শুভ্র_রঙের_প্রেম পার্টঃ৩৪

শুভ্র_রঙের_প্রেম
পার্টঃ৩৪

লেখিকা~#রুবাইদা_হৃদি
দক্ষিণ থেকে ভেসে আসা কোমল হাওয়ায় স্বচ্ছ পানি গুলো উথাল-পাতাল হয়ে ঢেউ খেলছে পুকুর জুড়ে৷ সাদা তুলো গুলো উড়ে এসে নিজেদের গাঁ ভিজিয়ে নিচ্ছে কোমল ভাবে৷ আমার কোমরের একপাশে হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখে পায়ে পা মিলিয়ে হেটে চলেছি সদ্য ডুবো ডুবো সন্ধ্যার রক্তিম আলোতে৷ পায়ের নুপুরের ঝুমকো গুলো ঝনঝন আওয়াজে শান্ত নীরব পরিবেশ কে করে তুলছে মোহময়৷ উনি হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
–‘ তুমি আগে আগে হাটো৷ ‘
–‘ কেন? ‘ আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই উনি বললেন,
–‘ সাদা শাড়ি জড়ানো হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, খুলে যাওয়া খোঁপায় গড়িয়ে পরা বেলীফুলের মালা সেই সাথে চমৎকার আলতা পরানো পায়ে নুপুরের ঝনঝন আওয়াজ৷ আমি উপভোগ করতে চাই গভীর ভাবে তোমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ৷ যেন ভুলে গেলেও,বহুদূর থেকে তোমার প্রতিচ্ছবি শুভ্র রাঙা সাঝের কন্যা হয়ে ঘুরেফিরে আমায় মনে করিয়ে দেয়৷ ‘
আমি চমকে উঠে টলমলে চোখে তাকালাম৷ ব্যস্ত ভাবে বললাম,
–‘ মাথা ব্যথা করছে আপনার? ‘
–‘ উঁহু,শুধু মনে হচ্ছে আমি আবার ভুলে যাচ্ছি ৷ ‘
আমি ধীরপায়ে উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নরম গলায় বললাম,
–‘ ভালোবাসি ৷ ‘
আমার হঠাৎ বলা কথাটায় চমকে উঠলেন উনি৷ ক্লান্ত মুখে খেলে গেলো দুষ্টুমির হাসি৷ উনি আরো এক পাঁ সামনে এগিয়ে বললেন,
–‘ তারপর? ‘
আমি অপ্রস্তুত গলায় বললাম,
–‘ তারপরেও ভালোবাসি ৷ ‘
–‘ একদিনে সব লাজ-লজ্জা শেষ? ‘
উনার দুষ্টুমির ছলে বলা কথায় আমার কনফিডেন্স ভেঙে গুড়িয়ে লজ্জা গুলো কানে কানে বলল, ‘ তুমি লজ্জা পাচ্ছো! ‘
উনি সামনে আরো আগাতেই আমি পেছনে ঝুঁকে পরি৷ সে একহাত টান দিতেই গাছের পাঁতা ভেঁদ করে সন্ধ্যার আলো চোখ-মুখ ছুঁয়ে থেমে যাওয়া পরিবেশ হঠাৎ করেই চঞ্চল করে তুলল৷
কিছু কিছু খারাপ মূহুর্ত ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য না’হয় একটু নির্লজ্জ হলাম৷ তাকে ভালো রাখতে আমি’ই না’হয় লজ্জার বেড়াজাল ভেঙে দিলাম৷

__________________

সন্ধ্যা নেমেছে সেই কখন৷ মসজিদে নামাজ পরতে গিয়েছেন উনি আর আমি গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছি ৷ উনি নিয়মিত নামাজ পড়েন৷ আমি’ই অলসতা করি৷ আমি চুপসানো মুখ নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি ৷ নামাজ শেষে এগিয়ে আসছেন উনি৷ সাদা টুপি পরে তাকে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে একদম নিষ্পাপ ৷ গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ নিয়মিত নামাজ পড়বে৷ অলসতা করলে তোমার সাথে আমার কথা টোটালি বন্ধ ৷ ‘
–‘ হু! পড়বো৷ ‘
–‘ ভালোভাবে পড়াশোনায় মনোযোগ দিবে৷ লাস্ট সেমিস্টারে তুমি নাকি ইংরেজি আর দর্শনে ৫০% এর নিচে নাম্বার পেয়েছো? পরশ স্যার ইনর্ফম করছেন আমায়৷ ‘
আমি উল্লাসিত চোখে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললাম,
–‘ আলহামদুলিল্লাহ! ইংরেজিতে আপনার দিকে তাকিয়ে থেকে ৫০% পেয়েছি আর দর্শনে পরশ স্যারের ভূরি রহস্য উৎঘাটনে ব্যস্ত থেকেও ৫০% ৷ ওয়েল ডান হৃদি! ব্রেইভ গার্ল ইউ আর৷ ‘
উনি আমার কথা শুনে জোরে জোরে কেঁশে উঠলেন৷ আমি দ্রুত উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ সিরিয়াস? তুমি ক্লাসে বসে ক্লাস না করে এইসব করেছো? ‘
–‘ সব সময় না একটু আধটু৷ যেদিন আপনি সাদা শার্ট পরে আসতেন সেদিন বেশি তাকিয়ে থাকতাম৷ আর বাকি দিন অল্প পরিমাণে৷ এই ধরুণ চল্লিশ মিনিটের ক্লাসে মাত্র আটত্রিশ মিনিট৷ ‘
আমার কথার প্রতিউত্তর কি দিবেন খুজে পেলেন না উনি ৷ আমি এক্সসাইটেড হয়ে কি সব বলে দিয়েছি মনে কড়া নাড়লো এখন ৷ ফুড়ুৎ করে সব হাসি উড়ে গিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে ক্ষুব্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন৷ গাড়ি ঘুরিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
–‘ কাল রিসেপশন শেষে আমার সাথে থাকা বন্ধ তোমার ‘
আমি উনার কথা শুনে আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ তাহলে,রিসেপশন করার দরকার কী? সবাই আর কিছুদিন জানুক আমি সিঙ্গেল৷ ‘

–‘ ওকে ফাইন! তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো৷ ‘
রাগে উনার কান লাল হয়ে উঠেছে৷ ভয়ংক রাগ!
আমি দোয়া দুরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
–‘ আপনি সত্যি আমাকে রেখে যাবেন? ‘
উনি জবাব দিলেন না ৷ উনি বর্তমান স্যারের রুপে আছেন৷ রাহাতের মতো আমারও জিজ্ঞেস করার ইচ্ছা হচ্ছে, ‘ ইয়ে মানে আপনি কি শুভ্র প্রেমিক? স্নিগ্ধ স্যার না আমার উনি?? ‘
প্রশ্ন গুলো মুখ ফুঁটে উচ্চারিত হলো না ৷ বিয়ের একদিন যেতে না যেতেই এই অবস্থা!
এই জন্যই সবাই বলে,কখনো স্যার বিয়ে করো না৷ উঠতে বসতে পড়া নিয়ে হুমকি দিবে৷ ভাগ্যিস কাল রাতে পড়া নামক শব্দটার কথা উনার মনে ছিলো না ৷ না- হলে দেখা যেত,হাত রোম্যান্সের সময় বলত
–‘ হৃদি পড়তে বসো! ‘
এই লোকের দ্বারা সব সম্ভব৷ উল্টাপাল্টা ভেবে লজ্জায় পরে গেলাম৷ তবে মশাই যে রাগ করে আছেন..! রাগ ভাঙাই কি করে?
.
.
.
বাড়ির পরিবেশ হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে৷ ড্রয়িং রুমের চিত্র দেখে আমার মুখ ‘ হা ‘ হয়ে গেছে ৷ আম্মু আমাদের দেখে দৌড়ে এসে স্নিগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে সুরে বললেন,
–‘ ভালো আছো বাবা? ‘
–‘ আলহামদুলিল্লাহ আম্মু! আপনি? ‘
উনার মিষ্টি সুরের কথা শুনে আম্মু কেঁদে দিয়েছে৷ আমাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না কেউ৷ আব্বু ও এসে উনাকে জড়িয়ে ধরলো৷ আমি নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ৷ সবার আহ্লাদ দেখে আর উনার ইগ্নর দেখে রাগে ধুপধাপ পা ফেলে আমার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷
একটা বার কেউ ডাকলো না পর্যন্ত৷ শুধু সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় রাফিন ফুলের ঝুঁড়ি হাত থেকে নামিয়ে বলল,
–‘ তোর দিন শেষ স্নিগ্ধ ভাইয়ের বাংলাদেশ ৷ ‘
আমি রাগে কটমট করে বললাম,
–‘ থাক তোর স্নিগ্ধ ভাইকে নিয়ে৷ আমার পাশে যেন ঘুরঘুর করতে না দেখি৷ ‘
রাফিন আমার কথার জবাব না দিয়ে লাফিয়ে চলে গেলো উনার কাছে ৷

রাতের খাবারের সময় ও কেউ আমাকে ডাকে নি৷ সবাই স্বার্থপর৷ আমি টিস্যু দিয়ে চোখ মুছচ্ছি আর নাক টানছি ৷ আই ওয়ান্ট ব্যাক মাই সিঙ্গেল লাইফ৷ কাল হলে চলে যাবো ৷ সবাই থাকুক উনাকে নিয়ে আর উনি থাকুক উনার রাগ নিয়ে ৷
বেড হঠাৎ করে কেঁপে উঠতেই চমকে উঠি আমি৷ পাশে তাকিয়ে দেখি উনি বসে চারদিকে চোখ-বুলিয়ে দেখছেন ৷ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বেডে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ রীতি অনুযায়ী আজ আমাদের দ্বিতীয় বাসর রাত ৷ ‘
উনার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে পাশ ফিরে শুয়ে পরলাম৷ পিনপতন নীরবতা ছেয়ে গেলো ঘরে৷ নিঃশ্বাসের শব্দ না পেয়ে পেছনে ফিরে দেখি কেউ নেই ৷ মতিভ্রম নাকি?
আমি আবার পাশ ফিরে শুতেই একটানে উঠিয়ে নেয় আমাকে৷ আমি ভড়কে গিয়ে মৃদু চিৎকার করতেই উনি বললেন,
–‘ এতো রাগ কেন তোমার? ‘
–‘ আমার রাগে আপনার যায় আসে? খুব তো বলেন,রেখে চলে যাবেন৷ ‘
আমার অভিমানী কন্ঠে শুনে উনি হাসলেন৷ আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
–‘ হাসবেন না একদম ৷ ‘
উনি আমাকে নিয়ে নিচে ডাইনিং এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ কার্যকলাপ দেখে আমি শিহরিত ৷ সবাই আছে এইভাবে দেখলে কী ভাববে? আমি ছুটতে চেয়ে বললাম,
–‘ কেউ দেখে নিবে ।নামিয়ে দিন আমি একা যেতে পারবো। ‘

উনি কথা শুনলেন না একদম ।ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছেন। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছি। বড়রা সবাই আছে।
–‘ চোখ খোলো। ‘
আমি চোখ বন্ধ রেখেই মাথা ঝাকিয়ে না করলাম। উনি পা দিয়ে চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে দিলেও আমি উনার গলা ছাড়ছি না। উনি আমার মতো করে বললেন,
–‘ লজ্জা নেই আপনার ? কেউ দেখে নিলে কি হবে ? ‘
উনার উক্ত কথা শুনে তড়িঘড়ি করে গলা ছেড়ে দিয়ে দুইহাতে মুখ ঢেকে বসে আছি। চোখ খুললেই সবার চোখের দৃষ্টির সামনে পরতে হবে।
আমাকে বিস্ময়ে ফেলার জন্য আরেকটা মহৎ কাজ করলেন। মুখ থেকে হাত সরিয়ে গালে চুমু দিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে ঠোঁট বাকিয়ে বললেন,
–‘ এই যা ! সবাই তো দেখে নিলো। এইবার কি হবে ? ‘

উনার কথা শুনে চোখে খুলে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ নেই । সবাই যে যার ঘরে ! আমার বিস্ফোরিত চোখ দেখে আয়েস করে বসে দুষ্টু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি হালকা রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘ সব সময় আতংকে ফেলেন কেন আমায় ?’
–‘ দেখতে ভালো লাগে।’
–‘ ধূর! আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।’
উনি টেবিল থেকে কাঁটাচামচ উঠিয়ে ঘুরাচ্ছেন। আমার দিকে তাক করে বললেন,
–‘ প্রত্যেক টা অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে আগামী সাতদিন খায়িয়ে দিবে আমায়।’
আমি খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
–‘ পারবো না।’
উনি ঝুঁকে এসে বললেন,

–‘ ওকে ! অপশন দিচ্ছি, গুণে গুণে আটত্রিশ টা চুমু দিবে ইমেডিয়েটলি। নাও চয়েস ইজ ইউর।আই হ্যভ নো প্রবলেম।’

–‘ মানবো না।’

–‘ এইটার অপশন ও আছে আমার কাছে। আমি প্রতিদিন গুণে গুণে চল্লিশ টা দিবো তাহলে । ‘

উনার কথা শুনে অসহায় চোখে তাকালাম আমি। বড্ড অসহায় লাগছে।আমি জোড়ে জোড়ে শ্বাস টেনে একনাগাড়ে বললাম,
–‘ ওকে ফাইন।আমি খায়িয়ে দিবো আপনাকে।তবে আজ তো আমাকে ফেলে রেখেই খেয়েছেন তারমানে কাল থেকে।’
উনি জবাব দিলেন না । টেবিল থেকে খাবার বেড়ে আমার দিকে থালা বাড়িয়ে বললেন,
–‘ তুমি তো আমার অর্ধেক মানে অর্ধাঙ্গিনী। শরীরের অর্ধেক অসুস্থ থাকলে বাকি অর্ধেক কি ভালো থাকে ? তাই তেমনি তুমি না খেলে আমি কী করে খাই ?’

সমস্ত অভিমান নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। কতো সুন্দর করে বলেন উনি !
কাঁপা হাতে থালা এগিয়ে নিয়ে উনার মুখের সামনে খাবার ধরতেই উনি ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
–‘ মুখে বলো,হা করো স্নিগ্ধ।’
আমি প্লেট টেবিলে রেখে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললাম,
–‘ এইটা শর্তে ছিলো না ।’

–‘ ছিলো। তুমি শোনো নি।’
উনি কনফিডেন্সের সাথে বলতেই আমি ভাবার চেষ্টা করলাম। মেকি রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘ জী না।আমি শুনেছি ছিলো না।’
উনি আমার কথা শুনে তাকালেন। দেই দৃষ্টিজোড়া অতি স্নিগ্ধ। বললেন,
–‘ ভুলে যাই বলে এইভাবে ফাঁকি দিচ্ছো ?’
উনার এতোটুকু কথা আমায় দুমড়ে মুচড়ে দিলো।আমি ছলছল চোখে তাকাতেই উনি চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ মজা করেছি বাবা। কান্নার কি হলো?’

–‘ আপনি মজা করছেন কিন্তু আমি এটাকে মজা ভেবে নিতে পারছি না। আপনি জানেন,আমি নিজের ব্যথার থেকেও আপনার ব্যথায় ব্যথিত হই বেশি।’

সে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে খাবার উনার মুখের সামনে ধরে বললাম,

–‘ হা করুন স….স্নি….গ্ধ।’
উনি আমার বলা কথায় হাসলেন। মুখে নিয়ে নিজেও আমার মুখের সামনে খাবার ধরে বললেন,
–‘ তোমাকে কান্না করানো লোকটাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো তো ?’

–‘ তাকে বলুন,বউকে কম জ্বালাতন করতে। আর…

–‘ আর ?’

–‘ শুভ্র রঙে রাঙাতে।’
.
.
.
বিশাল মাঠ জুড়ে সদ্য উঠা বিল্ডিং-এ ছোট ছোট অসহায় বাচ্চার পদচারণে মুখরিত। পাশেই একটা ক্লাসে উচ্চস্বরে কালেমা পাঠ করছে ছোট বাচ্চারা। সাথে কোরআন তেলওয়াত করছে। আরেক পাশের বিল্ডিং-এ বাংলা ক্লাস হচ্ছে।
বাচ্চা গুলো দুষ্টুমি করলেও আবার ভদ্র ভাবে ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।
সবার বয়স সমান না। তিন বছরের থেকে ষোলো বছরের অনেকে আছে।
কেউ কেউ দিনমজুর বা গরীব পরিবারের আবার কারো বাবা-মা নামক ছায়া টাও নেই।
উনি তৃপ্ত চোখে তাকিয়ে দেখছেন। উল্লাসিত হয়ে বললেন,

–‘ আমার মায়ের ভুবন বিলাস। যেখানে তার ছেলের মতো অসহায় অনেকেই আছে।’
আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উদাসীনতা। তার হাত শক্ত করে ধরে বললাম,
–‘ অসহায় কেন ? ওদের জন্য আপনি আর আপনার এই এনজিও আছে আর আপনার জন্য আমি।’
উনি পাশ ফিরে তাকালেন।মোলায়েম হেসে বললেন,
–‘ আমি বাঁচার জন্য ভালো থাকার জন্য পরিবারের সাথে বাবার সঙ্গ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলাম।আমার মায়ের চলে যাওয়াতে ভেঙে পরেছিলাম। সব এতোই সহজ ছিলো?
ছিলো না ! তবে আমি তোমার মাঝে আর আমার এই পূরণ হওয়া স্বপ্নের মাঝে আবার সব কিছু ফিরে পাচ্ছি। ‘

আমি উনার বাহুতে মাথা রাখলাম। কিছুক্ষণ বাদে,মধ্যবয়স্ক একজন লোক এসে কুশল বিনিময় করে বললেন,
–‘ বসবে না স্নিগ্ধ ? বাচ্চাদের সাথে দেখা করবে না ?’

–‘ দুপুরে তো আবার দেখা হবেই চাচা। আপনি আদির কাছে থেকে সব জেনে ওদের নিয়ে আসবেন।আর, রোওনক কে সব বুঝিয়ে দিবেন। পরশু দিন থেকে আমি সব দায়িত্ব নিবো। এই দুটো দিন সব দেখে রাখেন। ‘
উনি সম্মতি জানিয়ে চলে গেলেন। আমি প্রশ্ন করলাম,
–‘ বাসায় যাবেন এখন ?’
উনি আমার হাত ছাড়িয়ে নিজে ধরে মুচকি হেসে বললেন,
–‘ না পার্কে বসে প্রেম করবো।’
আমি কপাল কুঁচকে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে উনি আরো শক্ত করে ধরতেই পেছন থেকে ছোট বাচ্চার কন্ঠে ভেসে আসে,

–‘ বাবাই ! আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছো? ‘

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here