#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_৯ও১০
#আফিয়া_আফরিন
মায়ার এমন খাপ ছাড়া ভাব গুলো একেবারে সহ্য হচ্ছে না ইমনের। কোন কথা বললেই ডোন্ট কেয়ার এক ধরনের ভাব করে। ইমন সেদিনের কথাটা মায়াকে বলতে গিয়েও থমকে গিয়েছে বারবার।
যত যাই হোক নিজের এমন বাজে একটা কীর্তিকলাপের কথা তো আর ভালোবাসার মানুষকে বলা যায় না। শেষে মায়া যদি আরো উল্টো ভুল বোঝে।
সুহাদা জামান ছেলেকে বললেন, “মায়া আসছে এখন এখানে। কোথাও ঘুরতে গেলেও তো পারিস তোরা। সারাদিন মেয়েটা বাসায় থাকে। আর তুই দেখি সারা বাংলাদেশ টইটই করে ঘুরে বেড়াস।”
“মায়া গেলে তো নিয়েই যেতে পারি।”
“হ্যাঁ, তো যা না। জিজ্ঞাসা কর কোথায় যাবে?”
“আচ্ছা।”
ইমন মায়ার ঘরে এসে দেখলো, মিমো আর মায়া দুজনে কাটাকুটি খেলছে আর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ইমনকে তারা খেয়াল করে নাই। ইমন বেশ কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো।
তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, “আসবো ভেতরে?”
মিমো বললো, “হ্যাঁ, আসো।”
ইমন ভিতরে ঢুকে বিছানায় বসে বললো, “তোরা কোথাও ঘুরতে যাবি?”
মায়া কোন উত্তর দিল না। মিমো এক লাফে উঠে বললো, “ওয়াও দ্যাট’স গ্রেট! কোথায় যাবো বলো?”
“সেটা তোরা ঠিক কর, কোথায় যাবি তোরা?”
মিমো মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “মায়া আপু, তুমি বলো কোথায় ঘুরতে যেতে চাও?”
“এসব ঘোরাঘুরির ব্যাপারে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমি কোথাও যাবো না।” নির্বিকার উত্তর দিলো মায়া।
মিমো অবাক হয়ে বললো, “কেন?”
মায়া কিছু বলার আগে ইমন মিমো কে উদ্দেশ্য করে বললো, “মিমো তুই একটু বাইরে যা। মায়ার সাথে আমার কথা আছে।”
মিমো ‘আচ্ছা’ বলে বেরিয়ে গেলো।
ইমন মায়াকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো, “কি হয়েছে তোর? আমার সাথে এমন করছিস কিসের জন্য? কেউ বলছে তোকে কিছু? যদি বলেই থাকে তো বলনা আমায়!”
“নাহ। কে কি বলবে? বাই দা ওয়ে, কারো কি কিছু বলার কথা ছিলো?”
“কিন্ত, আমার তোকে কিছু বলার ছিলো।”
“বলো।”
“নীলাকে নিয়ে। আসলে সেদিন নীলাকে ওর বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম না, সেদিন একটা বাজে ঘটনা ঘটায় ফালাইছি। বুঝতে পারি নাই এমন কিছু হবে।”
বহু কষ্টে কথাগুলো মুখ থেকে বের করলো ইমন।
মায়া হেসে বললো, “আমি জানি। যাইহোক আর কিছু বলবা?”
“তুই জানিস মানে? কে বলছে তোকে?”
“কি মনে করছো? কেউ না বললে আমি কিছু জানতে পারবো না। আমার নিজের চোখ নেই? আমি কি অন্ধ নাকি? চোখ থাকতেও কিছু দেখতে পারবো না আমি?”
“কিভাবে দেখলি তুই?”
“এত কথা তো তোমার না জানলেও চলবে।”
“না চলবে না। তুই যদি কিছু দেখিস বা জানিস তাহলে আমার শোনা উচিত। আমি কি পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম সেটাও তোর বোঝা উচিত।”
“আমি জানি সবই।”
“নাহ। তুই কিছু জানিস না? যদি জানতিই, তাহলে আমার সাথে তুই ব্যাপার টা নিয়ে কথা বলতি। এইজন্যই তুই আমার সাথে এতোদিন কোনো কথা বলিস নি। এই মাত্র ব্যাপারটা বুঝলাম আমি। কীভাবে তোর কাছে ক্ষমা চাইবো, সত্যিই তার ভাষা নাই আমার।”
ইমন মায়ার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, “বিশ্বাস টা বোধহয় ভেঙ্গেই দিলাম, তাইনা?”
মায়া কিছু বললো না। শুধুমাত্র হাতটা সরিয়ে নিলো। ইমন নিরাশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
.
.
.
ভালোবাসা শব্দটা যেমন পবিত্র, ভালোবাসার মানুষটাও হয়তো সেই রকম পবিত্র।
যাই হয়ে যাক না কেন, মায়া ইমনকে ভালোবাসে তো। সেদিন হয়তো ভুলবশত একটু এদিক-সেদিক হয়েই গেছিল। ইমন তো স্বীকার করেই নিল, সে যা করেছে ভুল করেছে।
তারপরও মায়ার এত মান করে থাকা ঠিক না। একটা সুযোগ তো দেওয়া যেতেই পারে। অবশ্য সুযোগ বলছি কি জন্য, সম্পর্ক তো তাদের শেষ হয়ে যায় নি যে সুযোগ দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।
পেছনে ফেলে আসা সেই দিন টা ভুলে গেলেই তো হয়। কিন্তু ওই দিনটা ভোলা তো আর এত সোজা বিষয় না। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে, সবচেয়ে ভরসার বিশ্বাসের মানুষটাকে অন্য একজনের সাথে আলিঙ্গনবদ্ধ অবস্থায় দেখলে তো বুক ভাঙাটা স্বাভাবিক!
কিন্তু, তবুও সব কিছুকে পিছনে ফেলে সামনে আগাতে হবে। আগাতে হয়।
মায়া উঠে ইমনের ঘরে গেল। দেখল সে, খাটের এক কোনায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
মায়া ইমনের পাশে বসলো।
ইমনের হাত টেনে নিয়ে বলল, “সরি, আমি ওই দিনটা ভুলে যেতে চাই।”
“সরি তুই কেন বলছিস? যা করার আমি করেছি। সেদিন যে আমি কিভাবে কাজটা করলাম, নিজেও জানিনা। তুই তো সব সময় নীলাকে নিয়ে আমার সন্দেহ করিস। সেই সন্দেহ এটাই সত্যি হয়ে গেল। কিন্তু সেদিন নীলার কোন দোষ ছিল না, বিশ্বাস কর। যা করার আমিই করেছি। আমিই সামনে এগিয়েছি।”
মায়া ইমন এর গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরালো। বলল, “আমি বুঝেছি সব। ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। আর সেদিনের ব্যাপারটা আমি ভুলে গেলেই তো হয়। আমি এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুলে যেতে চাই। আমার মনে হয়, তোমারও ভুলে যাওয়া শ্রেয়।”
ইমন মাথা নাড়ালো। কৃতজ্ঞতা নিয়ে তাকালো মায়ার দিকে।
মায়া বলল, “ঘুরতে যেতে চাইছিলা না? কোথায় যাবে বলো?”
“তুই বল? তুই কোথায় যাবি?”
“তুমি বলো?”
“না, তুই।”
“চিড়িয়াখানায় চলো!”
“এ্যাহ, এত সুন্দর সুন্দর জায়গা থাকতে শেষ পর্যন্ত চিড়িয়াখানা?”
“ওই জন্যই তো বললাম কোথায় যাবো তুমি ঠিক করো। তা তো তুমি করলে না, দায়িত্ব যখন আমার উপর দিয়েছো, তখন আমি যেখানে বলেছি সেখানেই নিয়ে যেতে হবে।”
“দায়িত্বের যে এমন অপব্যবহার করবি তা তো জানতাম না। আচ্ছা চল। রেডি হয়ে আয়।”
“মিমো যাবে তো?”
“ওকে বল আরেকদিন নিয়ে যাব। আজকে তুই চল আমার সাথে।”
“ইশশশ, কি স্বার্থপর ভাই তুমি!”
“আচ্ছা যা, ওকেও রেডি হতে বল।”
মায়া রেডি হওয়ার জন্য ঘরে এলো। মিমোকে যাওয়ার কথা বললে সে, না করে দিল। তার নাকি হঠাৎ করে মাথা ব্যথা করছে। তার মধ্যে চিড়িয়াখানা দেখার মুড একদম নেই তার। তাই আর মিমোর যাওয়া হলো না।
ইমন আর মায়া রেডি হয়ে বের হতে নিলেই নীলা এসে হাজির। এসেই বলল, “কেমন সারপ্রাইজ দিলাম!”
তার পরনে লাল টুকটুকে শাড়ি। খোপায় বেলি ফুলের মালা। এক কথায় চোখ ধাঁধানো উগ্র সাজ!
মিমো ওকে দেখে বলল, “এত সেজেগুজে কোথা থেকে এলে?’
“আরে, এইদিকে আমার একটা ফ্রেন্ড এর বার্থডে ছিল আজকে। সেখান থেকেই এলাম। ভাবলাম দুটো দিন এখানে থেকে যাই। বাড়িতে বসে থেকে থেকে বোর হয়ে যাচ্ছিলাম।”
তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “ওমা! তুমি আছো এখনো? আমি তো ভেবেছি চলেই গেছো। তো যাবা কবে?”
শেষের কথাটা ঠেস দিয়েই বললো নীলা।
মায়া উত্তরে জানালো, “যাব না তো। ভেবেছি একেবারে থেকে যাব এখানে। যেয়ে কি হবে? এই বাড়িতেই তো আবার এক সময় ফিরতে হবে। এটাই তো একমাত্র ঠিকানা। যত যাই হোক, হবু শ্বশুর বাড়ি বলে কথা!”
চোখ টিপি মেরে বলল মায়া।
মায়ার কথায় নীলা মুখ কালো করে ফেললো। বললো, “বাই দ্যা ওয়ে, যাচ্ছো নাকি কোথাও তোমরা?”
“হ্যাঁ যাচ্ছি। চিড়িয়াখানায়। কেন যাবে তুমি?”
“ওয়াও। কে কে যাচ্ছে?”
“আমি আর ইমন।”
“আমিও যাই তোমাদের সাথে প্লিজ। অনেকদিন মিরপুরের ঐদিকে যাওয়া হয় না।”
ইমন এতোক্ষন ঘরে ছিল। নীলার কথা শুনে বের হয়ে এলো। নীলার সামনে দাঁড়াতেও তার কেমন জানি লজ্জা লাগছে।
ইমন নীলাকে থামিয়ে গম্ভীর গলায় বললো, “তোর সব জায়গায় যাওয়া লাগবে কিসের জন্য? যেখানেই যাওয়ার কথা উঠে, মাঝখানে উড়ে এসে জুড়ে বসিস।”
বলেই ইমন মায়ার হাত ধরে বাসা থেকে বের হলো।
.
.
দুজনে মিলে প্রচুর ঘুরলো। এক চিড়িয়াখানার নাম করে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ফেললো। যখন বাড়ি ফিরবে তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত দশটা ছুঁইছুঁই।
এর মধ্যে নীলা ইমনকে দুইবার ফোন করেছিলো। ইমন ব্যাপারটাকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে গেছে।
ফেরার সময় ধুলো উড়ানো বাতাস বাওয়া শুরু হলো। এরই মধ্যে আবার ঝুম বৃষ্টি।
বৃষ্টি দেখে মায়া এক সাইডে গিয়ে দাঁড়ালো। ইমন এসে বললো, “চল ভিজেই বাড়ি ফিরি।”
মায়া তাকাল ইমনের দিকে। এমন এক বৃষ্টির সময়েই তো নীলা আর ইমনকে একসাথে দেখেছিলো। এই বৃষ্টিটা সেই সময়টাকে বারবার খুঁচিয়ে বের করছে। মুহূর্তেই চোখ ছলছল করে উঠলো তার।
ইমনের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো, “আমি বৃষ্টি পছন্দ করি না। যে বৃষ্টি তোমাকে আমার থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে নিয়ে যেতে সক্ষম, সেই বৃষ্টি আমি পছন্দ করি না। যে বৃষ্টিতে তুমি ভুলক্রমে আরেকজনের সাথে আলিঙ্গন বন্ধ হতে পারো, সেই বৃষ্টি আমি ঘৃণা করি। সে বৃষ্টিতে আমি ভিজবো না। ভিজবো না, ভিজবো না, কখনোই ভিজবো না।”
________
“মায়া আপু, ওঠো না। একটু বাইরে বের হব। চলো প্লিজ।”
মিমোর ডাকে ঘুম ঘুম চোখে তাকালো মায়া।
“কয়টা বাজে?”
“আটটা পার হইছে।”
“কোথায় যাবি এত সকালে?”
“তুমি ওঠো আগে তারপর বলতেছি।”
“আমাকে ঠিক নয়টার সময় ডেকে দিবি। যেখানে যাওয়া লাগে, যাবোনি। কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এখন আর ডাকাডাকি করে আমার ঘুম নষ্ট করিস না। মেরে মাথা ভেঙ্গে ফেলবো।”
বলেই মায়া উল্টো দিক ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো।
মিমো হতাশ চোখে মুখে এদিক সেদিক তাকালো। আজ ঋদ্ধর সাথে দেখা করার কথা। ঋদ্ধ বলেছিল, সকালে দেখা না করতে। কিন্তু মিমোর ভয় হচ্ছিলো, ইমনকে নিয়ে। সকালবেলায় ক্যাম্পাসে থাকে ইমন, এই সময় ঋদ্ধর সাথে দেখা করলে ধরা খাওয়ার কোন চান্স নেই। বিকেলবেলা দেখা করতে গেলে নিশ্চিত সে ধরা খাবেই।
এইজন্য মায়াকে ডাকছিল। কিন্তু মায়া তো ঘুমিয়েই কাঁদা।
এমন সময় নীলা এসে পাশে বসলো। বলল, “কিরে মুড অফ নাকি তোর?”
“না। আই এম ওকে। ঘুম ভাঙলো তোমার?”
“হ্যাঁ। মায়া এখনো ঘুমাচ্ছে? ইমন কোথায়?”
“ভাইয়া ক্যাম্পাসে। এই জানো নীলা আপু, আমরা বোধহয় খুব শীঘ্রই ভাইয়ার বিয়ে খেতে যাচ্ছি।”
নীলা অবাক হলো। কিন্তু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “তাই? কার সাথে?”
“কার সাথে আবার? মায়া আপুর সাথে। মা তো তাই বলেছে।”
“কাকি জানি ওদের সম্পর্কের কথা?”
“হ্যাঁ, রিসেন্টলি জেনেছে।”
“ও।”
যতই বিয়ের শাদির কথা উঠুক না কেন, নীলা তার কথায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! ভেবেছিল, তার হাতে সময় আছে। কিন্তু এখন খুব দ্রুত বিয়ের কথা পর্যন্ত চলে গেছে। কাকি যেহেতু সম্পর্কের কথা জেনে গেছে, আস্তে আস্তে সবাই জানবে। তারপর বিয়ের ব্যবস্থা।
না আর দেরি করলে হবে না, যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আগে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে সিওর হতে হবে।
নীলা দেরি না করে তৎক্ষণাৎ কাকির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কি ব্যাপার? তোমরা নাকি ইমন মায়ার বিয়ে দিচ্ছো?”
“তোকে কে বললো?”
“ওসব কথা কি চাপা থাকে কাকি? বলতে না চাইলেও ঠিকই এই ওই মুখে শোনা যায়। কেন গো, আমাকে বললে কি এমন ক্ষতি হবে?”
“পাগলি মেয়ের কথা শোনো! ক্ষতি কেন হবে? আর বিয়ের কথা তো এখনো ওঠে নাই। ওরা তো এখনো বাচ্চা। যাক আরো কিছুদিন।”
“ও আচ্ছা।”
.
.
.
সকালবেলা মিমো আর মায়ার বাহিরে যাওয়া হলো না। সুহাদা আটকে দিলেন। বললেন, “যেখানে যাওয়ার বিকালে যাস। সকাল সকাল কই যাবি?”
মিমো আর কথা বললো না। বেশি কথা বললে মা আবার সন্দেহ করতে পারে।
কিছুক্ষণ বাদে নীলা বের হয়ে গেল ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে।
মিমো আর মায়া বসে বসে কিছুক্ষণ লুডু খেললো। কিছুক্ষণ টিভি দেখলো, আবার ছাদে গিয়ে দড়ি লাফ ও খেললো কিছুক্ষণ।
মিমো গালে হাত দিয়ে বসে পড়লো। বললো, “হাউ বোরিং টাইম!”
.
.
ক্যান্টিনে বসে টেবিলের উপর একটা ওয়েট পেপার ঘুরাচ্ছিলো আর আনমনে কিছু ভাবছিলো ইমন। এমন সময় নীলা এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে পাশে বসলো। এমন এক পলক দেখলো ওকে। দেখেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকালো। সব সময় একটা ন্যাকা ন্যাকা ভাব করবে। এই কারণেই নীলাকে মাঝে মাঝে ইমনের সহ্য হয় না।
ইমন উঠে যেতে নিলে, নীলা ইমনের হাত ধরে। ইমন প্রশ্ন সুচক দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। নীলা চোখের ইশারাতে তাকে বসতে বলে।
ইমন বসলে নীলা বলে, “বসো। কোথায় যাচ্ছো?”
“কিছু বলবি?”তীক্ষ্ণ গলায় বলল ইমন।
“না। সেদিনের ওই ঘটনাটা!”
“দেখ সেদিনের ঘটনাটা ভুলে যাওয়াই ভালো। তোর জন্য ও এবং আমার জন্য ও। আর সেদিনের ঘটনার জন্যে আমি তোর কাছে ভীষণ ভাবে লজ্জিত। শুধু তোর কথাই বা বলছি কেন, আমি মায়ার কাছে এবং সেই সাথে নিজের কাছে লজ্জিত। এখন তোর সামনে বসে থাকতেও লজ্জা করছে।”
নীলা এসব কথার ধার দিয়েও গেল না। সে সোজাভাবে ইমনকে প্রশ্ন করল, “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”
ইমন বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর বলল, “মানে?”
“মানে হলো, আমার জন্য কি তোমার বিন্দুমাত্র ফিলিংস ও আছে? না হলে তো সেদিন এমন ঘটনা ঘটার কথা না।”
“আচ্ছা। সেদিন কি খুব সিরিয়াস কিছু ঘটেছিল? আর সেটা আমি বাদই দিলাম। কিন্তু এখন আমি তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। সেদিনের সামান্য একটু ঘটনা থেকে তুই কিভাবে মনে করলি, তোর জন্য আমার কোন ফিলিংস থাকবে? সিরিয়াসলি তোর সাহস দেখে আমি রীতিমতো অবাক হচ্ছি। সেদিনের ওই ঘটনাকে দয়া করে কোন ইস্যু বানাস না। তুই জানিস আমি মায়াকে ভালোবাসি। আর সেদিনের ব্যাপারটার জন্য আমি তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এন্ড আই সরি টু সে নীলা, তোর প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ফিলিংসও নেই। নেই মানে একেবারেই নেই।”
বলেই ইমন উঠে চলে গেলো।
নীলা ওখানেই বসে বক্র হাসি হেসে বললো, “আজ ফিলিংস নেই। কাল ও হয়তো থাকবে না। ধরেই নিলাম, পরশু ও হয়তো থাকবে না। কিন্তু কতদিন? আমি যে খেলা শুরু করেছি, তাতে খুব শীঘ্রই তুমি আর মায়া আলাদা হতে বাধ্য!”
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার সময় মায়া নীলাকে দেখল না। তাই জিজ্ঞেস করল, “নীলা আপু কোথায়?”
ইমন খেতে খেতে তাকালো ওর দিকে। কিন্তু কোন উত্তর দিল না।
উত্তর দিলেন সুহাদা, “ও ক্যাম্পাসে।”
“ও। আমি মনে করলাম বাসায় চলে গেছে হয়তো।”
“না ও থাকবে কিছুদিন। ওর আবার ক্লাসের পর টিউশনি আছে, বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হবে। কেন, কিছু বলতিস ওকে?”
“না না। এমনিতেই জিজ্ঞাসা করছিলাম।”
“আচ্ছা।”
তারপর তিনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।
ইমন মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “তোর দেখি নীলার জন্য দরদ উঠলে উঠলে পড়ছে, ব্যাপার কি?”
“নাথিং!”
“তাহলে? এত জিজ্ঞাসা করছি যে? ও চুলোয় গেলেই বা তোর কি?”
“এমনি। তেমন কোন ব্যাপার না। এখন কি করবে, মানে খাওয়া-দাওয়ার পর?”
“কেন কিছু করতে হবে নাকি? ঘুরতে যাবি কোথাও?”
“নাহ। ঘুরতে কেন যাব? এখন আমি ঘুম দিব।”
“আমিও ঘুমাবো। সকাল সকাল উঠছি। এখন না ঘুমালে পরে সময়টা কিছুতেই কাটবে না।”
“আচ্ছা। আমি ঘরে গেলাম।”
মায়া ঘরে ঢুকে মিমোকে বললো, “তোর ভাইকে নিয়ে টেনশন করার কোন দরকার নেই। সে এখন ঘুমাবে। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
“হবে না আপু। মাত্রই খাওয়া-দাওয়া করে এলাম। এই ভরা দুপুরে কড়া রোদের মধ্যে মা যেতে দিবে না।”
“তাইতো। আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর।”
ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে দুজন রেডি হয়ে, বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাসা থেকে বের হলো।
বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে পার্কে এসে বসলো। ঋদ্ধ এখনো আসেনি। মিমো তাকে ফোন করলো। সে জানানো ঠিক দশ মিনিটের মাথায় আসছে।
১০ মিনিটের আগেই ঋদ্ধ এসে পৌঁছালো। সাথে তার এক বন্ধু। মায়া প্রথম দেখল ছেলে টাকে। বেশ ভালোই দেখতে। চেহারায় একটা রাজকীয় টাইপের ভাব আছে। ইমনের মতোই বেশ লম্বা। কিন্তু গায়ের কালার টা আলাদা। এ একটু বেশি ফর্সা, ইমন ওর মতো এতো ফর্সা না।
অবশ্য, ছেলেমানুষদের বেশি ফর্সা মানায় না। ছেলেদের শ্যামলা ই বেশি ভালো লাগে। তারপর চাপ দাড়ি থাকবে, তাহলেই না সে ছেলে হিসেবে পারফেক্ট। এই ছেলেটারো অবশ্য চাপ দাড়ি আছে।
কিন্তু একমাত্র ইমন কেই তার সব দিক দিয়ে পারফেক্ট মনে হয়।
মিমো এগিয়ে এসে ঋদ্ধর সাথে মায়ার পরিচয় পরিয়ে দিলো। ঋদ্ধ নিজে পরিচয় হয়ে, তার বন্ধু আবিরের সাথে মায়া আর মিমোর পরিচয় করিয়ে দিলো।
মায়া মিমো কে বললো, “তোরা বরং সাইডে গিয়ে কথা বল। আমি আছি এখানে। সমস্যা নাই।”
“একা থাকবে?”
“একা কোথায়। যা তুই। আমি আশেপাশেই আছি। না পেলে ফোন দিস।”
“আচ্ছা।”
এই সময় ঋদ্ধ বললো, “কোন দরকার নেই আপু? একা কেন থাকবেন? আমার এই ফ্রেন্ড আছে না? দুজন ফ্রেন্ড হিসেবে ঘুরেন। সমস্যা নাই তো?”
মায়া মাথা নাড়লো।
আবির বললো, “পুকুরপাড়ের ঐদিকে যাবেন?”
“চলেন।”
হাঁটতে হাঁটতে দুজনে পরিচয় হয়ে নিল। আমি জানালো, সে এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিবে।
মায়া সেটা শুনে বলল, “ও তাহলে তো আমার থেকেও ছোট। আমি বরং তুমি করেই বলি।”
“হ্যাঁ আপু অবশ্যই। আপনি আমার বড় আপু হচ্ছেন, আপনি করে কেন বলবেন?”
“আচ্ছা।”
মায়া আর আবির এসে পুকুর ঘাটে বসলো।
প্রাইভেট শেষ করে নীলা বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ চোখে পড়লো মায়া কে। প্রথমে ভেবেছিল মায়ার সাথে ইমন হয়তো। কিন্তু পড়ে দেখে অন্য একটা ছেলে। দুজনের মুখ হাসি হাসি।
নীলা দেরি করলো না। মোবাইল বের করে দ্রুত কয়েকটা ছবি তুলে নিল।
ছবিগুলো একবার পরখ করে দেখে মনে মনে বললো, “অবশেষে পেয়েই গেলাম ইমনকে আমার করার হাতিয়ার!”
.
.
.
.
চলবে……
[কাটেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]