শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”সাত”
#রোকসানা_ইয়াসমিন
অফিসের সময় গুলো খুব ভালোই কাটছিল।এরই মাঝে অফিসের অনেকের সাথেই আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।তার মাঝে অন্যতম হলো মমতাজ আন্টি।লাঞ্চের সময় প্রায়ই আমাদের কথা হয়।উনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনি এখনো বিয়ে করেননি।তার কারণ উনি এখনো কোনো একজনের অপেক্ষায় বসে রয়েছে।এক চিলতে আশা নিয়ে বেচে আছে যদি কোনো একদিন ভালোবাসার সেই লোকটার নজর তার ওপর পড়ে।একটু সহানুভুতি দেখায়।সেই সহানুভূতির আশ্রয়েই কাটিয়ে দেবেন সারাটাজীবন।ভাবতেই অবাক লাগে ভালোবাসা অনুভুতিটা সত্যিই অদ্ভুত।এর এক চিলতে ছোঁয়া যার মনে লাগে তার গোছানো জিবনটা ও অগাছালো হয়ে যায়।আবার কারো অগোছালো জীবন খুব সুন্দর ভাবে সেজে ওঠে।ঠোঁটের কোণে এক মুঠো হাসি এসে জমা হলো।আচ্ছা,উনি আমায় কতটা ভালোবাসেন!জানার খুব ইচ্ছে।মাঝে মাঝে মনের মধ্যে ভয়েরা জেকে বসে।উনি আমার জীবনটা গোছানোর বদলে অগোছালো করে দিয়ে যাবেন না তো।যখন কথা গুলো মনে করি তখন বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে।ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি যে উনাকে।তবে এই সব কথা ভাবার সময় এখন নয়।উনি আমাকে ওনার কেবিনে ডেকে পাঠিয়েছেন অনেকক্ষণ হলো।আমি ভাবনাতেই এতোটা বিলীন ছিলাম যে কেবিনে যাওয়ার কথাটা মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে।আমি সামনে থাকা ফাইল টা বন্ধ করে উনার কেবিনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।সেই মূহুর্তে চোখ পরল সামনের দুই মুর্তির দিকে।দুইজনে দুই দিকে তাকিয়ে একে অপরের দিকে হেঁটে আসছে।বুঝতে বাকি রইল না এরপর কী হবে।তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তাঁদের একে ওপরের সাথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটার হাতে থাকা সব ফাইল এলোমেলো হয়ে মেঝের ওপর ছড়িয়ে পরল।এই পুরো ঘটনায় চিত্রা যতটা না ভয় পেয়েছে তার থেকে বেশি চমকে উঠেছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তাসরিফ কে দেখে।যা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।চিত্রা তড়িঘড়ি নিজের চমক কে নিয়ন্ত্রণে এনে এক হাতে নিজের মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে মেঝেতে থাকা ফাইল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরল।
“আগে তো জানতাম তুমি শুধু ঠিক মতো কথাই বলতে পারো না।কিন্তু এখন তো দেখছি ঠিক মতো চলতে ও পারো।চোখে এতো বড় চশমা টা কী লোক দেখানো পরে রেখেছ?”
তাসরিফের এমন কথায় চিত্রা হালকা মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠল,
“স.স.সরি স্যার।আ…আর কখনো এরকম টা হ ..হবে না।”
“হুম,ঠিক করে কাজ করো।”
বলেই তাসরিফ অন্যদিকে চলে গেল।তার চলে যাওয়ার পর পরই আমি গিয়ে চিত্রার সামনে বসে তাঁকে ফাইল তুলতে সাহায্য করতে করতে বললাম,
“তুমি কি কোনো ভাবে তাসরিফ কে পছন্দ করো?”
আমার হঠাৎ করা এমন প্রশ্রে চমকে উঠল সে।তার এমন চমকানো দেখে আমিও চমকে উঠে বড় বড় চোখে তার দিকে তাকালাম।চিত্রা এদিক ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে আমার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
“কী করছো কী!এই কথা গুলো কেউ এতো জোড়ে বলে না কি?”
আমিও তার সাথে তাল মিলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম।
“আচ্ছা,বলে না বুঝি!”
“না তো!কি বলছি কি তাহলে আমি।এই কথা গুলো যদি একবার তাসরিফ স্যারের কানে যায় না তাহলে নিশ্চিত উনি আমার গর্দান নেবেন।”
বলেই ছোট বাচ্চার মতো মুখ করে আমার দিকে তাকালো।আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“এ মা,উনি কেন তোমার গর্দান নিতে যাবেন।”
আমার এমন কথায় এবার চিত্রা মুখ ফুলিয়ে মেঝেতেই ধপ করে বসে পরল।
“উনাকে প্রথম দেখার পর আমার মন উনার ওপর ক্র্যাশ হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আজ অবধি মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না।তুমি জানো,উনি কত শয়তান বিচ্ছু টাইপের লোক।বলে কি না আমি ঠিক মতো কথা বলতে পারিনা।চলতেও পারিনা।আর…আর আমায় দেখতেও নাকি বাংলা সিনেমার খলনায়িকার মতো।আচ্ছা তুমিই বলো কখনো বাংলা সিনেমায় আমার মতো দেখতে কোনো খলনায়িকা দেখেছ তুমি বলো দেখছো কখনও।তাহলে উনি কোন হিসেবে আমায় খলনায়িকা বলে বলো দেখি।আমি খলনায়িকার মতো দেখতে বলো আমি খলনায়িকার মতো দেখতে?”
কথাটা বলতে বলতেই ও আমার দিকে কিছু টা এগিয়ে এলো।আমি ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে চট জলদি না বোধক ইশারা করলাম।তা দেখে ও কাঁদো কাঁদো হয়ে আবার নিজ জায়গায় গিয়ে বসল।
“উনি আমাকে মোটেও পছন্দ করেন না।যাই করি না কেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ক্ষুদ বের করবে।কখনো কখনো ইচ্ছে হয় কি জানো ওনার মাথার চুল ধরে উনাকে কয়েক পাক ঘুরিয়ে দিই।তাতে যদি ওনার কিছু সুবুদ্ধি হয়।ব্যাটা আমার দিকে একটু ভালোবেসে তাকায় ও না।”
আমি একটা বড় সড় দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।বুঝলাম চিত্রার ভালোবাসা গভীরতা কতটা বেশি।বেচারি তো এটা বুঝতেই পারছে না যে তার বীপরীত পাশে দাঁড়িয়ে তার ক্ষুদ ধরতে থাকা লোকটার মনেও তার জন্য এক পাহাড় ভালোবাসা জমে রয়েছে।আমি খানিকটা হেসে উঠলাম।তবে এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমার পাগল হতে বেশি সময় লাগবে না।এই মেয়ে মূহুর্তেই তার কথার ছলে আমায় পাগল করে দিতে পারে।আমি আমার হাতে থাকা ফাইল গুলো তার হাতে দিয়ে এমন ভাব করলাম যেন তার কথায় আমি অনেক বেশি ভেঙে পড়েছি।তবে তার ট্রেন আবার চলতে শুরু করার আগেই আমি স্টেশনে নেমে পরলাম।কোনো মতে তার হাত থেকে রেহাই পেয়ে উনার কেবিনের দিকে যাবো তখনই কারোর সাথে ধাক্কা খেলাম।নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই ভয়ে আমার আত্মারাম উধাও।
চলবে❤