বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৩

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৩
#পলি_আনান

আজ নিকষ কালো রাতের আকাশে আজ মস্তবড় একটি চাঁদ উঠেছে। চাদের আলো ছড়িয়ে পড়ছে দিকবেদিক।সেই আলো লম্বা সরু হয়ে জ্বলজ্বল করে ডুকছে ওজিহাত রুমে।তার পেছন থেকে কে যেন চুল টেনে ধরে আছে,ভয়ে পুরো শরীর ঘেমে একাকার জুলফি বেয়ে দরদর করে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।তার সময় যেন এখানেই থেমে গেছে মনের ভেতর বার বার কু ডাকছে নিশ্চই ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে তার সাথে, পুরো রুম জুড়ে ছড়িয়ে গেছে মাংস পচাঁর গন্ধ।এই বিশ্রি গন্ধে যেন এখনি বুমি করে দেবে সে।আচ্ছা এমন বিশ্রী গন্ধ যুক্ত খাওয়ার দিয়ে শাস্তি সরুপ কাউকে যদি জুস করে খাওয়ানো হয় তবে কেমন হবে…!ছিহহহহ এমন পরিস্থিতিতে আমি এগুলো কি ভাবছি।ওজিহা জানালার গ্রীল শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার চুলের টান দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।মাথার খুলি যেন এখনি চুলের সাথে টেনে চলে যাবে।যন্ত্রনায় হু হু করে তার কাদঁতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আফসোস সে কাদতে পারছেনা পচাঁ মাংসের একটি হাত তার মুখ চেপে ধরে আছে।তার কানে আসছে পেছনের অদ্ভুত মানুষটির গড় গড় করে শ্বাস নেওয়ার শব্দ।ওজিহা পেছনে থাকা প্রানীটাকে একটি ধাক্কা দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে যা দেখে তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না একটি পচাঁ লাশ যার পুরো শরীর জুড়ে সাদা ব্যান্ডেজে আবৃত।এক চোখের কালো কোটর দেখা যাচ্ছে অন্য চোখের থেকে রক্তগুলো গল গল করে গড়িয়ে পরছে।হাতে পায়ের নখ গুলো বিভষৎ বড় বড় এই নখের এক আচড়েই ওজিহার অর্ধ মরা হয়ে যাবে। না সে আর ভাবতে পারছে না চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা লাগতে শুরু করেছে কি হচ্ছে আর কি হতে চাইছে তার সাথে,আচ্ছ তার কি হ্যালুসিয়েশান হচ্ছে।এই হ্যালুসিয়েশান তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। যার মাশুল আজ তাকে অক্ষরে অক্ষরে দিতে হচ্ছে। মাথাটা ঝিম ধরে গেছে এক পর্যায়ে ওজিহা সেন্সলেস হয়ে পড়ে তার মাথা গিয়ে ঠেকে একটি খাটের কার্নিশের সাথে।
.
সরকার বাড়ি জুড়ে আজ খুশির আমেজ।আজ নাহিয়ানের ফুফু আমেনা, ফুফা খলিল এবং কাজিন মুহিব এসেছে।বাড়ির সকলেই তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।নাহিয়ান নিজের রুমে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্য তৈরি হচ্ছে এমন সময় তার রুমে প্রবেশ করে মুহিব।তাকে দেখে নাহিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু হাসিটা তেমনটা দীর্ঘতর হয়নী কিছুক্ষণ পর ফুরিয়ে যায়।মুহিবকে নাহিয়ানের একদম সহ্য হয় না।মুহিব নাহিয়ানের থেকে দুই বছরের বড়।তার চরিত্রে কিছুটা দোষ আছে বললেই চলে।, মেয়েদের সাথে একের পর এক রিলেশনে জড়িয়ে যায় এবং যত কু- র্কীতি আছে সব কিছুতে সে এক্সপার্ট।মাঝে মাঝে নাহিয়ানকে সে বিভিন্ন ভাবে অপদস্ত করে।সরকার বংশের মানসম্মান ডুবাতে মুহিবের কোন বিকল্প নেই।
“হেই নাহিয়ান তোর কি খবর”
“এই তো যাচ্ছে দিন কাল”
“ও তুই তো আবার দেবদাশ জীবন যাপন করিস। তা এখনো কোন মেয়েকে পটাতে পারলি না,এই সুন্দর চেহারা রেখে কি লাভ বলতো যদি কোন মেয়ে তোর প্রেমেই না পড়ে”
মুহিবের কথায় নাহিয়ানের বেশ রাগ লাগলো। মুখে কিছুটা বিরক্তির রেখা টেনে বললো,
“দেখো মুহিব ভাই আমার এইসব ভালো লাগেনা। তুমি তোমার মতো লাইফ লিড করো আমাকে আমার মতো করতে দাও।”
“ও আচ্ছা তা ঠিক, গাধাকে মেরে তো আর ঘোড়া বাননো যাবে না। চল আজ তোর ভার্সিটিতে যাবো”!
কথাটা শুনেই নাহিয়ানের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কেননা ওজিহা যদি আজ ভার্সিটিতে যায় ওজিহার উপর সহজেই মুহবের চোখ পড়বে আর চোখ পড়া মানে ওজিহাকে নাহিয়ান না পাওয়া।চিন্তার পোকারা মাথার ভিতরে কিলবিল শুরু করে দিয়েছে।
” মুহিব ভাই আমার ভার্সিটিতে তোমার যাওয়ার কি দরকার এর আগেও কয়েকবার গিয়েছো আবাত কেন যাবে?”
“তুই আসলেই বেশি কথা বলিস।নিরামিষ মানুষ নিরামিষের মতো থাক এতো বক বক করিস কেন,বুঝস না কেন আগের গাল ফেন্ড গুলা ওল্ড হয়ে গেছে কিছু নিউ লাগবে”
“তুমি কি কখনো বদলাবে না, তুমি আমার সাথে যাবেনা এটাই শেষ কথা”
“চুপ থাকতো,তুই না নিলে কি!আমার কি হাত পা নাই না কি! আমি নিজেই চলে যাবো”
মুহিব শিস বাজাতে বাজাতে রুম থেকে চলে যায় আর নাহিয়ান রাগে সামনে থাকা একটি চেয়ারে জোর করে লাথি মারে।

তৈরি হয়ে নিচে নেমে নাহিয়ান তার ফুফা ফুফির সাথে কুশল বিনিময় করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হয়।নাহিয়ান ডাইভিং সিটে বসলে খেয়াল করে পাশের সিটে মুহিব বেশ আয়েশ করে বসে মোবাইলে গেম খেলছে।
“মুহিব ভাই তুমি আমার গাড়িতে কি করছো”
“কথা না বলে চুপ চাপ গাড়ি চালা,আর তুই এতো ক্ষেপে যাচ্ছিস কেন, হাব ভাব এমন যেন আমি তোর বউয়ের সাথে ডেট এ যাচ্ছি, আরে ভাই চিল!”
মুহিবের প্রত্যকটা কথা নাহিয়ানের মনের ভেতর ক্ষোভ সৃষ্টি করে। নাহিয়ান যানে সে এখন যত দেরি করে গাড়ি চালাবে মুহিব তত তার নিলর্জ্জের মতো কথা বার্তা বলবে তাই সে চুপ চাপ গাড়ি চালাতে শুরু করে।
.
ভার্সিটি গেইটের সামনে জারা জন্য অপেক্ষা করছে ওজিহা। কালকের বিষয়টির সমীকরন সে কিছু তেই মেলাতে পারছেনা কি হচ্ছে প্রতিদিন তার সাথে।তার মনে পরে যায় সেই কয়েক বছর আগের ঘটনা।সে যে হোস্টেলে থাকতো তার রুমমেট ছিল প্রিয়া। প্রিয়া মেয়েটা মিশুক প্রকৃতির হলেও তার মধ্য ছিল অন্যরকম আরাধনা। সে সারাক্ষণ বিভিন্ন বই সমূহ পড়ে দিন কাটাতো।ওজিহার মধ্যে তখন ছিল প্রচন্ড জানার আগ্রহ কি বই পড়ে সারাদিন রাত কাটায় প্রিয়া আপু,মাঝে মাঝে রাতে দেখতাম কার সাথে যেন ফিসফিস করে কথা বলে কি চলে তার মাঝে কিছুই বুঝতনা ওজিহা, প্রতিদিন রাতে চোখের জলে বালিশ ভেজাতো ওজিহা,মা – বাবা ছাড়া দিন দুনিয়া যে মরুভূমি তা সে ভালো করেই বুঝতে শুরু করেছিল।এভাবে চলতে থাকে দিনকাল। ওজিহা ক্লাস সেভেনের বার্ষিক পরিক্ষার পর শুয়ে বসেই দিন কাটাতো সে।একদিন মনের মাঝের সকল প্রশ্ন নিয়ে প্রিয়ার সামনে বসে ওজিহা,
“আপু তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?”
“হু কর!
” তুমি সারাদিন এগুলো কি বই পড়ো আপু আবার রাতে দেখি কার সাথে যেন কথা বলো”
“তুই পড়বি এই বই? এখন তো তোর স্কুল নেই পড়তেই পারিস ”
সেদিন ছোট্ট ওজিহা আসতে আসতে পড়তে শুরু করে ভূত পেত্ন এইসব নিয়ে বই।

“কীরে কখন থেকে তোকে ডাকছি কোন ভাবনায় আছিস তুই”
জারা ধমকের সাথে অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ওজিহা,
“না কিছু না ”
জারা ওজিহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,
“তোর কপালে কি হয়েছে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ কেন কপালে”
জারার কথায় ওজিহার হাত টা অটোমেটিক কপালের বাম সাইডে ব্যান্ডেজে হাত চলে যায়।
“খাটের কোনার সাথে লেগে কেটে গেছে তেমন কিছু না ”
“ঔষুধ খেয়েছিস? ”
“হুম,চল দেরি হয়ে যাচ্ছে!
” হুম চল”
.
বন্ধুদের দলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মুহিব আর নাহিয়ান। সবাই মুহিবকে কু নজরে দেখে কেননা এর আগেও মুহিবের কু র্কীতির কথা মুহিব নিজেই সবার কাছে সেয়ার করেছে।নাহিয়ান একপাশে বিরক্ত কর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।দুই হাতের তালু ঘসে মুহিব ফাহাদের উদ্দেশ্য বলে,
“মি.ফাহাদ আমার জন্য একটা নিউ গাল ফ্রেন্ড খুজে দাও তো ”
“দেখুন মুহিব ভাই আপনি যেমন প্রকৃতির আমরা কিন্তু তেমন না সো আমাদের এগুলা বলবেন না আমরা অতিব ভদ্র স্টুডেন্ট। ধন্যবাদ।”
ফাহাদের কথা শুনে বন্ধুদের সবাই একসাথে হেসে উঠে এতে বেশ অপমান বোধ করে মুহিব।শাটের কলার ঠিক করতে করতে মুহিব বলে,
“উপসসস,আমি তো ভুলেই গেছি তোরা মি.নিরামিষের বন্ধু তোদের কাছে এইসব বলে লাভ নেই আমি চললাম। আমার কাজ আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।”
মুহিব চোখে চশমা পড়ে পকেটে হাত ডুকিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে যায়।
নাহিয়ান বিরক্তকর মুখ নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে,তার আচরন কারোরি বোধগম্য হচ্ছে না,
“কিরে নাহিয়ান তোকে চিন্তিত লাগছে কেন, এনিথিং রং”!
মিতুর কথায় নাহিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
” ইয়াহ!তোরা ভাব মুহিব যদি একবার ওজিহাকে দেখে নেয় ঠিক কি কি হবে তোরা ভাবতে পারছিস”
“হ্যা তাই তো,আসলেই তখন কী হবে……
রাকিব কথা শেষ করতে না করতেই মুহিব দৌড়ে এসে নাহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে,মুহিবের হঠাৎ আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায় সবাই,
” আল্লাহ ভাই একটা হুর পরি দেখেছি!আমার ওই হুর পরিটাকে চাই”
নাহিয়ানের বুকের ভেতর খা খা করে উঠে। কাকে দেখেছে সে কাকে দেখেই পরি পরি বলে দৌড়ে এলো, ওজিহাকে নয়তো,
“কা কে দেখেছো ভাইয়া”
“কাকে আবার একটা পরি রে পরি, ফাস্ট ইয়ার ডিপার্টমেন্টর ওই দিকে একটা পরি দাঁড়িয়ে ছিল।
নাহিয়ান আর তার বন্ধুরা এবার সিওর হয়ে যায় মুহিব কাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলছে।
“মুহিব ভাই আপনার পরিটাকে আমরা দেখতে চাই চলেন তো ওইদিকে”
রওনক কথাটি বলেই হাটা শুরু করে। রওনকের পিছনে ছুটে চলে বাকিরা।
“এই দাঁড়াও দাঁড়াও “!
মুহিবের কথা শুনে দাড়ি যায় সবাই।
” ওই যে দেখো মেয়েটা ”
মুহিবের কথা মতো সবাই দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই একটা ঝটকা খায় যা ভেবেছে তাই মুহিব এতোক্ষন ওজিহার ব্যাপারে কথাটা বলেছে।
“মুহিব ভাই এই মেয়ে তোমার জন্য না ”
নাহিয়ানের কথায় অবাক না হয়ে পারলো মুহিব।
“মানে কি আমার জন্য না মানে ওকেই আমার চাই আর সেই ব্যবস্থা করবি তুই।”
“আমি যা বলি তা একবার বলি না আপনি ওর পেছনে ঘুরবেন আর না আমি আপনার হয়ে সাফাই গাইবো ওই মেয়ের কাছে মাইন্ড ইট।”
নাহিয়ান গাড়ি নিয়ে সোজা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায় আর মুহিব তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
.
দিন দিন ওজিহার প্রতি নাহিয়ান আরো দূর্বল হয়ে পরে।তবে মুহিব ও কম যায় না সে প্রতিদিন ভার্সিটিতে এসে ওজিহাকে দেখেযায় তবে মুহিব এবং নাহিয়ান যে ওজিহার পেছনে পরে আছে তা এখনো যানেনা ওজিহা।গত এগারো দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকে মুহিব আর নাহিয়ানের মাঝে চলছে এক প্রকার মনমালিন্য,দুজনের মাঝে দ্বন্দ দিন দিন বেড়েই চলে।গত কয়েকদিন ওজিহার সাথে তেমন খারাপ কিছু ঘটতে দেখাযায় নি।তবে সপ্নে ওজিহা বিভিন্ন খারাপ ইঙ্গিত দেখতে পায় তার ব্যাখ্যা খুযে আজো পাচ্ছে না ওজিহা।
হঠাৎ ওজিহার মামা অসুস্থ হওয়ায় তাকে তার মামার বাড়িতে যেতে হবে।তখন মামুর কাছ থেকে না হয় যানা যাবে আসল রহস্য।
কাল ভোর ভোর তাকে বেরিয়ে পরতে হবে, প্রায় দুই ঘন্টার রাস্তা পাড়ি জমিয়ে তারপর মামার বাড়ি পৌছবে ওজিহা।তাই আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছে সে।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে, হঠাৎ তার রুম জুড়ে ছড়িয়ে পরে আতরের ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণ ওজিহার নাকে জেতেই লাফিয়ে উঠে পর সে আবছা ধৌয়া ওজিহা একটি অবয় দেখেতে পায় যা দেখে তার মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠে।সেই অবয়টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওজিহা বলে,

“মা তুমি এসেছো….!
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here