শুভ্র_রঙের_প্রেম পার্টঃ০৪

শুভ্র_রঙের_প্রেম
পার্টঃ০৪
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
হিম শীতল পরিবেশ৷ রাতের আঁধার গ্রাস করেছে হলের সামনের মাঠটা৷ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে অনবরত কেঁপে চলেছি আমি৷ ঠোঁট অতিরিক্ত পরিমাণে কেঁপে উঠছে৷ সবাই ঘুমে মগ্ন আর এখানে আমি অস্বস্তির বেড়াজালে ৷ নিজের সংযত করে কেঁপে উঠা কন্ঠে বললাম, ” আপনি এখানে? ”
সে চমকে উঠলো ৷ চাঁদের আবছা আলোয় ঘুরে তাকিয়ে বলল,
–‘ রুম থেকে কেন বের হয়েছো রাতে?? হল সুপার জানেন?? না আমি নালিশ করবো?? ‘
–‘ সেদিন কি সত্যি আমি আপনাকে চড় মারি নি??’
স্নিগ্ধ স্যার ঘুরে তাকালেন৷ বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে বললেন,
–‘ দুপুর থেকে এক কোয়েশ্চেন কেন করছো?? কত বার বলবো তোমার সাথে দেখাই হয়েছে দুদিন আগে! ‘
মাথা ঘুরছে৷ ক্যান্টিন থেকে ফেরার পর থেকে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি৷ এতোদিন চড় মারার জন্য অপরাধবোদ আর ভয়ে ছিলাম আর এখন চড় কাকে মেরেছি সেই নিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি ৷ নীতি ঘুমুচ্ছে, আমার ঘুম আসছিলো না তাই হলের বাইরে হাটছিলাম আর তখন’ই স্নিগ্ধ স্যারকে একভাবে আমাদের হলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি৷
–‘ রুমে যাও! ‘ বললেন স্নিগ্ধ স্যার ৷ আমি চাদের দিকে তাকালাম৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাঁ বাড়ালাম৷ অহেতুক এক চড় আমার জীবনের পাতায় মুড়ে গেছে৷ ব্যাপারটা স্বাভাবিক হলেও অস্বাভাবিক ৷ ভুলে করা জিনিস টা আমার ঘুম কেঁড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

–‘ সিসিটিভি ক্যামেরা! ‘ চিল্লিয়ে বলে উঠলো রাহাত৷ আমি আর নীতিও লাফিয়ে উঠলাম৷ ক্লাস শেষ করে একঘন্টা যাবৎ তিনজনে চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে ছিলাম ৷ আমি রাহাতের কথা শুনে ওর গাল দুটো টিপে বললাম,
–‘ দিনে দিনে ব্রিলিয়ান্ট হয়ে যাচ্ছো বন্ধু! ব্যাপারটা কি?? ‘
ও আমার কথায় গালে হাত ঘষে বলল,
–‘ সুন্দরী রমণী আশেপাশে থাকলে বুদ্ধি হুর হুর করে বাড়ে৷ ‘
আমি আর নীতি হেসে উঠলাম৷ নীতি তাড়া দিয়ে বলল,
–‘ জলদি চল, সিসিটিভি তে দেখলেই বুঝবো কে ছিলো সে৷ ‘
ব্যাগ হাতে ছুটে চললাম চড় রহস্যের সমাধানে৷ এই চড় জীবনটা চড়ময় বানিয়ে দিয়েছে আমার৷ ভেবেই নিজেকে অসহায় রমণী মনে হচ্ছে ৷

ম্যানেজারের রুমে আধঘন্টা ধরে বসে থেকেও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারলাম না৷ ম্যানেজার ইচ্ছা করেই এমন করছে ৷ জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বনানী পর্যন্ত এসেও হতাশ হয়ে ফিরতে হবে দেখে রাহাতকে মেরে বুড়িগঙ্গায় চুবাতে ইচ্ছা হচ্ছে ৷
–‘ হলে ফিরে যাই চল৷ ‘
–‘ দোস্ত ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, স্নিগ্ধ স্যার সেদিন না থাকলে নিশ্চয়ই তার ডুপ্লিকেট কেও ছিলো?? অত্যন্ত সেটা বের করার জন্য হলেও আরেকটু ওয়েট করাই যায়৷ ‘
আমার কথায় সায় দিলো রাহাত৷ উদাস ভাবে বসে থেকে অবশেষে ম্যানেজারের দেখা পেলাম ৷ আমি ফুটেজের কথা বলতেই উনি রাজি হয়ে যায়৷ রেস্ট্রুরেন্টে না থাকলে তিনজনে মিলে একসাথে চিল্লিয়ে উঠতাম সিউর ৷ পঁচিশ তারিখের ফুটেজ দেখে আরেকদফা অবাক হলাম আমরা ৷ ওইটা স্নিগ্ধ স্যার ছিলেন তাহলে কেন মানা করলেন উনি?? জুম করে তার গালের মাঝামাঝি বড় তিলটা দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না আমার ৷ মিথ্যা কেন বললেন উনি?? তিনজনের কঁপালেই চিন্তার রেখা পরেছে৷
_____________
তীব্র রোদের মাঝে শাড়ির কুঁচি ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি ৷ সূর্যের তেজ মাঠের মাঝ বরবর প্রকট ভাবে আছড়ে পড়ছে৷ হাওয়ায় কোনো প্রশান্তি নেই ৷ মৃদু হাওয়ার চুল গুলো উড়ে চলেছে লাগামহীন ভাবে৷ দূর থেকে আমাকে একজন তীব্র ভাবে দেখে চলেছে আমায় সেটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে আমায় ৷ ঘাড় ঘুরিয়ে খুজেও কাওকে পেলাম না ৷ রাহাত আর নীতির দেখা নেই ৷ দুপুর বারোটা ৷ বিরক্ততে চোখ-মুখ কুঁচকে যাচ্ছে৷ লাইব্রেরি তে গিয়ে বসার উপায় নেই এখন হাজারো পড়াকু স্টুডেন্টদের সিরিয়াস পড়ালেখা চলছে ৷ বর্তমানে আমার কোনো কাজ নেই তাই বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রশিদ স্যারের জন্য ৷ আমার পিঠে কিছু একটা লাগতেই চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি কাগজ মোড়ানো ৷ হাতে উঠিয়ে দো-তলা ভবনের দিকে তাকালাম কিন্তু কাওকে নজরে পরলো না ৷ কাগজ খুলে দেখলাম,
” শুভ্র রাঙা পরী,রৌদ্র তপ্ত দুপুরে ঘেমে উঠা কাঁপা ঠোঁটে তোমাকে শুভ্র লাগছে ৷ এই,সাদা কেন পরো তুমি?? জানো অতিরিক্ত সুন্দর লাগে তোমায়৷ আর জানো?? তোমার কঁপালে লেপ্টে থাকা ঘামে ভেজা ছোট চুল গুলো আজ বড্ড মোহনীয় লাগছে৷”
ইতি,
তোমার একজন

এইটা পেয়ে কোনো ভাবান্তর হলো না আমার মাঝে৷ নামকরণ টা দারুণ, শুভ্র রাঙা পরী ৷ আমি কাগজ টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এখনো দো-তলার দিকে ৷ ফোর্থ ইয়ারের ক্লাস নেই এখন তাই কোনো বড় ভাইয়া উক্ত কাজ করতে পারেন না ৷ পুরো ক্লাস খালি কেও নেই তাহলে দিলো কে এইটা?? হঠাৎ করেই স্নিগ্ধ স্যারকে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম ৷ উনার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস ৷ তাহলে কি কাগজটা উনি দিয়েছেন?? কিন্তু কেন??

হলে ফিরে এসে কাগজের কথা একদম ভুলেই গিয়েছিলাম আমি৷ রাতে শুতে যাওয়ার আগেই হঠাৎ করেই মনে হলো কাগজের কথা ৷
–‘ নীতি,বেবি আশিক ভাইয়া তোর জন্য প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে৷’ নীতি আমার কথা শুনে হুড়মুড় করে উঠে বসলো ।বিছানার পাশে থেকে চশমা খুজে কাচুমাচু করে বললো, ‘ কোথায়?? ‘
আমি নিজের হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেও পারলাম না৷ ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠতেই পাশের রুম থেকে বড় আপু বলে উঠলো, ‘এই কে রে?? ভয়ংকর হাসি নিজের জামাইকে শোনাবি এখানে না৷ ‘

আমি আপুর কথা শুনে মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতেই নীতি দুম করে পিঠের কিল মেরে বসে৷ রাগে ফুঁসছে ও৷ আশিক ভাইয়ের দিওয়ানা ৷ সিরিয়াস হয়ে ওর হাতে কাগজ গুজে দিতেই প্রশ্নমাখা চোখে তাকাতেই আমি ইশারা করে খুলতে বলি..! ও পড়ার পর আমার দিকে ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলল,
–‘ তোর শুভ্র রাঙা প্রেমের প্রস্তাব এসে পড়েছে, এইবার শুভ্র শাড়ি পরে তৈরি হয়ে যা৷ খালাম্মা হবো যেদিন ওইদিনে ডাকবি তার আগে না ৷ ‘
ওর কথা শুনে লাথি মেরে ফেলে দিতে ইচ্ছা হলো আমার৷ রাহাতের হল রুম পেছনের বিল্ডিংয়ে ৷ ওই হারামীটাকে দেখালে আবার কাগজ রহস্যের সমাধান পাওয়া যাবে ৷
আমার ঘুরেফিরে মনে হয়,’ স্নিগ্ধ স্যার আমার বড্ড চেনা ৷ সে চেনেন আমাকে গভীর ভাবে কিন্তু কী ভাবে?? হাও পসিবল??
চলবে,,,,
~ ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ~♥পরের পর্ব বড় করে দিবো প্রমিস😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here