#শুধু_তুমি_চাও_যদি 🥀,পর্ব – ১০ [শেষ পর্ব]
#লেখনীতে : Aloñe Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa
এরপর আরো অনেক অপমান করে দিয়া ধ্রুবকে, সবটা জানার পর পলাশ আর সিমিও কথা শোনায় ধ্রুবকে..ধ্রুব চুপচাপ মাথা নিচু করে সব শুনেছে, নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে সে..আদি আর দিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়েছে অনেকবার, কিন্তু এরকম অপরাধের পর কি এতো সহজেই ক্ষমা মেলে?
.
.
বিছানার ওপর বসে আছে দিয়া, আদি নিচু হয়ে বসে ওর পায়ে সযত্নে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর ওকে দেখে মিটিমিটি হাসছে মেয়েটা..ওষুধ লাগাতে লাগাতে আদি বললো
আদিত্য — এরপর থেকে কোনো অচেনা জায়গায় আমাকে না বলে যাবে না, পথ হারিয়ে অন্য কোথাও চলে গেলে কি সাংঘাতিক একটা ব্যাপার ঘটতো ভাবতে পারছো!
দিয়া মজার ছলে বলে উঠলো..
দিয়া — কি আবার হতো? তুমি আমার থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে, তোমাকে আর কারো বকবক শুনতে হতো না, কাওকে বকতে হতো না
আদি রেগে যায় ওর কথা শুনে..
আদিত্য — দিয়া, ইটস নট ফানি! ফের যদি তুমি এমন করো তাহলে তোমাকে আর আমার সাথে কোনোদিন কোথাও নিয়ে যাবো না..মাইন্ড ইট!
আদি ভীষণ রেগে গেছে, তবে আজকে ওর এই রাগ করা অন্যদিনের তুলনায় আলাদা, যা দেখে দিয়ার কষ্ট হচ্ছে না বরং ভালো লাগছে..দিয়া মুচকি হেসে বললো..
দিয়া — আচ্ছা ডাক্তার সাহেব..! একা যাবো না তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো কেমন? আর রাগ করতে হবে না
আদি এবার উঠে দাড়ায়, ওষুধ লাগানো তো শেষ..ওষুধের কৌটোটা একপাশে রেখে দিয়ার পাশে বসে..একদম চুপচাপ হয়ে গেছে ও, দিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে..হুট করেই আদি দিয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়, এরপর অত্যন্ত শীতল কণ্ঠে বলে..
আদিত্য — আ’ম সরি দিয়া..ধ্রুবের বলা কথাগুলো জানার পরও তোমাকে কিছু জানাইনি, আর সকালে ঐভাবে রাগারাগি করার জন্যেও ক্ষমা চাইছি
দিয়া মুচকি হাসে..পা বিছানার ওপর তুলে আদির দিকে ভালোভাবে ঘুরে বসে ও..
দিয়া — ভুল তো মানুষই করে, তারপর সেখান থেকে শিক্ষা নেয়..এখানে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই! তুমি যা করেছো তাতে হ্যা আমার একটু খারাপ লেগেছিল তবে আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি
দিয়ার কথা শুনে ওর দিকে চোখ তুলে তাকায় আদি, মেয়েটার মন এতো ভালো কেনো? মাঝে মাঝে ভেবে পায়না আদি, ও কিছুটা অভিযোগের সুরে বলে..
আদিত্য — আমার কোনো দোষ তোমার নজরে কেনো পড়ে না বলোতো? সবসময় এতো মহান হবার খুব দরকার আছে?
দিয়া — অবশ্যই আছে, দেখো তুমিও যেমন আমিও যদি তেমন করি তাহলে কিভাবে হবে? সংসার করতে গেলে যেকোনো একজনকে একটু কম্প্রোমাইজ করতে হয় নাহলে সংসারে ঝামেলা লেগে থাকে..এইযে দেখো আমি পিছিয়ে ছিলাম বিধায় আজকে তুমি নিজেই কেমন শুধরে গেছো (হেসে)
আদিত্য — তবুও দিয়া, এতটা কম্প্রোমাইজ করাও ঠিক না, আর আমি তোমার সাথে যা বিহেভ করেছি তারপর তো তোমার আমার ওপর রাগ করা উচিত!
দিয়া — রাগ করা হয়তো উচিত কিন্তু আমি সেটা করবো না
আদিত্য — কেনো? (ভ্রু কুচকে)
দিয়া — কারণ আমার বিশ্বাস আছে তোমার ওপর, আমি জানি তুমি এমনি এমনি রাগ করো না..কোনো একটা কারণ থাকে তার পেছনে..আসলে তুমি মানুষটা খারাপ নও আর দেখো আজকে আমার বিশ্বাসের জয় হলো, ধ্রুব এতকিছু বলেছে তাও কিন্তু তুমি আমাকে অবিশ্বাস করোনি
আদি কোনো উত্তর দিলো না, আসলে দিয়ার প্রতিটা কথা এমন হয়, এতটা সফটলি ও যেকোনো বিষয় হ্যান্ডেল করে যা দেখে মাঝে মাঝে আদি স্তব্ধ হয়ে যায়, অবাক হয়ে যায় মেয়েটাকে দেখে যাচ্ছে..ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে দিয়া বলে ওঠে..
দিয়া — ওভাবে তাকিয়ও নিন ডাক্তার সাহেব, প্রেমে টেমে পড়ে যেতে পারো..
বরাবরের মতো আজও মেয়েটার লাগামহীন কথায় হেসে দিলো আদি, মেয়েটা তাকে মাফ করে দিয়েছে তবুও আদির মনের মধ্যে যে গিলট আছে সেগুলো চাইলেও হয়তো কোনোদিন দুর করতে পারবে না!!
.
.
পরেরদিন সকালেই তো যাওয়ার কথা ছিলো সকলের কারণ ক্যাম্পের কাজ শেষ কিন্তু দিয়া এখানে আরো একদিন থাকতে চেয়েছে তাই আদি ঠিক করেছে আরেকদিন থাকবে এখানে, বাকি সবাইকে পাঠিয়ে দিচ্ছে ও..যাওয়ার সময় সিমি এসে দিয়াকে উইশ করে যায়, সর্বশেষে ধ্রুব আসে ওদের কাছে..
ধ্রুব — দিয়া, কালকের ঘটনার জন্যে..
আদিত্য — কালকের ঘটনা নিয়ে এখন কথা না বলাই বেটার ধ্রুব, আমি চাইনা ওইসব নিয়ে আর কোনো কথা হোক
দিয়া — হ্যা, আর অতীত মনে করে বর্তমান বিষিয়ে তোলার মানেই হয় না
ধ্রুব — জানি, আর ওইসব ভাবলে আমারও নিজের ওপর রাগ হচ্ছে, জানিনা কি হয়েছিলো আমার..মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো বোধহয় তাইতো সব জানার পরও এরকম কাজ করে বসেছি!
ধ্রুবের কথা শুনে দিয়া আদি দুজনেই চুপ করে আছে, একে অপরের দিকে একবার দেখে ওরা.. এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা তোলার ইচ্ছে ছিলো না ওদের কিন্তু ধ্রুব বলছে বিধায় ওরা বাধা দেয়নি
আদিত্য — যেটা হয়েছে ভুলে যা, আমরাও তোর একটা মিসটেক ভেবে ভুলে গেছি এসব
ধ্রুব — থ্যাংকস আদি, কিন্তু তোরা আমাকে ক্ষমা করেছিস তো?
দিয়া — দেখুন, আমার ক্ষমা করা বা না করায় কিছু যায় আসে না..আপনি ভুল করেছেন সেটা বুঝে শুধরে নেবার চেষ্টা করুন তাতেই হবে, আশা করি এমনকিছু ভবিষ্যতে আর করবেন না
ধ্রুব — না দিয়া, গত রাতে অনেক ভাবলাম যে আমি কতটা অন্যায় করেছি, ভালোবাসা নামক বিষয়টা তো মজাই বানিয়ে ফেলেছিলাম আমি তবে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি
আদিত্য — বুঝেছিস যখন তাহলে আর গিলটি ফিল করার দরকার নেই, এই বিষয়টা এখানেই শেষ কর..ভবিষ্যতে এই নিয়ে যতো কম কথা বলা যায় ততোই ভালো
ধ্রুব বুঝতে পারলো ওরা আর এই নিয়ে কথা বলতে চাইছে না, তাই ও আর কথা বাড়ালো না..দিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সিমি আর পলাশের সাথে চলে গেলো..দিয়া আর আদি দুজনেই চাইছে নিজেদের মধ্যে হওয়া সব ভুল বোঝাবুঝি একেবারে মিটিয়ে নিতে..ওরা যাবার পর আদি দিয়াকে জিজ্ঞাসা করে..
আদিত্য — তো বলো কি গিফট্ চাই তোমার?
দিয়া — বেশি কিছুই চাইনা! তুমি শুধু আজকে আমার সাথে আমার পছন্দের জায়গায় যাবে, আমাকে সময় দেবে এইটুকুই চাই
জন্মদিন উপলক্ষে এতো ছোট্ট আবদার শুনে আদি কিছুটা অবাক হয়..
আদিত্য — ব্যাস এইটুকুই? আর কিছু চাইনা? আই মিন কেক, অর্নামেন্টস বা শাড়ি এরকম কিছুই লাগবে না?
দিয়া — নাহ! কিছু লাগবে না..তুমি শুধু বলো বিকেলে আমার সাথে..কোনো বাহানা কিন্তু চলবে না
আদিত্য — ওকে যাবো! কিন্তু কোথায় যাবো সেটাও কি সিক্রেট রাখবে?
দিয়া মুচকি হেসে বলে..
দিয়া — হ্যা, আপাতত সিক্রেট থাক? বিকেলেই জানতে পারবে কোথায় নিয়ে যাবো তোমাকে
কথাটা বলেই মিষ্টি হাসি দেয় দিয়া, আদি অবশ্য গেস করার চেষ্টা করেছিলো দিয়া কোথায় নিয়ে যেতে পারে ওকে কিন্তু ঠিকমতো আন্দাজ করতে পারেনি.. পরে আর কি? বিকেলের অপেক্ষা ছাড়া তো উপায় নেই!
.
.
পড়ন্ত বিকেলের প্রকৃতির সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে, তারই মাঝে নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসেছে দিয়া, হাতে বাদাম – ছোলা ভাজা, ঝালমুড়ি, হাওয়াই মিঠাই সব নিয়ে এসেছে যদিও আদি ওকে এসব খেতে দিতে চায়নি কিন্তু দিয়ার জন্মদিন বলে কথা, বার্থডে গার্লের আবদার তো মেটাতেই হবে, মেয়েটা আদিকে দিয়ে সব কিনিয়েই ছেড়েছে..দিয়া নদীর পাড়ে বসলেও আদি দাড়িয়ে ছিলো পকেটে হাত গুজে.. দিয়া তখন হাওয়াই মিঠাই এর প্যাকেট খুলে খেতে খেতে আদির দিকে তাকায়…
দিয়া — তুমি এরকম দাড়িয়ে কেনো আছো? পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে নাকি তোমাকে? বসো এখানে..দেখো কত সুন্দর ভিউ এখানকার
আদিত্য — দিয়া এখানে এভাবে বসাটা কেমন দেখায়? চলো অন্য কোথাও গিয়ে বসি..আশেপাশে কোনো রেস্টুরেন্টে যাই?
দিয়া — আদিত্য এই জন্যেই তোমার ওপর অনেক রাগ হয় আমার মাঝে মাঝে, তুমি সবকিছু হাই লেভেল এর চাও..একবার নিজেকে সাধারণ মানুষের জায়গায় নামিয়ে দেখো না, এই ছোটো ছোটো আনন্দগুলো উপভোগ করতে শেখো বুঝলে?
আদিত্য — তো এগুলো করা জরুরি? (ভ্রু কুঁচকে)
দিয়া বাঁকা হেসে আদির দিক থেকে মুখ সরিয়ে সামনে নদীর দিকে তাকায়, ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে..
দিয়া — অবশ্যই জরুরি!! আমাকে ভালবাসতে গেলে অবশ্যই তোমাকে এইসব করতে হবে কারণ আমি মাটির কাছের মানুষ, তোমার মতো উচুতে থাকতে পছন্দ করিনা
দিয়ার কথায় চমকে ওঠে আদি..
আদিত্য — হেই, আমি তোমাকে ভালোবাসি কখন বললাম?
দিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে..
দিয়া — ভালোবাসো না?
আদি অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে না সূচক ঘাড় নাড়ায়, তখন মেয়েটা আর কিছু না বলে আবার নিজের মতো খেতে শুরু করে..একটু পর আদিও ওর পাশে বসলো, যদিও ও পানিতে পা ডোবায়নি..
দিয়া — বাব্বাহ..! নিজে থেকেই বসলে?
আদিত্য — আমি তোমার পাশে এভাবে দাড়িয়ে থাকলে লোকে আমাকে তোমার বডিগার্ড ভাববে
আদির কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে দিয়া..
আদিত্য — হাসির কি হলো?
দিয়া — না কিছু হয়নি, বসেই যখন পড়েছো তাহলে তো এবার আমার খাবারের ভাগ নিতে হবে তোমাকে..নাও একটু হাওয়াই মিঠাই খাও
দিয়া কিছুটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে খাওয়াতে গেলে আদি বাধা দেয়..
আদিত্য — নো! এখানে অনেক সুগার থাকে আর এটা হেলদি ও না, তুমিই খাও
দিয়া — ধুর বাবা! ডাক্তারকে বিয়ে করা এতো যন্ত্রণা আগে জানলে বিয়ে করতাম না, কথায় কথায় শুধু হেলথ হেলথ কেনো করো হুমম? সব ব্যাপারে এসব খাটে না বুঝলে?
আদিত্য — আমাকে এসব বলে লাভ নেই কারণ আমি খাবো না
দিয়া — আদিত্য ইটস মাই বার্থডে, আমাদের মধ্যে না সব ঠিক হয়ে গেলো? তারপরও এরকম করছো? একটু খেতেই হবে তোমাকে
আদির কোনো বারনই শুনলো না দিয়া, জোর করে ওর মুখে পুরে দিলো, আদির ও আজকে রাগ হচ্ছে না বরং দিয়ার এই ছেলেমানুষী জিনিসটা এখন উপভোগ করতে শুরু করেছে ও..হুট করেই ওর অন্তরাত্মা যেনো ওকে প্রশ্ন করে ফেললো “ভালোবেসে ফেললে নাকি?”.. যে দিয়ার দিকে দেখলেই আদির রাগে শরীর জ্বলে যেতো আজকে তাকেই যেনো একটু বেশি ভালো লাগছে..কেনো এমন হচ্ছে? আচ্ছা এটাই ভালোবাসা নয় তো? দিয়া নিজেই আদির সাথে অনেক কথা বলছিলো, হঠাৎ ওকে থামিয়ে দিয়ে আদি বলে ওঠে..
আদিত্য — একটা কথা বলবো দিয়া?
দিয়া — কি? (ভ্রু কুঁচকে)
আদি একটু এগিয়ে এবার একেবারে দিয়ার গা ঘেঁষে বসে, কিছুটা কেপে ওঠে দিয়া, অবাক চোখে তাকায় আদির দিকে..
আদিত্য — দেখো আমার করা ভুলগুলো নতুন মনে করতে চাইনা, শুধু একটাই আবেদন আছে যদি তুমি চাও তাহলেই সম্ভব
কিছুটা কাপা কাপা কণ্ঠে দিয়া বলে..
দিয়া — ক..কি?
শুকনো একটা ঢোক গিলে আদি বিনা দ্বিধায় বললো..
আদিত্য — আমাদের সম্পর্কের শুরুটা খুব একটা ভালো ছিলো না..তোমাকে সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ছিলো আমার কিন্তু লাস্ট কিছুদিনে নানানভাবে তোমাকে জানার চেষ্টা করেছি আমি, বুঝতে চেয়েছি..তখন বুঝলাম আমি কতোটা ভুল ছিলাম, আর এটাও উপলব্ধি করেছি তুমি ছাড়া আমার জন্যে পারফেক্ট আর কেউ না..তাই হয়তো মা তোমাকে আমার জন্যে চুজ করেছিলো বাট আনফরচুনেটলি আমি সেটা না বুঝেই তোমাকে ভুল বুঝেছি.. আই অ্যাম সরি
দিয়ার চোখদুটো পানিতে টলটল করছে, আদির মুখ থেকে এই কথাগুলো শোনার জন্যে কতদিন অপেক্ষা করেছে..দিয়ার একটাই চাওয়া ছিলো আদি ওকে বুঝুক, আপন করে নিক! অবশেষে সেই দিন এসেই গেলো..ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠেছে ঠিকই কিন্তু দিয়ার চোখের কোন বেয়ে পানি এবার গড়িয়ে পড়ছে, আদি সযত্নে ওর চোখের পানি মুছে দেয়..
আদিত্য — উহুম..! আর না..অনেক কষ্ট দিয়েছি এবার শুধু হ্যাপিনেস গিফট করতে চাই তোমাকে.. আমরা কি একবার নতুন করে শুরু থেকে সবটা কি শুরু করতে পারি? জানি অনেক অভিযোগ আছে তোমার আমার ওপর, বাট আই প্রমিজ এবার আর অভিযোগের সুযোগ দেবো না
এবার আর কান্না ধরে রাখতে পারলো না দিয়া, আদির কাধে মাথা রেখে কান্না করে দিলো, অনেক সাধনার পর এই প্রাপ্তিতে এক বিশেষ শান্তি পাচ্ছে মেয়েটা..কান্না করতেই করতেই দিয়া আদির হাতের মধ্যে আস্তে আস্তে করে কয়েকটা বারি দিয়ে বলে..
দিয়া — এত সহজ নাকি সব ভোলা? আমি ক্ষমা করবো না তোমাকে, মগের মুল্লুক নাকি? কি ভেবেছো মিষ্টি হেসে বলবে আর আমি ক্ষমা করে দেবো তোমাকে? মোটেই না
মুচকি হেসে দিয়ার হাতটা ধরে আদি..দিয়ার কান্না আজকে থামাতে চায় না ও, আজ যতো ইচ্ছে কাদুক, নিজেকে কথা দিয়েছে আদি যে এরপর ওর চোখে আর পানি আসতে দেবে না..
আদিত্য — ক্ষমা করবে না আমাকে?
দিয়া — নাহ! খুব খারাপ তুমি! খুব খারাপ!
আদিত্য — আচ্ছা যাও, করতে হবে না ক্ষমা! তুমি ক্ষমা না করলেও আমি তোমাকে ছাড়বো না
দিয়া — আমি গেলে তো তুমি আমাকে ছাড়বে!
দুজনেই এরপর কিছুক্ষণ নিরব থাকে…আজকে যেনো সময় একটু দ্রুতই পার হয়ে গেলো, কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেলো টেরই পেলো না দুজনে..সূর্যাস্ত দেখেছে আজকে দুজনে একসাথে..এই সূর্যাস্তের সাথে অতীতের সব খারাপ স্মৃতিগুলোও মন থেকে বিলীন করে দিয়েছে দুজনেই..নাহলে নতুন সূচনা করবে কিভাবে তাইনা?
আদিত্য — আচ্ছা শোনো, কালকে আমরা সানরাইজ দেখবো একসাথে ওকে?
দিয়া — হুমম!! আচ্ছা আদিত্য, আমি আজকে তোমাকে কিছু বলতে চাই, এতদিন তো বলার সাহস করে উঠতে পারিনি!
আদিত্য — হুমম বলো
একটা লম্বা শ্বাস নিলো দিয়া, প্রকৃতির শীতল হাওয়ায় মনটা জুড়িয়ে নিয়ে বলেই ফেললো মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা না বলা কথাটা…
দিয়া — আই লাভ ইউ..!!
আদি মুচকি হাসলো, ও ভালোভাবেই জানতো দিয়া ওকে ভালোবাসে কিন্তু কোনোদিন সেভাবে প্রকাশ করেনি, আজকে ওর মুখে এই তিনটে ম্যাজিকাল ওয়ার্ড শুনে এতটা ভালো লেগেছে ওর যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না..
আদিত্য — হুমম! চলো বাড়ি যাই এবার?
দিয়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে আদির কাধ থেকে মাথা তুলে তাকালো..
দিয়া — বাড়ি যাবো কি? আমি যে বললাম তুমি উত্তর দেবে না?
আদি ঠোঁট উল্টে বললো..
আদিত্য — বলাটা খুব জরুরী নাকি?
দিয়া — তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাইনা?
আদিত্য — সেটা কখন বললাম?
দিয়া — তাহলে বলো ভালোবাসো
দিয়ার ডান হাতটা আদি নিজের দু হাতের মুঠোয় নিয়ে ছোটো একটা চুমু দিলো..
আদিত্য — ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করার বিষয় না, মন থেকে অনুভব করতে হয়..আমি সেটাই করছি..মন থেকে তোমাকে চাইছি, আর কি চাই?
দিয়া — না না তোমাকে বলতেই হবে..!
আদিও সুযোগ ছাড়তে চাইলো না, উঠে দাড়ালো..দিয়ার হাতদুটো ধরলো, তারপর ওর চোখে চোখ রেখে বলেই দিলো…
“আমার বেরঙ জীবন রঙিন করা
সাতরঙা আলোয় সাজিয়ে দেওয়া
হৃদয় মরুভূমিতে বৃষ্টি নামানো সেই হৃদ্মমোহিনী তুমি..
হুমম, তোমাকে আমিও ভালোবাসি..
হয়তো তোমার মতো না, তবে হ্যা অনেকটাই ভালোবাসি”
লজ্জায় লাল হয়ে গেলো দিয়া, লোকটা যে এতো রোমান্টিক ভাবে নিজের মনের কথা তুলে ধরতে পারে জানাই ছিলো না..মুচকি হেসে মেয়েটা মুখ লুকায় আদির বুকে, আদিও পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে দিয়াকে..দুজনেই চোখ বন্ধ করে একে অপরের হৃদকম্পন অনুভব করতে লাগলো, আহা..সে কি মধুর মুহূর্ত..! আচ্ছা সব মুহূর্ত তো আর ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না তাইনা? কিছুটা না হয় ব্যাখ্যাহীন থাক!
সমাপ্ত