শূন্য_অনুভূতি পার্ট:”চার”
#রোকসানা_ইয়াসমিন
আজ অনেক দিন পর এই অফিসে পা রাখলাম।না,আজ আর বাবার জন্য টিফিন নিয়ে আসিনি।বাবা অনেকদিন আগেই এই কোম্পানির জব ছেড়ে দিয়েছে।উনার ভাষ্যমতে,উনি নিজের মেয়ে জামাইয়ের আন্ডারে থেকে নিজের সংসার চালাতে পারবেন না।উনার সম্মান বলেও তো কিছু একটা আছে।আর এখন দিনরাত ফাইফরমাস খেটে নিজের সংসার চালান।আমার ভাই নেই যে সে ভ
এই সংসারের হাল ধরবে।তাই আজ আমি মেয়ে হয়ে উনার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এই সময় যদি আমি বাবার পাশে দাঁড়াতে না পারি তো এতদিন যে এতো কষ্ট করে আমায় শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুললেন তার সব জল মাটি কাদা হয়ে যাবে।আর আমিই বা সেটা কি করে হতে দিই?আর তার থেকে ও বড় কথা নিজের স্বামী কে চোখে চোখে রাখার এই সুবর্ণ সুযোগ টা আমি মোটেও ছাড়তে চাই না ।তাই তো উনাকে কিছু না জানিয়ে আমার শশুড় মশাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আজ থেকে অফিস জয়েন করছি।আমি জানি উনি আমায় অফিসে দেখেই রেগে যাবেন।যেই লোকটা আমায় বাড়িতেই সহ্য করতে পারে না সে আবার অফিসে কী করে সহ্য করবে আমায়।তবে উনার কিছু পারা না পারাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।আমি যেই কাজ করতে এসেছি তা করেই দম নেব।নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
অফিসের ভেতরে ঢুকতেই আমি সোজা এম ডির কেবিনে চলে গেলাম।
“মে আই কাম ইন স্যার?”
“ইয়েস কাম ইন।”
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আনমনে কথাটা বলেই কিছু একটা ভেবে চট করেই আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন।উনার এমন কাজে আমার ভীষণ হাসি পেলেও তা মনে প্রাণে দমিয়ে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
“হোয়াট ননসেন্স!তুমি আমার অফিসে কী করছো?”
দাঁতে দাঁত চেপে হিসিহিসিয়ে কথাটা আমার দিকে ছুড়ে দিলেন উনি।
“হা-ডু-ডু খেলতে।খেলবেন আপনি?”
“হোয়াট দ্যা…”
আমার এমন জবাবে উনি কিছু রেগে গিয়ে ই নিজের চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন।তবে আমি ওনার রাগ সম্পূর্ণ ভাবে ইগনোর করে বলে উঠলাম,
“তা নয়তো কী!অফিসে মানুষ কি করতে আসে শুনি।”
“তোমার এসব ইললোজিক্যাল কথা শোনার মতো সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই।তাই ভালোভাবে বলছি বেরিয়ে যাও আমার অফিস থেকে।”
“আচ্ছা,আপনি কী আপনার সব স্টাফ দের সাথেই এরকম ব্যবহার করেন?”
আমার কথা উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি উনার সামনে আমার জয়েনিং লেটার এগিয়ে দিলাম।উনি কিছুটা অবাক হয়ে লেটার টা হাতে নিতেই আমি বলে উঠলাম,
“এখানে আমি আপনার বউ নই ওকে।আমি একজন এপ্লোয়ার।সো আমার সাথে এরকম ব্যবহার নোট এলাও ওকে না!”
আমার কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ওনার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে “ডেড”শব্দ টা বেরিয়ে।সাথে চোখে মুখে রাগে আভাসটাও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।যা দেখে আমি কোনোরকম নিজের হাসি আটকে ইনোসেন্ট মার্কা চেহারা বানিয়ে বলে উঠলাম,
“এখন তাহলে আসি স্যার কেমন।”
কথাটা বলে কোনো মতে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।উফ বাবা,এ তো দেখি জলন্ত অগ্নি কাণ্ড।আজ অনেক বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছি।জানি না বাড়ি গিয়ে আমার অবস্থা কী হতে চলেছে।তবে যা হলে সব বাড়ি গিয়ে হবে এই মূহুর্তে আমি আমার কেবিন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
“আপনি ই কী মিসেস সৃষ্টি চৌধুরি?”
হঠাৎ কারো মুখে নিজের নাম শুনে পেছনে ফিরে তাকালাম।আমার থেকে কিছুটা দূরেই একটা সুদর্শন তরুণ আমার দিকে হাল্কা হেসে তাকিয়ে আছে।
“জ্বী,কিন্তু আপনি?”
আমার কথায় ছেলেটা আমার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে এলো।
“আমি তাসরিফ।সাহিত্য স্যারের সেক্রেটারি।আজ সকালে নিয়াজ স্যার আমায় ফোন করে আপনার কথা জানালেন।আপনাকে আপনার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এবং আপনার প্রয়োজন অপ্রয়োজন সব আমার দায়িত্বে থাকছে।”
উনার শুনে কথা শুনে আমি হালকা হেসে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার নজর পরল উনার কেবিনের দিকে।উনি কাচের দেয়াল ভেদ করে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমাকে উনার দিকে তাকাতে দেখে এমন ভাব করলেন যেন উনি উনার কাজে খুব ব্যস্ত রয়েছে।সেদিনের ফোন ভাঙার ঘটনা টার পর আজ আমার এটা বুঝতে মোটেও সময় লাগল না যে উনি আমাদের এভাবে কেন দেখেছেন।আচ্ছা লোকটা যদি আমায় ভালোইবাসেন তাহলে তা প্রকাশ করছেন না কেন?এইভাবে সবসময় আমায় কষ্ট দিয়ে কেন কথা বলে।নিজের ভাবনার মাঝেই বিলিন আমি তাসরিফ এর কথায় কিছু টা চমকে উঠলাম।
“হ্যালো ম্যাডাম,কী এতো ভাবছেন আপনি?চলুন আপনাকে আপনার কেবিনে দেখিয়ে দিই।”
কথাটা বলে উনি সামনে এগোতেই অফিসের এক স্টাফ এসে জানালো,তাঁকে নাকি সাহিত্য স্যার ডাকছেন।যার কারণে উনি আমায় কেবিনে পৌছে দিতে পারলেন না।তবে তার হদিশ আমায় দিয়ে গেলেন।উনি চলে যেতেই আমি আমার কেবিনের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ ই কারো সাথে ধাক্কা লাগে।
“সরি সরি।”
কথা বলে সামনে তাকাতেই দেখি মধ্যবয়স্ক এক মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমাকে তাকাতে দেখে উনি এক গাল হেসে বলে উঠলেন,
“তুমিই কী সাহিত্যের স্ত্রী?”
“জ্বী!”
“ওহ,আমি এই অফিসে একাউন্টিং ম্যানেজার।আর তোমার শশুড় মশাইয়ের খুব ভালো বন্ধুও।”
“ওহ,ভালো লাগল আপনার সাথে দেখা হয়ে।”
“ওকে,আমি একটু পর তোমার সাথে আবার দেখা করছি এই মূহুর্তে আমার কিছু কাজ আছে গো বায়।”
কথা টা বলেই তাড়াহুড়ো করে উনি চলে গেলেন।আর আমি আমার কেবিনের দিকে।আজ প্রথম দিন হওয়ায় তেমন কোনো কাজ নেই আমার।তাই তো উনাকে একটু রাগিয়ে দেওয়ার অজুহাতে বারবার তাসরিফের কাছে যাচ্ছি কাজ বুঝিয়ে নেওয়ার অজুহাতে।আর খুব ভালো ভাবেই বুঝতেই পারলাম যে,উনি আমার এমন কাজে আসলেই কতটা রেগে গেছেন।সারাটা দিন এভাবেই কেটে গেল।আমি একবারের জন্যে ও উনার কাছে যাইনি।তবে ভেবেছিলাম দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরবো।কিন্তু ভাগ্য ততটাও ভালো নয়।উনি অনেক আগেই বাড়ি ফিরে গেছেন।যার কারণে আমায় টেক্সি ভাড়া করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
.
.
.
.
.
বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকতেই বুঝলাম উনি ঘরে নেই।গেলেন কোথায়?এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি উনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্মোক করছেন।উনি স্মোক ও করেন।আগে তো জানতাম না।নিজের ব্যাগ টা কাঁধ থেকে নামিয়ে শেডের ওপর রেখে আমি ও বারান্দার দিকে অগ্রসর হলাম।
“আপনি আমাকে না নিয়ে চলে এলেন কেন।আমাকে নিয়ে আসতেই পারতেন।জানেন কতক্ষণ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম (ডাহা মিথ্যে কথা)।”
ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বললাম ঠিক ই কিন্তু উনার কোনো হেলদোল হলো না।তাই বাধ্য হয়ে ওনার দিকে আরেকটু গিয়ে উনার সামনে এক হাত নাড়াচাড়া করতে করতে বলতে লাগলাম,
“কী হলো,আপনার ধ্যান কোথায় রয়েছে?”
তবে কথাটা শেষ করতে পারলাম না।তার আগেই উনি আমার হাত ধরে হেচকা টানে তা আমার পেছনে মুচড়ে ধরে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নেন।আমি সাথে সাথে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।
চলবে