রাগি বউ,পর্ব_৩
শামিয়া খানম জিনিয়া ✍️🌺
তারপর থেকে শুরু হয়ে যায় আমার দ্বীনের পথে চলার নতুন গল্প। কিন্তু একবারেই যে সবকিছু হয়না, তা আর বুঝতে বাকি রইলনা আমার……….
ওই যে বলেছিলাম নেক সুরতে শয়তানের ধোকা, বিষয়টা তেমন ই হলো………
কলেজে গিয়ে প্রতিটা দিন মাহাদি কে মন ভরে দেখতাম………
বারবার ওর সততা দেখে মুগ্ধ হতাম। হয়ত জিনার সংগা টাই ভুলে গিয়েছিলাম। কাউকে নিয়ে ভাবা ও যে অন্তরের জিনা, এই কথাটা শয়তান আমায় ভুলিয়ে দিয়েছিল। শয়তান তো আমায় বোঝাতো আরে ছেলেটা অনেক ধার্মিক, ওকে নিয়ে ভাবলে কিচ্ছুই হবেনা……..
একদিন কলেজে গিয়ে শুনি মাহাদি সবার কাছ থেকে কিছু করে টাকা নিচ্ছে, আর টাকা নেওয়ার কারন এই যে সে পথশিশুদের সাহায্য করবে। কলেজের সবাইকে ডেকে সে বলল,
“আমরা কত টাকা তো কত প্রয়োজনেই না খরচ করে ফেলি। কিন্তু ওই পথশিশুদের কথা কি কোনদিন ও চিন্তা করি? তারা কি ভাবে চলছে? কি অবস্থায় দীন কাটাচ্ছে?তাই ভাবলাম সবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে যদি ওদের কিছু সাহায্য করা যায়……….
মাহাদির এই স্বভাব গুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। আল্লাহর কাছে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে ওকেই চাইতাম……….
আর বাবা আমার পরিবর্তন দেখে অনেক খুশি হয়েছিল, বাবা সবসময় চাইত আমি যেন আল্লাহর পথে চলি, নামাজ পড়ি, পর্দা করি,,,,,আর ঠিক দিন দিন আমার মধ্যে তেমন পরিবর্তন আসছিল…….
কলেজে গিয়ে মাহাদির সাথে কথা বলার সু্যোগ খুঁজতাম, কিন্তু সেই সুযোগ যে হতোইনা, ও সবসময় মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতো……
ওর এরূপ আচরন দেখে ভাবতাম হুযুররা বোধ হয় অহংকারীই হয়……
মিম ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তাই মিমকে আমি সব কথা খুলে বলি। মিম আমাকে বললো,
“আরে কলেজ থেকে পিকনিকে নিয়ে যাবে তো। তুই সরাসরি ওকে প্রপোজ করিস। আর তুই ও তো এখন হুযুর, ও অবশ্যই তোকে মেনে নিবে দেখিস…….
পিকনিকে যাওয়ার দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু বাবা তো কিছুতেই রাজি হয়নি। মিম অনেক রিকোয়েস্ট করার পর বাবা রাজি হয়……
পিকনিকে রওনা দেওয়ার জন্য আমরা যে বাসে উঠেছিলাম, সেখানে শুধু ম্যাডাম আর মেয়েরাই ছিল। কোন গানের ব্যবস্থা তো ছিলইনা। শুনেছিলাম এসব মাহাদির ই কান্ড। সেই ই নাকি বলেছে গান শুনা হারাম। এসব হবেনা………
অবশ্য মাহাদি তো এসব পছন্দ ই করেনা। কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল স্যারের পিড়াপীড়িতে সে আর না করতে পারিনি। পিকনিক টা সত্যিই একেবারে অন্যপ্রকার এর হয়েছিল। এমন পিকনিক তো আমি কখনওই করিনি…….
পিকনিক এ মাহাদি আমার থেকে এতটাই দূরে ছিল আর সাহস হয়ে উঠেনি……..
নাহ! ভেবেছিলাম পিকনিকে গিয়ে নিজের মনের কথা প্রকাশ করে দিব,,,,,,,,,
কিন্তু তা আর হলো কই……..
বাসায় এসে আকাশের চাদের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের কথা গুলা বলতে থাকি। জানি সে শুনবেনা তবু ও একা একা বকতেই থাকি………
না পেরে আবার ও মাহাদিকে মেসেজ দিলাম, ওকে বললাম
“মাহাদি আমি তোমাকে ভালোবাসি”।
“এটা আপনি কি বলছেন? আপনি কি জানেন না প্রেম ভালোবাসা হারাম বিয়ের আগে। “আল্লাহ বলেন, তোমরা জিনার ধারের কাছে ও যেওনা। কেননা তা অত্যান্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ।
(সূরা বনী ইসরাইল আয়াত_৩”)।
” তাহলে আমায় বিয়ে করবে?”
” না সেটা ও সম্ভব না। আমি তো এখন বেকার। কোন আয় নেই, নিজে তো বাবার পয়সায় চলি । এখন তো সম্ভব ই না……….
” কিন্তু আমি যে তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারিনা”।
” না এটা আপনি ঠিক করছেন না। এটা তো অন্তরের জিনা। রাসূল সাঃ তো বলেছেন, জিনার কল্পনা করা অন্তরের জিনা।”
তাছাড়া কাউকে খুব বেশি ভাল ভাবা ঠিক না। আল্লাহর কাছে বলুন ‘ হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য যা কল্যাণ মনে করো তাই করো।’ কখনওই কোন নির্দিষ্ট কিছু চাইবেন না। মনে রাখবেন কল্যাণ অকল্যাণ সম্পর্কে পুর্নাংগ ধারনা কেবল আল্লাহর ই আছে।”
” তাছাড়া আমরা কথা তো বলতেই পারি? আমি তো এখব পর্দা করি নামাজ পড়ি, তাহলে আমার সাথে কথা বলতে সমস্যা কোথায়???”
” না আপনি ভুল ভাবছেন। বিয়ের মাধ্যমেই সব সম্পর্ক হালাল হয়। হ্যা আপনি হয়ত পর্দা করেন, নামাজ পড়েন,,,,,,,তার অর্থ তো এই না যে, আপনার সাথে আমার কথা বলতে হবে! ইসলাম তো সব গায়্রে মাহরাম কেই এড়িয়ে চলতে বলেছে।”
মাহাদির কথাগুলা শেষ করেই ও আমাকে ওর কাছে মেসেজ দিতে মানা করে দেয়………
” কিন্তু আমি আল্লাহর পথের কথা ভুলে গিয়ে ওকে প্রতিনিয়ত মেসেজ দিতাম। কিন্তু ও কখনওই রিপ্লে দিতনা……..
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। কিন্তু ঘুম ই আসেনা। হটাৎ ই ফোনের দিকে তাকিয়ে যা দেখতে পাই তাতে আর মেজাজ ঠিক ই রাখতে পারিনি…….
রাগে রাগে ফোন টা আছাড় দিই ফ্লোরে…….
মা বাবা ছুটে আসে আমার চিৎকার এ। এসে দেখে ফোন ফ্লোরে…….
” এই তামান্না কি হলো ফোন ফ্লোরে কেন? ”
” না মা আসলে পড়ে গেছে হাত থেকে।”
” ভূগোল বোঝাচ্ছিস নাকি আমায়? এই তামান্নার আব্বু মেয়ের কাছে ফোন কেন দিয়েছো…..?????
এই ফোন সর্বনাশ করে ছাড়বে”
রাগে রাগে ফোন দিয়ে দিই বাবার কাছে……..
আসলে মাহাদি আমাকে ব্লক দিয়েছিল…..
আমি ভাবতেই পারিনি ও আমাকে ব্লক দিবে…….
সেখান থেকে হুযুর ছেলেদের আমি পছন্দ করতাম না। ভাবতাম ওরা বোধ হয় অনেক অহংকারী হয়……..
ইন্টার লেভেল শেষ হয়ে যায়। ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার আর সুযোগ মিললনা……..
অনেক টাকা কিন্তু ছিল বাবার, কিন্তু তবু ও আমায় কোচিং করাইনি……
না পেরে ভর্তি হতে হয় গ্রামের ই কলেজে…..
আর তার মধ্যেই বাবা আমার জন্য পাত্র ও ঠিক করেছে…….
বাবার প্রতি অনেক অভিমান এ আর জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠিনি পাত্র সম্পর্কে……আসলে সে কি করে,,,,,বাসা কোথায়?????
কিছুই শুনিনি মায়ের কাছে ও……..
সব থেকে অপছন্দের পাত্রই আমাকে দেখতে আসে…….
ইচ্ছা করছিল ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিই…..
__________
চলবে????