#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৭,৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
পর্বঃ৭
মা কি হয়েছে বলো তো অনির।ও ফোন কেন ধরছে না।কাল রাত থেকে কোনো খোজ নেই মেয়েটার।এরকম তো কখনোই করে না।তাহলে আজ কি হলো বলো তো।
মনিরা বেগম চিন্তায় পরে গেলেন।তিনি কেদে ফেললেন।কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
তুই আবার ট্রাই কর না।একা একটা মেয়ে ওতো বড় একটা ফ্ল্যাট এ আছে।কিছু হয়ে থাকলেও তো জানতে পারবো না।এই জন্যই তো তোর বাবা কে বলেছিলাম মেয়েকে দূরে পাঠিয়ে দিও না।এখানেই একটা কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দাও।
মা চিন্তা করো না তো।নিশ্চয়ই বোন এখনো ঘুমাচ্ছে।মায়াবী নিজের মা কে শান্ত করার জন্য বললো।
আলিফ হোসেন গম্ভীরমুখে বললেন,
আহা মনিরা এতো প্যানিক করো না তো।হইতো কাল রাতে ক্লান্ত ছিলো ফোন করতে ভুলে গেছে।আমি না হয় আজ একবার যাবো।গিয়ে দেখে আসবো।এতো দিন যেহেতু সমস্যা হয়নি আজ ও হবে না।
হ্যাঁ তুমি তো নিশ্চিন্ত থাকবেই।যতো চিন্তা তো সব আমার।আমি মেয়ের মা আমার চিন্তা হবে না তো কার হবে।আর বলছো চিন্তা করবো না।মনিরা বেগম মুখ চেপে কান্না করতে করতে বললেন।
মায়াবী এদিকে কল করেই যাচ্ছে।কিন্তু ফোন তুলছে না।এবার সেও অনেক চিন্তায় পরে গেলো।এরকম তো কক্ষনো হয়নি।তার বোন যত ক্লান্তই থাক না কেন অন্তত একটুর জন্য হলেও ফোন করবেই।রাতেও পাইনি ফোনে।এখনো ফোন তুলছে না।চিন্তাটা আরও জোড়ালো হয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো মায়াবীর।
কি রে মায়া পেলি ফোনে অনি কে।
নাহ বাবা ফোন তো তুলছেই না।
নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।চিন্তা করিস না আমি এক্ষুনি বেরিয়ে পরছি।ফ্ল্যাট এ গিয়ে দেখে আসবো।
হ্যাঁ যাও তুমি।আর আমি আমার মেয়েকে ওখানে যেতে দেবো না।এবার আসুক শুধু।
পাগলামি করো না তো মা।বোনের এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি।আর এখানে থেকে তো ভার্সিটিতে ক্লাস করতে পারবে না।
রাখ তোর ক্লাস।ওঁকে এখানে নিয়ে আসবো না হলে আমিই গিয়ে ওর কাছে থাকবো।
ঠিক আছে সব দেখা যাবে মনিরা।এখন আমি যাচ্ছি ওঁকে দেখতে।গিয়ে ফোন করবো।বলেই আলিফ হোসেন বেরিয়ে পরলেন।
মায়াবী আর মনিরা বেগম উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন।আর আল্লাহ কে ডাকতে লাগলেন।যাতে অনিলার কিছু না হয়।
•
আরে চলুন তো এতটা ভাবতে হবে না।যেহেতু আমার স্ট্রুয়ার্ট আপনার শার্ট খারাপ করে দিয়েছে সেহেতু আমিই আপনাকে শার্ট কিনে দেবো।
আমার না লাগবে না কোন শার্ট।আপনার স্ট্রুয়ার্ট আর জায়গা পেলো না পটি করার।শেষ মেশ আমার শার্টেই ওঁকে ইয়ে করতে হলো।ওর আমার উপর এতো রাগ কিসের শুনি।কাল আপনার এতো যত্ন আত্তি করলাম তার প্রতিদান আপনার স্ট্রুয়ার্ট এটাই দিলো।ইয়াক থু।কি বিচ্ছিরি গন্ধ ছিলো।
জুনইদ নাক মুখ কুচকে ফেললো ঘেন্নায়।
আসলে অনিলার যখন ঘুম ভাঙে তখন সে দেখলো সে জুনইদের কোলে শুয়ে আছে। তাও আবার জুনইদ কে জড়িয়ে ধরে।জুনইদকে শার্ট লেস দেখে অনিলা এক মুহুর্তের জন্য ভয় পেয়ে গেছিলো।জুনইদ এইভাবে খোলা শরীরে তার পাশে শুয়ে কেন।হড়বড় করে উঠে বসে অনিলা।আর মনে করার চেষ্টা করে আসলে কি হয়েছিল।সব টা মনে পরছে না তবে আংশিক মন পরলো।জুনইদ তো চলে যাচ্ছিলো আর সেতো বারান্দায় ছিলো।এর পর কি হয়েছিলো।আর জুনইদ এভাবে শার্টলেস কেন।ওর ঘুমের এডভান্টেজ নিয়ে এই লোকটা আবার কিছু করে নি তো।মনে হাজার ও প্রশ্ন জাগছে।সে ক্ষীপ্ত কন্ঠে ডাকলো জুনইদ কে।
এই যে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।এই যে উঠুন।আমার সর্বনাশ করে এখন আবার আরামছে ঘুমাচ্ছেন।
কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে জ্বালাচ্ছিস কেন নিশাপুর।ঘুমাতে দে তো।রোজ রোজ এভাবে আমাকে না জ্বালালে তোর শান্তি হয় না তাই না।
অনিলা চোখ সরু করলো।মানে কি এই লোকটা কিসব বলছে।সে যে এখন তার বেড রুমে সেই খেয়াল কি নেই তার।অনিলা রাগে কটমট করে পাশের টি টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ছুড়ে মারলো জুনইদের মুখে।
হকচকিয়ে গেলো জুনইদ।বোদ্ধ উম্মাদের মতো বলে,কে,কে,এরকম ঠান্ডা পানি কে দিলো রে।
অনিলা স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বলে, এসব কি আপনি আমার রুমে কি করছেন হ্যাঁ। এই যে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট এদিকে তাকান।
জুনইদ ভালো করে চারিদিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। তারপর পরক্ষণেই খেয়াল হলো কালকের কথা।সে অস্থির চিত্তে জিজ্ঞেস করলো,
মিস সুনামি তোমার জ্বর কমেছে।এখন কেমন আছো।
অনিলা নিজের দিকে একবার তাকালো।না সব তো ঠিকই আছে।তার কি জ্বর এসেছিলো কাল কে।তারপর আবার মুখ কঠিন হয়ে গেলো ওর।
তার আগে বলুন আপনার শার্ট কই।এরকম শার্টলেস কেন আপনি। কি করেছেন আপনি আমার সাথে কাল রাতে।
জুনইদ যেনো আকাশ থেকে পরলো।বলে কি এই মেয়ে।যাকে সারারাত জেগে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুললো সে কিনা বলছে কি করেছে সে তার সাথে।অদ্ভুত মেয়ে তো।
কি হলো বলুন।কি করেছেন আপনি আমার সাথে।
কিছুই করিনি আমি।আমি যদি কিছু করতাম না তাহলে এতো সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারতে না তুমি।সো ব্ল্যাম দিও না।
জুনইদ নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো।
তাহলে আপনি এভাবে কেন।আপনার শার্ট কই।
এই যে দেখো তোমার ষ্টুপিড স্ট্রুয়ার্ট পটি করে দিয়েছে আমার শার্ট এ। তাই বাধ্য হয়ে খুলে রেখে দিয়েছি।
জুনইদ কাল রাতের কথা ভাবছে।যখন বারান্দা থেকে স্ট্রুয়ার্ট কে আনে তখনই কখন জানি স্ট্রুয়ার্ট ওর শার্টে পটি করে দিয়েছিলো।আর সে গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়েই শার্ট খুলে রাখতে হয় তাকে।
এই কথা শুনে অনিলা কিরকম অভিব্যক্তি দেখাবে বুঝতে পারছে না।অনিলা নির্লিপ্তভাবে জিজ্ঞেস করলো,
স্ট্রুয়ার্ট আপনার শার্টে কখন ইয়ে করলো।
যখন আপনি জ্বরে বেঘোরে কাপছিলেন তখন।জুনইদ কোমড়ে হাত রেখে মুখ বেকিয়ে বলে উঠলো।
ওর ওরকম ভঙ্গিমা দেখে অনিলা আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না।
ঠিক হয়েছে।আপনি আমাকে জ্বালিয়েছেন না তাই স্ট্রুয়ার্ট ও আমার হয়ে আপনাকে জ্বালিয়েছে।
জুনইদ তাকিয়ে থাকে অনিলার দিকে মুগ্ধ হয়ে।কি সুন্দর সেই হাসি।প্রান বন্ত।এক মুহুর্তের জন্য ঘোর লেগে যায়।
অনিলা হাসতে হাসতে তাকালো বেড সাইডে একটা বাটিতে পানি আর রুমাল।কপালে হাত দিয়ে দেখলো না জ্বর টা আর নেই।তার মানে জুনইদ সারা রাত তাকে জল পট্টি দিয়েছে।ইশ আর ও কিনা সকাল সকাল কি সব ভেবে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিলো মানুষ টার মুখে।খারাপ লাগলো তার খুব এটা ভেবে।
তারপর ওরা দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরে।উদ্যেশ্য শপিং মল।সেখানে জুনইদ কে শার্ট কিনে দেবে।কোনো রকমে অনিলা একটা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি দেই যেটা ওর বাবার ছিলো।ওইটাই পরতে দিয়েছে জুনইদকে।সেই পাঞ্জাবি কত রকম ভাবে যে জুনইদ টেনে টেনে দেখছে।এসব দেখে অনিলার হাসি পেয়ে যায়।
এভাবে পাঞ্জাবি টা টানছেন কেন শুনি।ওটা ছিড়ে গেলে কিন্তু আপনিই লজ্জা পাবেন।সবার সামনে ছেড়া পাঞ্জাবী তে কি খুব ভালো দেখাবে বুঝি।অনিলা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসলো।
জুনইদ একটু লজ্জা পেলো।
মিস সুনামি আমি না হয় এভাবেই বাড়ি চলে যায়।শপিং করা লাগবে না।
মানে কি হ্যাঁ আপনি একাই মহান।আর কারোর মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই বুঝি।আমি জানি কাল রাতে আপনি যা করেছেন তার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না।কিন্তু যেহেতু শার্ট টা আমার জন্যই নষ্ট হয়েছে সেহেতু আমার উচিত আপনাকে সেটা কিনে দেওয়া।আমি কি একটা শার্ট ও কিনে দিতে পারি না আপনাকে।
ব্যাস জুনইদ আর কিছুই বলতে পারলো না।চুপ করে বসে রইলো।তাছাড়া এই পাঞ্জাবি পরে সে যদি বাড়ি যায় বাড়ির সবাই কি ভাববে।আর তার ওয়ালেট টাও নেই।নিশ্চয়ই কোথাও হারিয়ে গেছে।বাইক ব্রাস্টের পর থেকে সেটা আর পাইনি সে।পকেটে একশো টাকা পরে ছিলো যেটা দিয়ে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ছিলো কাল।প্রথম কোনো মেয়ের সঙ্গে এইভাবে মিশছে জুনইদ।তার কলেজ লাইফেও কোনো মেয়ে কেলেংকারি ছিলো না।আর একটা মেয়ের সঙ্গে সে কাল সারা রাত কাটিয়েছে।তার এমন কোনো বাজে চিন্তা একটি বারের জন্য ও আসেনি অনিলাকে দেখে।এই মেয়েটির সম্মোহনী মুখের দিকে তাকালে এরকম কোনো কথা মাথাতে আসবেই না।বড্ড নিষ্পাপ সেই মুখশ্রী।যাতে কোনো পাপের ছোয়া দেখতে পাইনি সে।
দেখতে দেখতে ওরা শপিং মলে চলে এলো।অনিলা প্রায়ই এখানে শপিং করার ফলে এখানকার স্টাফ রা তাকে খুব ভালো করেই চেনে।অনিলা কে দেখে তারা খুবই সম্মানের সঙ্গে ভেতরে নিয়ে গেলো।জুনইদ একটু অবাক হলো।
বাবাহ এখানে দেখছি সবাই তোমাকে চেনে।
অনিলা একটু ভাব নিয়ে বলে, অফকোর্স আমি মানুষ টাই এমন যেই দেখে সেই মনে রাখে।
হ্যাঁ মিস সুনামি তো।সুনামি কে না মনে রাখে।জুনইদ বিরবির করে বলে।
কিছু বললেন মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।
না না একদম ই না কিছুই বলিনি আমি।
নিন দেখুন একটা শার্ট চুস করুন এখান থেকে।
শোধ দিতে চাইছো নাকি।
তাই ধরে নিন না হয়।আমি কারোর জিনিস পাওনা রাখি না।
ওহ রিয়েলি।
ইয়াহ।
দ্যান কোনো কিছুই তবে পাওনা রাখা উচিত নয়।সব কিছুর ই হিসেব চাই।দুষ্টুমি হাসি দিয়ে জুনইদ ঠোঁটে ঠোঁট চাপলো।
আর কি পাওনা আছে আমি জানি না।অনিলা মাথা নত করে উত্তর দিলো।
ওহ তাই নাকি।অনেক কিছু পাওনা আছে জানো না।
উম হুম জানি না।
জানতে চাও তুমি।
উফ বড্ড কথা বলেন আপনি।শার্ট গুলো দেখুন না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট প্লিজ।
#চলবে।
#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
উফ বড্ড কথা বলেন আপনি।শার্ট গুলো দেখুন না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট প্লিজ।
কথা কেন ঘুরাচ্ছো মিস সুনামি।বলো না জানতে চাও কি পাওনা আছে তোমার কাছে আমার।
জানি না আমি সরুন তো।অনিলা স্বগতোক্তি করলো।
তাহলে কি জানো তুমি।আরে শুনো তো আগে।
উফফ জ্বালাচ্ছেন কেন শুনি।অনিলা শার্ট দেখতে দেখতে বললো,
জুনইদ অনিলার কিছু টা কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো, কাল রাতে যে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছো তাহলে সেটাও রিটার্ন করো এখনই।
লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো অনিলার জুনইদের এরকম বেফাঁস কথায়।আমতা আমতা করে বলে উঠলো, লজ্জাহীন হাতি একটা।
কিহ! কি বললে তুমি মিস সুনামি।
অনিলা চট করে কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
উফফ কিছু না।আপনি জলদি শার্ট গুলো দেখুন তো।আমাকে আবার বাড়ি যেতে হবে।
কিন্তু আমি তো এগুলো পড়িই না।
মানেহ।
মানেহ আমি এই রঙ বেরঙের কার্টুন টাইপ শার্ট পড়ি না।অনলি ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট রঙের শার্ট পড়ি।আমি সিম্পল থাকতেই বেশি পছন্দ করি।
ওমা কেন।পরলে কি হয় শুনি।অনিলা কমোরে হাত রেখে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
সেইম টু ইউ।আমিও জানি না কি হয়।
আচ্ছা আচ্ছা আমার কথা আমার কাছেই ঘুরানো হচ্ছে।আপনাকে কালারফুল শার্টে ভালোই লাগবে বুঝলেন।
জানি না এটাও।জুনইদ বুকে হাত গুজে বলে।
তাহলে একবার ট্রাই করে দেখুন জেনে যাবেন।
নাহ ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ই ঠিক আছে।ছাড়ো তো।
আচ্ছা একটা চয়েস করে দেখুন তো।না ভালো লাগলে পরতে হবে না।
জুনইদ আর কথা না বারিয়ে বলে, ওকে তুমি যখন বলছো তখন তুমিই চয়েস করে দেও।
অনিলা অবাক হয়ে বলে, আমার চয়েস পরবেন আপনি?
কেন না পরার কি আছে।তারপর আস্তে আস্তে বলে এই আপাদমস্তক মানুষ টাই তো আমার চয়েস তার চয়েস আমার পছন্দ হবে না কেন।
জুনইদের আস্তে বলা কথাটা অজানাই রয়ে গেলো অনিলার।অনিলা বলে,
ওকে আমি দেখছি তবে।
অনিলা একটা একটা করে বেশ কতকগুলো শার্ট দেখলো।তারপর একটা ক্রীম কালারের শার্ট তুলে নিয়ে জুনইদকে সেটা ট্রায়াল দিয়ে দেখতে বললো।
থাক না পরে পরবো।
নাহ এখনি পরে আমাকে দেখান।অনিলা আরও কয়েকটা শার্ট ধরিয়ে দিলো জুনইদের হাতে।
হোয়াট আমি এগুলো এখন এক সাথে পরবো।
সব গুলো না এখন একটা পরে আসুন যান।
অনিলা জোর করে জুনইদ কে ট্রায়াল রুমে পাঠালো।জুনইদ বাধ্য হয়েই শার্ট টা পড়ে পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো।একবার আয়না তে নিজেকে দেখলো না পর্যন্ত।
অনিলা জুনইদকে দেখে তো পুরাই থ।শ্যামলা গড়নের শ্যাম পুরুষ টির শরীরে ক্রীম কালারের শার্ট টা একদম পারফেক্ট ভাবে মানিয়েছে।অনিলা আনমনে বলে,
আপনি নিজেও ভাবতে পারবেন না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট এই শার্ট টাই কতটা মানিয়েছে আপনাকে।
জুনইদ একবার নিজেকে দেখে বলে, রিয়েলি।বাব্বাহ এ যেনো বাঘের মুখে মধু ছন্দা। জুনইদ আর কিছু না ভেবে বলে,
ওকে এবার তাহলে আমি এটা চেঞ্জ করে আসি।
অনিলা ততক্ষণে নিজের সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে, আরে কি করছেন টা কি।এটাই পরে থাকুন আপনি।
নো নেভার এটা আমি কখনোই পরে থাকতে পারবো না।আন-কম্ফোর্টেবল ফীল হচ্ছে তো।এগুলো মানুষ পরে নাকি।
এগুলো কি মানুষ পরে না নাকি।এগুলো এখানে কেন রাখা হয়েছে তাহলে।
মানুষ পরে কিন্তু আমি পরি না।
অনিলা ব্যাঙ্গাত্বক কন্ঠে বললো,
ওহ তার মানে আপনি মানুষ না।হ্যাঁ ঠিকই তো আপনি মানুষ কেন হবেন আপনি তো ল্যাম্পপোস্ট।
হইতো না।তুমি না হয় মানুষ করে দিও আমাকে মিস সুনামি।
জুনইদের কথার আগা মাথা না বুঝে কয়েকটি শার্ট প্যাক করতে দিলো অনিকা।আর জুনইদ আর শার্ট টা খুললো না।
অনিলা বিল পে করে দিলো।শার্ট গুলো নিয়ে বেরিয়ে এলো সে।জুনইদ ও পিছনে পিছনে বেরিয়ে এলো।এরপর দু’জনেই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সকালের খাবার খেয়ে নিলো।এরপর জুনইদ জোরাজুরি করে অনিলাকে ডক্টর দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে দিলো।অনিলার এখনো ভেতরে ভেতরে জ্বর আছে।রাতে আবার জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে।তাছাড়া অনিলার খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে।সব ওষুধ নিয়ে অনিলা ফ্ল্যাট এ ফিরে গেলো আর জুনইদ তার বন্ধুর বাড়িতে সবটা সামাল দতে হবে তো।যদি কোনো ভাবে তার বন্ধুর বাড়িতে ফোন করে জেনে যায় কেউ যে সে ছিলো কোনো বন্ধুর বাড়িতে।আর নিজের বাড়ি যাওয়ার আগে নিশার জন্য ফুচকাও নিয়ে যাবে ঠিক করলো।
•
এদিকে অনিলা বাড়ি পৌঁছে তো অবাক হয়ে যায়।তার বাবা তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সে বাবা কে দেখে কি রকম রিয়েকশন দেবে ভেব পাচ্ছে না।তার বাবা এসেছে আর না জানি কতক্ষন থেকে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।বাড়িতে কারোর কিছু হয়নি তো।না হলে সকাল সকাল এভাবে তার বাবা এখানে কেন।
বাবা তুমি কখন এসেছো।বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো।
আলিফ হোসেন নিজের মেয়ের গলা পেয়ে ছুটে এলেন।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
অনি মা তুমি ঠিক আছো তো।কাল রাত থেকে
তোমাকে আমরা ফোনে পায়নি।চিন্তায় চিন্তায় তোমার মা তো শেষ হয়ে যাচ্ছে।
অনিলা নিজের ফোন হাতরে বের করলো পার্স থেকে।দেখলো নিজের ফোন টা এখন বন্ধ। ইশরে কাল কে রাতে তো বাড়িতে ফোন ও করা হয়নি।এরকম ভুল সে কি করে করলো।অনুতপ্ত হয়ে সে তার বাবাকে বলে,
বাবা চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি।কাল রাতে ফোন করতে ভুলে গেছিলাম।তুমি ভেতরে আসো আমি বলছি।
দরজা আনলক করলো অনিলা।আলিফ হোসেন ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
তুমি তো কখনো এমন করো না অনি।কাল কি এমন হলো যে ফোন করতে ভুলে গেলে।আরও আমি এসে দেখি তুমি নেই ফ্ল্যাট এ।
আমার চিন্তা বেরে গেছিলো।তারপর দারোয়ান এর থেকে জানতে পারলাম তুমি বাইরে গেছো।
অনিলা আলিফ হোসেন কে জড়িয়ে ধরলো
তারপর আফসোস এর স্বরে ব’লে,
স্যরি বাবা আর কক্ষনো হবে না এমন। আসলে আমি কাল কে ফোন করতে ভুলে গেছিলাম। ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম।তুমি চিন্তা করো না।মাকে ফোন করে বলে দাও আমি একদম ঠিক আছি।কাল রাতের জ্বর এর কথা কিছুই বললো না অনিলা তার বাবাকে চিন্তা করবেন ভেবে।
আলিফ হোসেন নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।এতক্ষণে যেনো তার জানে পানি এলো।
তুমি কি করে বুঝবে গো মা।আমরা তোমার বাবা মা তোমার বোন তোমার জন্য কতটা চিন্তা করি।
অনিলা আদুরে কন্ঠে বললো, আমি জানি তো বাবা।তোমরাই তো আমার সব।মা বুবু কেমন আছে।আর দেখো তোমার মেয়ে কত্তো বড় হয়ে গেছে।এখন সে আর ছোট্ট নেই বুঝেছো।তুমি যাও আমার রুমে গিয়ে স্ট্রুয়ার্ট এর সাথে একটু কথা বলো আমি তোমার জন্য কফি করে আনছি।
সবাই ঠিক আছে মা।আর আমার এক্ষুনি কফি লাগছে না।তুমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও।তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো আমি আজ।
অনিলা দাঁড়িয়ে পরলো বাবার কথায়।তাকে নিয়ে যেতে চাইছে তার বাবা।কিন্তু তার তো ছুটি নেওয়া হয়নি এখনো ভার্সিটি থেকে।
বাবা আমি দু দিন পরে যায় না।আমার ভার্সিটি থেকে ছুটি চেয়ে দরখাস্ত লিখতে হবে।তারপর ছুটি মঞ্জুর হলে যাবো।
আলিফ হোসেন মেয়ের কথায় কিছু বললেন না।তিনি পড়াশোনার ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট। তবে তিনি কখনোই নিজের মেয়েদের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন নি।আজও দেবেন না।তিনি তার মেয়েদের কে খুব ভালো ভাবে শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি যেমন নিজের মেয়েদের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না।তেমনি তিনি এটাও জানেন তার মেয়েরাও তার কোনো সিদ্ধান্তের ওপর কথা বলবে না।
অনিলা কফি করতে কিচেনে গেলো।আর আলিফ হোসেন অনিলার রুমে এসে স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে যেতে উদ্যত হলেন।তিনি মেয়ের রুমে ঢুকতেই লক্ষ্য করলেন বেড সাইডের পাশেই একটা বাটিতে পানি আর রুমাল রাখা।আলিফ হোসেন কিঞ্চিৎ অবাক হলেন।তারপর হঠাৎ তার চোখ পরলো একটা শার্ট এর দিকে।সাদা শার্ট।এটা দেখে তার অভিব্যক্তি একদম বদলে গেলো।এটাতো ছেলেদের শার্ট।এটা তার মেয়ের ঘরে কি করে।তাহলে কি,,নাহ নাহ, না জেনে তিনি এরকম অন্যায় পাপের কথা ভাবতেই পারেন না।কিন্তু কাল রাতে অনি ফোন করে নি। সকালেও ফোন করে নি।এসব কিছু তাকে ভাবাচ্ছে খুব।
অনিলা কফি করে এনে বলে,
বাবা তোমার কফ,,,পুরো কথা শেষ করার আগেই সে তার বাবাকে ভালো করে দেখলো।তার বাবাকে কেমন যেনো লাগছে।কেমন অন্য রকম।এই মুহুর্তে সে তার বাবার এই মুখের ঠিক প্রশংসা করতে পারলো না।কেমন ভয় হচ্ছে তার এই রুপ দেখে যা সে এর আগে কখনোই দেখে নি।
আলিফ হোসেন স্পষ্ট ভাবে গম্ভীর গলায় বললেন,
অনি তোমার ঘরে পুরুষ মানুষ এর শার্ট এলো কিভাবে?
অনিলা থতমত খেয়ে গেলো বাবার এরকম প্রশ্নে।তার বাবা খুবই বিচক্ষন মানুষ।তিনি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতেই পছন্দ করে।কিন্তু আজ যেনো মনে হচ্ছে তিনি খুব রেগে গেছেন।এখন কিভাবে সামাল দেবে সে।এই শার্ট টা সরাতে কি করে ভুলে গেলো সে।
আ-আ-আসলে বাবা ওটা আ-আমার ই।আমি
কিনেছিলাম।আমি-অনিলা আর কিছু বলার আগেই স্ট্রুয়ার্ট বলে উঠলো,
শার্ট, শার্ট, ছেলেটার!ছেলেটার!
আলিফ হোসেন বিক্ষিপ্ত হয়ে তাকালো স্ট্রুয়ার্ট এর দিকে।কি বলছে এসব স্ট্রুয়ার্ট।তিনি ক্রুদ্ধ ভাবে প্রশ্ন ছুড়লেন,
কোন ছেলে অনিলা।স্ট্রুয়ার্ট কার কথা বলছে।
এখন অনিলা কি বলবে।চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।তার বাবা যদি তাকে ভুল বুঝে তাহলে কি করবে সে।আর স্ট্রুয়ার্ট এর উপর খুব রাগ হচ্ছে।কথা বলা শিখিয়ে এখন তার ই বিপদ হলো।যদি এখন তার বাবা তাকে না বুঝে অন্য কিছু ভেবে বসে।কিভাবে মুখ দেখাবে নিজের বাবাকে।অনিলা মাথা নিচু করে ফেললো।তার বাবা তাকে কখনোই অনিলা বলে না।আজকে প্রথম বার অনি থেকে অনিলা বললো।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
আলিফ হোসেন গলার স্বর উদ্ধৃত করলেন,
কি হলো অনিলা।বলো কোন ছেলে।এসব তোমার কাছ থেকে আসা করিনি আমি।আমি তো তোমাকে মাথা নিচু করতে শেখায় নি।তাহলে আজ মাথা নিচু কেন তোমার।তার মানে কি নিশ্চয়ই তুমি কোনো অন্যায় করেছো।
অনিলা বাবার কথায় মাথা উচু করলো।সে তো কোনো অন্যায় করেনি।তবে সে কেন মাথা নিচু করে রেখেছে।সে সত্যিটা বলার জন্য সাহস করলো।এবং সাহসের সহিতে বলে,
না বাবা আমি তোমার মেয়ে।আমি অন্যায় করতেই পারি না।ওই শার্ট আমার বন্ধু নিশার ভাই জুনইদের।
তারপর অনিলা কাল রাতের সব ঘটনা বললো তার বাবাকে।
এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুমি আমাকে এখন বলছো।আর হ্যাঁ এখন আমি তোমাকে বিশ্বাস করলাম।তবে ভবিষ্যতে এরকম বোকার মতো কাজ আর করবে না।আশা রাখছি তুমি আমাকে পুরো সত্যিই বলেছো।কাল ই তুমি বাড়ি ফিরবে এটাই আমার শেষ কথা।আমি তোমার ভার্সিটির প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলবো আজ ই।ফ্রেশ হয়ে আসো।
অনিলা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালো।তার বাবা যে তাকে বিশ্বাস করেছে এটাই অনেক।ফ্রেশ হয়ে নিলো সে।তারপর ভার্সিটিতে গেলো বাবার সঙ্গে।আলিফ হোসেন কথা বললেন প্রিন্সিপালের সাথে।তার অনিলাকে রেখে চলে এলেন নিজের বাড়িতে।অনিলা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো সবকিছুর জন্য।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।