#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ১৭ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাহিম ফারহানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ শেষ করে বাড়িতে ফিরল। অতঃপর ইভানাকে ডাকতে লাগল। ইভানা ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটে এসে বলল,
‘কি হয়েছে? আমাকে ডাকছেন কেন?’

‘চলো আমাদের এখন যেতে হবে।’

‘সে কি? কোথায় যাব আমরা?’

‘হাসপাতালে। তোমার বান্ধবী আনহার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।’

‘ও আচ্ছা। ঠিক আছে আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি।’

ইভানা তৈরি হয়ে নেয়। অতঃপর দুজনে মিলে রওনা দেয় হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে। একটি ক্যাবে করে তারা যাচ্ছিল। ফাহিম ও ইভানা পাশাপাশি বসে ছিল। ফাহিম ইভানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আচ্ছা তুমি কি জানো যে আনহার অপা’রেশনের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন?’

‘না তো। আমাকে তো আনহা এব্যাপারে কিছু বলে নি।’

‘হুম, না বলাই তো স্বাভাবিক। সাহায্যটা তো ও অন্য কারো কাছ থেকে পেয়ে গেছে।’

‘মানে কি বলছেন আপনি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’

‘হাসপাতালে চলো তাহলে সব বুঝতে পারবা।’

আনহা আর কথা বাড়ালো না। কিছু সময়ের ব্যবধানেই তারা দুজনে হাসপাতালে পৌছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো হাসপাতালের ভেতর আনহার সাথে দেখা করতে।

আনহার কেবিনে একসাথে ঢুকল ফাহিম এবং ইভানা। ফাহিমকে দেখে আনহা অবাক হয়ে গেলো। ইভানাকে জিজ্ঞেস করল,
‘উনি কে রে?’

‘উনি আমার হাসবেন্ড ফাহিম কবীর। তুই তো আমার বিয়ের দিন তাড়াতাড়ি চলে এসেছিস। তাই হয়তো চিনতে পারছিস না।’

‘ওহ।’

এরপর দুই বান্ধবী মিলে কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে। ফাহিম পুরো সময়টা নীরব থাকে। ইভানা চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই ফাহিম আনহাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?’

‘জ্বি, বলুন।’

‘শুনলাম আপনার পায়ের অপা’রেশনের জন্য টাকার প্রয়োজন। তো সেই টাকা আপনি কই পেলেন?’

আনহা আমতাআমতা করে বলল,
‘আমার পরিবারের লোকজন দিয়েছে।’

‘আমি তো শুনলাম আপনার বাবা নাকি অসুস্থ। আর আপনার সৎমাও তো টাকা দেবে না। তাহলে দিলো কে?’

আনহা কিছুক্ষণ ভেবে তোতলাতে তোতলাতে বলল,
‘আ,,,আমার মামার বাড়ি থেকে দিয়েছে।’

‘হুম বুঝলাম। ইভানা চলো। উনি অসুস্থ ওনার রেস্ট দরকার।’

‘হ্যা চলুন। বাই আনহা। নিজের যত্ন নিস।’

ইভানা ও ফাহিম বের হয়ে আসে আনহার কেবিন থেকে। আনহা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

৩৩.
আনহার কেবিন থেকে বেরিয়ে কিছুটা দূরে এসে ফাহিম তার পকেটে হাত দিয়ে কিছু খুজতে থাকে। ইভানা বলে,
‘আপনি কি খুজছেন?’

ফাহিম তখন বলে,
‘আমার ফোনটা পাচ্ছি না। মনে হয় আনহার কেবিনেই ফেলে এসেছি।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন গিয়ে নিয়ে আসি।’

‘হ্যা চলো।’

দুজনে আবার আনহার কেবিনের দিকে আসে। আনহার কেবিনের দরজায় আসতেই থমকে যায় দুজনে। কারণ আনহা ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল। আনহা বলছিল,
‘পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আজ ইভানা ওর স্বামীর সাথে এসেছিল। ইভানার স্বামী আমাকে অনেক জেরা করছিল। অপা’রেশনের টাকা কোথায় পেয়েছি সেটা জানতে চাইছিল। আমি অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি। কাউকে জানতে দেইনি যে, ফারহানকে ফা’সানোর মাধ্যমে আপনার থেকে আমি টাকাটা নিয়েছি।’

ফাহিম কেবিনের বাইরে থেকেই ক্রুর হেসে বলে,
‘কিন্তু আমরা যে সব জেনে গেলাম।’

ভয়ে আনহার হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। ইভানা ও ফাহিম কেবিনে প্রবেশ করে। ইভানা বলে,
‘ছি আনহা! তোর থেকে এটা আশা করিনি। টাকার লোভে তুই এত নিচে নামলি।’

আনহা মাথা নিচু করে নেয়। ফাহিম কঠোর গলায় বলে,
‘ভালোয় ভালোয় বলো কার কথায় তুমি আমার ভাইয়ার নামে মিথ্যা বলেছ। নাহলে আমি পুলিশ ডেকে সব সত্য বের করে নিতে বাধ্য হবো।’

আনহা ভয়ে কেদে দেয়। কাদতে কাদতেই বলে,
‘প্লিজ পুলিশ ডাকবেন না। আমার কোন দোষ নেই। আমার সাথে তো আপনার ভাইয়ের কোন শত্রুতাও নেই।’

ইভানা বলে,
‘ঠিক আছে ডাকবোনা পুলিশ। কিন্তু সেই জন্য তোকে আমাদেরকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতে হবে।’

আনহা বলতে শুরু করে,
‘সেদিন তোর বিয়ে থেকে ফেরার সময় কিছু গু’ন্ডা আমার পিছু নেয়। আমি তাদের হাত থেকে বাচার জন্য দৌড়াতে থাকি। এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে আচমকা রাস্তায় চলে আসি। আর তারপর হঠাৎ করে একটা গাড়ির সাথে ধা’ক্কা খাই। এখানে দো’ষ সম্পূর্ণ আমারই। কারণই আমি রাস্তায় চলে এসেছিলাম।’

ইভানা উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘তাহলে তুই মিথ্যা সাক্ষ্য দিলি কেন?’

‘আমি দিতে চাই নি। তোর বাবা মানে ডাক্তার তারিকুল ইসলামের কথায় আমি মিথ্যা বলেছি।’

ইভানা হতবাক হয়ে বলে,
‘এটা কি বলছিস তুই!’

‘হুম ঠিকই বলছি। উনি আমায় বলেছেন ফারহানের নামে মিথ্যা বলতে। ফারহান তোকে বিয়ে না করে যে প্রত্যাখ্যান করেছে যার ফলে ওনার অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে তার প্রতিশোধ নিতেই উনি এমন করেছেন। এর বিনিময়ে উনি আমার অপা’রেশনের খরচ এমনকি আমার পড়াশোনারসজ যাবতীয় খরচ দিতে চেয়েছেন। তুই তো জানিস আমার পারিবারিক অবস্থা। সৎ মা তো আমায় পড়তেই দিতে চায়না। সে আমাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে চায়, কিন্তু আমার স্বপ্ন তো বুয়েটে পড়াশোনা করা তাই,,,’

ইভানা কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। তার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। ফাহিম তাকে সামলায়।

৩৪.
ইভানা ফাহিমকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলে,
‘আমাকে ক্ষমা করে দিন আপনি। আমার বাবার জন্য আপনার ভাই আজ জেলে।’

ফাহিম ইভানাকে কমফোর্ট করে বলে,
‘তুমি কেন ক্ষমা চাইছ? তুমি তো কোন অন্যায় করো নি৷ যা অন্যায় করেছে তা তোমার বাবা করেছে। এইজন্য আমি তোমাকে দোষ দেব না। তোমার বাবার সাথে আমি কথা বলবো। তুমি চিন্তা করো না, তোমার উপর আমি এসবের কোন আচ আসতে দেবো না।’

অতঃপর ফাহিম আনহার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আর তুমি যদি চাও, তোমার বিরুদ্ধে আমরা কোন স্টেপ না নেই, তাহলে পুলিশকে বলবে যে আমার ভাই নির্দোষ। তুমি বুঝতে ভুল করেছিলে। আর হ্যা ইভানার বাবার ব্যাপারেও কাউকে কিছু বলবে না।’

ইভানা বলে,
‘কেন বলবে না? আমার বাবা অন্যায় করেছে। তাকে শাস্তি পেতে হবে।’

‘কুল ডাউন ইভানা। ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো। উনি বাবা হন তোমার। যদি ওনার সত্যটা সামনে আসে তাহলে তোমার জীবনে খারাপ প্রভাব পড়বে। আমি তো বলছি আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলব।’

ইভানা আর কিছু বলে না।


আনহা পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে ফারহান নির্দোষ তার বুঝতে ভুল হয়েছিল। পুলিশ আনহাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। ফারহানও কারাগার থেকে মুক্তি পায়। ফারহান ফিরে আসায় ফারজানা বেগম খুব খুশি হন। নিউজ পোর্টালেও খবরটা ছড়িয়ে যাউ যে ফারহান নির্দোষ।

ইভানা রুমে চুপচাপ বসে আছে। তার মন মেজাজ ভালো নেই। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার বাবা এতোটা নিচে নামতে পারে। এরমধ্যে ফাহিম রুমে এসে ইভানাকে বলে,
‘আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি৷ উনি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছেন। তোমার সাথেও কথা বলতে চেয়েছেন।’

‘আমি ওনার সাথে কোন কথা বলব না।’

‘উনি তোমার বাবা হন।’

‘উনি যা করেছেন তা অন্যায়। আমার বাবা বলে আমি ক্ষমা করতে পারি না। ওনার জন্য আপনার ভাই জেলে ছিল।’

ফাহিম আচমকা ইভানাকে আলিঙ্গন করে বললো,
‘তুমি সবকিছু ভুলে যাও। এই ক’টা দিনকে দুঃস্বপ্ন ভাবো। আমরা আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করব। কালকে আমি তোমাকে কলেজে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবো। তুমি তৈরি হয়ে থেকো।’

ইভানা মাথা নাড়ায়। ফাহিম ইভানার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,
‘দ্যাসট মাই গুড গার্ল।’

ইভানার ফর্সা গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here