শুধু_তুমি_চাও_যদি 🥀 #পর্ব – ০৭

#শুধু_তুমি_চাও_যদি 🥀
#পর্ব – ০৭
#লেখনীতে – Aloñe Asha [ছদ্ম নাম]
#Kazi_Meherin_Nesa

আদিত্য — যা বলার পরিষ্কার করে বল ধ্রুব..!!

একটু একটু করে আদির রাগের মাত্রা তীব্র হচ্ছে, ধ্রুব কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে যে ইতিমধ্য ওর আর দিয়ার সম্পর্ক নিয়ে আদির মনে প্রশ্নের ঝড় বইছে, এই মুহূর্তে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইছে ধ্রুব..ওকে চুপ দেখে আদি আবারও বলে ওঠে..

আদিত্য — তুই দিয়াকে চিনিস সেটা আমাকে আগে কোনোদিন কেনো বলিসনি আর দিয়া, ও বললো ও তোকে ভালোভাবে চেনে, হাউ..?

ধ্রুব — ব্যাখ্যা করতে পারবো না, তাই একদম সহজভাবে বলছি..ধরে নে দিয়ার সাথে আমার তেমন সম্পর্ক যেমনটা তোর সাথে ওর নেই! আর আমার মনে হয় না কোনোদিন হবে

এবার মারাত্মক রেগে যায় আদি, এক হাতে ধ্রুবের টি – শার্টের কলার চেপে ধরে ও..ধ্রুব ও বুঝেছে যে ওর কথায় কাজ হয়েছে..যেটা করতে চাইছিল সেটাই হচ্ছে…

আদিত্য — হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু মিন বাই ইট..!

ধ্রুব — কি করছিস তুই আদি..! ছাড় আমাকে

আদিত্য — তুই কি বলছিস নিজে জানিস তো? কি বোঝাতে চাইছিস তুই আমাকে এসব বলে?

ধ্রুব আস্তে করে আদির হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে হালকা হেসে বলে..

ধ্রুব — অবশ্যই জানি..আর হ্যা আদি সব কথা বলে বোঝানোটা কি খুব জরুরী? নিজেও একটু বোঝার চেষ্টা কর, তুই নিশ্চয়ই দিয়াকে দেখেই বুঝেছিস কতোটা ভালোভাবে ও চেনে আমাকে? কতো ফ্রানকলি কথা বলছিল আমার সাথে, তারপর আমার মনে হয় না তোর প্রশ্ন করার কিছু আছে

এতক্ষণ ভীষণ রেগে ছিলো আদি কিন্তু হুট করে ধ্রুবের কথা শুনে ওর কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়ে গেলো, সত্যি তো দিয়া কতো সুন্দর কথা বলছিল ধ্রুবের সাথে যেনো কতদিনের চেনা কেউ..এসব ভাবতেই আদি একদম শান্ত হয়ে যায়, মুহূর্তের মধ্যেই যতো অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা আছে সব ওর মাথায় এসে ভর করতে শুরু করে..এদিকে আদিকে নিরব দেখে খুশি হয় ধ্রুব, হয়তো বন্ধুর সাথে ছলনা করছে ও ঠিকই কিন্তু নিজের কথা ভেবে এইটুকু করা ওর কাছে খুব একটা মারাত্মক অপরাধ মনে হচ্ছে না..

আদিত্য — (দিয়া আর ধ্রুব একে অপরকে ভালোভাবে চেনে, আর সম্পর্কের কথা কি বলছে এসব ও? তারমানে বলবে দিয়া আর ধ্রুবের মধ্যে আগে থেকেই কিছু..)

মনে মনেও যেনো সম্পূর্ন কথাটা ভাবতে পারলো না আদি, এমন না যে ধ্রুব কি বলতে চাইছে সেটা আদি বুঝতে পারছে না, সত্যি বলতে ইচ্ছে করেই বুঝতে চাইছে না ও..এইতো সবে দিয়াকে বুঝতে শুরু করেছিল আদি তার মধ্যে হুট করে এসব কথা সামনে এলে স্বাভাবিক থাকা কি আদৌ সম্ভব? মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে আদির, ধ্রুব বুঝেছে যে কাজ হয়ে গেছে

ধ্রুব — (আমি ভালোভাবেই জানি তোর আর দিয়ার সম্পর্ক ঠিক কেমন, আর তুই দিয়াকে কিভাবে ট্রিট করিস, আমি এটাও জানি তুই দিয়ার সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানিস না যতটুকু আমি জানি.. ও এসব ডিসার্ভ করেনা..ওর সাথে তোর বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু হতে পারে শেষে দিয়াকে আমিই পাবো, একটা চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই..!!)

কথাগুলো ভেবে ধ্রুব আদিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যাচ্ছিলো তখন আদি একদম ঠান্ডা কণ্ঠে প্রশ্ন করে ওঠে..

আদিত্য — তোরা কবে থেকে একে অপরকে চিনিস?

ধ্রুব — তোর সাথে ওর বিয়ে হবার আগে থেকেই..!

আদি আর কোনো প্রশ্ন করলো না..আসলে এই মুহূর্তে আদির মাথা যেনো একদম ফাঁকা হয়ে গেছে..ধ্রুবের কথাগুলো সত্যি না মিথ্যে কিছুই পরিমাপ করতে পারছে না কারণ দিয়ার বর্তমান সম্পর্কেই তো কিছু জানেনা ও সেখানে অতীত জানা তো বিলাসিতা..সবাই এরপর একসাথে বসে আড্ডা দিয়েছে আদি তখনও চুপ ছিল..ডিনারের সময়ও চুপ ছিলো, দিয়া সবটাই লক্ষ্য করেছে কিন্তু তখন কোনো প্রশ্ন করেনি
.
.
বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে আদি, ধ্রুবের বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে.. মনে অনেক প্রশ্ন উকি দিচ্ছে, জানার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে, চাইলেই দিয়াকে সোজা জিজ্ঞাসা করতে পারতো যে ধ্রুবের সাথে তোমার কি সম্পর্ক, কিন্তু সেটা করতে পারছে না..কোনো এক অজানা কারণে বাঁধছে ওর প্রশ্ন করতে..ওকে চুপ দেখে দিয়া কিছুটা অবাক হয়..

দিয়া — কি হয়েছে তোমার আদিত্য? সন্ধ্যার পর থেকে দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে আছো, সবার সাথে যখন ছিলে তখনও চুপ ছিলে..

আদিত্য — তখন তো সবাই ছিলো ওখানে, সবাই কথা বলছিলো..তার মধ্যে আমি একজন না বললেই কি এসে যায়?

দিয়া — তখন কারো কিছু না এসে গেলেও এখন আমার আসছে যাচ্ছে, তুমি আমার সাথে কথা বলো..আমি তো আছি এখানে কিন্তু তুমি মুখে কুলুপ এঁটে আছো

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদি বলে..

আদিত্য — বলার মত কোনো কথা নেই আমার কাছে তাই

দিয়া — আমার কাছে তো বলার অনেককিছু আছে তবে বলবো না এখন..তুমি ক্লান্ত আছো, একটু রেস্ট করো

দিয়া কম্বল ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো, কেনো যেনো একটু বেশিই ঠান্ডা লাগছে ওর এখন..কিছু সময় পর আদি বল উঠলো..

আদিত্য — একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?

দিয়া — অবশ্যই করবে..!

আদিত্য — তুমি কি কোনোদিন আমার থেকে কিছু লুকিয়েছ?

ভ্রু কুচকে ফেলে দিয়া, এ কেমন প্রশ্ন? অবশ্য প্রথমবার আদির মুখে এমন প্রশ্ন শুনে অবাক ও হয়েছে বটে..! দিয়া গা থেকে কম্বল সরিয়ে উঠে বসে..

দিয়া — তুমি তো আমার থেকে কোনোদিন কিছু জানতেই চাওনি, কিছু যদি জানতে চাইতে আর আমি না বলতাম তাহলে সেটা লুকানো হতো তাইনা?

আদিত্য — তারপরও, তোমার পাস্টের কি এমন কোনো কথা আছে যেটা তুমি প্রেসেন্টের কথা ভেবে আমার থেকে লুকিয়ে গেছো

দিয়া কিছু না ভেবেই উত্তর দিলো কারণ ওর মতে তো এমনকিছু নেই যেটা ও আদির থেকে লুকিয়েছে..

দিয়া — না তো..! এমনকিছু তো নেই, কিন্তু আদিত্য তুমি এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কেনো করছো বুঝতে পারছি না..আর কোন বিষয়ে জানতে চাইছ?

আদিত্য — কিছুনা..!

আদি বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়..দু হাত জ্যাকেটের পকেটে গুজে বলে..

আদিত্য — আমি একটু আসছি..!

দিয়া — তুমি কোথায় যাবে?

আদিত্য — আমার ঘুম আসছে না, একটু হেটে আসি বাইরে থেকে, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো

আদি যেতেই যাচ্ছিলো তখন দিয়া হুরহুর করে বিছানার পাশে এসে আদির হাত ধরে কিছুটা রেগে বলে..

দিয়া — কোনো দরকার নেই এখন বাইরে যাওয়ার, এমনিতেই অচেনা জায়গা তার ওপর রাতের বেলা..কোনো বিপদ হলে কি করবে তুমি? চুপ করে শুয়ে পড়ো

আদিত্য — কিছু হবেনা..

দিয়া — যদি হয়ে যায় তখন কি করবে? ঘুম না আসলে চুপ করে বসে থাকো, দরকার পড়লে আমি গল্প করবো তোমার সাথে..কিন্তু বাইরে যাওয়ার পারমিশন দেবো না আমি

এবার আরো কিছুটা রেগেই বললো দিয়া, ও জানে আস্তে আস্তে বললে আদি উল্টে ওকে এক ধমক দেবে..তার জন্যে নিজেই জোরে বলে দিলো..দিয়ার কথায় মুচকি হাসে আদি, মেয়েটা আজকাল একটু বেশী অধিকার বোধ দেখাচ্ছে যেটা আদি একটু একটু করে বেশ এনজয় করতে শুরু করেছে..

আদিত্য — আমার বাইরে যেতে তোমার থেকে পারমিশন নিতে হবে?

দিয়া — হুমম..! বাড়ি থেকে দূরে আছো, বাড়ি থাকলে মা অনুমতি দিত কিন্তু সেই কাজ এখানে আমি করবো..একটা কথা কি জানো? মাঝে মাঝে মায়ের কাজ বউকে করতে হয়

আদিত্য — এসব আবার কি বলছো দিয়া..! বউ আবার মা হয় নাকি?

দিয়া — মেয়েরা চাইলেই সব হতে পারে, এখন তুমি এখানে শুয়ে পড়ো, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তাহলেই ঘুম এসে যাবে

দিয়া হাত দিয়ে কয়েকটা পাঞ্চ মেরে বালিশটা ঠিক করে দেয়, আদি এই মুহূর্তে ভীষণ ক্লান্ত, দিয়ার সাথে আর কথা বাড়াতে চায় না তাই চুপ করে শুয়ে পড়লো..দিয়া আদির গায়ে ভালোভাবে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত দেয়..

দিয়া — এইতো, গুড বয়..! দেখি আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই

হাতটা বুলিয়ে দিতে যাচ্ছিলো তখন আদী ওর হাত সরিয়ে দেয়..

আদিত্য — তোমাকে আর এসব পাকামো করতে হবে না, নিজে ঘুমাও

দিয়া — পাকামো কোথায় করলাম? আমি তো তোমার ভালোর জন্যেই..

আদিত্য — ঘুমাও দিয়া..!

দিয়া এবার কিছুটা অভিমানী স্বরে বলে..

দিয়া — আমি তোমার কেয়ার করি সেটা তোমার ভালো লাগেনা কেনো আদিত্য? আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলো দেখি তোমার কোনো প্রেম মোহাব্বত এর কাহিনী ছিলো না তো?

আদি একটু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় দিয়ার দিকে, মেয়েটা ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে..

আদিত্য — রাতের বেলা এইসব উল্টোপাল্টা কথা বলে বকা না খেলে হবেনা তোর তাইনা?

দিয়া — এতো বকা কেনো দাও সেটার রহস্য উদঘাটন করার জন্যেই তো এই প্রশ্ন করছি

আদিত্য — যখন তোর এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই তাহলে আর কি উত্তর দেব?

আর কথা বাড়ালো না দিয়া, আদিকে আর ক্লান্ত করতে চায় না ও অন্যদিকে মুখ করে টুপ করে শুয়ে পড়লো..আদি সোজা হয়ে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে কিন্তু ঐযে, মাথার মধ্যে একটা কথা বসে গেছে সেটা কি আর এতো সহজে বেরোবে? এসব ভাবতে ভাবতে সময় চলে গেছে অনেকটা, বাইরের শেয়ালের ডাক আর ঝি ঝি পোকার শব্দে রাতের গভীরতা বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু আদির চোখে ঘুম নেই, একটু বাদে পাশ ফিরে তাকায় আদি দিয়ার দিকে..দিয়া তখন আদির দিকে মুখ করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন..দিয়ার দিকে কয়েক মুহূর্ত দেখে আদি..

আদিত্য — (ধ্রুব যতোই আমার বন্ধু হোক কিন্তু আমার আর দিয়ার সম্পর্কে ও বাইরের লোক..দিয়ার থেকে পরিষ্কারভাবে কিছু না জেনে আমার নিজে নিজেই কিছু ভেবে নেওয়াটা বোকামি হবে..দিয়ার সাথে কালকে এই নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে এই কনফিউসন দুর করতে হবে)

কথাগুলো বলে নিজেই নিজেকে বুঝ দেয় আদি, অবশ্য ওর এই ভাবনা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত, সত্যিটা না জেনেই নিজের স্ত্রীর থেকে বাইরের বন্ধুর কথা বিশ্বাস করা নিছক বোকামি নয় কি?
.
.
ভোরবেলা ফজরের নামাজ আদায় করার পর দিয়া নতুন বায়না শুরু করে আদির কাছে যে ও খেজুরের রস খাবে কিন্তু আদি তো খেতেই দেবে না..না মানে কিছুতেই রাজি করাতে পারছে না..অন্য ডাক্তাররা কতো বোঝাচ্ছে কিন্তু আদি শুনলে তো..

দিয়া — আদিত্য, প্লিজ..! অন্তত এক গ্লাস তো খাওয়াও, আমার সেভাবে কোনোদিন খেজুরের রস খাওয়ার সুযোগ হয়নি

আদিত্য — এতদিন যখন না খেয়ে থাকতে পেরেছো এখনও পারবে..খেতে হবে না..

দিয়া — আচ্ছা আমি কী লাখ টাকার জিনিস খেতে চাইছি যে তুমি এমন করছো?

আদিত্য — তুমি জানো শখের বশে এই খেজুরের রস খেয়ে কতো মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়? তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে কি হবে? আমি এখানে অন্য রোগীদের ট্রিটমেন্ট করবো নাকি তোমার? (রেগে)

দিয়া — কিছু হবেনা আমার আদিত্য, প্লিজ এই একবার খাওয়াও..আর খেতে চাইবো না কোনোদিন প্রমিজ!

সিমি — স্যার..ম্যাডাম এতো করে বলছে যখন একটু খেতেই পারেন তো..তাছাড়া শীতের সিজনে গ্রামে এসে খেজুরের রস না খেয়েই চলে যাওয়াটা কি ঠিক?

আদিত্য — খেজুরের রস খাওয়া কি অসুস্থতার থেকে বড় ডাক্তার সিমি? আর আপনি সব জেনেও এসব কেনো বলছেন বুঝতে পারছি না.. হাইজেনিক কিছু খেতে চাইলে তাও মানা যেতো..পিঠে খেতে পারো তুমি

দিয়া — পিঠে তো খাবই তার আগে আমার খেজুরের রস চাই ব্যস

আদিত্য — আমি কিছু বলছি না বলে ভেবো না যা ইচ্ছে করবে..ওটা খেলেই অসুস্থ হবার রিস্ক থাকবে আর কোনো রিস্ক আমি নেবো না ব্যস

পলাশ — স্যার, সবসময় নেগেটিভ ভাবলে তো হয় না..কিছু হবেনা..ওনার যখন এতো ইচ্ছে থাকলে একটু খাওয়ান

আদিত্য — ডাক্তার পলাশ, আপনি আর ওকে আস্কারা দেবেন না প্লিজ..এমনিতেই আমার মা ওকে আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলেছে

দিয়া — হ্যা তো..? অ্যান্টি জানে আমি কখনো কোনো অন্যায় আবদার করিনা তাই উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন..তোমার মত নাকি উনি?

আদিত্য — আমার মত মানে? কি বলতে চাইছো তুমি আমি খারাপ?

দিয়া মুখ ভেংচিয়ে বলে..

দিয়া — অবশ্যই খারাপ আর সাথে কিপটেও, তাইতো তুমি আমাকে সামান্য খেজুরের রস খাওয়াতে চাইছো না..

আদিত্য — আরে অদ্ভুত..! আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি আর উল্টে তুমি আমাকে কথা শোনাচ্ছ?

দিয়া — থাক থাক! আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার দরকার নেই..যা বোঝার আমার বোঝা হয়ে গেছে

আদি আর কি বলবে? দিয়াকে কি বোঝাতে চাইছে আর ও কি বুঝছে.. ওদের দুজনের খুনসুটি দেখে ডাক্তার পলাশ আর সিমি মুখ চেপে হাসছে, আদিকে এই প্রথম একটা মেয়ের কাছে নাজেহাল হতে দেখছে কিনা..!আদির সাথে রাগ করে দিয়া উঠানের এক কোণে চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো, আদি তখন ডাক্তার পলাশের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিল..সেই মুহূর্তে ধ্রুব আসে দিয়ার কাছে..আর ঢাকনা দিয়ে ঢাকা একটা মগ গ্লাস ওর হাতে দেয়..

ধ্রুব — এটা তোমার জন্যে

দিয়া মগটা হাতে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি, কিন্তু বুঝতে পারেনি..

দিয়া — কি আছে এতে?

ধ্রুব — নিজেই দেখো..!

ঢাকনা সরিয়ে দিয়া নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ সুকে খুশি হয়ে যায়..

দিয়া — আরে, এটা তো খেজুরের রস..ধ্রুব, আপনি এটা কখন আনলেন?

ধ্রুব — তুমি আদির সাথে ঝগড়া করছিলে এটা খাওয়ার জন্যে,আমি শুনে নিয়েছিলাম তাই গিয়ে নিয়ে এলাম

দিয়া — থ্যাংক ইউ..! কিন্তু বাকিরা..

ধ্রুব — সবার জন্য এনেছি, সিমিকে দিয়েছি, ও নিয়ে আসছে সবার জন্য..তোমার তো টেস্ট করার বেশি ইচ্ছে ছিল তাই তোমায় আগে দিলাম

দিয়া মুচকি হেসে মগে চুমুক দেয়.. আদি ওদিকে খেয়াল করেনি, এই সুযোগে দিয়া ঢক ঢক করে অর্ধেক মগ খেয়ে নিয়েছে, ধ্রুব ও খাচ্ছে..

দিয়া — আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে তো ভুলেই গেছি..আপনি আর আদিত্য বন্ধু তাইনা? কিন্তু বৌভাতের দিন আমি আদির সব বন্ধুকে দেখেছিলাম, আপনাকে দেখিনি কেনো?

ধ্রুব — আমি, আসলে আমার একটা কাজ ছিলো তো আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি..!

এভাবে টুকটাক কথা বলতে থাকে ধ্রুব আর দিয়া..ওদিকে সিমি দুটো গ্লাস ভরে নিয়ে এসেছে রস আদি আর পলাশের জন্যে..এটা দেখেই তো আদি রেগে যায়, ওকে রাগতে দেখে পলাশ আর গ্লাস ধরার সাহস পায়নি..

আদিত্য — সিমি আমি মানা করলাম তারপরও কেনো এনেছ এসব? (রেগে)

সিমি — আমি আনিনি স্যার..ধ্রুব এনেছে সবার জন্য তাই ভাবলাম আপনাকেও একটু.. (আমতা আমতা করে)

ধ্রুবের নাম শুনতেই সঙ্গে সঙ্গে সামনের দিকে তাকায় আদিত্য, যেটা ভেবেছে সেটাই..দেখলো ধ্রুব হেসে হেসে কথা বলছে দিয়ার সাথে.. নাহ, এখন আর এটা সহ্য করা যাচ্ছে না..তার থেকে বেশি রাগ হচ্ছে ওর দিয়াকে দেখে..হনহন করে দিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে মগ কেড়ে নেয় আদি..

আদিত্য — এত্তবার মানা করলাম তারপরও তুমি এটা খাচ্ছো কেনো দিয়া? নিজের ভালোমন্দ নিজে তো বোঝো না, এটলিস্ট আমাকে তো বুঝতে দাও! (ধমক দিয়ে)

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here