শুভ্র_রঙের_প্রেম পার্টঃ০৩

শুভ্র_রঙের_প্রেম
পার্টঃ০৩
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
শাড়ির আঁচলে টান পরতেই পিছনের দিকে ঘুরে যাই আমি৷ ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, এতোটা খারাপ পরিস্থিতিতে পরতে হবে ভাবতে পারি নি৷ দু’হাতে শাড়ি খাঁমচে ধরলাম৷ কন্ঠ কাঁপছে আমার৷ কিছু বলার ভাষা হারিয়ে শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি৷ শুধু বললাম,
–‘ আ..আঁচল ছাড়ুন৷ ‘ ওপাশ থেকে কোনো শব্দ এলো না৷ তবে আমি সামনে এগিয়ে যেতে গেলেই জড়িয়ে যাচ্ছি৷ এখানে আসা ভুল হয়েছে মস্ত বড় ভুল৷ আমি রুমে ঢুকে কাওকে পাই নি ফিরে যাওয়ার জন্য পাঁ বাড়াতেই আঁচলে টান লাগে ৷ সে যে অভদ্র হবে ভাবতেই পারি নি ৷ কেঁদে দেওয়ার উপায় আমার ৷ এখানে কেও এইভাবে দেখলে কি ভাববে ভাবতেই চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ৷
–‘ কাঁদছো কেন?? ‘ সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলাম আমি৷ পেছনে এখনো আঁচল টেনে আছেন তাহলে সামনে কি করে উনি?? কান্না চোখে স্নিগ্ধ স্যারের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম তার হাতে বইয়ের স্তূপ ৷ আমাকে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিতে কঁপাল কুঁচকালেন উনি৷ গম্ভীর ভাবেই বললেন,
–‘ গো ইনসাইড! দরজায় এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কোন ধরণের ম্যানার্স ৷
আমি এক লাফে সাইডে সরে দাঁড়ালাম৷ স্নিগ্ধ স্যার বই গুলো টেবিলে রেখে আমার দিকে অবাক চোখে তাকালেন৷ তারপর বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ মিশর সাহিত্যের ইংরেজি আর্টিকেল , নোভেলস এভ্রিথিং সব আছে এখানে৷ তোমার এসাইনমেন্ট হলো,ইম্পোর্ট্যান্ট ডেট,প্লাস ঘটনা গুলো নোট করে আমার কাছে জমা দেওয়া৷ বাকি সবাইকে কাল তুমি বুঝিয়ে দিবে সব ৷ ‘

–‘ আপনি রুমে ছিলেন না?? ‘ আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম৷ উনি আরেকটা বই হাত থেকে নামিয়ে সরু চোখে তাকালেন৷ আমি ঘুরে তাকিয়ে আরেকদফা অবাক হলাম৷ আমার শাড়ির আঁচল দরজার ছিটকিনির সাথে বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে৷ ব্যাপারটা বাংলা সিনেমার মতো হয়ে গেলো না?? ছিঃ! রুমে কেও নেই দেখেও এতো বাজে চিন্তা৷ আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো চড় দেওয়ার অপরাধে বাজে কিছু করবেন৷ আমাকে আবারও এক ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি ঠান্ডা ভাবে চিল্লিয়ে বললেন,
–‘ গো..! ‘
আমি বই উঠিয়ে দ্রুত পাঁ চালিয়ে চলে এলাম৷ বারবার আমার ভাবনা ভুল কেন করে দিচ্ছেন উনি?? আচ্ছা সেদিন কি উনায় চড় মেরেছিলাম আমি?? তবে কেন এতো শীতল সব ৷ অত্যন্ত বকা বা ঝাড়ি দেওয়া তো উচিৎ!

হলের রুমে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি আমি৷ এসাইনমেন্টের ঝামেলার কথা এখন মাথায় উঠেছে আমার৷ হারুন স্যার থাকলে এতোটা বাজে অবস্থায় পরতে হতো না৷
–‘ মিশরীয় ইংরেজি সাহিত্য! ব্যাটা নির্ঘাত ইংরেজ৷ ‘

আমার কথা শুনে নীতি পড়ার টেবিল থেকে চোখ উঠিয়ে হেসে উঠলো৷ আর্টিকেল উঠিয়ে হাসতে হাসতেই বলল,
–‘ তোকে শাস্তি দেওয়ার মিষ্টি উপায়৷ আমি তো ক্রাশ খেয়েছি তার ব্যাবহার দেখে৷ আমার কি মনে হয় জানিস?? ‘
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি?? ‘

–‘ উনি তোকে আগে থেকেই চেনেন৷ না হলে ভেবে দেখ, তোর নাম প্লাস নিকনেম কীভাবে জানলেন উনি?? ভার্সিটির সবাই নিদ্রা বলে শুধু আমি আর রাহাত বাদে ৷ আর ওইভাবে পাবলিক প্লেসে চড় দেওয়ার পর তুই সর‍্যিও বলিস নি। তাহলে কেন এতো ভালো ব্যাবহার উনার?? ‘
নীতির কথা শুনে চিন্তার রেখা ফুঁটে উঠলো ৷ নাম্বারের আশায় আবারও মোটা মোটা বইয়ের ভীরে ডুবে গেলাম৷ কাল সকালে এসাইমেন্ট শেষ করেই চড় রহস্যের সমাধান বের করবোই করবো৷ কিন্তু কিভাবে??
__________
হল থেকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসের দূরত্ব পাঁচ মিনিটের৷ আমাদের হলের অপজিটে আমাদের ডিপার্টমেন্ট ৷ সারারাত এসাইমেন্ট জমা করতে করতে ক্লাসে টাইম মিস হয়ে গিয়েছে৷ নীতি আমাকে ফেলেই ক্লাসে চলে গেছে৷ ঘড়িতে সময় দেখেই মাথায় হাত৷ এসাইমেন্ট প্রেজেন্টেশন এর সময় পার হয়ে গেছে ৷ শাড়ির আঁচল ভাজ করে কুঁচি ধরে দৌড়ে যাচ্ছি৷ মানুষের অতি প্রিয় জিনিস থাকে তার মধ্যে আমার অতিপ্রিয় হচ্ছে শাড়ি৷ সাদা শাড়ি, শুভ্র রাঙা! বিভিন্ন কালেকশনের সাদা শাড়ি আছে আমার৷ নিজেকে পার্ফেক্ট লাগে সাদা শাড়িতে৷ ক্লাসের সামনে দাঁড়ানোর আগেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতেই চিল্লিয়ে বললাম, ‘ কোন ডাফার?? আমি আসছি চোখে পরে না আপনার?? ‘

–‘ স্টুপিড! ভদ্রতা নামক কোনো শব্দ তোমার মাঝে নেই৷ ‘ চমকে উঠলাম৷ আবারও ব্লান্ডার ৷ সব কিছুতে উনি কি করে আসেন বুঝি না৷ গোপাল দাদু মানে পরশ স্যারও তো থাকতে পারতেন৷ উফফফ!

–‘ প্রেজেন্টেশনে দেরি হচ্ছিলো তাই..! ‘
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম৷ উনি কিছু না বলেই ক্লাসে চলে গেলেন৷ ইশ! কি ভাবছেন৷ আজও সর‍্যি বলা হলো না তাকে৷ আমি মাথা নীচু করে ক্লাসে ঢুকতেই রাহাত দাঁত বের করে বলল,
–‘ রোম্যান্টিক সিন হতো মামা ৷ একদম বাংলা সিনেমা৷ পরেছিলো উনার উপরেই পরতি উল্টো দিকে কেন পরতে গেলি?? ‘
বই দিয়ে ওর মাথায় বারি মেরে পাশে বসে পরলাম৷
–‘ হৃদি,কাম হেয়ার এন্ড এক্সপ্লেইন টু এভ্রিওয়ান৷ ‘
সামনে থেকে গম্ভীর ভাবে ডাকতেই আমি নীতির পেছনে লুকিয়ে পরি৷ অস্থিরতা গ্রাস করছে আমায়৷ কিছুটা লজ্জা সাথে তার সাথে করা অন্যায়ে কেমন মিইয়ে যাচ্ছি আমি৷ হঠাৎ করেই অচেনা এক স্যার কেন আমাকে এতো ইম্পোর্ট্যান্ট দিচ্ছেন এইটাও ভানবার বিষয় ৷
–‘ কাম টু দ্যা ফ্রন্ট..! ‘
আমি ফাইল নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম৷ পকেটে হাত গুজে নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন উনি ৷ আমি প্রজেক্টরের সামনে যেতেই উনি আবার বললেন,
–‘ আমি আপনাদের স্যার বা প্রফেসর কিছু নই৷ দু বছর জাস্ট দুটো বছরের জন্য এখানে আসা একটা ইম্পোর্ট্যান্ট কাজে৷ ‘
বলেন কি?? স্যার না আবার ক্লাস নিবেন৷ সবাই আমার মতোই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ৷ চাঁপা একটা আনন্দ খেলে গেলো মনে হচ্ছে সবার মাঝে! যাক এইবার স্যারের প্যারা নেই এমন ধরণের৷
আমি ফাইল হাতে নিয়ে এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি৷ আমার পাশে এসে ফাইল হাতে নিয়ে বললেন, ‘ রিলাক্স,আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি..! ‘
সুন্দর একটা সৌরভ ভেসে আসছে৷ আজও শুভ্র রঙের চেক শার্ট হাতা ফোল্ড করে পরে আছেন উনি৷ আমার পাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে বোঝাচ্ছেন৷ ভুল গুলো নিজেই সঠিক করে দিচ্ছেন ৷ তার কথার তালে তালে,বাঁ পাশের গালের মাঝের তিল টা উঠানামা করছে৷ বুকের স্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে গেলো আমার৷ চোখ সরিয়ে নিয়েও আটকে গেলো সেখানে ৷ মাথার মাঝে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, মানুষটাকে সর‍্যি বলতে হবে৷

সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসে হাজারো স্টুডেন্টের উৎকন্ঠা৷ সামনে থাকা বিশাল বটগাছের পাতা হাওয়ার দোল খাচ্ছে৷ আমি তাকিয়ে আছি সেই দিকেই৷ ক্যান্টিনে বসে আছি সবাই ৷
–‘ স্যার রুমে একা এখন, গিয়ে শুধু বলবি দুঃখিত রেস্টুরেন্টের ব্যবহারের জন্য৷ ব্যাস,কাহিনি শেষ৷ ‘

–‘ ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে যাবি আর কিছু বললে শুধু ডাকবি আমায়৷ ‘ রাহাত আমার মাথায় টোকা মেরে বললো৷ আদেও এতোটা সোজা?? চড় মারার সময় চোখ বুজে জোরে মেরেছিলাম আর এখন শব্দ বের হচ্ছে না৷ কি জন্য না দেখেই মারলাম? সব দোষ ওই হারামীটার ৷ না ও আমার আঁচল ধরে সেদিন ক্যাম্পাসে টান দিতো না আমি ভুল করে স্নিগ্ধ স্যারকে চড় মারতাম৷ চড় নামক শব্দটা ভয়াবহ লাগছে ৷
–‘ যাবি তুই?? ‘ নীতি বলতেই আমি ফোঁস করে একটা শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই স্নিগ্ধ স্যারকে ক্যান্টিনে ঢুকতে দেখলাম ৷
–‘ এখন কেও নেই সামনে যাবি আর চোখ বন্ধ করে বলে দিবি৷’

–‘ যাচ্ছি তো৷ ‘
উনি আমাদের থেকে দূরের একটা টেবিলে বসে মোবাইলে কিছু একটা করছেন৷ আমি পেছনে দাঁড়িয়ে সব গুছিয়ে নিলাম ৷ নীতি আর রাহাতের দিকে তাকাতেই ওরা ইশারায় বলতে বলছে৷ তার সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে পরে গরগর করে বললাম,
–‘ দুঃখিত স্যার৷ ‘
–‘ ফর হুয়াট্স?? ‘
–‘ গত নয় দিন আগে রেস্টুরেন্টে চড় মারার জন্য! ‘
–‘ চড় আর আমাকে?? ‘
আমি ভড়কে গেলাম৷ উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন ৷ আমি সামনে রাখা পানির গ্লাস থেকে এক শ্বাসে পানি খেয়ে আবারও মিনতির সুরে বললাম,
–‘ আপনি বোধহয় রেগে আছেন আমার উপর৷ আমার মিস্টেক ছিলো৷ মাফ করে দিবেন ৷ ‘
–‘ আরে বাবা,মেরেছো কখন তোমার আর আমার দেখাই তো হলো দুদিন আগে ৷ ‘
বলেন কি উনি?? সেদিন রেস্টুরেন্টে উনিই ছিলেন৷ এখন বলছেন দেখা হয়েছে দুদিন আগে??
চলবে…
~দুঃখিত আমিও কাল দিতে পারি নি৷ ভালো লাগছে না আপনাদের?? আপনাদের জন্য লেখা ভালো না লাগলে বলবেন অবশ্যই৷ ভুল ক্ষমার চোখে দেখবেন ~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here