ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১৮,১৯
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:১৮
দেখতে দেখতে ছয় মাস পার হয়ে গেল।। এতোগুলো দিনেও অধরার জ্ঞান ফেরেনি।। শাহেদ ডাক্তার এনে অধরাকে বাসায়ই ট্রিটমেন্ট করছে।।
অর্ণব প্রথমদিকে বাবা মায়ের জন্য একটু আধটু পাগলামি করলেও ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়েছে।। দিন রাত ছোট্ট বোনটার পাশে বসে ঘুমন্ত ছোট্ট অধরার সেবা যত্ন করে।।
আশ্বিন সবসময়ের মতো আজও খাটের এক কোণে বসে একদৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।।
কতোদিন হলো সে তার ছোট্ট পরীটার হাসিমাখা মুখটা দেখে না।। টানা টানা গভীর মায়াভরা চোখগুলো দিয়ে পিচ্চিটা তার দিকে তাকিয়ে থাকে না।। তাকে দেখেই দুহাত প্রসারিত করে আধো আধো ভাষায় কোলে নিতে অনুরোধ করে না।।
পিচ্চিটা হয়তো জানে না,,,,সে তার মনের অজান্তেই আশ্বিনের অভ্যাসে মিশে গিয়েছে।।
— দরজার আড়াল থেকে ছোট মা তাদের দিকে তাকিয়ে,,,,””জানি না আমাদের ছোট্ট মেয়েটা আর কোনদিন সুস্থ হবে কিনা।।
রোজ রোজ এমন দৃশ্য দেখলে কষ্টে বুকটা কেঁপে ওঠে।। বাচ্চা ছেলেগুলো রোজ অধরার পাশে বসে থাকে।।””
— দাদি একটা কাপা কাপা কণ্ঠে,,,,””হায়!! আমার ছোট্ট অর্ণব।। যে ছেলেটা কোনদিন নিজের যত্নই নেয়নি দেখো এখন দেখো কিভাবে অধরার যত্ন নিচ্ছে।।””
ছোট মা আর দাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।। এদিকে অর্ণব ঘুমন্ত অধরার চুল আঁচড়ে দিয়ে উঠে যেতেই আশ্বিন চিৎকার করে অর্ণবকে ডেকে উঠলো।।
— অর্ণব দ্রুত আশ্বিনের সামনে এসে,,,,””কি হয়েছে??””
অর্ণব তাকিয়ে দেখে অধরার হাত পা অনেক বেশি কাঁপছে।। এক প্রকার খিচুনি উঠে গিয়েছে।। অর্ণব ভয়ে এক প্রকার চিৎকার করে সবাইকে ডাক দেয়।। অর্ণবের ডাক শুনে দ্রুত গতিতে সবাই ছুটে রুমে এসে অধরাকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে ডাক্তারকে খবর দেয়।।
সেদিন সবার কষ্টগুলোর অবসান ঘটিয়ে অধরার জ্ঞান ফিরে এসেছিলো।।
🍁বর্তমানে🍁
অর্ণব এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে অতীতের ঘটনাগুলো ভাবছিলো।। হঠাত আশ্বিনের ডাকে তার হুশ ফিরে আসে।। অর্ণব আশ্বিনের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে…
— “”অধরা যেদিন কোমা থেকে ফিরে আসলো,,,সবাই কতোটা খুশি হয়েছিলো।। বাসার প্রতিটা মানুষ যেনো তার প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো।। কিন্তু সবার খুশিটা দীর্ঘ স্থায়ী হলো না।। ডাক্তার অধরার চেকআপ করে কি বলেছিলো,,,মনে আছে??””
“”মাথায় সেই আঘাতে অধরা তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।। সে হয়তো কখনোই আর স্বাভাবিক হতে পারবে না।। অন্য সবার মতো বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে তার ব্রেইন ম্যাচুয়েড হবে না।।
একটা এক্সিডেন্ট আর আমার বোনটা,,,সবার থেকে আলাদা হয়ে গেলো।।””
— আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে,,,,””কিন্তু অধরা নিজেকে রিকভার করেছে।। ভেবে দেখ তুই,,,সেদিন গুলো অধরা কেমন ছিলো আর আজ কলেজে…।।
যেই অধরাকে আমরা পুরো পৃথিবী থেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম আর আজ সে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।।
অধরার এই রিকভার করার পেছনে যদি কোন কারণ থাকে তাহলে সেটা তুই।। ছোট থেকেই তুই অধরাকে নিজের বাচ্চার মতো করে বড় করেছিস অর্ণব।।
ছোটবেলায় দেখেছি,,,অধরার কাজ কর্মে অনেক সময় বাকিরা একটু হলেও বিরক্ত প্রকাশ করেছিলো….কিন্তু তোকে কোনদিন অধরার প্রতি বিরক্ত হতে দেখিনি।।
একটা কথা কি জানিস? অধরা অনেক ভাগ্যবান।। তোর মতো একজন ভাই পেয়েছে।।””
— অর্ণব মুচকি হেসে,,,,””…আর তোর মতো একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে।।
একটা কথা বলো তো,,,,এই যে অধরাকে এতো ভালোবাসিস তাও কেনো প্রকাশ করিস না?? সবার আড়াল থেকে অধরার প্রতিটি মূহুর্ত পর্যবেক্ষণে রেখেছিস।। তার ভালো মন্দ দেখে রেখেছিস।।
অন্যদিকে আমার অধরা।। ছোট থেকেই তার শাহরুক খান…তুই।। মনে আছে? ছোট বেলায় যদি অধরাকে কেউ জিজ্ঞেস করতো তোমার জীবনের লক্ষ্য কি?? অধরা কোন কিছু না ভেবেই বলতো,,,আশ্বিন ভাইয়াকে বিয়ে করা।।””
অর্ণব কথাটা বলেই হাসতে শুরু করে।। আশ্বিন হালকা হেসে অন্যদিকে ফিরে বললো…
— “”তোর বোন সব সময় আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে।।
স্কুলে আমার একটা রেপুটেসন ছিলো,,,সে সব মাটি করে দিয়েছিলো।।
তবে…..আমারও সময় আসবে পিচ্চি।। তখন সবকিছু সুদে আসলে বুঝিয়ে দিবো।।”””
অর্ণব আর আশ্বিন মিলে আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো।। দুই বন্ধুর গল্পের মধ্যে অর্ণবের মন খারাপ অনুভূতিটা হারিয়ে গেলো।।
— আশ্বিন উঠে দাঁড়িয়ে,,,,””চলো। নিচে ফিরে যাই।। বাসায় মারিয়া আছে,,,,এতক্ষণে মন হয় আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।।””
— অর্ণব ভ্রু কুঁচকে,,,””তোর কি মনে হয়না মারিয়া রিসেন্ট তোর বাসায় একটু বেশিই আসা যাওয়া করছে?? আমার কেনো জানি সন্দেহ লাগছে।।””
— আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে,,,””আরে না,,,,আমার মনে হয়না মারিয়া উল্টো পাল্টা কিছু করতে চাইছে।। মানছি মারিয়া একটু উচ্ছৃঙ্খল টাইপ।। কিন্তু এতটাও খারাপ না।।
বাই দ্য ওয়ে,,,তুইও কি অধরার মতো মারিয়াকে হিংসা করিস?? পছন্দ করিস নাকি মারিয়াকে??””
একটু খোঁচা মেরে কথাটা বললো আশ্বিন।।
— “”কি বললি তুই?? পছন্দ আমি?? তাও আবার মারিয়াকে?? হাহ,,,হাস্যকর।।””
আশ্বিন অর্ণবকে নিয়ে হাসতে হাসতে ছাদের সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখে অধরা হুড়মুড় করে দৌড়ে ছাদে উঠছে।।
— অর্ণব অধরাকে থামিয়ে,,,,””কি হয়েছে তোর?? এভাবে দৌড়ে আসছিস কেনো??””
— অধরা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে,,,””না মানে,,,দেখলাম তোমরা দুজন মিলে ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছো।। তাই আমি আইসক্রিম নিয়ে তোমাদের সাথে আড্ডা দিতে এসেছি।।””
— আশ্বিন বাঁকা হাসি দিয়ে,,,,””কিন্তু তুই আসতে দেরি করে ফেলেছিস।। আমাদের আড্ডা শেষ।। এখন আমি বাসায় যাচ্ছি,,,,মারিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।। বাই।।””
অর্ণবের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো আশ্বিন।।
— অধরা আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে,,,,””মারিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে!! কেনো রে কেনো??? এই শাকচুন্নির আবার কি চাই??
আজকে কি আশ্বিন ভাইয়াদের বাসায়ই থাকবে নাকি?? ভাইয়া তুমি কিছু করো।। নয়তো,,,আমি কিন্তু তার মাথা ফাটিয়ে দিবো।।””
অর্ণবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো অধরা।।
— অর্ণব অধরার গাল টেনে মুচকি হেসে,,,,””আচ্ছা পরে মাথা ফাটিয়ে দিস।। এখন রুমে চলো।।””
🍁🍁
আশ্বিন ফোনে কথা বলতে বলতে তার বাসায় প্রবেশ করে।। এদিকে মারিয়া লুকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।। আশ্বিনকে লাইব্রেরি রুমে প্রবেশ করতে দেখেই মারিয়া আশ্বিনের রুমে তৃতীয় বারেরমতো রিপোর্ট খুঁজতে চলে যায়।।
— আশ্বিন ফোন রিসিভ করে,,,,””হ্যালো ডাক্তার সাদিক?””
— “”হ্যা আশ্বিন।। কেমন আছো তুমি??””
— “”জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।। আপনার কাছে কিছু রিপোর্টের কপি পাঠিয়েছিলাম।। অধরার মেডিক্যাল রিপোর্ট।।””
— “”ওহ হে।। আমি রিপোর্টগুলো দেখেছি। অধরার নতুন রিপোর্ট আর আগের রিপোর্ট দেখে আমি যা বুঝলাম,,,,অধরার ব্রেইন আগের থেকে 75% রিকভার করেছে।।
— আশ্বিন থেমে গিয়ে মুচকি হেসে,,,,”” কিহহ?? সত্যি?? দ্যাটস এ গুড নিউজ।।””
— “””হ্যা অবশ্যই।। যদি এভাবেই অধরার ট্রিটমেন্ট চলতে থাকে তাহলে একদিন সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ।।””
— “”ধন্যবাদ ডাক্তার।। আমি চাই অধরার ট্রিটমেন্ট আপনিই করেন।।””
— “”ঠিক আছে।। আমিই অধরার ট্রিটমেন্ট করবো।। রাখছি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।।””
এদিকে আশ্বিন ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা শেষ করে নিজের রুমে প্রবেশ করতেই,,,মারিয়া সচেতন হয়ে নিজেকে সামলে নেয়।।
— “” তুমি কোথায় গিয়েছিলে আশ্বিন?? আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে গল্প করবো কিন্তু তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে।।””
— আশ্বিন তার কথা পাত্তা না দিয়ে,,,,””আসলে মারিয়া।। আমার অনেক মাথা ব্যাথা করছে।। আমি এখন ঘুমাবো,,,,আমরা নাহয় কাল সকালে কথা বলি??””
মারিয়া মনে মনে এক প্রকার রাগ থাকলেও তা প্রকাশ না করে…মাথা নেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।।
— “”আমার বেলায়ই তার যতো সমস্যা।। এখন যদি অধরা কথাটা বলতো তাহলে ঠিকই গল্প করতো।। যত্তসব।।””
মারিয়া নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাত থেমে যায়।। লাইব্রেরি রুমের দিকে একবার তাকিয়ে…
— “”আশ্বিন তখন কি করছিলো লাইব্রেরি রুমে?? অধরার রিপোর্ট ওখানে নেই তো??””
মারিয়া এক মুহূর্ত দেরি না করে ধীর পায়ে লাইব্রেরি রুমে প্রবেশ করে।। দরজা ভেতর থেকে চাপিয়ে রেখে প্রতিটি সেল্ফে ভালোভাবে খুঁজতে শুরু করে।। কিন্তু সব জায়গায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রিপোর্ট পায়নি সে।।
হঠাত অফিসের পুরনো ফাইলের সেল্ফের দিকে নজর যায় তার।। ধীরে ধীরে সেল্ফের কাছে আসতেই প্রথমেই অধরার রিপোর্ট দেখতে পায়।। খুশিতে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে তার।।
এক মুহূর্ত দেরি না করেই ফাইলটা নিয়ে লুকিয়ে রুমে চলে আসে।। তাৎক্ষণিক ভাবে সাহিলকে ফোন দিয়ে রিপোর্ট পাওয়ার খবর জানিয়ে দেয়।।
হঠাত মারিয়া আগ্রহ বসত রিপোর্ট উল্টে দেখতে শুরু করে।। যতোই পৃষ্ঠা উল্টে দেখছে ততোই তার চোখগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে।।
— “”ও মাই গড।। তারমানে অধরা….।।””
কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয় মারিয়া।
—চলবে❤
#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব::::১৯
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মারিয়া সাহিলকে ফোন করে দেখা করতে বলে।। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অধরার রিপোর্টগুলো সাহিলকে দিয়ে দেওয়াই ভালো হবে।। নয়তো যদি একবার আশ্বিন রিপোর্টসহ মারিয়াকে দেখে ফেলে তাহলে হয়তো মারিয়াকে খুনই করে ফেলবে।।
মারিয়া কোনমতে রেডি হয়ে চুপিচুপি তার রুম থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে আসতেই পেছন থেকে কেউ একজন বললো…
— “”মারিয়া..!!””
কণ্ঠটা শুনেই মারিয়ার আত্না ধক করে উঠলো।। তার হৃৎস্পন্দন ক্রমান্বয়ে উঠা নামা করছে।। ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।
— “”আশ্বিন তুমি…!!””
আসলে আশ্বিন মাত্রই জগিং থেকে ফিরে এসে নিজের রুমে প্রবেশ করছিলো।। তখনই মারিয়াকে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে বের হতে দেখে থেমে যায়।।
— “”এতো সকালে কোথায় যাচ্ছো তুমি?? আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে যাচ্ছো কেনো??””
— মারিয়া অনেকটা সাহস নিয়ে আমতা আমতা করে,,,,””আ..আসলে…আমি।। আমার একটা বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম।। এইতো সামনেই।। সবাই ঘুমিয়ে আছে তো তাই এভাবে চুপিচুপি যাচ্ছি।।””
— আশ্বিন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে,,,””এতো সকালে?? আর তোমার হাতে ওটা কি??””
— মারিয়া একটা ঢোক গিলে,,,””ব..বই।। আমার বান্ধবীকে এটাই তো দিতে যাচ্ছি।। আসলে তার খুব জরুরী বইটা দরকার তাই এখনি দিতে বললো।।””
— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,,””চলো।। আমি তোমাকে দিয়ে আসি।। এখন তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না।।””
— “”নাহহ!! না মানে,,,আমি যেতে পারবো আশ্বিন।। এইতো সামনেই সে দাঁড়িয়ে আছে।। আমি এই যাবো আর আসবো।।””
মারিয়া আশ্বিনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে গেলো।।
এদিকে আশ্বিন মারিয়ার যাওয়ার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কল করলো।।
— “”হ্যালো মহিব।।””
— “”জি স্যার।””
— “”মারিয়া এই মাত্র আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।। তার উপর নজর রাখো।। কোথায় যাচ্ছে,,কার সাথে দেখা করছে সব ইনফরমেশন আমার চাই।।””
— “”ওকে স্যার।।””
আশ্বিন ফোন রেখে নিজের রুমে প্রবেশ করে।।
🍁এদিকে….
মারিয়া আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে সাহিলের সামনে আসে।।
— সাহিল মারিয়াকে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,,,””মারিয়া ডার্লিং!! অবশেষে কাজটা তুমি করেই ফেললে।। আমি জানতাম তুমি পারবে।। গুড জব।। যাই হোক,,রিপোর্টটা দাও।।””
— মারিয়া ব্যাগ থেকে রিপোর্ট বের করে হাতে নিয়ে,,,,””আগে ওই ভিডিওটা ডিলিট করো।। আমার সামনেই।। তারপর দিবো।।””
সাহিল অন্যদিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মারিয়ার সামনেই ভিডিও ডিলিট করে দেয়।। মারিয়া নিশ্চিত হয়ে সাহিলকে রিপোর্টগুলো দিয়ে দেয়।।
এদিকে দূর থেকে মহিব সবটা লক্ষ্য করছে।। সে তাৎক্ষণিক আশ্বিনকে ফোন করে….
— “”হ্যা মহিব বলো।। কি দেখলে??””
— “”স্যার,,,,মারিয়া ম্যাম একজন ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছেন।। ছেলেটা বাইক নিয়ে তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো।। কালো পোশাক আর মুখে মাক্স থাকায় আমি তাকে ঠিক চিনতে পারছি না।।””
— আশ্বিন একটু চিন্তিত কণ্ঠে,,,,””মারিয়া মিথ্যা বলে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যেতে পারে?? তুমি এক কাজ করো,,,ছেলেটার পিছু নাও।। তার সব ডিটেইলস আমার চাই।। বুঝেছো মহিব??””
— “”জি স্যার।।””
আশ্বিন ফোন রেখে মারিয়ার বিষয়টা ভাবতে শুরু করে।। এমন লুকিয়ে লুকিয়ে ইমারজেন্সি কার সাথে দেখা করতে যেতে পারে মারিয়া??
অর্ণব সত্যিই বলেছে,,,,মারিয়ার উপর কেনো জানি এখন তারও সন্দেহ লাগছে।।
বেশ কিছুক্ষণ পর মারিয়া বাসায় ফিরে আসে।। আসার পর থেকেই এমন একটা ভাব নিয়ে আছে যেনো কিছুই হয়নি।। আশ্বিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মারিয়ার সকল কাজ কর্ম পর্যবেক্ষণ করছে।।
কাল সকাল থেকে যে মেয়ে মুখ গোমড়া করে রেখেছিলো আজ কি এমন হলো যে মারিয়া এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে।।
বিষয়টা আশ্বিনকে বেশ ভাবাচ্ছে।।
আশ্বিন সবার সাথে বসে নাশতা করছে হঠাত মহিব তার সাথে দেখা করতে আসে।।আশ্বিন মহিবকে নিয়ে তার রুমে চলে আসে।।
— আশ্বিন সোফায় বসতে বসতে,,,””বলো কি জানতে পেরেছো??””
— “”স্যার।। আমরা ছেলেটার বাইকের পিছু নিয়েছিলাম।। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাকে হারিয়ে ফেলি।””
— “”মানে কি মহিব?? কিভাবে হারিয়ে ফেললে তাকে?? এখন কিভাবে জানতে পারবো ছেলেটা কে ছিলো??””
— “”স্যার আমরা ইচ্ছে করে ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলিনি।। স্যার আমার মনে হচ্ছে,,,ছেলেটা আগে থেকেই জানতো আমরা তার পিছু নিয়েছি।।
তাইতো,,,একটা রোডেই সে বারবার বাইক রাইড করছিলো আর আমরা যখন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম তখনই সে হারিয়ে গেলো।।””
— আশ্বিন এক ধ্যানে কিছু একটা ভেবে,,,,””কে হতে পারে?? আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে দিয়েই কোন বড় অঘটন ঘটে যাচ্ছে আর আমি সেটা বুঝতে পারছি না।।
মহিব,,,,তুমি বাইকের নম্বর খেয়াল করেছো??””
— “”জি স্যার।।””
— “”গুড।। দেখো এই বাইকটা কার নামে রেজিস্টার করা।। পরে আমাকে জানাও।।””
🍁🍁
সাহিল হাতের আঙুলে বাইকের চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বাসায় প্রবেশ করে।। শাহিন তখন হলরুমে বসে কিছু ফাইল চেক করছিলো।। সাহিলকে এখন খোশ মেজাজে দেখে বললো…
— “”কি ব্যাপার?? আজ হঠাত খুশি খুশি লাগছে।। ব্যপার কি??””
— সাহিল সোফায় বসে,,,,””খুশি তো হবোই ড্যাড।। ইভেন শুনলে তুমিও খুশি হবে।।
— শাহিন হাতের ফাইল রেখে ,,,””তাই নাকি?? তাহলে বলো শুনি।।””
— “”আশ্বিনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারই বাসা থেকে আবারও অধরার রিপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি।।””
রিপোর্ট বের করে শাহিনের হাতে দিয়ে।।
এদিকে শাহিন তো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।। ভালোমতো চেক করে দেখে সব ঠিকঠাক আছে।। মানে সাহিল সত্যি কথাই বলছে।।
— সাহিলের কাধে হাত দিয়ে,,,””সাবাস।। এই না হলে আমার ছেলে।। এই এম সো প্রাউড আফ ইউ।। এবার আমি আর ভুল করবো না,,,,যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্টগুলো ক্লাইটদের কাছে দেখিয়ে দিবো।।””
কথাটা বলেই একসাথে হাসে দুজন।।
🍁এদিকে….
অধরা আর ছোট মা আশ্বিনদের বাসায় আড্ডা দিতে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারিয়ার মা বাবা আর আশ্বিনের নানু তাদের বাসায় আসে।। নানুকে দেখেই অধরা দৌড়ে গিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।
— “”আরে ছাড় ছাড়।। আহ!! আরে কোথায় কে আছো? এই বুড়িটাকে কেউ বাঁচা নয়তো এখনি দম আটকে মারা যাবে।।””
নানুর কথায় সবাই একসাথে হেসে ওঠে।।
— অধরা নানুর গাল টেনে,,,””উফ হো সুন্দরী।। আমি জানি তুমি এতো সহজে মরবে না।। মরার হলে তো আরো আগেই মরে যেতে।। এখনও যেহেতু বেঁচে আছো।। সো এতো চিন্তা নেই।।””
— নানু অধরার মাথায় একটা বারি দিয়ে,,,””বেশি কথা বলিস তুই।।। বয়স হয়ে গেলো তবুও তোর বুদ্ধি হলো না।।
তোর ভাই কোই রে অধরা??””
— “”ভাইয়া তো আশ্বিন ভাইয়ার সাথে কোথায় যেন গিয়েছে।। একটু পরেই চলে আসবে।।””
অধরা নানুর সাথে কথা বলে মামির কাছে এসে…
— “”মামি কেমন আছেন??””
— একটু বিরক্ত নিয়ে নাক ছিটকে,,,””হ্যা।। ভালোই আছি।।””
মারিয়ার মায়ের এমন আচরণ অধরা গায়ে না মাখলেও আশ্বিনের মা দূর থেকে তা ঠিকই লক্ষ্য করেন।।।
সবাই মিলে একসাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে।। মারিয়ার মা বিভিন্ন ভাবে নিজের মেয়ের প্রশংসা করে কথা বলছে।। বিষয়টা ছোট মা আর মামুনি কারোরই ভালো লাগছে না।।
— হঠাত মারিয়া কিছু একটা ভেবে অধরাকে বললো,,,,””অধরা,,,চলো তোমার রুম থেকে ঘুরে আসি।। তোমার সাথে তো আমি তেমন কথা বলার সুযোগই পাই না।।””
অধরা মারিয়ার কথা শুনে একবার ছোট মার দিকে তাকিয়ে মারিয়াকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।। এদিকে মারিয়া বাঁকা হাসি দিয়ে অধরার সাথে চলে আসে।।
🍁🍁
আশ্বিন আর অর্ণব তাদের অফিসে একটা জরুরী কাজে এসেছে।। হঠাত মহিব ফোন করায় আশ্বিন ফোন রিসিভ করে…
— “”হ্যা মহিব বলো।।””
— “”স..স্যার।। সেই ছেলেটার পরিচয় জানতে পেরেছি।। বাইকের সেই ছেলেটা সাহিল হাসাদ ছিলো।।””
— আশ্বিন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে,,, “”হোয়াট??? সাহিল?? মারিয়া সাহিলের সাথে দেখা করতে কেনো গিয়েছিলো??””
হঠাত কিছু একটা ভেবে….””আমি তোমাকে পরে ফোন দিবো মহিব।।””
কথাটা বলেই আশ্বিন উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে অফিসের বাইরে চলে আসে।। পেছন থেকে অর্ণব বারবার তাকে ডাকছিলো কিন্তু সে সাড়া দেয়নি।।
আশ্বিন গাড়ি নিয়ে দ্রুত গতিতে বাসায় এসে দৌড়ে লাইব্রেরী রুমে প্রবেশ করে।। আশ্বিনকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে হলরুমের সবাই তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও সে কোন উত্তর দেয়নি।।
আশ্বিন লাইব্রেরি রুমে এসে সেল্ফে চেক করে দেখে রিপোর্ট কোথাও নেই।। আশ্বিনের আর বুঝতে বাকি রইল না….
— “”ও নো,,,,শিট!!! মারিয়াআআআ!!!
আমার বোন হয়ে সে কিভাবে আমার শত্রুর সাহায্য করতে পারে?? এখন কি হবে?? এক মিনিট,,,,অধরা!! অধরা কোথায়??
তাহলে কি মারিয়া অধরাকে সব বলে….না নাহহ।। ড্যাম ইট!!!””
—চলবে❤