ভালোবাসার নতুন_পরিচয়,পর্ব_৭ অন্তিম পর্ব

❤️ ভালোবাসার নতুন_পরিচয়,পর্ব_৭ অন্তিম পর্ব
লেখিকা ;; নিপু জামান

আমার অবাক হওয়ার কারন হলো নিবির আমার সামনে এক গুচ্ছ কালো আর লাল গোলাপ আর একটা ডায়মন্ডের রিং এর বক্স হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে আছে। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম আমরা একটা রেস্টুরেন্টে আছি,সেখানে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই।সবকিছু আমার পছন্দ মতো করা। কিছু লাল গোলাপ আর কালো সাদা ও লাল বেলুন আর কিছু নিল কেন্ডেল দিয়ে সাজানো। আমার কাছে সব সপ্নের মতো লাগছিলো আমি ভাবতেও পারছিলাম না যে এত সব আয়োজন আমার জন্য। আমার সব কল্পনা শেষ হলো নিবিরের ডাকে,,,
নিলান্তি কি হলো আমার উওর কই
কই কিছু বলছিলেন কি?
মানে তুমি কিছুই শুনোনি
নাহ
আচ্ছা ব্যাপার না আমি আবার বলছি,,
নিলান্তি আমি যানি আমাদের সব কিছু অনেকটা গোলমেলে আর কেমন যানো উলটা পালটা। এই তিন মাসে আমি অনুভব করেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি নিজেও জানিনা সব কিছু কিভাবে হলো। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোমাকে এখন অনেক ভালোবাসি তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না। আমি নিজেও তোমাকে বলতাম না কিন্তু না বলেও পারছিলাম না। তুমি হয়ত ভাবতেছ আমি স্নেহাকে ভালোবাসতাম, কিন্তু কখন যে তোমার জন্য মনের কোনে এক বিশাল জায়গা হয়ে গেছে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি, তোমার বাচ্ছামি গুলোকেও অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি হয়তো আমাকে ভালো নাও বাসতে পারো কিন্তু তুমি সময় নিতে পারো।আই সত্যি খুভ ভালো বেসে ফেলেছি তোমায়❤️ আই লাভ ইউ নিলান্তি❤️। তুমিকি আমার মনের গহিনের শূন্য জায়গার রানী হবে। হবেকি নিলান্তি নামে আমার নিল পরি, কথা দিচ্ছি কখনো ছেড়ে যাব না। দিবেকি তোমার হাতটা বাড়িয়ে।
আমি মুখে হাত দিয়ে রাখলাম আমার খুশি কে দেখে। আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে ও এতো তারাতারি আমাকে প্রপোস করবে। আমি ভাবতেও পারিনি যে ও এই তিন মাস পর আমার জন্য এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দিবে, আসলে সত্যি বলতে আমিও আমার মিস্টার পারফেক্ট কে খুভ ভালোবাসতাম । কিন্তু আমি চাইনি যে আমার জন্য নিবির আর স্নেহার রিলেশন নষ্ট হয়ে যাক। কিন্তু বিয়ের পরের দিনই শুনলাম যে স্নেহার বিয়ে হয়ে গেছে। তখন ও আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছিলো তাই আমি ওর সাথে থাকতে চাইনি। তাই আমার বাসায় চলে গিয়েছিলাম।কিন্ত পরের দিন কি হলো আমি নিজেও জানিনা যে ও কেনো আমাদের বসায় এসেছিলো আমাকে নিতে। আর আমি যাবার দিনও ও চাইছিলো না যে আমি আমাদের বাসায় আসি। আমি আমার হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম,,,
নিবির আই লাভ ইউ টু। আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি।এই তিন মাসে অনেক মিস করেছি। প্রথম একমাস অনেক কল দিয়েছিলাম কিন্ত আপনি কল ধরেন নি তাই রাগে আর কল দেইনি।অনেক কষ্ট হত, আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হত, আপনাকে একটা নজর দেখতে ইচ্ছা হত কিন্তু পারতাম না কথা বলতে, একটু সামনে থেকে দেখতে,, আমি কখনো ভাবতেও পারিনি আপনি আমাকে এতো বড় সারপ্রাইজ দিবেন,,,

এরপর নিবির আমার হাতে রিংটা পরিয়ে দিলো।আর আমি ওর হাত থেকে গোলাপ গুলা এক হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিলাম।
আমি রিং আর ফুল গুলো দেখছিলাম আর নিবির উঠে আমাকে বললো,,

পিচ্ছি আমি যে আপনাকে এতো কিছু দিলাম আমাকে কি কিছুই দিবেন না।

আমার কাছে তো এখন কিছুই নেই তো কি দিবো

আছে তো অনেক কিছুই আছে।

কি আছে।

তোমার ওই বাচ্ছা ঠোটের একটু ছোয়া কি আমার গালে দেওয়া যায় না।

আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।
নাহ আমার লইজ্জা লাগে

ওরে আমার লজ্জাবতীরে ওকে পিচ্ছি তোমাকে দিতে হবে না আমিই দেই।

নাহ আপনি দিলে অনেক ক্ষন লাগিয়ে দিবেন তার থেকে ভালো আমিই দেই।

বাহ মেঘ না চাইতেই জল। ওকে দেও।

এরপর আমি আলতো করে ওর গালে একটা কিস দিলাম।

নেন হয়ে গেছে।কি তুমি কিস দিছো নাকি
হ্যা মাত্রই তো দিলাম।এইটা কোন কিছু হলো
হ্যা এইটাই অনেক কিছু। ধুর তুমি অনেক কিপটা
আমি জানিতো 😁
হুহ আচ্ছা আমি দেই ওকে
নাহ নাহ কখনো না প্লিজ
কেন
এমনি।
ওকে দিলাম না তোমার ইচ্ছা যেইদিন তুমি নিজে চাইবে সেইদিনি সব কিছু হবে।
হুম
আচ্ছা চলো ওইখানে বসি তোমার তো খিদা লাগছে চলো কিছু খেয়ে নিবে।
ওকে চলেন আমারো অনেক খিদে পেয়েছে।
নিবির আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো আর আমি ওকে এক মনে দেখছিলাম,, কিন্তু হঠাৎ মনে হয়ে গেলো স্নেহা আপুর কথা, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম,,,

আচ্ছা নিবির আগে তো আপনি আমাকে ভালোবাসতেন না। আর আমি যতো টুকু শুনেছিলাম যে আপনি স্নেহা আপুকে অনেক ভালোবাসতেন তো তার বিয়ের পর এতো সহজে আমাকে এই তিনমাসে কিভাবে ভালোভাসলেন। মানে আমার মধ্যে তো এমন স্পেশাল কিছু নেই আর আমরা একসাথে এমন কোন টাইমও কাটাইনি যাতে আপনি আমাকে এতো ভালোবাসবেন ।তো সত্যি টা কি একটু বলা যাবে।

আমি এই কথা বলার সাথে সাথে নিবির কান্না করে দিল।
নিবির কি হইছে তোমার কান্না কেন করছ।আমি কি কিছু করেছি বা তোমাকে আঘাত করে কথা বলেছি বলনা কি হয়েছে,
না রে আমার পাগলি বউ তুমি কিছু করনি আর আমি তোমার জন্য কান্না করছি না,,,

তাহলে বাচ্ছাদের মতো কান্না কেন করছো।আমি মনে হয় স্নেহা আপুর কথা বলেছি তাই খারাপ লাগছে তোমার, মনে পরে গেছে আগের কথা তাই না। অনেক ভালোবাসতে আপুকে।
নিলান্তি আজকে তোমাকে একটা সত্যি কথা বলবো যা শুনলে তোমার স্নেহার প্রতি ধারনা পাল্টে যাবে।
হ্যা বলেন।
তোমার মনে আছে নিলান্তি ওইদিন যখন তুমি আমার কানে চিৎকার দিলে তখন আমি স্নেহার সাথে কথা বলছিলাম ও অনেক কান্না কাটি পরছিলো যেনো বিয়ে না হয়। তোমাকে বকা দেওয়ার পর আমি ওর বাসায় গিয়েছিলাম ওকে আমার কাছে আনার জন্য কিন্তু গিয়ে শুনি যে ও বিষ খেয়েছে। আর ওকে হস্পিটালে নেওয়া হয়েছে। আমি সাথে সাথে হস্পিটাল গিয়েছিলাম,,সেখানে ওর ফ্যামেলির সবাই ছিল সবাই অনেক কান্না কাটি করছিলো আর আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো। প্রায় অনেক সময় পর ডক্টর বললো যে ওর অবস্থা অনেক খারাপ নিবির নামের কাকে যেনো খুজছে। আমি ভিতরে যাওয়ার পর ওর সাথে অনেক কথা হয়েছিলো আমার। অনেক বকেছিলাম পাগলিটাকে যে কেনো এমন করলো। ও আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো এমন করার জন্য। কিন্তু ততোক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো ওর বাচার কোন চান্স ছিলোনা। ও আমাকে অর কাছে কথা দিতে বলেছিল যে তোমাকে জেনো কখনো কষ্ট না দেই। তোমার মাঝেই যেনো নিশ্বার্থ ভাবে ওরে খুজে নেই। আর ও যেমন সবার কাছে খারাপ হয়ে আছে তেমনি যেনো থাকে। কেউ জেনো জানতে না পারে যে ও আর এই পৃথিবীতে নেই। সবার মাঝে ও বাচতে চেয়েছিলো কিন্তু হলো না। তাই আমি ওর কথা রাখতে তোমাকে নতুন করে চিনেছি। তোমাকে তোমার মতো করে ভালোবেসেছি। আর কে বলেছে তিন মাসে তোমার কোন খোজ নেইনি। আমি তোমার পরিবার এর সবার থেকে তোমার সব খোজ নিয়েছিলাম।আমি চাইনি আমার জন্য তোমার লেখাপড়ায় কোন ক্ষতি হোক। আর অনেক সময় আরাল থেকে তোমাকে ফলো করেছি। যানি অনেক ভুল বুঝেছো। হয়তো ভাবতে পারো স্নেহাকে দেওয়া কথা রাখতে তোমাকে ভালোবেসেছি। কিন্তু সেইটা ভাবলে ভুল হবে। আমি সত্যিই এখন তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু স্নেহাকে ভুলে যাওয়া যে আমার পক্ষে সম্ভব হবে না, এতো দিন এই কথা গুলো কাওকে বলতে পারিনি। আজকে তোমাকে বলেছি যার কারনে এখন আমার মন অনেকটা হাল্কা লাগছে।
আমি ওর কথাগুলো শুনে কান্না করে দিলাম। নিবির এতো দিন কতো কষ্ট নিয়ে থেকেছে। কাউকে বুঝতে দেয়নি ওর কষ্টটা। আর আমিও কতো ভুল বুঝেছি ওকে এতো দিন। আমার এখন ওর পাশে থাকা সব থেকে জরুরি।
নিবির একবারতো বলতে পারতে তোমার ভিততে থাকা কষ্ট গুলো। স্নেহা আপুকে এতো ভালো বাসতে আর তার মৃত্যু তুমি কারো কাছে কান্না পর্যন্ত করতে পারনি। সব দোষই আমার,, আমার সাথে যদি তোমার বিয়ের সম্পর্ক না থাকতো তাহলে কিছুই হতো না।
আমাদের নতুন পরিচয়ই তোমার থেকে স্নেহা আপুকে সরিয়ে দিছে।
প্লিজ নিলান্তি নিজেকে দোষ দিও না। তুমি তো কিছু জানতেই না তোমার কি দোষ বল।নিয়তিই চায়নি যে আমি আর স্নেহা দুজন এক সূত্রে বাধা হই। আমার নিয়তিতে ছিলে তুমি।
তারপরো আমার জন্যই তো তুমি তোমার ভালোবাসা হারালে। না বুঝে স্নেহা আপুকে কতো কথা বলেছিলাম। কিন্তুনআপু মরার আগ পর্যন্ত আমার ভালই চেয়ে গেল।আমার বড় বোন নেই তো কি হয়েছে। আপুই আমার বোনের আসনে থাকবে। আমাদের এই নতুন পরিচয়ের মাঝে আপু সারা জীবন বেচে থাকবে।
ধন্যবাদ নিলান্তি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়ত স্নেহা আমাদের মধ্যে থকতে পারতো না।
আচ্ছা বাবু কান্না থামাও প্লিজ।
হুম আর আমাদের মেয়ের নামও আমরা স্নেহা রাখবো।
হুম।
তুমি কিন্ত আপুকে ভুলে যেও না। জাস্ট আপুর পাশে আমাকে একটু জায়গা দিও।
ঠিক আছে আমার পাগলি বউ। তোমাকে একটু না অনেক ভালোবাসা দিবো।পিচ্ছিটা আমার।
আই লাভ ইউ,,,

লাভ ইউ টু মামাতো জামাই 😁😁😁😁😁

এভাবেই চলতে থাকল দুটি ভালোবাসার মানুষ এর পথচলা,,,,,

সমাপ্ত,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here