#লেডি_হ্যাকারের_সাইকোগিরি,০৮,০৯
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৮
–তোরা কি আমায় পরী মনি পেয়েছিস,যে ধর্ষনের নামে গুঞ্জন উঠিয়ে চারদিন যাবৎ মুখ বন্ধ করে মিডিয়ার সামনে কান্না কাটি করবো?তাহলে তোরা ভুল ভাবছিস।কারন আমি সেই রকম পাবলিক না।আমি হলাম সেই “Z”যে কিনা নিজের যুদ্ধ নিজে একাই লড়তে পারে।তোরা আমার কপালে গান ঠেকিয়েছিস তো কি হয়েছে,মনে রাখিস সেই গান উল্টো করে ঘুরিয়ে দিয়ে তোদের শ্বাসনালী আঁটকে দেওয়ার ক্ষমতা এই ” Z” রাখে…..
.
আকাশ হাসি থামিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এদিকে
লেডি-হ্যাকারের এসব দেখে খুশিতে নাচতে শুরু করে!সে সাথে সাথে কন্ট্রাক্ট কিলারকে আদেশ করে যে গান পয়েন্ট করতে।কিন্তু কন্ট্রাক্ট কিলার কোনো সাউন্ড করে না।আর করবেই বা কি করে,কারন সে তো ভয়ে দৌড় দিয়ে বহু আগেই পালিয়ে গেছে!লেডি-হ্যাকার মানে”M.B.Z”কে হটাৎ করেই “Z” এর ডিভাইস থেকে বের করে দেয়।কারন এদিক থেকে আকাশ এর ডিভাইস অটো লগআউট হয়ে গিয়েছে।এই দৃশ্য দেখে”M.B.Z”এর খোশমেজাজি মন টা মুহূর্তের মধ্যেই রাগান্বিত হয়ে যায়!সে সজোড়ে চেঁচাতে শুরু করে কন্ট্রাক্ট কিলারে উপরে গান পয়েন্ট গান পয়েন্ট বলে।
কিন্তু সেই কন্ট্রাক্ট কিলার তো”Z”এর ভয়ে আজো দৌড় কালো দৌড়।
.
এদিকে আকাশ শান্ত মাথায় রুম থেকে বের হয়।
রুম থেকে বের হয়ে সেই রুমে চলে যায়,যেখানে তাঁকে শুরুতে এনে রাখা হয়েছিলো।সেখানে কন্ট্রাক্ট কিলারের টিমের দু’জন মানুষ সবাইকে গার্ড দিচ্ছিলো।তারা আকাশকে দেখে বলে উঠে….
–এই তুই এই রুমে কেন?
একবার যাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে,তাঁকে তো অন্য একটা রুমে রাখার কথা ছিলো।কিন্তু তুই এখানে কি করছিস?
.
আকাশ তার কথার কোনো উত্তর দেয় না।শুধু গালটা বাকা করে একটা হাসি দেয়।আকাশ কোনো উত্তর না দেওয়ায় সেই দু’জন থেকে একজন এগিয়ে এসে আকাশের কপালে গান ঠেকিয়ে ধরে।আর বলে….
–কিরে তোকে একবার কথা বললে কি কানে যায় না নাকি?
.
এবার আকাশ মুখ খুলে…
–কি মরার শখ গজিয়েছে?
–এই বেটা কি বললি তুই!তোকে তো আজকে শেষ করে দিব।কত্তো বড় সাহস তুই আমাদেরকে ধামকি দিস!
–আরেহ পাগলা থাম।এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছুই নেই।আমার কথাটা আগে শান্ত মাথায় শোন।দেখ তোদের লিডার এই আমার কিছু করতে পারেনি,আর সেখানে তোরা তো দুধের বাচ্চা।সো আমি বলি কি জানিস,তোরাও লিডারের মতন দৌড়ে পালা।না হয় কিন্তু মুখ থাকবে কিন্তু কথা বলার অবস্থায় থাকবি না তোরা।
.
আকাশের কথা শুনে দুজনেই ভয় পেয়ে যায়!কিন্তু তাও সাহস নিয়ে একজন বলে…
–এই লিওন তুই দাঁড়া।আমি ওদিকটায় দেখে আসছি।
.
লিওন সবার দিকে গুলি তাক করে ধরে আছে।আর বাকি একজন বাহিরে দেখতে গেছে।সেই সময় সে দেখতে পায় সারা ফ্লোরের উপরে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে!সে এবার ভয় পেয়ে যায়!আর দৌড় দিয়ে সেই রুমটাতে চলে আসে,যেখানে সে এতোটা সময় ছিলো।
তারপর সে লিওনকে বলে…
–লিওন বাহিরের সারা ফ্লোরে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তুমিও একটু আসো তো….
.
এবার সে লিওনকে সাথে নিয়ে রুম থেকে বের হয়।
লিওন ও ভয় পেয়ে যায় রক্ত দেখে!তার উপরে তাঁদের লিডার এবং কারোর এই কোনো সাড়াশব্দ নাই!লিওন আর বাকি যে আছে,সে মিলে কোথা থেকে রক্ত আসছে আর কিসের রক্ত তা তালাশ করতে থাকে।তারা তালাশ করতে করতে দেখতে পায় রক্তের মাঝে কোনো একজন মানুষের পায়ের ছাপ।কেউ একজন রক্তের মাঝে পাড়া দিয়েছে।আর সেই ছাপটা একটা রুমের দিকে গেছে।তারা সেই পায়ের ছাপ অনুসরণ করতে করতে সেই রুমটাতে যায়।সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায় তারা যেই রুমটাতে এসেছে সেটা একটা কিচেন রুম।আর পয়ের ছাপ এই রুমটাতে এসে শেষ হয়ে গিয়েছে।তার মানে কেউ একজন রক্তের মাঝে পাড়া দিয়ে এই রুমে এসেছে।তখনি লিওয়ের নজর যায় বেসিনের নিচে একটা ছোট করে খালি জায়গা আছে সেটার দিকে।সে দেখতে পায় তাঁদের লিডার সেই
খালি জায়গাটায় ঘাপটি মেরে বসে গিড়গিড় করে কাপছে!এটা দেখে লিওন আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়!লিওয়ের সাথে তার সহযোগী যে আছে,তারো চোখ পড়ে ঠিক একই জায়গায়!দুজনেই ব্যাপক ঘাবড়ে যায় লিডারের এমন অবস্থা দেখে!
–বস আপনি এখানে কেন…
–“Z”
–মনে কি বস?
–মানে হলো আমরা যাদেরকে তুলে এনেছি,তাঁদের মাঝে “Z” ও আছে।আর সে আমায় মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।
.
বসের কথা শুনে তাঁদের সমস্ত ঘটনা বুঝতে বাকি নেই যে কি হয়েছে!
–বস পালান এখান থেকে।না হয় “Z” আমাদেরকে আস্তো গিলে খেয়ে নিবে।
–তাতেও কোনো লাভ নেই।কারন”Z”আমাদেরকে চাইলে মুহূর্তের মাঝেই মেরে ফেলতে পারে।কারন ডার্ক ওয়েবের সব চাইতে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারের টিম,যার নাম হলো ওভার পাওয়ার,তারা সবাই এই”Z”এর কথা উঠে আর বসে।সেখানে আমরা তো তার কাছে মশা-মাছি।আমরা পালিয়ে গেলেও তার এক কথায় ওভার পাওয়ারের ছেলেপেলে আমাদেরকে মেরে ফেলবে।তাই আমি পালাইনি।না হয় তো বহু আগেই পালিয়ে যেতাম।
–বস এখন কি করবেন?
আমাদের তো মৃত্যু নিশ্চিত মনে হচ্ছে।
–জানি না কি করবো,তবে আমি এটুকু জানি”Z”কাছ থেকে যে করেই হোক ক্ষমা চাইতে হবে।না হয় মৃত্যু নিশ্চিত।
–তাহলে তাড়াতাড়ি চলেন”Z”এর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেই।
–তোরা আগে যা।আমি একটু পরে আসছি।কারন”Z”আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।তাই ভয়ে তার সামনে যাওয়ার মতন সাহস হচ্ছে না আমার।
–বস তো এখন কি করবো আমরা!আমাদের ও তো অনেক ভয় করছে!আমাদের ও যদি মাথা ফাটিয়ে দেয়!
–জানি না কি করবে,কিন্তু তোরা গিয়ে মাফ চা।আর আমিও আসছি তোদের পিছন পিছন চল।
–ঠিক আছে বস…
.
লিওন আর তার দলের বাকি একজন যে আছে,তারা দু’জন আকাশের কাছে মাফ চাওয়ার জন্য এগিয়ে যায়।আর তাঁদের পিছনে রয়েছে তাঁদের বস।আর বাকি আরো যেই সহযযোগীরা ছিলো,তারা বহু আগেই এই জায়গা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।তারা তিনজন এই খালি বাকি আছে এখন।বস এবং বাকি দু’জন গিয়ে আকাশের পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইতে শুরু করে।
কন্ট্রাক্ট কিলারের এমন আচরণ দেখে সেই রুমে যারা যারা ছিলো,সবার চোখ কপালে উঠে যায়!কারন কি ঘটছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না তারা!
.
ভাই আপনি আমাদেরকে মাফ করে দেন।দরকায় হয় গাছ দিয়ে আমার মাথায় আরো দুইটা বাড়ি মারেন,তাও প্লিজ আমাদেরকে মাফ করে দেন।ভাই বিশ্বাস করেন আমরা জানতাম না যে আপনি”Z”।আর “Z” কে আমরা তুলে নিয়ে এসেছি।কারন আমাদের কে যে এই কন্ট্রাক্টটা দেয়,সে আমাদেরকে কিছুই বলেনি।খালি একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলেছে,এই লিস্টের মানুষ গুলোকে উঠাতে হবে।আর আমরা তাই করেছি।ভাই প্লিজ আপনার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি।আপনি প্লিজ আমাদেরকে মাফ করে দেন।লিডার বলতে বলতে ভয়ে যে কান্না করে দিয়েছে।অন্যদিকে বাকি যাদেরকে এই কন্ট্রাক্ট কিলাররা উঠিয়ে এনেছে,তারাও ভয় পেয়ে যায়”Z” এর নাম শুনে!
সবাই গিড়গিড় করে কাঁপতে শুরু করে!এদিকে লিডারের চোখের পানি দেখে আকাশের মায়া লেগে যায়।
–যা এবারের মতন ক্ষমা করে দিলাম।কিন্তু আগামীতে এই একই রকম ভুল করলে আর ক্ষমা পাবি না কিন্তু মনে রাখিস।
–ভাই,ভাই মনে থাকবে।আর কোনোদিন ও এমন ভুল করবো না।
–আচ্ছা আর একটা কথা বল তো,কে তোদেরকে এই কাজের কন্ট্রাক্ট দিয়েছে?তাঁকে কি তোরা চিনিস?
–না ভাই চিনি না।আর যে কন্ট্রাক্ট দিয়েছে সে একটা মেয়ে।তার সাথে শুধু অনলাইন কনফারেন্সে আমাদের কথাই হয়েছে।সে আমাদেরকে পেমেন্ট দিয়ে একটা লিস্ট পাঠিয়ে সবাইকে উঠাতে বলেছি।
–ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।আছা এবার পা ছেড়ে উঠ সবাই।আর এই রুমের মাঝে যারা আছেন সবাই শোনেন।কালো দুনিয়ায় হয়তো আমার নাম সবাই শুনেছেন।কিন্তু বাস্তবে হয়তো এই প্রথমবারই দেখেছেন আমাকে।সো আমি আশা করবো সবাই নিজের মুখে তালা লাগিয়ে দিবেন।কেউ কখনো আমার বর্ননা করবেন না অন্য মানুষের কাছে।ভুল ক্রমে আপনারা আমাকে দেখে নিয়েছেন।সো কেউ যদি মুখ খুলেন,তাহলে তাঁকে ঘর থেকে তুলে এনে জীবিত পুঁতে দিব মাটির নিচে।
তখনহ একজন বলে উঠে..
–না,না ভাই আমরা কিছুই দেখিনি।না আপনাকে দেখেছি,না আপনার বিষয়ে কিছু জানি।
–হুম এইতো গুড বয়।আচ্ছা এবার মুক্ত আপনারা।সো যে যার মতন এখান থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে যান।
আকাশের কথা মতন সমস্ত হ্যাকারা সেই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যে যার মতন বাসায় চলে যায়।তাঁদের পর পর আকাশ ও সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।আর কন্ট্রাক্ট কিলাররা সেই ফ্ল্যাটে বসে বসে শান্তির নিশ্বাস নিচ্ছে।
তখনি লেডি-হ্যাকার মানে”M.B.Z! সেই লিডারকে অনলাইন নাম্বার থেকে ফোন দেয়।কারন লিডার”Z”এর মাইর খেয়ে সেই তখনি ফোন কেটে দিয়ে ভয়ে কিচেন রুমে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো।না হয়তো লেডি-হ্যাকারের কল দ্বিতীয় বার রিসিভ করার প্রয়োজন হতো না।
লিডার ফোনটা রিসিভ করে…
–এই জানোয়ারের বাচ্চা,তোরা সবাই এতোটা সময় কোথায় মরতে গিয়েছিলি হ্যাঁ?আর “Z”কোথায়?আটক করেছিস তাঁকে?
লিডার লেডি-হ্যাকারের কথা শুনে চরম রেগে যায়!কারন তার জন্যই আজকে তাঁদেরকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে!
–এই ছেমড়ি একদম চুপ।না হয় থাপড়াইতে থাপড়াইতে তোর গালের সব কয়টা দাঁত ফালাই দিব আমি।হারামির বাচ্চা টাকা দিয়ে বাঘকে বন্দী করার চিন্তা মাথায় আসে কি করে তোর?জানোয়ার আজ তোর জন্য আমাদের সকলের মরতে হতো।জানোয়ার একদম মেরে তোকে রোডের মাঝখানে এনে শুটকির মতন বাঁশ দিয়ে টাঙিয়ে রেখে দিব।কাকে হুমকি দিস তুই?আর কাকে বন্দী করার ফন্দি এঁটেছিস জানোয়ার?তুই কি জানিস সে কে?শুধু আমি কেন,আমার মতন চৌদ্দ হাজার মানুষ আসলেও তার একটা পশম বাকা করার ক্ষমতা হবে না কারোর।আর তুই সেই মানুষকে বন্দী করার জন্য আমাদেরকে হায়ার করিস জানোয়ার।রাখ তুই ফোন।
.
লিডার ধমকি দিয়ে লেডি-হ্যাকারের মুখের উপরে ফোন রেখে দেয়।
.
এদিকে আকাশ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে সে আছে।তখনি বেহরোজ তার নাম্বারে একটা ম্যাসেজ করে।যে আজ বিকাল চারটা ত্রিশে রানা কমপ্লেক্সের সামনে যেই রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে দেখা করতে।তাঁকে আজকে কারোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।আকাশ তার ম্যাসেজের উত্তরে ছোট করে আচ্ছা লিখে পাঠিয়ে দেয়।
.
বিকাল চারটা বাজতেই বেহরোজ তাঁকে ফোন দেয়।
–কিরে কি করছিস তুই?
–এইতো শুয়ে আছি।
–আচ্ছা রেডি হয়ে রানা কমপ্লেক্সের সামনে যেই রেস্টুরেন্ট আছে সেটাতে চলে আয়।আমিও রেডি হয়ে বের হচ্ছি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
আকাশ রেডি হয়ে বেহরোজের বলা রেস্টুরেন্টে চলে যায়।সেখানে গিয়ে সে দেখতে পায় বেহরোজ আগেই চলে এসেছে।আর তার সাথে একটা লোক বসে আছে।সেই লোকটা আর অন্য কেউ না।সেই লোকটা হলো প্রধান!প্রধান আকাশকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়!আর চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে!আকাশ ও অবাক করা দৃষ্টিতে প্রধানের দিকে তাকিয়ে আছে!
চলবে….?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।
#লেডি_হ্যাকারের_সাইকোগিরি
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৯
বেহরোজ আগেই চলে এসেছে।আর তার সাথে একটা লোক বসে আছে।সেই লোকটা আর অন্য কেউ না।সেই লোকটা হলো প্রধান!প্রধান আকাশকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়!আর চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে!আকাশ ও অবাক করা দৃষ্টিতে প্রধানের দিকে তাকিয়ে আছে!দু’জনের আচরণে পরিবর্তন দেখে বেহরোজ দুজনকেই বলে….
–আরেহ তোমরা এভাবে হতবাক হয়ে আছো যে?
কি হয়েছে আংকেল?
.
প্রধান বেহরোজের কথা শুনে নিজেকে সামলে নেয়।
–নাহ মামনী কিছু না।
–ওহ তাহলে ঠিক আছে।চলো তোমায় আকাশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।আংকেল গতকাল তোমায় একজনের কথা বলেছিলাম না,যে আকাশ নামক একটা ছেলেকে আমি পছন্দ করি।এই ছেলেই হলো সেই আকাশ।আর আকাশ উনি হলেন আমার আংকেল,মানে হলো আন্টি বা খালামনির হাসবেন্ড। পরিচিত হয়ে নে তুই উনার সাথে।
–আচ্ছালামুয়ালাইকুম আংকেল কেমন আছেন..
–এই তো ভালো তুমি কেমন আছো?
–জ্বি-আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো।
–আকাশ জানিস আমার আংকেল অনেক নামি-দামি লোক।তিনি পুরো দেশের আইসিটি বিভাগের প্রধান।
–বাহ মাশাল্লাহ…
যাক খুশি হয়েছি উনার সাথে সাক্ষাৎ করে।
বেহরোজ আকাশের সাথে বকবক করছে।আর আকাশ তার কথার উত্তর দিচ্ছে খালি।নিজ থেকে সে কোনো কথাই বলছে না।আর প্রধান একদম চুপচাপ বসে আছে।কারন তার ভিতরে প্রবল গতিতে তুফান বইছে আকাশকে দেখে!অনেকটা সময় তিনজন রেস্টুরেন্টে বসে কথাবার্তা বলে।তবে প্রধান সব চাইতে শান্তশিষ্ট ছিলো।সে প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা বলেনি।
একটু পর প্রধান চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করে।
–বেহরোজ আমার উঠতে হবে এখন।আসলে কিছুক্ষণ পর আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।তোমরা দুজন বসে আড্ডা দাও।
–আচ্ছা ঠিক আছে আংকেল।
প্রধান উঠে চলে যায়।আকাশ আর বেহরোজ রেস্টুরেন্টে বসে বসে কথা বলছে।
–আচ্ছা আকাশ তোকে একটা কথা জিগ্যেস করার আছে আমার।
–কি কথা?
–তুই আসলে কি করিস?
–মানে বুঝলাম না!কিসের কথা বলছিস তুই?
–মানে হলো তুই পড়ালেখার পাশাপাশি হাত খরচের জন্য কি করিস?
–ওহ আচ্ছা এই কথা..
আমি পড়ালেখার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং করি।
–কিহহহহ সত্যিই তুই প্রোগ্রামিং করিস?
–আরেহ তুই এতোটা উত্তেজিত হচ্ছিস কেন?আমি এখনো নতুন।তবে যেটুকু কাজ শিখেছি,সেটুকু দিয়ে কিছুটা টাকা আসে আমার।যা দিয়ে আমার হাত খরচা উঠে যায়।
–ওহহহ..
আমি তো আরো ভাবলাম তুই প্রোগ্রামিং পাড়িস।
–আরে নাহ,আমি এখনো সেভাবে পারি না।বলতে গেলে একদম নতুন।
–হুম পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করা উচিৎ।না হয় চলতে কষ্ট হয়ে যাবে তোর।
–হুম তার জন্যই তো ওসব শিখছি।
–আচ্ছা চল আজকের মতন বাড়ি যাওয়া যাক।না হয় খালামনি আবার টেনশন করবে।
–হুম চল…
তারপর উঠে বেরিয়ে এলাম রেস্টুরেন্ট থেকে।
পরে বেহরোজ কে বিদায় করে দিয়ে আমিও গাড়িতে উঠে বাসায় চলে এলাম।বাসায় এসে টুকিটাকি কাজ ছিলো সেসব শেষ করে কম্পিউটার ওপেন করে বসা মাত্রই একটা মেইল চোখে পড়লো।যেই মেইলটা করেছে ওভার পাওয়ারের মেইন লিডার।এই কালো জগতের শুধু একটা মানুষ এই আমার সম্পর্কে জানে।যে কি ভাবে আমার সাথে কন্টাক্ট করা যায়।আমি তার মেইলটা ওপেন করতেই দেখি একটা ভিডিও পাঠিয়েছে সে।আমি কোনো কিছু না ভেবেই ভিডিওটা প্লে করলাম।ভিডিও প্লে করতেই দেখি সেই ওভার পাওয়ারের মেইন লিডার মুখে মাক্স পড়ে এবং হাতে একটা ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!আর তার সামনে সেই কন্ট্রাক্ট কিলার,যাকে কিনা একটা চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
–ভাই এই হারামজাদা নাকি আপনাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো,তাই হারামজাদাকে আমি উঠিয়ে নিয়েছে।আপনি খালি একবার বলেন,তাহলেই দেখবেন হারামজাদার শরীর থেকে মস্তক আলাদা করে ফেলেছি আমি।
–ভিডিওটা দেখে সাথে সাথে ওভার পাওয়ারের লিডারকে ভয়েস মেইল করালম।যে ওকে ছেড়ে দাও।
ও আমার কাছে তার আচরণের জন্য মাফ চেয়েছে।
আকাশের কথার প্রতিত্তোরে সে আবারো একটা ভয়েস পাঠায়।
–ঠিক আছে ভাই তাহলে ছেড়ে দিচ্ছি তাঁকে!
তবে হ্যাঁ আরেকটা কথা আছে আপনার সাথে।আমি এই বেটাকে ছেড়ে দিয়ে এসে আপনার সাথে সরাসরি কলে আসছি….
–অপেক্ষায় বসে আছি সেই ওভার পাওয়ারের লিডারের কলের।একটু পর সে মেকানিক্যাল টোন লাগিয়ে কল দিলো।অবশ্য এটাই নিয়ম এই কালো জগতের।কেউ কারোর সাথে কথা বললে মেকানিক্যাল টোন লাগিয়ে পরে কথা বলে।
–ভাই কেউ একজন মেইল করে আপনাকে উঠিয়ে নেওয়ার কন্ট্রাক্ট দিচ্ছে আমাদেরকে।সে আপনাকে উঠিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে অনেক মোটা অংকের একটা টাকার এমাউন্ট ও অফার করেছে।এখন কি করবো বলেন ভাই।আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে যে মেইল করেছে,তার সাথে কন্টাক্ট করে তাঁকে গিয়ে ঘরের মধ্যেই কুপিয়ে রেখে আসি।
–মেইলটা কখন করেছে?
–ভাই গতকালকে।
–তাহলে কিছু করার কোনো প্রয়োজন নেই।কারন যে মেইল করেছে,সেই কন্ট্রাক্ট কিলার গুলোকে দিয়ে আমাকে উঠিয়েছে।কিন্তু পরবর্তীতে আমার সামনে টিকতে না পেরে এতো সময়ে সব কিছু গুটিয়ে নিয়ে পালিয়েছে সে।
–তাহলে কি ভাই কিছু করবো না আমরা?
–নাহ কিছু করিও না।কারন সে আর আমার ক্ষতি করার মতন দূর সাহস করবে না কখনো।সে অনেক কয়বার আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেও পারেনি।তাই ভবিষ্যতে হয়তো আমার সাথে এসব করার আর ইচ্ছে পোষণ করবে না।আর করলে আমি নিজেই টপকে দিব তাঁকে।আর না হলে তোমাকে জানাবো।
–আচ্ছা ঠিক আছে ভাই তাহলে…
আকাশ তারপর কনফারেন্স কলটা কেটে দিয়ে নিজের কাজ করতে শুরু করে।আকাশ ভাবছে তার সাথে যে পাঙ্গা নিতে চেয়েছে,সে হয়তো চুপসে গেছে।কিন্তু সত্যিকারত্বে তা নয়।M.B.Z”ও হেরে যাওয়ার মতন পাবলিক না।সেও ঘাপটি মেরে বসে আছে।আর বসে বসে আবারো নতুন কোনো প্লান সাজাচ্ছে।
.
পরেরদিন সকালে আকাশ ঘুম থেকে উঠে কলেজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়।তখনি মাঝ পথে আকাশকে কারা যেনো কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে যায়।
কিডন্যাপাররা আকাশকে নিয়ে গিয়ে একটা অন্ধকার ঘরের মাঝে চেয়ারের সাথে বেঁধে বন্দী করে রেখেছে।
–কে ভাই আপনারা?
আর আমাকে কেন এভাবে উঠিয়ে এনেছেন?
–তুই নাকি বলে”Z”তাই তোকে তুলে নিয়ে এসেছি।
কাল তোকে যখন কন্ট্রাক্ট কিলাররা উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো,তখন সেখানে আমাদের টিমের ও একজন লোক ছিলো।আর সেই খবর দিয়েছে তুই “Z”
আর গতকাল যার কথায় তোদেরকে উঠিয়ে নিয়ে একত্রে করা হয়েছিলো,সেই মানুষটাই লিস্টের মাঝে তার নিজস্ব একটা মানুষকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো।যাতে করে কন্ট্রাক্ট কিলাররা যদি কোনো কারনে পল্টি খায়,তখন সে যেনো”Z”কে দেখে চিনে রাখতে পারে।আর তাই হয়েছে।কন্ট্রাক্ট কিলাররা পল্টি খেয়েছে।আর সেই মানুষটা তোকে মার্ক করে নিয়েছে।
–তো এখন কি করতে চাইছো তোমরা আমার সাথে?
আর আমি তো আসল”Z”নই।আমি খালি তাঁদের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য”Z”এর নাম ব্যবহার করেছি।
–কিহহহহহ..
তার মানে তুই আসল “Z” না?
–না আমি আসল”Z”নই।
আকাশের কথা শুনে যারা আকাশকে দ্বিতীয়বারের মতন কিডন্যাপ করেছে,তারা কাকে যেনো ফোন দিয়ে বলতে শুরু করে…
–ম্যাম এটা তো আসল”Z”না।সে নাকি গতকাল বাঁচার জন্য খালি”Z”এর নাম ব্যবহার করেছে।
–আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।আমি জানি সেই আসল”Z”।কারন তার কম্পিউটার ওয়ালপেপার গতকাল আমি দেখেছি।তোমরা তাঁকে মেরে হলেও তার মুখ দিয়ে সত্য কথা বের করো।আর তার কম্পিউটারের সমস্ত সিকিউরিটি আনলক করে নাও।আমি ঘন্টা খানিকের মধ্যে আসছি।
–ঠিক আছে ম্যাম।
আকাশ তাঁদের কথা শুনে বুঝতে পারে,যে আকাশের কম্পিউটারে বা তার সাথে যা যা ঘটেছে,সব কিছুর পিছনেই একজন মানুষের হাত রয়েছে।আর যে এসব করেছে,সে একজন মেয়ে।আর হয়তোবা সেই মেয়েটাই লেডি-হ্যাকার।আকাশ এসব নিয়ে ভাবছে।তখনি সেই কিডন্যাপাররা আকাশকে মারতে শুরু করে।মারতে মারতে আকাশের নাক-মুখ ফাঠিয়ে ফেলেছে।তারা আকাশকে মারছে আর একটা কথা জিগ্যেস করছে…
–বল যে তুই “Z”
আকাশকে এতো পরিমাণে মারধোর করছে সেই কিডন্যাপার,যে তার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।তাই সে না পারতে নিজের মুখ খুলে।
কারন সে আর মা’র খাওয়ার অবস্থায় নেই।
–হ্যা আমিই”Z”
আকাশের মুখে”Z”কথাটা শুনে কিডন্যাপাররা ভয় পেয়ে যায়!তবুও তারা বুকে সাহস নিয়ে আকাশের সামনে এসে কথা বলে।কারন সে বাঁধা অবস্থায় আছে এখন।আর তাছাড়া তাঁদের কাছে মেশিন ও রয়েছে।”Z”তাঁদের কিছুই করতে পারবে না এখন।
যে আকাশকে সব চাইতে বেশি মেরেছে,সে একজনকে আদেশ করে অন্যরুমে টেবিলের উপরে একটা ল্যাপটপ রাখা আছে সেটা নিয়ে আসতে।তার কথা মতন একজন গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে আসে।তখন সেই আদেশকারী ব্যাক্তি আকাশের সামনে কম্পিউটার রেখে বলে..
–এই এখানে তোর ডিভাইস লগইন করে তোর সমস্ত সিকিউরিটি সিস্টেমকে আনলক কর।একটু পর ম্যাডাম এসে দেখবে।
আকাশ কোনো কথার উত্তর না দিয়ে ল্যাপটপে তার ডিভাইস লগইন করে।এবং তার প্রোগ্রাম থেকে
সমস্ত সিকিউরিটি হাটাতে শুরু করে।কিন্তু এর মাঝেই আকাশ কিডন্যাপারদের অগোচরে কিছু একটা করে বসে।যেটা তাঁদের চোখে পড়ে না।আকাশ সমস্ত সিকিউরিটি হাঁটিয়ে ল্যাপটপ থেকে হাত সরিয়ে রাখে।আর কিডন্যাপাররা আকাশের সামনে থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে অন্য রুমে রেখে আসে।আকাশকে যেই অন্ধকার রুমে কিডন্যাপাররা আঁটকে রেখেছে,ঘন্টা খানিক পর কে যেনো সেই ঘরের আসল দরজায় এসে বেল বাজায়।হয়তো সেই ম্যাম এসেছে,যে কিনা কিডন্যাপ করার সুপারি দিয়েছে এই কিডন্যাপারদেরকে।কিডন্যাপারদের থেকে একজন গিয়ে দরজা খুলে দেয় তাঁদের ম্যাম ভিতরে আসার জন্য।কিন্তু দুঃখজনক ভাবে সেখানে তাঁদের ম্যামের বদলে অন্যকেউ দাঁড়িয়ে আছে।অবশ্য তারা একজন নয়,তারা সংখ্যায় দশের অধিক।সবার হাতেই ইয়া বড় বড় অস্ত্র।কিডন্যাপার তাঁদেরকে দেখে ভয় পেয়ে যায়!তখনি একজন সেই কিডন্যাপারকে এক লাথি মেরে ঘরের দরজা থেকে রুমের কয়েকহাত ভিতরে নিয়ে ফেলে।পরে তারা সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হুর হুর করে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে।
তারপর একে একে কিডন্যাপারদের সবাইকে খুঁজে খুঁজে ভয়নাক ভাবে মারতে আরম্ভ করে।এতো বিভৎস ভাবে তারা কিডন্যাপারদেরকে মারতে শুরু করে,যে কোনো সাধারণ মানুষ যদি তাঁদের লাশ দেখে,তাহলে ভয়ে তাঁদের কলিজা গোলে গিয়ে মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবে!এতোই ভয়ানক ভাবে তারা কিডন্যাপারদের মারছে।যাকে ধরছে তাঁকেই মেরে জমের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে।তাঁদের মনে যেনো কোনো ধরনের মায়া দয়া নেই।অবশ্য থাকবেই বা কি করে,তারা তো কোনো সাধারণ মানুষ নয়।তারা হচ্ছে মানুষ রূপে রক্তচোষা।যাদেরকে বলা হয় ডার্ক ওয়েব ওভার পাওয়ার।
তারা এখানে আকাশকে বাঁচাতেই এসেছে।অন্যদিকে লেডি-হ্যাকার”Z”কাছে আসার জন্যই রওয়ানা হয়েছে….
চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।