শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”দুই+তিন”

শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”দুই+তিন”
#রোকসানা_ইয়াসমিন

ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করতে করতে পিট পিট চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুঁচকে শান্ত দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ডানে বামে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে ভ্যা ভ্যা করে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলাম।আমার এমন কাণ্ডে উনার কুচকানো ভ্রু আরো বেশি কুঁচকে গেল।হাতের বাধন হালকা করে বলে উঠলেন,
“হোয়াট রাবিশ!”
উনার এই দৃঢ় কণ্ঠে বলা কথাটায় আমি কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতোই কেদে গেলাম।কাঁদতে কাঁদতেই এক সময় হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে পরলাম।আমাকে বসতে দেখে উনি হাত ছেড়ে আমার সাথে সাথেই মাটিতে হাঁটু না লাগিয়ে আমার সামনেই বসলেন।উনার চোখে এই মূহুর্তে “কি হচ্ছে এসব”এরকম টাইপের কিছু একটা ফুটে উঠেছে।আমি উনার দিকে নজর না দিয়ে ন্যাকা কান্না কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠলাম,
“আপনি খুব খারাপ।খুব খারাপ একটা মানুষ আপনি।কোথায় এ বাড়িতে আমি নতুন এসেছি,উনি আমার আদর আপ্যায়ন করবেন তা না সেই তখন থেকে শুধু খেই খেই করেই চলেছে।ধুর ভাল লাগে না।আপনার সাথে কোনো কথা নেই।যান তো যান এখান থেকে।”
কথাটা বলে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ঠিক আমার দিকে নয় আমার ঠোঁটের দিকে।ব্যাপার টা বুঝতে পেরেই আমি চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে উঠলাম,
“এই কী দেখছেন কী আপনি হ্যা!”
কথাটা বলেই আমি দেয়ালের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিলাম।আমার এমন আচমকা চেঁচিয়ে ওঠায় উনি খানিকটা ভড়কে গেলেন।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একবার ডান দিক আর একবার বাম দিকে চোখ ঘুরিয়ে আচমকা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।উনি বেরিয়ে যেতেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।যাক বাবা বাঁচা গেল।রাক্ষস একটা।দেখলেই মনে হয় এই বুঝি খেয়ে ফেলবে।মনে মনে উনাকে কয়েকখানা কড়া কথা শুনিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে লাগলাম।ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই উনি কোথা থেকে এসে আমার এক হাত দেয়ালে চেপে ধরে অন্য হাত আমার কোমর জড়িয়ে আমায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল।হঠাৎ ঘটা এই ঘটনায় আমি ভয় পেয়ে উনার বাহুর শার্ট খামচে ধরে উনার দিকে তাকালাম।কিন্তু কিছু বুঝতে পারার আগেই উনি আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন।উনার এমন কাজে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।বুকের ভেতরে হার্টবিট কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে।কী হচ্ছে এসব!স্বপ্ন দেখছি না তো!নিজের ভুল ভাঙানোর জন্য আমি একহাতে উনার বাহুতে হাল্কা চিমটি কাটলাম।এতে উনি আরো গভীর ভাবে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।এটা স্বপ্ন নয়!
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমায় ছেড়ে আমার চোখের দিকে তাকালেন।কিন্তু পরক্ষেণেই উনি আবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।ভাব এমন যেন এতক্ষণে উনি একটা ভ্রমের মাঝে ছিলেন।আমি থ মেরে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।এতক্ষণ যাবৎ কী ঘটে গেল তার মাথা মণ্ডু কিছুই মাথায় ঢুকলো না।আচ্ছা, লোকটা এরকম কেন?
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে নামতেই জানতে পারলাম উনি না খেয়েই বেরিয়ে গেলেন।তবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।মিঠুনের কাছ থেকে জানতে পারলাম উনি কখনো বাড়িতে খান না।বলতে গেলে বাবার সাথে বসে একসাথে খান না।মিঠুনের কথায় আমি খানিক টা অবাক ই হলাম।তবে সেই অবাক হওয়াটা বেশিক্ষণ রইল।বাবা মিঠুন এদের সাথেই গল্পে মগ্ন হয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
রাত প্রায় আট টা বাজে।মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম এমন সময় উনি অফিস থেকে ফিরলেন।কোনো কথা না বলে ল্যাপটপ বেডের ওপর রেখে নিজের মতো নিয়ে তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মায়ের সাথে কথায় মনোযোগী হলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর উনি স্নান শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন।খালি গায়ে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।উনাকে এই অবস্থায় দেখে এক মূহুর্তের জন্য আমার দম আটকে গেল।এই লোকটা আমায় খুন করবে নাকি?যখনই দেখি তখনই বুকের ভেতরটা কেমন যেন এলোমেলো অগোছালো হয়ে যায়।আমি অনেক কষ্টে নিজের অনুভুতিটা দমিয়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম,
“হুম,মা আপনার সাথে কথা বলতে চান।”
হাতের ফোনটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।কথাটার শেষ হতেই উনি আমার হাত থেকে ফোনটা নিলেন।কিন্তু পরক্ষণেই কিছু ভাঙার শব্দে আমি চট করে নিচের দিকে তাকালাম।আমার ফোন ভেঙে পড়ে আছে।চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার পাশ কাটিয়ে বেডের দিকে চলে গেলেন।ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি।উনার এই এটিটিউডে আমার পুরো গা জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেল।সাথেই যেন বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে লাগল নিজের অতি প্রিয় এই ফোন টার জন্য।ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো হয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি বেডের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনের পাওয়ার অন করছেন।ব্যাটা আমার ফোন ভেঙে এখন নিজের ফোনের মজা লুটছে।লুটাচ্ছি মজা তোকে।আমি রাগে গটগট করে গিয়ে উনার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে যাবো তখনই উনি হাত সরিয়ে নিলেন।আর আমি উনার সামনের গিয়ে পড়লাম।
চলবে💞
গল্পটা আপনাকে কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।💝
হ্যাপি রিডিং💞

শূন্য_অনুভূতি
রোকসানা_ইয়াসমিন
পার্ট:”তিন”
আমার এমন কাজে উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন।
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!”
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!এই কথাটা তো আমার বলার প্রয়োজন ছিল তাই নয় কী।ওই ফোনটা আপনার টাকায় কেনা ছিল না যে যখন ইচ্ছে আছাড় মেরে ভেঙে দেবেন।আপনার সাহস হলো কি করে আমার ফোন ভাঙাআআ………”
আমার কড়া গলায় বলা কথা গুলোয় উনি হয়তো একটু বেশি ই রেগে গেছেন।যার কারণে উনি চোখ মুখ শক্ত করে হঠাৎ করেই আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এলেন।উনার এমন আচমকা এগিয়ে আসায় ভয় পেয়ে আমি দুই পা পেছতেই টাল সামলাতে না পেরে বেডের ওপর ধপ করে বসে পড়লাম।আর উনি উনার এক পা আমার পাশে বেডের ওপর রেখে তাতে এক হাত রেখে আমার দিকে ঝুকে দাঁড়ালেন।উনাকে এভাবে কাছে আসতে দেখে ভয়ে আমার আত্মারাম হাওয়া হওয়ার পালা।কিন্তু আমার এই ভয়টা কে উনি সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“ফোন ভেঙেছে বলে এতটা কষ্ট পাচ্ছো নাকি ফোনের ওপাশে থাকা তোমার ওই সো ক কোল্ড বয়ফ্রেন্ডের জন্য।”
ওনার এমন দিকহীন কথায় আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি বলছেন উনি এসব।আমার বয়ফ্রেন্ড!এটা আবার কোথা থেকে উদয় হলো।আর উনিই বা এই বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে কোথা থেকে জানতে পারলেন।এবার আমার মাথা বৃত্তাকার ঘুরতে লাগল।হয় উনি পাগল হয়ে গেছেন নয়তো আমায় পাগল বানাচ্ছেন।আমার বয়ফ্রেন্ড অথচ আমি নিজেই তার কথা মনে করতে পারছি না।এ কেমন ধরনের কথা।
এ ধরনের হাজার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার পর হঠাৎ আমার মনে হলো শরীফের কথা।আমার ক্লাসমেট ছিল।মায়ের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ আগেই আমার তার সাথে কথ হলো।আমার এমন হঠাৎ বিয়ে হওয়া কারণ কী তা জানার জন্য ও নিজেই আমায় ফোন দিয়েছিল।কিন্তু ওর কথা ইনি জানলেন কী করে।জানার তো কথা নয়।আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।উনি ইতিমধ্যেই আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে বেডের ওপর ল্যাপচপ নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন।ধুর,এই লোকটার মাথা মুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারি না।উনি শরীফের কথা কী করে জানলেন?আর আর যদি জানেন ও তাতে উনার কী।উনি তো আর আমায় ভালোবাসেন না যে আমার বয়ফ্রেন্ড থাকলে উনার জ্বলবে।তবে যদি ভালোই না বাসেন তাহলে বিয়ে করলেন কেন আমায়!এবার আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।কনফিউশনের ওপর কনফিউশন তার ওপর আরেক কনফিউশন।ধুর,ভাল লাগে না।কিছুটা বিরক্তি নিয়েই কিছু না বলে উনার পাশেই কাঁথা মুড়ি নিয়ে শুয়ে পড়লাম।মাথা ঠিক থাকলে কাল সকালে দেখা হবে।
.
.
.
.
.
পরের দিন সকাল সকাল ই আমি নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট বানালাম।এর আগে কখনও বানানো হয় নি।তাতে কী হয়েছে এখন থেকে বানাবো।নিজের শখের ব্রেকফাস্ট টেবিলে গুছিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে গেলাম।ঘরে ঢুকে উনাকে দেখতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল।এই লোকটা দিন দিন আরো বেশি জেন্টলম্যান হয়ে উঠছে।আমি সিওর অফিসের সব মেয়েরাই উনাকে চোখ দিয়েই গিলে খায়।কথাটা ভাবতেই নিজের ভেতরে হাজার রাগের কীট জন্ম নিতে লাগল।আমি আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়িয়ে না থেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে থাকা উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে এভাবে দাড়াতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।হুহ্ তাতে আমার কী?আমি উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই পায়ে উঁচু হয়ে দাড়িয়ে উনার চুল এলোমেলো করে দিলাম।ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে লিপস্টিক বের করে উনার সাদা শার্টের বিভিনাংশে দাগ কেটে দিলাম।আমার এমন কাজে রাক্ষসটা ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে উঠলেন,
“এসবের মানে কী?”
“বারে প্রতিদিন তো একদম ফিটফাট হয়ে অফিসে যান।আজ একটা দিন না হয় এভাবেই গেলেন।”
আমার এমন কথায় উনি আরো দ্বিগুণ রেগে আমার দিকে এগোবেন তার আগেই আমি চট করে বলে বসলাম,
“আর হ্যা,আজ কিন্তু বাড়িতেই খেয়ে যাবেন।আমি নিজ হাতে আপনার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি।”
আমি কথাটা বলেই মানে মানে উনার পাশ কাটিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই উনি হেচকা টানে আমার এক হাত পেছনে মুচড়ে ধরে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘটনা বুঝতে আমার প্রায় কয়েক সেকেন্ড লাগল।পেছনে হাত মুচড়ে ধরার কারণে আমি ব্যথায় কুকুড়ে উঠে উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখ মুখ প্রায় লাল হয়ে এসে এসেছে।যা দেখে আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।এরই মাঝে উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে দাঁতে দাত চেপে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“দুই দিন হলো এ বাড়িতে এসেছ।আর তুমি আমার ওপর হুকুম জারি করছো?নিজের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করো যদি তা পার হয়ে যাও তো তার ফলাফল তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না।মাইন্ড ইট।”
কথা গুলো বলেই উনি আমায় ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি অশ্রু শিক্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।যদি আমায় আমার অধিকার টা নাই তাহলে বিয়ে করলেন কেন আমায়।কেন সব কিছু ধোঁয়াশার মাঝে রাখছেন উনি।হঠাৎ আমায় এভাবে বিয়ে করার মানে কী?আর এসব ব্যবহারেই বা কারণ কী?তবে যাই হোক না কেন?যতই কড়া গলায় আমায় কথা শুনিয়ে যাক,গেল তো সেই আমার করা ডিজাইনার ড্রেস টাই।ভাবতেই ফিক করে হেসে দিলাম।
চলবে💞
আমার ফোন নষ্ট।ব্যাটরী ডাউন।প্রতি দুই সেকেন্ডে ফোন অফ হয়ে যায়।চার্জ থেকে খোলাই যায় না।লকডাইনের কারণে নতুন ব্যাটরী কেনাও হচ্ছে না।তাই গল্প লেখা ও হচ্ছে না। তাও অনেক কষ্টে দুই দিন ধরে এইটুকু লিখলাম।আশা করি এডমিন প্যানেল এবং পাঠক পাঠিকা উভয়ই আমার ব্যাপারটা বুঝে একটু কম্প্রোমাইজ করবেন।ধন্যবাদ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here