বিষাক্ত ছোঁয়া🍁,পর্ব:০৩
মাহিয়া_মেরিন
🍁সকালে…
জাইমা ঘুম থেকে উঠেই দেখে মেঘ পড়ার টেবিলের উপর বসে তার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।। মেঘের ঘোলাটে লাল ওই চোখগুলো কেনো জানি বারবার আকর্ষণ করছে জাইমাকে।।
–মেঘ,,এদিকে আয়((হাত দিয়ে ইশারা করে ডেকে))
মেঘ দ্রুত গতিতে টেবিল থেকে লাফ দিয়ে এসে জাইমার পাশে বসলো।। মেঘের এই অদ্ভুত আচরণটা জাইমার মনের কোণে একটু সন্দেহের দাগ কাটলেও পর মুহূর্তে ভাবে,,,”””মেঘ কারো পালিত বিড়াল ছিলো বলেই হয়তো ডাক দিতেই সাথে সাথে চলে এসেছে।।””
ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসে মেঘের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে জাইমা। এমন সময় জাইমার বাবা রুমে প্রবেশ করে।।
–মামুনি,,,কি খবর তোমার???(বাবা)
–এইতো বাবা,,,ভালোই।। তোমার??
–আমিও ভালো।। ((মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে)) এটা কি তোমার নতুন ফ্রেন্ড??
–((মুচকি হেসে)) জি বাবা। তার নাম রেখেছি,,, মেঘ।।
–বাহহ!! খুব সুন্দর নাম।।
যাই হোক,,তোমার আম্মুর কাছে শুনলাম,,,কাল নাকি মাঝরাতে তুমি একা একা ছাদে বসে ছিলে।। কোন সমস্যা হয়েছে মা??
–((কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল।। বাবাকে কি সত্যি কথাগুলো বলে দিবো??? নাহ,,বাবাকে বলা যাবে না।।)) কোন সমস্যা নেই বাবা। রাতে হঠাত ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।। তাই ভেবেছিলাম একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি। এটাই।।
–আর তোমার মা,,এই ছোট বিষয়টাকে এতো বড় করে তুলে ধরেছে।। যাক,,তাও তুমি আর এতো রাতে একা ছাদে যেও না।। জানোই তো,,তোমার মায়ের এসব পছন্দ না।।
–((মনে মনে খুব বিরক্ত প্রকাশ করলেও মুখে একটু হাসি দিয়ে)) ঠিক আছে বাবা।।
–((কপালে চুমু দিয়ে)) আমার লক্ষি মামুনি। আচ্ছা,,আমি এখন যাই।। জিহানের সাথে মারামারি করো না কিন্তু।।
–হুম,,হুম। ঠিক আছে।।
🍁
ড্রইং রুমে বসে বসে জাইমা আর জিহান টিভি দেখছে।। এই সুযোগে শারমিন বেগম চুপিচুপি জাইমার রুমে প্রবেশ করে শাড়ির আঁচল থেকে একটা তাবিজ বের করে জাইমার খাটের আড়ালে এমন ভাবে রেখে দেয় যেন কেউ বুঝতে না পারে। তারপর বিরবির করে কিছু একটা পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে চলে আসেন।।
–এখন হুজুরের কথা মতো তাবিজটা কাজ করলেই হয়।।((বিরবির করে))
হঠাত বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে,,,কেউ একজন একনাগাড়ে বেল বাজিয়েই যাচ্ছে।।। জাইমা বিরক্তি মুখে দরজার দিকে একবার তাকিয়ে,,,,,
–এই জিহান। দেখ তো কে এসেছে।।(জাইমা)
–আপুনি,,,তুমি গিয়ে দেখো।জিহান)
–((মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে))হুহহ!! ফাজিল ছেলে কোথাকার।।
ড্রইং রুম থেকে দরজার সামনে এগিয়ে আসতেই জাইমা হঠাত করে থেমে যায়।। তার কাছে মনে হলো,,,ডাইনিং টেবিলের উপর একটা কালো ছায়া পা দুলিয়ে বসে আছে।। কিন্তু সেদিকে ফিরে তাকাতেই দেখে কেউ নেই।। হয়তো মনের ভুল। এদিকে কেউ একজন বারবার কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে।। জাইমা বিরক্তি মুখে দরজা খুলে দেখে,,,দরজার ওপাশে কেউ নেই। উল্টো একটা ঠান্ডা বাতাস এসে জাইমার গায়ে স্পর্শ করায় সে শিউরে উঠে।। অদ্ভুত সেই বাতাস গায়ে লাগায় বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে জাইমা। এটা কি ছিলো???আর কলিং বেল কে বাজাচ্ছিল?? হয়তো কেউ মজা করে এমন করেছে।।
দরজা বন্ধ করে একটু এগিয়ে আসতেই আবার কলিং বেল বেজে ওঠে।। মুহূর্তেই রাগ উঠে যায় জাইমার।। দরজা খুলেই একটা ঝাড়ি দিবে এমন সময় দেখে ওপাশে পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন।।
–আরে জাইমা,,,,তোমার মা বাসায় আছে??
–জি আন্টি।। আপনি ভেতরে আসুন।।।
–((শারমিন বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে)) কে এসেছে জাইমা??
–((শারমিন বেগমের সামনে গিয়ে))আমি এসেছি।। এই নাও মিষ্টি।।
–কিসের মিষ্টি আপা??((শারমিন))
— আমার বড় মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।।
–আলহামদুলিল্লাহ।। খুব ভালো লাগলো শুনে।।
জাইমা এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলো। তারপর চুপিচুপি মিষ্টির বাটি নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।। মিষ্টি জাইমার খুব পছন্দের। তাই আর লোভ সামলাতে পারছিলো না।।
–আরে ধুর,,,চামচ আনতেই তো ভুলে গিয়েছি।।
দৌড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে রান্না ঘর থেকে চামচ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে,,,,,,
মেঘ একটার পর একটা মিষ্টি খেয়ে যাচ্ছে।।। জাইমা অবাক চোখে মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে।। একটা বিড়াল কিভাবে এতো মিষ্টি খায়????
–((আহ জাইমা!!!!! ভাবি মিষ্টি আনতেই মেয়েটা বাটি নিয়েই নিজের রুমে চলে গিয়েছে।। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিনা।। একটু পরেই এসে বলবে মা আমার দাঁতে ব্যথা।।)) জাইমা!!! আর মিষ্টি খেও…((বাকি কথা আর বলতে পারলো না শারমিন বেগম))
রুমে ডুকেই দেখে টেবিলের উপর বসে মেঘ একটার পর একটা মিষ্টি খেয়ে যাচ্ছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে জাইমা অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।।। শারমিন বেগম চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে জাইমার হাত টেনে রুমের বাইরে নিয়ে আসে। আচমকা এমন করায় জাইমা কিছুটা ভড়কে যায়।।
–কি হয়েছে?? এভাবে টেনে নিয়ে আসলে কেনো??
–জাইমা,,,,এই বিড়ালটা কোন সাধারণ বিড়াল না।। আজকেই তাকে বাসা থেকে দূরে কোথাও ফেলে দিতে হবে।
–কি আজেবাজে বলছো??
–এটা একটা জ্বীন।।। জ্বীন বিড়ালের আকৃতি ধারণ করে থাকতে পারে।। আর জ্বীনের প্রিয় খাবার কিন্তু মিষ্টি।।
–মেঘ মিষ্টি খাচ্ছে,,,তাই বলে সে জ্বীন হয়ে গেলো?? এসব বাজে কথা বাদ দাও।। মেঘের হয়তো খুব ক্ষুধা লেগেছে তাই সে মিষ্টি খাচ্ছে।
–জাইমা,,,আমার কথাটা….((বাকি কথা বলতে না দিয়েই জাইমা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়))
খাটের উপর বসে মেঘের দিকে তাকিয়ে শারমিন বেগমের বলা কথাগুলো ভাবছে জাইমা।। কথাগুলো সে একদম বিশ্বাস করেনি তা না।। তবে শুধু মাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে মেঘকে দূরে ফেলে আসা তার পক্ষে সম্ভব না।। তাছাড়া শারমিন বেগম তার উদ্দেশ্য পূরণে জাইমাকে মিথ্যাও বলতে পারে।।
— যদি কথাগুলো সত্যি হয়?? মেঘ যদি সত্যিই একটা জ্বীন হয়???? কিন্তু মেঘ জ্বীন হলে তো আমার ক্ষতি করতো,,,কিন্তু সে তা করছে না।।।
এক মিনিট,,,কাল রাতে ছাদে আমার পাশে মেঘও ছিলো।। আমার সাথে প্রতিদিন রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পিছনে মেঘ নেই তো??এমন তো হতে পারে,,,,মেঘ জ্বীন রূপে আমার ক্ষতি করতে চাইছে??!!!(জাইমা)
🍁রাতে…..
খাটের উপর নিথর হয়ে পড়ে আছে জাইমা। অনেক চেষ্টা করেও একচুল নড়তে পারছে না সে।। পড়ার টেবিলের উপর মেঘ ঘুমিয়ে আছে।। হঠাত চারপাশ থেকে একটা বাজে গন্ধ এসে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।। জাইমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এই গন্ধে। একটা বিশাল আকৃতির কালো ছায়ার মতো ভয়ংকর এক অবয়ব ধীরে ধীরে জাইমার খুব কাছে চলে আসে। গন্ধটা এই অবয়বের শরীর থেকেই আসছে,,,তার সারা শরীরে কালচে রক্ত মাখা আর চামড়া কেমন যেন মাছের আঁশের মতো।।
অবয়বটা জাইমার শরীরে বাজে ভাবে স্পর্শ করতে থাকে। জাইমার চিৎকার করার ক্ষমতাও এখন নেই,,,তার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ আসছে না,,,শুধু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। এদিকে অবয়বটা জাইমার গায়ের ওরনাটা টান দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। যখনই জাইমার জামায় হাত দিতে যাবে ঠিক তখন কেউ একজন অবয়বটাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দেয়। জাইমা কোনমতে উঠে বসে বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে। সে দেখতে পায় বিশাল আকৃতির একটা ছায়া তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। ছায়াটা জাইমার দিকে তাকাতেই দেখে তার চোখগুলো ঘোলাটে লাল রঙের একদম মেঘের চোখের মতো।।।।।
এদিকে সেই ভয়ংকর অবয়বটা আরবী ভাষায় চিৎকার করে কিছু কথা বলছে আর জাইমার সামনে দাঁড়ানো ছায়ার আকৃতিটাও আরবীতে কিসব বলছে। একপর্যায়ে সেই ভয়ংকর অবয়বটা অদৃশ্য হয়ে যায়।। আর ছায়াটাও রুমের জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায়।।।
জাইমা এখন একটা শকের মধ্যে চলে গিয়েছে।। কিছু একটা ভেবে পাশে ফিরে দেখে মেঘ নেই!!
মানে শারমিন বেগমের কথাই সত্য।। মেঘ একটা জ্বীন।।। এখন কি করবে জাইমা??
–কি চায় তারা আমার কাছে?? এসব কথা আমি কাকে বলবো?? আচ্ছা,,হুজুর পরামর্শ নিলে কেমন হয়? তবে তার আগে আমার বাবাকে সব বলতে হবে।।।
–চলবে🍁