শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্বঃ১৫

শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্বঃ১৫
#রুবাইদা_হৃদি

ভয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ স্যারের দিকে পিটপিট চোখে তাকিয়ে আছি৷ মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে গেলেই গভীর দৃষ্টি ভুলিয়ে দিচ্ছে কথার রেশ৷ এতো রাগের কি হয়েছে একদম বুঝতে পারছি না আমি৷ আবারও সেদিনের মতো মনে হচ্ছে,এখানে আসাটা ভুল হয়েছে৷ আমি সাহস সঞ্চার করে বললাম,
–‘ ক..কি হয়েছে স্যার?? এনিথিং রং?? ‘

–‘ সব কিছুই তো রং সেটা কি বুঝতে পারো না?? ‘ রাগ মিশ্রিত গলায় বললেন উনি৷ আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে অভয় দিয়ে মনে মনে বললাম, ‘ এই ইংরেজ তোর কিছু করতে পারবে না৷ ‘
–‘ কি বিরবির করছো?? তোমাকে আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর ভাবতাম বাট তুমি তো বাচ্চা৷ যাকে বলে ক্লাস থ্রির বাচ্চা! ‘
উনার কথা শুনে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,
–‘ ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট স্যার! আপনি এইবার অতিরিক্ত করছেন৷ ‘
–‘ হুমকি দিচ্ছো সাথে স্যার ও বলছো? সম্মান কি ভাবে প্রদর্শন করতে হয় তোমার কাছে থেকেই শেখা উচিৎ! ‘
উনার ত্যাড়া কথায় রাগ দুগুণ বেড়ে গেলো৷ আমার সামনে চেয়ারে আয়েসী ভঙ্গিতে বসে আছেন উনি৷ আমি গটাগট পাঁ ফেলে একদম উনার সামনে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝ মিশ্রিত গলায় বললাম,
–‘ প্রবলেম কি আপনার?? ‘

–‘ তোমার বাচ্চামি গুলো প্রবলেম! ‘

–‘ বাচ্চামি? কবে করেছি৷ অহেতুক দোষারোপ করা ঘোর অন্যায়৷ ‘ আমার কথা শুনে আঙুল দিয়ে কঁপালে একনাগাড়ে স্লাইড করে চলেছেন উনি৷ আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ভাব গতি বোঝার চেষ্টায় আছি৷ আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর! আর আমাকেই বলেন বাচ্চা?? স্লাইড করা থামিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
–‘ সকালের কাজটা কি বাচ্চামো না?? ‘

–‘ না একদম না৷ আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই কিস দিয়েছি৷ আপনার সমস্যা?? আরো দিবো! দেখবেন আপনি?? ‘
–‘ তাই বুঝি?? কাকে দিবে?? ‘
–‘ যে সামনে আছে তাকেই দিবো৷ ‘
–‘ ওকে ফাইন! আমি এখন সামনে আছি দিবে আমাকে?? দেও তাহলে! ‘
মুখে ডেভিল হাসি নিয়ে বললেন৷ মূহুর্তেই থতমত খেয়ে রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ সম্পূর্ণ কথাবার্তা মনে করেই শিউরে উঠলাম৷ ছিঃ!নাউজুবিল্লাহ সব কথা! পালানোর রাস্তা খুজছি৷ আল্লাহ মালুম কি ভাবছেন উনি৷
আমাকে তব্দা মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন উনি৷ আমি এখনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি৷
–‘ ফ্রিজড হয়ে গেলে যে?? নজর কোথায় থাকে তোমার?? ‘
–‘ স…স্যা..র…র দ..দেখুন আমি আপনাকে দেই নি৷ আর আমার ফ্লাইং কিসের সময় আপনি এসে পরেছেন এতে আমার দোষ কোথায়?? ‘ নিজেকে ম্যাচিউর প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগলাম৷ সে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে৷ আমি সরাসরি উনার দিকে তাকালাম চোখের ভাষা আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে৷ মূহুর্তেই চোখ সরিয়ে কন্ঠের খাদ নামিয়ে বললাম,
–‘ সর‍্যি স্যার আর হবে না! আমি যাই৷ ‘
বলেই তাড়াহুড়ো বেরিয়ে আসতে গেলেই উনি থমথমে কন্ঠে বললেন,
–‘ স্টপ দেয়ার! ‘
আমি চমকে উঠে পেছনে ঘুরে ইনোসেন্ট ফেস করে তাকালাম৷ নিজেকে অসহায় রমণী মনে হচ্ছে৷ শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই সে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
–‘ কিছু জিনিস গুপ্ত ভাবে প্রকাশ করতে হয়৷ তোমার উক্ত কাজ নীতির জন্য বা আ…

–‘ তারপর?? ‘ অর্ধেক কথা বলে থেমে গেলেন উনি৷ অধীর আগ্রহে বাকি কথা শোনার অপেক্ষায় আছি৷ আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে বললেন,
–‘ নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবে৷ তোমার ফ্লাইং কিস সবাইকে ছাপিয়ে থার্ড ইয়ারের ছেলেদের কাছে পৌছে গেছে৷ ওরা আমার পাশেই দাঁড়ানো ছিলো৷ বি কেয়ারফুল! উক্ত কাজ গুলো আর কখনো করবে না বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে৷ সংরক্ষিত জিনিস গুলো সংরক্ষণ করে রাখো যত্নে! ‘
বলেই দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেলেন৷ আমার মাঝে রেখে গেলেন আবারো নতুন অনুভূতির এক পশলা আহরণ৷ যা ক্ষণে ক্ষণে নতুন অনুভূতি সৃষ্টি করছে!

_____________________________

আমার সামনে নীতি কাঁচুমাচু মুখ করে বসে আছে৷ আমি আর রাহাত তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি৷ লাইব্রেরি ফাঁকা থাকলেও দুই তিন জন স্টুডেন্ট বসে আছে৷ তিন দিন ধরে ভ্যাপসা গরম! মাথার উপর ফ্যান চলছে সেই সাথে গরম আর হালকা ঠান্ডা পরিবেশকে বিরক্ত করে তুলছে৷ থমকে থাকা পরিবেশের মধ্যে রাহাত হুংকার ছেড়ে নীতির উদ্দেশ্যে বলল,
–‘ হারামি, এই ছিলো তোর মনে?? হাফ বিয়া শেষ আর এহন কস! যা তোর লগে কোনো কথা নাই৷ ‘

–‘ সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দে৷ ‘ নীতি অসহায় কন্ঠে বলতেই আমি আবার রেগে উঠে বললাম,

–‘ বাসরের গল্প শোনাইবা?? ভার্সিটি আসছিস তাও তিনদিন পার হয়ে গেছে তবুও কিছু বলিস নি৷ যা তোর সাথে আমারও কথা নেই৷ ‘

–‘ বিলিভ মি দোস্ত! কিচ্ছু হয় নি৷ শুধু দেখে গেছেন আর আজ ফোন করে বলেছেন বিয়ের প্রস্তুতি নিতে৷ ‘

–‘ আমার বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে দোস্ত! নীতিরে মনে হয় তোরে ভালোবাইসা ফালাইছি৷ ‘ রাহাতের কথার ভঙ্গিমা দেখে আমি হা হা করে হেসে উঠলাম৷ আমার হাসি শব্দ শুনে স্যার বাঁকা চোখে তাকাতেই নীতি চিমটি দেয়৷ মুখ দিয়ে ‘ আউচ ‘ বের হতেই মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলি৷ নীতি এইবার রাগী চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে কিড়মিড় করে বলল,
–‘ তোর ফারিহা আছে না?? নতুন প্রেম তাই না??বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারবি হারামি! আমি শুধু গিয়ে বলবো,ফারিহা বেবি তোমার রাহাত বেবি আমার জান হতে চায়৷ ‘
–‘ ভাই-বোনের ভালোবাসাকে অপবিত্র করতে একটুও হাত থুক্কু মুখ কাঁপবে না তোর! এই অপবাদের জন্য তোর জামাই কালা মিয়ার মতো কালা আর পরশ স্যারের মতো ভুড়িওয়ালা হইবো৷ যা প্রাণ ভরে দোয়া করলাম৷ ‘ রাহাত চেয়ারে পাঁ উঠিয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মতো হাত উঁচু করে দোয়া দেওয়ার ভঙ্গিমা করে বললো৷ নীতি টেবিল থেকে বই উঠিয়ে ওর দিকে ছুড়ে মারে ৷ রাহাত হাত দিয়ে ধরে ফেলে নীতিকে আরেকটু রাগানোর জন্য বলল,
–‘ বাসর ঘরে ছুড়াছুড়ি খেলা খেলিস৷ এই বই ছিড়ে গেলে ওই বুইড়া তোরে ছিড়ে ফেলবে৷ ‘

–‘ হুশ! সিরিয়াস কথার আসর বসাই এইবার৷ নীতির এই অপরাধের শাস্তির হিসেব তোলা থাকলো ৷ ‘ আমিও চেয়ারে পাঁ উঠিয়ে আয়েসি ভাবে বসে নীতির দিকে তাকালাম৷ বেচারি রাগে ফুঁসছে! হঠাৎ করে মনে হলো নীতির সিক্রেট ভালোবাসার ব্যাক্তিটির কথা! অব্যাক্ত ভালোবাসার মানুষটার কথা৷ নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে বললাম,
–‘ বিয়েটা কার সাথে ঠিক হয়েছে নীতি?? ‘
আমার প্রশ্ন শুনে নীতি চমকে উঠলো৷ ও আমার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম একরাশ বেদনা ওর চোখেমুখে আছড়ে পরছে কঠিন ভাবে৷ তবুও মুখে হাসি টেনে শান্ত কন্ঠে বলল, ‘ মামার পরিচিত ছেলে! ছেলেটার সাথে দেখা হয় নি এখনো৷ শুনেছি,বিজনেস করেন৷ ‘
আমি জবাব দিলাম না৷ রাহাত একটু আগেই উঠে চলে গেছে ফোন এসেছে বলে৷ আবারও চারদিক নীরব হয়ে গেলো৷ চুপিচুপি না বলা কষ্টের কথা গুলো তপ্ত দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসছে৷ আমি হুট করেই নীতির হাত ধরে বললাম, ‘ আরিফ ভাইয়া জানেন সব কিছু?? ‘
–‘ বাদ দে দোস্ত! ‘
–‘ কেন বাদ দিবো বল তো?? দুই জন দুজনকে ভালোবাসিস কিন্তু জাহির করা বাকি তবুও ভালো তো বাসিস তাই না?? ‘
আমার কথা শুনে নীতি ছলছল চোখে তাকালো৷ ইন্টারমিডিয়েট থেকে একসাথে পথ চলা আমাদের৷ ও আরিফ ভাইয়া কে সেই অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে কিন্তু মনের ভালোবাসা এখনো মনের মাঝেই লুকানো৷ আরিফ ভাইয়া হাজার বার চেষ্টা করেছে জাহির করার! কিন্তু বারবার নীতির কাছে এসেও ফিরে গেছেন । মেয়েটা প্রচন্ড ধৈর্য রাখে। নিজেও ভালোবাসে আবার কাছেও টেনে নেয় না। ভেবেই বুক ফুঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

নীতির বাবা প্যারালাইজড ।পুরো সংসারের দায়িত্ব ওর মার কাঁধে৷ গুরুজন হিসেবে ওর মামা দায়িত্ব পালন করছেন৷ আরিফ ভাইয়াদের ফ্যামিলির দায়িত্ব উনার কাঁধে ৷ তার বাবা নেই৷ নিজের পড়াশোনা সাথে ভাই-বোনদের আর মা’র দায়িত্ব পালন করছেন৷ বর্তমানে চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু ভাগ্য বোধহয় একদম সহায় না৷
কেন সহায় হয় না ভাগ্য?? অব্যক্ত ভালোবাসার বিচ্ছেদ গুলো বড্ড কষ্টের হয়৷ যা সহ্য করা যায় না৷ এর চেয়ে বোধহয় মৃত্যুকে আপন করা সহজ৷
আমাদের ভালোবাসাটাকে ভালোবাসা বলবো??
অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলোকে ভালোবাসা বলে বুঝি??
আমাদের এই লুকোচুরি ভালোবাসার মধ্যে এমন বিচ্ছেদ আসলে কি করে মেনে নিবো আমি? ভেবেই শিউরে উঠে একহাতে নীতিকে জড়িয়ে ধরলাম৷ মেয়েটা কেঁদে উঠলো৷ আমার চোখের কোণায় পানির আভাস পেতেই চোখ বন্ধ করতেই স্নিগ্ধ স্যারের মায়াময় মুখ ভেসে উঠতেই ফট করে চোখ খুলে নেই৷
আমার ভালোবাসা অপ্রকাশিত হলেও নীতির মতো ছেড়ে দিতে পারবো না৷ একদম না৷ আমি চাই আপনাকে শুনছেন আপনি?? আমি চাই আমার শুভ্র প্রেমিক কে !!!

চলবে….
~” কেন প্রকাশ করছে না?? সঠিক সময় আসবে সেদিন আপনারা না বললেও ফুঁটে উঠবে সবকিছু৷ অপেক্ষা করুন!!
প্রতিদিন দিচ্ছি এইজন্য চাইলেও বড় করতে পারছি না আশা করি আমার সমস্যা বুঝতে পারবেন! ~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here