মুগ্ধতায় মুগ্ধ♥,Part_15+16+17

মুগ্ধতায় মুগ্ধ♥,Part_15+16+17
Labiba_Islam_Roja
Part_15
.
🍁
চিন্তিত মুখে শুয়ে আছে মুগ্ধতা।কি করে কি করবে বুঝতে পারছে না।যতবার উঠার চেষ্টা করছে ততবারই আরো চেপে ধরছে মুগ্ধ।যেন ঘুমে নয় জেগেই আছে ও।কিছুটা নড়েচড়ে ওকে জড়িয়ে আবারও শুয়ে পরছে।উপায়ান্তু না দেখে ওকে ডাকতে শুরু করলো মুগ্ধতা।কিন্তু কথাগুলো যেন কানেই যাচ্ছে না ওর।তবুও বিরক্ত গলায় এক নাগারে ডেকে চলেছে….!!
.
~~~এই যে শুনছেন….?
.
কয়েকবার ডাকার পর বিরক্তি ভরা চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো মুগ্ধ…..
.
_____না শুনতে পাচ্ছি না!ঘুমিয়ে আছি বলে আবারও চোখ বন্ধ করে মুগ্ধতা কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
মুগ্ধুর এমন ব্যবহারে থ হয়ে গেলো মুগ্ধতা।আজব যদি ঘুমিয়েই থাকেন তাহলে কথা বলছে কি করে।আর ঘুমাবি ঘুমা না তাতে আমার কি! আমাকে ছেড়ে ঘুমালেই তো হয়।কর্কশ কন্ঠে আবারও বলে উঠলো মুগ্ধতা…..
.
~~~আরেহ!ঘুমিয়ে আছেন যখন তখন কথা বলছেন কি করে।ঘুমে নেই তাই তো কথা বলতে পারছেন।এই যে শুনুন আমাকে ছেড়ে দিয়ে তবে ঘুমান।আমি আপনার কোলবালিশ নই যে ইচ্ছে মতো চেপে ধরবেন বুঝছেন…!!
.
____ধুর তুমি আমার কোলবালিশ হতে যাবে কেন…?তুমি আমার বউ!একমাএ বউ।যাকে আমার যেরকম ইচ্ছা সেরকম ভাবেই ধরতে পারি।
.
মুগ্ধর কথায় শকড মুগ্ধতা।ঘুমের মধ্যে মানুষ স্বাভাবিকভাবে এত কথা বলে কি করে…?তাহলে সত্যি সত্যি উনি ঘুমে নয় জেগে আছেন।রাগে সারা শরীর রিরি করছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
.
~~~~আপনি আমাকে ছাড়বেন কি না…?দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু!
.
কোনোকথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো মুগ্ধ।অনেক্ক্ষণ বকবক করার পরও কোনোকথা বললো না।অনেকক্ষণ পর বললো মুগ্ধ……
.
_____এই তুমি এত নড়াচড়া করো কেন…?স্থির হয়ে শুয়ে থাকতে পারো না।নিজে ঘুমাবে না বলে অন্যকেও ঘুমাতে দেবে না। ভারী হিংসুটে মেয়ে তো তুমি।
.
ওর কথায় ক্ষেপে গেলো মুগ্ধতা।ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো…..
.
~~~আপনার ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমান না।কে মানা করেছে।আমি শুধু বলছি আমাকে ছাড়েন আমি এখন উঠবো।তারপর আপনি যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ ঘুমান।সারাদিন সারারাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ৭২ ঘন্টা ঘুমান আমি ডাকা তো দূরে থাক ফিরেও তাকাবো না।কিভাবে নির্লজ্জের মতো শুয়ে আছেন।ছাড়ুন আমায়।
.
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দিলো মুগ্ধ।একটু আলগা হতেই এক লাফে উঠে বসলো মুগ্ধতা।প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে হয়তো নিশ্বাস আটকেই মারা যেত সে।মুগ্ধ এখনও শুয়ে আছে।আধো আধো চোখে মুগ্ধতার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।হঠাৎ চোখ বুজা অবস্থায় বলে উঠলো মুগ্ধ……
.
_____আচ্ছা আমাকে কি তোমার কাঠ মনে হয়…?জানো সারারাত আমার বুকে শুয়ে ছিলে।একচুলও নড়তে দাও নি আমায়।তাই এই সাত সকালে তোমার উপর শোধ তুললাম।এবার ঠিক আছে বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
.
মুগ্ধর কথায় অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালো মুগ্ধতা।মুগ্ধতা সারারাত ওর বুকে শুয়ে ছিলো।মোটেও না।যদি এটা হয় তাহলে কি লজ্জা!কি লজ্জা!লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মুগ্ধতা।তখনই আবার মুগ্ধ বললো……
.
~~~এত লজ্জা পাচ্ছ কেন…?জানো লজ্জা পেলে তোমাকে দারুন দেখায়।আমার সামনে কখনও কোনোকিছুর জন্য লজ্জা পেও না।পেলে কিন্তু খবর আছে।কারণ তোমার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখলে…..কথাটা শেষ করেও করলো না।আটকে গেলো।
.
মুগ্ধতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।লজ্জা পেলেও দোষ।আজব লোক তো।
.
_____এই যে শুনুন।আমি নিজেকে খুব ভালো করে চিনি।আমি কখনও কারো উপর হাত পা তুলি না সেই জায়গায় আপনি বলছেন।না না সব মিথ্যা।এইসব আপনি করেছেন আর এখন দোষ দিচ্ছেন আমায়।
.
~~~~আমিও নিজেকে খুব ভালো করে চিনি বুঝছো যে ছেলে কোলবালিশ ছাড়া ঘুমায় সে কিনা তোমাকে জড়িয়ে ঘুমাবে!ইম্পসিবল ।তাছাড়া তোমার অনেক পরে আমি ঘুমিয়েছি।আমি ঘুমাতেই দশ মিনিটের মাথায় ধুরুম করে আমার বুকে এসে শুয়ে পড়লে।তারপর সারারাত নড়তে না দিয়ে কি অত্যাচারটাই না করলে উফ!।আচ্ছা এটা অস্বীকার করার কি আছে বুঝতে পারছি না।
.
_____কারণ আছে!!যেই কাজটা আমি করিনি সেটার দায়ভার কেন আমি নিতে যাবো।নিব না!
.
~~~তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।আমি ঘুমাবো আর ডিস্টার্ব করো না।সবাইকে বলো আমার ঘুম ভাঙলকে উঠে পরবো।
.
.

সকালের ফোনের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো মিতুলের।এই মূহুর্তে এই শব্দটাকে পৃথিবীর সবথেকে বিচ্ছিরি আর বিরক্তিকর মনে হচ্ছে ওর।প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেকেন্ডবার কল আসলো এবার কানের মধ্যে বালিশ চেপে শুয়ে পড়লো।আবার কি ভেবে চোখ খুলে অলস হাতে ফোন নিলো।ফোনের স্কিনে আফিফের নাম দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর।ফোন রিসিভ করে আধো আধো গলায় বললো
.
____হ্যালো…..
.
অপর পান্ত থেকে বললো…..
.
~~~শুভ সকাল।কি মহারাণী মনে হয় এখনও ঘুমিয়ে আছো।
.
আফিফের কথায় মুচকি হাসলো মিতুল।হাসির রেখা ধরে রেখে বললো…..
.
_____হুম!!শুভ সকাল।আপনি এত সকালে…?এনি প্রবলেম…?
.
~~~আফিফ কিছুটা হাসলো।এখন আপনার জন্য সকাল হলেও আমার জন্য প্রায় দুপুর।বেলা এগারোটায় সকাল কোথায় পাবে হুম।আর হ্যাঁ আমি বুঝি শুধু নিজের প্রবলেমের জন্যই কল করি(অভিমানী সুরে)।এমনি বুঝি কল দেই না
.
নিজের বলা কথায় নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মিতুল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটার কাটা ছুঁইছুঁই।
.
_____আরে বাবা আপনি কথাটা ওইভাবে নিচ্ছেন কেন…?আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম তাই কবে যে এতটা বেলা হয়েছে বুঝতে পারিনি ভাবলাম সকাল হয়েছে সবে আর তার মধ্যেই আপনার কল।তাই বলছিলাম।
.
~~~হুম!! অবশ্য প্রবলেম একটা আছে।
.
_____কি প্রবলোম…?
.
~~~আজ মুগ্ধতার রিসেপশন সেখানে আমাদের সাথে তুমিও যাবে!

~~~সরি সরি!কিছু মনে করবেন না।আসলে আমি আজ যেতে পারবো না।আপনারা যান এনজয় করেন।
.
_____সত্যি আসবেন না…?
.
~~ ~ নাহ!সম্ভব হলে যেতাম।কিন্তু বুঝতেই পারছেন।
.
মিতুলকে আর জোর করলো না আফিফ।কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো।মেয়েটা আসছে না শুনে নিমিষেই বুক ভারী হয়ে উঠলো ওর।তাহলে কি মিতুল ওকে চায় না।তাই ওর সঙ্গে থাকতে চায় না বলে আসতে চাইলো না।আফিফ কি তবে মরীচিকার পেছনে ছুটছে। যা ওর নয় তাকে আকড়ে বাঁচতে চাইছে।নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না আফিফ।আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।কিভাবে মুখের উপরে বলে দিলো আসতে পারবে না।ও কি বুঝে না কেন আফিফ এসব করে।হাজারো অভিযোগ মিতুলকে ঘিরে।যেই অভিযোগ গুলো জমা পড়েছে আফিফের মনের ডাক বাক্সে।

বেলা বারোটা…!! ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে এক ঝাঁক তরুন-তরুণী।যারা নিজেরা গল্পে আড্ডায় মেতে উঠেছে।রিদি,স্নেহা,রাতুল,হৃদয় সবাই এসেছে।তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছে মোহনা।মুগ্ধতা রান্নঘরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর শ্বাশুড়ির কড়া হুকুম তার বৌমা যেন কোনো কাজ না করে।তবুও ট্যাঠার মতো দাঁড়িয়ে আছে।এখন পর্যন্ত মুগ্ধ উঠার নাম গন্ধ নেই।এই নিয়ে তিনবার মুগ্ধ কে তোলার জন্য ওর মা পাঠিয়েছেন মুগ্ধতা কে।কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে সে।রান্নাঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ তিথিকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে গেলো মুগ্ধতা।দুজন দজনকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করলো।এতক্ষণে নিজের আপন বলতে কাউকে পাশে বসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মুগ্ধতা।এই মেয়েটা ওর সুখ দুঃখের সাথী।ওর খারাপ সময়গুলোতে ওকে অনেক সাপোর্ট করেছে।পাশে থেকেছে।সাহস যুগিয়েছে।বন্ধু শব্দ টা ছোট হলেও এর মর্মাত অনেক।একজন ভালো বন্ধু আয়নার মতো যার মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায়।
.
সকলের সাথে আড্ডায় মেতেছে মুগ্ধতা আর তিথি।সোফার এক কোণায় তিথির পাশে গুটি-শুটি মেরে বসে আছে ও।সিনিয়র সবার সামনে এভাবে বসে ইজিলি কথা বলতে পারছে না।হয়তো হঠাৎ হওয়ায় এমন হচ্ছে।এদিকে তিথির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতুল।তিথি মেয়েটাকে দেখলেই রাতুল কেমন পাগল হয়ে যায়।যেন নিজের মধ্যেই থাকে না।ওর মধ্যে হারিয়ে যায়।তিথি মেরুন কালারের ড্রেস পড়েছে।ছোট ছোট ভ্রু যোগলোর মাঝখানে সাদা সাদা ডাগর ডাগর চোখ।হালকা পাতলা ঠোঁট।হঠাৎ রাতুলকে ঠ্যাস দিয়ে রিদি বলে উঠলো……
.
___আচ্ছা তোর ব্যাপারটা কি বলতো…?যখনই তিথি সামনে আসে তখনই হা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকিস কেন….?তোদের মধ্যেও কিছু চলছে নাকি…..?
.
ওর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো রাতুল।রিদি বুঝে ফেলেছে নাকি সর্বনাশ।
.
~~~ধ্যাৎ এমনি তাকিয়ে ছিলাম।শুধু তাকালেই কিছু চলতে হবে নকি পাগলি কোথাকার।
.
______তুই কিছু বলছিস না তো!ডোন্ট ওরি আমি ঠিক জেনে যাবো দেখে নিস।
.
রিদির প্রতিওোরে আর কিছু বললো না রাতুল।এখন কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নাই।রিদি একবার সন্দেহ করেছে মানে সব বের করে তবেই ছাড়বে।হঠাৎ সবাইকে অবাক করে তিথিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়লো রিদি……
.
~~~এই তিথি তুমি নাকি প্রেম করছো…?
.
রিদির কথায় হালকা বিষম খেলো তিথি।তিথির মুখের দিকে বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।বেস্টু প্রেম করছে আর মুগ্ধতা জানে না।ওকে জানায় নি অথচ রিদি জেনে গেছে হাউ স্টঞ্জ!তিথি আর মুগ্ধতা দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো আর মাথা নাড়িয়ে সে প্রেম করছে না বলে মুগ্ধতা কে আশ্বস্ত করলো।
.
_____তোমায় এই কথাটা কোন রাম ছাগল বলল আপু…?আমি প্রেম করছি নিজেও জানি না আবার আমার বেস্টুও জানে না।এ কেমন প্রেম আপু।
.
তিথির কথায় ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে উঠলো সবাই।হাসি থামিয়ে হৃদয় বলল……
.
~~~রাম ছাগল!!কি সুন্দর নাম তাই না রিদি।এটা যার বিয়া তার খবর নাই,পাড়া পরশীর ঘুম নাই হয়ে গেলো না রিদি।
.
সকলের কথায় খুব বিরক্ত রিদি।কই ভেবেছিলো কিছু একটা বের করবে তা আর হলো না।তাই বললো…..
.
_____কোন এক রাম ছাগল হবে।তবে আমাকে বলে নি ডিরেক্ট তোমরা প্রেম করছো।আসলে ওই রাম ছাগলের হাবভাব দেখে আমি আন্দাজ করেছি।
.

~~~আন্দাজে কোনো কথা বলো না আপু।জেনে শুনে তারপর বলবা।আর হ্যাঁ রাম ছাগল টা কে গো…?
.
রাতুলের দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো রিদি।মুখ ছোট করে বসে আছে।তিথি এভাবে সবার সামনে রাম ছাগল বানিয়ে দিলো।এখন চিন্তায় পড়েছে রাতুল যদি ওর নামটা বলে দেয়।আর রিদি যেই ধরণের মেয়ে বলে দিতেও পারে।চোখ মুখের ইশারায় নাম বলতে বারণ করছে রাতুল।তাও রাতুলকে ভয় দেখাচ্ছ……
.
_____রাম ছাগলটার নাম…..ধুর বোকা মেয়ে রাম ছাগল তে রাম ছাগলই হয়।ওদের আবার আলাদা কোনো নাম হয় নাকি।
.
এতক্ষণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো রাতুল।যাক অবশেষে বলেনি।
.
মুগ্ধতা কে উদ্দেশ্য করে আবারও মুগ্ধ কে ঘুম থেকে তোলতে বললেন ওর মা।তিনবার গিয়ে ও ব্যর্থ এবারও যদি ব্যর্থ হয়।কিন্তু না এবার আর ব্যর্থ হলে চলবে না।যেভাবেই হোক এখন ওকে তুলবেই তুলবে।রুমে গিয়ে বার দুয়েক ডেকে একটা কান্ড ঘটালো মুগ্ধতা।মুগ্ধতা এমন কিছু করতে পারে ভাবতেও পারেনি মুগ্ধ…..!!
.
.
চলবে……

মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
Labiba_Islam_Roja
Part_16
.
🍁
বার দুয়েক ডাকার পরও যখন মুগ্ধ উঠলো না তখন ওর চুল টেনে ধরলো মুগ্ধতা।এতটা জোরে জোরে টানছে যে ঘুমে মধ্যেই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠছে মুগ্ধ।প্রথমে হালকাভাবে দিলেও যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন খুব জোরেই চুল টানতে লাগলো।ব্যাথায় গেংগাতে গেংগাতে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে মাথার চুল ধরে বিছানায় উঠে বসলো সে।মুগ্ধ কে উঠতে দেখে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মতো হাসি দিলো মুগ্ধতা।ওর মুখ দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে মাএ যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে।ব্যাথায় টান টান হয়ে আছে পুরো মাথা। তার উপর মুগ্ধতার হাসি জাস্ট সহ্য হচ্ছে না মুগ্ধর।এই মেয়ে এমন কান্ড ঘটাতে পারে এটা কখনও ভাবতেও পারেনি।বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে রাগে গজ গজ করছে।সেদিকে খেয়ালই নেই মুগ্ধতার।সে এক কোণে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে।রাগী কন্ঠে বললো মুগ্ধ…….
.
~~~হাউ ডেয়াট ইউ…..!!আমার চুল টেনে ছেঁড়ার সাহস হলো কি করে তোমার।তাও আমি যখন গভীর ঘুমে ছিলাম তখন।জানো এই চুলগুলো কত শখের আমার।আর তুমি সেই চুলগুলোকে উফ!কি করে করলে এটা এ্যান্সার মি ড্যামেট….!!
.
মুগ্ধর চিৎকার শুনে ভয়ে আঁতকে উঠলো মুগ্ধতা।এতটা বাড়াবাড়ি হবে ভাবতে পারেনি ও।ভেবেছিলো খুব স্বাভাবিক নিয়মে মুগ্ধ খুব একটা রাগ করবে না।হালকা পাতলা কথা শুনালেও কিছুই হবে না কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হলো।ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো…..
.
_____আসলে আমি ভাবতে পারিনি এতটা হয়ে যাবে।আপনাকে অনেকবার ডাকার পরও যখন উঠছিলেন না তখন এই বুদ্ধি টা মাথায় খেললো তাই আর কি!এদিকে আপনার বন্ধু প্লাস আপনার মা আপনাকে তোলার জন্য বার বার বলছে।তো আমি কি করবো বলুন।
.
রাগে নিজের মাথার চুলগুলো এখন নিজেই টানছে মুগ্ধ।কি করে এতটা ইডিয়ট হতে পারে মেয়েটা।আমাকে ভালোবাসে না ঠিক আছে তাই বলে এরকম একটা কাজ করবে।মানুষ বলে তো আমার উপর একটু মায়া থাকা উচিৎ ছিলো।কিন্তু সেটাও থাকলো না।কথাটা ভেবেই বুক ভারী হয়ে উঠলো মুগ্ধর।দাঁত কিড়মিড় করে বললো…..
.
~~~সবাই আমাকে ঘুম থেকে তুলতে বলেছিলো মানছি।তাই বলে তুমি এভাবে আমার চুল টানবে।কেন পৃথিবী তে মানুষকে ঘুম থেকে তুলার জন্য আর কোনো ওয়ে নাই…?মুগ্ধতা বি সেনসেটিভ!
.
চোখ দুটো পানিতে ভরে গেছে মুগ্ধতার।মানছে অন্যায় করেছে তাই বলে এভাবে চিৎকার করে কথা বলতে হবে কেন….?বুঝিয়ে বললে কি বুঝতো না! নাকি এতোটাই অবুঝ।নাগ টেনে বললো……
.
_____এতক্ষণ তো আমাকে বকলেন এখন যে নিজেই নিজের চুল টানছেন তাঁর বেলায় কিছু না তাই না।নিজে করলে দোষ নাই আর অন্যরা করলে দোষ।ঠিক আছে আমি দুঃখীত!বুঝতে পারিনি।রাগ করবেন না প্লিজ!
.
এতক্ষণ ধরে মুগ্ধতার দিকে না তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলো মুগ্ধ।এবার রাগী চোখে একবার মুগ্ধতার দিকে তাকালো।মুগ্ধতার চোখের পানি দেখে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ওর।মুগ্ধতা কে কখনও কাঁদতে দেখতে চায় না কিন্তু আজ ও নিজেই ওর কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।বিছানা থেকে অলস পায়ে নিচে নামলো সে।একটু একটু করে এগিয়ে গেলো মুগ্ধতার কাছে।।একটু আগেও মেয়েটার মুখে হাসি ছিলো আর এখন কাঁদছে সবটাই হয়েছে মুগ্ধর জন্য।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ওর চোখ মুছে দিতেই চোখ তুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো মুগ্ধতা।নরম কন্ঠে বললো……
.
~~~আই’এম সরি মুগ্ধতা!আসলে ঘুম থেকে উঠে মাথার ঠিক ছিলো না।তাই এত বেশি রিয়াক্ট করে ফেলেছি।যা উচিৎ হয়নি আমার।প্লিজ কেঁদো না।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।লোকটার আচরণ কখণও বুঝতে পারে না মুগ্ধতা।যদিও এখন পুরোটা ভুল ওর তবুও কেমন শীতল কন্ঠে ক্ষমা চাইছে।যেখানে ওরই বেশি দোষ।
.
.

বেলা প্রায় এক টা….!!টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট গায়ে দিয়ে নিচে নামলো মুগ্ধ।ওকে দেখেই হাসির রুল পরে গেলো পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে।সকলের জন্য কফি বানাতে রান্নাঘরে ঢুকেছে মুগ্ধতা।ও খুব ভালো কফি বানাতে পারে কথার প্রসঙ্গে তিথিই বলেছে সবাইকে।তাই রিদি আর স্নেহার অনুরোধে মুগ্ধর মা’র কাছ থেকে রান্নাঘরে ঢুকার পারমিশন পেয়েছে মুগ্ধতা।সকলের হাসি তামাশা দেখে সরে গেলেন উনি।ছোটদের মাঝখানে থাকা বড্ড বেমানান।সকলের হাসির উৎস একটাই একদিনেই এত অধঃপতন মুগ্ধর।বউ পেয়ে বন্ধুদের প্রায় তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখলো।যে কিনা বন্ধু মহল বলতে অজ্ঞান সেই ছেলে এই কাজ করলো ভাবতে পারছে না ওরা।রিদির মাথায় গাট্টা মেরে বললো মুগ্ধ……
.
______আমার বউকে জড়িয়ে অকারণে একটাও ফালতু কথা বলবি না।কারণ তোরা জানিস আজ অনেকদিন হলো আমি ঠিকমতো ঘুমাই না।কারণটাও তোদের অজানা নয়।আর গত দুইদিন এই তোদের জন্য একে বারেই ঘুমাতে পারিনি সেটাও জানিস।আর আজ রাতে…..বলেই মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো মুগ্ধ……তাই বুঝতেই পারছিস কেন আজ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি।
.
সকলে হা হয়ে তাকিয়ে আছে মুগ্ধর দিকে।এদিকে রান্নাঘরে লজ্জায় মরে যাচ্ছে মুগ্ধতা।উনার মুখে কি কিছুই আটকায় না।সবার সামনে নির্লজ্জের মতো আমার বউ বলছেন।কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর একসাথে ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে উঠলো সকলে।আচমকা সকলের হাসি দেখে বোকা বনে গেলো মুগ্ধ।এখন সবার হাসির কারণ খুঁজতে ব্যস্ত ও।হঠাৎ রিদি বললো……
.
~~~সবটাই জানি!সবটাই বুঝি!তবুও এভাবে একা একা এতক্ষণ মরার মতো না ঘুমালেও পারতিস।তোর জন্য মেয়েটাকে চারবার উপর নিচ করতে হয়েছে।ভাবতে পারছিস।
.
নিচের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো মুগ্ধ…..
.
_____সেই চার বারের শোধ এক বারেই আমার চুলের বারোটা বাজিয়ে তুলে নিয়েছে।সবার কাছে যতটা চুপচাপ আমার কাছে ততটাই ধূর্ত আর চঞ্চল।
.
কিছুক্ষণেই চলে এলো সকলের কফি।মুগ্ধতা নিজ হাতে সবাইকে কফি দিচ্ছে।ইতিমধ্যে মা ও এসে বসেছেন সোফায়।মুগ্ধর হাতে কফি তুলে দিতেই তৃপ্তির হাসি হাসলো মুগ্ধ।সকলেই প্রসংশায় পঞ্চমুখ।।মেয়েটার হাতে যাদু আছে।এই বাড়িতে এসে প্রথমবার কিছু বানালো মুগ্ধতা।আর সেটায় খুশি হয়ে ওকে একটা চেইন উপহার দিলেন ওর শাশুড়ী।
.
.

মুগ্ধতা দের বাসায় যাওয়ার জন্য সকলে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় সামনে এসে দাঁড়ায় মিতুল।মিতুলকে দেখেই চমকে উঠে আফিফ।মেয়েটা তো আসবে না বলেছিলো তাহলে।হা করে তাকিয়ে আছে মিতুলের দিকে।আফিফকে স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো মিতুল…..
.
~~~কি হলো আমাকে আশা করেন নি তাই না।এভাবে হা হয়ে আছেন যে….?
.
____কপাল কুঁচকে…..আশা করার কি কথা।না বলে ছিলো তো!
.
~~~”না”বলে আবার আসতে ইচ্ছে করলো যে।যদি আপনার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে চলে যাবো নো প্রবলেম।
.
______আমার সমস্যা হতে যাবে কেন…?আর যদি সমস্যা হতো তাহলে কিছুতেই আসার জন্য রিকুয়েষ্ট করতাম না।খুব তাড়া আছে তোমার তাই না।
.
~~~কই না তো! কাজ ছিলো এখানে আসার জন্য বাদ দিয়া দিছি।ভেবেছিলাম ছুটি পাবো না কিন্তু শেষমেশ পেয়ে গেলাম দেন চলে আসলাম।
.
_____ওহহ!!
.
~~~আপনারা বেড়িয়ে পরছিলেন বুঝি।আরেকটু লেইট হলে তো আমার যাওয়াটাই হতো না।
.
______আচ্ছা বাই এনি চান্স আপনি কি রেগে আছেন আমার উপরে।এভাবে চুপচাপ কখনও কথা বলেন না।তাহলে আজ কি হলো।
.
~~~নাহ!কিছু না।আর রাগ করতে যাবো কেন,…?তুমি আমার কি হও গার্লফ্রেন্ড না বউ।
.
ওদের কথার মাঝেই চলে এলো সবাই।আফিফের খুব রাগ হয়েছে মিতুলের উপর।খুব করে বললো কিন্তু মুখের উপর না করে দিয়েছিলো।তাই মিতুলের উপর খুব অভিমান হয়েছে ওর।এদিকে আফিফের এতটা চুপচাপ থাকার কারণটা বুঝতে পারছে না মিতুল।যে স্বভাব সুলভ খুব মিষ্টি ভাষায় কথা বলে আজ সেই কিনা কেমন ধাঁরালো ভাবে কথা বলছে।আফিফের কথা বলার ধরণ একদম ঠিক লাগছে না ওর কাছে।কিন্তু সবাই থাকায় কিছু বলতেও পারছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই মুগ্ধর বাসার উদ্দেশ্যে সকলে বেড়িয়ে পরলো।
.
.
🥀
মুগ্ধতা কে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক আনিয়েছে মোহনা।তারা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে ওকে।খয়েরী রঙের ভারী লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি।হাতে চুড়ি আর ব্রেসলিট।কানে বড় কানদুল।চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া এতে চোখ গুলোকে বড় বড় দেখাচ্ছে।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।মুগ্ধতা আর মুগ্ধ বসে আছে পাশাপাশি চেয়ারে।।আঁড়চোখে বারবার দেখে চলেছে মুগ্ধতা কে।রোজ রোজ নতুন করে ওর প্রেমে পড়ে মুগ্ধ।
.
কিছুক্ষণেই চলে এলো আফিদের বাসার সবাই শুধু অন্যান্য বাদে।আঙ্কেল কে জড়িয়ে কান্না শুরু মুগ্ধতার।একে একে সকলে দেখা করে গেলো তার সাথে।কাপল ড্যান্সের মাধ্যমে শেষ হলো অনুষ্ঠান।কাপল ড্যান্সের জন্য রাতুল কন্টিনিউয়াসলি ডেকে চলেছে মুগ্ধতা আর মুগ্ধ কে।কিন্তু মুগ্ধতা নাচতে জানে না সো সে নাচবে না।কিন্তু রাতুল রিদি নাছোড় বান্দা।ওদের কিছুতেই ছাড়বে না।যাদের ওনারে এই সবকিছু তারাই নাচবে না তা আবার হয় নাকি।জোর করে ওদের পাঠিয়ে দিলো স্টেজে।লজ্জায় মরে যাচ্ছে মুগ্ধতা।সকলের সামনে কিভাবে নাচবে সেই চিন্তায় বিভোর।নিচের দিলে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও।মুগ্ধ নিজের ডান হাতটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে।কিছুক্ষণ পর হাতটা ধরে নিলো মুগ্ধ।রাতুল তিথি স্নেহা রিদি হৃদয় সবাই উঠে গেলো।রিদি একটু প্ল্যান করে তিথি আর রাতুলকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ড্যান্সের সুযোগ করে দিলো।যদিও রাতুল চায় নি তবুও জোর করে চাপিয়ে দিলো ওর গাড়ে।আফিফ কে আর মিতুলকে নিয়ে এলো তিথি।তারা দুজনে নাচবে একসাথে।হৃদয় আর রিদি নাচবেও।শুধু স্নেহারই কোনো পার্টনার নাই।কিন্তু তাতে আপসোস নেই ওর।কারণ ও চায় না এসবে থাকতে।খুব বোরিং লাগছে সবকিছু।স্টেজের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো ও।
.
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর যে যার বাসায় চলে গেলো।মুগ্ধতা কে রাতের খাবার খাইয়ে দিলেন ওর শ্বাশুড়ি মা।ব্যাথায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে ওর।মুগ্ধ এঝনও রুমে আসেনি।ফ্রেন্ডসদের সাথে আছে।শাওয়ার নিয়ে মাথার উপর হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শুয়ে আছে মুগ্ধতা….!!
.
.
চলবে….….

মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
Labiba_Islam_Roja
Part_17
.
🍁
হঠাৎ মাথায় কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মুগ্ধতা।তাড়াতাড়ি করে হাত সরিয়ে চোখ খুলে তাকালো।সামনে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।চোখে মুখে চিন্তার চাপ।গভীর চাহনী দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে চলেছে মুগ্ধতাকে।মুগ্ধ কে দেখে হকচকিয়ে উঠে বসলো মুগ্ধতা।আমতা আমতা করে বললো…..
.
~~~~কি হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন….?আর আপনাকে এত চিন্তিতই বা দেখাচ্ছে কেন…?কারোর কিছু হয়েছে বুঝি….?
.
মুগ্ধতার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না মুগ্ধর।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।মুগ্ধতার ঠিক কি হয়েছে সেটা বুঝার চেষ্টায় আছে।কিছুক্ষণ পর বললো মুগ্ধ…..
.
____তোমার মাথা ব্যাথা করছে রাইট!
.
মুগ্ধর কথায় খানিকটা হতবাক হলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ বুঝলো কিভাবে।এ ব্যাপারে তো কাউকে বলে নি তাহলে।আমতা আমতা করে বললো……
.
~~~না আবার হ্যাঁ কিছুটা!ও ঠিক হয়ে যাবে।
.
তার মানে মুগ্ধর অনুমানই ঠিক।সারাদিনের দকলে মুগ্ধর মতো ওর ও মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।মুগ্ধ একটা ছেলে হয়েও সহ্য করতে পারছে না আর মুগ্ধতা তো একটা মেয়ে কি করে পারবে।ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতে বললো মুগ্ধ……
.
______জানো মুগ্ধতা আগে যদি জানতাম ঘটা করে বিয়ে করলে এত কষ্ট করতে হয় তাহলে বিশ্বাস করো এই ঝামেলায় কখনও নিজেকে জড়াতাম না আমি।বাবা!কি স্ট্রেস নেওয়া যায় নাকি।তার চেয়ে নরমাল একটা বিয়ে করতাম যেখানে মোট ১০-১২ জন লোক থাকতো আর রিসেপশন সেটা একেবারেই করতাম না।দেখ এই বিয়ের ঝামেলা তোমার শরীর নিতে পারছে না।
.
মুগ্ধর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।লোকে কত শখ করে ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করে সেখানে উনি নিজের কষ্টের কথা ভেবে এভাবে বিয়ে করতে চাইতেন না হাউ ফানি!!ভেবে খিলখিল করে হেসে উঠলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।ও হাসলে গালে কি সুন্দর টোল পড়ে।এতদিন এই জিনিসটা খেয়াল করিনি মুগ্ধ।আজ দূর থেকেও চোখে পড়ছে।হঠাৎ মুগ্ধতা বললো……
.
~~~~কথাগুলো আপনি বলছেন সিরিয়াসলি!!বিশ্বাস হচ্ছে না।সবাই যেখানে লোক দেখিয়ে জাঁকজমকভাবে বিয়ে করে সেখানে আপনি!বলে আবারও হেঁসে উঠলো।

অনেক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর মুগ্ধ পেয়ে গেলো তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা।মুগ্ধতার পাশে বসে আনমনে বললো…….
.
______দেখ সবাই আর আমি এক না!আমি লোক দেখানোর জন্য কিছু করতে রাজি নই।আমার কাছে সবার আগে আমার ভালোবাসা।আমার ভালোবাসা যেভাবে ভালো থাকবে আমি সেভাবেই ভাবতে রাজি।

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।উনার ভালোবাসা মানে! মানে কি।মুগ্ধতার ভাবনার মাঝেই এক গ্লাস পানি আর একটা ট্যাবলেট এগিয়ে দিলো ওর দিক।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো…..
.
~~~এটা কিসের ঔষধ….?
.
_____এটা মাথা ব্যাথার ঔষধ।তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

মুগ্ধতা বারবার অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।ঔষধ হাতে নিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।তারপর শুয়ে বললো…..

~~~লাগবে না!আপনি শুয়ে পড়ুন।ঔষধ খেয়েছি এমনি ঠিক হয়ে যাবে।

চাদরটা টেনে মুগ্ধতার পাশে বসলো মুগ্ধ।কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকালো।চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে ও।আবার কিছুটা কাঁপছেও।

_____ও তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার ঘুম আসলে আমি ঠিক ঘুমিয়ে পরবো।বলেই মুগ্ধতার মাথায় বিলি কাটতে লাগলো মুগ্ধ।সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালো মুগ্ধতা।বললো…..
.
~~~~লাগবে না বললাম তো!আপনিও সারাদিনে কত ক্লান্ত।আপনারও রেস্ট প্রয়োজন।তাই শুয়ে পড়ুন আমি ঠিক হয়ে যাবো।
.
মেয়েটির কথায় চরম বিরক্ত মুগ্ধ।সেটা ওর পেঁচার মতো মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।একটু ধমকের সুরে বললো…..

______তোমাকে ঘুমাতে বলেছি ঘুমাও।এর চেয়ে বেশি কথা বলো না।যখন যেটা বলি শোনে আর হ্যাঁ মনে রেখো আমি কখনও তোমার খারাপ চাইবো না।সো নো টক ওকে!

মুগ্ধর ধমক শুনে কেঁপে উঠলো মুগ্ধতা!আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো।মুগ্ধতা বাধ্য মেয়ের মতো ঘুমাচ্ছে দেখে প্রশান্তির হাসি হাসলো মুগ্ধ।কিছুক্ষণেই ঘুমের দেশের অতলে তলিয়ে গেলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ নিজে ঔষধ খেয়ে মুগ্ধতা কে কিছুক্ষণ দেখে সেও তার প্রিয়তমাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
.
.
এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেরে মিতুলের সামনে বসে আছে আফিফ।খুব আর্জেন্ট একটা কথা বলার জন্য মিতুলকে ডেকেছে সে।অনেকদিন হলো মিতুলকে ভালোবাসে কিন্তু বলার মতো সময় সুযোগ কোনোটাই হয় নি।আজ খোলাখুলি মিতুলকে মনের কথা বলতে চায়।তাই আর্জেন্ট বলে ডেকে পাঠিয়েছে এখানে।হতভম্ব চোখে আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে মিতুল।আফিফ ঠিক কি করতে চলেছে এতক্ষণে বুঝে গেছে মিতুল।মিতুলের চোখ বরাবর তাকিয়ে বলল আফিফ…….

~~~ভালোবাসা কাকে বলে কি করে হয় জানতাম না আমি।কিন্তু তোমাকে দেখার পর বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কি!তোমাকে যেদিন প্রথম হসপিটালে দেখেছিলাম তখনই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি আমি।তারপর তোমায় একটু দেখার জন্য উতলা হয়ে থাকতাম।তোমার বাসার সামনে রোদের মধ্যে কতদিন যে তোমায় এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে পাগলামি করেছি তাঁর কোনো হিসেব নাই।এখন প্রতি সেকেন্ডে তোমাকে চাই আমি।আমার প্রতিটা নিশ্বাসে মিশে গেছো তুমি।আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।

I Love You MiTul
Will You Merry Me……?

হতবাক নয়নে আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে মিতুল।আফিফ ছেলেটা কে কখনও খারাপ লাগে নি ওর।বরাবরই ওর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে।মিতুলের হ্যাঁ সূচক উওরের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছে আফিফ।ফুলগুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলল মিতুল……

_____ইয়েস!!

আর কিছু বলতে পারলো না । ইয়েস!শব্দ টা শুনে চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো আফিফের।লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।তবে তার না বলা কথা গুলো বুঝে নিতে সমস্যা হলো না আফিফের।চট করে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে।আজ ওর থেকে সুখি আর কেউ হতে পারে না!কেউ না।
.
.
সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলে তাকাতেই মুগ্ধর বুকের উপর নিজেকে আবিষ্কার করলো মুগ্ধতা।এটা আজকে নতুন নয়।এখন প্রতিদিনই এরকমটা হয়।রোজ মুগ্ধর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে মুগ্ধতা আর সকালে নিজেকে মুগ্ধর বাহুডোরে পায়।প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন আর এতটা খারাপ লাগা কাজ করে না।হয়তো ভালোই লাগে যেটা সিওর হয়ে বলতে পারবে না মুগ্ধতা।এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হয় না।কারণ কেউ এক চুলও ছাড় দিবে না।মুগ্ধ মুগ্ধতার উপর চাপাবে আর মুগ্ধতা মুগ্ধর উপর তাই এটা নিয়ে তর্কাতর্কি করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করে না মুগ্ধতা।রোজকার নিয়মে ঘুম থেকে উঠে সকলের জন্য কফি বানায় মুগ্ধতা।কারণ সকলেই ওর হাতের কফি খেতে খুব ভালোবাসে।তবুও ওর শাশুড়ী মা মানা করেছিলেন কিন্তু মুগ্ধতা সেটা মানে নি।জেদ করেই ভালোবেসে বানায় তাই উনি না করতে পারেন নি।রান্নাঘরে গিয়েই আমিনার কাছ থেকে জানতে পারলো মা অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছেন।মুগ্ধর বাবা মারা গেছে প্রায় পাঁচ বছর হলো।তারপর থেকে বিজনেস দেখাশোনা করেন উনি।মুগ্ধ মাঝেসাঝে যায় কিন্তু অতটা চাপ দেন নি কখনও।এই বয়সে ছেলেকে এত চাপে রাখতে চান না।মুগ্ধতা এখন ভার্সিটি যায়।ওর শাশুড়ী ওকে বাড়ীর বউ বলে ঘরে বেঁধে রাখতে চান না।লেখাপড়া করে যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই প্রচেষ্টায় আছেন উনি।মেয়েরা যেন কারো মাথার বোঝা না হয় নিজেই নিজের খরচ বহন করতে পারে সেটাই চান উনি।সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো।এখন গাড়ীতে যাতায়াত করে ওরা।মুগ্ধর মায়ের মতে বাইক একদম সেইফ নয় খুবই বিপদজনক তাই এই ব্যবস্থা ।মোহনাকে কলেজ নামিয়ে মুগ্ধ আর মুগ্ধতা চললো নিজেদের ভার্সিটি।রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়েছে অনেক্ক্ষণ হলো।বাহিরে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।।হঠাৎ রাস্তার পাশে একটি ছেলেকে চোখে পড়লো ওর।এইটুকু একটা ছেলে অনেকগুলো গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।খুব ইচ্ছে করছে ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখতে কিন্তু না এখন মুগ্ধকে কি করে বলবে!থাক লাগবে না।
.
মুগ্ধতা কে রেখে হঠাৎ গাড়ী থেকে নেমে গেলো মুগ্ধ।ও কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলল…..
.
~~~তুমি একটু বসো আমি এক্ষুনি আসছি।আর হ্যাঁ গাড়ী থেকে একদম নামবে না।

মুগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলো।সে গাড়ী থেকে নামবে না।কিছুক্ষণ পরই এক গুচ্ছ ফুল আর কিছু আইসক্রিম হাতে নিয়ে ফিরে এলো মুগ্ধ।মুগ্ধর হাতে ফুল দেখে মুগ্ধতার চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো।মুগ্ধতার দিকে ফুল আর আইসক্রিম গুলো এগিয়ে দিলো।চট করে ফুলগুলো হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।সুভাস নিতে লাগলো ও।মুগ্ধ চুপচাপ ওর কান্ড দেখে চলেছে।মেয়েটা কতটা সাধারণ তা ওর আচরণ দেখলেই বোঝা যায়।এই টুকুতেই এত খুশি হয়।হঠাৎ মুগ্ধর কথা শুনে ওর দিলে তাকালো মুগ্ধতা……
.
____শুধু ফুলগুলো দেখলেই হবে আইসক্রিম কে খাবে হুম…!!
.
ফুলগুলো কোলের উপর রেখে আইসক্রিমের প্যাকেট খুলতে লাগলো।মুগ্ধতার কান্ড গুলো আড়চোখে দেখে হাসছে মুগ্ধ।এগুলো অন্য কোথাও রাখলে বোধহয় কেউ নিয়ে যাবে।আইসক্রিম খুলে একটা এগিয়ে দিলো মুগ্ধর দিকে।মুগ্ধ হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।হঠাৎ মুগ্ধতার মাথায় একটা প্রশ্নের উদ্ভব হলো।
.

~~~আচ্ছা আপনি হঠাৎ এই ফুলগুলো নিয়ে এলেন কেন…?গোলাপ কি আপনার ফেবারিট….?
.
______নাহ! আমার না।তবে একজনের ফেবারিট।সেটা ফুলগুলোর প্রতি তাঁর গভীর চাহনী দেখেই বুঝতে পেরেছি।আর সেজন্যই এগুলো আনা।

তাহলে মুগ্ধ আমার জন্যই ফুল নিয়ে এসেছে।লোকটা কেমন অদ্ভুত টাইপের।কিছু না বলার আগেই কেমন করে যেন আমার সব প্রয়োজন বুঝে যান উনি।আচ্ছা উনি কি কোনো ম্যাজিশিয়ান নাকি….!!
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here