয়ে যেতে বললো। অভির মা আশাকে বুঝালো, তার মনে হয় জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই বাসায় আসছেনা। অভি ভুল করে মোবাইলটাও নিয়ে যায়নি। তুমি চিন্তা করো না,ঘুমিয়ে যাও।
বলেই আশার শাশুড়ী চলে গেলো।
শাশুড়ীর চলে যাওয়ার পরে আশা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেলো,সে নাকি অভির জন্য চিন্তা করবে। অভি না আসলে ভালো, সে একা রাজ করে ঘুমাবে। কারো জন্য চিন্তা করার সময় তার কাছে নেই।
অভিকে গাড়ীতে বলা কথাগুলোর কথা মনে হতেই আশার অদ্ভুত প্রশান্তি অনূভব হচ্ছে। হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজে আশা বুঝলো মনে হয় এতক্ষণে অভি সাহেব এসেছে। ইচ্ছে করেই ঘুমের ভান ধরে পুরো বিছানা দখল করে এলোপাতাড়ি হয়ে শুয়ে রইলো। অভি আস্তে করে রুমে প্রবেশ করে প্রথম বিছানায় তাকালো,এরপর পা টিপে টিপে বারান্দায় চলে গেলো। দুই মিনিটের মধ্যে রুমে সিগারেটের বিশ্রী গন্ধ আসতে লাগলো,আশা নাক চেপে কোনো রকম হজম করলো বিষয়টা। কিছুক্ষণ পরে অভি আবার রুমে আসলো। একটু পায়চারি করে আবার গেলো বারান্দায়।
বারান্দায় যাওয়ার সাথে সাথে আশা উঠে ধপাস করে বারান্দার দরজা দিলো বন্ধ করে। তখনি অভি দরজার উপর হাত রেখে বলল..
__ কি করছেন,আমি বারান্দায় আছি,প্লিজ বন্ধ করবেন না। আমি এখানে কিভাবে থাকবো সারারাত?
আশা মিটমিট করে হাসতে হাসতে আবার এসে শুয়ে পড়লো। অভি বাইরে থেকে ডেকে যাচ্ছে একটু পর পর। বার বার ডাকে বিরক্ত হয়ে আশা জোরে সাউন্ড করে বললো..
___ এভাবে বারবার বারান্দায় যাওয়া আসা আপনার জন্য অসুবিধা হচ্ছিলো, তাই একদম পারমানেন্ট ওখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম। এখন বিরহ মেটাতে যত পারেন সিগারেট খান,শুভ রাত্রি!
আশার কথা শুনে বারবার অভি নিজেকে প্রশ্ন করছে আচ্ছা আমি জামাই নাকি সে আমার জামাই? আমি কেন ভয় পাচ্ছি তাকে? আমাকে একজন ভীতু বউ মনে হচ্ছে তার। কাপুরষ বলে নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে অভি। কিন্তু আশাকে কিছু বলতে পারছেনা।
রুমে লাইট অন রেখেই আশা ঘুমাতে গেল। ভারী শাড়ী পরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছিলো না,বারবার এপাশ ওপাশ করছিলো। ঘুমটা কেমন জানি হালকা লাগছে, ঘুমাচ্ছে কিনা সজাক আছে বুঝতে পারছেনা৷ প্রায় ঘন্টাখানেক এভাবে থাকার পর আশার মনে হলো শাড়ীটা বদলানো দরকার। আস্তে আস্তে চোখ খোলে হাত ভর করে বারান্দা পাশে জানালার দিকে এগিয়ে গেলো৷ পর্দাটা সরিয়ে গ্লাসের ওপাশে অভি কি করছে দেখতে যাবে ঠিক তখনি সে লাফ দিয়ে দুই হাত পেছনে সরে গেলো, আশার বুক ধুকপুক করছে,সারা শরীর কাঁপছে। জানালার ওপাশে সে ভয়ানক কিছু দেখেনি।
দেখেছে অভি ফ্লোরে বসে জানালার পর্দার আড়ালের একটু ফাঁকে ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছে, আশা এটা কল্পনা করতে পারেনি যে এখানে এসে অভি বসে থাকবে৷ তাই নিজের কল্পনার বাইরে এমন আকস্মিকতা তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।
এমনটা সবারই হয়,এমনভাবে কাউকে হঠাৎ দেখলে প্রচন্ড ভয় লাগে।
আশাকে দেখেই অভি ড্যাবড্যাব করে অসহায় কাতুরে হয়ে তাকালো। বসা একটু উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বললো..
-___আমি আর ঘরে বাইরে আসবো না,প্লিজ দরজাটা খোলে দেন না।
–
সাথে সাথে আশা হাত বাড়িয়ে পর্দা ছড়িয়ে দিলো। এখন আর বাইরে থেকে ভেতরে কিছু দেখা যাচ্ছেনা।
অভির এই মায়াময় দৃষ্টি যেন মূহুর্তেই আশাকে খুন করতে যথেষ্ট!
অভিকে একসময় ভালোবেসেছিলো,কিন্তু তার চোখে এমন অনূভুতি কখনো ফিল করেনি। এটা কেমন লাগছে আশার সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।
কিছুক্ষণ নিরব হয়ে বসে রইলো।
অতঃপর আশা ধীর পায়ে দরজার দিকে গেলো,দরজার উপরে হাত রেখেও সে আবার সরে আসলো। কিসের যেন একটা বাধা তাকে আটকে ফেলেছে। নাহ সে দরজা কোনোভাবেই খোলবেনা। অনেক শাস্তি পাওয়ার আছে অভির!
চলবে..