বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৭
লেখক_ঈশান_আহমেদ
রিধিকা আমার সামনে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু বলবে?(আমি)
সরি!(রিধিকা)
কিসের জন্য?(আমি)
আসলে আমি আজকে বেশি করে ফেলেছি।(রিধিকা)
নেক্সট টাইম এমন করবে নাহ্।(আমি)
আচ্ছা একটা কথা বলব?(রিধিকা)
হুম বলো।(আমি)
আপুর সাথে কি আপনার কোন সম্পর্ক আছে?(রিধিকা)
ম্….মানে কি বলছো?(আমি)
না আসলে সেদিন রাতে দেখলাম আপনি যখন আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন তখন আপু আপনার রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছিল।এটা আমি আপনাকে আগেই জিগাসা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।(রিধিকা)
ওহ্ আচ্ছা।ওইদিন তো আমি রুমে ছিলাম নাহ্।(আমি)
মানে?(রিধিকা)
হ্যাঁ আমি তো তোমাদের ছাদে হাঁটতে গেছিলাম।আমাকে যেই রুমটায় থাকতে দিয়েছিলে ওটার পিছনে তো ছাদে যাওয়ার একটা সিঁড়ি আছে।আর হয়তো ভাবি কোন কারণে দরজা লাগিয়ে ছিল।সেটা তুমি ভাবির থেকে শুনে নিও।আমি বলতে পারি না।(আর কত মিথ্যে বলব)
ওতো রাতে ছাদে গিয়েছিলেন?(রিধিকা)
হুম আমার রাতে ছাদে হাঁটতে ভালো লাগে।(আমি)
ওহ্।(রিধিকা)
রিধিকা কিছু না বলে চলে গেল।ও কি কিছু আন্দাজ করেছে!নাকি জা্স্ট জিগাসা করল!
হোটেলে চলে আসলাম।রিধিকার কথায় কেমন জানি লাগছে।ও কি কিছু জেনে গেল।আর ভালো লাগছে না আমার।আমি কেন মায়াবীনিকে ভুলতে পারছি নাহ্!আমি ও কে ভুলে যেতে চাই।আল্লাহ প্লিজ হেল্প মি!
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।রুমে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছি।কলিংবেলের আওয়াজে বাস্তবে ফিরলাম।দরজা খুলে দেখি রিধিকা দাঁড়িয়ে আছে।
তুমি এখানে?(আমি)
রিধিকা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
মি.চৌধুরী আমি সবটা জানতে চাই।(রিধিকা)
মানে কি বলছো তুমি?(আমি)
আপনার আর আপুর ব্যাপারে সবটা জানতে চাই!(রিধিকা)
আমি রিধিকার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।আমি দরজার আড়াল থেকে সেদিন সবটা শুনে ছিলাম।আর আমি ভালো করেই জানি আপু আর আপনার মাঝে একটা সম্পর্ক ছিল।যেটা আপনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন!(রিধিকা)
দেখো রিধিকা…..(আমি)
রিধিকা আমাকে থামিয়ে দিল।
আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না।আর আপনি যদি আমাকে কিছু না বলেন।তাহলে আমি জিজুকে ইনফেক্ট বাড়ির সবাইকে সবকিছু জানাতে বাধ্য হবো।(রিধিকা)
না এমনটা করো নাহ্।আমি তোমাকে সবটা বলব।তবে এই রুমের মধ্যে না।তোমাকে আর আমাকে এই রুমে কেউ দেখলে বাজে মন্তব্য করতে পারে।যা আমার শুনতে ভালো লাগবে নাহ্।(আমি)
রিধিকাকে নিয়ে হোটেলের ছাদে চলে আসলাম।কেউ নেই ছাদ সম্পূর্ণ খালি।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলাম,
আমার সাথে নিধিকার রিলেশন শুরু হয় ভার্সিটি থেকে।আমরা একে অপরকে ভিষণ ভালোবাসতাম।আমি ভালোবাসতাম ঠিকই কিন্তু তোমার আপু ভালোবাসতো নাকি তা আমার অজানা।দুজনে একসাথে কত ঘুরে বেরিয়েছি।চার বছরের রিলেশন।কত হাসি,কান্না,ঝগড়া,কথা বলে না থাকা মিলিয়ে একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল।অনার্স কমিপ্লিট হওয়ার পরেই বাবা আমাকে MBA করার জন্য কানাডায় যেতে বলব।আমিও বাবার কথায় আর ভাইয়ার চাপে কানাডায় যেতে রাজি হলাম।তবে জানো আমি যেইদিন কানাডায় যাই তোমার আপু আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কেঁদেছে।এর আগে ও কখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে নাই।আমাদের প্রেমে কখনোই কোন অসভ্যতা ছিল না।এটা তোমার আপুর কথা ছিল।ওই বলেছিল আমি শুধুমাত্র ওর হাত স্পর্শ করতে পারব।আমিও এর বাইরে কখনো ওর কাছে কোন বাজে আবদার করিনি।তবে সেদিন ও নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।মনে হয় ছেড়ে দিলেই আমি অনেক দূরে চলে যাবো।তবে সেই বাঁধন ভেঙে আমার ঠিকই কানাডার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া লেগেছিল।কানাডায় যাওয়ার পরে এক বছর আমাদের রিলেশন ঠিকঠাক ছিল।কিন্তু এক বছর পাড় হওয়ার পরে আমাদের দুরত্বটা বেড়ে যায়।নিধিকাকে কল করলে রিসিভ করতো না,করলেও অল্প কথা বলে ফোন কেটে দিতো,আমাকে ইগনোর করা শুরু করল।এমন এক সময় আসল আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে দিয়ে দিল।সব জায়গা দিয়ে আমাকে ব্লক করে দিল।আমি কত বোকা! আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমার উপরে রাগ করছে তাই এমনটা করছে।এই আশা নিয়ে বছরটা পাড় করে দিলাম।তারপরে তো দেশে এসে যা দেখলাম!আমার জীবনের সবচেয়ে স্পেশাল সারপ্রাইজ পেয়েছি।
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।রিধিকার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
আপু এমনটা কিভাবে করল?আমি তো ভাবতেই পারছি না।আর আমার বিশ্বাসও হচ্ছে না আপু এমনটা করেছে!আচ্ছা আপনি আপুর সাথে কথা বলেননি এই বিষয়ে?(রিধিকা)
সেদিনে আমার রুমে এসে বলেছিল,ওর নাকি একজন সঙ্গীর খুব প্রয়োজন ছিল।তার জন্যই তো এতো বছরের সম্পর্ক ভেঙে নতুন সম্পর্কে জড়ালো।আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো যার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে সে হলো তার প্রাক্তন প্রেমিকের বড় ভাই।(আমি)
আপুর হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।প্লিজ নিজেকে সামলে নিন।তবে আমার মনে হয় না আপু এমনটা করবে।আমি প্লিজ আপুর সাথে কথা বলেন।আমি বললে আপু কখনোই কিছু স্বীকার করবে।(রিধিকা)
সব কিছু এতো সহজ না রিধিকা।কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসলে তাকে ভুলে থাকাটা অনেকটাই কঠিন।আর যদি সে থাকে চোখের সামনে তাহলে আর কি বলব!আর ওর সাথে কথা বলার আমার কোন ইচ্ছা নাই।আর বলেও কি বা হবে আমি তো আর ও কে পাবো নাহ্।আচ্ছা চলো ওরা সবাই হয়তো চলে এসেছে।আর কালকে আমাদের ফিরতে হবে!আর চোখ মুছে নেও নাহলে সবাই ভাববে আমি হয়তো তোমাকে থাপ্পড় মেরে মেরে কাঁদিয়েছি।(আমি)
রিধিকা চোখ মুছে আমার সাথে ছাদ থেকে নেমে আসল।
সকালবেলা,
বাসে উঠে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।তবে রিধিকার মুখটা মলিন।তার মুখে কোন হাসি নেই।
কি হয়েছে রিধিকা?(আমি)
আমি না কিছুতেই এগুলো মানতে পারছি না।যেই আপুকে আমি আমার আইডল মানতাম সে এমন করবে!(রিধিকা)
রিধিকা এগুলো ভুলে যাও।আর হ্যাঁ তুমি যে সবটা জানো তা যেন মায়াবীনি না মানে ভাবি না জানে!(আমি)
মায়াবীনি!(রিধিকা)
হুম।নিধিকাকে ভালোবেসে ডাকতাম।(আমি)
ভালোবাসা অনেক কষ্টের তাই না?(রিধিকা)
সব ভালোবাসা তো আর কষ্টের না।মানুষটা সঠিক হলে ভালোবাসা কখনোই কষ্টের না।আর যদি সঠিক না হয়…….(আমি)
আর কিছু বললাম নাহ্।
থাক এইসব বাদ দিন।ওয়েট।আমি কফি এনে দিচ্ছি আপনাকে!(রিধিকা)
রিধিকা কফি দিয়ে পিছনের সিটে বান্ধবীদের কাছে চলে গেল।আমি কফি পেয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।সারারাত ঘুম হয়নি।
–
–
–
–
রিধু তুই এমন মনমরা হয়ে আছিস কেন?(তিশা)
কই না তো এমনি ভালো লাগছে নাহ্।(রিধিকা)
আরে আরাভকে মেইবি পটাতে গেছিল পারেনি তার জন্য মন খারাপ।দেখছিস না কালকে থেকে ওর সাথে থেকে নড়ছেই নাহ্।(তমশা)
তমশা সবাইকে নিজের মতো ভাবা বন্ধ কর।আর তোকে এগুলো বলেও লাভ নেই।তোর মাথায় তো এইসব ছাড়া কিছু নেই।তাই সবাইকে তোর মতো ভাবতে ভালো লাগে!(রিধিকা)
রিধু বেশি বলে ফেলছিস কিন্তু!(তমশা)
তমশা তুই চুপ কর।আর রিধু কি হয়েছে বল আমাদের।(মিহি)
কিছুই হয়নি।জাস্ট মুড অফ।(রিধিকা)
কেন রে কি হয়েছে?(তিশা)
আরে বাবা কালকে যা কুকর্ম করছিলাম তমশা তা আম্মুকে জানিয়ে দিছে।আম্মু অনেক বকছে।(রিধিকা)
তমশা এটা করা কি তোর ঠিক হয়েছে?(মিহি)
সত্যিটা জানানো উচিত তাই জানিয়েছি।(তমশা)
তোকে আমাদের লিস্ট থেকে বাদ দিতে হবে।(তিশা)
দে তাতে আমার কিছু যায় আসে নাহ্।(তমশা)
কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙল।তাকিয়ে দেখি তমশা।
এখানে কি?(আমি)
আপনি এভাবে ঘুমিয়ে আছেন ঘাড়ে ব্যাথা হতে পারে।(তমশা)
সেটা তো আপনাকে কেউ দেখতে বলে নাই।আপনি গিয়ে আপনার কাজ করুন।(আমি)
আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে!(তমশা)
হুম বলুন।(আমি)
আমি তো আপনাকে তুমি বলতে বলছিলাম!(তমশা)
আপনি কি বলবেন সেটা আগে বলুন।(আমি)
আমরা তো আজকে যে যার বাসায় চলে যাবো তাই না।(তমশা)
হুম।(আমি)
আপনার সাথে আমার আর দেখাও হবে না।আমি আপনাকে ভালোবাসি আরাভ।(তমশা)
আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম,
আমি কিন্তু আপনাকে ভাইয়া বলতে বলছিলাম।(আমি)
তমশা ভয়ে বলে দিল,
আই লাভ ইউ আরাভ ভাইয়া।(তমশা)
হুম ঠিক আছে।ভাই হিসেবে ভালোবাসাই যায়।(আমি)
তমশা আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
কি দেখছেন এভাবেন!ওহ্ আচ্ছা।আমিও তোমাকে ভালোবাসি বোন।(আমি)
তমশা আর না দাঁড়িয়ে বাসের পিছনে চলে গেল।
ওয়াও!প্রেমিকা হতে গিয়ে বোন হয়ে ফিরে আসলি।(রিতি)
চুপ কর তোরা।(তমশা)
আমি আগেই বলেছিলাম উনাকে পটাতে পারবি নাহ্।(রিধিকা)
আসলেই যা রাগী।চোখ রাঙানো দেখে আমি ভয়ে ভাইয়া বলে ফেলছি।(তমশা)
তমশার কথায় সবাই হাসতে হাসতে শেষ।আমিও মুচকি হাসলাম।এইসব প্রেম-ভালোবাসায় আমার আর বিশ্বাস নেই।
–
–
–
বাসায় চলে আসলাম।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি।মিশ্রি ভাবি আমার রুমে কফি নিয়ে আসল।
আপনি কফি নিয়ে আসলেন কেন!(আমি)
ইচ্ছা হলো তাই।(মিশ্রি)
আমি ওর হাত থেকে কফিটা নিলাম।এখন আর ঝামেলা করব না।যতই হোক সে এখন আমার ভাবি।তার সাথে বাজে ব্যবহার করা ঠিক নাহ্।মিশ্রি কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।হয়তো কিছু বলতে চেয়েও বললো নাহ্।
কফি খেয়ে নিচে গেলাম।রাতের খাবার শেষ করে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি।
কালকে মিশ্রিদের বাড়িতে আমাদের সবার নিমন্ত্রণ।(ভাইয়া)
যাক ভালোই হলো শুভ কাজটাও সেরে আসব।(মা)
আমি মায়ের কথার কিছু বুঝলাম নাহ্।আর বুঝার চেষ্টাও করলাম নাহ্।তবে মিশ্রির মুখে চিন্তার ছাপ।এইসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালবেলা,
পাখির কিচিরমিচির শব্দ।ফজরের আজান দিচ্ছে।অনেকদিন পরে এমন একটা সকাল দেখতে পারলাম।সাধারণত আমার সকালে ঘুম ভাঙে না।তবে আজকে ভেঙে গেল।ওযু করে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় আসলাম।এসে দেখি আব্বু সোফায় বসে আছে।আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম।
কি রে বাবা নামাজ পড়তে গেছিলি?(বাবা)
হুম আব্বু।(আমি)
যাক ভালো।শোন বাবা আমি কয়দিন বাঁচি তার ঠিক নেই।তোর মাও কয়দিন বাঁচে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।কারণ আমাদের দুজনের শরীরের এক অবস্থা।আমরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুই কষ্ট করে হলেও মেনে নিস।(বাবা)
তুমি কিসের কথা বলছো আব্বু?(আমি)
পরে সবটা জানতে পারবি।(বাবা)
আমি আর কথা বাড়ালাম না।একটু পরে মিনুর মা আমাকে আর বাবাকে কফি বানিয়ে দিয়ে গেল।কফি খেয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে বসে আছি।আনহি এসে আমার পাশে বসল।
ভাইয়া তুই কি কিছু জানিস?(আনহি)
কি জানবো?(আমি)
থাক জানা লাগবে নাহ্।(আনহি)
আনহি উঠে চলে গেল।কি শুরু করেছে এরা!এমন আজব বিয়েভ করছে কেন সবাই?
মিশ্রিদের বাড়িতে গেলাম।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বসে আছি।হঠাৎ করে আম্মু বলে উঠল।
চলবে………