ভালোবাসার নতুন_পরিচয়,পর্ব ১

ভালোবাসার নতুন_পরিচয়,পর্ব ১
লেখিকা ;; নিপু জামান

আজ আমার বিয়ে। আর আমার বিয়েটা হচ্ছে আমার মামাতো ভাইয়ের সাথে।তাকে আমি আগে থেকে চিনতামই না। ইনফেক্ট আমার নানু বাসার কাওকেই চিনতাম না। বেশ কিছু মাস আগে আমাদের বাসায় আম্মুর একটা কল আসে সেই থেকেই সব চিনেছি। আমাদের বিয়েটা হচ্ছে আমার নানাভাইয়ের ইচ্ছায়। আমি নিলান্তি আম্মু আর আব্বুর একমাত্র মেয়ে। ছোট একটা ভাই আছে নাম আলিফ। আমি আর আলিফ অনেকটা টম এন্ড জেরির মতো। আলিফকে রাগাতে আমার অনেক ভালো লাগে। সব কিছু নিয়েই আমরা ঝগরা করি বিশেষত আমি। আলিফ ক্লাস সেভেনে পরে। আর আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। এই চার জন নিয়েই আমাদের ফ্যামেলি ছিলো। আর আমি তো আলিফকে রাগানোর জন্য আম্মুর কাছে অনেক বকা খেতাম। আর আব্বু আলিফের বিচার করতো। আফসোস আজকের পর আর এমন কিছু হবে না। আমার ইচ্ছা ছিলো ভার্সিটিতে উঠে রিলেশনে যাবো। বাট এখন এই মামাতো জামাইয়ের ঠেলায় কিছুই হবে না হুহ। ইসস যদি একটা বিএফ থাকতো তাহলে আজকেই ভাগতাম। বাট নেই আর কিছু করারও নেই। ফ্রেন্ড রা ঠিকই বলেছিলো ভালো মানুষের মূল্য নেই আমার অবস্থাও অনেকটা সেই রকম। আমার আম্মু আব্বুরা তো নিজেরা লাভ ম্যাজের করেছে আর আমাকে দিচ্ছে এরেঞ্জ ম্যাজের । আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার নাম নিবির। সে একজন ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার। তাতে আমার কি সালারে রাতে একবার পেয়েনেই। এতো দিন ভাব দেখাতো। আজকে কই গেলো নওয়াবের ভাব হুহ ডং দেখে আর বাঁচি না।আমার আম্মুরা যেহেতু লাভ ম্যারেজ করেছে তাই আমার দাদু বাড়ি ছাড়া নানু বাসার কেউ মেনে নেয়নি। কারন তারা সেম এইজের ছিলো। প্রায় সাত ইয়ারের রিলেশনকে তারা বিয়েতে রূপ দেয়। নিজেদের লাভ স্টরি কতো কিউট আর আমারটা কি ফকিন্নি মার্কা। আমার নানু বাসা থেকে যেহেতু কেউ মেনে নেয়নি। কিন্ত কিছু মাস আগে আমার আম্মুর ফোনে নানাভাই কল দিয়ে ডাকে আর তখনি আমরা দুই ভাই বোন জানতে পারি যে আমাদের নানুবাসা আছে। প্রথমে অনেক খুশিই ছিলাম।বাট কে জানত যে আমার কপালেই বাশ আছে। ওদের খুশির জন্য আমাকে বলির পাঠা হতে হচ্ছে 😭😭।আমার অবশ্য আপত্তির কারনও ছিলো না। নিবির অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম। বরং আমিই ওর জন্য বেমানান। প্রথমে তো ওকে দেখে আমি ক্রাসই খেয়েছিলাম।বাট আমি এতো টাও লুচু মেয়ে না যে ভাইয়ের উপর লাইন মারবো। বাট এখন কি হলো লাইন তো দূরের কথা সোজা মামাতো জামাই হয়ে গেলো। হুহ তুমি এই কয়দিন অনেক ভাব দেখাইছো মামাতো জামাই আমিও এখন থেকে তোমাকে ডেইলি দেখাবো এই নিলান্তির টর্চার। নিবিররা দুই ভাই-বোন। ওর বোনের নাম রিদি ক্লাস টেইনে পরে। অনেক ভালো একটা মেয়ে। অল্প কয় দিনে আমদের অনেক ভালো ফ্রেন্ড শিপ হয়ে গেছে। আর আমার নানাভাই আর নানুভাই নিবিরের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে কারন আমার আম্মউকে তারা অনেক লাভ করতো। আমার মধ্যে নাকি আম্মুর অনেক কিছু মিল আছে। তাই তারা তাদের সেই ছোট্ট মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য বিয়েটা দিলো।

আমি এসব আগের কথা ভাবছিলাম আর পার্লারের মেয়েরা আমাকে সাজাচ্ছিলো। যখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সারা আমাকে ডাক দিলো তখন আমার সব অভীযোগের ভাবনা চিন্তা থেকে মন অন্য দিকে আসলো।

কিরে কি হয়েছে নিলা কই হারিয়ে ছিলিস বাবু এতো ক্ষন।

নাহ কোথাও না। ডাকলি কেন বল।

ডাকবো না নাকি তোর সাজ ফুল কমপ্লিট আর নিবির ভাইয়ারও নিচে এসে পরেছে। আন্টি বলেছে যে তোকে যেনো নিচে নিয়ে জাওয়া হয়। কারন লেট হয়ে জাচ্ছে।

ওকে চল।

দারা বাবা বিয়ের জন্য তো আর তর সইছে না এতো তারাতারি বিয়ে করছিস। এটলিস্ট একটু তো ওয়েট কর।

আচ্ছা করলাম।

এখন আয়নায় দেখ তো কতো কিউট লাগছে তোকে। একদম একটা ছোট ডল। নিরির ভাইয়া তো ক্রাস না খেয়ে পারবেই না।

আমিও আয়নায় তাই দেখলাম।আমি নিজেকে দেখে নিজেরই লজ্জা লাগছিলো, তাই কথা ঘুরাতে বললাম থাম তো চালা মারা অফ কর।

যাহ তো তুই তোকে দেখেই বুঝা জাচ্ছে লজ্জা পাচ্ছিস আর আমাকে বলছিস চাপা মারছি। হুহ যাই হোক নিচে চল লেট হয়ে জাচ্ছে।

হ্যা চল।

এরপর আমাকে সবাই ধরে নিচে নিয়ে গেলো। মাথায় অনেক বড় একটা ঘুমাটা ছিলো তাই নিবিরকে দেখতে পারছিলাম না। বাট সারা আর লিয়ার কাছে শুনছিলাম যে অনেক কিউট লাগছিলো। এরপর কাজি এসে বিয়ে পরিয়ে দিলো। আর আমাকে বিদায়ের ব্যবস্থা করছিলো।

আমার অনেক কান্না পাচ্ছিলো কারন আমি কখন বাসা ছেরে একা কোথাও ছিলাম না। যতই ওইটা আমার নানু বাসা হোক না কেনো,এই কয়েক মাসে একবারো একা যাইনি। আমি আম্মু আর আব্বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করছিলাম তখন আমাকে আলিফ বললো,,,

বাহ আজকে আপদ দূর হচ্ছে 😁এখন থেকে আমার আদরে আর কেউ ভাগ বসাতে আসবে না।

আমার অনেক রাগ উঠলো তাই আমি রাগের দুক্ষে ওর গালে একটা থাপ্পর দিলাম।
ও কান্না করে দিলো। আমারও খারাপ লাগছিলো কারন ওর সাথে ঝগরা লাগলেও আমি ওরে অনেক ভালোবাসি। আর আজকে আমি চলে জাব আর ওর নাকি খুশি লাগছে। আমি বললাম,,,

বাবু সরি কান্না করে না। দেখ আমার অনেক খারাপ লাগছিলো তাই এমন করলাম ক্ষমা করে দে ভাই

আপি আমিও সরি আমার অনেক কান্না আসছিলো তাই এই কথা বলেছিলাম।

আচ্ছা ভাই সমস্যা নেই কান্না থামা আমি আবার আসবো আর তোর সাথে ঝগরা লাগবো ভাই। আর শোন আমার টেবিলের ড্রয়ারে চকলেট আছে নিয়ে নিস কিচ্ছু বলবো না।

সত্যি বলছো।

হ্যা রে পাগল।

ওরপর সবার সাথে আরো কিছু ক্ষন কথা বলার পর আমাকে আর নিবির কে গাড়িতে বসানো হলো। আমি কান্না করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম আর কিছু মনে নেই আমার,,

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here