#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-১৪,১৫
Sadia afrin nishi
১৪
সময় নিয়মের দাস আর মানুষ অভ্যাসের।সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় মানুষের জীবন।অভ্যাসগুলো পরিপূর্ণ জায়গা ধারণ করে। সাক্ষর এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।দু’জন দু’জনের পরিপূরক।দুজন দুজনকে ছাড়া একসমবিন্দু পরিমাণ ভাবনা মাথায় আনতে পারিনা।এই কাঠখোট্টা, রাগী লোকটার মাঝে যে কখন নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম বুঝতেই পারিনি।এখন আর বলতে দ্বিধা নেই খুব ভালবেসে ফেলেছি আমি আমার রোবটম্যানকে।
কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।সাক্ষর অনেক আগেই রেডি হয়ে বসে আছে।বর্তমানে তার চক্ষুদ্বয় ফোনে নিবদ্ধ। আমি সম্পুর্ণ রেডি হয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গলাটা খাঁকারি দিয়ে বললাম,,
_”হয়ে গেছে আমার। চলুন তাড়াতাড়ি ”
সাক্ষর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল,,
_হুম চলো চলো
_আচ্ছা শুনুন না একটা কথা রাখবেন প্লিজ?
_কী কথা বলো, রাখার চেষ্টা করবো?
_আপনি রোজ এমন মাস্ক পরে কেন থাকেন বলুন তো।আজকে আপনার মাস্ক পড়া কিছুতেই চলবে না। আমার সব ফ্রেন্ডরা আপনাকে দেখতে চায় কিন্তু আমি দেখাতে পারি না। প্লিজ ওটা খুলে ফেলুন।
অনেক আকুতি ভরা কন্ঠে কথাগুলো বললাম। তবুও তার ওই পাষান মন গলাতে পারলাম কী না বুঝতে পারছি না।
সে বেশ কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন,,
_দেখো আমি এভাবে কেন থাকি, কী আমার পেশা,কী আমার পরিচয় সবকিছু তোমাকে আমি বলবো তবে তারজন্য তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে সবটা জানাব।আর তখন মুখ খুলেই সব জায়গায় যাতায়াত করব।এখন চলো প্লিজ লেট হচ্ছে তো।
আমি তার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনলাম। তার বলা প্রতিটি কথাই আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ফেলি।আজও ঠিক তাই করলাম। অগত্যা দু’জনে বেরিয়ে পরলাম গন্তব্যে।
————–
কলেজ থেকে হাসোজ্জল মুখ নিয়ে বের হলাম। আমার সাকসেসে মিতালীও অনেক খুশি।
দু’জনে মিলে ঠিক করলাম এই মুহুর্তটা সেলিব্রেট করবো।যেই ভাবা সেই কাজ দু’জনে চলে গেলাম ফুচকা স্টলে।সেখান থেকে ফুচকা খেয়ে তারপর গেলাম আইসক্রিম পার্লারে। ফুচকা, আইসক্রিম শেষ করে দু’জনে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রহনা দিলাম।
আজ সাক্ষর আমায় নিতে আসতে পারে নি।তার নাকি কী জরুরি কাজ পড়ে গেছে।এই সুযোগে আমি আজ রিকশা করে বাড়ি ফিরছি।রিকশায় বসে আপন মনে ভেবে চলেছি সাক্ষরকে সারপ্রাইজ টা কীভাবে দিবো/ও কেমন রিয়েক্ট করবে/ খুশি হবে তো /এমন হাজার প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।সবকিছু মনের মধ্যে সাজিয়ে নিয়েছি এবার শুধু রাত নামার অপেক্ষা।
সারাদিন অপেক্ষার পর ধরনীর বুকে এখন মধ্য রাত।কিন্তু আমি তো মধ্য রাতের জন্য অপেক্ষা করছিলাম না। আমি তো অপেক্ষা করছিলাম রাতের প্রথম প্রহরের জন্য। ধুর ভাল্লাগে না আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। কোথায় ভাবলাম সাক্ষরকে সুন্দর করে গুছিয়ে সারপ্রাইজ টা দিবো কিন্তু সেই ঘুমিয়ে পরলাম। সন্ধ্যার পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম ঘড়ির কাঁটায় কখন রাত বারোটা বাজবে।অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এলো বুঝতেই পারিনি।
বারোটা পেড়িয়ে এখন রাত তিনটা বেজে দশ মিনিট। সময় না হয় পেরিয়ে গেছে কিন্তু সাক্ষর কোথায়। এত রাতে কোথায় গেল। আজকেও ঠিক আগের দিনের মতো পুরো বাড়ি খুঁজেও তাকে না পেয়ে চলে গেলাম সেই তালাবদ্ধ ঘরটির কাছাকাছি। হুম আজও সাক্ষর হয়তো এখানেই আছে। আমি আজ যে করেই হোক ওই ঘরে প্রবেশ করবোই করবো কিন্তু কীভাবে করব? হুম পেয়ে গেছি আইডিয়া।
ওই রুমের কাছাকাছি দাড়িয়ে একটা ফুলদানি খুব জোরে মেঝেতে ছুড়ে দিলাম। তারপর দেওয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। কিছুসময় পরই ওই রুম থেকে সাক্ষর বেড়িয়ে এলো।সে কিছুটা সামনে গিয়ে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।ব্যাস,এই সুযোগে আমি ঢুকে গেলাম ঘরটির ভেতরে।কী জানি সাক্ষর এখন কী করছে।যদি সে আমাকে খুঁজতে এখন রুমে যায় তাহলে কী হবে? ধুর যা হয় হবে আগে ভেতরে কী আছে তা তো দেখি।
ছোট্ট একটা বারান্দা পেড়িয়ে প্রবেশ করলাম গুপ্ত কক্ষে। ডিম লাইটের আলোয় আবছায়া চারিপাশ।খুব সাবধানে পাঁ ফেলছি আমি।পেছন থেকে দরজার শব্দ পেতেই তাড়াতাড়ি দেওয়ালের সাথে চেপে দাড়িয়ে পড়ি আমি।হয়তো সাক্ষর চলে এসেছে। এখন আমার কী হবে।
এক চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকছি।হঠাৎই সাক্ষর আমায় পাশ কাটিয়ে সোজা সামনে চলে গেল।সে হয়তো আমাকে লক্ষ্য করে নি।ডিম লাইটের আলোয় বুঝতে পারছি সে কিছু একটা খুলছে। একটু পর যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সাক্ষরের সামনে একটা লাশ।ঠিক ওইদিনের লাশটার মতো।এক মুহূর্তে আমার পৃথিবী কেমন থমকে গেল।কান দিয়ে গরম ছোঁয়া বের হতে চাইছে,হাত-পা অবশ হয়ে আসছে,জ্ঞান হারাবো মনে হচ্ছে।কিন্তু না আমাকে এখন স্ট্র থাকতে হবে। জ্ঞান হারালে চলবে না।নিজেকে অনেকটা কন্ট্রোল করে শক্ত হয়ে দাড়ালাম। আমাকে পুরো সত্যি জানতে হবে, জানতে হবেই। সদ্য পদার্পণ করা প্রফেশনকে আমি অবজ্ঞা করতে পারি না। আমার প্রফেশনের থেকে কখনোই আমার পারসোনাল লাইফ ইম্পরট্যান্ট হতে পারে না। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পুরণ করেছি। আমি আমার বাবার আদর্শেই চলব।সত্যি যতই কঠিন হোক না কেন তার সম্মুখীন আমাকে হতেই হবে। আমি শাস্তি দিবো। নিজ হাতে অপরাধীকে শাস্তি দিবো। সে যতই আমার অন্তরের অংশবিশেষ হোক না কেন। অপরাধ করলে তাকেও শাস্তি পেতেই হবে।
লাশের সামনে বসে ফোন কানে নিয়ে সাক্ষর কাউকে একটা কল করল।সাথে সাথে এই রুমে অবস্থিত অন্য একটি দরজা খুলে রুমে প্রবেশ একজন যুবক।এই গুপ্ত কক্ষে যে আরও কামরা আছে এটা আমার অজানা ছিল।আরও কী কী আমার জানার বাহিরে আছে তা শুধু ওপর ওয়ালাই জানেন।
সাক্ষর উদ্বিগ্ন কন্ঠে যুবকটির উদ্দেশ্যে বলল,,
_”রিফাত এই লাশটাও আগের লাশগুলোর সঙ্গে নিয়ে রাখ।এই প্রত্যেকটি লাশের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। খবরদার একটা লাশও যেন এদিক ওদিক হয় না।”
এবার বুঝলাম যুবকটির নাম রিফাত। রিফাত সাক্ষরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু মাথা নাড়াল।যার অর্থ হ্যাঁ।তারপর লাশটা টানতে টানতে অন্য রুমে নিয়ে গেল।রিফাত চলে যেতেই সাক্ষর উঠে এই কক্ষের এক কোণে অবস্থিত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।হয়তো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। এই সুযোগে আমি তাড়াতাড়ি এই ঘর থেকে বেড়িয়ে পরলাম। ঘরের দরজা হালকা ভেড়ানো ছিল।সাক্ষর হয়তো তাড়াহুড়োতে দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিল। ভালোই হলো নয়তো এখন আমার বেরনো মুশকিল হতো।
—————
বেলকনির ডিভানে বসে দু-হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছি।সাক্ষর অনেকক্ষণ হলো ঘরে এসেছে।সাক্ষর ঘরে ল ঢুকতেই আমি ঘুমের ভান ধরে পড়েছিলাম
।ও খুব চুপিসারে এসে আবার আগের মতো আমার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ও ঘুমিয়ে যেতেই আমি খুব সন্তর্পণে উঠে এসে বেলকনির ডিভানে গাঁ এলিয়ে দেই।
আমার জীবনটা সবদিক দিয়ে বিষাক্ত। ছোট থেকে একটার পর একটা খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। যখনই একটু সুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি ঠিক তখনই কালবৈশাখীর আগমন।এক ঝাপটায় তছনছ হয়ে যায় সবকিছু। ভেবেছিলাম আজকের রাতটায় খুব বড় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিবো সাক্ষরকে কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।এমন সারপ্রাইজ পাবো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। আমিও তোমাকে ঠিকই সারপ্রাইজ দিবো মি.সাক্ষর আহমেদ তবে আমার এবারের সারপ্রাইজ টা হবে একটু ভিন্নরকম। একজন আইনের সঙ্গে নিযুক্ত কর্মকর্তা হয়ে কখনোই তোমার অপরাধকে আমি প্রশয় দেব না। খুব শীঘ্রই জনসম্মুখে এক্সপোজ করবো তোমাকে।
চলবে,
#শরতে_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(১৫)
Sadia afrin nishi
___________________________
পুরো পুলিশ ফোর্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমাদের বাড়ির ড্রইংরুমে। আমাদের সামনেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাক্ষর। কাল রাতটা কোনোরকম পেরতেই আমি সকাল সকাল প্রশাসনে বিস্তারিত ঘটনা জানাই।তারা সবাই আমার আইডি কার্ড চেক করে আমার বলা কথার সত্যতা যাচাই করতে চলে এসেছে। সাক্ষরের মুখে হাসি নেই হয়তো ভীষণ চিন্তিত সে।এই সময়ে এই বাড়িতে পুলিশ হয়তো আশা করে নি সে। পুলিশের সর্বাপেক্ষা উচ্চ পদবিশিষ্ট কর্মকর্তা আইপিএস অফিসার মাইনুল হাসান সাক্ষরের দিকে এবার প্রশ্নের তীর ছুড়লেন,,
_” মি.সাক্ষর আহমেদ আপনার বাড়িতে নাকি বর্তমান সময়ের বহুল ভয়াবহ চিত্তে বর্ণিত খুনের লাশগুলো রক্ষিত রয়েছে। কিন্তু কেন আপনি একজন প্রশাসনের সেবক হয়ে প্রশাসনের থেকে এসব গোপন করলেন।তাহলে কী ধরে নেব এই খুন এবং লাশ মর্গ থেকে সরানোর সবরকম কার্যক্রম আপনার অর্ডারে সম্পাদন হয়েছে?”
সাক্ষর পুলিশের মুখ থেকে এমন কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল,,
_”নো নো নো স্যার, নো স্যার, আমি জানি আমি আমার এখতিয়ারের বাহিরে গিয়ে এসব করে ফেলেছি তবে আমি চেয়েছিলাম এই কেসটার পুরোপুরি তদন্ত করে তারপর সবাইকে জানাতে”
সাক্ষরের জবাব শুনে পুলিশ অফিসার হতাশ ভঙ্গিতে বললেন,,
_আপনার মতো একজন দক্ষ “সিক্রেট পুলিশ এজেন্ট” কর্মকর্তার কাছে এহেন ভুল কাম্য নয়। আমরা যা দেখছি তাতে সন্দেহের তীর আপনার দিকেই ওঠে। আইনের নিয়ম নিশ্চয়ই আপনাকে শিখিয়ে দিতে হবে না। তাই বলছি ইচ্ছে না থাকা সত্বেও আপনাকে আমরা আইনের আওতায় এনে আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বাধ্য হচ্ছি।সাময়িক সময়ের জন্য আপনার পেশা থেকেও আপনাকে সাসপেন্ড করা হলো। যথাযথ প্রমাণ দিতে পারলে অবশ্যই আইন আপনাকে আপনার আগের সম্মান ফিরিয়ে দেবে।আর যদি প্রমাণ হয় আপনিই দোষী তাহলে তো জানেনই কী হবে। আবার বলছি আমরা ডিপার্টমেন্টের কেইউ আপনার মতো একজন দক্ষ পুলিশ অফিসারকে হারাতে চাই না। তাই আমাদের জন্য হলেও আপনাকে নিজের প্রমাণ করতে হবে। আমাদের হাত পা বাঁধা আপনাকে নিয়ে যেতেই হবে।
সাক্ষর একজন ” সিক্রেট পুলিশ এজেন্ট ” এটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।একজন আইনের রক্ষক হয়ে সে কী করে এতটা জঘন্য কাজ করতে পারল।ছিস কতটা বিকৃত মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ হলে এমন জঘন্য ভাবে কাউকে হত্যা করতে পারে। ছিস ছিস ছিস……
সাক্ষর অফিসারের কথায় আর কোনো দিরুক্তি না করে সোজাসুজি বলে দিল,,
_”হুম বুঝতে পারছি আপনাদের অপারগতা। তবে ভুলটা যখন আমারই তখন তা প্রমাণ করার দায়িত্বও আমার ওপরই বর্তায়। আমি প্রস্তুত আইনের আওতায় গিয়ে শাস্তির সম্মুখীন হতে কিন্তু আমার একটা বিষয় জানার আছে? ”
অফিসার তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করল,,
_”কী বিষয় বলুন ”
সাক্ষর–আসলে এত সকালে আপনারা আমার বাড়িতে এসে এসব নিয়ে কথা বলছেন তারমানে আপনাদের কাছে কেউ কোনো ইনফরমেশন দিয়েছিল।কাইন্ডলি আমার ওটাই জানার ছিল।কে এই ইনফরমার। যে কী না সাক্ষর আহমেদের ওপর নজরদারি করছে?
অফিসার–সে আর কেউ না আপনারই স্ত্রী এবং সদ্য জয়েনকৃত আইন কর্মকর্তা “ডিটেকটিভ নীহারিকা আহমেদ”
আমার নামের সাথে ডিটেকটিভ পদকটার অর্থ বিশ্লেষণে বেশ বেগ পেতে হলো সাক্ষরকে।সে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইল আমার মুখপানে।তার এই দৃষ্টি আমার কাছে আজ বরই অমূল্য। আমি ঘৃন্ন্যিত চাহনি নিয়ে মুখ ঘুরালাম অন্য পার্শ্বে।এই লোকটার মুখ দেখাও পাপের সমতুল্য বলে মনে হচ্ছে।
অফিসার তারা দিতেই সাক্ষর ওই তালাবদ্ধ ঘরের দরজা খুলে প্রত্যেকটি লাশ বের করে নিয়ে এলো।তার সাথে এলো রিফাত নামের ছেলেটি। মোট সাতটি লাশ।লাশগুলো আবার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হলো।সাক্ষর আর রিফাতকে নিয়ে যখন পুলিশ বেড়িয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই সাক্ষর আমার অতি নিকটে এসে আমার দুহাত নিজের দু’হাতে আগলে নিয়ে করুন দৃষ্টিতে বলল,,
_”বিশ্বাস করো নীহুপাখি আমি নির্দোষ। তুমি যা দেখেছ তা পুরোপুরি সত্যি নয়। আমার কথাটা প্লিজ বিশ্বাস করো”
আমি তার হাতের বন্ধন থেকে নিজের হাতটা ঝাড়া মেরে ছুটিয়ে নিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বললাম,,
_”বিশ্বাস তাও আবার আপনাকে।আপনি একটা প্রতারক, খুনি। জঘন্য মানুষ একটা। মুছে ফেলেছি আমি আপনাকে আমার মন থেকে। দুর হয়ে যান এখান থেকে।মুখ দেখতে চাই না”
আর কিছু বলতে পারলাম না। দুচোখ ভিজে উঠল নোনাজলে কিন্তু এই জল তার দেখার যোগ্যতা নেই তাই ঝটপট লুকিয়ে ফেললাম নিজের ওরনার আঁচলে।
সাক্ষরকে নিয়ে চলে গেল। পুলিশের গাড়ি যখন চলতে শুরু করল তখন কোথাথেকে সেই পুলিশ অফিসার এসে হাজির হলেন আমার সম্মুখে। উনি হয়তো বাইকে চড়ে যাবেন।কিন্তু আমার কাছে আসার হেতু আমার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। আমি বিষ্মিত চোখে চেয়ে আছি।আমার তাকানোর ধাঁজ বুঝতে পেরে অফিসার বললেন,,
_”ঘাবড়ানোর কিছু নেই।আমি শুধু একটা কথা বলতে এসেছি আপনার কাছে। আর সেটা হলো,
আপনার স্বামী মানে সাক্ষর আহমেদ তিনি একজন সিক্রেট পুলিশ কর্মকর্তা। অতীতে তার কাজের প্রচুর সুনাম রয়েছে। তার দ্বারা এমন কাজ আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।সে হয়তো আসলেই নির্দোষ।কিন্তু আপনি হয়তো তার এই পেশা সম্পর্কে অবগত নন এবং তিনিইও হয়তো আপনার পেশা সম্পর্কে অবগত নয় তা আপনাদের কথার ভাঁজে প্রকাশিত। যাই হোক আসল কথায় আসি। আমি বুঝতে পারছি আপনার মানসিক অবস্থা এখন ততটা ভালো নয় তবুও বলবো আমি চাইলে এই কেসের তদন্ত ভাঁর আমি আপনার হাতে হস্তান্তর করতে পারি। আমার কাছে এটাই ঠিক মনে হচ্ছে। এখন ডিসিশন আপনার। আপনার স্বামীর জীবন এখন অনেকটাই আপনার ওপর নির্ভরশীল। আচ্ছা এখন তাহলে যাই, ভেবে দেখবেন কিন্তু আমার কথাটা।”
————————————————————-
বাড়িটা পুরো শূন্য শূন্য লাগছে। শুধু বাড়িটা নয় আমার বুকের বা পাশটাও আজ বরই বেরঙ। নাওয়া খাওয়া ভুলে এই দুদিন কেমন জানি নিশাচরী প্রাণীদের মতো বাড়িময় ঘুরে বেড়ানোই আমার বর্তমান পেশা।আমি যে একজন ডিটেকটিভ তা হয়তো আমি নিজেই ভুলতে বসেছি। এভাবে আর কতদিন।কিছুই ভালো লাগে না। এক মন বলে সাক্ষর অপরাধ করেছে, অন্যায় করেছে আমার সাথে কিন্তু পরক্ষণেই আরেক মন বলে সবকিছু ভুলে সাক্ষরকে মুক্ত করা দরকার। সবকিছু নতুন করে শুরু করা দরকার। সব রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু খুঁজে বের করা দরকার।
————————————————————-
আজ তিনদিন পর ছাদে এলাম।গাছগুলো সঠিক পরিচর্যার অভাবে কেমন নেতিয়ে পড়েছে। মানুষও হয়তো এমনি।পরিচর্যা বিনা মরিচা ধরে যায়।এই তিনদিন সাক্ষরের একটি খোঁজও আমি নেই নি। পাহাড়সম অভিমান জমা হয়েছে হয়তো। অভিমানের রেশ এতটাই বেশি হয়েছে যে তা থেকে বেড়িয়ে রহস্য উন্মোচন করাটা আমার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য।তবুও আমাকে পারতেই হবে।
আজ ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে এসেছিল তখন একটা দুঃস্বপ্ন দেখে সাথে সাথেই ঘুম ছুটে যায়।স্বপ্নে দেখেছি সাক্ষর খুব বিপদে আছে আমাকে ডাকছে সাহায্যের জন্য। এতটুকু দেখেই ধরফরিয়ে উঠে পড়ি ঘুম থেকে। তারপর থেকে নিজের মনকে স্থির করে নিয়েছি, যে করেই হোক সাক্ষরকে আমি মুক্ত করবোই।আমি তাকে নির্দোষ প্রমাণ করবোই। তাকে বিপদে ফেলার পেছনে যখন আমার অপদান সবথেকে বেশি তাহলে তাকে বিপদমুক্ত করার পেছনে নাহ একটু হলেও আমার অবদান থাকুক।মান অভিমানের খাতা বন্ধ করে এবার হাঁটব শুধু সত্যের সন্ধানে। মান অভিমান না হয় পরে মেটাবো।
কোনো রকমে গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে একটা সাদামাটা কাপড় গাঁয়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লাম থানার উদ্দেশ্যে।ঘড়ির কাটায় এখন সকাল এগারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। এক টা অব্দি আসামিদের সঙ্গে দেখা করার সময় নির্ধারণ করা। রিকশা এগিয়ে যাচ্ছে শহরের জনবহুল এলাকার রাস্তা ধরে। আমি বারকয়েক হাত ঘড়িটার কাটায় নজর বোলালাম।তাড়াতাড়ি পৌঁছনোটা খুব জরুরি। সাক্ষরের থেকে সবটা জেনে তারপর আমাকে ইনভেস্টিগেশন স্টার্ট করতে হবে।আমার নিজেরই তো এখনো অনেক কিছু ক্লিয়ার হওয়া বাকি আছে।
চলবে,