মানুষ খাওয়া ভূত,পর্ব:০১

মানুষ খাওয়া ভূত,পর্ব:০১
লেখক-(নাম জানা নেই)

আচ্ছা বাবা ! মানুষের মাংস খেতে কেমন লাগে??
৬ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের মুখে এই ধরণের প্রশ্ন শুনে যেকোন বাবারই চমকে উঠার কথা! কিন্তু আবির সাহেব বিন্দুমাত্রও চমকালেন না! আবির সাহেব মিষ্টি করে হেসে তার ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে শম্মীকে উত্তর দিলেন:
-খুব খারাপ লাগে মা। অনেক গন্ধঁ আসে মানুষের শরীর থেকে।

মানুষের শরীর একে বাড়েই খাবার উপযুক্ত না। এদের মাংস অনেকটা নিম পাতার রসের মতো তিতা লাগে !
-কিন্তু তুমি কী করে জানলে? তুমি কী কখনো মানুষের মাংস খেয়েছো? (শম্মী)
-হ্যাঁ মা! যখন আমি তোমার সমান ছোট ছিলাম তখন খেয়েছিলাম। খুব বাজে স্বাদ মানুষের মাংসের।

-হোক বাজে! তাও আমি মানুষের মাংস খাবো। তুমি প্লিজ এনে দাও না বাবা! প্লিজ প্লিজ প্লিজ বাবা! লক্ষী বাবা!
-আচ্ছা বাবা! কিন্তু এখনতো অনেক রাত হয়ে গেছে! এখনতো আর কোন মানুষ ঘর থেকে বের হবে না! আমার লক্ষী মেয়েটা! তুমি এখন ঘুমায়! আমি তোমায় কাল সকালে মানুষের মাংস এনে দিবো!
-প্রমিজ?
-ঠিক আছে লক্ষী বাবা! প্রমিজ।

বাবার সাথে এতটুকু কথা বলেই শম্মী বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। শম্মীর এই ধরণের ব্যবহার আগে আবির সাহেবের কাছে অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক লাগলেও এখন তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে! কারণ আবির সাহেব জানেন শম্মী আর ৮-১০ টা স্বাভাবিক মেয়ের মতো নয়। শম্মী জন্মের পর থেকেই বেশ অদ্ভুত রকমের আচরণ করতে শুরু করে

শম্মীর জন্মের সাথে সাথেই তার মা মারা যায়। এরপরে বাড়িতে একটা আয়া রাখা হয় শম্মীর জন্য। কিন্তু আয়াটা বেশিদিন টিকেনি ১৩ দিন শম্মীর দেখাশোনা করার পর আয়াটা পালিয়ে যায়। এরপর আবির সাহেব শম্মীর দেখাশোনার জন্য আরো ৪-৫টা আয়া রাখেন। কিন্তু কোন আয়াই তাদের বাড়িতে টিকেনা।

সবাই ৩-৪ দিন শম্মীর দেখাশোনা করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আবির সাহেব তখন বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। তিনি কিছুই বুঝতে পারেন না! ভাবেন, রহস্যটা কি?! সব আয়ারা এইভাবে কিছু না বলেই পালিয়ে যাচ্ছে কেন? এরপর তিনি শেষ যে আয়াটাকে রাখেন তার দিকে ভালো করে লক্ষ রাখতে থাকেন।

এরপর তিনি যা দেখলেন তা দেখে তিনি পুরোই অবাক হয়ে গেলেন। শম্মীকে যখন ল্যাকটোজেন বা এই ধরণের খাবার দেওয়া হয় তখন সে খাবার খায় না! এরপর আয়ার হাতকে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে রাখে। ঘটনাটা দেখতে স্বাভাবিক লাগলেও ঘটনাটা মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না! আসলে শম্মী অনেকটা জোকের মতো করেই ঠোঁট দিয়ে চেপে আয়াদের শরীরের রক্ত খেতো।

আয়ারা প্রথমে কিছু বূঝতে পারতো না। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিতো। পরে যখন ব্যাপারটা ভালোমতো বুঝতে পারে, তখনি তারা বেশ ভয় পেয়ে যায় এবং কাউকে কিছু না বলেই এই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়! আবির সাহেব ঘটনাটা বুঝতে পারে এবং বেশ অবাকও হন। তিনি নিজেও একজন ডাক্তার।

কিন্তু তিনি তার পুরো জীবনে এইরকম অদ্ভুত বাচ্চা দেখেনি ! এরপর আবির সাহেব এটা ভেবে ভয় পায় যে, হয়তো ঐ আয়া গুলোর মাধ্যমে এই বিষয়টা সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে যাবে! কিন্তু অদ্ভুতভাবে আবির সাহেব যখন সেই আয়াগুলোর খোঁজ নিতে যায় তখন জানতে পারে যে ঐ আয়াগুলো যারা শম্মীকে কয়েকদিন করে দেখাশোনা করেছিলো!

তারা এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই যার যার বাড়িতে আত্মহত্যা করে মারা যায়। আবির সাহেব কিছুই বুঝতে পারে না তখন! তাই ভয়ে ঐ শহর ছেড়ে এই নতুন শহরে চলে আসেন এবং এরপর থেকে বাড়িতে আর কোন আয়া বা কাজের লোক রাখেনা আবির সাহেব।

তিনি নিজেই শম্মীকে লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যদিও এরপর থেকে শম্মীর ঐ অদ্ভুত রক্ত চুষে খাওয়ার ব্যাপারটা তিনি আর লক্ষ করেননি। এরপর শম্মীর যখন বয়স ১ বছর। একদিন শম্মীকে সারা বাড়ি খুঁজে পেলেন না আবির সাহেব!

এরপর খুঁজতে খুঁজতে দেখলেন শম্মী খাটের নিচে লুকিয়ে একটা জীবন্ত টিকটিকিকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। সেদিন আবির সাহেব শম্মীর এই হিংস্র রুপ দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো!

এরপর আবির সাহেব প্রায়ই লক্ষ করতেন শম্মী সাধারণ খাবার মোটেও পছন্দ করতো না! সে বিভিন্ন সময় লুকিয়ে লুকিয়ে জীবন্ত টিকটিকি বা
ইদুঁরকে ছিড়েছিড়ে খেতো।

এরপর যখন শম্মীর ৩ বছর বয়স তখন একদিন আবির সাহেব লক্ষ করলেন যে শম্মীর এক ধরণের অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে! যার মাধ্যমে সে যেকোন প্রাণিকে বশ করে তার কাছে আহ্বান করতে পারে।

এরপর বেশ নিষ্ঠুর হয়ে ছুরি দিয়ে সেই প্রাণিগুলোকে মেরে তাদের রক্ত আর মাংস খায় সে। প্রথম কয়দিন বিভিন্ন পাখি, এরপর বেড়াল এইভাবে নানান ছোট প্রাণিদের বশ করে তাদের কাঁচা মাংস খেতো শম্মী! প্রথমে কয়েকবার আবির সাহেবকে লুকিয়ে এসব করলেও এরপর আবির সাহেবের সামনেই এই পৈশাচিক কাজ শুরু করে শম্মী।

আবির সাহেব নির্বাক দর্শকের মতো শুধু তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখে সে দৃশ্য ! আবির সাহেব বুঝতে পারে না যে তার কী করা উচিত। শম্মী তার একমাত্র মেয়ে । তাই তাকেতো আর ফেলে দেওয়া যায় না। এইদিকে তার এই সমস্যাটা এতটাই অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক যে এইগুলো আবির সাহেব কাউকে বলতেও পারছে না।

শম্মীর এই অদ্ভুত আচরণ যদি সবার মাঝে জানাজানি হয়ে যায় তাহলে হয়তো তাদের বাঁচাটাই মুশকিল হয়ে যাবে শম্মী!! তাই এই অদ্ভুত ঘটনাটা একান্তই গোপন রাখেন আবির সাহেব।

পুরো সমাজ থেকে লুকিয়ে রাখেন তার মেয়ে শম্মীকে । যদিও শম্মী এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তার বয়স যতো বাড়ছে ততোই সে আরো হিংস্র আর ভয়ানক হয়ে উঠছে ! এখন শম্মীর বয়স প্রায় ৬ বছর।
.
এখনো শম্মীর স্বভাবের বিন্দুমাত্রও কোন পরিবর্তন ঘটেনি। সে এখনো টিকটিকি, ইদুঁর , গাছের পাখি, বেড়াল ইত্যাদি ছোটছোট প্রাণিকে হত্যা করে কাঁচাই ছিড়েছিড়ে খায়। সে বর্তমানে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠছে!

তার এখন বর্তমানে মানুষের মাংস খাওয়ার নেশা উঠেছে ! আবির সাহেব জানেন যে, শম্মীর একবার যেটার নেশা উঠে সেটা সে করেই ছাড়ে। বড্ড জেদ তার! তাও মানুষের মাংস নিয়ে মিথ্যা কথা বলে শম্মীর মনযোগ নষ্ট করতে চাইছিলো আবির সাহেব!

কিন্তু কোন লাভ হলো না! শম্মী মাংসের আশা করেই রাতে ঘুমিয়ে পড়লো! আবির সাহেব নিজেও জানেন না যে সকালে কী হতে চলেছে?! আবির সাহেব শম্মীকে বুঝতে মাজেমধ্যে শম্মীর সাথে শম্মীর মতোই পৈশাচিক কথা-বার্তা বলতে থাকেন।

কিন্তু তাও তিনি শম্মীকে বুঝতে পারেন না। আবির সাহেব ভাবতে থাকেন ৬ বছর বয়সের একটা মেয়ে যদি এতটা হিংস্র আর ভয়ানক হয়, তাহলে সে আরো বড় হলে কতটা ভয়ংকর হতে পারে!! এটা ভাবতেই ভয়ে তার গাঁ শিহরিয়ে উঠলো!
.
রাত এখন প্রায় ১১ টা বাজে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আবির সাহেব জানালার পাশে বসে বসে বৃষ্টি দেখছেন। আর কাঁদতে কাঁদতে ভাবছিলেন যে, কী দোষ ছিলো তার?!

কেনো ইবা তার ঘরেই এমন একটা অদ্ভূত ধরণের মেয়ের জন্ম হলো? কী পাপের সাজা এটা?! একটা বাচ্চা মেয়ের ভেতর এতটা হিংস্রতা আর নিষ্ঠুরতা আসলো কিভাবে? শম্মী কী আর কখনো সুস্হ্য হয়ে উঠবে না?

সে কী আর ৮-১০ টা মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করবে না?
শম্মী কেন এই রকম পিশাচিনী হলো? আর তাকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করার কী কোনই উপায় নেই?

সৃষ্টিকর্তা কী কাউকে পাঠাবে না তাদের এই রকম অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দিতে? কেউ কী তাদের সাহায্য করতে পারে না?
.
জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে এইসবই ভাবছিলেন আবির সাহেব। এরপর হঠাৎ কারো জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেলেন আবির সাহেব ।

আবির সাহেব বেশ চমকে উঠলেন! এতরাতে বাড়ির ভেতর কে এসেছে? এরপর দ্রুত গিয়ে দরজাটা খুললেন। দরজাটা খুলতেই আবির সাহেব দেখলেন একজন ভদ্রলোক পুরো বৃষ্টিতে ভিজে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে!

আবির সাহেব কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে লোকটাকে প্রশ্ন করলেন:
-কে আপনি? কী চান এতোরাত্রে?
.
লোকটা কিছুটা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলো:
-হ্যালো। আমি মিসির আলী।

আমি একজন ডিটেক্টিভ । আমার গাড়িটা হঠাৎ আপনার বাড়ির সামনে এসে নষ্ট হয়ে গেছে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখছি না! আমি কী আজকের রাতটা আপনার বাড়িতে থাকতে পারি?

লোকটা কিছুটা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলো:
-হ্যালো। আমি মিসির আলি। আমি একজন ডিটেকটিভ । আমার গাড়িটা হঠাৎ আপনার বাড়ির সামনে এসে নষ্ট হয়ে গেছে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখছি না! আমি কী আজকের রাতটা আপনার বাড়িতে থাকতে পারি?

লোকটার কথা শুনে আবির সাহেব বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। আবির সাহেব একবার ভাবলেন, বাড়িতে এখন সে আর তার মেয়ে শম্মী ছাড়া আর কেউ নেই। তাই এতোরাত্রে একজন অপরিচিত লোককে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়াটা কী ঠিক হবে? এরপর আবার ভাবলেন, বাহিরে আসলেই অনেক বৃষ্টি হচ্ছে! লোকটার পক্ষে এখন তার বাড়িতে যাওয়াটাও সম্ভব না। এছাড়াও লোকটাকে দেখেও বেশ ভদ্রমতো লাগছিলো। আর লোকটা যখন বিপদে পড়ে নিজে থেকেই সাহায্যের জন্য এসেছেন তাহলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত হবে না!

এরপর আবির সাহেব মিসির আলি সাহেবকে নিজের বাড়ির ভেতর নিয়ে আসলেন। বৃষ্টিতে মিসির আলি সাহেবের পুরো শরীর ভিজে গিয়েছিলো। তাই আবির সাহেব তাকে একটা গামছা আর লুঙ্গী দিলেন। এরপর মিসির আলি সাহেব ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলেন।
.
মিসির আলি সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। বাড়িটা ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। বাড়ির ভেতরে ২টা ইউনিট। বাড়িটা বেশ বড়। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে বাড়িতে কোন বড় মেয়ে মানুষ বা কাজের লোক নেই। কারণ বাড়িটা বেশ অগুছালো ছিলো । মেয়ে মানুষ থাকলে আর কিছু করুক আর না করুক। বাড়িটা অন্তত গুছানো থাকতো। এছাড়া কোন কাজের লোক থাকলেও বাড়িটা গুছিয়ে রাখতো।মিসির আলি সাহেব এটা ভেবে বেশ অবাক হলেন যে এতো বড় বাড়িতে শুধু এই লোকটা একা থাকে!
অবশ্য হয়তো লোকটার একা থাকার কথা না! লোকটার সাথে হয়তো তার কোন বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে থাকে। কারণ লোকটার চেহারা দেখেই বোঝা যায় যে লোকটা নিস্বঙ্গতায় ভুগছে না!
.
এরপর আবির সাহেব ২কাপ কফি নিয়ে এসে এক কাপ মিসির আলি সাহেবকে দিলেন এবং অন্য কাপ নিজে পান করতে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষণ তারা কেউ কারো সাথে কোন কথা বললো না। দুজনেই দুজনকে পর্যবেক্ষণ করছিলো। মিসির আলি সাহেব, আবির সাহেবের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছিলো লোকটাকে ভালোমতো জানার জন্য। আর আবির সাহেব মিসির আলি সাহেবকে পর্যবেক্ষণ করছিলো লোকটা কী আসলেই সুবিধার কিনা এটা জানতে। আবির সাহেব এবং মিসির আলি দুজনেই নীরবতা প্রেমি। খুব একটা অপ্রয়োজনে কথা বলেন না তারা। তারা দুজনেই স্বাভাবিক ভাবে বসেই নীরবে একে অপরকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছিলো। যদিও লোকটাকে নিয়ে আবির সাহেব একটু বেশিই আতংকে ছিলেন ।
অচেনা অপরিচিত একটা লোক তার ঘরের ড্রইং রুমে বসে আছে এতরাতে! এটা ভাবতেই তার বেশ ভয় লাগে!

এরপর হঠাৎ নীরবতা কাটিয়ে মিসির আলি সাহেব আবির সাহেবকে প্রশ্ন করলেন:
-আচ্ছা! আপনার স্ত্রী কিভাবে মারা গিয়েছিলো?

লোকটার প্রশ্ন শুনেই আবির সাহেব বেশ চমকে উঠলেন। আবির সাহেব কিছুই বুঝতে পারলো না। তার স্ত্রী মারা গেছে এটা এই অচেনা লোকটা জানলো কিভাবে? এরপর কিছুটা অবাক হয়েই বললেন:
-আপনাকে কে বললো যে আমার স্ত্রী মারা গেছে? আপনি কী আমায় আগে থেকেই চিনেন?
– না। আজই আপনার সাথে প্রথম পরিচয় হলো। অবশ্য এখনো পর্যন্ত আপনার নামটাই জানা হলো না!
-ও সরি! আমার নাম আবির চৌধুরী । কিন্তু আপনি বুঝলেন কী করে যে আমার স্ত্রী মারা গেছে?

-প্রথমতো আপনি ছাড়া যদি ঘরে অন্য কেউ থাকতো তাহলে এতক্ষণে নিশ্চই একবার হলেও আমায় দেখতে আসতো। মেয়েদের কৌতুহলতা একটু বেশিই থাকে। আর বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে বেশ অগুছালো। মানে বাড়িতে হয়তো আপনি ছাড়া আর কোন মেয়ে মানুষই থাকে না। থাকলেও হয়তো বাচ্চা থাকে । আর আপনাকে দেখেও মনে হচ্ছে না অবিবাহিত। তার মানে আগে স্ত্রী ছিলো কিন্তু এখন নেই। অনুমান সে মারা গেছে! আর এছাড়াও আপনার পুরো বাড়িতে একটাও কাজের লোক নেই।

-বাহ! বেশ ভালো অনুমান শক্তিতো আপনার। হ্যাঁ আমার স্ত্রী মারা গেছে! আমাদের যখন প্রথম সন্তান হয় তখনি সে মারা যায়। এরপর থেকে আমি আর আমার মেয়ে এই বাড়িতে থাকি। আমার মেয়ের নাম শম্মী। বয়স ৬ বছর। আচ্ছা আপনার কাজটা কী?
-ডিটেকটিভ! রহস্যের পেছনে ছুটাই আমার কাজ। যেখানেই রহস্য থাকে সেখানেই আমি গিয়ে হাজির হই।

-বেশ মজারতো! কিন্তু এতে আপনার লাভটা কী হয়?
-এক ধরনের নেশা বলতে পারেন।
-হুম ভালোই। আর আমি একজন . . .
-ডাক্তার?
-অদ্ভুততো। আপনি বুঝলেন কী করে?
-আসলে আমরা দিনের বেশির ভাগ সময়ই আমাদের পেশার পেছনে ব্যায় করি। তাই আমাদের আচার-আচরণে সেই পেশার একটা প্রতিফলন ফুটে উঠে! আপনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে!

-আচ্ছা আপনি কোন ধরণের রহস্য নিয়ে কাজ করেন?
-যেকোন ধরণের রহস্য। খুন, চুরি । এছাড়া আমি একজন সাইক্রিয়াট্রিস্টও । তাই ভয়ানক মানসিক রোগি অর্থাৎ সাইকোদের নিয়ে কাজ করাটা বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও যে সকল রহস্যের সমাধান কারো কাছে থাকে না সেই সকল সমস্যা নিয়েও কাজ করি।
-আচ্ছা! আপনি যেহেতু একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট। তাহলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করাই যেতেই পারে।

আচ্ছা একটা শিশু জন্মের পর থেকেই অদ্ভুত ব্যবহার করা শুরু করে। তার স্বাভাবিক খাবারে মোটেও রুচি নেই। সে অদ্ভুত রকমের খাবার পছন্দ করে। যেমন, কোন প্রাণির রক্ত, কাঁচা মাংস ইত্যাদি। সে বড় হওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীর আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠে! এমন কোন বাচ্চার বা শিশুর কথা কী আপনি কখনো শুনেছেন বা দেখেছেন?
-আচ্ছা, আপনার কী কোন বিষয়ে আমার থেকে সাহায্য চাই?

-ইয়ে মানে না! আমি এমনিতেই বলছিলাম। আমাকে একজন এইরকম একটা ঘটনা বলেছিলোতো তাই! বাদ দিন! আচ্ছা আপনার কফিতো শেষ আপনাকে কী আরেক কাপ কফি দিবো?
-না। তবে বৃষ্টিতে আমার সিগারেটের প্যাকেটটা পুরো ভিজে একাকার হয়ে গেছে! একটা সিগারেট হবে?

এরপর মিসির আলি সাহেব সিগারেট টানতে টানতে বাড়েবাড়ে আড়চোখে আবির সাহেবের দিকে তাকাচ্ছিলো। আবির সাহেবও প্রসঙ্গটা পাল্টে এ বিষয়ে আর কোন কথা বলেন না। এমনকি আবির সাহেব ভয়ে মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে থাকে। মিসির আলির সাথে আর বেশি কথা বলে না সে।

আবির সাহেব, মিসির আলির চোখের দিকেও তাকায়না। আবির সাহেব বুঝতে পারেন যে মিসির আলির একটা অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে মানুষকে পড়ে ফেলার। হয়তো তার চোখের দিকে তাকালেই মিসির আলি সাহেব তার সম্পর্কে সব সত্যিটা জেনে যাবেন। আবির সাহেব প্রথমে একবার ভেবেছিলেন লোকটা বেশ বুদ্ধিমান এবং যেহেতু রহস্য নিয়ে কাজ করে।

তাহলে হয়তো সে তার মেয়ের এই অদ্ভুত আচরণের রহস্য উদঘাঁটন করতে পারবেন! কিন্তু তখনো আবির সাহেব তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি। তাই আবির সাহেব তার মেয়ের অদ্ভুত ব্যবহারের পুরো ঘটনাটা লুকিয়ে যায় মিসির আলী সাহেবের কাছ থেকে।আবির সাহেব ভাবেন এই বিষয়টা যদি মিসির আলি সাহেবকে তিনি বলেন এবং মিসির আলি সাহেবও অন্যদের বলে দেয় তাহলে তাদের এই বাড়িটাও ছেড়ে চলে যেতে হবে!!

এরপর দেখতে দেখতে ভোর হওয়ার আগেই বৃষ্টি থেমে যায় এবং মিসির আলি সাহেব , আবির সাহেবকে একেবারে ভোর বেলাতেই ধন্যবাদ আর বিদায় দিয়ে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর এলাকারই একটা গ্রেজ থেকে গাড়িটা ঠিক করে তার বাড়ির পথে রওনা হয়। শম্মী তখনো ঘুমিয়ে ছিলো।

তাই শম্মী মিসির আলি সাহেবের সাথে পরিচিত হতে পারেনি। অবশ্য মিসির আলি সাহেব, আবির সাহেবকে বিদায় দেওয়ার আগে কী মনে করে যেনো নিজের ভিজিটিং কার্ড আর বাড়ির ঠিকানাটা দিয়ে এসেছিলো আর বলেছিলো, প্রয়োজন হলে অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন।

আবির সাহেব সকাল সকাল বেশ কিছুক্ষণ মিসির আলি সাহেবকে নিয়ে ভাবতে থাকেন। ভাবেন, লোকটা বেশ অদ্ভুত ধরনের এবং বেশ বুদ্ধিমান। আবির সাহেব ভেবেছিলো শম্মীর মতো অদ্ভুত বাচ্চাদের আচরণের কথা যে কাউকে বললেই সে হেসে উড়িয়ে দিবে। কিন্তু মিসির আলি সাহেব হেসে উড়িয়ে দিলো না।

উল্টো তাকে বললো কোন সাহায্য চাই কিনা?! তাহলে নিশ্চই ঘটনাটার কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে সে! হয়তো সে আবির সাহেবকে সাহায্যও করতে চায় । আবির সাহেব ভাবেন, এখন কী তার উচিত মিসির আলি সাহেবকে সব সত্য ঘটনা খুলে বলা? হয়তো সেই একমাত্র এই রহস্যের উদঘাটন করতে পারে! সেই হয়তো শম্মীকে এইরোকম
অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারে!

আবির সাহেব একটা চেয়ারে বসে বসে এইসব কথা ভাবছিলেন। এরপরেই হঠাৎ তার পেছন থেকে শম্মী এসে বললো:
-এখানে বসে বসে কী ভাবছো বাবা?

আবির সাহেব প্রথমে কিছুটা আৎকে এরপর অনেকটা স্বাভাবিক হয়েই উত্তর দিলেন:
-কিছু না মা। কেমন ঘুম হয়েছে? ভালো?
-হ্যাঁ বাবা। আমি এখন ছাদে যাবো আর আকাশ দেখবো!!

এরপর শম্মী ছুটতে ছুটতে ছাদে চলে গেলো। আবির সাহেব যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন! আসলে আবির সাহেব ভেবেছিলো শম্মী মনে হয় ঘুম থেকে উঠেই মানুষের মাংস খাওয়ার জন্য বায়না ধরবে। কিন্তু শম্মী এরকমটা করেনি! সে পুরো স্বাভাবিক আচরণ করেছে! তাই আবির সাহেব বেশ সস্তি বোধ করলেন।

কিন্তু দিনে একবারতো তার এই মাংসের কথা মনে পড়বেই! তখন তিনি কী করবেন?
এর উত্তর তার কাছে নেই!!

এরপর আবির সাহেব ভাবলেন, আর কোন উপায় নেই! এতো বড় সমস্যা নিয়ে এইভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব না! শম্মী যত বড় হবে তার সমস্যা তত আরো বেশি করে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠবে!!

এই সমস্যাটার কথা কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে। যে এই বিষয়টা নিয়ে মজা না উড়িয়ে বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিবেন এবং যে করেই হোক এই রহস্যের সমাপ্তি সে করেই ছাড়বে! এমন আর কেউ নেই! একমাত্র মিসির আলি সাহেবই হয়তো এই কথাটাকে সিরিয়াস ভাবে নিবে এবং সমাধান করার চেষ্টা করবে।

আবির সাহেব একরাতে মিসির আলি সাহেবকে বুঝতে না পারলেও ভালোমতো চিনতে পেরেছেন! এবার যেনো হঠাৎ মিসির আলি সাহেবের উপর আবির সাহেবের বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করলো এবং তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে আজ বিকালেই মিসির আলি সাহেবের সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যাবেন এবং তাকে সব ঘটনা খুলে বলবেন !

দুপুর ১টা বাজে। মিসির আলি সাহেব বিছানায় বসে বসে সিগারেট টানছেন। রতন নামের একটি ছেলে তার ঘর পরিস্কার করছে। রতনের বয়স ১৮ বছর। রতন ৩ মাস ধরে মিসির আলি সাহেবের বাড়িতে কাজ করে। সিগারেটটা শেষ করার পর মিসির আলি সাহেব রতনকে ডেকে বললো:

-আজ বিকেলের দিকে আবির চৌধুরী নামের একটি লোক আমার সাথে দেখা করতে আসবেন। উনি আসলে উনাকে বসার ঘরে বসিয়ে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে দিবে।
-ঠিক আছে বাবু। ( রতন )

এরপরে মিসির আলি সাহেব ঘুমিয়ে পড়লেন। রোজ দুপুরে ঘুমানো তার অভ্যাস । বিকাল ৪টা বাজতেই আবির সাহেব মিসির আলির দেওয়া ঠিকানা অনুসরণ করে মিসির আলির বাড়িতে এসে হাজির হলেন। আবির সাহেব ভাবলো, সে যেহেতু মিসির আলিকে কিছু না বলেই তার বাড়িতে চলে এসেছে। এটা দেখে নিশ্চই মিসির আলি বেশ চমকে উঠবে। মিসির আলিকে বেশ চমকে দেওয়া যাবে!

এরপর আবির সাহেব বাড়ির কলিং বেলটা বাজালেন। কলিং বেল বাজাতেই রতন দ্রুত এসে দরজাটা খুলে দিলো। এরপর তাকে দেখে রতন কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর বললো:
-আপনের নাম আবির চৌধুরী? ভেতরে আইসা বসেন। বাবু ঘুমাইতাছে। বাবু কইছিলো আপনে আইলে ডাইকা দিতে।

রতনের কথাটা শুনে আবির সাহেব বেশ চমকে উঠলেন। মিসির আলি সাহেব আগে থেকেই কী করে জানলো যে তিনি আজকে তার বাড়িতে আসবেন?

আবির সাহেব ১৫ মিনিট বসতেই মিসির আলি সাহেব ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তার সামনে এসে হাজির হলো। এরপর আবির সাহেব কিছুটা অপ্রস্তুত ভাবেই মিসির আলি সাহেবকে প্রশ্ন করলেন:
-আচ্ছা, আপনি আগে থেকেই জানতেন যে আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইতে আসবো?

এরপর মিসির আলি সাহেব রতনকে ২ কাপ কফি দিতে বলে, সিগারেটে আগুন ধরাতে ধরাতে বললেন:
-হ্যাঁ। জানতাম আপনি আসবেন।
-কিন্তু কিভাবে? আমিতো আপনাকে আমার কোন সমস্যার কথাই বলিনি! আর এখানে আসার সিদ্ধান্ততো নিলাম আজ সকাল বেলা। আপনি বুঝলেন কিভাবে যে আমি আসবো?
-গতকাল রাতেই বুঝেছি এবং আপনি নিজের অজান্তেই আপনার সমস্যার কথা আমায় বলে দিয়েছেন!

এতো বড় একটা বাড়িতে শুধু আপনি আর আপনার মেয়ে একা থাকেন! কোন কাজের লোক, আয়া কিংবা দাড়োয়ানও নেই! এটা দেখেই প্রথমে খটকা লেগেছিলো। তখনি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে হয়তো আপনার বাড়িতে কোন সমস্যা রয়েছে। এরপর নিশ্চিত হলাম যখন আপনি একটা অদ্ভুত শিশু সম্পর্কে আমায় প্রশ্ন করছিলেন তখন! আপনি যখন প্রশ্নটা করছিলেন আপনার কন্ঠের সুর তখন বেশ নরম হয়ে যায়।

এমন ভাবে প্রশ্নটা করেছিলেন যে, মনে হচ্ছিলো আপনার কোন আপনজনের এই রকম অদ্ভুত আচরণের সমস্যাটা রয়েছে। আর আপনার আপন বলতেতো শুধু আপনার একমাত্র মেয়েই ! যদিও আপনি প্রসঙ্গটা তখনি পাল্টে ফেলেছিলেন! আপনার বলা কথাগুলোর সুত্র ধরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনার মেয়ের সমস্যাটা কী রকম হতে পারে!!

তাই আমি আপনাকে বলেছিলাম যে আপনার কোন সাহায্য চাই কিনা? যাতে করে আমি পুরো ঘটনাটা জানতে পারি। আর পুরো ঘটনাটা জানা ছাড়া এই রহস্যের কোন সমাধাণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব না। আমি জানতাম যে,

সেই শিশুটার কথাটা আমি সিরিয়াসলি নেওয়ার কারণে আপনি আমাকে বিশ্বাস করবেন এবং আজ আমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলতে আসবেন। আর আপনিও এই রহস্যের সমাপ্তি চান । আর আমিও রহস্যের পাগল। যেখানে রহস্য থাকে সেখানে আমিও থাকি।

-আমি আপনাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলছি! আপনি প্লিজ আমার মেয়েটাকে সুস্হ্য করে দিন! যত টাকা লাগে আমি দিবো! আমার এই রহস্যের সমাধান চাই ই চাই।
-আপনি হয়তো জানেন না! আমি কোন কেসের জন্য টাকা নেই না। রহস্য উদঘাটন করাটা আমার নেশা। পেশা নয়! আপনি আমাকে আপনার মেয়ের পুরো ঘটনাটা খুলে বলুন।

এরপর আবির সাহেব শম্মীর জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঘটা সব ঘটনা মিসির আলি সাহেবকে খুলে বলেন। শুধু সেই আয়াগুলোর আত্মহত্যা করার ঘটনাটা লুকিয়ে যান। মিসির আলি সাহেব পুরো ঘটনাটা শুনে বলেন:

-রহস্য যেখানে রয়েছে এর সমাধানও সেখানেই রয়েছে! এই রহস্য উদঘাঁটনের জন্য আমাকে আপনার মেয়ের সাথে মিশতে হবে তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে হবে। আমার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জেগেছে সেগুলোর উত্তর একমাত্র আপনার মেয়ের কাছেই আছে!

তার জন্য আমাকে তার সাথে কিছুদিন থাকতে হবে!!
-বেশতো! আপনি তাহলে আবার আমার বাড়িতে চলে আসুন। আমার মেয়ের সাথে থেকে যা জানার জেনে নিন। কবে আসছেন তাহলে আবার আমার বাড়িতে?
-আগামীকাল সকালে যাবো। কিন্তু আপনার মেয়েকে আমার ব্যাপারে কিছুই বলবেন না। আমাকে আপনার বন্ধু হিসেবে তার কাছে পরিচয় করিয়ে দিবেন।
-ঠিক আছে! তাহলে কাল আপনার অপেক্ষায় থাকবো মিসির আলি সাহেব।

এতটুকু কথা বলেই আবির সাহেব মিসির আলিকে বিদায় দিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন। মিসির আলি সাহেব সিগারেট ধরাতে ধরাতে আবির সাহেবের মেয়েটার কথা চিন্তা করতে থাকেন। আর ভাবেন, একটা ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে কী কখনো এতটা হিংস্র হতে পারে?

এইদিকে আবির সাহেবের বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যাঁ হয়ে যায়। আবির সাহেব ভাবেন শম্মী পুরো বাড়িতে একা রয়েছে। খালি বাড়ি পেয়ে শম্মী যে কী করছে এটা তারও জানা নেই। আবার না জানি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। এরপর আবির সাহেব তার এলাকাতে পৌছাতেই দেখলেন তার বাড়ি থেকে একটু দুরেই অনেকগুলো মানুষ ভীর করে দাঁড়িয়ে আছেন!

এরপর আবির সাহেব সেই ভীরের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে একটা মহিলা বসে বসে কাঁদছে। লোকেরা বলাবলি করছে, মহিলাটির একটা ৯ মাসের বাচ্চা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মহিলাটি নাকি তার পাশেই মেয়েটাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখে ফোনে কথা বলছিলো।

এরপর হঠাৎ করে খেয়াল করে তার পাশে তার মেয়েটা নেই। এরপরে পুরো রাস্তা খুঁজেও সেই বাচ্চা মেয়েটাকেকে পাওয়া গেলো না। আবির সাহেব কথাটা শুনে বেশ কষ্ট পেলেন। এরপর তার নিজের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
শম্মীর জন্য তার দুঃশ্চিন্তা আরো বেড়ে যায়!

এরপর বাড়ির গেটের সামনে যেতেই আবির সাহেব বেশ চমকে যায়। দেখলেন গেটে তালা দেওয়া নেই। গেটটা খোলা রয়েছে। এরপর ঘরের দিকে যেতেই দেখে ঘরের দরজাটা ভেতর দিক থেকে হালকা করে চাপিয়ে দেওয়া। কিন্তু আবির সাহেবের স্পষ্ট মনে আছে যে , বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভালো করে সে ঘরের দরজাটা বাহির থেকে আটকে রেখে গিয়েছিলো। যাতে শম্মী বাড়ির বাহিরে যেতে না পাড়ে। তাহলে দরজাটা বাহির থেকে খুললো কে? তাহলে কী সত্যি সত্যিই শম্মীর কোন বিপদ হয়েছে?

এরপর আবির সাহেব অনেকটা ভয়ের সাথে দ্রুত দরজাটা ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। এরপর আবির সাহেব যা দেখলেন তা দেখার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। দেখলো একটা ছোট্র বাচ্চা মেয়ের মাথাহীন রক্তাক্ত শরীর মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আর শম্মী সেটাকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। আবির সাহেবকে দেখেই শম্মী একটু মিষ্টি করে হেসে বললো:

-বাবা, তুমি ভুল ছিলে! মানুষের মাংস খেতে তিতা লাগে না। মানুষের মাংস আর রক্ত পৃথিবীর সবচেয়ে সুঃস্বাদু খাবার। আমি এখন থেকে রোজ মানুষের রক্ত আর মাংসই খাবো। .

. . . . . চলবে . . . . .

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here