সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি #পর্বঃ৯,১০

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৯,১০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
পর্বঃ৯

তখন দ্বিপ্রহর।স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় রোদ গড়িয়ে পড়ছে অন্দরে। নীরদবরণে চোখ ঝলসানো রোদ্দুর খেলা করছে আপন মনে।চড়ুইপাখির কলরব, শালিকের জুটি গুঞ্জন তুলছে এদিক-সেদিক।হালকা গরমেও অতিষ্ঠ লাগছে জুনইদের।ঘার্মাক্ত অবস্থায়ও কি যে সুদর্শন লাগছে তাকে।এই সুদর্শন যুবককে এই মুহুর্তে যেকোনো নারীর নজর কাড়য়ে বাধ্য।যেকোনো নারী তার সান্নিধ্য একবার লাভ করতে চাইবে।শুরু করতে চাইবে নতুন প্রনয়নের।বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপলো জুনইদ।মিনিট দুই পরে নিশা এসে দরজা খুলে দিলো।নিশা জুনইদকে দেখে তো অবাক।এটা কি তারই ভাই সে হাক ছেড়ে ডাকলো তার মাকে,

“ও মা দেখে যাও তো একে দেখতে ভাইয়ার মতো লাগছে না।দেখে যাও তো প্রানী টাকে ভালো করে।আমার ভাইয়া জুনইদ ই তো”

শান্তা বেগম এসে বললেন,”দেখে তো সেরকম ই মনে হচ্ছে ”

জুনইদ শাহাদাত আঙুল দিয়ে চোখ সরু করে কপাল চুলকে বলে,” উফ মা তোমরা এসব কি শুরু করেছো বলো তো”এই নিশাপুরের সঙ্গে থেকে থেকে মনে হচ্ছে তোমার মাথাটাও গেছে।

আসলে জুনইদ কে কালারিং শার্টে দেখে নিশা আর শান্তা বেগম একদম অবাক হয়ে গেছে।যে ছেলেকে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট শার্ট ছাড়া অন্য কালারের শার্ট পরতে এই পর্যন্ত দেখে নি তার কি না এক রাতের মধ্যে এতো বদল।

জুনইদ ভেতরে আসতে আসতে বলে,”তোমরা এভাবে ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছো কেন”

শান্তা বেগম রোষানল গলায় বললেন, তা এতো পরিবর্তন এক রাতের মধ্যে কিভাবে সহ্য করি বলো তো বাছা।

নিশা এগিয়ে এসে বলে, সূর্য যদি পশ্চিম দিকে উঠে অবাক না হয়ে কি করবো ভাইয়া।

ধুর কি বলছিস ক্লিয়ারলি বল তো।জুনইদ কিছুটা রেগে বলে উঠলো।

শান্তা বেগম বললেন, না বাবা কিছু বলছি না।যাহ ফ্রেশ হয়ে আয় আমি লাঞ্চ রেডি করছি।

হুম বলে জুনইদ ফুচকার প্যাকেট টা নিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলো। মেজাজ টা বেশ ফুরফুরে লাগছে জুনইদের।ঘরে গিয়ে আনমনা হয়ে শার্ট টা খুলে বেডে রাখতেই বুঝে যায় ওর মা আর নিশার বলা কথার মানে।

হঠাৎ নিশা এসে গলা টা একটু ঝেড়ে উঠলো,

জুনইদ একবার তাকিয়ে নিজের জুতো খোলায় মনোযোগ দিলো, “কি খবর আমার রুমে তুই”

নিশা দুই হাত পেছনে মুড়ে রেখে বলে “কিছু একটা ভাবছি”

কি এমন ভাবছিস যেটা তোর আমার রুমে এসে ভাবতে হচ্ছে।

“হুম গভীর চিন্তার বিষয়।এতো করে শকড দিলে হার্ট এটাক তো করেই ফেলবো আমরা।দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি প্রেমে পরেছো।তা এতো তারাতাড়ি তোমার কপালের খাড়া নামক ফাড়া টাকে কিভাবে কাটালে শুনি।নিশার কন্ঠঃ ব্যাঙ্গাত্মক শোনালো”

ওওওও এই কথা।জুনইদ ঠোঁট গোল করে বললো।

হ্যাঁ এই কথাই এবার বলো কার কপাল টা পুরলো শুনি।

যাহ তো জ্বালাবি না একদম।বেশি পেকেছিস একেবারে।বড় ভাইকে এসব জিজ্ঞেস করছিস দাড়া তোর হচ্ছে।

আরে যাচ্ছি যাচ্ছি।বাট ওয়ান মোর কুয়েশ্চন?

হুম বলে ফেল কি কুয়েশ্চন।জুনইদ প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে রইলো।

নিশা জুনইদের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

তুমি গেলে হোয়াইট শার্ট পরে আর এলে কালারফুল শার্টে ব্যাপার টা কি বলো তো।শুধু জামা কাপড়ে নয় মনেও রঙ ধরেছে মনে হচ্ছে হ্যাঁ?

এবার নিশার কান টা ধরে জুনইদ বললো,”আরও দেখবি রঙ”

উফফ ভাইয়া ছাড়ো লাগছে তো।

জুনইদ অবসন্ন কন্ঠে বললো, “ওকে ওকে নে ছেড়ে দিলাম”

বাহ আজ বলতে না বলতেই আমার ভাইয়া ছেড়ে দিলো।কিছু তো ব্যাপার আছে।কি ব্যাপার বলো তো এই শার্ট টা কে গিফট করলো তোমাকে?

মিস সুনামি গিফট করেছে শার্ট টা।এবার শান্তি যাহ তো এবার যাহ।জুনইদ নৈঃশব্দে হাসলো অনিলার কথা ভেবে।

নিশা সুযোগ পেয়ে বলে, “বাব্বাহ ভাইয়া তলে তলে তাহলে এতো।তুমি তো পুরো খিলারি হ’য়ে গেছো।আমি তো তোমার ওই মিস সুনামিকে পরে দেখে নেবো।আগে ট্রিট দিবা তারপর বাকি কথা”

জুনইদ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,

ওকে ওকে যাহ কাল ই তোকে ট্রিট দেবো যাহ।

নিশার চোখ যেনো কোনো ট্রিকস খেলছে।খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো সে,

আরেব্বাস একে যা বলছি তাই মেনে নিচ্ছে।আজ তো আমার লটারি লেগে গেলো।আহারে আমার বান্ধবী রে তুই একটু আগে আসতে পারলি না এই গাম্বাট টার কপালে।

ওকে ওকে এবার যাহ।কাল সন্ধ্যায় রেডি থাকিস।তকে ট্রিট দিচ্ছি।

হুম তাই তো বলি কার এতো ক্ষমতা আমার ভাইয়া কে কালার ফুল শার্ট পরাবে।তোমাকে দেখছি আমার বেস্টুই সোজা করতে পারবে।কথা শেষ করেই নিশা মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো।

সাঁঝ নেমেছে পশ্চিমাকাশে। কমলাটে নীরদদেশে ছেঁয়ে পড়েছে কালচে আঁধার। বাতাবরণ নিরুত্তাপ, নিরুপম। রাতে ডিনার শেষ করে জুনইদ রুমে শুয়ে আছে।আর আজকের সুন্দর দিন টার কথা ভাবছে।কাল রাত আর সারাদিন এর সব টা ভেবেই ভালো লাগছে তার।সেকি ভেবেছিলো এতো তারাতাড়ি এতো কিছু হয়ে যাবে।এভাবে বদলে যাবে সব কিছু।ভাবতেই অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। আচ্ছা এই অনুভূতির কি নাম দেবে সে।সে নিজেও জানে না এতো কেন মনে পরছে মেয়েটার কথা।জুনইদ শুয়ে শুয়ে অনিলার কথা ভাবছে।চোখে ঘুম নেই।জুনইদ অনিলা কে ফোন টা করতে গিয়েও পারছে না।অনিলা কি না কি ভাববে সেটা ভেবেই।ভাবতে ভাবতে নিজের মনের সঙ্গে একপ্রকার যুদ্ধ করে কল টা করেই ফেললো।

এদিকে অনিলা স্ট্রুয়ার্ট কে ইচ্ছে মতো বকেছে দুপুরে।বাবার সামনে ছেলেটা বলার কি খুব দরকার ছিলো।তাকে এভাবে ফাসিয়ে দিলো তার বাবার কাছে।এখন সেই জের ধরে এখনো অব্দি একটা দানাও মুখে তোলে নি স্ট্রুয়ার্ট।অনিলা ব্যস্ত স্ট্রুয়ার্ট এর মান ভাঙ্গাতে।এক সময় স্ট্রুয়ার্ট এর রাগ পরলে তাকে সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাওয়াচ্ছিলো।আঙ্গুর নিয়ে মুখে দেবে ঠিক সেই সময় ওর ফোন টা বেজে উঠলো।ফোনের কৃত্রিম স্ক্রিনে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট নাম টা জ্বলজ্বল করছে।অজান্তেই এক চিলতে হাসি এসে ভড় করলো তার অধর যুগলে।সে সঙ্গে সঙ্গে ই ফোন টা রিসিভ না করে কয়েকবার বাজতে দিলো।যাতে জুনইদ বুঝতে না পারে অনিলা তার ফোনের জন্য একটু হলেও অপেক্ষা করছিলো।লাস্ট তিন বারের বার ফোন টা তুললো অনিলা,

“হ্যালো”

কিয়ৎক্ষন চুপ করে রইলো জুনইদ।তার নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে অনিলা।জুনইদ কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলে , “ডিনার করেছো”?

অনিলা নিশব্দে হাসলো।”হুম আপনার হয়েছে ডিনার করা”

হ্যাঁ আমিও করেছি।জুনইদ বলে উঠলো।

তারপর আবারও দুজনেই নিশ্চুপ।

জুনইদ ভাবছে অনিলা হইতো বিরক্ত বোধ করছে তাই এভাবে চুপ করে আছে।তাই সে নিরবতা ভঙ্গ করে জিজ্ঞেস করলো, “মেডিসিন নিয়েছো”

অনিলা অনুদ্ধত কন্ঠে বললো,”হুম নিয়েছি”

জ্বর কমেছে?

“হুম কমেছে”

এখন কেমন লাগছে?

এখন ঠিক আছি।

হুম ঠিক তো হতেই হবে।

মানেহ

কুছ নেহি।স্পষ্ট জবাব জুনইদের।

কুছ নেহি মানে টা কি।কিছু তো বললেন?

কুছ নেহি কা মাতলাব কিতনা কুছ হে আব তুমহে কেসে সামঝায়ু মিস সুনামি।জুনইদের মনের ভাবনার স্মারক যদি অনিলা ধরতে পেতো তাহলে এই কথাটা আর জিজ্ঞেস কর‍তো না সে।জুনইদ একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,

মানেহ হলো সুস্থ তো হতেই হবে।তাই না।না হলে কি আর চলবে।

দুজনের ই মনে এখন কিছু চলছে।হইতো দুজন দুজন কে অনেক কিছু বলতে চাই কিন্তু কেউই কাউকে কিছু বলতে পারছে না।অনিলা আর কিছু বলছে না দেখে জুনইদ বলে উঠলো,

ওকে গুড নাইট এন্ড সুইট ড্রিমস।ঘুমিয়ে পরো।

হুম।আপনি কি কিছু ভুলে গেছেন? অনিলা প্রশ্ন করলো।

জুনইদ ফোন কাটতে গিয়ে থামলো।এক প্রত্যাশা ময় কন্ঠে বললো,

কি ভুলে গেছি মিস সুনামি।

মিস সুনামি শুনেই অনিলা হাসলো।এই কথাটাই সে শুনতে চাচ্ছিলো।জুনইদ কি তার মনের কথা বুঝে ফেলেছে নাকি।অনিলা হালকা ঠোঁট বেকিয়ে হাসলো।আপ্লুত হলো মন।হৃদয়ে সঞ্চার হলো কিছু সুন্দর মুহুর্ত।এই অদ্ভুত মুহুর্তটা না ভালো লাগছে না খারাপ।আর সে এই অনুভুতি কাটাতে চাইছে না মনের সর্বনাশ হবে ভেবেও সে পুষে রাখতে চাইলো কেন যেনো।

কিছু না।আচ্ছা আপনিও ঘুমান।অনিলা আর কথা বারাতে চাইলো না।কারণ সে যেটা শুনতে চেয়েছিলো তা শোনা হয়ে গেছে।

জুনইদ শব্দহীন হেসে ফোন টা রেখে দিলো।যদিও তার মন চাইছিলো না কল টা ডিসকানেকট করতে।কিন্তু তাও ফোন টা রেখে দিলো।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নিশা তার মাকে বলে, “মা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।”

শান্তা বেগম টেবিল সাজাতে সাজাতে উত্তর দেন,”কি বলবি বল?”

নিশা প্রত্যাশিত গলায় বললো,”একটা ব্যপারে তোমার পারমিশন চাই।”

এর মধ্যে জুনইদ ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে পরে।সে ব্যঙ্গাত্মক কন্ঠে বললো, “এই নিশাপুর তুই আবার এতো ফর্মালিটি কবে থেকে শিখলি রে”.

নিশা স্বপ্তপর্নে বলে উঠলো, “জানি না”।

আলতাফ আহমেদ খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো, তা নিশা তুই কি যেনো বলতে চাইছিলি?

নিশা উত্তর দিলো, কিছু না কাকু।এখন থাক না পরে বলবো আমি।

জুনইদ বলে উঠলো, বুঝেছি আমার পিছনে লাগার কোনো মতলব কশছিলি নিশ্চয়ই।

নিশা মিচকে হেসে বললো, “আমি পিছনে লাগি না লাগলে সামনেই লাগি”

রমিজ আহমেদ জুনইদকে বলেন, তা তোমার কলেজ কেমন চলছে জুনইদ?

জুনইদ খাবার মুখে নিয়েই বলে, ভালো বাবা।

খাবার মুখে দিয়ে কথা বলা এটা কোন ধরনের স্বভাব জুনইদ।

ওকে বাবা আর হবে না।জুনইদ উত্তর দিলো।

তা আমাদের বিজনেস নিয়ে কি ভাবলে।কতবার বলেছি ইঞ্জিনিয়ারিং করো না।আমাদের এতো বড় ব্যবসা তুমি ছাড়া কে সামলাবে বলো তো।

কেন বাবা কাকু আছেন তো তোমার সাথে।কাকু সামলে নেবেন।আর আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি বাবা আমার বিজনেসের ফিন্যান্স সম্পর্কে আগ্রহ নেই।সো না বললেই খুশি হবো।কথা গুলো বলেই জুনইদ টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।

আলতাফ আহমেদ তার ভাইকে বললেন, খাওয়ার সময় কেন যে বলেন এসব বড় ভাই।ছেলেটা খেতেও পারলো না ঠিক করে।ইঞ্জিনিয়ারিং টা শেষ হোক এমনি বসবে বিজনেস এ।

রমিজ আহমেদ কিছুই বললেন না।চুপচাপ খাওয়া শেষ করলেন।বরাবরই তার ইচ্ছে ছিলো জুনইদ কে তার বিজনেস এর সব দায়িত্ব দেবেন।কিন্তু ছেলেটা বিজনেসটা সহ্যই করতে পারে না।

এর মধ্যে শান্তা বেগম আর নিশা কিছুই বলতে পারলো না।কারণ এখন কথা বলা মানেই রমিজ আহমেদ রেগে যাবেন।তাই চুপচাপ সব টা শুনলো শুধু।জুনইদ এর বাবা কাকা অফিস বেরিয়ে গেলেন।জুনইদ নিজের রুমে চলে এলো।

তখনই নিশা জুনইদের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, “মে আই কাম ইন ভাইয়া?”

জুনইদ ঠাট্টার ছলে বলে উঠলো, তুই কি ম্যানার্স গুলে খেয়ে নিয়েছিস নাকি।

ওমা কেন।অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে নিশা।

আজ কাল তোর মধ্যে এতো ম্যানার্স আসছে
ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছি।

না মানে আগে থেকেই অভ্যাস করছি আর কি।এবার থেকে তো আর উইদ আউট পারমিশন এন্ট্রি করা যাবে না, নাহ।

তুই কিন্তু খুব পেকেছিস নিশাপুর।

তাহলে অভ্যাস টা বদলাবো না বলছো।নিশা ঠোঁট চেপে হাসি আটকে বললো।

“কি ধান্দায় আসছিস সেটা বল কথা না ঘুরিয়ে?” মাথায় চড়ে বসিস না আবার। জুনইদ অলস ভঙ্গিতে বললো।

“ভাইয়া তোমার ফোন টা একটু দাও না।”

এইতো লাইনে আয়।ওতো ভালো মানুষি মানায় না রে তোকে।তা আমার ফোনে কি করবি তোর ফোন কই?

আমি বলছি তোমার ফোন টা দিতে?আমার ফোনের কিছু হয়েছে এটা কি আমি বলছি।বেশি কথা না বলে তোমার ফোন টা দাও তো।নিশা হাত পাতলো জুনইদের সামনে।

জুনইদ ভাব নিয়ে বলে, “আর যদি না দেই তো”

পরে আফসোস করো না ভালোর জন্যই বলছি।

জুনইদ ভাবলো আজকাল বোন টা সাপোর্ট ও করছে।আবার বলছে আফসোস ও করবো। যাক গে ফোন টা দেওয়াই যাক।জুনইদ কথা না বাড়িয়ে ফোন টা আনলক করে এগিয়ে দিলো নিশার দিকে।নিশা ফোন পেতেই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।ফোন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।কাউকে একটা ফোন করে আবার জুনইদকে ফেরত ও দিয়ে গেলো ফোন টা।


সন্ধ্যা বেলা।নিশা চললো জুনইদের ঘরে।গিয়ে বললো,

ভাইয়া আজকে তো ট্রিট দেওয়ার কথা ছিলো।মনে আছে তো?

জুনইদ তেছড়া ভাবে উত্তর দিলো,”আর মনে না থাকলে?”

নিশা আঙ্গুলে উড়না পেচাতে পেচাতে বলে,
“তোমার ই লস ভাইয়া।আমার আর কি বলো।

এই ব্যাপার টা কি হ্যাঁ। কাল থেকে আমাকে জালাচ্ছিস।কাল থেকে দেখছি আমিই আফসোস করবো। আমার ই লস হবে।কি গন্ডগোল পাকাচ্ছিস রে তুই।

সেটা না হয় গেলেই জানতে পারবে ভাইয়া।

ওকে যাহ তো দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসবি।আটা ময়দা মাখার জন্য কিন্তু এক্সট্রা টাইম দিতে পারবো না।

হুম দেখবো দেখবো আটা ময়দার জন্য টাইম দেও কি না।তখন হবে তোমার।

নিশার কথা শুনে জুনইদ মুচকি হাসলো।নিশা চলে গেলো রেডি হতে।জুনইদ একটা প্লেন টি-শার্ট আর নরমাল জিন্স পরে নিলো।ও-ই ই দায়সাড়া ভাব আর কি।রেডি হয়ে নিচে গিয়ে নিজর মাকে বললো,

মা তোমার ময়দা মামুনি কে বলো জলদি নিচে নামতে।আমি কিন্তু বেশিক্ষন ওয়েট করতে পারবো না।

শান্তা বেগম বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ ডাকছি।

শান্তা বেগম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন ছেলেকে দেখে।জুনইদ ব্যাপার টা লক্ষ্য করলেও এরকম ভাবে হাসার কি কারণ হতে পারে সেটা ধরতে পারলো না।তাই আর কিছু বললো না।

নিশা নিচে এসে বলে উঠলো, ভাইয়া তুমি এটা কি হ্যাংলা মার্কা লুক দিয়েছো শুনি।একটুও স্টাইল করতে পারলে না এখন।অন্য সময় তো হিরো লুক দিতে পারো খুব।

জুনইদের মা নিশার কথা শুনে হেসে ফেললেন,”ওতেই হবে মা।তুই চিন্তা করিস না।এমনিতেও চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।আমার ছেলে সাজ গোজ না করলেও পছন্দ হয়ে যাবে।

জুনইদ এসব কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছে না, এক মিনিট, এক মিনিট মা কিসের পছন্দের কথা হচ্ছে মা।আর এই নিশাপুর কে আমি নিয়ে যাচ্ছি এটাই অনেক।ওর সঙ্গে যেতে আবার আমাকে সাজু গুজু করতে হবে নাকি মেয়েদের মতো।

এমনি কিছু না বাবা।যাহ তোরা দেরি করিস না বাবা।

নিশা চোখ কোণা করে বললো, “ভাইয়া পরে আফসোস করো না তাহলেই হবে।আমার বলার কর্তব্য তাই আমি বললাম।

ঠিক আছে ফিরে আসি তারপর না তোর পালা।তুই কত আফসোস করতে পারিস আমি দেখবো।আমার মাথা টা এবার না খেয়ে চল।

দুজনেই ওদের শান্তা বেগম কে টাটা জানিয়ে চলে গেলো।গাড়িতে যেতে যেতে নিশা বলে,ভাইয়া রেস্টুরেন্ট কিন্তু আমি ঠিক করে রেখেছি।

উত্তরে জুনইদ ব’লে, আচ্ছা তা পার্টনার টাও নিজে ঠিক করে রাখলেই পারতিস।শুধু শুধু আমাকে না টানলেও তো হতো।

হুম পার্টনার তো ঠিক করেই রেখেছি রে ভাইয়া।

মানেহ কিসের পার্টনার?

থাক ভাইয়া।আর গভীরে না যাওয়ায় ভালো।সময় এলেই বুঝবে সব।

তুই তো দেখছি আমার মাথাটা খারাপ করেই দিবি আজ।সেই বাড়ি থেকেই নোটিস করছি মা আর তোর সাস্পেন্সিভ কথাবার্তা।ব্যাপার টা কি রে? জুনইদ ড্রাইভিং এ মনোযোগ রেখেই বললো।

নিশার বলা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে নিশাকে জুনইদ গাড়ি পার্ক করে চলে এলো নিশার কাছে।তারপর নিশা বললো, ভাইয়া তুমি ভেতরে গিয়ে বসো আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।জুনইদ ও কিছু না বলে ভেতরে গেলো।ভেতরে ঢুকেই একটা বড়সড়ো ঝটকা খেলো।এটা সে কি দেখছে।সামনেই একটা টেবিলে একজন মানুষ কে বসে থাকতে দেখে জুনইদ তো রীতিমতো শকড।সে আর কেউ নয় অনিলা বসে আছে।জুনইদ অনিলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

“হ্যালো মিস সুনামি।তুমি এখানে?”

অনিলা যেনো আকাশ থেকে পরলো।সেও অবাক হয়েই বলে, “হাই আপনি এখানে?”একি প্রশ্ন তো আমার ও।

কেন আসতে পারি না বুঝি?

আমি সেটা মীন করিনি।

ওকে বসুন আপনি।

না না এখানে হইতো তুমি কারোর জন্য ওয়েট করছো সে চলে এলে অসুবিধা হবে তোমার।

আসলে অনিলা এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছে সেটা খুব জানতে ইচ্ছে করছে জুনইদের।কিন্তু কিভাবে জিজ্ঞেস করবে সেটাই ভেবে পেলো না।

আসলেও কোনো সমস্যা হবে না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।ওই তো চলে এসেছে ও।

জুনইদ সেদিকে না তাকিয়েই বলে উঠলো, ঠিক আছে চলে এসেছে যখন তখন কথা বলো আমি আসছি।কথা শেষ করেই চলে যাচ্ছিলো জুনইদ।

নিশা পেছন থেকে বলে উঠলো, ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে আমরা বসে গল্প করছি তুমি যাও”!

জুনইদ ফট করে পেছন ঘুরে তাকালো,”মানেহ টা কি?”

মানেহ তুমি না চাইলে এখানে বসতে জোর করবো না।তুমি যেতে পারো।

আসলে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট নিশা আমাকে এখানে ডেকেছে।কিন্তু কেন ডেকেছে সেটা জানি না।আপনি আসবেন সেটাও আমি জানতাম না।

জুনইদ ওর কাছে এখন পুরো টা ক্লিয়ার হয়ে যায়।এটা আসলে নিশার ই প্ল্যান।তার জন্যই বার বার আফসোস আফসোস এই কথাটা ব্যবহার করছিলো।এভাবে নিশা ওঁকে এখানে না বলে নিয়ে আসার জন্য রাগ করবে নাকি অনিলাকে এনেছে বলে খুশি হবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না জুনইদ।

নিশা গলা পরিষ্কার করে বলে, কি গো ভাইয়া। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে পুরো চারশো চল্লিশ ভোল্টের শকড খেয়েছো।

অনিলাও মুখ টিপে হাসছে।জুনইদ কে এভাবে বোকা বানিয়েছে ভেবে।

জুনইদ বলে, তা এই প্ল্যানিং টা কখন করলি এই কেনই বা করলি।

ওকে তাহলে খুলে বলি পুরো টা।সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে মাকে তো এই কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম মাঝ খানে তো তুমি চলে এলে।পরে আমি মাকে সব টা বলি।আর মাকে তোমাকে কিছু জানাতে বারন করি।তাই মাও কিছু জানাইনি।

জুনইদ হালকা রেগে বলে উঠলো, তা আমার সামনে বললে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো শুনি।

তাহলে কি আর এটা সারপ্রাইজ থাকতো রে ভাইয়া।আর অনিলাকে তোমার ফোন থেকেই কল করেছিলাম।আমার ফোনে ব্যালান্সও ছিলো না জন্য।

ওরেহ শাকচুন্নী তোর এভাবে ডাকাতে আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম সেটা কি তোর বোধগম্য হয়নি।আমি আরও ভাবলাম সিরিয়াস কিছু হয়েছে নাকি।তোকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি।অনিলা নিশার দিকে তাকিয়ে খানিকটা তেজি কন্ঠে বললো।

নিশা বললো, ওকে ওকে দেখে নিস।আপাতত আমাকে না দেখে আশেপাশের মানুষ জনকে দেখ।

অনিলা বিক্ষুব্ধ নয়নে তাকালো নিশার দিকে।অনিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশা বলে উঠলো,

আচ্ছা তোরা তাহলে একটু বোস আমি একটু আসছি।

কেন তোর আবার কি হলো রে নিশা।অনিলা চোখ সরু করে বললো।

আরে তোরা বোস আমি এখানে আমার একজন বন্ধুকে ডেকেছি কিছু নোটস নিতে হবে ওর থেকে।তুই ও তো ভার্সিটিতে যাস নি আমিও যায় নি।তাই ওর থেকে নিবো।

অনিলা বললো ওকে তাহলে যাহ।

নিশা যেতেই জুনইদ একটা চেয়ার টেনে অনিলার সামনে বসলো।সে ভাবছে নিশার কথা না শুনে সত্যিই আফসোস করতে হচ্ছে।এখন কি একটা ক্যাবলা মার্কা লুক নিয়ে চলে এসেছে।

অনিলা একটা লং ব্ল্যাক কুর্তির সঙ্গে হালকা স্টিল কালারের পালাজো পরেছে।কানে দুটো বড় বড় দুল।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এমনি তে লিপস্টিক সে পরে না।কিন্তু নিশাই বলেছে সে যেন আজ একটু লিপস্টিক পরে।মোটামুটি সাধারণ সাজেই এসেছে কিন্তু তাতেও জুনইদ অনিলার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে একটু লজ্জা পেলো সে।

জুনইদ এক ভাবে তাকিয়ে আছে অনিলার দিকে।আসলে প্রেমিক হৃদয়ের চোখে তার হৃদয়মোহিনী সর্বদাই অনন্য।সে হোক না রাজকুমারীর বেশে বা ফুল ছাড়া খোলা কেশে।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here