#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_২৭,২৮
#আফিয়া_আফরিন
২৭
সূর্যের আলোকরশ্মি গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে তির্যকভাবে এসে পড়ছে, মায়ার চোখে মুখে। মায়া ছাদের রেলিং ধরে বসে আছে। তারা এখনো এ বাড়ি থেকে ফিরে যায়নি। বর্তমানে সবাই ছাদে। বাড়ির পাশ দিয়ে সাপের মতো ঢেউ খেলে একটা নদী বয়ে গেছে। মায়া রেলিঙে হেলান দিয়ে শেষ দৃশ্যটাই দেখছিল। সূর্যের আলো একবার গাঢ় হচ্ছিলো, আরেকবার হালকা হচ্ছিলো।
ইমন পাশে এসে দাঁড়ালো। আর তখনই আবিষ্কার করল এক অসহ্যকর সৌন্দর্যের মুহূর্ত!
সেও মায়ার পাশে গিয়ে বসলো। এই মুহূর্তে হঠাৎ করেই প্রবল ইচ্ছা হচ্ছে একবার তাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু আশেপাশে মানুষজন আছে। মিলা শিলা দেখলে রক্ষে নেই।
পরম মুহূর্তেই আবার হঠাৎ মনে হল, ওরা দেখলে দেখুক। সে তার বউকে জড়িয়ে ধরছে, অন্য কাউকে নয়। এত কিসের লজ্জা সবার সামনে? ভাবা যতটা সহজ, আসলে করা ততটা সহজ না। আর সেই সুযোগটাও হলো না। মিলা আর শিলা এসে মায়াকে ডেকে নিয়ে গেলো।
ইমন ওখানেই বসে রইলো অনেকক্ষণ পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর সবাই ড্রইংরুমে গল্প করছিলো।
আমজাদ সাহেব এরই মধ্যে ইমন এর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমরা তো কাল ফিরে যাচ্ছি। মায়া কে আমাদের সাথে নিয়ে যাই? সপ্তাহখানেক বেরিয়ে আসবে।”
ইমন মায়ার দিকে তাকালো, কিন্তু কিছু বলল না।
তিনি ফের বললেন,
“তুইও চল। ঘুরেফিরে আবার একসাথে ফিরে আসিস।”
“না মামা। আমার আবার এখানে প্র্যাকটিকালের টেস্ট এক্সাম আছে। আমার বোধহয় যাওয়া হবেনা।”
“তাহলে কি মায়াকে নিয়ে যাব?”
ইমন হেসে জবাব দিলো, “এটা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করার কি হলো? মায়া গেলে নিয়ে যাবা। ঘুরে আসুক, অনেকদিন যাওয়া ও হয় না।”
“এজন্যই বললাম।”
মায়া না করলো না। বাবা মার সাথে সেও ফিরে যাবে। কিছুদিন থেকে তারপর আবার ফিরবে। কিন্তু মাঝখান থেকে ইমনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মায়াকে যেতে দিতে মন তো একদমই সায় দিচ্ছে না। কিন্তু এখানে না ই বা বলে কি করে? একবার মনে হচ্ছে যাওয়ার কথা মানা করে দিক, আরেকবার মনে হচ্ছে থাক; কিছুদিন মা-বাবার কাছে থাক। কিছুটা দ্বিধা দ্বন্ধে পড়ে গেছে সে।
শেষমেষ দোটানার কুফলে পড়ে সিদ্ধান্ত নিলো, মায়া যাবে। মায়াকে ছেড়ে সে আগেও থেকেছে, অনেক অনেক মাস পর্যন্ত। এবার তো শুধুমাত্র কয়েকটা দিন। ব্যাপার না, অনায়াসে কেটে যাবে।
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ইমন ঘরে চলে এলো। মায়া ঘরে গিয়ে ইমনকে জিজ্ঞেস করলো, “আজকেও কি আমাকে ভয় দেখানোর প্ল্যান প্ল্যান করছো নাকি? বাই দা ওয়ে, আজ কিন্তু আমি ভয় পাবো না।”
“না।” ইমন ছোট্ট করে জবাব দিলো।
মায়া লাইট অফ করে ইমনের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে? এমন মুখ কালো করে রেখেছো কেন?”
“আমার মুখটা এমনিতেই কালো। অন্ধকারে আরও কালো দেখাচ্ছে।”
” আচ্ছা তাই?” বলেই মায়া ইমন এর মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো, “ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখাতে হবে নাকি?”
ইমন চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে। তখন দ্বিতীয়বারের মতো আবিষ্কার করলো সেই অসহ্য রকমের সৌন্দর্য। ইমন একটা ব্যাপারে শিওর ছিলো যে, সে যদি মায়াকে ভালো নাও বাসতো; তবে এই মুহূর্ত থেকে ঠিকই ভালোবেসে ফেলতো। এক মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলতো।
ইমন বিকালে যে কাজটা করতে পারে নাই, সেটা এখন করলো। হুট করে জড়িয়ে ধরলো। মায়া হেসে বললো, “আমি এতক্ষণে বুঝেছি, আমি চলে যাচ্ছি বলে তোমার মন খারাপ তাই না? তুমি কিন্তু যাওয়ার কথা আগবাড়িয়ে বলেছো। তারপর আমি বলছি। তাহলে এখন কেন মন খারাপ করছো?”
“তুই না বলতে পারলি না?”
“ওখানে আব্বু আম্মু ছিল। আমিও তো তাদের মেয়ে নাকি? আমাকে দেখতে বুঝি তাদের ইচ্ছা করে না? এমনিতেই আমাদের বিয়েটা হলো হঠাৎ করে। বিয়ের পর কি আমি গেছি, বলো? এবার আব্বু বললো, তাই আর না করতে পারি নাই। আর কি জন্য না করবো বলো তো? আমার বুঝি যেতে ইচ্ছা করেনা!”
“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
“তোমার কেমন কথায় কথায় পরীক্ষা। পরীক্ষা না থাকলে তো যেতেই পারতে।”
“হু।”
“আচ্ছা মন খারাপ করতে হবে না। এখন একটু হাসো, দেখি।
“হাসলে কি হবে?”
“হাসলে মুখে হাসি ফুটবে।”
“পাগল পাগল কথা বলা বন্ধ কর। যাচ্ছিস যে, ফিরে আসবি কবে?”
“যেদিন আমায় তোমার শশুর শাশুড়ি ছাড়বে।”
“তোর কথা বল। তোর থাকার ইচ্ছা কতদিনের?”
“সেটা কি আর হাতে গুনে হিসাব করে বলা যায়? তবে যাই হোক না কেন, আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো কেমন।”
“আচ্ছা।”
“তুমি কিন্তু অবশ্যই আমাকে নিতে যাবা।”
“আচ্ছা যাবো।”
“এখন তাকাও তো আমার দিকে।”
ইমন তাকালো।
মায়া বললো, “হাসো। একদম মেকী হাসা হাসবে না। সুন্দর করে হাসো তো! সব সময় যেভাবে হাসো, সেভাবে হাসবে।”
ইমন মায়ার কথা মতো সেই ভাবেই হাসলো। মায়া ইমন এর চুল গুলো এলোমেলো করে গলা জড়িয়ে বললো, “এই তো মিষ্টি বর আমার! কি সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায় কি সুন্দর করে হাসি দিলে!”
দুজনের ফের হারিয়ে গেল তাদের ভালোবাসার বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে। আবারো আটকে পড়লো নতুন প্রেমের বাঁধনে, যে বাঁধনে তারা ব্যতীত অন্য কেউ নেই। শুধুই নিজেদের চাওয়া, পাওয়া, সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নারা সর্বদা সেখানে বিস্তার করছে।
.
.
.
মায়াদের সকালে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হলো, বিকালে যাবে এবং ট্রেনে যাবে। ইমন আরো খানিকটা সময় পেল, মায়া কে চোখ ভরে দেখে নেবার। কিন্তু তাকে তো হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে না। সত্যি সেদিন আর মায়াকে একা পাওয়া গেলো না। বোনেদের সাথে আড্ডায় আড্ডায় সময় কেটে গেলো।
যাওয়ার আগ মুহূর্ত মায়া ইমন এর হাত ধরে বললো, “সাবধানে থাকবে। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করবে।”
ইমন উত্তরে কিছু বলল না।
“বাসায় ফিরে মিমো আর ফুপির খেয়াল রাখবে। আর সিগারেট কম খাবে।”
“আমি সিগারেট কমই খাই। বেশি হলেও দিনে তিনটা।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ওই একই হলো। কম খাবে। আর তোমার তো রাত করে বাড়ি ফেরার অভ্যাস আছে। এটা এখন বাদ দিতে হবে। বেশি রাত করে ফিরবে না। বেশি হলেও রাত দশটার মধ্যে ফিরে আসবে।”
“হু।”
“হু হু করো না। কথা মেনে চলতে হবে। আর শোনো আমি তো বুঝবো না কখন, কোথায় থাকো। মনে করে ফোন করবে।”
“আচ্ছা করবো।”
.
.
পাঁচ টার ট্রেন, তারা সাড়ে চারটা নাগাদ স্টেশন এ পৌঁছে গেলো। ইমন ও এসেছে। মায়া চলে গেলে, সেও বাড়ি ফিরে যাবে। এতক্ষণ চুপচাপ থাকার পর ইমন মুখ খুললো।
মায়া কে বললো, “সাবধানে থাকিস। নিজের খেয়াল রাখিস।”
“আচ্ছা। তুমিও রেখো।”
ততক্ষণে ট্রেন এসে পড়েছে। সবাই ট্রেনে উঠে পড়েছে। মায়া যখন ট্রেনে উঠতে নেয়, ইমন তাকে হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়। প্লাটফর্ম ভর্তি মানুষজন। সে কিছুই পরোয়া করলো না। আজকে যে যা ভাবার ভাবুক, যা মনে করার করুক। তার কিছুই যায় আসছে না।
মায়াকে একগাদা মানুষের সামনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দিয়ে বললো, “যাহ।”
মায়া লজ্জা পেলো। লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে ট্রেনে উঠে, হাত নাড়লো।
প্লাটফর্মে থাকা মানুষগুলি চোখ ভরে এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য টি দেখলো এবং বুঝতে পারলো, ‘নিঃসন্দেহে এই মেয়েটি ভাগ্যবতী!’
ট্রেন ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ পর জাহানারা বেগম মায়াকে জিজ্ঞেস করলেন, “ইমন তোকে খুব ভালোবাসে তাই নারে?”
মায়া লজ্জা পেয়ে উত্তর ই দিতে পারল না। প্ল্যাটফর্মের সেই দৃশ্যটা নিশ্চয়ই মা-বাবাও দেখছে। ইশশশ, এখন লজ্জায় মুখ দেখাবে কি করে?
মায়া চলে যাওয়ার পর ইমন চলে এলো নিজের বাসায়।
মায়া চলে গেছে তার প্রায় পাঁচ দিন হতে চললো। ইমনের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। সে দিন গুনতে শুরু করে দিয়েছে। মায়া গেছে থাকবে হয়তো পনেরো দিন। আচ্ছা, বেশি হলেও বিশ দিন। তাহলে এখনো পনেরো দিন বাকি? ওরে বাবা, ইমন থাকবে কেমনে? আগে কি সুন্দর অনায়াসে মাসের পর মাস শুধুমাত্র ফোনে কথা বলেই কাটিয়ে দেওয়া যেতো, আর এখন? মিনিটে একবার চেহারা না দেখলেও মন মানে না। বিয়ের পরবর্তীতে সম্পর্ক গুলো এত চেঞ্জ হয় কেমনে?
.
.
.
মায়ার আসার কথা শুনে মহুয়া আসবে আসবে করেও তা আসা হয়ে উঠে নাই। তবে আজকে আসছে সে। অনেক, অনেক দিন পর আবার তারা একসাথে হবে।
মহুয়া তার শ্বশুরবাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার পর হতে, মায়া প্রায় বাইশ বার তাকে ফোন করেছে। বারবার জিজ্ঞেস করছে, ‘কোথায় আপু? আর কতক্ষণ?’
শেষমেষ মহুয়া বিরক্ত হয়ে বললো, “আমাকে এভাবে জালাচ্ছিস কেন রে? যা গিয়ে নিজের বরকে জ্বালাতন কর। সে বেচারা বোধহয় তোর শোকে পাথর হয়ে গেছে!”
মায়ার ছাদে উঠে দাঁড়িয়ে ছিলো, মহুয়ার অপেক্ষায়। এমন সময় মহুয়াকে রিক্সা থেকে নামতে দেখলো। ছাদ থেকে দৌড়ে গিয়ে নিচে নামলো। ততক্ষণে সে গেট পেরিয়ে ভেতরে চলে এসেছে। এক ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বোনকে।
মহুয়া ওকে দেখেই বললো, “ও মা! তুই তো দেখি বড় হয়ে গেছিস?”
“হ্যাঁ, দেখছো তুমি। মাত্র কয়েক দিনেই আমি বড় হয়ে গেলাম তাই না?”
“বিষয়টা ব্যাপক চিন্তার বিষয়। কিন্তু তোর সাথে তো আমার কথা বলার কোন মানেই হয় না। তুই আমাকে ছাড়াই বিয়ে করে নিয়েছিস। আমি কি তোকে ছাড়া বিয়ে করেছি, বল?”
“আচ্ছা আপু। রাগ করো না। লক্ষী বোন আমার। চলো এখন। অনেক গল্প আছে তোমার সাথে। এতো এতো কথা জমা আছে। না বললে পেট ফেটে মরেই যাব আমি।”
“যাচ্ছি যাচ্ছি। আগে বল আব্বু আম্মু কোথায়?”
“আসো ভেতরে।”
“হুহ। এতক্ষণ বাইরে দাঁড় করায় রাখছিস আমাকে? নিজের বাড়ি, নিজের ঘর তবুও বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?”
মায়া হাসলো।
.
.
.
সন্ধ্যার দিকে ইমন ফোন করলো মায়াকে। প্রায় এক ঘণ্টার মতো দুজনে কথা বললো। অধিকাংশ কথাই ছিলো, দুপক্ষ দুজন দুজনকে মিস করছে। এমন সময় মহুয়া এসে পেছন থেকে মায়ার হাতের ফোনটা নিয়ে ইমনকে বললো, “কি খবর ছোট ভাইজান? বিয়ে করেই নিলে অবশেষে!”
“ওমা! মহুয়া আপু যে, কখন আসছে তুমি?”
“সেই সকালে। তুই আর তোর বউ দেখি প্রায় এক ঘন্টা যাবত প্রেম আলাপ করছিস। এতটাই ব্যস্ত তোর বউ প্রেমালাপ নিয়ে, যে আমার আসার খবরটা দিলোই না। বাবা গো বাবা, প্রেম একেবারে জমে ক্ষীর!”
“হ্যাঁ আসলেই ঠিক বলছো। বিয়ের আগে তো তোমাদের জন্য শান্তি মতো প্রেম করতে পারি নাই। তাই এখন আগেরটা সহ পুষিয়ে নিচ্ছি।”
“আচ্ছা? এখন সব দোষ আমাদের তাই না? যা তোর বউকে নিয়ে যা তো। ওখানে গিয়েই প্রেম করিস। আমি একা একা এখানে কিছুদিন মা-বাবার আদর খাই।”
মায়া পাশ থেকে বললো, “এহ, তুমি তো আসতেই পারো। আমি আসছি কতদিন পরে।”
মহুয়া ধমকে বললো, “চুপ থাক। তোকে আসতে কে বলছে? ওখানেই ইমনের সাথে গুটুর গুটুর করে প্রেম করতি।”
ইমন ওপাশ থেকে বললো, “আচ্ছা রাখছি এখন আপু। আমার বউয়ের যত্ন নিও।”
“হুহ। শখ কতো!”
রাতে ঘুমানোর সময় মহুয়া কে নীলার কথাটা বলল মায়া। অর্থাৎ নীলা এ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কি কি করেছে, সেগুলা। সব শুনে মহুয়া জিজ্ঞেস করলো, “তোর কি নীলার ব্যাপারে এখনো কনফিউশন রয়েছে?”
“না। ওতো ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।”
“তাহলে তো টেনশন করার কোন কারণই নেই। ওকে নিয়ে কনফিউশন থাকলে, ইমনকে অবিশ্বাস করা হবে। ইমন তোকেই ভালোবাসে।”
“আহা আপু। সেটা তো আমি জানিই।”
“তুই কিন্তু খুব লাকি, বুঝলি। ইমনকে তো আমি পেয়েছি ছোট ভাই হিসেবে। সে যেমন ছোট ভাই হিসেবে বোনের প্রতি দায়িত্ববান। তেমনই বড় ভাই হিসেবেও মিমোর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ববান। একসময় প্রেমিক হিসেবে তোর প্রতি ছিলো। আর এখন সে তোর স্বামী। আর ভবিষ্যতেও দেখবি বর হিসেবে সে নাম্বার ওয়ান হবে!”
মায়া উল্টো দিক ফিরে বললো, “ধুর, কি যে বলো না?”
“কেন? লজ্জা পেলি। আমি কিন্তু ভুল কিছু বলি নাই। আচ্ছা, তোদের বাচ্চাকাচ্চা হলে কি নাম রাখবি বলে ঠিক করছিস?”
“উফ আপু প্লিজ। এখনই কিসের বাচ্চা? আগে তোমার নিজের বাচ্চা নিয়ে ভাবো।”
“আমার অতো ভাবার প্রয়োজন নেই। আমারটা নিয়ে ভাবার সময় আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি ভেবেই রেখেছি।”
“তাহলে আমাকে জ্বালাচ্ছ কেনো?”
মহুয়া হেসে ফেললো। মায়াকে জ্বালাতে তার বেশ লাগছে।
মায়া ওর অত্যাচারে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। ইমনকে খুব মিস করছে।
.
.
ইমনও আরেক প্রান্ত থেকে মায়াকে ভীষণ ভাবে মিস করছে। এই সময়টাই বোধ হয় এমন, প্রিয় মানুষদের মিস করার সময়!
.
.
.
.
চলবে……
[ কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ ]
#মায়াবন_বিহারিনী 🖤
#পর্ব_২৮
#আফিয়া_আফরিন
“কিরে জুলিয়েট? তোর রোমিওর কি খবর? আসবে কবে সে?” মায়াকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথাটা জিজ্ঞেস করল মহুয়া।
মায়া নাক মুখ কুঁচকে বলল, “যাও তো আপু। আসার পর থেকে তুমি আমায় খুব জ্বালাচ্ছো। এমন করো কেন? আমি কি কখনো তোমাকে দুলাভাইকে নিয়ে কিছু বলছি?”
“না, তা বলিস নি। তাই বলে কি আমিও কিছু বলবো না নাকি? তা বললি না যে, তোর রোমিও কবে আসবে?”
“তোমার শখ থাকলে তুমি শুনে নাও। আমাকে জিজ্ঞেস করো কেন?”
“যা ভাগ। আমি জেনে নিতে পারবো।”
মায়া নিচে নেমে এলো। মহুয়া ছাদেই থেকে গেলো।
মায়া নিজের রুমে ফিরে এসে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিলো। তারপর থেকে একটা ডাইরি বের করলো। গত ১৫ দিন হয়ে গেছে সে এসেছে। ১৫ দিনে ১৫ টা চিঠি লিখেছে ইমন কে উৎসর্গ করে। আজকের টা অবশ্য লেখা হয়নি এখনো। মায়া একটা কলম আর ডাইরি টা নিয়ে লিখতে বসলো।
‘আজ সকালে ছাদে গিয়ে দুধের মত সাদা ধবধবে রঙের একটা পায়রা দেখতে পেয়েছিলাম। খুব ইচ্ছে করছিল জানো, তোমাকে লেখা চিঠিগুলো বেঁধে দেই। ঠিক কোনো না কোনো সময় পৌঁছে তো দেবেই। তুমি তো পাবেই সেগুলো। তোমার জন্য জমানো অনুভূতিগুলো তো বুঝবে!’
ইমন!
মায়া লেখা বন্ধ করে প্রথম পাতায় গেলো, হাত বুলালো একবার। তারপর পড়তে শুরু করলো প্রথম থেকে।
‘আর যখন বিকেল বেলা বিদায় দিচ্ছিলে, কেন জানিনা বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। শুধু মনে হচ্ছিল আমি হয়তো হারিয়ে যাচ্ছি ইমনের থেকে।’
যখন ভরা প্লাটফর্মের সামনে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলে, পরম শান্তি পেলাম। একটা ভয় কাজ করছিল, এটা থেকে অনায়াসে মুক্তি পেলাম। যদিও সেখানে আব্বু আম্মু ছিল, তারাও কিন্তু দেখেছে। লজ্জা পেয়েছিলাম আমি। আর ভরসা পেয়েছিলেন তারা!’
‘ভালোবাসার শক্তি কি অদ্ভুত, তাই না? একজন বিনে আরেকজন বেঁচে থাকা দায়। দিনগুলো যেনো কাটতেই চায় না। তবুও তুমি বিহীন দিন কাটাতে হয়। কি অদ্ভুত ব্যাপার?’
‘মহুয়া আপু আসছে। কি বলবো আর? আপু ভীষণ জ্বালাচ্ছে। আচ্ছা বিয়ে কি আমি একা করেছি তোমাকে, তুমিও তো আমাকে বিয়ে করেছ। তাহলে আপুর যন্ত্রণাগুলো আমি একা একা কেন সহ্য করতে যাব? তার অ’স’ভ্য অ’স’ভ্য কথাগুলো বড় লজ্জায় ফেলছে আমায়।’
‘এখানে এসে তোমার সাথে ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে ঘোরার দৃশ্যগুলো খুব মনে পড়ছে। কি করি বলতো? সেদিন যে গোলাপটা খোপায় গুঁজে দিয়েছিলে, জানো সেটার পাপড়ি গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।’
‘অনেক শান্তি ওই মানুষটার মধ্যে। শুধু শান্তিই নয়, আত্মভোলা তৃপ্তিও বটে। অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু হাত আটকে আসছে। তোমাকে ছাড়া প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা ঘন্টার মতো কাটাচ্ছি।’
‘আমি জানি আমাকে ছাড়া তুমিও ভালো নেই। অন্তত, তোমার বলা কথাগুলো তো তাই বলে।’
‘তোমার দেওয়া সেই গোলাপ ফুলের পাপড়ি টা একদম শুকিয়ে কুড়কুড়ে হয়ে গেছে। তবুও গোলাপের মাঝে গোলাপের ঘ্রাণ ব্যতীত, ইমন ইমন ঘ্রাণও পাই আমি!’
‘দূরে থাকলে নাকি ভালোবাসা জিনিসটা বেশ জোরালো ভাবে উপলব্ধি করা যায়। আমি কিন্তু বেশ ভালোভাবেই করছি। তুমি করছো কি?’
‘মহুয়া আপুকে লুকিয়ে লুকিয়ে লেখাগুলো তোমায় লিখছি। একটা ছোট্ট ডায়েরির মাঝে তোমায় কিছু লিখলে, অজান্তেই তোমার কাছে আমার অব্যক্ত কথাগুলো পৌঁছে যায়। তাই লিখি!’
‘কতোদিন তোমায় দেখিনা!’
‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না। এই হৃদয়ে রাখবো ছেড়ে দেবো না। ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর তো পাবো না। না, না, না, না ছেড়ে দেবোনা।
গানটা একদম ভুলে গেছি। তবুও যতটুকু মনে আছে তোমায় উৎসর্গ করলাম।’
‘আমি কিন্তু ভীষণ রাগ করছি এইবার! আসছো না কেন এখনো তুমি? তোমার প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা তো শেষ। কবে আসবে?’
.
.
মায়া ডায়েরিটা বন্ধ করলো। অজান্তেই চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আসলেই তো ইমন আসছে না কেন এখনো? কবে আসবে?
ইমনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো। যেটা ইমন কখনোই জানতে পারবে না। অর্থাৎ মায়া তাকে জানতে দেবে না। থাক না কিছু কথা অজানা। সব কথা কি তাকে জানতেই হবে? তা কে নিয়ে যে মাঝে মাঝে মায়ার মনে ভয়ংকর ভয়ংকর সব চিন্তা আসে, এগুলো এমন জানলে তো মায়া লজ্জাতেই মরে যাবে। ভাগ্যিস মনের কথা জানার জন্য কোন যন্ত্র আবিষ্কার হয় নাই এখনও!
ডায়েরী টা যথাস্থানে রাখতেই ফোন টা বেজে উঠলো। ইমন ফোন করেছে। রিসিভ করেই মায়া অভিমানী কন্ঠে বললো, “পরীক্ষা এখনো হচ্ছে তাইনা?”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ইমন। বললো, “নাহ। শেষ তো।”
“আসছো না কেনো, এখনো?”.
“এদিকে একটু কাজে আটকা পড়ে গেছি। যাবো তো তিন/চার দিনের মধ্যেই। আচ্ছা, তোকে কে বললো আমার পরীক্ষা শেষ?”
“মিমো বলেছে। কেনো, বলে কি খুব ভুল করেছে? আমার থেকে কি তুমি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে?”
“এ বাবা, ছি ছি। তা কেনো হবে? পালিয়ে কেনো বেড়াবো? এমনিতেই জিজ্ঞাসা করলাম।”
“একটা ফিক্সড ডেট দাও, যেদিন তুমি আসবে।”
“সিওর তো বলতে পারছি না। তবে খুব শীঘ্রই।”
“তোমার খুব শীঘ্রই এর গুষ্টি উদ্ধার করি। দরকার নাই এখানে আসার।”
বলেই মায়া ফোন রেখে দিলো। ইমন আহত দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
আসলে এখানে তার কোনো কাজ ই নেই। সে ছোট্ট একটা মিথ্যা বলেছে। গত কয়েকদিন আগে ইমন দাঁড়ি কেটে ছাগলের রূপ ধারণ করেছে। যতোযাই হোক, এই দাঁড়ি নিয়ে মায়ার সামনে দাঁড়ানো যাবে না।
মায়া পুরো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে আর বলবে, “তোমাকে দেখতে পুরো রাম ছাগল, না ছাগল না; আস্ত ছোলা মুরগির মতো লাগতেছে।”
ইমন দৃশ্যটা কল্পনা করতেই আনমনে হেসে ফেললো।
.
.
মায়ার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ও না হয় রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে। তাই বলে ইমন ও একবারও ফোন করবে না? এতো কিসের কাজ আর ব্যস্ততা তার?
মায়া অভিমানে গাল ফুলালো। থাকুক সে ব্যস্ততা নিয়ে। ফোন করলেও ফোন ধরবে না আর। কখনোই আসতে বলবেন না। আর কয়েক দিন পরে মায়া একা একাই ফিরে যাবে।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজে মায়া গিয়ে দরজা খুলে দিল। মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে। মায়া ওকে দেখা মাত্রই বলে উঠলো, “দেখো আপু, এখন একদম ফাজলামি করবা না আমার সাথে। আমার কিন্তু মন মেজাজ খারাপ আছে, বলে দিলাম।”
“কেন ইমন কিছু বলেছে?”
“ওর কথা আমার সামনে আর মুখেই নিও না। হার বজ্জাত একটা!”
“ওমা কেন? কি করলো ছেলেটা?”
“কি করে নাই সেটা বলো। বিরক্ত লাগতেছে আমার।”
“আচ্ছা দাঁড়া, আমি ফোন করি ওকে। কত বড় সাহস ওর আমার একমাত্র ছোট্ট বোনের মাথা গরম করে দেয়! খবর আছে আজকে ওর।”
“হ্যাঁ আপু। ইচ্ছা মতো বকে দাও তো।”
মহুয়া দেরি না করে তৎক্ষণাৎ ফোন করলো ইমনকে। কিন্তু প্রথমবার রিসিভ করল না। দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার, কোন বারই রিসিভ করলো না। মায়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো, “দেখলে আপু, কেমন ব্যস্ত সে? তোমার ফোন ধরলো না। দাঁড়াও না কেন, ওর মু’ন্ডু চ’ট’কা’বো আমি। সাহস কত বড়! আমি না হয় রাগ করে ফোন কেটে দিলাম, একবার আমাকে ফোন করে কি রাগটা ভাঙ্গানো যেতো না? এতো ইগো ওর, এতো?”
মায়ার কথার ধরন দেখে মহুয়া মনে মনে না হেসে পারলো না। দুজনেই ছেলেমানুষ ধাঁচের। বয়স কম, ম্যাচিউরিটি কম, বোধ বুদ্ধি কম। যদি ফের কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়? এমনিতেই নীলার ব্যাপারটা শুনে কেমন জানি লাগছে। যদিও নীলা সরে গেছে, তবুও একটা খটকা থেকেই যায়। নীলা সরে গেছে, নতুন কেউ যদি আসে। ওরা সেই ঝড় সামলাতে পারবে তো? বিয়েটা কি আরো পরে দেওয়া উচিত ছিল? যদিও মহুয়া জানে, ইমন ইরেস্পন্সিবল না; তবুও ঘরভাঙ্গা ঝড় আসতে কতক্ষণ?
এমন হাজারো প্রশ্ন উথাল পাতাল ঝড়ের ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে মহুয়ার মাথার ভিতর।
কিছুক্ষণ পর ইমন নিজেই কল ব্যাক করলো। মহুয়া কল রিসিভ করেই ধমক দিয়ে বললো, “কই থাকিস তুই? ফোন ধরিস না কেন?”
“ইচ্ছে করেই ধরিনি। মায়া নিশ্চয়ই তোমার সাথে ছিল। ও নিশ্চয়ই তোমাকে ফোন করতে বলছে, এইজন্য।”
“আজব!”
“ও কিন্তু নিজেই রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে। আমি কি করবো? বললাম আমি এখানে একটু ব্যস্ত আছি, ও সেই কাজের গুরুত্বটা বুঝলো না।”
মহুয়া বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রসঙ্গ পালটে দিয়ে বললো, “আসবি কবে?”
“এই ধরো দুই-তিন দিনের মধ্যেই।”
“আচ্ছা আয়। তোকে সামনাসামনি কিছু কথা বলার আছে।”
“যদি না আসি?” ইমন ফাইজলামি করে বললো।
“পদ্মা নদী চিনিস? কেটেকুটে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসবো।”
“বাবারে বাবা, থ্রে’ট দিচ্ছো? না জানি, তোমাদের এলাকায় ঢুকলে কি করো?”
মহুয়া হাসতে হাসতে বললো, “আচ্ছা আয় আগে।”
মহুয়া ইমনের ফোন রেখে, মায়ার কাছে গিয়ে বললো, “রাতে আগেই যেন ঘুমিয়ে পড়িস না। তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
“আচ্ছা।”
সারাটা দিন যেভাবে সেভাবে কেটে গেল। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মায়া একবার ইমনকে ফোন দিতে চাইল। কিন্তু পরক্ষনেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। থাক, যেচে পরে ফোন দেওয়ার কোন দরকার নেই। নিজে দিলে দিবে, না হয় সে আর কখনো ফোন দিবে না।
এমন সময় মহুয়া ঘরে এল। বাকি অফ করে মায়ার পাশে গিয়ে বসলো।
মায়া মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “বলো কি যেন বলতে চাইছিলা?”
মহুয়া ওর হাতে ফোন দেখে বলল, “ইমনের সাথে কথা বললি?”
“না ফোন দিতে চাইছিলাম, কিন্তু দিব না।”
মহুয়া এই কথার উত্তরে পুরো প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “তোর আর ইমনের সম্পর্ক কেমন?”
মায়া অবাক হয়ে বলল, “মানে?”
“আচ্ছা এই প্রশ্ন বাদ দে। তোরা প্রেম করে বিয়ে করেছিস, তোদের সম্পর্ক ভালো হওয়ারই কথা। তুই বল, তুই ইমনকে ঠিক কতটা ভালোবাসিস?”
“ভালোবাসি, সেটা কি পরিমাপ করা যায়? তাহলে কিভাবে বলবো ওকে কতটা ভালোবাসি? তবে ওকে আমি সর্বোচ্চ ভালোবাসি!”
“আচ্ছা। বিশ্বাস করিস ওকে?”
“অবশ্যই। বিশ্বাস করি বলেই তো নিনা আপুর এত কাহিনীর পরও, ওর উপর বিশ্বাস হারাইনি।”
“নীলার প্রসঙ্গ বাদ। আমি তখনকার কথা বলছি না। আমি এখন কার কথা বলছি। এখন তো নীলা নেই, এখন বিশ্বাস করিস?”
“হ্যাঁ। নিজের থেকেও বেশি।”
“আচ্ছা ইমন কি তোর উপর রাগ করে?”
“হ্যাঁ করে। তুমি আমার এভাবে ইন্টারভিউ নিচ্ছ কেন?”
“চুপ থাক। আমি যেসব বলছি তার উত্তর দে। ইমন রাগ করলে তুই ভাঙ্গাস? আর
তুই রাগ করলে এ
ইমন রাগ ভাঙ্গায়?”
“ঠিক সেই রকম ব্যাপার না। ও নিজে রাগ করলে সেটা বেশিক্ষণ থাকে না। আপনি আপনি ঠিক হয়ে যায়। আবার রাগ বেশি দীর্ঘ হলে, আমি নিজেও রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করি। তবে সেখানে উল্টো আমারই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
“দিস ইজ দা পয়েন্ট। এই কথায় আসার জন্যই এতক্ষণ ধরে এত প্রশ্ন করলাম।” মহুয়া হেসে বললো।
“মানে?”
“শোন তোরা, এখন স্বামী স্ত্রী। কোন আলগোছের সম্পর্কের মধ্যে তোরা নেই। এটা একটা সিরিয়াস সম্পর্ক। এখানে দুজনের মধ্যে রাগারাগি হবে, স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তুই বললি না, যে ইমন রাগ করলে সেই রাগ তুই ভাঙ্গাতে না পারলে তোর মাথা গরম হয়ে যায়। এই কাজটা চরম ভুল। সম্পর্কে কখনো অতিরিক্ত রাগ, জেদ দেখাবি না। যতটুকু দরকার ততটুকু ঠিক আছে। তুই বললি তুই ইমনকে ভালোবাসিস, কিন্তু কই? ইমন না হয় ফোন করলো না, তারপরও তোর উচিত ছিল না একবার ফোন করে খোঁজ নেওয়া? সে কিন্তু তোর স্বামী। এখনো কেন ফোন হাতে নিয়ে বসে আছিস? ইগো ধরে রেখে ফোন দিচ্ছিস না। ইগো থাকলে সে সম্পর্ক কখনো টিকতে পারে না। বেশি হলেও একদিন, দুইদিন বা দশ দিন। তারপর, তারপর সব শেষ!
তোদের বয়সটা এখনো অনেক কম। আর ইমনের এখনো পড়াশোনা আছে, ওর ক্যারিয়ার আছে। এটাই তো ব্যস্ত থাকার সময়। তার উপর, তুই আছিস। যেটা আরেকটা রেস্পন্সিবিলিটি। বুঝতে হবে তো, অত চাপ কেন দিচ্ছিস ওর উপর? ও নিজেও তো তোকে ভালোবাসে, তাহলে কি তোকে মিছিমিছি কারণে ব্যস্ততা দেখাবে? ওর কাজের গুরুত্বটা বোঝার চেষ্টা কর।”
মহুয়া থামলো। মায়ার দিকে চেয়ে দেখলো ওর চোখে পানি। মহুয়া আর কিছু বলল না। সে জানে, মায়া নিশ্চয়ই ভুলটা বুঝতে পেরেছে। সে চুপটি করে উঠে বের করে দিকে পা বাড়ালো। হয়তো ইমনের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। বলুক, সম্পর্কে মান-অভিমান, ঝগড়াঝাটি দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকা মোটেও ভালো কথা নয়।
মহুয়া মৃদু হেসে উল্টো দিক ফিরে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
.
গল্পটা কি আর কয়েক পর্বের মধ্যে শেষ করে দেওয়া উচিত? আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম!
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]