শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্ব:১৬

শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্ব:১৬
#রুবাইদা_হৃদি

পেছনে থেকে শক্ত করে হাত ধরে রেখেছেন স্নিগ্ধ স্যার।আমি ঘুরে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। তার হাতের স্পর্শ স্নিগ্ধ ! আমি শুকনো ঠোঁট জোড়া জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে বললাম, ‘ হাত ছাড়ুন !’
–‘ আগে আমার কথা শোনো তারপরে ছাড়বো।’ তার স্বাভাবিক কন্ঠ। আমি ভড়কে গেলাম।কেউ দেখে ফেলবে এই কথা ছাড়া আর একটা কথাও ভাবতে পারছি না আমি।ফাঁকা ক্লাস রুমের আনাচে কানাচে গুমোট পরিবেশ।ক্লাস শেষ হয়েছে দুই ঘন্টা আগেই।নীতি হলে গেছে আর রাহাতের খবর নেই৷ আমি গত দশ দিনের নোটস কালেক্ট করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি একদম টের পাই নি৷
আধঘন্টার টাইম নিয়ে ক্লাস রুমেই বসে ছিলাম তবে এর মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন বুঝতেই পারি নি৷ দারোয়ান চাচা বা খালাও ডাকে নি জানালা আর গেইট লক করার সময়! এইটা কি করে পসিবল??
আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি স্নিগ্ধ স্যার আমার একদম সামনে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ আমি ঘুম চোখে উনাকে দেখে বিরবির করে বলেছিলাম, ‘ আপনি তো বড্ড জ্বালান! ঘুমের মাঝেও এসে বসে আছেন??’
উনি পা নামিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে জবাবে বলেছিলেন,
–‘ কেন তোমার স্বপ্নেও বুঝি আমার বিচরণ??তারমানে, ইউ ফিল লাভ অন মি?? ‘
আমি হাই তুলে আয়েসি ভাবে বলেছিলাম,
–‘ হয়তো! ‘
–‘ তাহলে কি আমি ধরে নিবো তুমি….. ‘
–‘ আপনার ক্লান্ত লাগে না?? এতো ঘুরঘুর করেন কেন?? সারাদিন জ্বালান আবার স্বপ্নেও! ‘ উনার কথার মাঝে আমি বেঞ্চে আবার মাথা রেখে বলে উঠেছিলাম৷ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখতেই তীব্র সুগন্ধ ভেসে নাকে এসে লাগতেই আমি একলাফে উঠে দাঁড়িয়ে দেখি সে সত্যিই আছেন! আমাকে বিচলিত দেখে সশব্দে হেসে উঠেছিলেন৷ কথোপকথন ভাবতেই আমি ব্যাগ হাতে বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য পাঁ বাড়াতেই খপ করে হাত টেনে ধরেন৷
কে জানতো ছোট একটা কথা আর উক্ত সব কিছু আমার স্বপ্ন না বাস্তবতা ছিলো৷ আমি বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলেও মনে হচ্ছে দম ফুরিয়ে আসছে৷ হৃৎপিন্ডের অযথা বেড়ে যাওয়া কম্পন আমার সমস্ত লজ্জা বহিঃপ্রকাশ করে দিচ্ছিলো৷ হাত টেনে সামনে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতেই আমি ছুটতে চাইলে উনি বললেন,’ ছোটার চেষ্টা করেএ ফিরে আমার কাছেই আসবে! ‘
–‘ ক..কেন আ..সবো?? ‘
–‘ ম্যাজিক পাওয়ার আছে তো আমার কাছে সেই পাওয়ার দিয়েই টেনে নিয়ে আসবো৷ ‘
উনার কথার ভঙ্গিমা দেখে না চাইতেও সশব্দে হেসে উঠলাম৷ আমার হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন৷ আমি হাজার চেষ্টা করেও হাসি থামাতে পারছি না৷ হুট করেই আমার মুখের উপর ফুঁ দিতেই কেঁপে উঠলাম৷ মূহুর্তেই হাসি থামিয়ে
” থ ” মেরে উনার দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে নেই৷ উনি চুপ মেরে থেকে মৃদু হেসে বললেন,

” একদিন আসবে,তুমি ভালোবাসবে..
লজ্জায় রাঙা হবে! আমার মাঝের ভালোবাসাতে…! ”
______________________________

ভ্যাপসা গরমের সাথে বিষাক্ত ধোঁয়ায় হাঁপিয়ে উঠছি বারেবারে৷ মতিঝিল থেকে জাবিতে(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) আসতে চরম বিরক্ত আমি,নীতি আর মাধবী!
একহাতে ঘাম মুছে চলেছি আরেক হাতে বই আঁকড়ে ধরে আছি৷ তীব্র গরমের মধ্যে মাধবীর কথা শুনে রাগে শরীর রি রি করে উঠলো৷ তার নাকি স্নিগ্ধ স্যারকে প্রচুর ভালো লাগে ইভেন স্যার ওর দিকে নাকি কেমন চোখে তাকায় মানে ভালোবাসার চোখে৷ হাসি হাসি মুখ নিয়ে আবার বলল,
–‘ উনার চোখে কেমন ভালোবাসা দেখতে পাই৷ একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?? ‘
–‘ কি?? ‘ নীতি মহা আগ্রহ নিয়ে বলে উঠলো৷ নীতির আগ্রহ দেখে বইয়ের আরেকটা স্তূপ আমার হাতে দিয়ে ভাব নিয়ে বলল,
–‘ স্যার ক্লাসে আসলেই আমাকে খুজে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করেন! তারমানে বুঝতে পারিস?? ‘
ওর কথার মাঝে প্রশ্ন শুনে রাগের মাত্রা হু-হু করে বেড়ে গেলো৷ আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘ কথার মাঝে অহেতুক প্রশ্ন করা তোর জন্মগত বদঅভ্যাস৷ সোজাসুজি বলতে পারিস না?? ‘
–‘ রাগ করিস কেন! তার মানে হলো,উনি আমাকে খুজেন! ‘
–‘ সে তো আমাকেও খুজেন আর হৃদিকেও! তারমানে… ‘ নীতি সুর টেনে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারতেই আমি গরম চোখে তাকাতেই ও কাঁচুমাচু করে বলল,
–‘ মাধবী দোস্ত, তোর স্নিগ্ধ স্যার তোর প্রতি ফিলিংস খুজেন বুঝেছিস?? প্রতিদিন সেজেগুজে আসবি তাহলে অতিব জলদি স্নিগ্ধ স্যার তোর প্রতি জোরদার ফিলিংস খুজে পাবেন৷ ‘
নীতির কথা শুনে আনন্দ প্রকাশ করলেও আমার আড়চোখের ভয়ানক দৃষ্টির কাছে সেটা ধামাচাপা পরে যায়৷
আজাইরা কথাবার্তার জন্য পানি পিপাসা আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ এই সময়ে গরম পরার কথা না থাকলেও এতো পরিমাণের দূষণের জন্য আবহাওয়া উঠানামা করছে!
পরিবেশ দূষণের ব্যাপারটা সকলে দৃষ্টিতে আসা দরকার! এইভাবে চলতে থাকলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের জীবনে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে৷ শীতের সময় গরম আর গরমে শীত!
যা আমাদের পুরো লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করতে সক্ষম! আমরা প্রাণ খুলে বুক ভরে প্রত্যেকটা ঋতু উপভোগ করতে চাই আর এই জন্য দরকার প্রকৃতির প্রতি সদয় হওয়া! আদেও কি সম্ভব?? হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা চাইলেই সম্ভব!
নিজের মনে কথা গুলো ভেবে চলেছি৷ সেই সাথে ব্রিজের সিড়ি উঠতে গিয়ে পিপাসার জন্য কাতর হয়ে যাচ্ছি৷ নীতির কাঁধে হাত রেখে বললাম,
–‘ দোস্ত,পানি পিপাসা পেয়েছে! এখন পানি না পেলে বোধহয় মরেই যাবো৷ ‘
–‘ এখানে তো দোকান নেই সামনের মোড়ে আছে! আরেকটু হেঁটে গেলেই পাবি৷ ‘
ওর কথা শুনে অসহায় চোখে তাকালাম৷ মনে হচ্ছে এই ভীরের মাঝেই বসে পড়ি! চারদিকে মানুষের ঢল! এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব না৷ আমি ব্রিজের এককোণায় দাঁড়িয়ে ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছি৷ নীতি আর মাধবী সামনে এগিয়ে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে উধাও হয়ে গেলো৷
আমি সেইদিকে তাকিয়েই আছি৷ মনে হচ্ছে চারদিক থমকে গেছে৷ ভীড়ের মাঝে শরীরে ধাক্কা লাগতেই হুশ ফিরে৷ কোনো মহিলা নেই৷ বুক কেঁপে উঠলো৷ ভীড়ের মাঝে গায়ে হাত দেওয়ার ব্যাপারটা কমন৷কী ভাবে বের হবো?? ভেবেই আরো গলা শুকিয়ে এলো৷
হঠাৎ করেই আমার কোমর একহাতে প্যাঁচিয়ে ধরলো কেউ! আমি ভয় পেয়ে সাথে রেগে উঠে কিছু বলতে পেছনে ঘুরতেই একজোড়া স্নিগ্ধ চোখে চোখ পরতেই আমার সমস্ত ক্লান্তি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেলো৷ মনে হলো হাজারো অচেনা মানুষের মাঝে আমার আপন মানুষটাকে পেয়ে গেছি৷ সে আমাকে পুরো একহাতে কভার করে এগিয়ে চলেছেন৷ উনার স্নিগ্ধ চোখে রাগের আভাস৷ ভীরের মাঝেও দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘ কমন সেন্স নেই তোমার?? ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে কেন ছিলে?? ‘
–‘ আপনি এখানে?? ‘
উনি ভীড়ের মাঝেই আমার দিকে ঘুরে তাকালেন৷ তারপর রাগী সুরে বললেন,
–‘ চেনা রাস্তা হারিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে কারো৷ তাই সেই রিস্ক আমি নিতে চাই না আর৷ ‘
আমি হাসলাম! মাধবী কে ডেকে দেখানোর বড্ড ইচ্ছা হলো,দেখ তার চোখে-মুখে তার রাগী সুরে আমার জন্য আকুলতা৷ তোর জন্য কি সে এমন আকুল হয়??
মুখ ফুটে কথা গুলো না বের হলেও বিশ্বজয়ের হাসি বের হলো৷ তার বলা কালকের কথা মনে হলো যা আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে৷ ইউ ফিল লাভ অন মি!
ইউ ফিল লাভ অন মি!
ভীড়ের মাঝেও আমি আরো চেঁপে দাঁড়ালাম৷ মনে মনে উচ্চারণ করলাম,ইয়েস আই ফিল লাভ অন ইউ৷
নিজে ভেবে লজ্জায় রাঙা হয়ে পরলাম৷ উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন৷ আপনি কি জানেন?? আমি আমার মনের সাথে আপনার প্রতি ভালোবাসার জাহির করেছি??
চলবে…
~”আমি জানি ছোট হয়েছে! দুঃখিত! ~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here