ভয়ংকর_মৃত্যুপুরী,পর্বঃতৃতীয়

গল্পঃভয়ংকর_মৃত্যুপুরী,পর্বঃতৃতীয়
লেখাঃMd Taraju Islam(Shihab)

সাবিলার পা ওই হাত টেনে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।এদিকে রিফার হাত ক্রমশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।রিফা ব্যথায় কান্না করছে।সিহাব রিফার হাত টেনে ধরা হাতে নিজের হাত দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো।হঠাৎ সেই কাটা হাত রিফার হাত ছেড়ে দিলো।এরপর সিহাব রিফাকে কোল থেকে নামিয়ে বলল
->আম্মু তুমি এখানে দাড়াও।
->আচ্ছা।
সিহাব সাবিলার পায়ের কাছে বসে সাবিলা পা ধরে টানতে লাগলো।সামনে দেখলো একটা লাঠি পড়ে আছে সিহাব সেটা হাতে নিয়ে সাবিলার পা টেনে ধরা হাতে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করলো আর সাথে সাথে সেই হাত সাবিলার পা ছেড়ে দিলো।সাবিলা হাপাচ্ছে।সিহাব বলল
->আপনি ঠিক আছেন?
->হুম ঠিক আছে।এই জায়গা অনেক ভয়ংকর।
->এখান থেকে যাওয়া যাক।
সিহাব আবার রিফাকে কোলে তুলে নিলো।সামনে অনেক গুলো হাত মাটি ভেদ করে বের হচ্ছে।ওরা সেগুলো পাশ কাটিয়ে দ্রুত সামনে দিকে যেতে লাগলো।যত এগিয়ে যাচ্ছে তত ভয়ংকর সব আওয়াজ ওদের কানে আসছে।আসলে ওরা মৃত্যুপুরীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নাকি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না।এমন সময় দেখলো ওদের সামনে একজন দাঁড়িয়ে আছে।হাতে একটা ছুরি।সিহাব আর সাবিলা বেশ ভয় পেলো।সিহাব রিফাকে সাবিলার কোলে দিলো।লোকটি বেশ ভয়ংকর ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।মুখ হতে রক্ত বের হচ্ছে আর কিসব পোকা গিজগিজ করছে।সাবিলা রিফার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে ফেললো।যাতে সে ভয় না পায়।সিহাব বলল
->কে আপনি?
সে কোন কথা না বলে মুখ দিয়ে শুধু আওয়াজ বের হচ্ছে।এক পা এক পা করে সে এগিয়ে আসছে সিহাব আর সাবিলার দিকে।সিহাব সাবিলাকে ইশারা করলো পিছনে ফিরে যাওয়ার জন্য।সাবিলা পিছনে ফিরে যাবে কিন্তু দেখলো এক সঙ্গে অনেক গুলো কাটা হাত ভাসতে ভাসতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।অবস্থা একদিম বেগতিক।পিছনে কাটা হাত সামনে ভয়ংকর সে লোক।ডানে বামে ঘন জঙ্গল।বাঁচার কোন পথ নেই ওদের।সিহাব দেখলো হাত গুলো দ্রুত সাবিলার দিকে এগিয়ে আসছে।রিফা ভয়ে কাঁপছে।হঠাৎ সিহাব চিৎকার করে বলল
->আপনি মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
সিহাবের কথা শুনে সাবিলা আর দেরি না করে মাথা নিচু করে বসে পড়লো।আর তখন সেই হাত গুলো গিয়ে সিহাবের সামনে থাকা ভয়ংকর ওই লোকটির ওপর গিয়ে তাকে চেপে ধরলো।এই সুযোগ আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ওরা তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।
একটু দুর আসতে জঙ্গলের ঘনত্ব কমে এলো।আর সেই ভয়ংকর আওয়াজ গুলো কমে আসলো।একটু দুর আসতে দেখলো ওদের সামনে বিশাল এক নদী।নদীর ওপারে জনবসতি দেখা যাচ্ছে কিন্তু কোন মানুষজনকে দেখা যাচ্ছে না।সাবিলা বলল
->এবার হয়তো আমরা এখান থেকে যেতে পারবো কিন্তু ওই লোক গুলোর কি হবে বুঝতে পারছি না।
->ভাগ্য ভালো হলে ওরাও বেঁচে যাবে আর না হলে হয়তো আর ফিরে আসবে না।
->হুম।এখন এই রাতের বেলা ওই পাড়ে তো যাওয়া যাবে না কারন আমাদের কাছে এখন কোন নৌকা নেই।
->সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
->হুমম।
সিহাব আর সাবিলা নদীর এক ধারে বসলো।নদীতে হালকা স্রোত রয়েছে।চাঁদনী রাতে নদীর ঢেউয়ের কুল কুল শব্দ শুনতে দুইজনের বেশি ভালো লাগছে।সাবিলা একটু পর পর সিহাবের দিকে তাকাচ্ছে।রিফা দুইজনের মাঝখানে বসে আছে।সাবিলা বলল
->কেন জানি মনে হচ্ছে আপনাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।
সাবিলার কথা শুনে সিহাব হাসলো।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল
->ভালো করে দেখে বলুন তো কোথায় দেখেছেন?
->আমার ঠিক মনে পড়ছে না।
->আজ থেকে দুই বছর আগে আপনাকে আমার পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো কিন্তু আমার তেমন আয় রোজকার ছিলোনা বলে মেনে নেইনি।
সাবিলা বেশ অবাক হয়ে গেলো।আগের থেকে সিহাব অনেকটা মোটা সেই সাথে দাড়ি অনেক বড় যে কারনে চিন্তে ওর অসুবিধা হয়েছে।সাবিলা বলল
->এজন্য আপনাকে চেনা চেনা লাগছিলো।তো বিয়ে করেননি আপনি আর বিদেশ কেন যাচ্ছিলেন?
->না এখনো বিয়ে করিনি।আজকাল তো ছেলের টাকা-পয়সা না থাকলে কেউ সহজে বিয়ে দিতে চাইনা।তাই ভাবলাম বিদেশ গিয়ে সেখানে ৪-৫ বছর থেকে দেশে এসে তখন বিয়ে করবো কিন্তু আর হলো কই?
->আসলে প্রতিটা মেয়ের মা-বাবা চায় যে তার মেয়ে যেন সবসময় সুখে থাকে এজন্য এমনটা করে।
->এমনটা করতে গিয়ে অনেক সময় বাছবিচার না করে নিজের মেয়েকে এমন কারো হাতে তুলে দেয় যার কারনে তার জীবনটা নরক হয়ে যায়।
->ঠিক বলছেন।যেমন আমার হয়েছে।
->মানে?
তখন সাবিলা ওর পুরো ব্যাপারটা সিহাবকে বললো।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছলো।তখন সিহাব বলল
->অতীতকে নিয়ে কষ্ট পাবেন না কখনো।এর চেয়ে ভালো হবে সব ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
->হুমম।
রিফা চুপ করে সাবিলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।তখন সিহাব রিফাকে জিজ্ঞেস করলো
->আম্মু তোমার বাসায় কে কে আছে?
রিফা তখন উঠে বসলো।তারপর বলল
->আমি আর আম্মু থাকতাম।আর দাদি থাকে।
->আর তোমার আব্বু কই?
তখন রিফা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
->আব্বু ওই যে ওই তারাদের দেশে চলে গেছে।আমার আম্মুও মনে হয় আব্বুর কাছে গেছে তাই না আংকেল।
এতটুকু মেয়ের এই কথার জবাবে তারা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।সাবিলা রিফাকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল
->মন খারাপ করো না আম্মু।আমি আছি তো তোমার সাথে।এখন থেকে সব সময় আমি তোমার সাথে থাকবো দেখো।
সাবিলার কথা শুনে রিফা খিলখিল করে হেসে উঠলো।রিফা সাবিলার গাল টেনে বলল
->তুমি খুব মিষ্টি আন্টি।
->আমার রিফা আম্মু আরো বেশি মিষ্টি।
এই বলে দুইজন এক সাথে খিলখিল করে হেসে উঠলো।সিহাব দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে।সিহাব মনে মনে ওই লোক গুলোর কথা ভাবছে,,ওরা এখন কোথায় আছে, কি করছে কে জানে?সাবিলা সিহাবকে বলল
->আপনার কি মনে হয় ওই নদীর পাড়ে কেউ থাকে?
->মনে হচ্ছে নিশ্চয় কেউ থাকে।
->আমার তা মনে হচ্ছে না কারন যদি কেউ সেখানে থাকতো তাহলে নিশ্চয় কোন না কোন ঘরে লাইট জ্বলতো।কিন্তু এরকম কিছু হয়নি।
->সকাল হলে আসল ব্যাপারটা বুঝা যাবে।
->রাত এখনো কতক্ষন আছে বোঝাও যাচ্ছে না।
->খু্ব বেশি রাত নেই মনে হয়।
সিহাব সাবিলার সাথে কথা বলছে।রিফা অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ রিফা দেখলো ওদের থেকে একটু দুরে একটা বাচ্চা দাড়িয়ে আছে একটা ছোট হাফপ্যান্ট পড়ে।সেই বাচ্চার ঘাড় ঘুরে রিফার দিকে তাকালো।সেই বাচ্চার চেহারা এতটা ভয়ংকর যে রিফা তার গলিত চোখ দুটো সহ্য করতে না পেরে জোরে চিৎকার করে বলল
->আন্টি দেখো ওই বাবু কি ভয়ংকর।
সাবিলা আর সিহাব সেদিকে তাকাতে সেই বাচ্চা একটা বিড়াল হয়ে জঙ্গলের দিকে দৌড় দিলো।সিহাব উঠে দাড়িয়ে পড়লো তারপর বলল
->এখানে আর থাকা যাবে না এখানে নিশ্চয় কোন না কোন বিপদ লুকিয়ে আছে।
->তাহলে আমরা এখন কোথায় যাবো।
->আমরা সোজা পথে হাঁটবো।এভাবে দেখি কোথায় গিয়ে পড়ি আমরা।
->ঠিক আছে।
সিহাবের কথা শোনা মাত্র সাবিলা উঠে পড়লো।তিনজনে মিলে নদীর ধার দিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।হঠাৎ তিনজন পিছনে তাকিয়ে দেখলো অনেকগুলো বিড়াল দুই পায়ে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ কাছে আসছে না।
একটু দুর যেতে ওদের কানে পানি জাল ফেললে যেরকম আওয়াজ হয় ঠিক সেরকম আওয়াজ আসলে।তারপর ওরা দুরে দাড়িয়ে দেখলো একটা জেলে নদীতে জাল ফেলছে।সিহাব বলল
->যাক এতক্ষণে একটা মানুষের দেখা পেলাম।
->সত্যি ওটা মানুষ তো নাকি?
->আরে মানুষ না হলে কেউ মাছ ধরতে পারবে নাকি?
->কি জানি।আমার কিন্তু বেশ ভয় করছে।
->ভয় নেই আমি আছি তো।চলো গিয়ে দেখি।
ওরা সেই জেলের দিকে এগিয়ে গেলো।জেলে কি কোন মানুষ নাকি অন্য কেউ?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here