সময়টা_প্রতিশোধের(৩য় পর্ব)

গল্পঃ#সময়টা_প্রতিশোধের(৩য় পর্ব)
লেখায়ঃ#তাজরীন_খন্দকার

অতঃপর আশা ধীর পায়ে দরজার দিকে গেলো,দরজার উপরে হাত রেখেও সে আবার সরে আসলো। কিসের যেন একটা বাধা তাকে আটকে ফেলেছে। নাহ সে দরজা কোনোভাবেই খোলবেনা। অনেক শাস্তি পাওয়ার আছে অভির!

কিন্তু আশার ভেতরে কেমন যেন কচকচ করছে। দরজা উপরে পিঠ ঠেকে এখানেই বসে পড়লো।
একটু পর পর জানালা উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু পর্দার জন্য কিছুই দেখা যায়না। এমন করতে করতে দরজাতেই হেলান দিয়ে আশা ঘুমিয়ে গেলো,
ফজরের আজানের সাথে সাথে সে লাফিয়ে উঠলো।
সকাল হয়ে যাচ্ছে,বাসার কেউ যদি জানে অভি সারারাত বাইরে বারান্দায় ছিল অনেক সমস্যা হবে।
আবার পাশের রুমের বারান্দা থেকে এই রুমের বারান্দা দেখা যায়।

আশা আস্তে করে দরজা খোলে সামনে তাকালো,সামনে অভি নেই। আরেকটু সামনে গিয়ে বামে ঘুরে দেখতে যাবে তখনি একটা হেইইই শব্দ শুনে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো,একদম নিচে পড়ার আগেই কেউ তাকে বাহুবন্ধনে আলিঙ্গন করে নিলো। আবারো আশা বোকা হলো, এটা ভয়ংকর আওয়াজ নয়,এটা অভি করেছে, আশার উপস্থিতিতে এমনি এমনি সে এমন আওয়াজ করেছে। এই আওয়াজটার জন্যও আশা প্রস্তুত ছিল না,তাই এটা শুনে ভয় পেয়ে গেছে ।

আশা যখন বুঝতে পারলো এটা অভিরই কাজ,তখন হাত দিয়ে সজোরে তাকে সরানোর চেষ্টা করে বললো..
___ফাজিল, বেয়াদব, বুড়ো হয়েছে এখনো বাচ্চাদের মতো আচরণ পাল্টায়নি। কি ভয়টাই নাপাইছি আমি।

___ হেহেহেহেহেহেহে আমি তো ইচ্ছে করেই ভয় দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

___ ধুর আপনি এখনো বাইরেই থাকেন। আবার দরজা লক করবো।

__এই যে আমার ঘর আমার বাড়ি,আমার বউ,আমার রুম,আমার বেড,আমার বাসরঘর, আর সেই আমি কিনা সারারাত বাইরে ছিলাম?? আবার এখনো থাকার হুমকি দিচ্ছেন,শুনেন আমি এদিকে চিৎকার দিয়ে মানুষ জড়ো করে ফেলবো,এরপর মানুষ দেখবে আমার দাজ্জাল বউয়ের কান্ডকারখানা। দরজা ইচ্ছে হলে বন্ধ করে দেন,শুভ সকাল!

আশা অভির কথা শুনে মুখ টিপে হাসছিলো,বারান্দা থেকে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো, শাড়ী বদলে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে বের হলো। বের হয়েই দেখে অভি বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। এদিকে খেয়াল না করে নামাজ শেষ করলো।
এরপর আবারো বিছানায় তাকিয়ে দেখলো অভি যেখানে শুয়ে আছে তার ওপাশের বালিশের উপরে সিগারেটের প্যাকেট রাখা। এই বাজে জিনিসটা দেখেই আশার মাথা গরম হয়ে গেলো।
আশা এগিয়ে গিয়ে অভিকে বেয়ে প্রথমে হাত বাড়ালো, কিন্তু নাগাল পেলো না। আরেকটু এগিয়ে প্যাকেটটা ধরে ফেলবে,তখনি তার গলা জড়িয়ে গেলো অভির হাত। নিজেকে ভর করে যতটা দুরত্বে ছিলো, সবটাই এখন অভির উপরে।
নিজেকে সংযত রাখতে সে অক্ষম প্রায়।

ইচ্ছে না হলেও সে এখন নিজের উপর কোনো শক্তি পাচ্ছেনা এখান থেকে উঠার। এটা তো হওয়ার ছিলো না। সবরকম চেষ্টাও যেন এখন দুর্বল হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত মাথা তুলে অভির দিকে তাকালো। ভেবেছিল অভিকে চক্ষু ভয় দেখাবে, কিন্তু তাকিয়ে দেখে অভির চোখ বন্ধ। মানে সে এখন ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছে। ফানি সিচুয়েশন!
আশা অভির চোখের পাতা আঙুল দিয়ে টেনে বললো..
__ কি সমস্যা ছাড়ুন আমাকে।

অভি এবার তাকিয়ে খুব ভাবসাব ভাব নিয়ে বললো..
__ তাহলে আমার সিগারেটের প্যাকেটটা সুন্দর করে যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দেন। তবে না রাখলেই ভালো, আপনি এভাবেই থাকবেন! আমার জন্য সিগারেটের পরে এতো তারাতাড়ি আর অন্য কোনো নেশাক্ত কিছু হতে পারে , সেটা এই মূহুর্তের আগে জানা ছিলোনা,সত্যিই!

আশা সিগারেটের প্যাকেটটা একটা ঝাড়া দিয়ে অভির মুখে ছুড়ে ফেললো, আর বললো..
___লন আপনার মেন্ডার নেশা,এখন ব্লেন্ডার করে মাথায় দেন। ছাড়েন আমায়!

অভি আশাকে ছেড়ে বত্রিশ দাঁত বের করে হাসতে লাগলো। আশা একা তাকে শাস্তি দিবে এটা কি করে হয়? অভি যেমন ভুল করেছে আশাও তো তার সব জবাব দিয়েছে,এরপর আবার তার এতো স্বপ্নের রাতটার তেরোটা বাজিয়েছে। প্রতশোধের পাল্লায় কেটেকুটে এখন দুজনেই প্রায় সমান!
তবে তফাৎটা হলো আশা পাঁচ বছর জ্বলেছে,আর অভি মাত্র একদিন। অভিকে সামনে আরো অনেক শাস্তি পেতে হবে। আর আশা এটাই চায়!

সকালের আলো ফুটতেই চারদিকে গমগম আর ব্যস্ততা। আজকে আশাদের বাসা থেকে লোকজন আসবে। অভিদের এখানে খাবার আয়োজন করা হচ্ছে।
আশাকে নিয়েও সবাই সাজসজ্জা আর ফটোগ্রাফিতে মেতে উঠেছে। কতো মানুষ আসে যায়,সবার ভীড়ে আশার চোখ যেন একজনকেই খোঁজে বেড়ায়। সেটা এক অজানা অনূভুতি!

সকালের খাবার আশা রুমে বসেই খেয়েছে। অভির বোন সবকিছু ঠিক রাখছিল এদিকে।
প্রায় দুপুর, কনেপক্ষ থেকে মেহমান আসার সময় হয়ে যাচ্ছে। সেদিন রোদ প্রকটভাবে উঠেছে,বাইরে যারা কাজ করছে তারাও পরিশ্রান্ত। কিন্তু বাড়ির ভেতরে কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। হঠাৎ অভি হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো। তার শার্ট ঘেমে পুরো ভিজে গেছে। মুখে ঘামের ফোঁটা ফোঁটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,
তখন রুমে অভির বোন আর আশা ছাড়া কেউ নেই।
অভি এসে একবার তোয়ালে কোথায় খোঁজ করেই হুড়মুড় করে বিছানায় বসে আশার আচঁলে মুখ মুছে, পাশে থেকে রিমোট নিয়ে এসির তাপমাত্রা ২৪° থেকে একদম ১৬° তে দিয়ে আশার কোলে মাথা দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।

অভির কান্ড দেখে আশার চোখ কপালে উঠে গেলো! পাশে তার বোনকে দেখে সাহস একদম সিমান্ত ঠেকেছে। প্রথমত তার পরনের সুন্দর শাড়ীটাতে ঘাম লাগিয়েছে,এরপর এমনিতেই সে এসি বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, কারণ তার এসির ঠাণ্ডা সহ্য হয়না। তার মধ্যে তাপমাত্রা আরও অনেক কমিয়ে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত আবার তারই কোলে শুয়েছে। রাগে ইচ্ছে করছে অভির চুলগুলো ছিড়ে ফেলতে।

এরই মধ্যে অভি আবার বলে উঠলো..

___ বউ! প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে,মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবা?

আশার মেজাজ ভেতরে ভেতরে একদম ৫০০ ভোল্টেজে পৌঁছেছে। আশা অভির বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এসব দেখে মিটমিট করে হাসছে,আশা আবার অভির দিকে তাকালো। অভি এক চোখ বন্ধ করে নিজেকে এই মূহুর্তে হিরো দাবী কর‍তে চাচ্ছে।
আবারো অভি বললো..
___ আরে বউ শুনো,আমাদের নোহাকে(অভির বোন) লজ্জা পাবার কিছু নেই, এখন প্লিজ মাথায় হাত বুলিয়ে দাও!

তখনি নোহা বললো..
___আমি চলে যাচ্ছি,পরে আসবো।

নোহার কথা শুনে অভি মাথায় হাত দিয়ে ভাবলো নোহা চলে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আশা রেগে ফায়ার হয়ে আছে এখন৷ নিশ্চিত ধোলাই খাবে। নিজের ভয়কে সংযত করে অভি আস্তে করে বললো..
___ আরে তুই যাবি কেন? আমি তো চলে যাবো কিছুক্ষণের মধ্যে,অনেক কাজ বাকি। তুই বসে থাক সমস্যা নেই।

এদিকে আশা ভাবছে নোহা কেন যাচ্ছেনা। সে তো চলে যাওয়ার কথা বলতেও পারবেনা। কারণ সে এই বাড়ির নতুন বউ।
এদিকে আশা অভির মাথায় জীবনেও হাত বুলাবে না বলে মনে মনে মিনমিন করে যাচ্ছে..আর ভাবছে নিজের বাড়ির লোকজনের সামনে এমন অধিকার দেখানোর জন্য আজকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার পরে মজা বুঝাবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here