মায়াজাল
৯ম পর্ব,১০ম পর্ব
লেখনীতে : নুসরাত তাবাস্সুম মিথিলা
৯ম পর্ব
রাত বেশ গভীর হয়েছে। কিন্তু রূথিলার চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই। ঘুম যেন রূথিলার চোখ থেকে পালিয়েছে। প্রকৃতিতে গরমের উপস্থিতি নেই তবুও সে অবিরত ঘেমে ভিজে যাচ্ছে। একেই বোধহয় বলে ঘামের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া। রূথিলা এখন ভয়ে কাঁপছে, কিছুক্ষণ পূর্বে দেখা বিভৎস দৃশ্যপট কল্পনা করে।
কিছুক্ষণ পূর্বে,
_________
কাগজপত্র দীর্ঘ সময় ঘাটাঘাটি করে অনেক তথ্য রূথিলা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিল। তারপর সে আবার ছুটে গিয়েছিল সেই রহস্যময় কক্ষের উদ্দেশ্যে। এবার অবশ্য কোনো দুর্গন্ধ তাকে কাবু করতে পারেনি। প্রতিটি তাকেই মেহরাবের বিভৎসতার সাক্ষ্য রয়েছে। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সেই নরপিশাচটা সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে। কে জানে ওই মেয়েগুলো কেমন নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছিল? কতটা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে নিজের প্রিয়তমের কাছে জীবন বিলিয়ে ছিল অকাতরে? তাদেরকে মৃত্যুর পরেও ছাড় দেয়া হয়নি বরং নৃশংসতার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এই লোকটা কী আদতে মানুষের কাতারে পড়ে? মনে হয় মুখোশধারী কোনো শয়তান। রুমে থাকা একমাত্র আলমারিটি খুলতেই রূথিলা দেখতে পেয়েছিল বিভিন্ন অস্ত্র, এসিড, চুনসহ আরো বহু সামগ্রী। কিছু কালোজাদু সম্পর্কিত বই ছিল আলমারির একটি তাকে। সেখান থেকে একটা বই নেয় রূথিলা। বইটির নাম ” দ্যা ডার্ক সাইড অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড “। এটা মূল বইয়ের বঙ্গানুবাদ। এর বিভিন্ন পৃষ্ঠায় এক চোখের প্রতীক, তিনকোণা আকৃতি এবং পেন্টাগ্রামের প্রতীক আঁকা রয়েছে। এই সকল প্রতীক নাকি তাদের চিহ্ন, এই চিহ্নের মাধ্যমে তারা তাদের সঙ্গীকে খুজে বের করে। তারা বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের মাঝে তাদের মতবাদ ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বব্যাপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার লক্ষ্যে অবিচল। এদের সম্পর্কে জানতে গিয়ে রূথিলার মনে ভয় বাড়ছে। তাই বইটা আবার সে জায়গা মত রেখে দিল। তবে তার মাথায় বইটির একটা লাইন ঘুরপাক খাচ্ছে আর তা হলো –
” সব আধার থেকেই আলোর সূচনা। তবে আলো থেকে কোনো সূচনার সৃষ্টি না অতীতে হয়েছিল, না বর্তমানে হচ্ছে আর না ভবিষ্যতে হবে। তাই জীবনের যাবতীয় সূচনা তোমাকে আধার থেকেই করতে হবে। আধার হবে তোমার জীবনের একমাত্র আলো। ”
এ কেমনতর কথা! এসব কথা মানুষ কী করে বিশ্বাস করতে পারে? এদের হয়ত ব্রেনওয়াশ করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে তারা ভালো-মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এসব নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতেই রূথিলা আবার আলমারির ভেতরে দৃষ্টিপাত করল। তার মনে হল আলমারির কিছু জিনিস হয়তবা উপাসনার কাজে ব্যবহৃত হয় আর কিছু জিনিস হয়তবা মেয়েদেরকে হত্যার পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নকরণে। কী ভয়ানক!
‘ আমি এখান থেকে মুক্তি চাই। এই নরপশু নয়তো আমাকেও… নাহ্ আর কিছু ভাবা যাবে না। নাহলে আমি অতিরিক্ত টেনশন করেই মারা যাব। ‘ মনে মনে রূথিলা এই কথাগুলো আওড়াচ্ছিল। তারপর সে রুম থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদ্যত হয়ে কী মনে করে যেন চুপ করে দাঁড়ায়। অতঃপর পুরো রুমে আরো একবার চোখ বুলালো। চোখ একটা আশ্চর্য জিনিসে আটকে গেল তার। রুমের উত্তর দেয়ালে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লেখা ছিল তিনটি বর্ণ।
‘ LOL’ ( লুসিফার ইজ আওয়ার লর্ড ) অর্থাৎ ” লুসিফার আমাদের প্রভু। ”
উক্ত লিখাগুলো দেখে রূথিলা ‘ ছিঃ! ‘ সূচক শব্দ উচ্চারণ করল এবং মনে মনে নাউযুবিল্লাহ পড়ল। কী আশ্চর্যজনক! স্রষ্টা সম্পর্কে যাদের বিন্দু পরিমাণ ধারণা অবধি নেই, তারাই এধরনের কথা বিশ্বাস করতে পারে। কিন্তু মেহরাব ভাই তো উচ্চ শিক্ষিত, তবে সে এসবের সাথে জড়ালো কী করে? সে তো লন্ডন ফেরত, উচ্চ ডিগ্রিধারী। আর প্রবাস থেকে ফিরে বাবার ব্যবসা দেখভাল করছে। তার এমন পরিণতি কী মেনে নেয়া যায়? তবে রূথিলার পক্ষে আর এই কক্ষ নামক মৃত্যুপুরীতে টেকা সম্ভব হচ্ছে না। এতক্ষণ তো উত্তেজনার কারণে এই রুম সে ত্যাগ করতে পারেনি। কিন্তু এখন সব উত্তেজনা ফিকে হয়ে গেছে এসব নৃশংসতার কাছে। শরীর খুব বেশি খারাপ লাগছে রূথিলার। বিকেল থেকে এই রুমেই ছিল সে আর এখন রাত গভীর হয়ে পড়েছে। খাবার খাওয়া তো দূরে পানি পর্যন্ত স্পর্শ করেনি সে। কিন্তু এসব দেখার পর খাবার আর গলা দিয়ে নামবে না। তাই একরাশ ঘৃণা, বিরক্তি আর ক্লান্তি নিয়ে নিজের রুমে ফিরে গেল রূথিলা। রুমে গিয়েই গোসল সেরে নিল সে। সময়টা শীত আসার পূর্ব মুহূর্ত তাই রাত গভীর হলেই ঠান্ডা যেন শরীরে জেঁকে বসতে চায়। এরকম সময়ে রূথিলা প্রায় ২ ঘণ্টা যাবৎ হিম শীতল পানিতে গোসল করেছে। তবুও তার শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে না। তার চুল কোমড় অবধি লম্বা, সেই চুল পর্যন্ত মোছেনি রূথিলা। টপটপ করে চুল বেয়ে পানি পড়ছে ঘরের মেঝেতে। সেই ভেজা চুল নিয়েই শরীর এলিয়ে দিল সে নরম বিছানায়। যদি ঘুম এসে উঁকি দেয় রূথিলার ডাগর নেত্রপল্লবে।
____________
বেশ খানিকটা সময়জুড়ে এপাশ ওপাশ ফেরার প্রতিযোগিতায় ছিল সে। হঠাৎ সে তার সম্বিৎ ফিরে পেল এবং মেহরাবের কৃতকর্মের প্রমাণগুলো দৃষ্টিপটে ভেসে উঠল। মুহূর্তেই শরীরের শিরা উপশিরা বেয়ে শীতল স্রোত যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পরল। ভয় আবারো গেঁথে গেল তার মনে। জানালা গলিয়ে প্রখর সূর্যতাপ এসে রূথিলার চোখ মুখ যেন ঝলসে দিচ্ছে। সূর্য জানান দিচ্ছে বেলা গড়িয়ে মধ্যাহ্নতে এসে থেমেছে। সারারাত ছটফট করে এই মৃত্যুপুরীতে কাটিয়েছে সে। সুবহে সাদিকের সময় যখন আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে এসেছে তখন মনের মাঝে আবার আশার আলো জন্ম নিয়েছে। চটজলদি বিছানা ছেড়ে ওযু করে নামাজ পড়ে নিল রূথিলা। মনের সবটুকু অস্থিরতা, ভয় যেন নিমিষের মধ্যে কেটে গেল। মন ছেয়ে গেল প্রশান্তির সুশীতল ছোঁয়ায়। এবার সে তার প্রশান্ত মন নিয়ে বিছানায় গেল এবং অবাক করার ব্যাপার হলো কয়েক মুহূর্তের মাঝেই সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরল আর কোনো ভয় তাকে কাবু করতে পারেনি। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল রূথিলা। আজকেই মেহুলের বাড়িতে ফেরার কথা। মেসেজ করে জানিয়েছে সে। তার অর্থ দাঁড়ায় হাতে একদম সময় নেই। চট করে একবার বাইরে থেকে ঘুরে আসতে হবে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হবে। আজ রাত ৮ টার মধ্যে ফিরে আসবে বলেছে। আন্টি আরো কিছুদিন থেকে আসবেন। মেহুল আর মেহরাব ফিরছেন, মেহুলের নাকি ক্লাসটেস্ট আছে। এদিকে রূথিলার প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে তাই সে বাইরে খাওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হল। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। নিজের কার্যসিদ্ধি করাও হবে আর সাথে ক্ষুধা নিবারণ।
___________
সাঁঝের বেলা পেরিয়েছে বেশ খানিকক্ষন আগেই। অন্ধকার গাঢ় থেকে প্রগাঢ় হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই মেহুলের ফোন থেকে মেসেজ এসেছে আজকে নাকি ও আসতে পারছে না, হুট করে নাকি বমি করেছে সাথে জ্বর এসেছে কিন্তু মেহরাব নাকি আসবেন সাথে তার চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব নাকি আসবেন। আর আমায় তাদের জন্য কষ্ট করে রান্না করার অনুরোধ করেছে। এই মেসেজটা পড়ে রূথিলার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে মেসেজটা অন্য কেউ করেছে আর মেহুলের বিপদ হয়েছে। আর গতকালকের ভয়টা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চুলায় এখন পায়েস জ্বাল করছে রূথিলা আর কিছুক্ষণ থাকলেই হয়ে যাবে। এটা হলেই রান্না শেষ। আজকের মেন্যুতে রয়েছে আচারি খিচুড়ি, গরুর মাংসের ভুনা, মুরগি কষা আর পায়েস। টেবিলে সুন্দর করে প্রতিটি খাবার যত্ন সহকারে পরিবেশন করল সে। আর কিছু রান্না করতে ইচ্ছে করল না রূথিলার। কী হবে এই পাপিষ্ঠদের খাবার রেঁধে খাওয়ালে? আর মেহরাবের ঘনিষ্ঠ আবার চারজন! রূথিলার মন বলছে আজকে পেন্টাগ্রাম পূর্ণ হবে। সাথে আরও মারাত্মক কিছু রহস্যের মায়াজাল উন্মোচিত হবে। সকল অপেক্ষার অবসান ঘটল রাত ১০টার কিছু পরে। কলিংবেল বেজে উঠেছে অর্থাৎ মেহরাব তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে চলে এসেছে। রূথিলার নিঃশ্বাসের গতিবেগ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতক্ষণ মনে যতটুকু সাহস সঞ্চয় করেছিল নিমিষের মধ্যে তা যেন গায়েব হয়ে গেল। দ্বিতীয় বারের মত বেজে উঠল কলিংবেল।
‘ নাহ্ এদের সামনে স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে, কোনো ক্রমেই দুর্বল হলে চলবে না। নয়তো এরা সব বুঝে ফেলবে। ‘ মনে মনে ভেবে নিল রূথিলা। তাই সব ভাবনাকে দূরে ঠেলে অবশেষে দরজা খুলল সে।
‘ কী ব্যাপার আপুনি ঘুমিয়ে পড়েছিলে বুঝি? ‘ মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে প্রশ্নটা করল মেহরাব।
‘ নাহ্ ভাইয়া। আসলে কী বলোতো তোমাদের অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। তাই কানে হেডফোন গুজে ক্লান্তি দূর করছিলাম। দুঃখিত আমার জন্য তোমাদের অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হলো, ‘ মুখে মিথ্যে হাসি টেনে কথাগুলো একনাগাড়ে বলল রূথিলা।
‘ আরে নিঃশ্বাস নাও। দম আটকে আসবে, ‘ চিন্তিত স্বরে এই কথাগুলো উচ্চারণ করল একটি মেয়ে।
‘ আচ্ছা ভাইয়া তোমরা কী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে? তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো আর সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দাও, ‘ মুখে কিঞ্চিৎ হাসি বজায় রেখে বলল রূথিলা।
‘ অবশ্যই মিষ্টি আপুনি, ‘ সামান্য হেসে বলল মেহরাব।
_________
সবাই ফ্রেশ হয়ে টেবিলে না এসে আগে মেহরাব ভাইয়ের রুমে ঢুকল। আর মেহরাব ভাই যাওয়ার পূর্বে আমায় বলে গেল,
‘ তুমি ঘুমিয়ে পড়, আমাদের কিছু কাজ আছে। কাজ শেষ করে আমরা খেয়ে নেব। ‘
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমে চলে আসার ভান করি। এরপর মেহরাব ভাই রুমে ঢুকতেই আমি চুপিসারে তাদের পিছু নিলাম এবং গিয়ে রুমের দরজার বাইরে দাঁড়ালাম। প্রথমে মেহরাব ভাই সব লাইট বন্ধ করে রুম অন্ধকার করলেন। তারপর মৃণাল ভাই পাঁচটা মোমবাতি জ্বালালেন ও মৃণ্ময় ভাই রুমের মেঝেতে পেন্টাগ্রাম আঁকলেন। মৃত্তিকা আপু মোমবাতিগুলোকে তারকাচিহ্নের মত পেন্টাগ্রামে সাজালেন এবং আকৃতি আপু সবাইকে আসন গ্রহণ করার জন্য আদেশ দিলেন। আমি অতি উৎসাহী হয়ে বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। শরীরজুড়ে টানটান উত্তেজনা বয়ে চলছে। এরপর কী হতে চলেছে। আবার মোমবাতির আলোয় পূর্ণ কক্ষের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। সকলে একে অপরের হাতে হাত রেখে আঁকড়ে ধরে বসেছে। তারপর সমস্বরে বলতে শুরু করল,
” লুসিফার ইজ আওয়ার লর্ড। প্লিজ লর্ড গিভ আস মোর টাইম। প্লিজ! আওয়ার টাস্ক ইজ অলরেডি ডান। প্লিজ গিভ আস পাওয়ার। লর্ড ক্যান ইউ হিয়ার আস? ইফ ইউ হিয়ার প্লিজ কাম ইনফ্রন্ট অফ আস। প্লিজ লর্ড, প্লিজ।”
অর্থ: লুসিফার আমাদের প্রভু। প্রভু দয়া করে আমাদের আরও কিছুটা সময় দিন। দয়া করুন। আমাদের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আমাদেরকে শক্তি দিন। প্রভু আপনি কি আমাদের শুনতে পারছেন? যদি পারেন তবে দেখা দিন, আমাদের সামনে আসুন। প্রভু দয়া করুন, দয়া করুন।
একথাটা শোনা মাত্রই আমার হৃদয়ে ছ্যাৎ করে উঠল। আচ্ছা ওদের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে তাহলে মেহুল কি ঠিক আছে? নাকি ওর সাথে এরা কিছু করেছে? আমি বরং রুমে গিয়ে মেহুলকে কল করি। অতঃপর যেই ভাবা সেই কাজ। মেহুলকে কল করলাম,সউদ্দেশ্য ও ঠিক আছে কিনা যাচাই করা। কল রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে। আমার ভালো লাগছে না। আন্টিকে কল লাগালাম। দুবার রিং হতেই রিসিভ হলো।
‘ হ্যালো আন্টি আমি রূথিলা। কেমন আছেন? ‘
‘ ভালো আছি মা। তুমি? কোনো সমস্যা হয়েছে কি? ‘
‘ না আন্টি ব্যস্ত হবেন না। আমি ভালোই আছি। এমনি ফোন করেছি। ‘
‘ ওহ্ আচ্ছা। মা মেহুল আর মেহরাব খেয়েছে? ওরা তো আমার ওপর রাগ করে বেরিয়ে গেল। ‘
তার মানে মেহুল বাসা থেকে বেরিয়েছিল! তাহলে আমায় মেসেজ করল কে? আচ্ছা আমি যা ভাবছি তা সত্যি নয়তো? মেহুলকে ওরা মেরে ফেলে নাই তো? এবার কি তবে আমার পালা?
‘ রূথিলা মা কি হলো তোমার। চুপ করে আছো যে? ‘
‘ হ্যা…হ্যাঁ খেয়েছে। সবাই খেয়েছে। আন্টি রাখছি আমি পরে কথা হবে। ‘
আন্টিকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কলটা কেটে দিলাম। এবার আমাকে একটা মারাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। এই পদক্ষেপে একটু এদিক থেকে সেদিক হলেই মৃত্যু অবধারিত। খুব সতর্কতার সাথে আমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে হবে। রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে এলাম। তারপর খিচুড়ির সাথে একটা জিনিস ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে দিলাম। এরপর গ্লাসে থাকা প্রত্যেকের সফট ড্রিংসের সাথেও উক্ত উপকরণ মিশিয়ে দিলাম। বলা যায় না কোনটা কাজে লাগে? প্রায় আধ ঘণ্টা হয়ে গেল, ওরা সবাই ঔ রুম থেকে এখন অব্দি বেরুল না। আমি তাই আবার ঐ রুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালাম দরজার পেছনে। ওরা সবাই গভীর ধ্যানে মগ্ন। কিছুক্ষণ বাদে মেহরাব ভাই একটা বস্তা থেকে একটা কাটা মাথা বের করল। ভালো করে খেয়াল করলাম, মাথাটা মেহুলের ছিল। চোখে-মুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ ফুটে রয়েছে। আমার বুকটা হাহাকার করছে। আমার কতটা কাছের ছিল মেহুল, নিজের পরিবার হারিয়ে ওকে পেয়েছিলাম। ঠিক যেন নিজের আপন বোন! অথচ এই পিশাচেরা আমার বোনকে আমার জীবন থেকে কেড়ে নিল। মনে মনে শুধুই আক্ষেপ করছি। তারপর অতি কষ্টে রুমের ভেতরে আবার দৃষ্টিপাত করলাম। আমার নজরে যতবার মেহুলের কাটা মাথা আসছে কষ্টে যেন কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। অন্তরে জ্বলছে প্রতিশোধের আগুন। পেন্টাগ্রামের ঠিক মাঝ বরাবর মাথাটা রাখা হলো। মোমবাতির আলো প্রায় নিভু নিভু হয়ে এসেছে অর্থাৎ এদের উপাসনা শেষ পর্যায়ে। খানিক সময় ওরা কী যেন সমস্বরে পড়ছিল। তারপর আকৃতি বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
‘ আজকেও এই মেহরাবের নির্বুদ্ধিতার জন্য লর্ড আমাদের দেখা দিলেন না। আমাদের প্রত্যকের লক্ষ্য আটকে রয়েছে শুধুমাত্র ওর জন্য। মাত্র ৫৫টা লাশ জোগাড় করতে এত সময় নষ্ট করল। আমার তো দেড় মাসের মাথায় কাজ শেষ হয়েছে। ‘
‘ আরে আর একটা বাকী। একটু পর ওটাকেও টপকে দেব। তাহলেই কার্যসিদ্ধি। ‘
‘ দেরী করছিস কেন তবে? তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে ফেল, ‘ বেশ উত্তেজিত হয়ে কথাটা বলল আকৃতি।
‘ হাতে চার ঘণ্টা সময় আছে। আগে খেয়ে নেই। ততক্ষণে ওই রূথিলা গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবে আর কাজ করতেও সুবিধা হবে। কারণ ওই মেয়েটা রাত গভীর হলে মরার মত ঘুমায়। আশেপাশের কোনো খবর রাখে না, ‘ কথাটা বলেই ঘর কাঁপিয়ে বিশ্রী হাসি হাসে মেহরাব।
আকৃতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মৃণাল বলল,
‘ এই মেহুলকে কাবু করলি কী করে? এ যা দস্যি মেয়ে ছিল! ‘ চোখ-মুখ কুঁচকে বিস্ময় প্রকাশ করল।
‘ ড্রাগস দিয়ে রে। মেয়েটার জন্য মায়া হয়। সবসময় ভাইয়া ভাইয়া করে বাড়ি মাতিয়ে রাখত, ‘ মেহরাবের কণ্ঠে আফসোস।
‘ তুই কিন্তু বেশি আদিখ্যেতা করছিস মেহরাব, ‘ মৃত্তিকা বলল।
মৃণ্ময় মাথা নেড়ে তাতে সায় জানাল।
‘ আচ্ছা খেয়ে আসি চল। তারপর গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সারতে হবে। হাতে সময় খুব কম, ‘ মেহরাব বলল।
আমি সুযোগ বুঝে উক্ত স্থান ত্যাগ করে রুমে চলে গেলাম। এই খাওয়াই হতে চলেছে ওদের জীবনের শেষ খাওয়া। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
_________
চলবে
মায়াজাল
১০ম পর্ব
লেখনীতে : নুসরাত তাবাস্সুম মিথিলা
_________
আমার রুমেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে নরপিশাচ, নরপিশাচীগুলো দেহ ত্যাগ করেছে বেশ কিছুটা সময় পূর্বে। এদের নিথর দেহগুলো পড়ে রয়েছে আমার সামনে। পৃথিবী থেকে কিছু নর্দমার কীট দূর হয়েছে, এদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস থমকে গেছে। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারব না। অবস্থাটা এমন যেন – ” শিকারি যখন শিকারের কাছে হেরে যায়। ” আমার খুব বেশি ভালো লাগছে। দুপুরের দিকে পটাশিয়াম সায়ানেট কিনে এনেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল মেহুলের সাহায্য নিয়ে মেহরাবকে মেরে ফেলব। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সবটা আমায় একা হাতে সামলাতে হয়েছে। পটাশিয়াম সায়ানেটের বিষক্রিয়া খুব তীব্র। এই বিষের সাথে পরিচয় ঘটে ক্লাস এইটে। আমাদের ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর জীবনী ছিল। তিনি ইংরেজদের হাতে নিজেকে সঁপে না দিয়ে পটাশিয়াম সায়ানেট খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তখন থেকেই এই বিষ সম্পর্কে আমার আগ্রহ জন্মে। সকালে অনেক ভেবেছিলাম কী করে এদের পরাস্ত করা যায়? কোনোভাবেই যে মেহরাবের সাথে পারব না, আমার মস্তিষ্ক আমাকে বারবার এই সংকেতই প্রেরণ করেছিল। তখনই হঠাৎ বিষের কথা মনে এল। এখন আপনারা হয়ত ভাবছেন যে এরা আমার রুমে কী করে এল? এটা জানতে হলে ফিরতে হবে দেড় ঘণ্টা পূর্বে।
____________
দেড় ঘণ্টা পূর্বে,
মেহরাব ও তার সঙ্গীরা তৃপ্তি সহকারে তাদের রাতের খাবার সম্পন্ন করেছিল। তারপর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘুমন্ত রূথিলার উপর অতর্কিত হামলা করে তাদের শেষ শিকার করা। কিন্তু তারা রূথিলার রুমে পৌঁছনোর আগে থেকেই অসুস্থ বোধ করতে থাকে। তারপরও তারা নিজেদের শিকারের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়। রূথিলা কখনোই রুমে ছিটকিনি দিয়ে ঘুমায় না। কেবল দরজা লক করে। মেহরাবের কাছে সব রুমের অতিরিক্ত চাবি ছিল এবং রূথিলার রুমে ঢুকতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আর তাই মেহরাবসহ ওর দলের সদস্যরা খুব সহজেই রূথিলার রুমে প্রবেশ করে। রূথিলাকে অতর্কিতে হামলা করার পূর্বেই তাদের সকলের রক্তবমি শুরু হয়, সারা শরীর অবশ হতে শুরু করে। প্রত্যেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শরীরের মারাত্মক যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। রূথিলা এদের উপস্থিতি শুরু থেকেই টের পেয়েছিল তবে সে এই মুহূর্তের অপেক্ষায় নিজেকে শান্ত রেখেছিল। এদের প্রতিটি আর্তচিৎকার রূথিলাকে যেন স্বর্গসুখ দিচ্ছে। তারপর যখন সবাই নিস্তেজ হতে শুরু করে তখন সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সবাইকে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এরপর রূথিলার মাথায় এল কিছু বীভৎস চিন্তাভাবনা। মেহরাবের আলমারি থেকে বেশ কিছু তীব্র এসিড নিয়ে আসে, সাথে রামদা ও চাপাতিও আনে। তারপর চাপাতি দিয়ে আকৃতি ও মৃত্তিকার লাশ কয়েক খন্ড করে। স্টোর রুম থেকে একটা ড্রাম নিয়ে আসে। অতঃপর ড্রামের ভেতরে বিখন্ডিত লাশ রেখে এসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলে। মৃণ্ময় ও মৃণালের লাশের সাথেও একই ঘটনা ঘটে। ফলে চারটি লাশের যেন কোনো অস্তিত্বই রইল না। বাকি পড়ে ছিল শুধুমাত্র মেহরাবের মৃতদেহ। এই দেহটিকেও বেশ কিছু খন্ডে বিভক্ত করে নেয় রূথিলা। তারপর উক্ত লাশটা গলাতে ব্যবহার করে চুন। এই কাজগুলো করার সময় রূথিলা যেন কোনো ঘোরের মাঝে ছিল। প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করেছে। পুরোটা সময় জুড়েই সে ছিল অনুভূতি শূন্য এক মানবী। কী অদ্ভূত তাই না?
____________
এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি অতিক্রম করল অফিসার সাগ্রত ও কনস্টেবল দিশা। তারা কেবল ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা শুনেই দৃষ্টিপটে সেই দৃশ্য অঙ্কন করে ফেলেছে। রূথিলার অবস্থানে তারা উভয়ই নিজেদেরকে কল্পনা করছে। আচ্ছা! সেই অবস্থানে যদি তারা থাকত কিংবা এমন লোমহর্ষক পরিস্থিতির শিকার হতো! তবে তারা কি পারত রূথিলার মত উপস্থিত বুদ্ধি ব্যবহার করে অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দেখাতে? সাগ্রত এখনো ঘোর কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়নি। তবে দিশা এদিক থেকে সাগ্রতের চেয়ে এগিয়ে। বেশ আগ্রহদীপ্ত হয়ে রূথিলাকে জিজ্ঞাসা করল,
‘ আপনি তো চাইলে মেহুলকে সতর্ক করতে পারতেন। ওর জীবন বাঁচতে পারতেন। কিন্তু সেটা কেন করলেন না? কেন ঠেলে দিলেন ওকে মৃত্যুর মুখে? ‘
‘ আমার কথাগুলো কি আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন? ‘ একটা দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে প্রশ্ন করল রূথিলা।
‘ অবশ্যই শুনেছি। ‘ বেশ জোর দিয়েই কথাটা বলল দিশা।
‘ তাহলে আপনিই বলেন, আমার কাছে কি কোনো পথ ছিল যে আমি মেহুলকে সতর্ক করতাম? মেহুল গ্রামে থাকাকালীন সময়ে আমি মেহরাবের সকল রহস্য জেনেছিলাম। আর ফোনে এসব বলাটা নিরাপদ মনে করিনি। আর এরপর শুনলাম ও ঢাকায় আসছে, ভেবেছিলাম সবটা জানাব। কিন্তু….. ‘
‘ আমি বুঝতে পেরেছি মিস রূথিলা। আপনাকে আর বলতে হবে না, ‘ রূথিলাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলল দিশা।
‘ হুম, ‘ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রূথিলা।
সাগ্রত নিষ্প্রভ থেকে সবটা কথা শুনল। তবে মুখ থেকে কোনো টু শব্দ অবধি বের করল না। দিশা রূথিলার উদ্দেশ্যে বাক্য ছুড়ে দিল,
‘ এরপর কী ঘটেছিল? ‘
‘ আমি ঐ বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে উঠেছিলাম। রেডিও শিহরণে জব নিলাম আরজে হিসেবে। তারপরের গল্প অনেকটাই জানেন আপনারা। ‘ মুখে স্মিত হাসি বজায় রেখে বলল রূথিলা।
‘ আচ্ছা ঐ লাশগুলোর কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল না? ‘ মুখে আশ্চর্যের ছাপ রেখে বলল দিশা।
‘ যা ছিল তা বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত জমিতে মাটি চাপা দিয়ে এসেছি। ‘
‘ ওহ্ আচ্ছা। রূপকের সাথে আপনার ঝগড়া হওয়ার পর কী হয়েছিল? ‘
___________
রূপক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রূথিলা হারিয়েছিল তার অতীতের ভয়ানক কালো স্মৃতিতে। অতীতে সে ছয় ছয়টি খুন করে এসেছে। তাও খুব বেশি দিন আগে নয়। মাঝখানে গত হয়েছে মাত্র নয়টি বছর। রূপক বাসা ছাড়ার পর থেকেই রূথিলার মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গিয়েছে। একটা সামান্য প্রশ্ন করাতে তার ভালোবাসার রূপের কী হলো? যে সে তার প্রিয়তমার গায়ে হাত তুলতেও কার্পণ্য করল না। এর পেছনে কি কোনো রহস্যের মায়াজাল ছড়ানো রয়েছে? উত্তর জানা যাবে একমাত্র রূপকের নিকট।
__________
পেরিয়েছে দুটো দিন। অথচ রূপকের কোনো খবর নেই। কল করলে রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয় না। কিছু প্রশ্ন করেই কি রূথিলা মারাত্মক কোনো অন্যায় করে ফেলেছে? তার জন্য দুদিন যাবৎ বাড়ি ছাড়া তার প্রিয়তম। তাকে ছাড়া যে তার প্রিয়তমা অসহায়, বড্ড একা।
___________
মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে আরো দুটি বছর। রূপক রূথিলার সম্পর্কের মান-অভিমান পর্ব শেষ হয়েছে ঝগড়ার এক সপ্তাহের মাথায়। রূপক রূথিলাকে বলেছিল,
‘ আসলে কী বলোতো? এত কাজের চাপ ছিল আমার ওপর, তাই মাথা গরম হয়ে থাকতো। আর বাড়ি ফিরে সব রাগ মিটিয়েছি তোমার ওপর। ভুল করে ফেলেছি গো প্রিয়া। ‘
এই কথা শোনার পর রূথিলার মন না গলে থাকতে পারেনি। তবে অভিমান ভরা কণ্ঠে বলেছিল,
‘ তুমি বাসার বাইরে কোথায় ছিলে? ফোন কেন রিসিভ করো নাই? ‘
‘ শিপন ভাইয়ের বাসায় ছিলাম আর রাগ করে তোমার ফোন ধরিনি। ‘
ব্যস রূথিলাও সরল মনে রূপককে বিশ্বাস করে নিয়েছিল। বিন্দুমাত্র সন্দেহ করেনি। ভালোবাসলে যা হয় আর কী? সন্দেহ করতে চাইলেও মন সন্দেহের অবকাশ দেয় না। ভালোবাসাময় খুনসুটিতে বিগত দুটি বছর পার করেছে তারা। পার হয়েছে তাদের বিবাহিত জীবনের চারটি বছর। রূথিলা মনে মনে সবসময় প্রার্থনা করে আর যাই হোক না কেন, রূপক যেন কখনো তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা না করে। এমনটা হলে রূথিলা মানতে পারবে না। ধ্যানমগ্ন রূথিলাকে ডাকল রূপক। তারা এয়ারপোর্টে বসে ফ্লাইটের অপেক্ষা করছে। আজকে রূথিলার নিউইর্য়কের ফ্লাইট। রূপক তার প্রিয়তমাকে এগিয়ে দিতে এসেছে।
‘ কী এত ভাবছ রূথি পাখি? ‘ মিষ্টি হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলল রূপক।
‘ আমি যাব না রূপ। প্লিজ তুমি আমায় বাসায় নিয়ে চল, ‘ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল রূথিলা।
‘ আরে বোকা কাঁদছ কেন? একদম কাঁদবে না। মাত্র ৭ দিনের ব্যাপার! তোমার কাজ শেষ হলেই তো ফিরে আসবে আর ভিডিও কল তো আছেই। ‘
‘ আমি কান্না করছি না। একা একাই চোখ থেকে পানি পড়ছে। ‘
‘ আচ্ছা হয়েছে। আমি মুছিয়ে দিচ্ছি। তোমার ইন্টারন্যাশনাল সো শেষ করেই তুমি আবার আমার বুকে ফিরে আসবে, ‘ চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে রূপক বলল।
একথাটা শুনে দুজনেই শব্দ করে হেসে উঠল। রূথিলা রূপকের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পূর্ব মুহূর্তে তার প্রিয়র চেয়ে প্রিয়তমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলল,
‘ আমাদের আবার দেখা হবে তো? কেন যেন মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলব। ‘
‘ ধুর পাগলি! এবার যাও, দেরি হয়ে যাচ্ছে। ‘
‘ তাড়িয়ে দিচ্ছ! ‘ অভিমানভরা কণ্ঠে।
‘ নাহ্। ‘
_________
চলবে