শেষ_বিকালের_আলো (৬ষ্ঠ পর্ব)

#শেষ_বিকালের_আলো (৬ষ্ঠ পর্ব)

অবনী তার মেয়েদের কান্না আর সহ্য করতে পারছিলো না।অবনী নিজের কান্না জোরপূর্বক বন্ধ করে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো কোনভাবেই তার এই পরী দু’টোকে আর কস্ট পেতে দিবেনা। কোনভাবেই না…

পরিবেশটা হালকা করার জন্য লিনসা আর লিনিয়াকে অবনী বলল…চলো আমরা নিচের ফুল বাগান থেকে ঘুরে আসি।বাগানে অনেক রঙ বেরঙের ফুল আর সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি আছে।দেখবে চলো…

লিনসা আর লিনিয়া ধীরে ধীরে কান্না থামিয়ে অবনীর হাত ধরে বাইরে বের হলো…

অবনী নিচে নামতেই দেখলো কাকিমা একজন মহিলা আর পুরুষ কে হাত দিয়ে বিভিন্ন দিক দেখিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

অবনী এবার সামনের ফুল বাগান দেখায় মনোযোগ দিলো…দেখলো বাগানের চারিদিক ঘিরে আছে বিভিন্ন রঙের জবা ফুল।এরপরে রয়েছে রঙ্গন ফুল গাছের সারি।রঙ্গনের গাছগুলো কেটেছেঁটে কিছুটা ঝোপালো করে রাখা হয়েছে। গাছগুলোতে এত পরিমাণ ফুল ফুটে আছে যে পাতা খুব কম দেখা যায়। রঙ্গনের পরে রয়েছে বিভিন্ন রঙের নয়নতারা ফুলের গাছ। বাগানের একদম মাঝখানে আছে বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন রঙের বাহারি গোলাপ গাছ।

অবনী একটু খেয়াল করে দেখলো সিজনাল কোন ফুল গাছ এই বাগানে নেই।কেউ একজন চেয়েছে এই বাগানে সবসময় ফুল থাকুক তাই সব বারোমাসি ফুল গাছ দিয়ে বাগান করা হয়েছে।

অবনী যতই এই বাড়িটি একটু খেয়াল করে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।এত সুন্দর প্লানিং, চিন্তা ভাবনা কে করেছে প্রতিটি বিষয়ে!
কাকিমা নাকি অন্য কেউ! যাই হোক যেই করুক না কেন নি:সন্দেহে তিনি প্রশংসার দাবিদার।

এই বাগান বাড়িটি আহামরি কোন বাড়ি নয়।শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রজাতির ফল,ফুল আর সবজি গাছের সুষমবন্টনের জন্য শুধু বাড়িটি এত অপূর্ব হয়ে উঠেছে।

বাগান বাড়ির এই সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য যে কত কঠোর পরিশ্রম করতে হয় অবনী তা জানে কারণ অবনীরও একটি সুন্দর ছাদবাগান আছে।
এই একটা দিক দিয়ে অবনী পুরোপুরি সুখী ছিলো। বাগানে যত পরিশ্রম করেছে বাগান তাকে তার দ্বীগুন ফেরত দিয়েছে।

গাছগুলোকে ভালোবাসার প্রতিদান অবনী সবসময় পেয়েছে।কখনো নিরাশ করেনি।অবনী ভেবে দেখলো আসলে বাইরের অরণ্য তাকে কখনও ঠকায়নি….ঠকিয়েছে শুধু ঘরের অরণ্য।

লিনসা আর লিনিয়া প্রজাপতির পিছনে ছোটাছুটি শুরু করেছে।অবনীও ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো আশেপাশে।একটু একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে অবনীর।

কাকিমা মহিলাটি ও পুরুষটিকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে অবনীর কাছে এলো।এসে অবনীকে বলল এরা হচ্ছে নীলুফা বেগম আর সুমন মিয়া। দু’জন স্বামী-স্ত্রী।এদের বাসা কাছেই।আমার সাহায্যকারী।

কাকিমা আরও যোগ করলেন…দু’জনেই আমার বাগান দেখাশোনা করে। আবার বাইরের বাজার-সদাই করে দেয় সুমন মিয়া আর ঘরের কাজ করে দেয় নীলুফা বেগম।

কাকিমা আরও বলতে লাগলেন আমার একমাত্র ছেলে বেশিরভাগ সময় বিদেশেই থাকে।কয়েকমাস অন্তর অন্তর এসে কিছুদিন বাড়িতে থেকে আবার চলে যায়।তাই ওরাই আমার দেখাশোনা করে বলতে পারো।

অবনী: আপনার ছেলে কি করেন কাকীমা?

কাকিমা: এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর বিজনেস করে। আসলে আমার তো ঘর ভাড়া দেয়া জরুরি ছিলোনা।আমার ছেলেও চায়নি আমি ঘর ভাড়া দেই।কিন্তু আমি সারাদিন একা থাকি ভালো লাগেনা তাই ছেলেকে রাজি করিয়ে গত সপ্তাহেই এই টু লেট লাগিয়েছি।

কয়েকজন বাড়ি ভাড়ার জন্য ফোনও দিয়েছিলো তোমার আগে কিন্তু বাড়ি শহর থেকে এত ভিতরে শুনে কেউ আর আসেনি।

অবনী: মনে মনে ভাবলো আর এই একটা কারণেই সে এই বাসা ভাড়া নিতে এসেছে।মুখে শুধু বলল,ওহ্ আচ্ছা।কাকিমা একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম যদি কিছু মনে না করেন!

কাকিমা: বলে ফেলো! কোন সমস্যা?

অবনী: ঠিক কোন সমস্যা নয়।আসলে আমি তো হুট করে চলে এসেছি বাসা থেকে আমার কিছু জরুরি জিনিসপত্র কেনাকাটার দরকার ছিলো।আমিতো এখানে ভালো করে কিছু চিনিনা।আপনি যদি কাউকে দিয়ে একটু কিনিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।

কাকীমা: ও আচ্ছা এই কথা!তোমার কি কি লাগবে একটা লিস্ট করে টাকা নিয়ে এসো।আমি দেখি কাকে দিয়ে আনানো যায়।

অবনী: লিনসাকে লিনিয়ার দিকে খেয়াল রাখতে বলে উপরে চলে গেলো।
উপরে গিয়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগে হাত দিলো।অবনী হাতে বেশি টাকা রাখতো না,অনলাইন বিজনেস করে যে টাকা আয় হতো তা মোটামুটি সবই ব্যাংকে রেখে দিতো তবে অনেকেই বিকাশে টাকা পে করতো তাই বিকাশেও কিছু টাকা জমেছে।

ভ্যানিটি ব্যাগের টাকা হিসাব করে দেখলো ৭৫৩০ টাকা আছে।আলমারিতে কিছু টাকা রাখা ছিলো সেগুলো তাড়াতাড়ি করে ট্রাভেল ব্যাগে নিয়েছিলো।

অবনী প্রয়োজনীয় খাবার আর জিনিসপত্রের লিস্ট করে টাকা হাতে নিয়ে বের হলো। নিচে নেমে কাকিমার হাতে দিলো।

কাকিমা সুমন মিয়াকে ডেকে লিস্ট বুঝিয়ে টাকা দিয়ে দিলো।নিলুফা বেগম কে অবনীর ঘর পরিস্কার করে মুছে দিয়ে আসতে বলল।

অবনী এই ভদ্রমহিলাকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।একজন ষাটোর্ধ মহিলা এত স্ট্রং কিভাবে হয় তা তাকে না দেখলে বুঝতোনা অবনী। তার কথাবার্তা,চালচলন,নেতৃত্ব সত্যিই অতুলনীয়। আর ব্যবহার তো অমায়িক।

বিকাল ৫ টা….কাকিমা অবনীকে বলল চলো পিছনে গিয়ে কিছু ফল পেরে আনি।আসলে অনেক দিন পরে আবার আমার বাড়িটা যেন ভরে উঠেছে।

অবনী লিনসা আর লিনিয়াকে ডেকে কাকিমার সাথে বাড়ির পিছন দিকটার ফল বাগানের দিকে যেতে লাগলো….

চলবে…

লেখনী #নুসু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here