মুগ্ধতায় মুগ্ধ♥,Part_13+14

মুগ্ধতায় মুগ্ধ♥,Part_13+14
Labiba_Islam_Roja
Part_13
.
🍁
মুগ্ধ!!কিন্তু বরের নাম তো “মেহরাব”।তার মানে মেহরাবই মুগ্ধ!উনাকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকাচ্ছি আমি।বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।মুগ্ধর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি।তখনই ফিসফিস করে কানের কাছে বলে উঠলেন উনি……
.
~~~দিস ইজ নট ফেয়ার মুগ্ধতা!!এভাবে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে বরকে এভাবে দেখা উচিৎ হচ্ছে না তোমার।সবাই কি ভাবছে বলো তো!নতুন বউ কেমন হ্যাংলার মতো লোকলজ্জার মাথা খেয়ে বরকে দেখছে।ব্যাপারটা কেমন খারাপ দেখাচ্ছে তসই না বলো!
.
উনার কথায় চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।লোকটা বড় আজব তো।এরইমধ্যে হাসিতে মত্য সবাই।সেটা আমাকে নিয়ে বেশ বুঝতে পারছি আমি।সকলে এটাই ভাবছে উনাকে দেখছিলাম আমি।নিজের কর্মকান্ডে নিজের উপরই রাগ লাগছে।লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি।আজ নিজের দোষেই এমনটা হচ্ছে।যদি আগে আঙ্কেলের দেওয়া ছবিটা দেখে নিতাম তাহলে এসব কিছুই ফেস করতে হতো না।মুগ্ধর সাথে আমার বিয়ে সেটা তিথির অজানা থাকার কথা নয়।তাহলে ও আমায় বললো না কেন…?মুগ্ধর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো আর আমি জানতেও পারলাম না। কি আজব আমি!!
.
আমাদের বসিয়ে কয়েকটা ফটো তুললো মোহনা।পাশাপাশি কাছাকাছি কয়েক এঙ্গেলে ছবি তুললো।ওর ছবি তোলা শেষ হতেই উপরে চলো গেলো মুগ্ধ।আমাকে সোফায় বসিয়ে পাশে বসলেন মুগ্ধর মা।কপালে চুমো এঁকে বললেন…..
.
_______জানো তো মা এতদিন আমার একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছিলো কিন্তু আজ থেকে আমার দুইটা মেয়ে।আমি তোমাকে আমার বৌমা নয় আমার মেয়ে মনে করি।আমি সব জানি মা।তোমার মা নেই তুমি কি পারো না আমাকে নিজের মা মনে করতে।কি মা বলে ডাকবে তো আমায়৷
.
উনার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি আমি!মানুষ এতটাও ভালো হয়।মা বলে উনাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলাম আমি।উনিও জড়িয়ে নিলেন আমায়।তখনই মোহনা এসে বললো……
.
~~~এটা কি হলো….আজ তোমার বৌমা পেয়ে আমায় ভুলে গেলে।এটা কিন্তু ঠিক না আম্মু।
.
মোহনার কথায় মুচকি হাসলেন মা।এক হাতে জড়িয়ে নিলের ওকে।দুজন কে দুহাতে জড়িয়ে রেখেছেন উনি।
.
______আমার দুইটা মেয়ে।দুজনেই সমান।তোরা দুজন আমার দুই নয়নের মণি।
.
মায়ের কথা শেষ হতে না হতে সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে বলে উঠলো মুগ্ধ…..
.
~~~এরা দুজন তোমার দুই নয়নের মণি আর আমি!আমি কিছুই না ফেলনা।অভিমানি সুরে এই বাড়িতে একমাত্র অবহেলিত ব্যক্তি আমিই।
.
উনার কথায় হেসে উঠলো মোহনা।মা ও হাসলেন! হাসতে বললো মোহনা…..
.
_____এটা একদম ঠিক বলেছো ভাইয়া।আসলে কুড়িয়ে পাওয়া ব্যক্তিদের একটু আধটু অবহেলিত থাকে।তবুও তোমাকে আমরা যথেষ্ট ভালো রেখেছি বলেই হাসতে লাগলো মোহনা।মোহনার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মুগ্ধ। মোহনাকে থামিয়ে বললেন মা…..
.
~~~যে যাই বলুক না কেন তুই,মুগ্ধতা,মোহনা সবাই আমার একই রকম আদরের।ওদের যতটা ভালোবাসি তোকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি তাই হিংসে করার কিছু নেই।
.
.
♥️
মুগ্ধতা কে বিদায় জানিয়ে কারো মন ভালো নেই।এরইমধ্যে আটকে পড়েছে মিতুল।সকলকে এই অবস্থায় রেখে যেতেও পারছে না। তাছাড়া যার কল্যাণে এখানে আসা তাকে অনেকক্ষণ হলো খুঁজে পাচ্ছে না মিতুল।তাই তাকে খুঁজতে ব্যস্ত।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তখনই কোথা থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো আফিফ।
.
______আই’এম সরি মিতুল!!এতক্ষণে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা।আর আমি সেদিকে খেয়াল না করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।আসলে বাবা মুগ্ধতার জন্য মন খারাপ করে বসে আছে।তাই একটু কথা বলতে গিয়েছিলাম।
.
~~~না না! সরি বলতে হবে না!ঠিক আছে।এটাই স্বাভাবিক।আপনার বোনের বিয়ে হয়েছে এখন কারোরই মন ঠিক থাকার কথা নয়।আমিই চলে যেতাম কিন্তু আপনাকে কোথাও দেখছিলাম না আর না বলে যাওয়াটা কেমন দেখায় তাই আর যাই নি।
.
কথাটা শুনেই আফিফের মনের মধ্যে লাড্ডু ফুলে উঠলো।ওর জন্য মিতুল যায় নি।শুধু ওকে বলতে পারে নি বলে যেতে পারে নি।তবে কি মিতুলের মনে কিছুটা হলেও জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে আফিফ ……
.
____এতটা গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।তুমি খুব ভালো মিতুল।তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতটা ভাবতো না।কবেই চলে যেতো।
.
কিছুটা মৃদু হাসলো মিতুল।তারপর বললো….
.
~~~ওকে ওকে!!এত প্রশংসা করবেন না।তাহলে ফুলে বোম হয়ে যাবো।আচ্ছা ঠিক আছে অনেক লেইট হয়ে গেছে এখন আসি।
.
মিতুলের যাওয়ার কথা শুনে নিমিষেই মন খারাপ হয়ে গেলো আফিফের।মেয়েটা আশেপাশে থাকলে খুব ভালো লাগে ওর।অলওয়েজ মিতুলেই মত্ত থাকে।কখনও চোখের আড়াল হোক এটা চায় না!কিছুতেই চায় না।সবসময় চায় যেন চোখের সামনে বসে থাকে।কিন্তু কি আর করার বিদায় তো দিতেই হবে।
______আচ্ছা ঠিক আছে!তোমাকে তো আর থাকতে বলতে পারি না।চলো তোমাকে আমি পৌঁছে দেই।
.
আফিফের কথায় চোখ তুলে তাকালো মিতুল।আর বললো……
.
~~~না না! আমি একাই যেতে পারবো।আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না।এখন এখানে আপনাকে সবার প্রয়োজন তাই এখানেই থাকুন।
.
মিতুলের কথার উপর আর কিছু বলতে পারলো না আফিফ।ওকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য গেলো।
.
.
মুগ্ধর রুমে বসে আছে মুগ্ধতা।মূলত মোহনাই ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।পুরো খাট কাঁচা গোলাপ,রজনীগন্ধা আর গাঁদা ফুল দিয়ে সাজানো।রুম টা বেশ বড়।বেডের ঠিক পিছনের দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে মুগ্ধর ফুল ফ্যামিলি মানে মোহনা, মা আর মুগ্ধর ফ্যামিলি ফটো।রুমের সাথে রয়েছে ব্যালকোনি।রাতের খাবার নিজ হাত খাইয়ে দিয়েছেন মুগ্ধতার শাশুড়ী।মুগ্ধ বন্ধুদের সাথে আছে ওকে কিছুতেই ছাড়ছে না ওরা তাই আসতে পারছে না।এদিকে মোহনার মায়ের কড়া হুকুম এই রাতের বেলায় যেন ওকে একা রেখে না যায় মোহনা।কারণ নতুন এসেছে যদি ভয় পায় বা একা থাকলে বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়।তাই মোহনা ওর সাথে আছে।দুজনে মিলে গল্পে বিভোর।।কিন্তু গল্পে মন নেই মুগ্ধতার।এই মূহুর্তে মোহনা নামক মেয়েটাকে খুব বিরক্তিকর প্রাণী মনে হচ্ছে মুগ্ধতার।যেন সহ্য হচ্ছে না ওকে।।মুগ্ধতা কে ইজি করার জন্য হাসির কথা বলছে।কথার মাঝখানে এক সময় দুজনে খিলখিল করে হেসে উঠলো।আড়াল থেকে কেউ একজন খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মুগ্ধতাকে।কিন্তু সেটা কেউ জানে না।এই প্রথম মুগ্ধতা কে খিলখিল করে হাসতে দেখলো মুগ্ধ।হাসলে মেয়েটাকে এত সুন্দর দেখায় সেটা জানতো না মুগ্ধ।এই হাসিটা সারাজীবন ওর মুখে দেখতে চায় মুগ্ধ।গোমড়া মুখো হয়ে চুপচাপ বসে থাক এটা চায় না।সবসময় মুগ্ধর মুগ্ধতা কে হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল দেখতে চায়।
.
হঠাৎ দরজায় টোকা পরতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো মোহনা।মোহনার ওড়নার মুঠো করে ধরে আছে মুগ্ধত।ওড়না ছাড়িয়ে মুচকি হেসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো…..
.
_______বউমণি আমি আসছি।ভয় পেও না।যতটা বদমেজাজি ভাবছো ততটা বদমেজাজি নয় সো বি কুল।নাও এবার আমার বজ্জাত ভাইটাকে তুমি সামলাও।আর শোন একদম উড়তে দিবা না।ডানাগুলো কেটে দিবা বুঝছো।আর শোন আমার সাথে লাগতে আসলে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখবা ঠিক আছে।বলেই চলে গেলো মোহনা।মেয়েটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না আমি।কি বলে গেলো সব মাথার উপর দিয়া গেলো।
.
রুমে পিনপতন নীরবতা।একদম শব্দ শূন্য হয়ে আছে পুরো ঘর।রুমে কেউ ঢুকেছে কি ঢুকেনি সেটাও দেখিনি আমি অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই।হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দে কেঁপে উঠলাম আমি।আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম মুগ্ধ রুমে ঢুকেছেন।বুকের ভিতর তোলপাড় হতে লাগলো।চোখ দিয়ে আপনাআপনি গঠিয়ে পড়লো দুফোঁটা চোখের জল।কিন্তু কেন সেটাই জানিনা আমি।হয়তো তাঁর একমাএ কারণ আদনান।কিন্তু ওর জন্য চোখের জল ফেলা একদম উচিৎ নয় আমার।আজ থেকে অন্য কারোর জীবন সাথী আমি।সেখানে আদনান নামক কারো কোনো অস্তিত্ব নেই।আমার ভাবনার মাঝেই আমার সামনে এসে বসলো মুগ্ধ।আমাকে অবাক করে বললো…..
.
~~~এই ভারী বেনারসি পরে অনেক্ক্ষণ আছো।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।।আর হ্যাঁ তুমি যেটাতে কমফোর্টেবল ফিল করো সেটাই পরো লাইক শাড়ি,সেলোয়ার-কামিজ।তবে হ্যাঁ শার্ট প্যান্ট টপস এগুলোতে ঘোর আপওি আছে আমার।তুমি পরতে চাইলেও এগুলো কখনও পরতে দেবো না।
.
উনার কথায় চমকে উঠলাম আমি!!এতটা ইজিলি খোঁচাখোঁচি ছাড়া আমার সাথে কথা বলছেন উনি।ভাবতেই পারছি না।তাছাড়া আজকের দিনে।আমার ভাবনার মাঝেই বলে উঠলেন উনি…..
.
_____যা গরম পড়েছে এত সময় এই ভারী বস্তা পড়ে কীভাবে আছো সেটা ভেবেই অবাক হই আমি।আচ্ছা তুমি এই বস্তার ভিতরে কীভাবে আছো বলো তো….!!
.
চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আর এসব কি ভাষা।বেনারসি কে “বস্তা” বানিয়ে দিলেন।উনার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না।হঠাৎ উনার কথায় চমকে উঠলাম আমি……
.
~~~মুগ্ধতা!তুমি কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো নাকি।তখন ড্রয়িং রুমেও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে চোখ সরাচ্ছিলেই না এখনও একই কাজ করছো।আচ্ছা এখন থেকে রোজই আমাকে দেখতে পাবে।।আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর না হয় সারারাত দেখো কেমন।
.
_____লোকটার কথায় আরেক দফায় লজ্জা পেলাম আমি।বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে আমার।আপনার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।এই বেনারসি কে আপনি বস্তা বানিয়ে ফেললেন।জানেন এটা কত ভালো আর আপনি কিনা বস্তার সাথে তুলনা করলেন।
.
~~~তুমি যাই বলো না কেন…?ওইটা আমার কাছে সবসময় বস্তাই থাকবে।কি ভারী উফ!অসহ্য।
.
উনার সাথে তর্কে জেতা অসম্ভব।তাই উনাকে কিছু না বলে মুখ ভেংচি কেটে সেলোয়ার-কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম আমি…..!!
.
.
চলবে……

মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
Labiba_Islam_Roja
Part_14
.
🍁
শাওয়ার নেওয়ার পর ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আরেকবার বিস্মিত হলাম আমি।আজ কি হচ্ছে এই ব্যাটা এত ভালো কি করে হলো।বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে মুগ্ধ।আমি বের হতেই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অনেক্ক্ষণ ধরে এভাবে তাকিয়ে থাকায় অস্বস্তি হচ্ছে আমার।হয়তো আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেছেন উনি।তাই চোখ সরিয়ে বসা থেকে উঠে বললেন……
.
~~~মুগ্ধতা তুমি নিশ্চয় খুব ক্লান্ত…?মাথা ধরেছে নাকি…?
.
উনার কথায় আবারও বিস্মিত হলাম আমি।বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।আমতা আমতা করে বললাম…..
.
______ককই না তো!কোনো সমস্যা নেই।
.
মুগ্ধতার কথায় চোখ ছোট করে তাকালো মুগ্ধ।আঙ্কেলের কথাই ঠিক মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের।নিজের দুঃখ কষ্ট কাউকে মুখ ফুটে বলে না।চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট তাও বলবে না।
.
~~~তুমি মিথ্যা বলছো!আর যদি তুমি সত্যি বলো তাহলে তুমি মানুষ নও।
.
—–উনর কথায় রেগে গেলাম আমি।রাগান্বিত সুরে বললাম…..কি যা তা বলছেন।আমি মানুষ নই মানে কি বুঝাতে চাইছেন….?জঙ্গলের পশু…!!
.
এই মেয়েটা আস্ত পাগল এখন আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে।একটা কথাও সহজভাবে নিতে পারে না।উড়নচণ্ডীর মতো ফুস করে উঠে…..
.
____মুগ্ধতা বি কুল! আমি এটা বুঝাতে চাই নি আগে পুরো কথাটা তো শুনো….একটা মেয়ে সারাদিন ভারী গয়না ঘাটি তার উপর এই বস্তা জড়ানো গায়ে।বারো রকমের আটা ময়দা সুজি।তার উপরে বিদায় বেলার কান্নাকাটি।এরপরও তুমি ক্লান্ত নও।সেজন্য কথাটা বলেছি তুমি মানুষ নও এলিয়েন।
.
এই বিচ্ছিরি ভাবনা শুনে হতবাক।ক্লান্ত নয় বলে এলিয়েন আশ্চর্য।লোকটার মাথায় সমস্যা আছে নইলে বেনারসি কে বস্তা, আমাকে এলিয়েন যা তা বলে যাচ্ছে……
.
~~~আচ্ছা আপনার মাথায় কি কোনো প্রবলেম আছে….?
.
মুগ্ধতার কথায় কপাল কুঁচকে এলো মুগ্ধর।মুখ দিয়ে শুধু এইটুকুই উচ্চারণ করলো “কিহ”!
.
______আসলে আপনার এমন উদ্ভট চিন্তা দেখে আপনাকে অসুস্থ লাগছে আমার।তাই এখন আমাকে নির্দ্বিধায় সবটা বলতে পারেন।কারণ আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তাই কিছু করার নেই।পাগল নিয়েও ঘর করতে হবে তার কারণ তো আপনি জানেনই।
.
মুগ্ধতার কথায় বেশ রেগে গেলো মুগ্ধ!সে পাগল এটা ঠিক কিন্তু তাই বলে মস্তিষ্কের সমস্যা নেই।সে তো কেবল মুগ্ধতাতেই পাগল।ওকে ঘিরেই পাগলামি করতে চায়।নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে করুণ কন্ঠে বললো মুগ্ধ…….
.
~~~তোমার কি আমাকে ঠকবাজ মনে হয় মুগ্ধতা।নাকি আমার ফ্যামিলিকে দেখে বুঝা যায়।
.
মুগ্ধর কথায় চমকে উঠলো মুগ্ধতা।না না সে তো এমনটা ভাবছে না।বরং এই পরিবার তার দেখা সবচেয়ে চমৎকার পরিবার।খুবই ভদ্র নম্র।দরকার পরলে নিজেরা ঠকে যাবে কিন্তু কাউকে ঠকাবে না।একদিনেই কতটা আপন করে নিয়েছে ওকে।
.
_____নাহ!ছিঃ ছিঃ আপনি এসব কি বলছেন।আমি কেন আপনাদের পরিবারকে এতটা জঘন্য ভাবতে যাবো।এই ফ্যামিলির সবাই খুব ভালো।কিন্তু আপনি হঠাৎ এভাবে কথা বলছেন কেন….?
.
মুগ্ধতার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুগ্ধ।তাহলে মেয়েটা তাকে খারাপ ভাবছে।এই ধারণাটা কবে পাল্টাবে ওর।
.
~~~তাহলে এক্ষুনি যেই কথাটা বললে ওটা কি মিন করে বললে মুগ্ধতা।আমার ফ্যামিলি ভালো এটা এক বাক্য স্বীকার করে নিলে অথচ আমার কথা!আমার কথা কিছু বললে না….আমি কি ঠকবাজ!যে তোমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করবো।জানো তো!আমি।আর যে কাউকেই ঠকাই না কেন কোনোদিনও তোমায় ঠকাতে পারবো না।।তার আগেই মরে যাবো।যদি আমার মাথায় বা কোথাও কোনো প্রবলেম থাকতো মেন্টালি সিক থাকতাম তাহলে কখনও তোমাকে নিজের সাথে জড়াতাম না।
.
এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে সক্ষম হলো মুগ্ধতা।তার মানে ওই একটা কথার জন্যই এতগুলো কথা বলছে মুগ্ধ।
.
_____আপনি ওই কথাটাকে সিরিয়াসলি ভেবে নিয়েছেন মুগ্ধ!আমি তো তর্কের খাতিরে জাস্ট এমনি কথাটা বলেছি আর কিছু নয়।
.
কথাগুলো শুনে না শোনার ভান ধরে ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে পড়লো।পেছন পেছন মুগ্ধতাও ছুটলো।ও কি নিজের অজান্তেই ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো।আজ আকাশে একটা বিশাল চাঁদ উঠেছে।সেটা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মুগ্ধ। পাশের মানুষটাকে খেয়ালই করছে না।খুব ইচ্ছে ছিলো মুগ্ধতাকে নিয়ে চাঁদ দেখবে কিন্তু মুগ্ধতার এমন কথায় রাগ লাগলো তার।কিছুক্ষণ নীরব কাটলো দুজনের।মুগ্ধতা বুঝতে পারছে না কি করবে।তাই মুগ্ধর পাশে ঠ্যাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।মুগ্ধ নিজের রাগ সামলে হঠাৎ মিষ্টি হেসে বললো…….
.
~~~ঘুমাচ্ছ না কেন…?যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।সারাদিন অনেক দকল গেছে।এত অনিয়ম করো না।শরীর সইতে পারবে না।কাল আবার রিসেপশন আছে।
.
লোকটাকে বুঝতে পারছি না।এখন এত রাগ দেখালো আবার এখন পানি।আবার আমার খেয়ালও রাখছে।একটা ঢোক গিলে উনার উদ্দেশ্যে বললাম……
.
_____আপনি ঘুমাবেন না…?
.
মুগ্ধতার কথা শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকালো মুগ্ধ। মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে বললো…..
.
~~~হুম ঘুমাবো!!তবে এখন না তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে।এখন একটু চাঁদ দেখবো।
.
_____তাহলে আমিও পরে ঘুমাবো…!!
.
~~~~মুগ্ধতার কথায় আনমনেই হেসে উঠলো মুগ্ধ।সন্দেহের দৃষ্টিতে বললো…..আমার সাথে ঘুমাতে চাও বুঝি…?
.
কথাটা শুনেই থতমত খেয়ে গেলো মুগ্ধতা।এই ছেলে একদম নির্লজ্জ,বজ্জাত।যতটা ভালো ভাবি আসলে ততটা ভাল নয়।লুইচ্ছা একটা।আমি কি তাই বলেছি নাকি।মুগ্ধতা কিছু বলতে যাবে তখনই মুগ্ধ বললো……
.
_____জানো মুগ্ধতা আমি কখনও ভাবিনি তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।কিন্তু ওই যে বলে না “জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ” সব আল্লাহর ইচ্ছা।উনার ইচ্ছাতেই এক সুতোয় বাঁধা পড়েছি আমরা।যেই বাঁধন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অটুট থাকবে।আমার মায়ের বরাবরই বৌমা ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিলো।তাই সবটা কি করে যেন হয়ে গেলো।আমার বন্ধুরা যেই তোমার কথা বললো অমনি মা তোমায় না দেখে রাজি হয়ে গেলো।ব্যস এক সপ্তাহে বিয়ে।তুমি কি এতে খুশি মুগ্ধতা….?
.
প্রশ্নটার উওর দেওয়া টা খুব কঠিন মুগ্ধতার কাছে।
এই সম্পর্কে কি আদৌ খুশি হতে পেরেছে মুগ্ধতা।কিন্তু এই মূহুর্তে এই কথাটা বললে কষ্ট পাবে মুগ্ধ। আর যদি বাসা থেকে বের করে দেয় তখন আঙ্কেলকে মুখ দেখাবে কি করে…..
.
~~~আমাদের দ্বারা যা কিছু ঘটে সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।এই সম্পর্কেও আল্লাহর ইশারা ছিলো।তাই দুঃখ পাইনি আমি খুশি।
.
মুগ্ধতার কথার ধরনে মুগ্ধর বুঝতে বাকী নেই কি বললো ও।মুগ্ধ জানে ওর পক্ষে এত কম সময়ে সবকিছু একসেপ্ট করা সহজ নয়।তাই ওর কথায় দুঃখ পেয়েও পেলো না।কারণ ও জানে মুগ্ধতা ঠিক কতটা কষ্টে আছে।বাইরে যতই স্বাভাবিক থাকুক না কেন ভিতরে ভিতরে তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে।
.
_____আচ্ছা ঠিক আছে এবার ঘুমিয়ে পরো।মুগ্ধ কে পাশ কাটিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ ঠ্যাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।মুগ্ধ আজ ঘুমাবে না আজ সারারাত তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দু চোখ ভরে দেখবে।এতদিন দূর থেকে একটু আধটু দেখতো যেটাতে মন ভরতো না তাঁর।তাই আজ মুগ্ধতার অলক্ষ্যে ওকে দেখবে।প্রাণ ভরে দেখবে।
.
.
রাত প্রায় তিনটা!কোথাও কোনো মানুষের সাড়া শব্দ নাই। ঘড়ির কাটাগুলোর ঠিক ঠিক শব্দ শোনা যাচ্ছে।ঝিঁঝি পোকাগুলো ডেকে চলছে।।মুগ্ধতার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ কিন্তু সেটা টেরও পাচ্ছে না।কেমন বাচ্চাদের মতো গুটি-শুটি মেরে শুয়ে আছে।কয়েকটা চুল এসে উপচে পড়েছে কপালে।আলতোভাবে চুলগুলো সরিয়ে কানের নিচে গুঁজে দিলো মুগ্ধ।মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত একটা মায়া আছে।একদিন এই মায়াবী চেহারায় আটকা পড়েছিলো সে।আজকে মেয়েটাকে একটু অন্যরকম লাগছে।ভয়ংকর সব ইচ্ছে জাগছে মনে।খুব ইচ্ছে করছে ওকে একটু ছুঁয়ে দিই।নিজের মনের চাওয়াটুকু বেশিক্ষণ অপূর্ণ রাখলো না।হঠাৎই ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো মুগ্ধতার কপালে।মুগ্ধতা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।ঘুমের ঘোরেই হাত চেপে ধরলো মুগ্ধর।এখন সে পড়েছে বিপাকে।কিছুতেই হাত সরাতে পারছে না।অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ সে।যতবার হাত সরাতে যাচ্ছে ততবারই আরো চেপে ধরছে…!!
.
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মুগ্ধতার।আধো আধো চোখে তাকিয়ে আবারও চোখ বুজে নিলো।কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না।ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারছে যেন রশি দিয়ে কেউ বেধে রেখেছে তাঁকে।একটু নড়তে যাবে কিন্তু পারছে না।মুগ্ধতার ঘুম আস্তে আস্তে হালকা হতে লাগলো।মুখ একটু উপরে তুলতেই অবাক।একি!আমি উনার বুকে কি করে৷…..মুগ্ধতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মুগ্ধ।কিছুতেই নিজেকে তাঁর কাছ থেকে ছাড়াতে পারছে না মুগ্ধতা।অনেক চেষ্টা করেও ফলাফল শূন্য।বোকার মতো তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না।এখন একমাএ উনাকে ঘুম থেকে তুলতে হবে আমায়।তাহলেই প্রবলেম সলভ।কিন্তু উনাকে তুলবো কি করে।উনি তো উঠেই নিজের দোষ দেখবেন না আমাকে আবোলতাবোল বলবেন তাহলে উপায়….!!
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here