মেঘলা আকাশের প্রেমজুরি,পার্টঃ০৪
লেখনীঃ Mona Hossain
এতক্ষন ধরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ ভাইয়ার ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভেঙে গেল। ভাইয়া ফোনটা হাতে নিয়ে ওর রুমের পাশের বাইরের দিকের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল তারপর কথা বলতে বলতে বেলকনিতে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে নাবিল ভাইয়ার ঘরে ঢুকে গেল।নাবিল ভাইয়া আর ওর ঘর পাশাপাশি বাইরের বারান্দা ২ রুমের সাথে এটাচ করা তাই বেলকনি দিয়ে দুই রুমে যাওয়া আসা করা যায়। ভাইয়া এত মন দিয়ে কার সাথে কথা বলছে ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেল।
কিছুক্ষন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন কে শান্ত করলাম এর মধ্যেই ভাইয়ার ঘরের দরজার ওপাশে বড় মার গলা শুনতে পেলাম। ভাইয়া বাইরের বেলকনি দিয়ে বেরিয়েছে তাই ঘরের দরজা এখনো লাগানোই আছে সেটা দেখেই হয়ত বড় মা ক্ষেপেছে।
দরজার বাইরে থেকে বড় মা মানে আকাশের মা চেঁচাচ্ছে
-আকাশ…দরজা লাগিয়ে ঘরের ভিতর কি করিস হ্যা? দরজা খোল…
আমি বারবার বেলকনির দরজার দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ভাইয়া এখনো আসছে না তাই দরজা খুলব কি খুলব না ভাবছি
এদিকে বড় মা ব্যাস্ত গলায় চেঁচিয়ে যাচ্ছে তাই আমি তাড়াতাড়ি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম ভাইয়া এখনো কথা বলছে আমি যেতেই অগ্নিচোখে তাকিয়ে আমাকে ঘরে যেতে ইশারা করল কিন্তু আমি ঘরে ফিরলাম না কারন আমি জানি বড় মা আমাকে ভাইয়ার ঘরে দেখলে হাজার টা কথা শুনাবে।
আসলে বড় মা একটু রাগী টাইপের।
উনি মাম্মাম কে তেমন পছন্দ করে না তাই আমাকেও করে না তাই ভাইয়া আর আমার মেলামিশা একদম পছন্দ করে না। যদি দেখে আমি ভাইয়ার রুমে এসেছি আর ওর জামা কাপড়ের এই হাল করেছি আমাকে হাজারটা কথা শুনাবে,ভাইয়া থাকলে তবুও একটু কম বলতো কিন্তু এখন তো অনেক বকা খেতে হবে তাই যাচ্ছি না।
আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখে ভাইয়া ইশারায় আমাকে নাবিল ভাইয়ার রুমে ডাকল আমি যেতেই ভাইয়া ফোনটা হোল্ড করে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল,
– কি সমস্যা?
নরম গলায় বললাম
-রুমে চল.
ভাইয়া রাগে আগুন হয়ে বলল
-এখন কি তোর জন্য ফোনেও কথা বলা যাবে না?
মাথা নিচু করে জবাব দিলাম
– আমি এসব কখন বললাম?
– তাহলে এখন রুমে যাব কেন? আমাকে তোর কি মনে হয়? কেনা গোলাম যখন যা বলবি তাই করতে হবে?
ভাইয়ার কথায় রাগে অভিমানে আর বড় মায়ের ভয়ে আমার কান্না পাচ্ছে কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছি না।
ভাইয়া সেসবের পরোয়া না করে বলল,
-ঠেটার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখনী চোখের সামনে থেকে বিদায় হ সারাদিন যেন চোখের সামনে না দেখি…
ভাইয়া আমাকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।নাবিল ভাইয়ের ঘরে কাচের দরজা জানালা হওয়ায় কিছু না শুনা গেলেও বেলকনিতে এসে শুনতে পেলাম বড় মা এখনো চেঁচাচ্ছে আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে যাব তখন আবার হোঁচট খেলাম।একে ত শাড়ি পরতে পারি না তারউপড়
তখন পড়ে গিয়ে শাড়ির বেহাল দশা তাই হাঁটতেও অসুবিধে হচ্ছে কোনরকম শাড়ির কুচি ধরে ভীরু পায়ে গিয়ে দরজা খুললাম।
দরজা খুলতেই বড় মা অগ্নিমুর্তি ধারন করে বলে উঠল
– মেঘলা তুই…!!! আকাশের ঘরে তুই কি করিস তাও দরজা লাগিয়ে? তাই তো বলি এতক্ষন ধরে দরজা খুলে না কেন?
বড় মা কেমন করে যেন কথাটা বলল আমার খারাপ লাগল তাই উত্তর দিলাম না।
বড় মা দরজার বাইরে থেকে ঘরে উঁকি দিল।
আর ভাইয়ার একটা পেন্ট টিশার্ট নিচে পড়ে থাকতে দেখেই বড় মা মাথায় হাত দিল আর গলা ছাড়ল,
-হায় হায় আমার কি সর্বনাশ হলো গো.. আমি আগেই জানতাম এই মেয়ে আমার ছেলেটার বারোটা বাজাবে। ছি ছি এখন আমি সমাজে মুখ দেখাব কি করে?
বড় মার কথার আগামাথা বুঝতে পারছি না।
বোকার মত দাঁড়িয়ে দেখছি।
বড় মার আহাজারিতে মাম্মাম ছোট মা ছুটে আসল।
বড় মাকে এমন আহাজারি করতে দেখে মাম্মাম প্রশ্ন করল,
– কি হয়েছে ভাবী এমন করছো কেন?
বড় মা একবার নিচে পড়ে থাকা ভাইয়ার জামা কাপড়ের দিকে ইঙ্গিত করে আবার আমার খুলে যাওয়া শাড়ির দিকে দেখিয়ে বলল,
– কি হওয়ার বাকি আছে শুনি?
মাম্মাম আর কিছু না বলে সবার সামনে ঠাস করে আমার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। যে মাম্মাম আমাকে কখনো একটা বকাও দেয় না সেই মাম্মাম আমাকে মারল ব্যাপারটা বুঝলাম না আমি কাপড়গুলি ফেলেছি জন্যে মারল কি?সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে কেন সেটাও বুঝতে পারছি না। মাম্মাম প্রচন্ড রেগে আমাকে প্রশ্ন করল
-কি করেছিস এসব মেঘলা…??
কি করব কিছুই মাথায় ঢুকছে না মাম্মাম প্রায় কেঁদে ফেলেছে দেখেই খারাপ লাগছে। মনে মনে সিধান্ত নিলাম সব কাপড় আমাকে ধুতে হলে ধুয়ে দিব তাও মাম্মাকে কাঁদতে দিব না তাই নরম গলায় বল্লাম,
-আর কখনো এমন করব না মাম্মাম কেঁদো না প্লিজ।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বড় মা চেঁচিয়ে উঠল,
-লজ্জা করছে না কথাটা বলতে?আর করবি না এখন তো ঠিকি করে ফেলেছিস। এত নিচে নামলি কি করে?ছি ছি এই বয়সেই এতকিছু না জানি আগে আরও কত কিছু করে এসেছে…??
বড় মার কথায় মাম্মাম একটু চটে জবাব দিল
– আহ ভাবি থামো না প্লিজ
– থামব মানে? তাহলে কি ধরে নিব তুমি নিজেই মেয়েকে এসব শিখিয়েছো?তা ত শিখাবেই আমার ছেলেটাকে হাত না করে ত শান্তি হচ্ছিল না।
জামা কাপড় নোংরা করে কি করে ছেলেদের হাত করা যায় মাথায় ঢুকল না।কাপড় গুলো আমি ফেলেছি কিন্তু বড় মা মাম্মাম কে কথা শুনাচ্ছে তাই বল্লাম
– যা করার আমি করেছি বড় মা মাম্মা কিছু করে নি তাই মাম্মা কে কিছু বলবে না।
বড় মা তাছিল্য করে বলল,
– চোরের আবার বড় গলা এতবড় একটা কান্ড করেও মুখে কথা আসছে ধন্যি মেয়ে জন্ম দিয়েছো নিলু।এই আমার মেয়ে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
এতক্ষন ছোট মা কিছু না বললেও বড় মার কথায় বেশ বিরক্ত হয়ে ছোট মা এবার বলে উঠল,
– অন্যের মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলার আগে নিজের ছেলেটাকে একটু শাসন করলে হত না বড় দি.?
মাম্মামঃ ছোট ভাবী, আজ কিছু বলো না বড় ভাবী আজ ভুল কোনো কিছু বলছে না এগুলো মেঘলার পাওনা। বলেই মাম্মা আমার চুল টেনে ধরল।
– কেন এমন করলি জবাব দে মেঘলা তোকে স্বাধীনতা দেয়াটা তাহলে আমাদের অন্যায় ছিল…??
আমার ব্যাথা লাগছে কিন্তু মাম্মামের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। এবার আর সইতে না পেরে কেঁদেই দিলাম।কেঁদে কেঁদে বারবার বলতে লাগলাম আর এমন করব না। তখনী ভাইয়া সেখানে আসল।
ভাইয়াকে দেখে সবাই থমকে গেল।
ভাইয়াকে দেখে আমার আবেগ টা বেড়ে গেল কান্নার আওয়াজ টাও বেড়ে গেল।
ভাইয়া আমাকে কাঁদতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হল কিন্তু সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে সহসা প্রশ্ন করল,
– কি হচ্ছে এখানে? মেঘলা কাঁদে কেন?
আমি জবাব না দিলেও
ভাইয়ার প্রশ্নের জবাবে বড় মা আমার শাড়ি দেখিয়ে আর ওর জামা কাপড় দেখিয়ে বলল
-লজ্জা করল না এসব করতে?
ভাইয়া শান্তভাবে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল কিন্তু কিছু বলল না।
আমি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বল্লাম
– আমি আর কখনো এমন করব না ভাইয়া বড় মাকে বল না প্লিজ।
আমি কথাটা বলতেই ভাইয়া আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
-এদিকে আয়..
ভাইয়ার কথায়,মাম্মা বড় মা ছোট মা সবাই অবাক হলেও আমি সেসবের তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গেলাম।
ভাইয়া আমার গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞাস করল
-কে মেরেছে?
আমি জবাব দিতে পারলাম না খুব কান্না পাচ্ছে তাই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম ভাইয়াও আমার মাথায় হাত রাখল।
তাতে বড় মা রাগে তেতে উঠল।মাম্মাও রেগে বলে উঠল
-আকাশ লজ্জা করছে না তোদের? কি শুরু করেছিস।
মাম্মার ধমকে কেঁপে উঠলাম ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে আমার কাছে এসে বলল,
-ছাদে আমার গ্রিন কালারের টিশার্ট আছে গিয়ে নিয়ে আয় আর হ্যা যাওয়ার সময় নাবিলের ঘর থেকে ওর জুতা নিয়ে যাস।
আমি আর কিছু না বলে নাবিল ভাইয়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
_______________________
এদিকে,
আকাশঃ তো চলো ভিতরে যাওয়া যাক তারপর শুনি কি হয়েছে?বলে সবাইকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল আকাশ।
ঘরে ঢুকে সবাই অবাক হল কারন সারাঘরেই কাপড় এলোমেলো ভাবে ছড়ানো ছীটানো আছে বাইরে থেকে শুধু একটা দেখা যাচ্ছিল।
আকাশঃ তো বলো এবার কার কি প্রশ্ন আছে
আকাশের মাঃ মেঘলা ত স্বীকার করেছেই ও নোংরামি করেছে আবার কিসের প্রশ্ন।
আকাশ এক গাল হেসে জবাব দিল
-মা এতদিন জানতাম তোমার মাথায় অল্প হলেও বুদ্ধি আছে আজ তো দেখছে মাথায় কিছুই নেই। মেঘলা কি স্বীকার করেছে বললে?
-স্বীকার করুক আর নাই করুক অবস্থা দেখেই বুঝা যায় দরজা বন্ধ করে ঘরে কি করছিল?
-তারমানে বলতে চাচ্ছ ভালোমত শাড়ি পরতে না পারা মানেই মেয়ে খারাপ চরিত্রের?
মেঘলাকে তোমরা কেউ চিনো না ভেবে অবাক না হয়ে পারছি না। মেঘলা এমন করবে না বলতে বুঝেয়িছিল ও কাপড় চোপড় আর এভাবে ফেলবে না অন্য কিছু স্বীকার করেনি আর আমি এটাও জানি মেঘলা এতক্ষন বুঝেই নি ওকে কেন বকা দেয়া হচ্ছে।
আমি মেঘলাকে নিজের বোনের মতই আদর করি মা আমার লজ্জা করছিল তোমরা আমাদের নিয়ে এমন একটা ধারনা করলে কি করে করতে পারলে? হ্যা মানছি আমি নেহা মিলির চেয়ে মেঘলাকে একটু বেশি আদর করি তবে সেটারো যথেষ্ট কারন আছে তাই করি কিন্তু আমি ওকে খারাপ চোখে কখনই দেখি না।
আচ্ছা মায়ের কথা বাদ দিলাম উনি নাহয় নিজের সন্তানকে বিশ্বাস করে না কিন্তু ফুফি তুমি ত নিজেই দেখেছিলে মেঘলা কাপড় টা পড়তে পারছিল না তাই ওকে আমি টিশার্ট পরতে বলেছিলাম আর ও টিশার্ট খুজতে গিয়েই সব জামা কাপড় এমন এলোমেলো করেছে এটাই ঘটেছে এখানে।
-তুই যে মিথ্যে বলছিস না তার কি প্রমাণ আছে?
– প্রমাণ কি আছে জানি না তবে এইটুকু বলতে পারি আমি মেঘলাকে এতটাই সম্মান করি যে ওর সামনে আমি বলতে পারব না ওকে সবাই কি ভাবছে তাই ওকে এখান থেকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
-কথা ঘুরানোর চেষ্টা করিস না আকাশ..
– তারমানে তুমি সিওর আমাদের মাঝে কিছু হয়েছেই তাহলে মা দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও বরণঢালা সাজাও ছেলের বউকে ঘরে তুলতে হবে তো নাকি। এতকিছু হয়েছে যখন তখন বাচ্চাও হবে নিশ্চুই আর আমার বাচ্চার মা ত আর রাস্তায় থাকতে পারে না তাই না?বলেই আকাশ হন হন করে চলে গেল।
।
।
।
চলবে…!!!