মেঘকন্যা☁️ Part_20

মেঘকন্যা☁️
Part_20
Writer_NOVA

খুব সকালে সেনাপতি ও সৈন্য নিয়ে শিকারে বের হয়েছেন সাদা ময়ূর রাজ্যের রাজা মুশতাক আবসার ওয়াহাব। মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে দেরী করেন নি।সাথে আছে তার একমাত্র বোন আতিয়া ইবনাত তাজিন।আজকে তাজিন তার ভাইয়ের সাথে এক প্রকার জেদ করে শিকারে বের হয়েছে।তার বহুদিনের ইচ্ছে নিজের চোখে শিকার দেঝবে।অবশ্য ওয়াহাব ওকে আনতে চাইনি।কিন্তু বোনের জেদের কাছে বেচারা হার মেনে নিয়েছে।অনেকটা রথের মতো দেখতে তিন চাকা বিশিষ্ট একটা গাড়ির ভেতরে বসে আছে তাজিন।পরনে তার বিশাল সাদা ড্রেস।মুখটা আরবীয়দের মতো পাতলা কাপড়ে আটকানো।যাতে করে পুরো মুখটা দৃশ্যমান।গাড়ির চারিপাশে সাদা পর্দা দিয়ে ঢাকা।গাড়িটাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১০-১২ টার মতো সাদা ময়ূর।জঙ্গলের অনেকটা ভেতরে ঢোকার পর তারা পশু,পাখির চিৎকার, চেঁচামেচি শুনতে পায়।পর্দার ভেতর থেকে তাজিন তার ভাইকে বলে উঠেলো।

তাজিনঃ ভাইয়া পূর্ব দিক থেকে এতো শোরগোল শোনা যাচ্ছে কেন?সম্ভবত ঐখানে কোন সমস্যা হয়েছে। নয়তো বন্য পশু-পখী এতো শরগোল করতো না।দয়া করে তুমি ঐদিকটা কি একটু যাবে?

ওয়াহাবঃ বোন, মাঝে মাঝে শক্তিশালী পশুদের মাঝে লড়াই লেগে যায়।যাতে করে অন্য দূর্বল পশু ও পাখি ভয় পেয়ে এতো শরগোল করে।ও কিছু না।কিছু সময়ের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি জানতাম তুমি ভয় পাবে।তাই তোমাকে নিয়ে আসতে চাইনি।কিন্তু তুমি তো নাছোড়বান্দা হয়ে চলে এলে।

তাজিনঃ তুমি কিন্তু আমাকে কথা শোনাচ্ছো ভাইয়া।এটা ঠিক নয়।আমি শিকার দেখতে চেয়েছি বলে আজ জেদ করে চলে এসেছি।তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে বলবে।

ওয়াহাবঃ গোস্তাকি মাফ করবেন মহাশয়া।আমার ভুল হয়েছে।আমি ঝগড়া করার মতো অবস্থানে নেই। তাই এই মুহূর্তে কোন কথা না বলাই শ্রেয়।নয়তো বেখেয়ালি হয়ে হিংস্র পশুর আক্রমণের শিকার হতে পারি।চুপচাপ কি হয় দেখতে থাকো।

তাজিন চুপ করে গেলেও পূর্ব দিকের শরগোলের আওয়াজটা তার কানে স্পষ্ট আসছে।তার ভাই ওয়াহাব তার গাড়ির সাথেই ঘোড়ায় চড়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে।

তাজিনঃ ভাইয়া, ঐ দিকটা চলো না।আমার মন বলছে কিছু একটা গন্ডগোল নিশ্চয়ই হয়েছে।তুমি আমার কথা আমলেই নিচ্ছো না।

তাজিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই এক সৈন্য ঘোড়া চালিয়ে তাদের সামনে এসে থামলো।এই সৈন্যকে আগে পাঠানো হয়েছিল।যাতে সে পুরো জঙ্গল ঘুরে বলতে পারে সব ঠিক আছে কিনা।সৈন্যটা এসে রাজা ওয়াহাবকে যা খবর দিলো তাতে সে বেশ অবাক হয়ে গেল।

সৈন্যঃ ময়ূর রাজ পূর্ব দিকে এক অপরূপ সুন্দরী পৃথিবীর মানুষ কন্যাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছে আশেপাশে অনেক সাপ। মেয়েটা এতো সুন্দরী যে আমি এই পর্যন্ত ওর মতো কোন মেয়ে দেখিনি।শুভ্র মেঘের মতো গায়ের রং। আমি উদ্ধার করতে যেতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমাকে দেখেই সাপগুলো ফণা তুলে এগিয়ে এসছিলো।আমি তা দেখে কোনমতে নিজের জান নিয়ে ফিরে এসেছি।এবং সাপ দেখেই জঙ্গলের পশু-পাখিরা শরগোল করছে।

ওয়াহাবঃ আমাদের রাজ্যের জঙ্গলে পৃথিবীর মানুষ্য কন্যা কি করে আসবে?আমাদের জঙ্গল তো মায়াবী জঙ্গল।পৃথিবীর লোক চক্ষুর অন্তরালে।খুবই ভাববার বিষয়। চলো তো গিয়ে দেখি।

তাজিনঃ আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম ভাইয়া।কিন্তু তুমি আমার কথাকে গুরুত্ব দিলে না।এখন বিশ্বাস হলো তো।

🌨️🌨️🌨️

সবাই দল-বল নিয়ে পূর্ব দিকে যেতে লাগলো।সেখানে গিয়ে সত্যি তারা অবাক হলো। কারণ একটা গোল দাগের ভেতরে গাছের সাথে এক অপরুপ সুন্দরী নারী মাথা হেলান দিয়ে রেখেছে। সে কি ঘুমিয়ে আছে নাকি জ্ঞান হারানোর অবস্থায় আছে তা বোঝা যাচ্ছে না। চোখ মুখ উপচে পরছে মায়ায়।পরনে হালকা আকাশি রংয়ের থ্রি পিস।মাথায় ওড়না দিয়ে সুন্দর করে ঘোমটা দেয়া। নাকে এক পাথরের নাকফুলটা হালকা সূর্যের আলোতে থেকে থেকে ঝিলিক মেরে উঠছে।দুই হাতে ডায়মন্ড পাথরের সরূ চুড়ি।ওয়াহাব মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। তার কাছে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। এত সুন্দর কোন পৃথিবীর একটা মানুষকন্যা হতে পারে, তা তার ধারণার বাইরে ছিলো।পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখে তাজিনও অবাক।তার চেয়েও তিন ডাবল সুন্দরী। মনে হচ্ছে রূপ যেনো তার ঠিকরে বের হচ্ছে। শুধু ওয়াহাব কিংবা তাজিন নয়।উপস্থিত সবাই হা করে মেঘাকে দেখছে।

তাজিনঃ ভাইয়া মেয়েটাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করো।যেভাবে হোক ওকে উদ্ধার করতেই হবে।

ওয়াহাবঃ হু, আচ্ছা। (ঘোরের মাঝে)

তাজিনঃ ভাইয়া আমি কিছু বলছি।তুমি হা করে মেয়েটাকে না দেখে তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করো।

ওয়াহাবঃ মনে হচ্ছে কোন জান্নাতি হুর ভুলে আমাদের জঙ্গলে চলে এসেছে।আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর। পৃথিবীর মানুষ যে এতটা সুন্দর হতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। (মনে মনে)

বোনের মৃদু চিৎকারে তার হুশ ফিরে। জলদী করে তার সৈন্যদের হুকুম করে সাপগুলোকে তাড়াতে।ময়ূর রাজ্যের সেনাপতি বেশ কিছু সময় সাপ তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে।নানা কিছু দিয়ে ভয় দেখিয়েও সাপ তাড়াতে পারছে না।তা দেখে ময়ূর রাজ ওয়াহাব নিজের কিছু শক্তি ব্যবহার করে চারিদিকে ধোঁয়ার কুন্ডলি সৃষ্টি করে। যেই ধোঁয়ায় ব্যবহার করা হয়েছে অনেক বিষাক্ত একটা ঔষধ জাতীয় পাউডার থেকে তৈরি। যেটা মানুষের কোন ক্ষতি না করলেও বিষাক্ত কীটপতঙ্গের ক্ষতি করে। বিষাক্ত ধোঁয়া পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে দিক-বেদিক শূন্য হয়ে সাপগুলো স্থান ত্যাগ করে। তাজিন দ্রূত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে মেঘার সামনে যায়।ততক্ষণে ওয়াহাবও চলে এসেছে।

তাজিনঃ দেখে মনে হচ্ছে ঘুমন্ত। কিন্তু এত ডাকার পরেও সাড়া দিচ্ছে না।কিছু একটা করো ভাইয়া।তুমি গাড়ি থেকে পানির পাত্রটা নিয়ে এসো।চোখ, মুখে পানি দিলে হয়তো জ্ঞান ফিরবে।

ওয়াহাবের কানে হয়তো কথাটা প্রবেশ করলো না।কারণ সে এখনো মেঘার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও পরছে না।

তাজিনঃ ভাইয়া অন্যের বউকে এভাবে দেখা ঠিক নয়।তোমাকে যা বলেছি তাই করো।

“অন্যের বউ” কথাটা শুনতেই ওয়াহাবের বুকের বা পাশটা চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো।আহত কণ্ঠে বললো

ওয়াহাবঃ অন্যের বউ মানে কি বোন? তুমি কিভাবে বুঝলে মেয়েটা বিবাহিত? (অবাক হয়ে)

তাজিনঃ বোঝা একাবারে সহজ ভাইয়া।পৃথিবীর বিবাহিত মেয়েরা হাতে চুড়ি ও নাকে নাকফুল পরে।অবশ্য সবাই নয়।কিন্তু এই দুটো থাকলে আমি নিশ্চিত সে বিবাহিত।আজকাল অবিবাহিত মেয়েরা নাকফুল পরে কিন্তু দুই হাতে দুই চুড়ি পরে না।একমাত্র বিবাহিত মেয়েরা সবসময় দুই হাতে দুটো চুড়ি পরে থাকে।মেয়েটার দুই হাতে দুটো চুড়ি। তুমি কি কিছু খেয়াল করেছো।এখন কথা না বাড়িয়ে পানির পাত্র নিয়ে এসো।

বোনের কথা শুনে পুরো ভেঙে পরলো ওয়াহাব। কয়েক মিনিটের দেখায় তার পুরো মনে জায়গা দখল করে নিয়েছে মেয়েটি।ধীর পায়ে পানির পাত্র নিয়ে বোনের হাতে দিলো।তাজিন চেষ্টা করছে মেঘার জ্ঞান ফিরানোর।হঠাৎ ওয়াহাবের কি জানি হলো।চোয়াল শক্ত করে মনে মনে বললো।

ওয়াহাবঃ হোক সে অন্যের বউ।আমি তা পরোয়া করি না।কারণ আমার তাকে চাই।আমি তাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিবো।শক্তি দিয়ে তাকে পৃথিবীর সবকিছু ভুলিয়ে নিজের কাছে রেখে দিবো।এই প্রথম কোন মেয়ের জন্য আমার এরকম ভালোলাগা কাজ করছে। অতএব এই মেয়ে শুধু ময়ূর রাজ মুশতাক আবসার ওয়াহাবের।একে পেতে হলে যা কিছু করার আমি সব করবো।তবুও আমি ওকে হাসিল করেই ছাড়বো।

হুট করে ওয়াহাবের মনটা বিষিয়ে উঠলো।কিন্তু কেন সে নিজেও জানে না। তার এখন এই মেয়েকে চাই। মনে হচ্ছে ওকে ছাড়া ওয়াহাবের জীবন পুরো ব্যর্থ।আল্লাহ তার জন্যই এই অপরূপ সুন্দরীকে পাঠিয়েছে।

🌨️🌨️🌨️

মুখে পানির ঝাপটা পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খোলার চেষ্টা করলাম।চোখের পাতা দুটো বিশাল ভারী হয়ে গেছে। টেনেও মেলতে পারছি না। ঘুমে চোখ অবশ হয়ে আসছে।কানের মধ্যে মানুষের গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কি বলছে তা শুনতে পাচ্ছি না। খুব কষ্ট করে চোখ খুলে অবাক হয়ে গেলাম।আমাকে ঘিরে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। একটা সাদা বিশাল গোল জামা পরহিত সুন্দরী মেয়ে আমাকে কিছু বলছে।কিন্তু আমার বোধশক্তি হচ্ছে না। তাই আমি শুনতে পাচ্ছি না। তার পাশে রাজার পোশাক পরিহিত এক সুদর্শন যুবক। কোমড়ে তার তলোয়ার কোষবদ্ধ। পেছনে তীর ভর্তি একটা তীরের বাক্স।তার পেছনে গোটা দশ সৈন্য ও ঘোড়া। অনেকের হাতে তীর,ধনুক।পাশে একটা তিন চাকা বিশিষ্ট ময়ূর গাড়ি। মেয়েটা আমার গায়ের দড়ি খোলার চেষ্টা করছে।

তাজিনঃ কে তুমি? এখানে কি করে এলে?

আমিঃ এ তো দেখছি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। জিও মেঘা।তোর ভাগ্যটাতো হেব্বি ভালো।আল্লাহ তোর সহায় হয়েছে। তুই ময়ূর রাজ্য প্রবেশের জন্য উপায় খুঁজছিলি। আর তোর সামনে স্বয়ং ময়ূর রাজ ও তার বোন এসে হাজির।আমি সিউর এরাই ময়ূর রাজ্যের রাজা মুশতাক আবসার ওয়াহাব ও তার বোন আতিয়া ইবনাত তাজিন।তোমাদের বিষয় আমি সব জানি।আমার আয়িশ সব বলেছে।এখন কোনভাবে আমাকে সেই রাজ্য প্রবেশ করতে হবে।তারপর দেখা যাবে বাকি কাজ।আগে রাজ্যেতো প্রবেশ করি তার পরেরটা তারপর দেখা যাবে। আয়িশ বলেছিলো কোনভাবে ওদের বুঝতে দেওয়া যাবে না আমি মেঘকন্যা।যদি পরে বুঝে যায় তখন আলাদা কথা। পৃথিবীর সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। এমন অভিনয় করতে হবে যাতে তারা ভাবে আমি সব ভুলে গেছি। মানে স্মৃতি শক্তি চলে গেছে আরকি।নয়তো ঐ ওয়াহাবটা আবার সত্যি সব ভুলিয়ে দিতে পারে।(মনে মনে)

তাজিনঃ কথা বলছো না কেন?কে তুমি?

আমিঃ (নিশ্চুপ)

তাজিনঃ দয়া করে কিছুতো বলো।আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকো না।

আমিঃ আমি কে? তোমরা কারা?আমি এখানে কেন?আমি কিছু মনে করতে পারছি না। সব ঘোলাটে লাগছে।(মাথা ঝাঁকিয়ে)

ওয়াহাবঃ তোমার কিছু মনে করতে হবে না। তুমি মাথায় চাপ নিও না।

তাজিনঃ ভাইয়া দড়ির বাঁধন খুলতে পারছি না।
ওয়াহাবঃ সরে দাড়াও আমি খুলে দিচ্ছি।

ওয়াহাব তলোয়ার কোষমুক্ত করে সপাংসপাং কয়েক ঘা মারলো।মনে হলো একটু আওয়াজ করায় সব দড়ি কেটে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে পরে গেল।

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠি। আমার গায়ের বিশাল গাউন কোথায়?পরনে তো হালকা পাতলা ডিজাইনের লিনেন থ্রি পিস। পায়ে স্লিপার জুতা। ও মাই আল্লাহ!!! হাতে আবার এই চুড়ি কোথা থেকে আসলো?গতকাল রাতে আমার হয়েছিল কি?আমি এমন মরার মতো ঘুমালাম কেন?আমার ড্রেস বা কে চেঞ্জ করলো?আয়িশ কি এসেছিলো?মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে।পরে যাওয়ার আগে তাজিন এসে ধরে ফেললো।আমি নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।

তাজিনঃ তোমার কি কিছু মনে নেই।

আমিঃ আমি কিছু মনে করতে পারছি না।

ওয়াহাবঃ থাক তোমার মনে করতে হবে না। তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমাদের সাথে যেতে পারো।আমরা তোমাকে আমাদের রাজ্যে নিয়ে যাবো।

আমিঃ কিন্তু —-

তাজিনঃ তুমি কোন চিন্তা করো না। আমরা তোমার কোন ক্ষতি করবো না। চোখ বন্ধ করে আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।

ওয়াহাবঃ সেনাপতি আমজাদ, জলদী প্রাসাদে চলুন।আজ আমরা কোন শিকার করবো না।ওনার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।

সেনাপতিঃ যথা আজ্ঞা ময়ূর রাজ।

তাজিনঃ তোমার নাম কি?

আমিঃ আমি জানি না। (বললে ধরা খাওয়ার চান্স আছে।সো নিজের নাম বলিস না মেঘা।এই ওয়াহাব ব্যাটাকে আমার কিছুতেই সুবিধার মনে হচ্ছে না। আমার দিকে কিরকম ভ্যবলার মতো তাকিয়ে থাকে।মতলব বেশি ভালো না।এর থেকে একটু সাবধানেই থাকতে হবে।চোখের চাহনি আমাকে অন্য কিছু বলছে।এই ব্যাটা অনেক ধূর্ত।)

তাজিনঃ কোথায় হারিয়ে গেলে?

ওয়াহাবঃ কি শুরু করলে বোন?ওর নাম মনে পরছে না।তুমি ওকে বারবার জিজ্ঞেস কেন করছো?আমরা বরং ওকে মেঘপরী বলে ডাকবো।কারণ ওর গায়ের রংটা মেঘের মতো অনেক হালকা নীলচে শুভ্র। চোখ দুটো আকাশি রঙের। পুরো মেঘপরীর মতো দেখতে।

তাজিনঃ বাহ্ তুমি তো খুব সুন্দর নাম রাখলে ভাইয়া।একদম ওর সাথে মিলে গেছে। আমারো নামটা অনেক পছন্দ হয়েছে।

আমিঃ হায়রে, সব জায়গায় আমার পরিচয়ের আগে মেঘ আছেই। মেঘা,মেঘকন্যা এখন যুক্ত হলো মেঘপরী।আরো কতকিছু যে দেখবো।ভালোয় ভালোয় এই রাজ্য থেকে নিজের কার্য সিদ্ধি করে বের হলেই বাঁচি। আল্লাহ জানে আমার মাছের আঁইশটা কেমন আছে?ওর জন্য মনটা অনেক আনচান করছে। যেখানে থাকুক,আল্লাহ যাতে ওকে ভালো রাখে।অনেক মিস করছি আয়িশ। অনেক ভালোবাসি তোকে।(মনে মনে)

🌨️🌨️🌨️

বাম হাতের অনামিকা আঙুলের দিকে তাকালাম।সাদা ডায়মন্ড পাথরটা রোদের আলোয় ঝিলিক দিলো।তার মানে আমার আয়িশ ভালো আছে।
সেখান থেকে চোখ সরিয়ে ওয়াহাবের দিকে তাকাতেই দেখি ব্যাটা খারুশ, আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেন জানি তার চাহনীতে আমার খুব বিরক্ত লাগছে।

তাজিনঃ ভাইয়া চলো,এবার ফিরতে হবে তো।
ওয়াহাবঃ হ্যাঁ,চল।

তাজিন আমাকে ধরে ধরে নিয়ে সাদা ময়ূরের গাড়িতে বসালো।আমরা বসতেই ময়ূরগুলো গাড়ি টানতে শুরু করলো।নিজেকে কেন জানি এখন রাজকুমারী সিন্ডারেলা মনে হচ্ছে। ঠিক সেরকম দেখতে গাড়ি, রাজপুত্র, সৈন্য সবই আছে। কিন্তু আমার সেই সিন্ডারেলা পোশাকটা ও আমার আয়িশ শুধু নেই। এতক্ষণ ধরে বাকি সৈন্যরা আমাদের দিকে মনোযোগ দিয়ে ছিলো।এখন তারা ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে চললো। সবার প্রথমে মুশতাক আবসার ওয়াহাব। তারপর সেনাপতি আমজাদ।তারপর আমাদের ময়ূর গাড়ি। সবার পেছনে বাকি সৈন্যরা।

বেশ কিছু রাস্তা যাওয়ার পর আমি ঢালু রাস্তা দেখতে পেলাম।আমার কাছে মনে হচ্ছিলো এখান থেকে পরলে সোজা নিচে আর নিচের থেকে সোজা উপরে, আল্লাহর কাছে চলে যাবো।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওয়াহাব কিছু একটা বিরবির করে পরে দুইটা তালি বাজাতেই ঢালু জায়গা সমান হয়ে মাটি ফেটে ভেতরের দিকে রাস্তা হয়ে গেল।ময়ূর রাজ্যটা মনে হয় মাটির নিচে।আমরা সেই রাস্তায় নামতেই আমি পিছন ঘুরে আর জঙ্গলের টিকিও দেখতে পেলাম না। পেছনের সবকিছু কুয়াশার মতো ধবধবে সাদা।এই জন্যই বোধহয় কোন মানুষ এই জঙ্গল খুঁজে পায় না।সবার কাছে এই জঙ্গল শুধুমাত্র ধোঁয়াসা।যদি কেউ বাই চান্স খুঁজে পেলেও, সে আর বাড়ি ফিরতে পারে না।কারণ ঢোকার রাস্তাটা যত সহজ বের হওয়ার রাস্তা তার চেয়ে শতগুণ কঠিন।

তাজিন মেয়োটা ভীষণ ভালো। এক মুহুর্তে আমার সাথে মিশে গেছে।রাজপ্রাসাদে এসেই কত শত গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে আমি তার কত আগের চেনা।মিশুক টাইপের মেয়ে আমার অনেক পছন্দ।
রাজপ্রাসাদে ঢোকার পর ওয়াহাবকে আমি আর দেখিনি।কক্ষে চুপ করে বসে আছি।সারা কক্ষে একটা সাদা ময়ূর ঘুরঘুর করছে। মনে হচ্ছে সে আমাকে খুব সিরিয়াস হয়ে আমাকে পাহারা দিচ্ছে।সারা রাজপ্রাসাদের চারিদিকে শুধু সাদা ময়ূরের ছড়াছড়ি। তখনি সাদা ড্রেস হাতে প্রবেশ করলো তাজিন।সে এসে বললো এই বিশাল ময়ূর ড্রেসটা নাকি ওয়াহাব পাঠিয়েছে।

সেই বিশাল বড় গোল জামা দিয়ে বললো জামা পাল্টে নিতে।পুরো জামা ধবধবে সাদা। তার মধ্যে ময়ুরের পালকের ডিজাইন। দেখে মনে হয় ময়ূরের পালক দিয়ে বানানো।তাদের রাজ্যের সবাই নাকি এই পোশাক পরে।আমি থ্রি পিস পাল্টে নিজের জামার দিকে তাকিয়ে হা করে আছি।এখন আমাকে মেঘকন্যা নয় ময়ূর কন্যা মনে হচ্ছে।ড্রেসের অনেক খানি অংশ ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি যদি এই ড্রেস পরে কক্ষে ও সারা রাজপ্রাসাদে একটা চক্কর মেরে আসি।তাহলে রাজকর্মীদের আর কষ্ট করে রাজপ্রাসাদ বা কক্ষ কোনটাই মোছা বা ঝাড়ু দিতে হবে না।ড্রেসটা কোনমতে দুইহাতে সামলে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই আৎকে উঠি। আল্লাহ এসব কি________

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here