ভাবী_যখন_বউ পর্ব_১১

ভাবী_যখন_বউ
পর্ব_১১
Syed_Redwan

পরেরদিন আমি আবার গেলাম রিহান ভাইয়ার বাসায়। আমাকে জানতেই হবে আমার ভাইয়ার ব্যাপারে খুঁটিনাটি সবকিছুই। হয়তো একেবারেই গুরুত্বহীন ভেবে এমনসব ব্যাপারও আমরা এড়িয়ে গিয়েছি, যেগুলোই সবচাইতে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আমি বললাম,
“আচ্ছা, ভাইয়াকে পছন্দ করতো, এমন কেউ আছে?”
“অনেকেই তো আছে। কার কথা বলব?”
“উমম…..এমন কেউ যে ভাইয়ার পিছনে বেহায়ার মতো লেগে থাকতো। ভাইয়া রিজেক্ট করার পরও ভাইয়ার পিছু ছাড়তো না?”

অতঃপর রিহান ভাইয়া আমাকে যা শোনালো, তা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। তাহলে কি আমি আমার ভাইয়া আর ভাবীর খুনীদের পেয়ে যাবো?

হয়তো। তবুও আমি নিশ্চিত নই। না পাওয়ার সম্ভাবনাটাই আমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে যুক্তিযুক্তভাবে।

আমার কথার উত্তরে রিহান ভাইয়া বলেছিল,
“ওর আর আমার কর্মক্ষেত্র আলাদা, তাই এই বিষয়ে তেমন একটা কিছু জানি না। কলেজ কিংবা ভার্সিটি লাইফের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, ওর তেমন কোন শত্রুই নেই মেয়েঘটিত। বেশ কয়েকটা প্রোপোজাল পেলেও ও না করে দেয়। পরে আর সেই মেয়েগুলো তাকে আর বিরক্ত করেনি। দেখা গেছে কিছুদিন পর অন্য কাউকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
আমি বললাম,
“তাহলে ভার্সিটির পর কোনভাবে তার শত্রু হবার সম্ভাবনা আছে কি?”
“উমম… একবার আমাকে ও বলেছিল ওর ব্যাংকের ম্যানেজারের মেয়ে নাকি ওকে উত্যক্ত করতো। মানে সবসময় পিছনে লেগেই থাকতো। কিন্তু ওর তো এমন করার সম্ভাবনা নেই।”

আমি খটকা লাগা এখন থেকেই শুরু হলো। ভাইয়াকে একটা মেয়ে উত্যক্ত করতো? আমার মনে প্রশ্নের জোয়ার ভেসে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“পুরোটাই খুলে বলুন ভাইয়া প্লিজ। আমি এই বিষয়ে খুঁটিনাটি সবকিছুই স্পষ্টভাবে জানতে চাই।”
“বলছি। রিফাতের ব্যাংকের যে বর্তমান ম্যানেজার আছেন, তাঁর মেয়ে নামটা যেন কী……… সিমি! হ্যাঁ, সিমি। রিফাত একবার বলেছিল। ওই বাজে মেয়েটা রিফাতের পিছনে একেবারে আঠার মতো লেগে থাকতো।”
“কবে থেকে?”
“আজ থেকে দু’বছর আগে থেকেই রিফাতকে চাইতো ও। ম্যানেজারের বাসায় একবার একটা পার্টিতে গিয়েছিল বেচারা রিফাত। সেখানেই সিমি ওকে দেখে, আর ব্যস! পিছনে লেগে যায় আঠার মতো।”
“এরপর?”
“সিমি মেয়েটা রিফাতকে বিয়ে করার জন্য একেবারে পাগল হয়ে যায়। নিজের বাবাকে পর্যন্ত রাজি করিয়ে ফেলে এর জন্য। তাছাড়া রিফাত তখন চাকরিতে নতুন জয়েন করলেও সবদিক দিয়েই একজন যোগ্য পাত্র ছিল। তাই ওর ব্যাংকের ম্যানেজারের রিফাতকে নিজের মেয়ের আবদারে নিজের জামাই হিসেবে গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা ছিল না। ম্যানেজার নিজেই এসে রিফাতের কাছে নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু রিফাত রাজি হয়নি।”
“এই ঘটনা কি দুই বছর আগের না?”
“হুম, দুই বছরের মতো আগের ঘটনাই এটা।”
“এখন কথা হচ্ছে, স্নিগ্ধা ভাবীকে রিফাত ভাইয়া প্রায় এক বছর আগে থেকে ভালোবাসে। আর তার অফিসের ম্যানেজারের মেয়েকে বিয়ের অফার পেয়েছিল দু’বছর আগে। মানে ভাইয়ার জীবনে স্নিগ্ধা ভাবী আসারও এক বছর আগের ঘটনা এটা। তখন তো স্নিগ্ধা ভাবী ছিল না। তাহলে কী দেখে এত ভালো একটা বিয়ের সম্বন্ধ নাকচ করে দিয়েছিল ভাইয়া?”

আমার কথা শুনে রিহান ভাইয়া একটু হেসে নিলেন। তারপর বললেন,
“ওইটা যে একটা ভালো বিয়ের সম্বন্ধ ছিল, এটা কীভাবে বুঝলে তুমি?”
“না হওয়ার কী আছে? বাবা ব্যাংকের ম্যানেজার, তাছাড়া আমার মনে হয়েছে যে ওই মেয়ের পুরো ফ্যামিলি স্ট্যাটাসই ভালো, তাই অনুমানের ভিত্তিতে বললাম আরকি। আমি ভুলও হতে পারি। আসলে, আমি তদন্ত করছি তো, তাই অনেক কিছুই ধরে নিতে হচ্ছে।”
“ওই মেয়েকে আর ওর পরিবারকে আমি একদমই ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। সামনাসামনি কোনদিন দেখিওনি। শুধুমাত্র রিফাতের মুখ থেকে শুনেছি ওর ব্যাপারে। ওই মেয়ের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস আমি রিফাতের মুখ থেকে যতটুকু শুনলাম, একেবারেই জঘন্য মনে হয়েছে আমার কাছে। ওই মেয়ের বাবা মানে ম্যানেজার আরকি, কতটা খারাপ জানো? তার বিরুদ্ধে নাকি নারী নির্যাতনের কেইস আছে। এমনকি ওই লোক নাকি পতিতালয়েও যায় নিয়মিত, যেখানে তার নিজের ঘরেই বউ আছে, সন্তান আছে। এগুলো তার অফিসের কলিগদের সাথেও নির্লজ্জের মতো শেয়ার করে। আর সবচেয়ে বড় কথা কী জানো? রিফাত ওই লোকের মেয়েকে বিয়ে করতে না করে দেওয়ার পর রিফাতকে চাকরিচ্যুত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার মেয়েকে রিফাতের ভালো না-ই লাগতে পারে। তাই বলে রিফাতের ক্ষতি কেন করতে চাইবেন তিনি? শুধুমাত্র তার চরিত্রহীন বাজে মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছে, এজন্য? এখান থেকেই আরো ভালোভাবে বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই যে কতটা খারাপ সে। কিন্তু ভাগ্য ভালো, রিফাতের ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নিয়মকানুন খুবই কড়া ছিল। কোন কারণ ছাড়া কাউকে চাকরি থেকে বের করতে পারে না কেউ সেখানে, সেটা হোক ম্যানেজার কিংবা তার চেয়েও উচ্চপদস্থ কেউ। তাই অনেক চেষ্টা করেও রিফাতকে পারেনি ওই ম্যানেজারের বাচ্চা চাকরিচ্যুত করতে, কারণ রিফাতের কোন খুঁতই ছিল না। বরং ওই ম্যানেজার নিজেই কামচোর ছিল। তাই কিছুদিন রিফাতকে জ্বালানোর পর রিফাত উল্টো যখন তার উপর অতিষ্ঠ হয়ে তার কাজের গাফিলতিগুলো কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে দেখানোর হুমকি দিল, তখন গিয়ে ব্যাটা শান্ত হলো। কিন্তু তাদের মধ্যকার রেষারেষিটা রয়েই গিয়েছিল। তবুও, ওই ম্যানেজার মনে হয় না ওকে খুন করতে পারে। কারণ খুন করার মতো শত্রুতা নয় এটা।”

এতক্ষণ ধরে রিহান ভাইয়া যা যা বললেন, তার পুরোটাই আমার অজানা ছিল। বলতে গেলে ভাইয়া চাকরিতে জয়েন করার পর থেকেই আমাদের মাঝে সম্পর্ক ঠিক থাকলেও কথা বলার পরিমাণটা ব্যস্ততার কারণে কমে গিয়েছিল। তার কারণ ভাইয়ার অফিস এবং আমার পড়ালেখার চাপ। ভাইয়া প্রোমোশনের জন্য অনেক ব্যস্ত থাকতো আর আমি নিজের লেখাপড়ায় সেরা হওয়ার জন্য এটাতেই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম। তাছাড়া এসব কথাবার্তা বাসার লোকজন বাদে বাইরে বন্ধুবান্ধবদের সাথেই শেয়ার করা হয় বেশি। তাই তো এসব খবর আমার চেয়ে রিহান ভাইয়াই ভালো জানে ভাইয়ার সম্পর্কে।

কিন্তু এখনও আমার সকল প্রশ্নের উত্তর জানা হয়নি। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“এসব বুঝলাম। কিন্তু ওই সিমি নামের মেয়েটার কী হলো? ওর মধ্যে কী কী খারাপ গুণ ছিল যে জন্য ওকে পছন্দ করা যেত না? মানলাম যে ওর বাবা খারাপ। কিন্তু ওর মধ্যেও কি খারাপ কোন গুণ ছিল যার জন্য সে তাকে বিয়ে করতে চায়নি, নাকি শুধুমাত্র তার বাবা খারাপ দেখে না করেছিল।

আমার কথায় রিহান ভাইয়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
“ওই মেয়ের বাবা, মানে রিফাতের ব্যাংকের ম্যানেজার নিজের মেয়ের চেয়ে কিছুটা হলেও আমার মতে ভালো ছিলেন, জানো? অন্তত আমার সেটাই মনে হয়।”
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,
“মানে?”

এবার রিহান ভাইয়া বলা শুরু করলেন,
“ওই মেয়ের চরিত্র অনেক খারাপ ছিল। এটা রিফাত ওর সৌভাগ্যের কারণে সেটা আগেভাগেই জানতে পেরেছিল। অনেক ছেলের সাথে ওর মেলামেশা ছিল।”
আমি বললাম,
“অনেক ছেলের সাথে মেলামেশা থাকলে সিমি ওই ছেলেদের মধ্যেই কাউকে বিয়ে করে ফেলতো। শুধু শুধু আমার ভাইয়ার পিছনে কেন লেগেছিল?”
“একজন ছেলে অনেক মেয়ের সাথে এবং একজন মেয়ে অনেক ছেলের সাথে মেলামেশা করতে পারে। কিন্তু বিয়ে করতে পারে না তাদের। কারণ বিয়ে কেবলমাত্র পার্ফেক্ট মানুষকেই করা যায়। আর বিয়ের জন্য তোমার ভাইকেই তার পার্ফেক্ট মনে হয়েছিল।”

আমার কিছুটা বুঝে আসছে ব্যাপারটা। আমি বললাম,
“ভাইয়া কীভাবে জেনেছিল যে সিমি নামের মেয়েটার চরিত্র খারাপ, ও অনেক ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করে?”
“রিফাতের অফিসের পাশেই একটা আবাসিক হোটেল আছে। ও একবার দেখে ফেলে যে সিমি একটা ছেলের হাত ধরে হোটেলের ভিতর ঢুকছে। তখনও সিমি রিফাতকে বিয়ের প্রোপোজাল দেয়নি ভাগ্যিস। এই ঘটনার পর বেশ কয়েকবারই রিফাত সেই হোটেলের দিকে হয় নিজে কিংবা পরিচিতদের দিয়ে নজর রাখতো। এরপর জানতে পারে যে ওই মেয়ে একেকদিন একেক ছেলের সাথে ওই হোটেলে গিয়ে সময় কাটায়।”

এই কথাটা শুনে আমার মাথাটা ধরে আসছে। তবুও নিজেকে শান্ত করে আবার জিজ্ঞেস করলাম,
“এটা কি সিমির বাবা জানে না? মানে অফিসের পাশে আবাসিক হোটেলটা, আর যেহেতু ভাইয়ার নজরে পড়েছিল, তাই ম্যানেজার মানে সিমির বাবারও তো জানা উচিত ছিল এটা।”
রিহান ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
“না জানার কারণ কী? জানতো নিশ্চয়ই। বাপ-মেয়ের স্বভাব মিলে যাওয়াটা কি অস্বাভাবিক কিছু? আমার তো মনে হয় যে ওই লোক নিজের মেয়ের এহেন কাজকে সমর্থনই করতেন।”

কিছুক্ষণ থেমে রিহান ভাইয়া আবার বলতে লাগলেন,
“তাহলে ব্যাপারটা খালি একবার ভেবে দেখো। যেই মেয়ে বিয়ের আগেই একের পর এক ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে, নিজের সতীত্বকে বারবার ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেয় শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য, এমন মেয়েকে জেনেশুনে কোন ভদ্র ঘরের ছেলে বিয়ে করতে চাইবে আমাকে বলো তো? ওই মেয়ের যদি এতটাই শারীরিক অতৃপ্তি থাকে, দৈহিক জ্বালায় কাতরাতে থাকে এতটাই যে তার প্রায়ই একেক দিন একেক ছেলের সাথে সেক্স করতে হয়, তাহলে সে আগেই কেন কোন শক্ত সামর্থ্য পুরুষকে বিয়ে করে ফেললো না? কেন সে বারবার নিজেকে এসব করে অপবিত্র আস্তাকুঁড়ের চেয়েও নিকৃষ্ট বানাচ্ছে?”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“এগুলো বলে কাজ নেই ভাইয়া। যে খারাপ, সে খারাপই থাকবে। এখন বলেন, ওই মেয়ে আমার ভাইকে খুন করেছে, এটার সম্ভাবনা কতটুকু?”
আমাকে অবাক করে দিয়ে রিহান ভাইয়া বলল,
“আমার মতে, একেবারেই নেই।”
“কী!”
“হ্যাঁ। আমার মনে হয় না যে সিমি রিফাতকে খুন করেছে।”
“কিন্তু এটা কীভাবে মানবো বলেন? সিমির মতো হিংস্র একটা মেয়ে যে ভাইয়া তাকে বিয়ে করার জন্য রিজেক্ট করার পরও ভাইয়ার ক্ষতি করবে না, এমনটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়।”
“সিমির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”
“What!”

কিছুটা বিরতি নিয়ে রিহান ভাইয়া আবার বলতে লাগলেন,
“সিমি কিন্তু লাগাতার প্রায় দু’বছরের মতো তোমার ভাইকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু তোমার ভাইয়া বরাবরের মতো না করে দিত।”
“আচ্ছা, ভাইয়া কি কখনো ওই মেয়েকে ওর নষ্ট চরিত্রের বর্ণনা দিয়ে চিরদিনের মতো তার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য শক্তভাবে বলেনি।”
“না, এমনটা রিফাত করেনি। এমনকি রিফাত যে সিমির ওইসব কুকীর্তি সম্পর্কে জানতো, এটাই সিমি কখনো জানতে পারেনি। রিফাত কেমন ছিল সেটা তো তুমি জানতেই; কারো সাথে কোনভাবেই কোন ঝামেলায় জড়াতো না। দরকার পড়লে সবসময় চুপ থাকতো, কিন্তু তবুও কারো পিছনে লাগতো না বা ক্ষতি করার মতো কাজ করতো না। ও যদি সিমিকে বলে দিত যে ও সিমির সেসব কুকীর্তি সম্পর্কে অবগত, তাহলে সিমি ভয় পেয়ে যেত। সবসময় ভাবতো যে রিফাত সিমির এই কুকীর্তি সবাইকে বলে দিতে পারে যেকোন সময়। তাই এই ভয়ে সিমি রিফাতের কোন বড় ধরনের ক্ষতিও করতে পারতো। এজন্যই রিফাত কখনো সিমিকে বলেনি যে ও সিমির কুকীর্তি সম্পর্কে অবগত ছিল। সে ভদ্রভাবেই সিমিকে প্রত্যাখ্যান করতো বারবার।”

আমি এই পর্যন্ত সবকিছু বুঝতে পারলেও এটা বুঝতে পারছি না যে, সিমি তাহলে কাকে বিয়ে করলো? আর এখন কোথায় আছে সে। সত্যি কি সে ভাইয়ার খুনী হওয়ার সম্ভাবনা রাখে? আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,
“এরপর?”
“হুম। তোমার ভাই যে স্নিগ্ধাকে এক বছর আগে ধরে ভালোবাসত, সেটা সিমি কোনভাবে জেনে যায় কয়েক মাস আগেই। সিমি তোমার ভাইকে বারবার স্নিগ্ধার থেকে দূরে যেতে বলে এবং তাকে বিয়ে করার জন্য জোর করেও ব্যর্থ হয়। শেষমেশ, আজ থেকে প্রায় ৪০-৪৫ দিন আগে, মানে রিফাতের মৃত্যুর প্রায় একমাস আগেই একজনকে সিমি বিয়ে করে নেয় শুনেছি আর সাথে সাথে নাকি হানিমুনেও দেশের বাহিরে চলে যায়। অতএব, আমার মনে হয় না যে সিমি এখানে খুনী। কারণ সে আগে যাই করে থাকুক না কেন, আমার মনে হয় না যে সে তোমার ভাইকে খুন করবে। কারণ তার তো ইতিমধ্যে বিয়েও হয়ে গিয়েছিল, তার সাথে সে নিজের স্বামীকে নিয়ে দেশের বাইরে। তোমার ভাইকে খুন করে কী লাভ হতো তার, শুনি?”
“হুম, কথায় যুক্তি আছে আপনার। তাহলে এখন কী করণীয় আমার?”
“দেখো, কী করতে পারো। আমার মনে হয় যে এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা।”
“এটা কীভাবে সম্ভব? আমি নিজে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি। সেখানে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ভাইয়া আর ভাবীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
“আমার কাছে সন্দেহভাজন তেমন কেউ নেই।”
“আচ্ছা। ঠিক আছে তাহলে।”
“আমি তবুও নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি জানার।”
“ধন্যবাদ ভাই।”
“ধন্যবাদ কেন দিচ্ছ? আমি তার বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম। এটা তো আমার একান্ত কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।”
“😊।”

কিছুটা হতাশা নিয়েই বের হলাম রিহান ভাইয়ার বাসা থেকে। কীভাবে সমাধান করব এই রহস্য? কীভাবে বের করব ভাইয়া আর ভাবীর খুনীদের? আমি কাউকে সন্দেহ করার পরপরই সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যায়। আমি কী করি এখন?

আজ বাসায় যাওয়ার পর দেখি আমার রুমটা অনেক সুন্দর করে গোছানো। রাইফাকে জিজ্ঞেস করার পর বলল যে রাতেই জানতে পারব সবকিছু।

রাতে খাওয়াদাওয়া করে রুমে আসার পর দেখি রুমে রাইফা নেই। কিন্তু আমার জানামতে রাইফা আজ আমার আগেই খেয়ে নিয়েছে। তাহলে এখন কোথায় ও? মেঘার রুমে? হয়তো।

আমার ধারণাটা সঠিক প্রমাণ করে দিয়ে কিছুক্ষণ পর মেঘা রাইফাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল। মেঘা বলল,
“নে ভাইয়া, ভাবীর অনুরোধে তোর জন্য তাকে সাজিয়ে দিলাম। কেমন লাগছে ভাবীকে হুম? সুন্দর হয়েছে না?”

আমি রাইফার দিকে তাকিয়ে দেখি যে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে ওকে মেঘা। আজকাল রাইফাকে দেখতে আমার অনেক সুন্দর লাগে, প্রয়োজনের চাইতেও অধিক মোহনীয় লাগে ওকে, যেটা আগে ভার্সিটিতে থাকাকালীন লাগতো না। তাই তো নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার আশংকায় ওর মুখের দিকে খুব কমই তাকাই আমি। কেন ওর প্রতি এখন আমি এত আকর্ষিত হচ্ছি, এর উত্তরটা আমার এখনো অজানা। তার উপর এখন এমন সাজ দিয়েছে যে, আমার পক্ষে চোখ ফেরানো দায়। মেঘা বলল,
“আসলে, ভাবীও অনেক সুন্দর করে সাজাতে পারে জানো? গত এক মাস আমাকে অনেকবারই সুন্দর করে সাজিয়েছে। আমার বিয়ের সময়ও ভাবী নাকি আমাকে সাজিয়ে দিবে। আমার তাহলে আর আলাদা করে পার্লারে যাওয়া লাগবে না😁। তাই এর বিনিময়ে মাঝেমধ্যে আমিও ভাবীকে সাজিয়ে দিব। ডিল!”
আমি বললাম,
“এত তাড়াতাড়ি বিয়ের শখ কেন জেগেছে রে তোর? দাঁড়া, আব্বু-আম্মুকে বলে তোর বিয়ের ভূত নামাচ্ছি।”
“🤪।”

মেঘা দৌঁড়ে রুম থেকে চলে গেল। আমি দুষ্টুমি করে ওকে ধাওয়া করার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হতে নিলেই রাইফা আমার হাত ধরে ফেলে। আমি বাধা পেয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়াই। দূর থেকে ওকে যতটা সুন্দর লাগছিল, একদম কাছ থেকে ওকে তার চাইতেও বহুগুণ বেশি সুন্দরী মনে হচ্ছে। আমি একটা ঘোরে চলে গেলাম। ওর দু’গালে হাত রাখলাম। ও নিজের দু’হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরল। আমার কী হলো জানি না, আমি ওর ঠোঁটে গভীরভাবে চুম্বন করতে লাগলাম। এরই মাঝে কখন যে ওকে কোলে তুলে নিয়েছি, খেয়ালই নেই আমার সেটাতে। ওকে বিছানায় শুইয়ে আমি ওর উপর উঠলাম। ও আমার গলা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমি নিজেকে যেই অনাবৃত করতে যাবো, ঠিক তখনই আমার সম্বিত ফিরে আসলো। এটা আমি কী করতে নিচ্ছিলাম? এমনটা তো আমার এখন করার কথা নয়! আমি নিজেকে এক ঝটকায় রাইফার থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।

রাইফা এই মুহূর্তে আমার কাছ থেকে এমন আচরণের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। ও বলল,
“কী হলো? দূরে গেলে কেন আমার থেকে?”
“তুমি যেটা চাচ্ছ, সেটা এখন কোনভাবেই সম্ভব নয়।”
“কিন্তু কেন? এতক্ষণ তো সবই ঠিক ছিল। তোমার নিজের সম্মতিও তো ছিল।”
“আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না এতক্ষণ। এত সুন্দর করে কেন সেজেছ হুম? এটা এখন আমার পক্ষে কোনভাবেই করা সম্ভব নয়।”
“কেন?”

এমন অবস্থায় আমার রেগে যাওয়ার কথা, কিন্তু আমি রাগলাম না। কারণ রাইফা যেটা চাচ্ছে, সেটার অধিকার অবশ্যই আছে তার। কিন্তু আমি যে পারব না এটা এখন করতে। আমি বললাম,
“আমার ভাইয়া আর ভাবীর খুনীদের বের করা অবধি আমি পারব না তোমার সাথে অন্তরঙ্গ হতে। প্লিজ আমাকে মাফ করো।”
বলেই আমি উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি জানি যে আমার কথায় এবং কাজে রাইফা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমি যে নিরুপায়।

রাইফা আমার দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর কিছু একটা ভেবেই তার অতি পরিচিত একটা পৈশাচিক হাসি দিল। ওর চোখ বেয়ে নেমে আসা পানি হাতের তালু দিয়ে মুছে নিল। আমি ঘুমিয়ে যাওয়া অবধি আমার দিকে তাকিয়েই রইল। আমি ঘুমানোর পর আমার ঘাড়ে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে পাশে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি যে আমি রাইফাকে জড়িয়ে ধরে নেই। তার মানে কি রাইফা গতকালের ঘটনায় মন খারাপ করেছে? খুব খারাপ লাগছে আমার এখন এসব চিন্তা করে। আজ সকালে রাইফার সাথে তেমন কোন কথা হয়নি।

আমি ভার্সিটির পর বিকেলের দিকে পাশের এলাকায় গেলাম একটু একা একা ঘুরতে। যখনই কোন জটিল বিষয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন হয় আমার, আমি একা একা একটু ঘুরে চিন্তা করতে পছন্দ করি, বিশেষ করে এই এলাকাতেই। সেখানে একটা টঙে বসে চা পান করছিলাম। হঠাৎ করেই আমার পাশের বেঞ্চে একজন এসে বসলো। আমি তার দিকে ভালোমতো খেয়াল করেই চমকে উঠলাম। এ কাকে দেখছি আমি? তাহলে কি……..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here