মায়াবন_বিহারিনী🖤 #পর্ব_১১ও১২

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_১১ও১২
#আফিয়া_আফরিন

ছবিগুলো এক একটা জুম করে দেখছিল নীলা। বেশ সুন্দর এসেছে। নীলা জানে না ওই ছেলেটা কে? বা ওর সম্পর্কে কিছুই জানে না। অবশ্য এত কিছু জেনে নীলার কি লাভ? সে যেই হোক না কেন, নীলার তো সুবিধাই করে দিয়েছে।
নীলা গা ঝারা দিয়ে উঠে বসলো। আজ মনটা বেশ প্রশান্তি লাগছে। মেজাজটাও বেশ ফুরফুরে। ইশ, এই সময় ইমনটা পাশে থাকলে বেশ হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইমন তো তাকে পাত্তাই দেয় না। ব্যাপারটা নীলার জন্য খুবই কষ্টের। কিন্তু এখন আর কষ্ট লাগছে না।
তার মন অজান্তেই বলে উঠছে, “খুব শীঘ্রই ইমন তার হবে।”

নীলা উঠে গেল মায়ার সাথে কথা বলতে। সে মনে মনে একটা ছক সাজিয়ে নিল। ইমনের বিরুদ্ধে মায়ার মনটাও বিষিয়ে দিতে হবে। যাতে সম্পর্কটা নষ্ট হওয়ার পরও একজনের প্রতি আরেকজনের এক তরফা ভালবাসা না থাকে। যেটা থাকবে, সেটা শুধুমাত্র ঘৃণা।

মায়া ল্যাপটপে টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখছিল। মিমো বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে ঋদ্ধর সাথে কথা বলছিল আর খিলখিল করে হাসছিল।

মায়া একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল, “উফ মিমো, কটকটি মার্কা হাসি বন্ধ কর। আমি কার্টুন দেখতেছি। একটু শান্তি দে।”

মিমো ফের হাসতে হাসতে বলল, “তুমি কি ছোট বাচ্চা মানুষ আপু? এটা কি কার্টুন দেখার বয়স?”

মায়া জবাব দিল না মিমোর কথার। শুধু মনে মনে বলল, “এর মাথা গেছে আসলেই প্রেম করে। কারণে অকারণে শুধু হিহি করে। আজব! প্রেম করলে এত হি হি করার কি আছে বুঝলাম না? আমি কি এমন করি নাকি?”

ঠিক এমন সময় নীলা এসে ঘরে ঢুকলো। আরেকটা চেয়ার নিয়ে মায়ার পাশে বসে বলল, “কিছু কথা বলতাম।”

“কার্টুন দেখছি, একটু পরে বলিও।”

“দরকার ছিল যে এক্ষুনি।”

মায়া ল্যাপটপ অফ করে নীলার দিকে তাকিয়ে বলল, “আসো বেলকোনিতে আসো। ওখানে বসে কথা বলি।”

“আচ্ছা।”

মায়া বেলকনিতে ঢুকেই মিমো কে বলল, “তোর ঘরে যা।”

মিমো চুপচাপ চলে গেল। নীলা প্রস্তুতি নিচ্ছিল মায়া কিসে কি কি বলবে! যা বলার গুছিয়ে বলতে হবে। একটু এলোমেলো হলেই, মায়া সেটা ধরে ফেলবে।
নীলা যখন মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিলো, মায়া গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ বলো। কি যেন বলবে বলছিলে?”

“তুমি কি ইমনকে ভালোবাসো?”

“হ্যাঁ। ভালোবাসি!”

“কতটুকু?”

“তুমি কি এসব নিয়ে কথা বলতে আসছো? তাহলে আগেই জানিয়ে রাখি, আমি তোমায় এসব বলতে বাধ্য নই।”

“জানি। কিন্তু তোমায় আমি এমন কিছু একটা বলব, যেটা হয়তো তুমি সহ্য করতে পারবেনা।”

“আমার সহ্য ক্ষমতা তোমার ধারণার বাইরে নীলা আপু। তাই নির্দ্বিধায় বলতে পারো।”

“আসলে আমি আর ইমন আবেগের বশে এক বৃষ্টির স্নাত সন্ধ্যায় একটু ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম।”

মায়া এবার আকাশ থেকে পড়ল। নিলা যে এমন কথা বলবে, এটা জল্পনা কল্পনার বাহিরে ছিল। কি বলল মেয়েটা? ঘনিষ্ঠ হয়েছিল, মানে কি বোঝাতে চাইছে? মায়া তো দেখেছিল সব, নিজ চোখে।

“ঘনিষ্ঠ মানে?”

“আসলে আমি তোমায় আর বলতে পারব না। সেদিন ইমন আমায়, তুমি বুঝে নাও এটা। আমি বললে হয়তো তোমার শুনতে খারাপ লাগবে।”

“আমার খারাপ লাগা বা ভাললাগার কথা তোমায় ভাবতে হবে না। যদি ভাবতে, তাহলে এসব কথা আমায় বলতে আসতো না। আর আমায় কি বুঝে নিতে বললে, তুমি নিজে বুঝিয়ে দাও ইমন সেদিন কি করেছে তোমায়?”

“আমি বলতে পারবো না। এটা তোমার বোঝার কথা।”

“আমি বুঝলে যদি ভুল হয়?”

“হোক। তবুও নিজের মতো করে কিছু একটা বুঝে নাও।”

“কি করেছিলো ইমন? থাপ্পড় মেরেছিল তোমায়?” তীক্ষ্ণকন্ঠে জিজ্ঞাসা করল মায়া।
নীলা কেমন আহত চোখে মুখে তাকালো। এমন উত্তর তো সে আশা করে নাই।
মায়া ফের বলল, “আমি জানিনা মিথ্যা কথা বলে তোমার লাভ কি? হয়তো তুমি আমার আর ইমনের সম্পর্কটা খারাপ করতে চাইছো। কিন্তু এখানে আমি বলে রাখি, সেটা কোনদিনও সম্ভব নয়। যতই তুমি আমাদের মাঝখানে ভুল বোঝাবুঝি করানোর চেষ্টা করো না কেন, আমরা কিন্তু নিজেদের দিক থেকে ঠিক থাকব। আর ইমন তোমার সাথে যাই করুক না কেন, আমাকে কিন্তু এসে বলছে। আমি জানি সেদিন কি কি ঘটেছে। আর আমি নিজের চোখে দেখেছি ও। এখন নিজের চোখ রেখে তো আমি তোমার কথা বিশ্বাস করতে যাব না।”

নীলা কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই, ইমন ভিতরে এসে বেলকনির দরজা ঠকঠক করল।
মায়া বলল, “কে? দরজা খোলা আছে।”

ইমন ভেতরে এসে দুজনকে দেখে একটু অবাক হল। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বলল, “সরি, তোরা বোধহয় গল্প করছিলি। পরে আসবো।”

ইমন চলে যেতে নিলে মায়া বলল, “কোথায় যাচ্ছ? বসো এখানে।”

“তোরা গল্প করছিস কর। আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

“বাইরে কেন যেতে হবে এই সময়?”

অগত্যা ইমন মায়ার পাশে একটা টুল টেনে বসলো। মায়া নীলার দিকে তাকিয়ে বলল, “নীলা আপু, তোমার আমার কথা শেষ। তুমি এখন আসতে পারো।”
স্পষ্ট অপমান! নীলার সাড়া গা
রাগে জিদ্ধে রি রি করে উঠলো। ইমনের সামনে এভাবে অপমান? ইমন আছে বলে কিছু বলতেছে না। সে হাসিমুখে উঠে গেল।
মনে মনে বলল, “এই দিন ই দিন নয়। ওই ছবিগুলো আছে এখনো আমার কাছে।”

মায়া ইমন এর দিকে তাকিয়ে বলল, “কই ছিলা এতক্ষন?”

“ক্লাবে আছিলাম। কেন?”

“কিছু না।”
তারপর একটু এগিয়ে এলো ইমনের দিকে। তার ঘাড়ে দুই হাত রেখে সামনাসামনি বসলো।
বলল, “এইবার তাকাও আমার দিকে।”

ইমন চোখ তুলে তাকালো। কিন্তু চোখের ঘূর্ণায়মান দৃষ্টি আশেপাশে বিস্তার করছিল।
তাই দেখে মায়া ফের বলল, “উহু, এভাবে নয়। একদৃষ্টিতে তাকাও আমার দিকে।”

“তাতে কি হবে?”

“বলছি। আগে তাকাও!”

ইমন এবার আশপাশ না করে মায়ার দিকে তাকালো।

মায়া বলল, “নাও, এইবার তুমি আমায় মুখস্ত কর। এক দৃষ্টিতে শুধুমাত্র তাকিয়ে থাকবে। অন্য কোন দিকে তাকাবে না। এরপর কখনো যেন আমাকে আর অন্য কারো মধ্যে খুঁজে না পাও, এমন ভাবেই মুখস্থ করবে। কেউ যাতে পরবর্তীতে তোমার নামে আমার কাছে উল্টাপাল্টা কোন অভিযোগ করতে না পারে।”

ইমন চোখের পলক না ফেলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল মায়ার দিকে। কি মায়া ভরা মুখ! দেখলেই বুকের মধ্যে শান্তি শান্তি লাগে। এই মুখের সাথে অন্য কোন কিছু তুলনা হয় কি করে? ইমন সেদিন কিভাবে করতে পারলো মায়ার সাথে নীলার তুলনা? মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানালো সে।

এই মুখের, না শুধু মুখের না; পুরো মায়াটাকেই মুখস্ত করে ফেললে অভিব্যক্তিটা বেশ হতো!
এইভাবে কি আদৌ কাউকে মুখস্ত করা যায়? হ্যাঁ যায় তো। ইমন তো করেই ফেলেছে। চোখ বন্ধ করলেই, স্পষ্টভাবে এই মুখের ছবিটা ভেসে ওঠে মনের আয়নায়।
গভীর কালো চোখ, ঘন চোখের পাপড়ি, হাসিমাখা মুখ, লম্বা নাক, গালের এক সাইডে সামান্য একটু টোল, ঠোঁটের তিল, হ্যাঁ সবকিছু মুখস্ত হয়ে গেছে তো। শুধু মুখস্ত নয়, আত্মস্থো ও হয়ে গেছে।
.
.
.
মায়ার কথা শুনে রাগে ছাদে চলে আসছে নীলা। রাগে এখনো তার সারা শরীর কাঁপছে। মায়া এইভাবে অপমান করলো তাকে? আচ্ছা করুক, মায়ার দিন যাচ্ছে এখন। নীলার ও তো দিন আসবে, তখন কি করবে মায়া?
ফোন হাতে নিয়ে ছবিগুলোয় আরেকবার চোখ বুলালো নীলা। ছবিগুলো দেখলে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। কেন যে, সেটা ও নিজেও জানেনা। হয়তো এই ছবিগুলোকে দিয়েই মায়াকে খানিকটা বাজিমাত করা যাবে, এই জন্যই।
এগুলোকে যে খুব যত্ন করে রেখে। সুযোগ বুঝে কোপ টা দিতে হবে। নীলা জানে, ইমন মায়া দুজনেরই সন্দেহ বাতিক একটা স্বভাব আছে। যদিও স্বভাবটা মায়ার বেশি। তবে ইমনও কম যায় না।

কি সুন্দর সুন্দর কয়েকটা প্ল্যান এলো নীলার মাথায়। অবশ্য সুন্দর বললে ভুল হবে, ভয়ংকর ভয়ংকর সব প্ল্যান।
তার মধ্যে থেকে আজকে রাতের জন্য একটা রাখল সে। অপমানের বদলা নিতে হবে না? এত তাড়াতাড়ি কি সব ভুলে যাবে নাকি?
_______
রাতে মায়া আর নীলা একসাথে ঘুমায়। মিমো তার নিজের ঘরে ঘুমায়। মায়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পরই মায়ার ফোন হাতে নিয়ে একটা নাম্বার উঠালো। তারপর মায়ার ফোন থেকে ফোন দিল। সিমটা যেহেতু নীলার ফোনেই, তাই নীলার ফোনটা বেজে উঠলো। নীলা নিজের ফোনটা রিসিভ করে, মায়ার ফোনটা আবার বালিশের পাশে রেখে দিল।
কল চলতে থাকলো। পাক্কা এক ঘণ্টা ৩৪ মিনিট পর নীলা কল কাটল।
তারপর ওই সিমটা ফোন থেকে খুলে নিজেও শুয়ে পড়ল।

সকালবেলা মিমোর ডাকে ঘুম ভাঙলো মায়ার। মায়া ঘুম ঘুম চোখে বলল, “কি হইছে?”

“চলো ঋদ্ধর সাথে একটু দেখা করে আসি।”

“ফুপি যেতে দেবে না।”

“আম্মু নাই। রাজশাহী গেছে।”

মায়া তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসলো, ” কই গেছে?”

“রাজশাহী। ওখানে কি যেন একটা প্রোগ্রাম আছে তাই। চলে আসবে দুই তিন দিনের মধ্যে। সমস্যা নাই। তোমাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছে।”

“আগে ডাকিস নি কেন তুই আমায়?”

“আমু মানা করলো। বলল তুমি আরাম করে ঘুমাচ্ছ, ডিস্টার্ব যেন না করি।”

“আচ্ছা রেডি হয়ে নে। তোর ভাইয়া কোথায় রে?”

“ক্যাম্পাসে।”

“নীলা আপু?”

“সেও ক্যাম্পাসে।”

“আচ্ছা যা তুই রেডি হয়ে আয়।”

মায়া আর মিমো দুজনের রেডি হয়ে, বাসায় তালা লাগিয়ে বাইরে বের হলো। সেই দিনের মতো আজকেও ঋদ্ধর সাথে আবির নামে সেই ছেলেটি এলো।
আবির আর মায়া দুজনেই সেই পুকুর ঘাটে বসলো। আবির ছেলেটা বেশ ভদ্র ধরনের। মায়াকে কি সুন্দর আপু আপু করে ডাকে!
সে বলল, “আমার কোন বড় বোন নেই, আজ থেকে তুমি আমার বড় আপু কেমন!”

“আচ্ছা। আমার বড় আপু আছে, তবে ছোট কোন ভাই নেই। দুজনের শূন্যস্থান ই পূরণ হয়ে গেল।”
তারপর দুজন মিলে অনেকক্ষণ গল্প করল। সবটাই নিজেদের ফ্যামিলি নিয়ে, পড়াশুনা নিয়ে।
সবশেষে আবির বলল, “তুমি বগুড়া ফেরার আগে অবশ্যই একদিন আমার বাসা থেকে ঘুরে আসবে। আম্মুর সাথে এই বড় বোনের দেখা করাতে হবে না!”

“আচ্ছা যাবো একদিন।”
.
.
ইমন আর তার কয়েকজন বন্ধু মিলে বট গাছের নিচে বসে আছে। এমন সময় হঠাৎ ইমনের চোখের পরে গেল, সামনের দিকে পুকুরপাড় ঘাটে। মায়ার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে মনে হয়।
ততক্ষণে তারা উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। ইমন বসা থেকে উঠে এগিয়ে গেল সামনে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। আশেপাশে তাকিয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ পরখ করতে লাগলো।

এমন সময় তার বন্ধু নীরব এসে বলল, “কি ব্যাপার? এখানে এসে কাকে খুঁজছিস?”

“মনে হলো, মায়াকে দেখলাম।”

“ও আচ্ছা। তো কোথায়?”

“বুঝতেছিনা। ওইটা মায়া ছিল না অন্য কেউ!”

“ও। পার্কে তো কত মেয়ে আছে। হয়তো অন্য কাউকে দেখে মায়া মনে করেছিস।”

“হ্যাঁ হতে পারে।”

ইমন উল্টো দিকে হাটা দিল। কিন্তু তার মন কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না। বারবার মনে হচ্ছে ও সত্যি মায়া কে দেখেছিল।
.
.
মায়া দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে মিমকে বলল, “দেখলে তোর ভাইয়ের কি চোখ! দশ মাইল দূর থেকেও কেমন চিনে ফেললো!”

“হ্যাঁ তাই তো দেখছি। ভাগ্যিস ঠিক সময় দৌঁড় মারছিলা? কে জানত ও ক্যাম্পাসে না গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে এখানে এসে আড্ডা মারবে!”

“হ্যাঁ অনেক হয়েছে। এখন বাড়ি চল।”
.
.
বিকেলবেলা জাহানারা বেগম ফোন করলে, পাভেল নামটা নজরে পরে মায়ার। প্রথমে অবাক হয়, অচেনা এই নাম্বারটা দেখে। দ্বিতীয়ত অবাক হয়, এই নাম্বারে এতক্ষণ কথা বলায়।
কিন্তু হাজার খুঁজেও মায়া বের করতে পারে না, এই পাভেল কি তার পরিচিত?

মিমোকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই কি আমার ফোন থেকে পাভেল নামে কারো সাথে কথা বলেছিস?”

মিমো না বলল। সে পাবে নামে কাউকে চিনেই না।

তারপর নীলাকে গিয়ে প্রশ্ন করল, “নীলা আপু তুমি কি পাভেল নামে কাউকে চেনো?”

“নাহ। কেনো?”

“এমনি।”
নীলা মনে মনে হাসলো। মায়া ব্যাপারটাকে আর পাত্তা দিল না। খামোকা, আজগুবি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে, মাথা খারাপ করার কোন মানেই হয় না!
.
.
হুট করে আকাশ কালো হয়ে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। এইমাত্রই তো আকাশটা একদম ঝকঝকে পরিষ্কার ছিল। আবার রোদ ও ছিল। মাঝে মাঝে যে আবহাওয়ার কি হয়? আল্লাহ ভালো জানে। ইমন বিরক্ত চোখে আকাশের দিকে তাকালো। সে ঘড়িতে সময় দেখল। বিকাল ৫ টার কাছাকাছি। একটু পর তার বন্ধুদের সাথে খুব জরুরী একটা মিটিং আছে। বৃষ্টির শুরু হয়ে গেলেও মহা মুসিবত। এমনিতেই রাস্তার উপর পানি জমে বঙ্গোপসাগর হয়ে যায়।
বলতে না বলতেই ঝাপিয়ে বৃষ্টি নামলো। মুহূর্তেই ভিজে চুপচুপে হয়ে গেল ইমন। একটু সাইডে দাঁড়ানোর মত জায়গা নাই। না, বাড়ি ফিরে যেতে হবে মনে হয়। এমন কাকভেজা হয়ে তো আর কোথাও যাওয়া যাবে না। বন্ধুদের সাথে যদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনা ছিল। সেটা আজকে স্থগিত রেখে, কাল শুরু করতে হবে।

“এই ইমন। এমন ভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভিজছো কোন দুঃখে? পার হয়ে এসো।”

ইমন সাইডে তাকালো। নীলাকে দেখতে পেল। ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো। গুনে গুনে এমন সর্বনাশা বৃষ্টির দিনেই কেন তার নীলার সাথে দেখা হতে হবে?
ইমন আসছে না দেখে নীলাই এগিয়ে এলো। ইমনের হাত ধরে রাস্তার এক সাইডে নিয়ে এলো।

“রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভিজছো কেন?”

“সেই কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে? তোর কি সমস্যা আমি ভিজলে?”

“এভাবে কেন কথা বলছো? আমার কি সমস্যা হবে? শুধু সমস্যা একটাই, তোমাদের বাড়ি এসে ঘুমের খুব ডিস্টার্ব হচ্ছে।”

ইমন একবার বলতে চাইলো, ডিস্টার্ব হলে চলে যা। কিন্তু মুখে বলল না। কথাটা অপমান সুচক দেখায়।
তাই সে মুখে বলল, “ডিস্টার্ব হলে ঘুমাস কেন? ঘুমাবি না?”

নীলা এই কথার উত্তর দিল না। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “বাসায় যাবে না?”

“না।”

“কেন?”

“এখানেই থাকবো।”

“কি আজব! এমন ত্যাড়া বেঁকা উত্তর দিচ্ছ কেন?”

“ভালো লাগছে।”

“চলো বাসায় যাই।”

“তুই যা। আমার দেরি হবে।”

“কি করবে এখন এখানে?”

“কিছু না। এমনিতেই দাঁড়িয়ে থাকবো।”

“আচ্ছা। তাহলে আমিও তোমার সাথে দাঁড়িয়ে থাকি।”

ইমন ওর কথার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। শুধু শুধুই নীলা তার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকজন মানুষজন আছে, তারা বারবার চেয়ে চেয়ে দেখছে দুজনকে।
ইমনের বেশ বিরক্ত লাগছে। নীলাকে যেতে বললেও যাবে না। অগত্যাই ইমন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ির দিকে রওনা হলো। নীলাও চুপচাপ ইমনের পিছু পিছু যাচ্ছে।

কলিং বেল বাজাতে মায়া এসে দরজা খুলে দিল। ইমন আর নীলাকে এভাবে দেখে অবাক হলো প্রচন্ড।
মিমোর কাছে গিয়ে বলল, “এরা যে দুইজন এমন বৃষ্টিতে ভিজে প্রতিদিন কোথায় যায়, কোথায় থেকে আসে কে জানে?”
.
.
নীলা আজ মহাখালী এসেছে। তার কলেজ লাইফের এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে। ছেলেটার নাম নিলয়, শত অপকর্মের মূলে রয়েছে সে।
কিছুক্ষণ যাবত অপেক্ষা করতে করতে নীলা এসে হাজির। নীলা নিলয়কে দেখে চওড়া হাসি দিল। কুশল বিনিময় করল দুজনে।

নিলয় প্রথমে জিজ্ঞাসা করল, “কি ব্যাপার? এত জরুরী তলব? এমনি তো খবরও নিস না?”

“একটু দরকার ছিল।”

“আচ্ছা বল।”

“তোকে একটা সিম আর একটা ফোন নাম্বার দিব। সিমটা তুই তোর ফোনে তুলে যে নাম্বারটা দিবো সেটাই ফোন করবি রাতের বেলা। এই ধর রাত একটা থেকে দুইটার মধ্যে। আমি তোকে মেসেজ করে জানাবো। তখন তুই ফোন দিবি।”

“এতে তোর ফায়দা কি?”

“আছে। অনেক ফায়দা আছে। আস্তে আস্তে বলবো সব। আপাতত ফোনের উপর থাক। দুইদিন পর হয়তো ওর সাথে দেখাও করা লাগতে পারে। দেখা করেই এমন ভাব করবি, যেন তুই ওর পূর্ব পরিচিত। আমি তোকে সমস্ত ব্যাপারটা মেসেঞ্জারে বুঝিয়ে দেবো।”

“ওকে।”

“আর হ্যাঁ। মেইন কথা, তুই নিজেকে পাভেল নামে পরিচয় দিবি।”

“আচ্ছা।”

“কথাগুলো মাথায় রাখিস প্লিজ। আসছি আমি।”

“ঠিক আছে। তুই সাবধানে যাস।”

নিলয়ের থেকে বিদায় নিয়ে নিলা বাড়ি ফিরে এলো।

নীলাকে দেখেই মায়া জিজ্ঞেস করল, “গতকাল তুমি আর ইমন বৃষ্টিতে ভিজেছিলে?”

“হ্যাঁ।” নীলার নির্বিকার উত্তর।

“ও আচ্ছা। তা সেদিনও কি বুঝি তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিল?” মুখ টিপে হেসে বলল মায়া।

নীলা কেমন থতমতো খেয়ে গেল। এমন ভাবে কেউ প্রশ্ন করে? মায়া দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নীলার দিকে প্রশ্ন বোধক তার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নীলা শুধু বললো, “না‌ কি হবে আবার?”
তারপর সে চলে গেল।
মায়া ওখানে দাঁড়িয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। নীলার সাথে এ ধরনের কথা বলতে তার বেশ লাগে। কিন্তু নীলা এসব কি মজা হিসেবে নেয় না, কেন জানি সিরিয়াসলি ভাবেই নেয়!

সন্ধ্যার পর মায়া মিমোকে নিয়ে পাশের দোকানে গেল আইসক্রিম কিনতে। এমন সময় হঠাৎ আবিরের সাথে দেখা হল। আবির নিজেই তাদের আইসক্রিম কিনে খাওয়ালো। তারপর তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করল।
বেলকোনি থেকে পুরোটাই দেখলো ইমন।
.
.
.
.

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here