ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:২০,২১

ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:২০,২১
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:২০

আশ্বিন মাথায় যেনো কোন কাজই করছে না।। যেভাবেই হোক মারিয়ার মুখ খোলার আগেই অধরাকে সরিয়ে ফেলতে হবে।। এতোদিন ধরে সবাই অধরার সুস্থতার জন্য কতো চেষ্টা করেছে,,,,এতোগুলো বছর ধরে সত্য গোপন করে অধরার ট্রিটমেন্ট করে গিয়েছে।। তার একটা ভুলের জন্য সবার এতো কষ্টের মূল্য নষ্ট করে দিতে পারে না আশ্বিন।।

সে দ্রুত লাইব্রেরি রুম থেকে বেরিয়ে হলরুমে প্রবেশ করে…
— “”মম।।। অধরা কোথায়??””

— মারিয়ার মা মুখ ভেংচি দিয়ে একটু খোঁচা মেরে বললো,,,””দেখো ছেলের কান্ড।। আমরা যে তাদের বাসায় এসেছি কোথায় একটু আমাদের খোঁজ খবর নিবে তা না করে অধরাকে খুঁজছে।। বলি,,অধরা কি বাচ্চা মেয়ে নাকি??””

— আশ্বিন মামির কথাটা পাত্তা না দিয়ে উল্টো জোরে চিৎকার করে,,,””মম!!! আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিইই।।।””

— মামুনি একটু অবাক হয়ে,,,,””অধরা আর মারিয়া তো অধরার রুমে গল্প করতে গিয়েছে।। আশ্বিন,,,বাবা কিছু কি হয়েছে??””

— আশ্বিন বিড়বিড় করে,,,,””মানে,,,অধরা এখন মারিয়ার সাথে আছে??? শিটটট।।।””

আশ্বিন দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে অর্ণবকে কল করে।। এদিকে হলরুমের সবাই অবাক হয়ে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।।।

— আশ্বিন অর্ণবকে কল করে,,,,””হ্যালো অর্ণব।।।
জলদি বাসায় চলে আয়।। নয়তো আজ সর্বনাশ হয়ে যাবে।।””

— অর্ণব একটু চিন্তিত কণ্ঠে,,,,””মানে?? কি হয়েছে আশ্বিন?? সব ঠিক আছে তো??? অধরা..??””

আশ্বিন সংক্ষেপে অর্ণবকে সবকিছু খুলে বললো।। সবটা শুনে অর্ণব এক মুহূর্ত দেরি না করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।।

🍁এদিকে….

অধরা মারিয়াকে নিয়ে নিজের রুমে এসেছে।। মারিয়া পুরো রুমটা ঘুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।। রুমের সম্পূর্ণ দেয়াল জুড়েই অধরার ছবি।।
কিছু ছবি অর্ণব আর পরিবারের সবার সাথে আর কিছু ছবি আশ্বিনের সাথে।।

— মারিয়া ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,,,,””ছোট বেলা থেকেই দেখছি তুমি আশ্বিনের সাথে অনেক বেশি ক্লোজ।।””

— অধরা চুপচাপ খাটের কোণে বসে,,,,””হুম।। আশ্বিন ভাইয়া ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক আপন।।””

— মারিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,,,,””ভালো।। আসলে কি বলতো,,,আশ্বিন একটু রাগী হলেও তারও তো একটা মন আছে নাকি? আর তোমার মতো এমন অসুস্থ মানুষদের কম বেশি সবাই ভালোবাসে।। মানে আরকি যত্ন নেয়।।””

— অধরা চোখ ছোট ছোট করে,,,,””আমার মতো এমন অসুস্থ মানে?? বুঝলাম না তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো মারিয়া আপু??””

— মারিয়া অধরার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে,,,,””এমন একটা ভাব দেখাচ্ছো যেন তুমি কিছুই জানো না।।।””

— “”নাহহ।। কি জানবো আমি?? তুমি সরাসরি বলো।।””

— মারিয়া অন্যদিকে ফিরে হাটতে হাটতে বললো,,,,””ছোট থেকেই দেখছি তুমি আশ্বিনকে পছন্দ করো।। বারবার শুধু তাকে নিজের মনের কথাই বলে গিয়েছো।।
কিন্তু আশ্বিন প্রতিবারের মতোই তোমার অনুভূতির কোন পাত্তাই দেয়নি।।

কখনো কি মনে হয়না?? আশ্বিন কেনো তোমার অনুভূতির মূল্য দেয়না??””

— অধরা খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে,,,,””আমি জানি,,,আশ্বিন ভাইয়া আমাকে অনেক পছন্দ করে।। হ্যা মানছি অন্যদের মতো সে তার অনুভূতির প্রকাশ করে না।। কিন্তু ভাইয়া ছোট থেকেই আমাকে সকল মুহূর্তে আগলে রেখেছে।।।””

— “”হুহহ,,,এটাই তো স্বাভাবিক।। একজন অসুস্থ মানুষকে সবাই একটু স্পেশাল ট্রিট করেই থাকে।।
তার মানে এই না যে তাকে সারা জীবনের জন্য নিজের করে নিতে চাইবে।।””

— অধরা রাগী কণ্ঠে,,,,,””বারবার অসুস্থ অসুস্থ কথাটা তুমি কেনো বলছো ?? আর এসব কথা বলে তুমি কি বোঝাতে চাইছো???””

— মারিয়া অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে,,,””হয়তো তুমি জানো না। নয়তো জেনেও না জানার ভান করছো অধরা।।

তোমার মতো একজন মানসিক ভারসাম্যহীনকে অসুস্থ বলবো না তো আর কি বলবো???””

— অধরা রেগে চিৎকার করে,,,,””মারিয়া আপুউউ।।।
এতোক্ষণ ধরে তুমি যা ইচ্ছা তাই বলে গিয়েছো,,,,কিন্তু এখন তোমার সীমা অতিক্রম করে ফেলছো।। তুমি আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারো না।।””

— “”সত্যি কথা শুনতে খারাপ লাগাই তো স্বাভাবিক।। আসলে কি বলো তো অধরা,,,,তোমার কি মনে হয়না তুমি পরিবারের সবার উপর বোঝা হয়ে আছো?? নিজের প্রয়োজনিয় কোন কাজও তুমি করতে পারো না।। সব কিছুতেই তোমাকে সবাই মিলে সাহায্য করে।।

আমার তো মাঝে মাঝে অর্ণবের জন্য খারাপ লাগে।। বেচারা এমনেই মা বাবাকে হারিয়েছে এখন আপন বলতে আছে একমাত্র বোন,,,তাও এমন প্রতিবন্ধী।। সো সেড।।””

— অধরা মারিয়ার এমন কথায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।। তবুও রাগী কণ্ঠে বললো,,,,””এনাফ,,,মারিয়া আপু।।। কিসের ভিত্তিতে তুমি আমাকে নিয়ে এসব বলছো??
আমি সবাইকে গিয়ে বলে দিবো তুমি আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছো।।””

অধরার কথায় মারিয়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি অবস্থা।। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে…

— “”বলে দিবে?? ওকে,,,যাও বলে দাও।।
মারিয়া প্রমাণ ছাড়া কোন কথাই বলে না।। কি যেনো বললে তুমি?? কিসের ভিত্তিতে আমি এই কথাগুলো বলছি?? ওকে দেখো তাহলে।।””

মারিয়া কথাটা বলেই তার ফোন থেকে কতগুলো ছবি বের করে অধরার সামনে ধরে।। অধরা ফোনটা হাতে নিয়ে এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে আছে।।

সেদিন মারিয়া বুদ্ধি করে অধরার রিপোর্টের ছবি তুলে রেখেছিলো।। এখন ছবিগুলো কাজে লাগিয়ে অধরার সত্যি প্রকাশ করে ফেললো।।

— অধরা এক মনে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,,,””এটা তো সেই রিপোর্ট!!! যেটা আশ্বিন ভাইয়ার বক্সে লেখেছিলাম।। এগুলো…।।।””

অধরা কোন কথা না বলে চুপচাপ তার রিপোর্টের ছবিগুলো দেখছে।। আর মারিয়া সামনে দাঁড়িয়ে ভিলেন হাসি দিচ্ছে।।

— মারিয়া অধরার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে,,,,””এখন হয়তো তুমি বুঝতে পারছো কেনো তুমি আশ্বিনের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেও পাত্তা পাও না।। তুমি আশ্বিনের বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ণবের বোন।।
আর সেই হিসেবে আশ্বিন তোমাকে সবসময় আগলে রাখেছে। এখন তুমি যদি এটা আবেগের বশে আশ্বিনের ভালোবাসা মনে করো,,,তাহলে সেটা তোমার বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।।

তুমি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন।। আশ্বিন তোমাকে আগলে রাখে,,,ভালোবাসে না।। কারণ আশ্বিন এতোটাও বোকা না যে তোমার মতো বোঝাকে নিজের কাধে নিবে।।””

অধরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মারিয়ার কথাগুলো শুনছে।। এই মুহূর্তে সে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।। এতোগুলো বছর ধরে তার পরিবার তাকে মিথ্যা বলে এসেছে।।

অর্ণবের কথা মতো অধরা মনে করতো সে একটু বাচ্চা স্বভাবের।। কিন্তু আজ বুঝতে পারছে সে আসলে মানসিক ভারসাম্য হীন।।

🍁এদিকে….

আশ্বিন তার বাসা থেকে দৌড়ে অধরার বাসায় এসে দেখে অধরা ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। আর মারিয়া খাটে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।।

আশ্বিন দৌড়ে এসে অধরাকে একটানে নিজের বুকে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।। মারিয়া হঠাত আশ্বিনকে দেখে এক লাফে খাট থেকে নেমে আসে।।

— আশ্বিন অধরাকে ছাড়িয়ে তার হাত দিয়ে আলতো করে অধরার গাল ধরে,,,,,””অধরা।। তুই ঠিক আছিস তো??””

অধরা এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।। এদিকে অধরার কোন উত্তর না দেওয়ায় আশ্বিন রাগী চোখে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে..

— “”তুই বাসায় যা।। পরে তোর সাথে কথা আছে।। যাহহ।।””

মারিয়া আশ্বিনের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলো যে সে কতোটা রেগে আছে।। মারিয়া কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।।
এদিকে,,,মারিয়া বেরিয়ে যেতেই অর্ণব রুমে প্রবেশ করে।।

— অর্ণব অধরার কাছে এসে,,,,””বোন কি হয়েছে?? সব ঠিক আছে তো??””

অধরা কোন কথাই বলতে পারছে না।। এক ধ্যানে নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে।।। আশ্বিন অধরার অবস্থা বুঝতে পেরে একটু স্বাভাবিক কণ্ঠে…

— “”অর্ণব।।। অনেক দিন হলো বাহিরে আইসক্রিম খেতে যাই না।। চল আজকে তুই আমি আর অধরা ঘুরে আসি।।””

— অর্ণব আশ্বিনের কথার মানে বুঝতে পেরে,,,,””ঠিক আছে।। আমি এখনি গাড়ি বের করছি।””

অর্ণব কথাটা বলে একটু এগিয়ে যেতেই অধরা আচমকা বলে উঠলো….

— “”ভাইয়া।।। আমি কি মানসিক ভারসাম্য হীন???””

অধরা হঠাত কথাটা বলায় আশ্বিন আর অর্ণব অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকায়।।

—চলবে❤

#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:::২১

অধরার হঠাত এই কথাটা বলায় আশ্বিন আর অর্ণব অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।।

— অর্ণব কাপা কাপা কণ্ঠে,,,,””অধরা!!! বোন,,,এটা স..সত্যি নাহহ….।।””

— অধরা অর্ণবকে থামিয়ে দিয়ে,,,,””ভাইয়া আমি সত্যি কথাটা জানতে চাই।। আর মিথ্যা বলো না ভাইয়া,,,প্লিজ।।””

“”বলো,,,,আমি কি মানসিক ভারসাম্য হীন?? তোমাদের সবার উপর আমি বোঝা হয়ে আছি।। কথাটা কি সত্যি??””

অধরার কথা শুনে আশ্বিন অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।।
অর্ণব স্তব্ধ হয়ে আছে,,,কিছু বলার ভাষা তার নেই।।

অর্ণবের এমন নিরবতা দেখে অধরার যা বোঝার সে বুঝে গিয়েছে।। কোনদিন ভাবেনি এভাবে তার নিজের এতো বড় সত্যি সে জানতে পারবে।। সবার উপর সে কতটা বোঝা হয়ে ছিলো ভাবতেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।।

— অর্ণব ধীরে ধীরে অধরার কাছে এসে,,,””অধরা,,,তুই আমার বোন।।
তুই কখনোই আমাদের কাছে বোঝা হতে পারিস না অধরা।।””

“”হ্যা।। এটা সত্যি তুই মানসিক ভাবে একটু অসুস্থ।। কিন্তু তাই বলে তুই অন্যদের থেকে কোন অংশে কম না।। আর তুই তো জন্ম থেকে এমন না,,,,,ওই এক্সিডেন্ট…।।””
কথাটা বলেই থেমে গেল অর্ণব।।

— অধরা অবাক হয়ে,,,,””এ..এক্সিডেন্ট???
ভাইয়া আমাকে প্রথম থেকে সবটা খুলে বলো।।””

অর্ণব একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে প্রথম থেকে সবটা খুলে বললো।। সবটা শুনে অধরা নিরবে চোখের পানি ফেলছে।। আশ্বিন এখনও চুপচাপ রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব অধরার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে….

— “”আমি কখনোই চাই নি কথাগুলো তোকে জানাতে।। এই সব কিছু তো আমাদের হাতে ছিলো না বোন।।
তোর থেকে সবটা গোপন করে আমরা তোর ট্রিটমেন্ট করেছিলাম।। কারণ ডাক্তার বলেছিলেন সত্যিটা জানলে হয়তো তুই সহ্য করতে পারবি না আর এতে হয়তো তোর ব্রেইনে আরো বেশি ইফেক্ট ফেলবে।।””

“”তোর অর্ণব ভাইয়া তোকে কখনোই কষ্ট দিতে চায়নি অধরা।। দেখ এখন তুই অনেকটাই সুস্থ।।
দেরিতে হলেও কতটা রিকভার করেছিস তুই নিজেকে।। আল্লাহ চাইলে দেখবি একদিন তুই একদম সুস্থ হয়ে যাবি।।””

— অধরা একটা বড় দীর্ঘদিন ফেলে শান্ত কণ্ঠে,,,,””ভাইয়া আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।। প্লিজ।।।””

— “”অধরা,,,আমার কথাটা….।।””

— অর্ণবকে কিছু বলতে না দিয়ে অধরা জোরে চিৎকার করে,,,,””ভাইয়া তুমি শুনতে পাওনি?? আমি এখন একা থাকতে চাইইই।।
চলে যাওওও তোমরা এখান থেকে।।””

— আশ্বিন অধরাকে ধমক দিয়ে,,,,””অধরা।। তুই অর্ণবের সাথে এভাবে চিৎকার করে কথা বলতে পারিস না।।””

— অধরা অন্যদিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে,,,,””আশ্বিন ভাইয়া…প্লিজ।। এটা আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটার,,,,এখানে তোমার কিছু না বলাই ভালো।।””

অধরার কথাটা শুনে আশ্বিনের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।।।
এটা কি বললো অধরা?? এভাবে পর করে দিলো তাকে??

আশ্বিন অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে।। অধরা অন্যদিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।।

— অধরার কথায় অর্ণব অবাক হয়ে,,,,””অধরা!!! তুই আশ্বিনের সাথে এভাবে কথা বলছিস?? তুই তো এমন ছিলিনা।। বোন…।।””

— অধরা অর্ণবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজার কাছে এসে,,,””আমি এখন একা থাকতে চাই।। প্লিজ তোমরা এখান থেকে যাও।।””

অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আশ্বিনকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। আশ্বিন এখনও চুপ করে আছে।। অধরার বলা কথাটা এখনো তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।।।

— অর্ণব আশ্বিনের কাধে হাত রেখে,,,,””আশ্বিন,,,,অধরার কথায় কিছু মনে করিস না।। সে হয়তো আমাদের উপর রাগের বশে কথাটা বলে ফেলেছে।।””

— আশ্বিন বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে,,,,,””মারিয়া অধরার রিপোর্টগুলো সাহিলকে দিয়ে দিয়েছে,,,,অধরাকে সত্য জানিয়ে দিয়েছে।।।

আমার বোন হয়ে সে আমার সাথেই বেইমানি করেছে।।। এর শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।। মারিয়াকে আমি ছাড়বো না অর্ণব।।””

কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আশ্বিন দৌড়ে নিজের বাসায় চলে আসে।।

— আশ্বিন স্ব জোরে চিৎকার করতে করতে রুমে প্রবেশ করে,,,,,,”””মারিয়াআআ!!! মারিয়াআআ!!! কোথায় আছিস তুই??? বেরিয়ে আয়।।।””

আশ্বিনের এমন চিৎকার শুনে সবাই হলরুমে চলে আসে।। আশ্বিনের মা দৌড়ে আশ্বিনের কাছে এসে…

— “”বাবা কি হয়েছে??? এভাবে চিৎকার করছিস কেনো??? আর মারিয়া তো বাসায় নেই।।””

— মারিয়ার মা আশ্বিনের সামনে এসে,,,,””মারিয়াকে এভাবে ডাকছো কেনো বাবা?? কি করেছে আমার মেয়েটা?? ছোটবেলার মতো আবার দুজন ঝগড়া করেছো নাকি???””

— আশ্বিন অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে,,,,””মম।। মারিয়া কোথায়?? আজকে আমার হাত থেকে তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে নাহহ।। সাহস কিভাবে হয় তার আমার বিপক্ষে গিয়ে আমারই শত্রুর সাথে হাত মেলানোর??””

— মারিয়ার মা চমকে ওঠে,,,,””কি যা তা বলছো আশ্বিন?? আমার মেয়ে উল্টো পাল্টা কোন কাজ করতেই পারে না।। নিশ্চয়ই কেউ তোমাকে মিথ্যে বলছে।।””

— আশ্বিনের নানু সামনে এসে আশ্বিনকে শান্ত করার চেষ্টা করে,,,,””নানা ভাই,,,আগে শান্ত হও।। তারপর বলো আমাদের…কি করেছে মারিয়া??””

— আশ্বিন বড় বড় শ্বাস ফেলে,,,,””নানু তোমার আদরের মারিয়া অধরার মেডিক্যাল রিপোর্ট যেটা আমরা এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলাম সেটা নিয়ে আমাদের শত্রুকে দিয়ে দিয়েছে।।

অধরার কাছ থেকে যেই সত্য বছরের পর বছর ধরে লুকিয়ে রেখে এসেছি তাও বলে দিয়েছে।।।””

“”এখন অধরার মানসিক অবস্থা একবার বুঝতে পারছো তুমি?? নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছে সে।।
কি পেয়েছে সে এসব করে তোমার মারিয়া??

তাকে একবার সামনে পেয়ে নেই নানু,,,আমি যে তার কি হাল করবো আমি নিজেও জানি না।।””

— ছোট মা আশ্বিনের কথা শুনে অবাক হয়ে,,,,””কিহহহহ?? আশ্বিন ক..কি বললে তুমি?? আমার অধরা সব জেনে গিয়েছে….!!””

কথাটা বলেই তিনি অবাক হয়ে মামুনির দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত সেখান থেকে বাসায় চলে আসেন।।
এদিকে মামুনি কথাটা শুনেই মুখে হাত দিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়েন।।

আশ্বিন রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে আসে।।

— মারিয়ার মা আমতা আমতা করে,,,,””আমার নিরিহ মেয়েটা এসব করেছে?? আমার একদম বিশ্বাস হয় না।। আর আশ্বিন ঐ পাগল মেয়ের জন্য আমার মেয়ের উপর এভাবে রাগারাগি করছে?? নিশ্চয়ই ওই পাগল….।।””

— মামুনি উনাকে থামিয়ে দিয়ে,,,,””খবরদার।। আমার অধরাকে একদম পাগল বলবেন না।। আমার মেয়েকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা আমি সহ্য করবো না বলে দিলাম।।
না জানি,,,,আমার মেয়েটা এখন কতটা কষ্ট পাচ্ছে।।””

মামুনির কথা শুনে মারিয়ার মা মুখটা বাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন।।

এদিকে…

আশ্বিন নিজের রুমে এসে সব কিছু ভাংচুর করে যাচ্ছে।। অধরার বলা কথাটা বারবার তার কানে বাজছে।। নিজের রাগকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে।। শেষে ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে।।
চোখ বন্ধ করতেই অধরার অসহায় মুখটা ভেসে ওঠে,,,,মূহুর্তেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে তার।।

— “”কিভাবে বলতে পারলি তুই এটা?? এতটা পর ভাবিস তুই আমাকে?? কে কি বললো তার কথায়ই আমাকে ভুল বুঝতে হবে তোর?? বিশ্বাস করিস না তুই আমাকে??””

চোখ বুজেই কথাগুলো বললো আশ্বিন।।

🍁পরদিন….

সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করে অধরা।। গতকাল আশ্বিনকে আর অর্ণবকে কথাগুলো বলার পর দরজা বন্ধ করে মেঝেতে বসেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে।।

বাসার সবাই অবশ্য একটু পর থেকেই দরজা ধাক্কা দিয়ে বারবার দরজা খুলতে অনুরোধ করে কিন্তু অধরা তা করেনি।। শেষে সবাই ব্যর্থ হয়ে তাকে একা ছেড়ে দেয়।।

বেশ কিছুক্ষণ পর অধরা ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাস্তা করতে নেমে দেখে অর্ণব চুপচাপ সোফায় বসে আছে।। তাকে দেখে দৌড়ে সামনে এসে…

— “”রেডি হয়েছিস,,,কলেজে যাবি নাকি?? আজ না গেলেই তো হয়।। আচ্ছা ঠিক আছে।। আমি তোর ব্যাগ গুছিয়ে আনছি।।””

— অধরা গম্ভীর কণ্ঠে,,,,””লাগবে না।। আমি গুছিয়ে ফেলেছি।।””

— ছোট মা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এসে,,,,””মা দেখি।। এদিকে আয় তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।।””

— অধরা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে,,,,””আমি নিজে খেতে পারবো ছোট মা।।””

অধরা কথাটা বলেই এক নজর সদর দরজার দিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিলো।। কাল আশ্বিনকে কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি তার।। কিন্তু সে কি করবে?? মারিয়ার কথাগুলো শুনে আশ্বিনের উপর কোন এক অজানা অভিমান কাজ করছিলো।। যার ফল স্বরূপ সেই কথাগুলো বলে ফেলেছে অধরা।।

🍁এদিকে….

আশ্বিন ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে তার ফোন বাজছে।। আশ্বিন ফোন রিসিভ করে।।

— “”হ্যা মহিব বলো।।।””

— “”স্যার।। এই মাত্র খবর পেলাম শাহিন হাসাদ ক্লায়েন্টদের ছোট মণির রিপোর্ট দেখিয়ে দিয়েছে।। তারা হয়তো এখনি বড় স্যারকে খবর পাঠাবে।।””

— “”কিহহহ??? ড্যাম ইটটট।।।।””

কিছুক্ষণ চুপ থেকে,,,,””আচ্ছা আমি দেখছি বিষয়টা।। তুমি মারিয়াকে খুঁজে বের করো মহিব।। পৃথিবীর যেখানেই লুকিয়ে থাকুক খুঁজে বের করো তাকে।।।””

— “”ওকে স্যার।।””

আশ্বিন ফোন রেখে কিছু একটা ভেবে,,,,””শিটট।।।””

🍁🍁

অর্ণব অধরাকে কলেজে নামিয়ে দিতেই আশ্বিন তাকে কল দেয়।। অধরাকে বিদায় দিয়ে আশ্বিনের সাথে কথা বলে সাথে সাথে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে।।

অধরা কলেজে প্রবেশ করতেই দেখে আশেপাশের সবাই কিভাবে যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে।। অধরা যতোই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আশেপাশের সবাই ততোই অধরার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।। এক পর্যায়ে অনেকেই তাকে দেখে কানা ঘুষা শুরু করে।। অধরার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে।।

হঠাত তিশা দৌড়ে এসে অধরার হাত টেনে তাকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।।

— “”আরে তিশা ছাড়।। এভাবে টেনে আমাকেই কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস??””

— “”আজকে ক্লাস করতে হবে না।। চল তোদের বাসায় যাবো।।””

অধরা জোর করে তিশার হাত ছাড়িয়ে।। কঠোর ভাবে বললো…

— “”সমস্যা কি তোর?? কি হয়েছে? সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?? তুই সবটা জানিস তাই না??? বলো আমাকে কি হয়েছে।।।””

— তিশা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে,,,,””ওই ডাইনি মারিয়া তোর মেডিক্যাল রিপোর্টের ছবি কলেজের সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।। সবাই তোর অসুস্থতা নিয়ে হাসাহাসি করছে।। তোকে এখানে থাকতে হবে না।। অধরা চল বাসায় যাই।।””

তিশার কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।। এমনটা হবে কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি সে।।

—চলবে❤

(((বুঝলাম না,,,,মারিয়ার মতো একটা নিরিহ মেয়েকে সবাই এভাবে বকা দিচ্ছে কেনো??😷)))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here