মায়াজাল ৭ম পর্ব,৮ম পর্ব

মায়াজাল
৭ম পর্ব,৮ম পর্ব
লেখনীতে : নুসরাত তাবাস্সুম মিথিলা
৭ম পর্ব
______________
চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালাম। নাহ্ আমি কাঁদবো না। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। আমি নিজেকে রক্ষা করেছি। যাকে বলে সেলফ ডিফেন্স। এই জানোয়ার অপরাধ করেছে আমি তার শাস্তি দিয়েছি। ওই সকল অত্যাচারীত, ধর্ষিত মেয়েদের হয়ে আমি প্রতিশোধ নিয়েছি। এবার এই ঘর পরিষ্কার করতে হবে। আর লাশের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এত ভারী লাশ নিয়ে কোথাও ফেলে রেখে আসতে পারব না। এর চেয়ে বরং একে টুকরো করে ফেলি। যেই ভাবা সেই কাজ। নিরবের নিথর দেহকে টুকরো করার জন্য উদ্যত হলাম। চট করে রান্নাঘরে গিয়ে একটা রামদা নিলাম। আস্তে করে নিরবের উপর ঝুকলাম তারপর লাশটাকে খন্ড বিখন্ড করে ফেললাম মোট ৬ টুকরো করেছি। তারপর স্টোর রুম থেকে কিছু বস্তা নিয়ে এলাম। আর লাশের টুকরোগুলোকে বস্তায় ভরতে লাগলাম। রক্তের বিশ্রী গন্ধে ভেতর থেকে সবটা যেন বেরিয়ে আসছিল। দুবার বমিও করেছি। তারপর বস্তাগুলোকে ঘরের এককোণে রেখে পুরো ঘর পরিষ্কার করলাম। তারপর গভীর রাতে বেরিয়ে পড়লাম লাশ লুকানোর উদ্দেশ্যে। নির্জন রাত, মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক ভেসে আসছিল। খুব ভয় করছিল আমার যতই উপরে উপরে নিজেকে শক্ত ভাবার চেষ্টা করি না কেন প্রকৃতপক্ষে আমার ভেতরের সত্ত্বা দুর্বল। ৩টে বস্তা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ফেলেছি আর চেহারা থেতলে দিয়েছি যাতে কেউ পরিচয় সনাক্ত করতে না পারে।

উক্ত ঘটনার পরদিনই বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর কষ্টে জমানো কিছু অর্থ এই সম্বল ছিল আমার। নিজ এলাকা ছেড়ে খানিকটা দূরে পাড়ি জমাই। চাচা, চাচি আসার আগেই বাড়ি ছাড়তে পেরে বেশ হালকা লাগছিলো নিজেকে। আবার আমার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। এরপর আবার নিজেকে গুছিয়ে ফেলি। কিন্তু ঘটনার রেশ রয়েই যায়। আমি মাঝরাতে আর্তনাদ করে জেগে উঠি, স্বপ্নে রক্ত দেখি। একটা মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে দিন অতিক্রম করছিলাম।

____________
এটুকু বলে রূথিলা একটা লম্বা শ্বাস নিল। সাগ্রত মন্ত্রমুগ্ধের মত রূথিলার কথাগুলো শুনছিল। মেয়েটা এমন ভাবে কথা উপস্থাপন করছিল যে সাগ্রতের কাছে মনে হল সে সকল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তার সুমধুর কণ্ঠের মায়াজালে সাগ্রত বিমোহিত। এই কারণেই হয়তো দেশজুড়ে তার প্রচুর সুখ্যাতি, সুনাম ছিল। কিন্তু আজ সেই মানুষটার পাশে কেউ নেই। এ তো গেল ১ম খুনের রহস্য। এখনো আরো দুটো ঘটনা জানা বাকি। কী ঘটেছিল রূথিলার জীবনে? যার দরুন তিনি আজ খুনের আসামী। নিশ্চয়ই সে ঘটনা আরো ভয়ানক হতে চলেছে। দিশার দিকে দৃষ্টিপাত করল সাগ্রত, তার চোখের দিকে তাকাতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল সাগ্রতের। ওই দৃষ্টি দিয়ে তিনি হয়তো মৃত নিরবকে ভস্ম করে দিতে সমর্থ। এত রাগ, ক্ষোভ জন্মে গেল তার মনে। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে রূথিলার দিকে তাকাল সাগ্রত। এখনো থেমে থেমে কাঁপছে মেয়েটা। চোখের দৃষ্টি শীতল। কিছু সময় নিরবতা পালন হলো কারাকক্ষ জুড়ে। হঠাৎ রূথিলা কাতর কণ্ঠে বলে উঠল,

‘ পানি আছে? খুব চেষ্টা পেয়েছে। ‘
‘ জ্বী এই নিন, ‘ সাগ্রত বলে উঠল।

পানি পান করার পর রূথিলা আবারো গুণগুণিয়ে কেঁদে উঠল। কত কষ্ট মিশ্রিত সেই কান্নার স্বরে। এবার সাগ্রত আর কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে বলে উঠল,

‘ তারপর কী ঘটেছিল মিস রূথিলা? ‘

খানিকটা সময় নিয়ে রূথিলা আবার বলতে শুরু করল।

_____________
নিরবের মৃত্যুর ৪-৫ মাস পর শুনলাম আমার বিরুদ্ধে চাচা-চাচি চুরির অভিযোগ থানায় দায়ের করেছেন। আমি নাকি বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে পালিয়েছি। আমার এক বান্ধবীর কাছে খবরটা শুনেছিলাম। এলাকায় আমায় নিয়ে কুৎসা রটেছে, আমি নাকি চুরি করে কোন ছেলের সাথে পালিয়েছি। খুব কষ্ট হয় এসব শুনে। আজ বাপি-মা থাকলে হয়তো আমার জীবনটা অন্যরকম হতো। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আমি অনেক ভেঙে পড়ি। কিন্তু দুঃসময় কেটে আবার নতুন দিনের সূচনা হয় আমার জীবনে।

আমি একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাই। আর সেই সুবাদে আমার টিউশন বাড়তে থাকে। তখন আমি আমার এক বান্ধবীর বাসায় সাবলেট থাকতে শুরু করি। ওর বাসায় ওর মা আর বড় ভাই ছিলেন। এই দুজনকে নিয়ে ওর পরিবার ছিল। আমার বান্ধবীর নাম মেহুল তানজুম। খুব ভালো আর মিষ্টি একটা মেয়ে। কিন্তু ওর বড় ভাইকে আমার শুরু থেকেই কেমন যেন সন্দেহজনক লাগত। লোকটার মাঝে কেমন যেন গোলকধাঁধা, বলতে গেলে রহস্যময়। তার নাম মেহরাব নিহান। তিনি নাকি কিসের ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু অবাক করার বিষয়টি হলো তিনি বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকেন। তাহলে ব্যবসা সামলাতো কে? আর সবসময় রুমে বসে কী সব জানি করতেন। মাঝে মাঝেই তার রুম থেকে গা গোলানো বোটকা সব গন্ধ ভেসে আসতো। আমি যখন নিরবকে হত্যা করেছিলাম তখন ওর লাশটা ঘরে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ছিল। ঠিক তেমন রক্তের গন্ধ আমার নাকে আসতো। মনে হতো ঘরে বোধহয় লাশ নিয়ে সে কিছু একটা করছে। অথচ আন্টি বা মেহুল কারো বিন্দুমাত্র অনুভব হতো না! কি আশ্চর্য! কিন্তু এভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়া কাউকে অযাচিত সন্দেহ করা ঠিক নয়। তাই নিজের কৌতূহলী মনকে বাধা দিলাম এসব ভাবতে। তবে মনকে বললেই কি মন শান্ত হয়? আরো দ্বিগুণ উৎসাহে নিষিদ্ধ কাজটি করতে চায়। আমার ক্ষেত্রেও হলো ঠিক তাই। আমি মেহরাব ভাইয়ের উপর নজরদারি শুরু করলাম। বেশ কিছুদিন কেটে গেল অথচ একটা প্রমাণ পেলাম না। তাই আস্তে আস্তে মন থেকে সন্দেহ দূর হলো। তবে গা গোলানো দুর্গন্ধ প্রায়ই নাকে আসত। মনে হতে শুরু করল আমার হয়তো হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নিকট যাতায়াত শুরু করলাম। কিন্তু আদতে আমার কোনো সমস্যাই তিনি ধরতে পারলেন না। আমার সন্দেহ আবারো মেহরাব ভাইয়ের উপর জেঁকে বসল। মেহুল আজকাল কেমন যেন নিস্তেজ, নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। ওদের বাসায় এসেছি প্রায় ছ’মাস হতে চলল। আর ওর সাথে আমার পরিচয় ক্লাস নাইন থেকে। বরাবরই ও ভীষণ চঞ্চল মেয়ে কিন্তু ইদানিং ওর কিছু একটা হয়েছে। সব ঘটনাগুলো বোধহয় একসূত্রে গাঁথা। এই দুর্গন্ধ, মেহুলের পরিবর্তন, মেহরাব ভাইয়ের রহস্যময় আচরণ। তাই এবার খুব সতর্কতার সাথে আমাকে পদক্ষেপ ফেলতে হবে। তা নয়তো এই রহস্যে ঘেরা মায়াজাল কখনো ছিন্ন করা সম্ভব হবে না।

_____________
সাগ্রত আবার গোলকধাঁধায় আটকে গেল। এসব কী ঘটে চলেছে রূথিলার জীবনে? চিন্তায় চিন্তায় মাথার ভেতরে জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কপালের রগ দপদপ করছে। তারপর রূথিলা আবার বলতে শুরু করল।

_______________
এরপর একদিন এল সেই মোক্ষম সুযোগ। যার অপেক্ষায় আমি প্রহর গুনছিলাম।
দিনটি ছিল শর‍ৎকালের এক পড়ন্ত বিকেল। সূর্য অস্ত যাবার ঠিক পূর্ব মুহূর্ত। প্রকৃতি সেদিন নতুন সাজে সেজেছিল। পরিবেশটা ভীষণ নিস্তব্ধ ছিল। মেহরাব ভাই আর মেহুল আন্টিকে নিয়ে তাদের গ্রামে কোনো এক দরকারে গিয়েছিল। ২ দিন পর ঢাকায় আসার কথা। তার মানে দাঁড়ায় আমার হাতে ৪৮ ঘণ্টা সময় ছিল। দুর্গন্ধের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য। আমি ভাবলাম পুরো বাড়ির তল্লাশি নেব। অতঃপর যেই ভাবা সেই কাজ। মেহুল আমায় প্রচুর বিশ্বাস করত। বিধায় তাদের বিভিন্ন রুমের চাবি আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। আমি আন্টির ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি। তারপর পুরো ঘর গুছিয়ে তালা দিয়ে মেহুলের রুমে গেলাম। ওর রুমে পাউডারের কৌটায় পাউডার ছিল না। ছিল অন্য কিছু, যার সংস্পর্শে আসার পর আমার পুরো মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। আমার কাছে এই সাদা পাউডারগুলোকে মাদকদ্রব্য বলে মনে হচ্ছিল। তাই কিছুটা পাউডার সংগ্রহ করে রুম গুছিয়ে তালাবদ্ধ করলাম। বাকি রইল মেহরাব ভাইয়ের রুম আর রান্নাঘর। আগে রান্নাঘরের তল্লাশি নিলাম। ওখানে সন্দেহজনক কিছু পাইনি। এবার পালা মেহরাব ভাইয়ের রুমের। রুমের দিকে যতই এগিয়ে যাচ্ছি বুকের ধুকপুকানি ততই বাড়ছে।

_________
চলবে

মায়াজাল
৮ম পর্ব
লেখনীতে : নুসরাত তাবাস্সুম মিথিলা
_________
মেহরাব ভাইয়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চাবি হাতে নিয়ে কাঁপছি। কাজটা করা কি ঠিক হবে? এই নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। মন-মস্তিষ্কের চরম টানাপোড়েনে ভুগছি। আমি তো কোনো অন্যায় করে ফেলছি না? নাহ্ আমি তো কিছু রহস্যের মায়াজাল ছিন্ন করতে চাইছি। কোনো অন্যায় করছি না। এসব ভেবে নিজের মনকে আশ্বস্ত করলাম। সাহস বাড়াতে আয়াতুল কুরছি পড়ে বুকে ফু দিলাম আর আল্লাহর কাছে মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। তারপর চাবি ঘুরিয়ে তালা খোলার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু আশ্চর্য! কিছুতেই তালা খুলতে পারছি না। কী হলো? উফ তীরে এসে এভাবে আমার তরী ডুবে যাবে? আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমাকে যেকোনো উপায়ে রুমে ঢুকতেই হবে। অনেকটা সময় চেষ্টার পর তালাটা খুলতে সক্ষম হলাম। আসলে অতিরিক্ত চিন্তায় হাত-পা কাঁপছিল। তাই একটা সাধারন তালা খুলতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। রুমের দরজা ধাক্কা দেয়ার সাথে সাথেই নাকে ভেসে এলো তীব্র দুর্গন্ধ। সেখানে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে পারলাম না। ছুটে চলে এলাম ওয়াশরুমে। তিনবার বমি করার পর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে, গা ছেড়ে দিয়েছে। ওমুখো হওয়ার সাহস আর হচ্ছে না। তবে রহস্যের মায়াজাল উদঘাটন করতে হলে আমাকে মেহরাব ভাইয়ের রুমে ঢুকতেই হবে। আর তা যেকোন মূল্যে। আবার বুকে সাহস সঞ্চার করে মুখে ওড়না পেচিয়ে এগিয়ে গেলাম সেই রুমের দিকে। ঢুকে পড়লাম রুমের ভেতরে। অসহনীয় দুর্গন্ধ, তবুও মুখ বুজে সবটা সহ্য করলাম। রুমের প্রতিটি দেয়ালজুড়ে কী সবের ছবি যেন আঁকানো। ভালো করে লক্ষ্য করলাম। আরে এটাতো পেন্টাগ্রামের চিত্র! পেন্টাগ্রাম হচ্ছে তারকাচিহ্নের মত করে আঁকা প্রতীক। আমার জানা নেই এ সম্পর্কে এত কিছু। তাই পুরো রুম ভালো করে দেখতে হবে। সব দেয়ালে পেন্টাগ্রামের চিত্র কেন থাকবে? এর পেছনের গল্প কী হতে পারে? নিশ্চয়ই এটা কোন ঘটনার সংকেত দিচ্ছে। পুরো রুমে একটা বেড, একটা বিরাট আলমারি এবং রুমের চারকোণায় চারটি কাঠের কর্ণার করে রাখা। আর কিছু নেই এই রুমে। কর্ণারগুলোতে কী যেন সাজিয়ে রাখা? তাই দেখতে এগিয়ে গেলাম। যা দেখলাম তাতে আমার হৃদপিণ্ড যেন ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইল। কর্ণারের ৬টি তাকের প্রতিটি উপকরণের সামনে নাম লিখে রাখা। একটা কাটা মাথা সবচেয়ে নিচের তাকটিতে রাখা। তার সামনে লিখা ‘ আমার প্রিয় জেসিকার মাথা। ‘ মানেটা কী এসবের? তার উপরের তাকে একটি কাটা স্তন রাখা। এর সামনে লেখা ‘ পৃথিবীর সবচেয়ে মোহনীয় বস্তু। ‘ আমার পা কাঁপছে। এ কোথায় এসে উঠেছি? এ যে দানব, মানুষরূপি পিশাচ। নিচ থেকে তৃতীয় তাকে রয়েছে একটা নাভি যা সামান্য পোড়ানো, এর সামনে লিখা ‘ আর মাত্র দুটো তারপর আমার কার্যসিদ্ধি হবে, আমি পাবো লর্ড লুসিফারের অলৌকিক সব ক্ষমতা। বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী পুরুষ হব আমি। ‘ এই লেখা অতি সুকৌশলে যত্নসহকারে লিখে রাখা হয়েছে, মনোযোগ দিয়ে না দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই। এবার তার উপরের তাকে দৃষ্টিপাত করলাম। সেখানে কিছু কাগজপত্র দেখতে পেলাম। হাত বাড়িয়ে কাগজপত্র নিয়ে আমার ঘরে চলে এলাম। ওই রুমটাতে দমবন্ধ লাগছিল সাথে প্রচুর ভয়ও করছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি মেয়েগুলোর অতৃপ্ত প্রেতাত্মারা আমায় ঘিরে ধরবে। কী ভয়ংকর ছিল সেই সকল মুহূর্তগুলো। এমন নৃশংসতা কী মানুষ করতে পারে? রুমের অন্য কর্ণারগুলোতে তাকানোর বিন্দুমাত্র সাহস পাইনি আমি। কাগজগুলোতে অনেক কিছু লেখা আছে। মেহরাব শয়তান পূজারী, সে শয়তানের উপাসনা করে। প্রায় ডজনখানেক কাগজ রয়েছে, যার প্রতিটিতে তার উপাসনার বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কুমারী মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সে শয়তানের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে। তার বিশ্বাস এর মাধ্যমে সে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হতে পারবে, এখানে বেশ কিছু বইয়ের নাম পেয়েছি। যাদের লেখকেরা উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করেছে বলে লিখা রয়েছে। কাগজে পেন্টাগ্রামের সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। ৫৫ মেয়ের মধ্যে ৫৩ মেয়েকে উৎসর্গ করা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তার প্রয়োজন আরো দুজন কুমারী মেয়ে। আর উৎসর্গকৃত মেয়েদের নাম, বয়স, উৎসর্গের সময় এবং তারিখ উল্লেখিত রয়েছে সেই কাগজে। কাগজে আরও দুটো নাম তালিকা করা রয়েছে দেখতে পেলাম। সেখানে লেখা ছিল –

আমার পরবর্তী শিকার,
৫৪. মেহুল তানজুম (নিজের প্রিয়জনকে উৎসর্গ করলে লর্ড লুসিফার সন্তুষ্ট হন)
৫৫. রূথিলা তাবাস্সুম।

মানে পরবর্তী শিকার আমরা হতে চলেছি। ওহ্ আল্লাহ রক্ষা কর আমাদের। কী করে এই নরপশুর হাত থেকে রক্ষা পাব? আচ্ছা আন্টি আর মেহুলের কোনো বিপদ হয়নি তো? আমাকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। আচ্ছা এই মেহরাবের রুমে তো পেন্টাগ্রামের উপস্থিতি ছিল। পেন্টাগ্রামের জন্য পাঁচজন সদস্য প্রয়োজন। মেহবার একজন আর বাকি চারজন তবে কারা? তারাও কী এমন নিকৃষ্ট কাজের সাথে জড়িত? ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে।

____________
সাগ্রত রূথিলার কথা থামাতে বলে উঠে দাঁড়াল। রূথিলা অবাক হয়ে তাকায় সাগ্রতের দিকে।
সাগ্রতের দৃষ্টি এলোমেলো, তিনি এসব কথা হজম করতে পারছেন না। পৃথিবীতে এমন বিচিত্র মানুষও আছে। এটা কি গল্প নাকি সত্যি? রূথিলা বলল,

‘ আমার জীবন সম্পর্কে আগ্রহ শেষ হয়েছে? আর কিছু নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন না! ‘
‘ আমি জানতে চাই। তবে কিছুটা সময় প্রয়োজন। ‘
‘ ততক্ষণে যদি আমি না থাকি? ‘ খানিকটা অভিমানভরা কণ্ঠে বলল রূথিলা।
‘ মানে? ‘ সাগ্রতের কণ্ঠে অবাক হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
‘ মানে এমনও হতে পারে আমি বেঁচে থাকব না, ‘ বেশ প্রাণোচ্ছল হয়ে কথাটা বলল রূথিলা।
‘ তা হঠাৎ আপনার এমনটা মনে হওয়ার কারণ? ‘ সাগ্রতের চোখে-মুখে বিস্ময়ের ছাপ।
‘ রাখেন তো এসব কথা। আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন? ‘ হতাশাগ্রস্থ কণ্ঠে বলল রূথিলা।
‘ বলুন কী? ‘
‘ আমার বিরুদ্ধে সব সাক্ষ্য, প্রমাণ রয়েছে। তাহলে আমার ফাঁসি হবে কবে? ‘

এমন প্রশ্নের জন্য সাগ্রত মোটেও প্রস্তুত ছিল না। একটা মানুষ কখন নিজের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে উন্মুখ থাকে? হয়তো যখন তার জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্ম নেয়, চাওয়ার বা পাওয়ার কিছু থাকে না। এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই কারাকক্ষ থেকে চলে আসল সাগ্রত।

_________
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here