বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৬

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৬
#পলি_আনান

চারিদিকে ঝড়ের তান্ডব বেড়েই চলেছে বজ্রপাতের ধ্বন্নি।ওজিহা শান্ত হয়ে বসে আছে নাহিয়ানের পাশে।ওজিহার দিকে সবাই কেমন ভীতকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে জারাকে দেখে বুঝাযাচ্ছে সে বেশ খুশি।রওনক আর ফাহাদ ভীতকর দৃষ্টিতে ওজিহার দিকে তাকিয়ে আছে।মিতু রাকিবের কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
“ভাই আমার কেমন জানি লাগতাছে, সন্দেহ হচ্ছে এই মেয়ে কি ভুত জ্বিন নাকি।ওকে যখন রুমে বসে সাজাচ্ছিলাম তখন পুরো রুম জুড়ে কেমন যানি ভীতকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, পুরাই গা ছম ছমে ব্যাপার।আমার কেমন জানি লাগছে দোস্ত।”
হঠাৎ রুম কাপিঁয়ে কারো ফোনে ভাইব্রেশন হতে থাকে সবাই সবার ফোন চেক করা শুরু করে। ওজিহা বাম হাত দিয়ে শক্ত করে ফোন চেপে আছে যেন নাহিয়ানের চোখে না পরে।কিন্তু শেষ রক্ষে আর হলো না নাহিয়ান ওজিহার হাত থেকে একটানে ফোন টি নিয়ে নেয়।ফোনের স্কিনের দিকে তাকাতেই মুহিব নামটা জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠে আর তা দেখে নাহিয়ান দেয়ালের সাথে ফোনটিকে জোরে আছাড় দেয়।নাহিয়ানের কান্ডে ঘরের সবাই কেপেঁ উঠে।তার এমন রাগ শেষ বন্ধুরা কবে দেখেছিল মনে নেই।ঠান্ডা মাথায় কীভাবে সব কিছু সামাল দিতে হয় তা নাহিয়ান ভালো করেই যানে।
রাকিব মিতুর কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
” বইন আর কিছু বলিস না,নাহিয়ান খেপছে,যদি যানে আমরা তার বউ রে ভুত জ্বিনের খেতাব গায়ে লাগাই দিছি তবে আমাদেরো একই ভাবে আছাড় মারবো। নিজেকে বাচাইতে চাইলে চুপ থাক”.
“আমি কিছু যানি না। কি হচ্ছে কেন হচ্ছে”
“আমি ও যানি না চোখ আছে দেখে যা”
ওজিহা ভয়ে আরো গুটিয়ে যায়। তার সাথে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।কাজী সাহেব নাহিয়ানের দিকে কলম বাড়িয়ে দিলে সে সাইন করে দেয়।নাহিয়ানের করা শেষ হয়ে ওজিহার দিকে সেই কলম বাড়িয়ে দেয়,সে কাপাকাপা হাতে কলমটি ধরে তবে সাইন করে না কলমটি সামনের দিকে ছুড়ে মারে, আর দাড়িয়ে পরে । রাগে তার শরীর থরথর করে কাপছে, নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি সাইন করবো না”
“ভালোয় ভালোয় সাইনটা কর ” (শান্ত স্বরে নাহিয়ান)
“বললামতো করবো না”
“না করলে জারার সাথে কিন্তু খারাপ কিছু হবে” (গম্ভীর কন্ঠে)
“উহু কিচ্ছু হবেনা,”
এবার জারা এগিয়ে আসে ওজিহার সামনে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“ওজিহা সাইনটা করে দে বোন, পাগলামি করিস না”
ওজিহা জারাকে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়।রাগে তার মাথায় এখন কিচ্ছু কাজ করছেনা,
“আমি পাগলামি করছিনা জারা।”
ওজিহা এবার নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“দেখুন আমি আপনাকে বিয়েটা করতে পারবো না, আমার একজন পছন্দের মানুষ আছে। আর আমি বিয়ে করলে মুহিব কেই ক….”
কথাটি আর শেষ করতে পারলোনা সে তার আগেই নাহিয়ান তার গালের উপর তান্ডব চালিয়ে দেয়।ওজিহার গালে চড়টা এতো জোরেই লেগেছে তার মনে হচ্ছে বাম পাশের সব দাত খুলে হাতে চলে আসবে।পুরো গালটা অবশ হয়ে গেছে।মাথায় ঝিম ধরে গেছে।কান দিয়ে গরম ধৌয়া বের হচ্ছে।নাহিয়ানের কান্ড দেখে মিতু আর সাবিহার মুখে অটোমেটিক হাত চলে যায়।তারা যতদূর যানে নাহিয়ান মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে তবে এখন হবু বউয়ের গায়ে হাত তুললো বিষয়টা সহযে হজম করা যাচ্ছে না।
রওনক নাহিয়ানকে হাত টেনে দূরে সরিয়ে আনে। জারা গিয়ে ওজিহার পাশে দাড়িয়ে পরে।
“ওই তুই কি পাগল হই গেছিস ওর গায়ে হাত তুললি কেন”
“আমি ঠিক আছি রওনক, প্রয়োজন পরলে আরো দুই চারটা চড় বেশি পরবে।ওর সাহস কি করে হয় হবু বরের সামনে অন্য ছেলের নাম নেয়”
ওজিহার চোখ দিয়ে অবাধ্য জল গুলো গড়িয়ে পড়ছে এই জীবনে এমন মার তার কপালে জুটেছে কিনা সন্দেহ। ফর্সা গালে পুরো লাল রঙের আবিরর্ভাব ধারন করেছে।তার ঠোট গুলো কাপছে,নাকের ঢগা লাল হয়ে গেছে, জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে,ভয়ে কাপছে নাকি রাগে কাপছে কিছুই বুঝতে পারছেনা জারা,মিতু আর সাবিহা।কাজী সাহেব তাদের কান্ড বেক্কেলের মতো তাকিয়ে দেখছে দেখা ছাড়া তার যেনো আর কোন উপায় নেই।হঠাৎ নাহিয়ানের নাকে আসে সেই মিষ্টি সুভাস।যে সুভাসে সে তার ওহিজান কে খুজে পেয়েছিল,এই সুভাস যেন তাকে জীবিত করে বার বার,পবিত্রতা ঢেলে দেয় হৃদয়জুড়ে। ধুম করে তার রাগ ছেড়ে গেছে মাথা থেকে ওজিহার দিকে তাকিয়ে সে নিজেই আৎত্নকে উঠে ফর্সা গালটার বেহাল দশা করে দিয়েছে সে।মন থেকে সব রাগ ঝেড়ে ওজিহার পাশে বসে পরে।কলম টা এগিয়ে দিয়ে বলে
“সরি,, সাইনটা করে নাও”!
ওজিহা কলমটা নিয়ে সাইনটা করে দেয়।
.
চারিদিকের শান্ত সিগ্ধ পরিবেশ। কেউ বুঝবেনা একটু আগে এতো দমকা হাওয়া আর ঝড় বয়ে গেছে।ঝড় বয়ে গেছে ওজিহার জীবনেও, হুট করে তার জীবনের একটি ধাপে হোচট খেয়ে পরলো।বিয়েটা কেন হলো আচ্ছা ভার্সিটির অনুষ্ঠানের দিন আমার কান্ডে রিভেঞ্জ নিতে বিয়েটা করেনি তো?না এই সামান্য বিষয়ে বিয়ে নামক সম্পর্কে আসার কথা না! কিচ্ছু ভাবতে পারছি না কিচ্ছু মাথায় ধরছে না, আচ্ছা আমি যদি এখন দৌড়ে পালিয়ে যাই কেমন হবে,ওজিহা ডানে বামে একবার তাকায় সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত। সামনে দুইটা গাড়ি দাঁড়ানো আছে ওজিহাকে কোথায় নেবে কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা সে।চারিদিকে আবারো ভালো করে পরখ করে নেয় সে, নাহ নাহিয়ান কে দেখা যাচ্ছে না পালানোর সবচেয়ে বড় সুযোগ দুই হাত দিয়ে শাড়িটা উচু করে ধরে একটি দৌড় লাগায় কিন্তু আফসোস বেশি দূর যেতে পারে সামনে কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলেই কাংক্ষিত মানুষটি হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে।বিরক্ত হয়ে মুখ কুচকে সামনে তাকাতেই ওজিহা নাহিয়ান কে দেখে। নাহিয়ান দাত কিড়মিড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে,
” পালাতে চাইছো?
“ন..না “(ভয় পেয়ে)
“তা হলে ছুটছো কেন”?
কি বলবে ভেবে পায়না সে মাথা নিচু করে কাদো কাদো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে।নাহিয়ান খেয়াল করে ওজিহার বাম গালটি বেশ লাল হয়ে ফুলে গেছে।
” বাম গালের দাগটাই এখনো উঠলো না কিন্তু তুমি আবারো থাপ্পড় খেতে পালানোর চেষ্টা করছো। বাহ!
সে কি বলবে ভেবে পায়না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
“চুপ চাপ গিয়ে গাড়িতে বসো”
ওজিহা গুটি গুটি পা ফেলে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে আর নাহিয়ান পেছন থেকে মুচকি হাসতে থাকে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here