বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৫

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৫
#পলি_আনান

একটি চেয়ারের সাথে খুব আলতো করে বেধে রাখা হয়েছে জারাকে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন জোর কসরত করে তাকে বেধে রেখেছে আসলে সে নিজের ইচ্ছায় নাটকটি করছে।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রওনক, ফাহাদ, সাবিহা,মিতু আর রাকিব।তারা এখন সবাই মিলে আছে রাকিবের ফ্লাটে এখন বাজে সকাল প্রায় দশটা, সবাই বিরক্ত কর মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাকিব সোফায় বসে আয়েশি ভঙ্গিতে আপেল চিবুচ্ছে।
“জারা তুমি হঠাৎ নাহিয়ানের এই ফালতু ডিসিশনে সায় দিলে কেন”?
মিতুর কথায় জারা একটু মুচকি হাসে।
” আমি যানি নাহিয়ান ভাইয়া যে সিধান্ত নিয়েছে পারফেক্ট সিধান্ত।আমি চাইনা ওজিহা মুহিব নামের ওই বেয়াদপটার ক্ষপ্পরে পরুক।ওর জন্য যা ভালো হবে আমি তাই করতে রাজি”
ফাহাদ জারার দিকে খুটিয়ে খুটিয়ে তাকিয়ে মিতুর উদ্দেশ্য বলে,
“ওই নাহিয়ান বলছে মিতুর লুকটা এমন থাকবে যে দেখতে মনে হবে বেচারিরে আমরা বেশ চড় থাপ্পর দিছি কিন্তু ওরে দেখতে তো মনে হচ্ছে আমরা অথিতি আপ্যায়ন করছি। ”
“তো তুই কি ওরে মারবি এখন “!
কথাটি বলেই রাকিব বড় বড় চোখ করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।সে যেন গাছ থেকে পরেছে।
ফাহাদ চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত কর ভঙ্গিতে বলে,
” ওই দামড়া তুই খাইতে বসচত চুপ চাপ খা।খবরদার তোর এই মোটা মাথা নিয়া কোন বুদ্ধি দিবি না”
“কি আমি দামড়া, আমার মোটা মাথা” (রেগে)
“হ তোরেই কইছি শুনস না নাকি আবার বলতাম’
রাকিব রেগে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে সোফার কুশন ফাহাদের দিকে মারে,
” তোরে তো আজ আমি খাইয়া ফেলুম!
শুরু হয়ে যাই দুইজনের ছোটাছুটি,রাকিব ফাহাদের পিছনে ছোট শুরু করে। তাদের কান্ড দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় জারা, এই সামন্য ব্যাপার নিয়ে ছেলেরা ঝগড়া করে ভেবে পায় না সে।বাকিরা বিরক্ত হয়ে বকা বকি শুরু করে কিন্তু তাদের থামাথামির কোন নাম নেই তারা তাদের মতো ছুটে যাচ্ছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে হুট করেই তারা যেন কৈশোরে পর্দাপন করেছে।ছোটা ছুটির এক পার্যায়ে সাবিহা ইচ্ছে করে রাকিবের পায়ে ল্যাং মারে যার ফলে সে ধপাস করে জারার কোলে বসে পরে।রাকিব কে নিজের কোলে দেখে জারা প্রথমে কিংকর্ত্যাবিমূঢ় হয়ে যায়। একই অবস্থা রাকিবেরো জারা কোন উপায়ন্তর না পেয়ে জোরে একটা চিৎকার দেয় আর জারার চিৎকার দেখে রাকিবো চিৎকার দেয়।তাদের দুজনের কান্ডে আলুথালু চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে সবাই।

“এই আপনি উঠুন প্লিজ। আপনার হাতির মতো শরীর আমার পা ভেঙ্গে দিচ্ছে ”
জারার কথা লাফিয়ে উঠে রাকিব।লজ্জায় সে যেন মাটির সাথে মিশে যেতে চায়।
সবাই একসাথে হু হু করে হেসে উঠে এতে রাকিবের লজ্জা আরো দিগুন বেরে যায় কান দিয়ে যেন ধৌয়া বের হচ্ছে। ফাহাদ রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলে”কি রে তুই যে দামড়া আরেক বার প্রমান হইলো। নাহিয়ানের শালির পিছনে লাইন মারতি সুযোগ বুঝে কোলে বসে পরসত, বাহ বাহ তোর তারিফ করতে হয়”
লজ্জায় অপমানে কানের ভিতরে শো শো বাতাস বইতে থাকে।জারার দিকে একপলক তাকিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে অন্য রুমে চলে যায় আর সবাই একসাথে আবারো হেসে উঠে।
.
কুয়াশায় চারদিকে সব কিছু ধৌয়ার মতো হয়ে আছে তবে হালকা রোদের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। গাছের পাতা গুলোতে জমে আছে শিশিরের জল বিন্দু।জানালার পাশে দাড়িয়ে পরিবেশটা উপভোগ করছে ওজিহা। ঠিক এই মূহুর্তে তার ফোনে একটি ভিডিও কল আসে।
“জারা আবার ভিডিও কল দিলো কেন। ধরে দেখি তো” (বিড়বিড় করে)
কলটি ধরে ওজিহা অবাক হয়ে যায় কেননা ভিডিও কলে দেখা যাচ্ছে জারাকে মুখ বেধে রাখা হয়েছে। আর কেউ যেন একপাশে ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,জারার গালটা লাল হয়ে আছে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে সে ছোটার জন্য হাত পা নাড়াচাড়া করছে কিন্তু পারছে না।জারার এমন বেহাল দশা দেখে কেদে দেয় ওজিহা”ক…কি হয়েছে তোর এমন করে কে বেধে রেখেছে…..
সম্পূর্ণ কথা শেষ না হতেই খট করে ফোন টি কেটে যায়।ওজিহার এবার পাগল হওয়ার মতো অবস্থা। চোখ দিতে অনবরত পানি গড়িয়ে জানালার শিকল ধরে ফুপিঁয়ে কান্না শুরু করে।এই মূহুর্তে তার ফোনে আরেকটি কল আসে তবে সেটি আননোন নাম্বার। ওজিহা তাড়াতাড়ি ফোনটি ধরে, তার কানে ভেসে আসে সুরেলা এক অচেনা ছেলের কান্ঠ,
“মিস ওজিহা যদি জারাকে বাচাতে চান তবে এক্ষুনি নিচে নেমে আসুন।গেইটের সামনে একটা ব্লাক কার দাঁড়ানো আছে সেই গাড়ির সামনে উঠে পড়ুন কুইক.।
” কিন্তু আ…..”কথাটি শেষ করতে পারলো না সে আবারো খট করে ফোন টি কেটে দেয়।খাটের পাশ থেকে ওরনা নিয়ে হাতে মোবাইল নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে সে।হোস্টেলের গেইটির কিছুদূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ব্লাক কার।ওজিহা ডানে বামে সর্তক দৃষ্টি একবার পরখ করে ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে গাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ ড্রাইভিং সিট থেকে সেই সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসে,,
“আমার পাশে ছটপট এসে বসে পরো যদি নিজের বন্ধুকে বাচাতে চাও!
কথাটি শুনেই ওজিহা তাড়াতাড়ি নাহিয়ানের পাশে বসে পরে।সে খেয়াল করে একটি ছেলে কালো শার্ট মুখে কালো মাক্স আর চোখে সানগ্লাল লাগানো সে চিনতে পারছে না ছেলেটা কে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে দম বন্ধ হয়ে কান্না আসছে কি হচ্ছে তার সাথে।
” আপনি কে..?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে..?আমার সাথে আপনার কি শত্রুতা…?কি হলো কথা বলছেন না কেন..?
নাহিয়ান তার মতো করে ড্রাইভিং করেই যাচ্ছে তার হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে ওজিহার কোন প্রশ্নই তার কানে ডুকছেনা।সে নিজের মতো করে ড্রাইভিং করেই যাচ্ছে।ওজিহা উপায় না পেয়ে চুপ চাপ চোখের পানি বিসর্জন দিতে থাকে।
.
“কিরে দোস্ত নাহিয়ান তো আমাদের কিডনাপার বানাই ছাড়ছে?
রওনকের প্রশ্নে ফাহাদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,” দেখিস কিছুক্ষন পর কাজী বানাই ছাড়বে তোর কাজী কই এখনো আসেনাই কেন,আল্লাহই যানে কি হয় ওই পোলা কাল বিকাল থেকে ক্ষেইপা আছে।”
“তাই তো ভাবছি তার যা রাগ আমাদের উপরেই তুলবে ”
জারা হঠাৎ করে এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে।তার চিৎকারে লাফিয়ে উঠে রাকিব ও।
“এএএ আমি কিন্তু কিছু করিনাই”
রাকিবের এমন কথায় বিরক্ত হয়ে মুখ কুচকে ফেলে জারা।
“দূর আমি বলছি আপনি কিছু বলছেন?
” তাহলে চিল্লাচ্ছেন কেন?(হেবলার মতো তাকিয়ে থেকে)
জারা নিজের মোবাইলটা রাকিবের দিকে বাড়িয়ে দেয়।রাকিব মোবাইলটা হাতে নিয়ে মুহিব আর জারার টেক্সট গুলা পড়তে থাকে।সেখানে লেখা মুহিব আজ বিকালে ওজিহাকে প্রোপজ করবে।ওজিহাকে নিয়ে যেন মুহিবের দেওয়া ঠিকানায় চলে যায় সে।রাকিব মেসেজ গুলা পড়ে হাসতে শুরু করে, হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে সোফা থেকে নেমে ফ্লোরে বসে পরে।তার হাসি দেখে সবাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
“ওই রাকিব হাসচ কেন?
” শালা হাসি কি আর স্বাদে, মুহিব বিকালে ওজিহারে প্রোপজ করবে আর এই দিকে নাহিয়ান বারোটার মধ্যে ওজিহাকে বিয়ে করে নিবে। বিষয়টা কেমন ভাই, মুহিব বেচারা খবর পেলে মূর্ছা যাবে।এবার সবাই মিলে হাসতে শুরু করে ঠিক সেই সময় বিকট আওয়াজে বজ্র পাতের ধ্বন্নি ঘর কাপিয়ে তুলে।
“জানুয়ারি মাসে বজ্র পাত।(অবাক হয়ে রওনক)
” তাই তো ভাবছি কুয়াশার ভেতর বজ্রপাত(আমতা আমতা করে সাবিহা)
হঠাৎ করেই ঝড় হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। কালো মেঘ জমতে শুরু করে দিয়েছে।বাতাসের তান্ডবে প্রতিটি রুমের পর্দা উড়তে শুরু করে দিয়েছে।এসময় ডাইনিং রুম কাপিয়ে টিং টং করে ডোর বেল বেজে উঠে।
“তোরা বস আমি দরজা খুলে আসছি ”
ফাহাদ দরজা খুলতে চলে যায় আর বাকিরা উৎসুক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
ফাহাদ দরজা খুলে দেখে সাদা পাঞ্জাবি পরিহীত একজন কাজী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
“আসুন আসুন ভিতরে আসুন”
কাজী ঘরের ভেতরে ডুকতে ডুকতে বলে “এটা কোন কাহিনী কন তো মিয়াঁ এই সময় ঝড় তুফান! এমন সময় কিসের ঝড় তুফান হয় আমার কিচ্ছু বুঝে আসেনা।”
কাজী সাহেব বিড়বিড় করতে করতে এগিয়ে যায় এমনে সময় সিড়ি দিয়ে ওজিহাকে হাত টেনে ধরে উঠাচ্ছে নাহিয়ান।নাহিয়ান কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরে ডুকে যায়।
“জারা, মিতু,সাবিহা যাও ওকে তৈরি করে আনো।”
তাদের উদ্দেশ্য কথাটা বলেই একটা বড় নিশ্বাস ফেলে।
“এই তৈরি হবো মানে কি তৈরি হবো আর জারা তুই ঠিক আছিস তো?
” হুম আমি ঠিক আছি”
“না ঠিক থাকবেনা জারা যদি তুমি আমার কথা না শুনো” ওজিহার উদ্দেশ্য কথাটি বলেই নাহিয়ান রওনক কে ইশারা করে আর রওনক জারার গলায় ছুরি চেপে ধরে।জারাও অভিনয় করে চিল্লিয়ে উঠে। জারার চিৎকার দেখে ওজিহা হতবম্ভ হয়ে যায়।
“ও ও কে ছেড়ে দিন আমি শুনবো সব শুনবো”
“হু, ভালো যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আসো কাজী অপেক্ষা করছে ”
“কাজী অপেক্ষা করছে মানে কার বিয়ে ”
“আমার আর তোমার ” নাহিয়ান কথাটি বেশ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই বলে,
ওজিহার মাথায় যেন এখনি ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে। কান দিয়ে গরম ধৌয়া বের হচ্ছে কি হচ্ছে বা কেন হচ্ছে কিছুই তার বোধগাম্য হচ্ছে না। ওজিহা নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,
“অসম্ভব ”
নাহিয়ান ওজিহার দিকে তাকি চোখ মেরে বলে,
“সব সম্ভব”.
.
হঠাৎ করেই শুরু হওয়া দমকা হাওয়াতে সব লন্ঠ ভন্ঠ হতে থাকে।বজ্রপাতের ধ্বনি একের পর এক বেড়েই চলছে।কাজীর সামনে বসে আছে ওজিহা আর নাহিয়ান ওজিহার পরনে টুকটুকে লাল একটি জামদানি শাড়ি।সবাই কেমন যেন ওজিহার দিকে অন্যরক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সবার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে হঠাৎ সৃষ্ট হওয়া এই ঝড় তুফান কোন সাধারন ঝড় তুফান নয়।
😪একটু গঠন মূলক মন্তব্য ও তো করতে পারেন। লিখতে উৎসাহ পাইনা😪
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here