বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৪

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৪
#পলি_আনান

ভোরের হাওয়া শেষে এবার উকি দিচ্ছে সূর্য,চারিদিকে ধানের চিরল পাতা আর মাঝখানের সরু পথ দিয়ে হাটছে ওজিহা,দুইঘন্টা বাস জার্নি শেষে অল্প কয়েক মিনিট হাটলেই তার মামার বাড়ির দেখা পাওয়া যায়।বাচ্চাদের ছোটা ছুটি শুরু হয়ে গেছে, এদিকটায় সবার ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছে যেনো সকাল এগারোটা, কিন্তু সবে মাত্র সাতটা বাজতে চললো,গ্রামীন জীবন টাই এমন তাদের সবার নিত্যদিনের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় সক্কাল – সক্কাল।চিকন সরু রাস্তা পেরিয়ে দেখা যাচ্ছে ওজিহার মামার বাড়ি,তাদের এক তলা বিলিং।প্রায় একবছর পর ওজিহা এখানে এসেছে,তার ছোট বেলায় যতই কষ্টে কাটুক,রঙহীন বেরং এ কাটুক তবুও তার কাছে তার ছোট বেলার স্মৃতি গুলো বড্ড দামী।গেইটের সামনে এসে লম্বা একটা দম নিলো সে।মনের মাঝে ভাবতে থাকে হাজারো কল্প কথা, আচ্ছা মামি কি জড়িয়ে ধরবে, আর মারিয়া আপু সে কি আপন করে নেবে নাকি তাদের আগের মতো পাষানী রুপ আবার দেখাবে।
দীর্ঘ শ্বাস টা ছেড়ে দরজায় টোকা দিল সে,
কিছুক্ষণ পর দরজাটা এসে খুলেদেয় ওজিহার মামাতো বোন মারিয়া।সে ওজিহাকে বড্ড হিংসা করে তার হিংসার কারন ওজিহার এই প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য।মারিয়া ওজিহার থেকে দুই বছরের বড় এককথায় নাহিয়ান আর মারিয়া সমবয়সী।
“কেমন আছো আপু”
ওজিহা কথাটি মুখে বেশ একটা হাসি টেনেই বলেছে কিন্তু তার প্রশ্নে তেমনটা খুশি হয়নি মারিয়া। মুখটাকে বাকিয়ে অবজ্ঞার ভঙ্গিতে বলে,
“ওহ তুই, এই সক্কাল সক্কাল তোর মতো একটা মেয়ের মূখ দেখে শুরু করেছি আল্লাহই যানে আজকের দিনটা মনে হয় খারাপ যাবে।আয় দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে আয়”
ওজিহা মুখটা কালো করে ভেতরে ডুকে পরে। কেন আজ কি তারা ভালো আচরন করতে পারতো না, আজকেও তো পারতো কেন এমন করে এরা ভেবে পায় না সে।গুটি গুটি পা ফেলে মামুর রুমের সামনে দাঁড়ায় সে,
“কি রে সকাল সকাল এসে পরেছিস দেখছি”
পেছন থেকে আমেনার কথায় চমকে উঠে ওজিহা”
মামির সাথে কুশল বিনিময় করে একটা মিষ্টি করে হাসি দিলো সে,
“কেমন আছো মামি?
” এইতো যেমন দেখছিস, ”
“মামু কেমন আছে”?
” আছে আগের মতোই,তা তোর পিছনে টাকা ঢালতে ঢালতেই তো ফকির হয়ে যাচ্ছে সেই দিকে কি কোন খেয়াল রেখেছিস, শুধু ইচ্ছে মতো টাকা লুটে নিচ্ছিস, নিজের সম্পত্তি ভাগ হলে তখন তো নিজেই একা ভোগ করবি আমাদের দিকে কি তাকাবি?তাকাবিনা আমি যানি”
আমেনা বেগমের কথায় তার মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো। এই বাড়িতে আসলেই এইসব খোটা, সম্পত্তির ভাগ যত লোভনীয় জিনিসে মামির আক্রোশ।তারা বুঝে না আর কোন দিন ও বুঝবেনা ওজিহা যা চায় তা হলো মানসিক শান্তি যেখানে পাবে সে মানসিক শান্তি সেখানেই ছুটে চলে যাবে।
ওজিহার মামির সামনে আর না দাড়িয়ে মামার রুমের দিকে বড় বড় পা ফেলে চলে যায়।ফিরোজ হোসাইন বালিশের সাথে মাথা উচু করে শুয়ে আছে ওজিহাকে দেখেই এক লাফে উঠে পরে।
“কি রে কেমন আছিস মা”?
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো,তুমি কেমন আছো মামা?শরীরটা কি এখন একটু সুস্থ আছে?
” তা আছে, তোর হোস্টেলে থাকতে কোন কষ্ট হয় না তো?
“নানা কোন কষ্ট হয় না ”
“আচ্ছা শোন তোকে এখানে ডাকার আসল উদ্দেশ্য ”
কথাটা বেশ ফিস ফিস করেই বললেন ফিরোজ হোসাইন।
“বলো মামা কি বলতে চাও”
“শুন আমি খবর পেয়েছি তোর চারারা তোকে হন্ন হয়ে খুজছে তোর সম্পত্তির জন্য। সবাই যানে সম্পত্তির উইল তুই এতিম শিশুদের জন্য করে দিয়েছিস কিন্তু সত্যি টাই তো এটাই যে এখনো তোর সম্পত্তি তোর কাছে আছে।কিন্তু তোর চাচারা এটা মানতে পারছে না তাদের এক কথা তাদের ভাইয়ের সম্পত্তি ভাইয়ের অবর্তমানে তারাই সম্পূর্ণ পাবে”
“কেন মামা তারা পাবে কেন?বাবা পুরো বিসনেসটা চুষে খেয়েছে, বাড়িটা চুষে খেয়েছে, দুই দুইটা গাড়ি এখন তাদের দখলে এইসব পেয়েও কি তারা ক্ষান্ত হয় নি।এখন আবার পরছে কয়েক বিঘা জমির পিছনে লোভ, মানুষের লোভের শেষ নেই।”
“তাই তো ভাবছি মা,তুই সাবধানে থাকিস “।
” হুম”
এভাবে কিছুক্ষন কেটে যায় পিনপিনে নিরবতা। ওজিহার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রাতের বিষয় গুলো।বলবে কি বলবে না সিধান্ত হীনতায় ভুগছে সে।মনের মাঝে চলছে এক অস্থিরতা।ওজিহাকে ছটফট করতে দেখে ফিরোজ হোসাইন একটু সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকায়।
“কি রে মা তোর কি হয়েছে? এমন ছটফট করছিস কেন”
“আসলে মামু,আমার সাথে রাতে কি যেন ঘটছে আমি এই বিষয়ের শুরু থেকে শেষ কিছুই মেলাতে পারছি না”
“কি বলছিস তুই বুঝিয়ে বল”?
” আসলে মা……..
সম্পূর্ণ কথা শেষ না করতেই আমেনা রুমে ডুকে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়।
“আসার পর থেকে শুরু হয়েছে তোর বক বক,দেখছিস মানুষটা অসুস্থ তাও তোর বক বক থামাবিনা।এই চল নাস্তা করে নিবি!
ওজিহার হাত টেনে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে দেয় আমেনা।মুখের কথাটা আর শেষ করতে পারলো না সে মনের মাঝে বেড়ে যায় একরাশ হতাশা।
.
আজ সকাল সকাল ভার্সিটিতে এসে হাজির হয় নাহিয়ান। যেভাবে হোক ওজিহাকে আজ মনের কথাটা বলতেই হবে।গত কাল বাড়ি গিয়ে তফুরা খাতুন কে সবটা খুলে বলে সে।মুহিবের চরিত্র নিয়ে কু দৃষ্টি তাকায় দাদিজান ও ।তাই তিনি নাহিয়ানকে পরামর্শ দিয়েছে যত তারাতারি সম্ভব ওজিহাকে নিজের দখলে আনা।ফাস্ট ইয়ার ডিপার্টমেন্টের সামনে বিড়ালের মতো ঘুর ঘুর করছে সে,একদিকে বড্ড ভয়ে আছে নাহিয়ান কেননা মুহিব গত কাল রাত তার সাথে বাজি ধরেছে ওজিহাকে নিয়ে, হারানোর বেদনা বার বার মস্তিষ্কে নাড়া দিচ্ছে তার।
দূর থেকে নাহিয়ানকে ফাস্ট ইয়ায়ের ডিপার্টমেন্টর সামনে দাড়াতে দেখে ভ্রু যুগল কুচকে যায় রওনক আর সাবিহার।
” কি রে ওই গর্দভ ওই দিকে কি করে?
“তাই তো ভাবছি চল।
গুটি গুটি পা ফেলে নাহিয়ানের দিকে এগিয়ে যায় তারা।
“কি রে বেটা এখানে কি করছিস,(মাথায় একটা চাটী মেরে)
রওনকের হঠাৎ আক্রমণে ঘাবড়ে যায় নাহিয়ান।
” শালা তুই আমি ভাবছি….উফফফ!
“কি ভাবসত তুই(ভ্রু কুচকে)
” না কিছু না”
“ওই তুই এখানে দাড়াই আছিস কেন?সাবিহার।প্রশ্নে নাহিয়ান একটু হাসি দেয়।
“ওহিজানের জন্য”
নাহিয়ানের মুখের কথা শুনে চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। রওনক আর সাবিহা একসাথে আবার টেনে টেনে উচ্চারণ করে…
“ও….হি….জা…..ন।ওহিজান,মাইগড দোস্ত তুই তোর মতো করে নাম ও দিয়া দিসত ওহিজান।বাহ,বাহ সেই নাম পুরাই সেই হইছে আহা জান!
রওনকের কথায় মুখ টিপে হাসছে সাবিহা।
‘এই তোদের সমস্যা কি আমি কি তোদের এদিক টায় আসতে বলছি তোরা এখন এখানে কি করস আমার কাজ আমা…”
পুরো কথাটা শেষ না করতেই জারাকে চোখে পরে নাহিয়ানের। জারাকে একা দেখে একটু সন্দেহ মনে হয় তার,ভ্রু যুগল কুচকে জারার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
” তোমার ফ্রেন্ড আসেনি জারা?
“না তো ওজিহা আজ আসবে না! ”
আসবেনা শুনেই নাহিয়ানের মনটা খারাপ হয়ে যায় এতো সময়ের অপেক্ষার ফল কি না শূন্য।
“কেন আসবেনা তা কি জানো তুমি?
” ওজিহা তার মামার বাড়িতে আছে এখন, কালকেই চলে আসবে,কোন দরকার ভাইয়া”
“ন…না কোন দরকার না তুমি ক্লাসে যাও ”
নাহিয়ান আর তার বন্ধুরা চলে আসে।জারা জারার মতো করে ক্লাসে চলে যায়।
.
গভীর রাত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বালিস ভেজাচ্ছে ওজিহা। তার কান্নার মূল কারন তার মামি আর মারিয়া সহ সন্ধ্যা থেকে তাকে একের পর এক কথা শুনিয়ে গেছে।তাদের একটাই কথা জন্মের সময় মা কে খেল আবার এক বছর পর বাপটাকেও খেল!এই মেয়েতো জন্মগত অলক্ষী, লজ্জা থাকা উচিত সমাজে চলতে গেলে,অপয়া এমন বিভিন্ন কথা বলে অপমান করতে থাকে ওজিহাকে,চুপ চাপ মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া তার কাছে আর কোন উপান্তত নেই।তার জন্মই হয়েছে অপমান সইতে।ওজিহা শোয়া থেকে উঠে বসে মনে মনে কি যেন কল্পনা করতে থাকে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে অস্পষ্ট বির বির করার শব্দ।ওজিহা চোখ খুলে লক্ষ্য করে তার সামনে একটি অবয় দাঁড়িয়ে আছে পুরো রুম জুড়ে ছড়িয়ে আছে আতরের গন্ধ।অবয়টিকে দেখে খুশিতে চোখে জল চলে আসে ওজিহার।কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলতে থাকে,
“মা ত.তুমি এসেছো!
ওজিহা ধীরে ধীরে অবয়টির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অঝরে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে সে অবয়টির সামনে।ছোট থেকেই ওজিহার বিশ্বাস তার মা তার কাছে আসে একদম সঙ্গপনে নিরিবিলি মূহুর্তে। এইসব মূলত আগের হোস্টেলের প্রিয়া মেয়েটির থেকে শেখা।সত্যি কি তার মা আসে নাকি এটি তার হ্যালুসিয়েশান তা আদো বুঝে পায়না। তবে সে শান্তি পায় বড্ড শান্তি পায় যখন ধৌয়ার মতো অবয়টি দেখতে পায়।কাদতে কাদতে হাজারো অভিযোগ, অভিমান প্রকাশ করে অবয়টির কাছে।এভাবে চাদরে মুখ গুজে কাদতে কাদতে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে আসে মসজিদ থেকে সুরেলা কন্ঠে ভেসে আসছে আযানের ধ্বন্নি।ওজিহা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে অবয়টি নেই।অযু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়।তারপর কিছুক্ষন ছাদের এককোনে দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকে সূর্য উঠার দৃশ্যটা দেখতে থাকে।
.
জনজীবন থেমে থাকেনা সময় সময়ের গতিতে চলতে থাকে আর জনজীবন নিজেদের মতো করে মূহুর্ত গুলোকে কাযে লাগায়।হয়তো দিন কারো ভালো যায় বা কারো না যায়। তবুও মানিয়ে নিতে সবাই যানে।একে একে কেটে গেছে আরো কয়েক মাস।তীব্র শীতে জন জীবন বিপাকে দিন দিন শীতের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানুয়ারির এইসময় টায় প্রতি বছরি এমন কড়া শীতে জন জীবন প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে যায়। এই মাস গুলো ওজিহা ওজিহার মতো চলেছে তেমন একটা ভার্সিটিতে সে যেতো না নিজেকে একা করে রাখতেই তার ভালোলাগে। সেদিন ভোর ভোর মামুর বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে সে।রাতের ওই অদৃশ্য ছায়াদের ভয় দিন দিন বাড়তে থাকে। রাত বিরাতে ভিবষৎ সব লাশ ওজিহার সামনে হাজির হয় কিন্তু কেন হয় তা যানে না সে।নাহিয়ান বর্তমানে একটু নিশ্চিন্তে আছে কেননা ওজিহা তেমন একটা ভার্সিটিতে যায় না আর মুহিবের দাপাদাপি হঠাৎ করেই থেমে গেছে।নাহিয়ান ভেবে নিয়েছে হয়তো নতুন কাউকে পেয়ে গেছে তাই হয়তো ওজিহার কথা মুহিব ভুলে গেছে।বলবে বলবে করে ওজিহাকে আর মনের কথা বলা হয়ে উঠে না।
ইদানীং ওজিহার সাথে ফেসবুকে একটি নতুন ছেলে ফ্রেন্ড হয়েছে যার নাম মুহিব। ছেলেটির সাথে ওজিহার বেশ ভাব। দিনের বেশির ভাগ সময় মুহিবের সাথে কথা বলেই দিন কাটে তার।তারা সিধান্ত নিয়েছে সামনের সাপ্তাহ দেখা করবে।এদিকে মুহিব নাহিয়ানের কথা ভেবে একটি পৈচাশিক হাসি দেয় আর মনে মনে ভাবে,
“তুই চলিস ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়।তুই বুঝতেও পারলি না ওজিহাকে কখন নিজের করে নিয়েছি”

একটি কফিশপে বসে আড্ডা দিচ্ছে নাহিয়ান আর তার বন্ধুরা। এটা নাহিয়ানের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। হঠাৎ হাতে বাম পাশে তাকাতেই খেয়াল করে একটি জুটিকে যা দেখে নাহিয়ান অবাক না হয়ে পারলো না। অস্পষ্ট শব্দ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো “ওহিজান” নাহিয়ানের কথায় চমকে তাকায় বাকিরা।মুহিব আর ওজিহা একি টেবিলে বসে কোন বিষয় নিয়ে বেশ হাসাহাসি করছে।
“কিরে মুহিব ওজিহা একসাথে কি করে সম্ভব!
মিতুর প্রশ্নে রাকিব বলে,
” তাই তো ভাবছি”
“আচ্ছা ওদের মাঝে রিলেশন নেই তো আবার?
রওনকের শেষ কথাটা শোনার সাথে সাথে নাহিয়ান দাঁড়িয়ে পরে আর রাকিব কে উদ্দেশ্য করে বলে,”রাকিব তোর ফ্লাট টা খালি পরে আছে কি এখনো?
নাহিয়ানের হঠাৎ এমন প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে যায় রাকিব” হ্যা ”
“ঠিক আছে কাল সকাল এগারোটায় তোরা সবাই কাজী নিয়ে ওই ফ্লাটে আমার জন্য অপেক্ষা করিস।”
নাহিয়ান আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে ক্যাফ থেকে চলে যায়। বন্ধুরা একে অপরের মুখ অবাক হয়ে দেখা দেখি করছে।ফাহাদ ঢোক গিলে বলে,
“নাহিয়ান ক্ষেপেছে নিশ্চয়ই কোন তান্ডব অপেক্ষা করছে…!
চলবে..……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here