মায়াবন_বিহারিনী🖤 #পর্ব_২৯,৩০

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_২৯,৩০
#আফিয়া_আফরিন
২৯

দীর্ঘ পঁচিশ দিন পর নিজের প্রিয়তমার দর্শনে একপ্রগাঢ় অনুভূতি বুকের মধ্যে ঢামাডোল বাজানো শুরু করে দিয়েছে। ইমন আর মায়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। ইমন মাত্রই এসে পৌঁছালো। ড্রয়িং রুমেই সবাই বসে আছে, বিধায় কেউ কারো মনের গোপন বাসনাটা পূর্ণ করতে পারলো না।

ইমন যে আজকে আসবে তা আগে বলে নাই। এমনি হঠাৎ করেই সকাল সকাল এসে হাজির। দরজায় ই এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মায়া ওকে দেখে বিস্ময়ে এতটাই হতবাক হয়ে গেছে যে, ভেতরে যে ইমনকে ঢুকতে দিতে হবে সেই খেয়াল মায়ার নেই।

ইমন বাহিরে দাঁড়িয়েই বলল, “আমি কি এভাবেই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো?”

মায়া এখনো মনে হয় শুনল না।

মায়ার কোন রেসপন্স না পেয়ে জাহানারা ওকে ধমক দিয়ে বললেন, “এভাবে বাঁশের মতো সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ছেলেটা আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে?”

এইবার বোধহয় মায়ার ঘোর কাটলো। সে সাইড হয়ে দাঁড়ালো। ইমন ভিতরে ঢুকে সামান্য হাসলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলে ঘরে গেল।

যাওয়ার আগে মহুয়া কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল, “একা যাচ্ছিস কেন? তোর বউ কেও নিয়ে যা রে ইমন। তোর শোকে দুঃখে সে একেবারেই দেবদাসী হয়ে গেছে। যা গিয়ে তার রাগ, অভিমান ভাঙ্গা।”

“আমার দুঃখে দেবদাসী হয়ে গেলে তো ভালই। কিন্তু সে তা তো হবে না। সে শুধু আমায় ধমকের উপর রাখবে।”

মহুয়ার কথা শুনে মায়া কাছ থেকে বলল, “উফ আপু তুমিও না!”

“কি হ্যাঁ? আমিও কি? আমি সত্যি কথা বললেই তোদের এত গায়ে লাগে কেন?”

ইমন বা মায়া কেউ কিছু বলল না‌। ইমন ঘরে যাওয়ার মিনিট দুয়েক পর মায়া ও এলো।

ইমনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমি যে আসবা, সেটা বলো নাই কেন?”

কোন উত্তর না দিয়ে হঠাৎ উঠে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মায়াও ধরলো।

ইমন বললো, “তোর কথার উত্তর দিচ্ছি পরে। আগে নিজের আত্মার শান্তি তো মিলাতে দে।”

মায়া হেসে বলল, “আত্মার শান্তি চাইলে আরো আগেই চলে আসতে!”

“আসতামই তো। শুধুমাত্র কাজের চাপে আসতে পারি নাই।”

“আচ্ছা ছাড়ো এখন। দেখো আপু আবার চলে আসবে। এসে তোমায় আমায় এভাবে দেখলেই পঁচাবে।”

“সমস্যা কোথায়? আমরাও তাকে একটু পঁচানোর সুযোগ দেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, মহুয়া আপু ফাইজলামি বেশি করে। এখানে সমস্যা কোথায়?”

“হ্যাঁ তা তো আমি জানি। উফ তুমি কয়টা দিন ছিলে না, আমায় একাই জ্বালিয়ে মেরেছে। এখন তুমি আসছো, তোমাকেও তার অংশীদার হতে হবে।”

“আচ্ছা হবো। কিন্তু আমাদের তো ফিরে যেতে হবে, দুই দিনের মধ্যেই।”

“এত তাড়াতাড়িই?”

“হ্যাঁ, কিছু করার নাই।”

“আচ্ছা যাব। এখন তবে ছাড়ো আমায়। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর খেতে আসো।”

“আচ্ছা। এখন ছাড়ছি তবে। কিন্তু গত কয়েকদিনে তোকে ছেড়ে যে অশান্তিতে ছিলাম, সেই শান্তি কিন্তু এখনো পাইনি!”
.
.
.
.
বিকেলবেলা মায়া বসে বসে টিভি দেখছিলো। জাহানারা পাশে এসে বসলেন।
মায়াকে জিজ্ঞেস করলেন, “জামাই কই?”

মায়া তার মায়ের দিকে না তাকিয়েই বললো, “কোন জামাই?”

“ইমনের কথা বলছি।”

“কি আজব? ওকে তুমি ওদিকে জামাই জামাই করে ডাকা শুরু করছো? নাম ধরে ডাকলেই তো হয়।”

“কি জন্য? যে জামাই, তাকে জামাই করেই ডাকতে হয়।”

“কি অদ্ভুত কালচার! যাই হোক, তোমাদের আদরের জামাই ঘরে ঘুমাচ্ছে।”

“ও, ঘুমাক। জার্নি করে আসছে।”

“হ্যাঁ।”

“তা তোদের নীলার কি খবর? সে কি এখনো আগের মতোই আছে?”

“না মা। ওসব ব্যাপার কবেই মিটে গেছে।”

জাহানারা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, “তোদের নিয়ে যে আমি কত টেনশনে থাকি; সেটা আমি আর আমার আল্লাহই ভাল জানে।”

“কি দরকার মা এত টেনশন করার?”

“বড় হো আগে। তারপর বুঝবি, মায়েদের টেনশন।”

“এটা কিন্তু ঠিক না। তোমরা অযথাই টেনশন করো, আর বাড়াবাড়ি রকমের টেনশন করো।”

“বাদ দে। কাল বোধহয় মহুয়াটা চলে যাবে।”

“কেন? এত তাড়াতাড়ি?”

“তাড়াতাড়ি কই? অনেকদিন হলো আসছে। এতদিন কোন মেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি পড়ে থাকে?”

“কেন, আমি আছি না?”

“গাধী মেয়ে! তোর ব্যাপারে আর ওর ব্যাপার বুঝি এক হলো?”

“হুহ। নিজের বড় মেয়ের ব্যাপারে সব সময় তোমাদের বেশি আদর। একদম ভালো লাগেনা। আমিও তো চলে যাব, দুইদিন পরে। আপু তো তাও তোমাদের কাছাকাছি থাকে, যখন ইচ্ছা তখন চলে আসতে পারে। আমি কি তা পারি?”

জাহানারা অবাক হয়ে বললেন, “চলে যাবি মানে? কবে?”

“এইতো দুইদিন পরে।”

“সত্যি চলে যাবি? ইমন এসেছে, থাকবে না কয়েকদিন?”

“নাহ।”

তিনি বিরস মুখে বললেন, “ওহ।”
.
.
পরশু ওরা ঢাকা ফিরে যাবে। তাই মায়া আজ তার স্কুল লাইফের এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেল। অনেকদিন দেখা হয় না, তাই হুট করেই দেখা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া। যাওয়ার আগে ইমনকে অনেক সাধাসাধি করলো, কিন্তু ইমন গেল না। মায়া একাই চলে গেল।

মহুয়া মায়ার খোঁজ করতে এলে ইমন বলে, “মায়া কই?”

“ইলা না ফিলা কোন বান্ধবীর নাম, তার বাসায় গেছে। কি জন্য?”

“ও, তেমন কিছু না। এমনি খোঁজ করছিলাম।”

“ওহ।”

“তা তোদের খবর কি?”

“কি খবর জানতে চাচ্ছো?”

“যে কোনো খবর। এই যেমন ধর, তোরা দিনে কয় বেলা ঝগড়া করিস?”

“আরে না। আমি মোটেও ঝগড়া করি না। তোমার বোন শুধুমাত্র মাঝে মাঝে একটু মাথা গরম করে ফেলে। এটা কোন ব্যাপার না।”

“এখন এটা কোন ব্যাপার না। নতুন বিয়ে হয়েছে তো, বউয়ের রাগও এখন মধু লাগবে। যাইহোক মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়াঝাটি যাই করিস না কেন; দিনশেষে এক থাকিস।”

“হঠাৎ করে এসব কথা কেন বলছো?”

“জ্ঞানদাত্রী হয়ে গেছি। সবাইকে জ্ঞান দিয়ে দিয়ে বেড়াচ্ছি। সেদিন মায়াকেও দিলাম। ভাবলাম আজকে তোকেও একটু জ্ঞান দান করি।”

ইমন হেসে বলল, “ভালোই!”

মহুয়া সিরিয়াস মুখ করে বলল, “কথাগুলো বলা প্রয়োজন মনে হলো। তোরা দুটোই তো বাচ্চা মানুষ। তার উপর আমি মায়ার কাছ থেকে নীলার কথাগুলো শুনলাম। শুনে তোদের সম্পর্ক নিয়ে শঙ্কা হলো। জানি, তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস। তবুও কেউ কারো সমন্ধে কোন বাজে কথা শুনলে বা মিথ্যা কথা শুনলে, সাথে সাথেই বিশ্বাস করিস না। কথাগুলো বিবেচনা করি নিস।”

ইমন কিছু না বলে দুপাশে মাথা ঝাঁকালো।

মহুয়া পুনরায় বলল, “আর তোদের সম্পর্কের মাঝে কখনো ইগো দেখাবি না। এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। এখন শুধু ভালবাসবি।তারপর কিছু বছর পর অনায়াসেই বুঝতে পারবি ভালোবাসা কত সুন্দর। তখন সম্পর্কের মাঝে রাগ অভিমান থাকবে, কিন্তু সেটা কখনোই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাবে না। বুঝেছিস?”

ইমন মাথা নেড়ে মিষ্টি করে হাসলো। মহুয়া ইমনের হাসি দেখে বলল, “ওমা! তুই দেখি খুব মিষ্টি করে হাসিস রে, কই আগে তো খেয়াল করি নাই? আমার বোনটা কে বুঝি তুই হাসি দিয়েই পটিয়েছিস?”

“কি জানি? কিভাবে কিভাবে জানি প্রেম হয়েছিল। আমরা কিন্তু নিজেরাও জানিনা। হঠাৎ দুজনের প্রতি ভালবাসা। আমাদের কিন্তু কোন নির্দিষ্ট দিনে ভালোবাসা হয়নি, কে কবে দুজন দুজনকে ভালোবাসার কথা বলেছি সেটাও আমাদের মনে নেই। তবে কিছু স্পেশাল মোমেন্ট কে স্মৃতির পাতায় এঁকে রেখেছি!”

মহুয়া হেসে বলল, “ভালোবাসা আসলেই সুন্দর!”

ইমন প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “তারপর বলো, আমাদের দুলাভাইয়ের কি খবর? সে আসে নাই কেন? বিয়ের দিন ছাড়া আর দেখাই হলো না আমার সাথে।”

“আসবে কাল সম্ভবত।”

“আসুক। তার সাথে এখনও পরিচিত হওয়া বাকি আমার।”

“হ্যাঁ আসলে, ওর চৌদ্দগুষ্টির পরিচয় নিয়ে নিস। কোন সমস্যা নেই।”

ইমন হো হো করে হাসলো।
.
.
বেশ কয়েকদিন যাবত নীলার বাবা মা নীলার বিয়ে নিয়ে পড়েছেন। নীলার মা মেহেনাজ এবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, মেয়ের বিয়ে তিনি এইবার দিয়েই ছাড়বেন। নীলাকে বিয়ের কথা বললেই তার সেই এক গা জ্বালানো কথা। “পরে পরে। এখনই বিয়ে করে বুড়ি হয়ে যাব কেন? আমার বিয়ের সময় কি শেষ হয়ে যাচ্ছে?”

এই পরে পরে টাই নীলার শেষ হচ্ছে না। মেহেনাজ মেয়ের ঘরে উঁকি দিলেন। দরজা থেকেই নীলাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আসবো?”

নীলা তাকিয়ে হেসে বলল, “তুমি পারমিশন নিচ্ছো কেন?”

“বর্তমানে তো তোমার সবকিছুতেই পারমিশন প্রয়োজন পড়ে।”

“এভাবে কেন কথা বলছো মা?”

“তো কিভাবে বলবো?”

“স্বাভাবিকভাবে।”

“স্বাভাবিকভাবে কথা তোরা বলতে দিচ্ছিস কই? তোকে কতদিন থেকে বলছি বিয়ে কর বিয়ে কর, শুনছিস আমার কথা? বলি যে, আর কত বয়স হলে বিয়ে করবি?”

“বিয়ে করবো না এমন কি কোন কথা আমি বলেছি, একবারের জন্য ও। বলেছি যে, আমায় একটু সময় দাও। ফাইনাল ইয়ার টা কমপ্লিট করি।”

“তো কর। তোকে মানা কে করছে? বিয়ের কথাবার্তা তো ফাইনাল
করে রাখতে পারি। আর বিয়ের পর কি পড়াশোনা করা যায় না? বাংলাদেশের মেয়েরা কি বিয়ের পর পড়াশোনা করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে না? আর তুমি কোথাকার কোন বিদ্যাসাগর চলে এসেছো?”

“প্লিজ না! তোমার কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আমাকে আর দুটো দিন সময় দাও। আমি তোমাকে দুইদিন পর আমার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি।”

মেহেনাজ চোখ পাকিয়ে বললেন, “তোর কি পছন্দের কেউ আছে?”

“বললাম তো, জাস্ট দুটো দিন সময় দাও। পছন্দের কেউ থাকলেও জানতে পারবা, আর না থাকলেও জানতে পারবা।”

মেহেনাজ আর কথা বাড়ালেন না। অপেক্ষা করতে লাগলেন দুটো দিন শেষ হওয়ার। এবার একটা বন্দোবস্ত করতেই হবে!

নীলা আর দেরি করলো না। বুঝে গেল, মা তার বিয়ে এবার দিয়েই ছাড়বে। নিলয়ের সাথে কথা বলতে হবে তো।

পরদিন বিকেলবেলায় নিলয়ের সাথে দেখা করতে এলো। নিলয় কে সব কথা বলা মাত্রই নিলয় হেসে বলল, “তুই এত টেনশন নিচ্ছিস কেন? টেনসনে দেখি মুখ একদম শুকিয়ে গেছে?”

“তো কি করব? তোর মত গায়ের হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবো? তুই বুঝতে পারতেছিস, মা এবার বিয়েটা দিবে এটা কনফার্ম। কি করবো এখন?”

“আচ্ছা এত টেনশন করতে হবে না। ভেবেচিন্তে দেখি কি করা যায়।”

“হ্যাঁ বল, বাসায় কি বলবো? বিয়েটা করব, নাকি আটকাবো?”

“আরে দাঁড়া দাঁড়া! অযথাই মাথা গরম করিস না।
তুই রাজি হো। আমি আজকে বাসায় গিয়ে মা-বাবার সাথে কথা বলি। তুই আজকের দিনটা তোর বাসায় ম্যানেজ কর। আমি না হয় কাল গিয়ে তাদের সাথে কথা বলি।”

“তুই কি সিরিয়াসলি এখনই আমাকে বিয়ে করবি? তোর ক্যারিয়ারের শুরু মাত্র!”

“পাগল তুই? ক্যারিয়ারের শুরু তো কি হয়েছে? ইমন করে নাই? আর ওর তো পড়াশোনাই শেষ হয়নি এখন। আমাদের বেলায় ও না হয় তাই হলো। পড়াশোনার পাশাপাশি বিয়েটা করে রাখলে প্রবলেম কোথায়?”

“তুইও তো দেখি মায়ের মত বিয়ের জন্য লাফালাফি শুরু করে দিছিস। আচ্ছা যাই হোক, আমার আপত্তি নাই। কিন্তু, তোকে এদিক-ওদিক দুই দিক ই ম্যানেজ করতে হবে।”

“আচ্ছা করলাম, সমস্যা নেই।”

নীলা চলে গেল। নিলয় ওখানে বসে কিছুক্ষণ ভাবলো, মা-বাবাকে কথাটা কিভাবে বলবে?
তারপর নিজেও বাড়ি ফিরে গেলো।

মায়া আর ইমন আগামীকাল ই ঢাকা ফিরে যাবে। আজকে মহুয়ার হাজবেন্ড আরাফাত আসছে। বিকেল বেলা চারজনের ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে এলো। জাহানারা একেবারে দুই জামাইকে জামাই আদর করেই ছাড়লেন।

রাতে ঘুমানোর আগে মহুয়ার সাথে ডাইনিং রুম মায়ার দেখা হয়ে গেল।

মায়া ওকে দেখেই প্রশ্ন করল, “আজকে ও কি আমাকে জ্বালানোর জন্য আমার সাথে ঘুমাবা, নাকি? দেখো, আজকে কিন্তু তোমার বর মশাই আছে।”

“ওই আমি তোর বড় বোন। কথাটা মাথায় রাখিস কিন্তু।” মহুয়া কড়া গলায় বললো।

“হুহ। বোন না ছাই। তুমি কি কি করছিলে আমার সাথে? দেখো না কেন, এবার আমিও কি কি করি?”

“তুমি কিছুই করতে পারবা না ময়না পাখি। কাল থেকে দুজনের পথ আলাদা।”
তারপর মহুয়া সামান্য মন খারাপ করে বলল, “তোকে খুব মিস করবো রে!”

“আমাকে মিস পরে করো। ভাইয়া ডাকছে তোমায়, দৌড় মারো।”

বলেই মায়া নিজেই হি হি করতে করতে দৌঁড় মারলো।

মহুয়া হাসতে হাসতে বললো, “পাগলী একটা!”
.
.
মায়া ঘরে এসে দেখলো ইমন বসে আছে। সে ও বসলো ইমনের পাশে। মন টা একটু খারাপ হলো।

ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো, ” ভালো লাগতেছে না। কাল ই চলে যেতে হবে, মা-বাবাকে ছেড়ে।”

“তো থেকে যা।”

“তুমি তো থাকতে পারবেনা। আমি আর কিভাবে থাকবো?”

“আমার থাকা না থাকাই কি কিছু যায় আসে? তোর বাপের বাড়ি, ইচ্ছে হলে তুই থাক।”

মায়া অবাক হলো। ইমন এভাবে কেন কথা বলছে? মায়া ইমনের কথা জবাব দিল না।

কিছুক্ষণ পর ইমন নিজেই আবার বললো, “তুই তাহলে থাক। আমি কাল একাই ফিরে যাই।”

মায়া মুখ শক্ত করে বললো, “কি হয়েছে কি তোমার? এভাবে কেনো কথা বলছো?”

ইমন ফিচলে হাসি হেসে বললো, “ঝগড়া করার মুডে আছি।”

মায়া বুঝলো ইমন ফাজলামি করতেছে। তাই গা ছেড়ে দিয়ে বললো, “ধ্যাত!”

পরক্ষণেই আবার কিছু একটা মনে পড়তেই চোখে মুখে চকচকে হাসি ফুটিয়ে বললো, “এই জানো, নীলা আপুর বিয়ের কথা চলছে।”

ইমন অবাক হয়ে বলল, “তাই? ভালোই তো।”

“হুমম। ভালোই হলো।”

“কবে বিয়ে?”

“জানিনা। শুধু কথা বার্তা চলতেছে তাই, শুনলাম।”

“কার কাছ থেকে?”

“মিমো।”

“ওহ। নিলয়ের সাথে?”

“সম্ভবত। আচ্ছা শুয়ে পড়ো এখন। সকাল সকাল আবার আমাদের বের হতে হবে।”

ইমন আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ শুয়ে পড়লো। চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসছে।
.
.
সকাল আটটায় তাদের গাড়ি। মা বাবা বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছে। মা-বাবাকে ছেড়ে আসার মুহূর্তটা মোটেও সুন্দর ছিল না। মায়া এখনো কাঁদছে। ইমন এতবার এত কিছু করে বুঝাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হচ্ছে না। থেকে থেকে ডুকরে কেঁদে উঠছে।

গাড়িতে ওঠার পর মেয়ের কান্না থামেনি বাচ্চা মানুষের মতো কেঁদেই যাচ্ছে এমন ওকে বুকে জড়িয়ে নিল চোখের পানিতে আকাশী কালার শার্ট নীল বর্ণ ধারণ করল কিছুক্ষণ পর কান্নাকাটি থামলে ইমন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মায়া গুটি শুটি হয় ইমুরের বুকে মাথা দিয়েই পড়ে রইলো। ইমন আস্তে করে ওর কপালের ওপর উড়তে থাকা চুলগুলো সড়িয়ে, আনমনে হেসে ফেললো।
.
.
.
.
চলবে……

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_৩০
#আফিয়া_আফরিন

ইমন আর মায়া যখন ঢাকায় এসে পৌঁছালো, তখন প্রায় বিকেল পাঁচটা বেজে পার হয়েছে। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল, বিধায় আসতে আসতে এত দেরি হয়ে গেছে। গাড়ি থেকে নেমেই ইমন চমকালো। কিছুটা দূরেই আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ ওইটা আকাশই তো, সেই যে ১২ বছর আগে শেষ দেখা। ছোটবেলা থেকেই ইমন আর আকাশ খুব ভালো বন্ধু ছিলো তারপর কিছু কারণে দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়। ইমনরা চলে যায় জয়দেবপুর। আর আকাশরা মিরপুর। এই কারণে তাদের যোগাযোগটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো। একটা সময় আকাশের সাথে তাল মিলিয়ে কতো বাঁদরামি করেছে। আর এখন সবই স্মৃতি।

ইমন দেরি করলো না একটি মুহূর্ত ও। মায়ার হাত ধরে টেনে আকাশের দিকে এগিয়ে গেলো। মায়া বললো, “উল্টো দিকে রাস্তায় কেন যাচ্ছো? আজব তো, ভুলে গেলে নাকি সব?”

ইমন অস্থির চিত্তে বলল, “দাঁড়া। বাসায় যাচ্ছি না তো। আমার ছোটবেলার এক ফ্রেন্ড ওখানে, দেখা করে আসি।”

আকাশ উল্টো দিক ফিরে ফোনে কথা বলছিল। ইমন গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই পেছন ফিরে তাকালো। মুহূর্তেই চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললো। এ যেন এক অবিশ্বাস্য কাহিনী! এ কি দেখছে সে? কাকে দেখছে?

অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো, “ইমন!”

ইমন হেসে আকাশকে জড়িয়ে ধরল। আকাশও ধরলো। বহু বছর পর দুই বন্ধুর দেখা। মুহূর্তেই যেন ছেলেমানুষী জেঁকে বসলো।

আকাশ উল্লাসী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ওহো দোস্ত! কতগুলো বছর পর দেখা। কেমন আছিস রে?”

“আমি তো ভালোই আছি। তোর কি অবস্থা?”

“আমারও সেম, বিন্দাস লাইফ টাইপের অবস্থা। তা কোথা থেকে আসলি?”

“শ্বশুর বাড়ি!”

আকাশ ভুরু কুঁচকে বলল, “শ্বশুরবাড়ি? তুই বিয়ে করেছিস? লাইক সিরিয়াসলি!”

ইমন মায়াকে দেখিয়ে বলল, “সি ইজ মাই ওয়াইফ!”

আকাশ আরও অবাক হলো। হেসে বলল, “বাব্বাহ, বন্ধুর দেখি সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে। যাক, মাশাআল্লাহ।”

ইমন হাসতে হাসতে আকাশের কাঁধে হাত রেখে বলল, “তো তুই এখানে কি করছিস, একা একা?”

“আরে ভাইয়া আসবে, তার বউ আসবে। তাদেরকে নিতে এসেছি।”

“আয়াশ ভাইয়া?”

“হ্যাঁ। মনেই আছে দেখি?”

“আরে ইয়ার, পাগল তুই? মনে থাকবে না কেন? ইস, সে সময় গুলো কি ছিল রে ভাই! আয়াশ ভাইয়া আমাদের চেয়ে বড় হয়েও, আমাদের সাথে কি সুন্দর সমবয়সীদের মত মিশে যেত!”

আকাশ হেসে বলল, “ভাইয়া চিরকাল এমনই ছিলো। আর এখনও এমনই আছে।”
.
.
.
তিথি আর আয়াশ রংপুর থেকে আসছিলো। গাড়ি থেকে নামার পরেই, বাকি হেঁটে যাওয়ার পথ টুকু কাঁদায় মাখামাখি। তিথি পা টিপে টিপে এগিয়ে যাচ্ছে। আয়াশের হাতটাও শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার মধ্যে একে শাড়ি পরা, হাঁটতে তে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। বারবার পা পিছলে পিছলে যাচ্ছে।

আয়াশ এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল, “এভাবে হাঁটলে বছরখানেকের মধ্যেও বাড়ি যাওয়া যাবে না?”

“আমি কি ইচ্ছে করে এভাবে হাঁটছি? তুমি দেখছো না, এ রাস্তা দিয়ে হাঁটা যাচ্ছেনা। তারপরও আক্কেল ছাড়া কথা বলার মানে আছে?”

“আচ্ছা! কোলে তুলে নিব?”

“একদম না। তুমি সামনের দিকে এগোতে থাকো, আমি আস্তে আস্তে আসছি। আকাশ ও বোধ হয় এসে অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছে।”
.
.
আয়াশ আর তিথি কিছুদূর এগনোর পরেই, ইমনকে দেখতে পেল। তিথি তো ইমন কে চিনতো না, আয়াশ ওকে দেখামাত্রই অবাক হয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে তিথিকে পিছনে ফেলেই কাদামাটি ছাপিয়ে দৌড়ে এলো।

তিথি ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “কাহিনীটা কি করলো?”

আয়াশ ততোক্ষণে ইমনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বলল, “আরে এটা কে রে? আমাদের চ্যাম্প বয় ইমন নাকি?”

ইমন হাসলো। আকাশ উত্তর দিল, “হ্যাঁ। ইনি আমাদের সেই বিখ্যাত ইমন ভাইজান। সে কিন্তু বিয়েও করে ফেলছে।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল, “হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! মানে সারপ্রাইজের উপর সারপ্রাইজ। একে তো ওর সাথে কতগুলো বছর পর দেখা হল, তাতেই চমকে উঠলাম। তার ওপর সে বিয়ে ও করে ফেলেছে।”

আকাশ তিথিকে দেখিয়ে বলল, “ও তিথি। ভাইয়ার বউ।”
তারপর মায়াকে দেখিয়ে বলল, “উনি ইমনের বউ। কিন্তু সমস্যা একটাই, মাঝখান থেকে আমিই সিঙ্গেল। দুইজনের বউ দেখে, আজ একটা বউয়ের অভাব ফিল করছি।”

তিথি হাসতে হাসতে বলল, “বাড়ি চল। মা কে বলে তোর সাথে তানিশার বিয়ে ঠিক করার ব্যবস্থা করছি।”

আয়াশ বলল, “যাইহোক এখন বাড়ি চলে। মা কত বলে তোদের কথা। কিন্তু, আল্লাহর ওয়াস্তে তোদের কোন পাত্তাই পাওয়া যায় না। মা তোকে দেখলে, খুশি হবে। তার ওপর বিয়ে করেছিস, এটা শুনলে আরও বেশি খুশি হবে।”

“না ভাই, আজকে আর না যাই। আরেকদিন যাবো ইনশাআল্লাহ।”

আকাশ বলল, “তোর দেখি আগের মতোই বাহানার কোন শেষ নাই? আগের মতই বাহানা ম্যান ই রয়ে গেলি?”

“আরে ভাই, জার্নি করে এক জায়গা থেকে আসলাম। এভাবে কিভাবে যাই। তার চেয়ে তোমরা চলো, তোমাদেরকে দেখলেও মা খুশি হবে।”

“আমাদেরও তোর মত সেম কাহিনী। জার্নি করে এসে এক জায়গায় কিভাবে যাব? আচ্ছা যাই হোক, কবে আসবি সেটাই বল?”

“একদিন হঠাৎ এসে সারপ্রাইজ দিব।”

“তোর ওই সারপ্রাইজের দরকার নাই। তুই বল?”

“আরে ওই ভাবে দিনক্ষণ ঠিক করে বলা যায় নাকি! তোরা কবে আসছিস?”

আয়াশ বলল, “আচ্ছা থাম। আজকের যেহেতু দুই পক্ষের, যাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই। তাই তর্কাতর্কি থামা। আমরা বরং দুই তিন দিন বাদে কোথাও দেখা করব। তাহলেই তো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয় নাকি?”

ইমন হেসে বলল, “আয়াশ ভাইয়া আগের মতই আছে। আমরা যেখানেই সমস্যায় পড়ি, সেখানেই সে সুন্দর করে সমাধান দিয়ে দেয়।”

তিথি আড় চোখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে হাসলো। আয়াশ সেটা খেয়াল করে দেখে বলল, “অমনে টেরা চোখে তাকাও কেন? সোজাসুজি তাকাতে পারো না। আপনি কি আমায় দেখলে এখনো লজ্জা পাও?”

তিথি আয়াশের হাতে খো’চা মেরে বলল, “বয়েই গেছে আমার, তোমায় লজ্জা পেতে!”

আয়াশ উত্তরে হাসলো, কিছু বললো না।

আয়াশ ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিরে, আকাশকে খুব তো বলতিস তোরা দুইটা একসাথে বিয়ে করবি। শেষমেষ তুই ই পাল্টি খেলি?”

ইমন হাসলো। ওরা আরও বেশ কিছুক্ষণ গল্প গুজব করল। তিথি আর মায়া নিজেদের মধ্যে পরিচিত হয়ে নিল। যাওয়ার আগে ফোন নাম্বারটাও নিয়ে নিলো।

যখন ফিরে যাবে তখন আয়াশ বলল, “তোরাও যে ভাই, মানে পুরো এক ঘণ্টার মতো আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকবক করলাম। অথচ এত সাধাসাধি করার পরও তোরা বাড়ি এলিনা?”
.
.
ইমন মায়ার বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতই হয়ে গেল। সুহাদা দুজনকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেলেন। মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “তুই চলে গিয়েছিলি, ঘরটা একদম ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছিল রে মা। ঘরের মেয়ে ঘরে না থাকলে কি ভালো লাগে বল?”

মিমো তখন গাল ফুলিয়ে বলল, “সব আদর খালি শুধু একমাত্র ছেলের বউয়ের জন্য, তাই না? আমি কে? আমি বুঝি ঘরের মেয়ে না?”

“তোকে বিয়ে দিয়ে দিলে, আর ঘরের মেয়ে থাকলি কই? পরের বাড়ির বউ হয়ে যাবি।”

“তাহলে দেখো আমি বিয়েই করবো না, থেকে যাব আজীবন বাপের বাড়ি।”

মায়া মগমোর কাছে এগিয়ে গিয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল, “ঋদ্ধর সাথে ব্রেকআপটা তাহলে কনফার্ম করেই ফেল।”

মিমো আহত দৃষ্টিতে তাকালো।

ইমন বলল, “আরতো মাত্র কয়েকটা বছর, তোকে একদম রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।”

“হুহ, বললেই হলো নাকি? আমি বিয়ে করে জামাইকে ঘর জামাই করে রাখবো। তারপর নিজের ঘরে নিজেই থাকবো, জামাইও থাকবে।”

মিমোর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
ইমন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “জানো মা আজকে আকাশের সাথে দেখা হয়েছিল। আকাশ, আয়াশ ভাইয়া, তার বউ।”

“ওমা! কি বলিস? ওদেরকে হঠাৎ কোথায় পেলি?”

“বাসস্ট্যান্ডে দেখা হলো।”

“দেখা হলোই যখন বাসায় নিয়ে আসলি না কেন?”

“আজকে সবাই জার্নি করে আসা হল। আসবে ওরা, তিন চার দিন পর।”

“আচ্ছা সময় করে নিয়ে আসিস। অনেকদিন দেখা হয় না ছেলেমেয়েগুলোকে।”
.
.
ঢাকা ফিরে নীলার বিষয়টা আরো ভালো করে জানা গেল। নীলার বাবা-মা ওর বিয়ে দিতে চাচ্ছে। একটা ছেলেও সন্ধানে আছে। ছেলে নাকি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার! কিন্তু নিলা নিলয়ের কথা বাসায় বলে দিয়েছে, কিন্তু মা-বাবা কেউ রাজি হচ্ছে না। একে তো নিলয় এখনো স্টুডেন্টই রয়ে গেছে। এখন বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি? এ সকল ভাবনাতো তাদের মাথায় আছেই, তার উপর নীলার জেদ। এটা প্রচন্ড জেদি। নিজে যেটা বলে, যেটা বোঝে সেটাই।

শেষমেষ দিশেহারা হয়ে নীলা মাকে গিয়ে বলেই ফেলল, “মা আমি কি তোমাদের বোঝা হয়ে গেছি?”

“এসব কি বলছিস? বোঝা হবে কোন দুঃখে? আমরা শুধুমাত্র তোকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে চাইছি।”

“নিলয় কি খারাপ ছেলে মা?”

“খারাপ আমরা বলছি ওকে? ওকে তুই কিভাবে বিয়ে করবি বল? এখন যে খুব ভালোবাসা ভালোবাসা করছিস, চ্যাকায় পড়লে তারপর বুঝবি। আমরা কি তোর খারাপ চাই?”

“খারাপ চাও না তো ভালোটা চাচ্ছো কই! দেখো মা, আমায় নিয়ে বাড়িতে যদি কোন অসুবিধা হয়, তাহলে আমায় বলে দাও। আমি চলে যাবো বাড়ি ছেড়ে। দুটো টিউশনি করার ক্ষমতা আমার আছে। নিজেরটা নিজে ঠিকই চালিয়ে নিতে পারব।”

মেহেনাজ অবাক হয়ে বললেন, “এরকম বে’য়া’দ’বে’র মতো করে কথা কেন বলছিস? এমন কথা তুই বললি কি করে? আমরা কি তোর কেউ না?”

“সরি মা, কথা বলতে চাই নাই আমি। বাধ্য করেছ তুমি, তোমারা! দেখো, বিয়ে যদি দিতেই হয় নিলয়ের সাথেই দাও। আর না দিলে বিয়ে নিয়ে আমার কানের কাছে কোনো কথাও বলো না। আর আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে যদি জোর করে বিয়ে দিয়েও দাও, বিয়ের দিনেই আমি হাওয়া!
সংসারটা তো আমাকে করতে হবে, আমাকেই এই ব্যাপারটা বুঝে নিতে দাও। আমি জানি তোমরা আমায় ভালোবাসো, তাই আমার ভালো-মন্দের ব্যাপারটা নিয়ে নিলয়ের বিষয়ে তোমরা সন্ধিহান। তবে আমি বলে রাখছি, নিলয়ের সাথে যদি আমার কোনদিন সম্পর্ক নষ্ট ও হয়ে যায়; আমি কোনদিন তোমাদের কাছে ফিরে আসব না। আমার আর নিলয়ের বিয়ের রেসপন্সিবিলিটি তোমাদের না, সম্পূর্ণ আমার একার!”

মেহেনাজ আর কিছু বলতে পারলেন না। ছলছল বৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে মেয়ের দিকে চেয়ে রইলেন। এত কঠিন কঠিন কথা সে বলল কিভাবে? অবিশ্বাস্য!
.
.
এভাবে দিন পনেরো গড়িয়ে গেল। নিলা নিলয়ের ব্যাপারে কেউ কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারল না।

শেষমেষ অনেক ভেবেচিন্তে তারা সিদ্ধান্ত নিল, নীলা যেটা চাই সেটাই হবে। জীবন যেহেতু ওর, এটা যেহেতু ও করবে; তাতে কারো দ্বিমত না থাকাই ভালো। ওরা যদি নিজেদের মতো করে ভালো থাকতে পারে, তাহলে সমস্যা কোথায়?

নীলার মা-বাবা আগেই, নীলাকে এ কথা জানালেন না। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করলেন। নীলাকে যখন কথাটা জানানো হলো, সে মিনিট পাঁচেক হা হয়ে তাকিয়ে ছিল। পরক্ষণেই খুশিতে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরল।

বলল, “তোমাদের এই ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না। আমি যে কি পরিমান খুশি হয়েছি বলার মতো না!”

সন্তানের খুশিতেই বাবা মায়ের খুশি। তাই খানিকটা অমত থাকা সত্বেও নীলার বাবাও ভীষণ খুশি হলেন।
.
.
.
.
ইমনের বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায়ই রাত হয়ে যায়। বারোটা কিংবা সাড়ে বারোটা বাজে। আবার কখনো কখনো একটাও বাজে। এটা নিত্যদিনের ঘটনা। মায়া এত করে বলে, সুহাদা ও এত করে বলেন, ইমন কারো কথায় গায়ে লাগায় না। রাত দশটার দিকে বন্ধুদের সাথে ক্লাবে আড্ডায় বসে। শেষ হতে হতে বারোটা, সাড়ে বারোটা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে আরও আধা ঘন্টা।
মায়া ওর জন্য প্রতিদিনই অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ইমন দরজায় এসে ফোন দিলে, ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে দরজা খুলে খেতে দেয়।

আজও সেই একই অবস্থা। সাড়ে বারোটা পার হয়ে গেছে, ইমনের বাড়ি আসার কোন নাম গন্ধ নাই। সুহাদা মায়া কে বলেছিলেন, এভাবে প্রতিদিন বসে না থাকতে। ইমনকে বারবার এক কথা বলতে বলতে হাপিয়ে গেছেন। তার চেয়ে থাক, যা মনে হয় করুক।

তবে তিনি সবটাই মায়ার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। মায়া যদি শক্ত করে হালটা ধরতে পারে, তাহলে ইমনকে ঠিকই পথে ফেরাতে পারবে। কিন্তু মেয়েটা বড্ড নরম মনের। মায়া নামের মত তার মনটাও মায়া মায়া!

আজকে অপেক্ষা করতে করতে সোফায় হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল মায়া। কিছুক্ষণ বাদে ১:৩০ টা বাজবে। আজকে এত দেরি? মায়ার মেসেজটাই খারাপ হয়ে গেল।
ঠিক তখন ফোন বেজে উঠলো, ইমনের ফোন দেখে ধরেই নিল সে ফিরেছে। গিয়ে দরজা খুলে দিল। এমন কিছু না বলে, ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ভেতরে ঢুকলো। মায়ার চোখ মুখ দেখে এইটুকু বুঝল যে, ভীষণ রেগে আছে। তাই কোন কথা না বলেই ঘরে চলে এলো।

মায়া পিছু পিছু এসে বলল, “খেতে এসো।”

“খাবো না। খেয়ে আসছি।”

“আজব তো? ফোন করে জানাই দিতে। আমি কেন অযথাই রাত জেগে জেগে বসে আছি, তোমার জন্য?”

“আচ্ছা সরি। এদিকে আয়।”

“না। আসলাম না। তোমার সাথে আমি আর এই ঘরে থাকবোই না, দেখো।”

মায়া মুখে এ কথা বললো ঠিকই, কিন্তু গিয়ে পাশে বসলো।

“কানে ধরে বলছি, এক্সট্রিমলি সরি! আর কখনো এত দেরি হবে না।”

“হবে না, হবে না, কথা অনেক শুনলাম তো। এই কথার সত্যতার প্রমাণ কবে পাবো?”

ইমন মুখ কাচুমাচু করে বলল, “তুমি কি অন্য কোথাও যাচ্ছি বল? থাকি তো বন্ধুদের সাথেই। রাতটুকুই যা সময় পাই।”

“হ্যাঁ তাই থাকো। বাসায় আসো কি জন্য? সারারাত ই আড্ডা দিবা। তো আজকে সিগারেট পেটে গেছে কয়টা?”

“সিগারেট পুরোপুরি ভাবে কখনোই মানুষের পেটে যায় না।”

“চুপ! দার্শনিক কথাবার্তা বন্ধ কর। এখন বল, কাল থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে?”

“মনে হয়।”

“মানে? এত কিছুর পরও তুমি!”

“শোন, বিয়ের আগে মা ও অনেক বলত। আগে তো আরো দেরি করে ফিরতাম। এখন তুই আছিস বলে, তাড়াতাড়ি ফিরে আসি। আচ্ছা তুই এখানে বল, যে ছেলে মায়ের কথা শোনে না; বউয়ের কথা শুনবে কি করে?”

“মা আর বউ কখনো এক হয় না। দুজনের স্থান আলাদা আলাদা। আমার কথা শুনতে, মানতে বাধ্য তুমি। আর যদি না মানো তাহলে আমার ধারে কাছে ঘেষতে ও দিবো না তোমাকে।”

“আরেহ ধুর বাবা!”

‘কোন কথা না। আজকে রাতের শাস্তি শুরু তোমার সাথে আমি থাকছি না। মিমোর সাথে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো এখন। এরপর যদি আর কোনদিন দেখি, এত রাত করে তুমি বাড়ি ফিরছো; তারপর ঠেলা বুঝবা। বুঝবা, কত গমে কত আটা!”

বলেই মায়া ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইমন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। মায়া যা বলেছে সবটাই মাথার উপর দিয়ে গেছে।
.
.
.
.

চলবে…….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here