#বউ চুরি
সিজন-২
পর্ব ঃ ৯
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
লিমন লাল গোলাপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মুসকানের দিকে হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ালো ইমন।
লিমনের হাসি হাসি মুখটা মিলিয়ে গেলো।
অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইমন। লিমন আবারো হাসি হাসি মুখ করে বললো কি ব্রো কিছু বলবে নাকি। বললে তারাতারি বলো বেয়ান অপেক্ষায় আছে আমার বলেই মুসকানের দিকে ইশারা করলো।
ইমন মুসকান কে এক পলক দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিলো।
অন্যের বউ এর উপর কুদৃষ্টি স্থাপন করার শাস্তি কি হতে পারে,,,
লিমন ভড়কে গেলো ইমনের কথায়। পরোক্ষনেই এক গাল হেসে বললো- মেরে ফেলো আমায় বলেই চোখ টিপ দিলো।
ইমনের মেজাজ বিগরে গেলো শুধুমাএ ছোট ভাইয়ের বউ এর ভাই বলে ঠান্ডা মাথায় কথা বলছি বেশী বাড়াবাড়ি করবি ফল খুব খারাপ হবে। বলেই যে হাতে গোলাপ ছিলো সেই হাতটা মুঁচড়ে ধরলো।
ব্যাথায় লিমন কুঁকড়ে ওঠলো ছেলেদের শক্তি থাকে তাই বলে এতোটা,,, ইমনের হাতের দিকে আবার মুখের দিকে তাকালো লিমন। আবার আশে পাশেও তাকালো। নাহ কেউ দেখছে না সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত।
হাত থেকে গোলাপটা কেড়ে নিলো ইমন।
লিমনের মুখটা চুপসে গেলো ইমনের এইরূপ দেখে।
সে রাগী বদ মেজাজী জানতো তাই বলে তার সাথেও এমন আচরন করবে ভাবতে পারেনি।
লিমন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমন সেখান থেকে চলে গেলো।
লিমন অপমানিত হয়ে আর সেখানে দাঁড়ালো না।
দিপু পুরো বিষয় টা লক্ষ করে মনে মনে বললো আগেই বলেছিলাম বাড়াবাড়ি না করতে। এখন বেয়ান, বেয়ানি খেলা হলোতো।
লীনা সব শুনে লিমনকে বললো তুই কেনো ফাজলামো করতে গেলি। জানিসইতো ইমন অন্য সবার মতো না। আর মুসকান এর ব্যাপারে বরাবরই খুবই সেনসেটিভ।
লিমন মন ভাড় করে বললো এতোটা এমন তা তো বুঝিনাই আপা।
থাক মন খারাপ করিস না। বিয়ে বাড়ি মন খারাপ করলে লোকে কি বলবে।
মুসকান মনের সুখে সবার সাথে গল্প করছে।
আর ভাবছে ভাবীর ভাই টা কই গেলো। একটু মজা করা যেতো আমার বরটাকে ক্ষেপানোও যেতো। পাগলা ঘোড়া কে মাঝে মাঝে ক্ষেপিয়ে তোলার মজাই আলাদা বলেই এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো মুসকান।
নিপুর পাশ থেকে ওঠে গিয়ে হেঁটে চলেছে হঠাৎ বাহুতে শক্ত করে চাপ অনুভব করলো। পিছন ঘুরতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
তুমি,,,
কেনো অন্যকাউকে আশা করেছিলে বলেই টেনে নিচে নিয়ে গেলো।
কি হয়েছে টানছো কেনো এভাবে ভাইয়াকে হলুদ লাগাবোতো।
ইমন কিছু না বলে মুসকান কে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। ইরাবতী দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে দীপান্বিতা কে বললো ছেলেটা মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি ই করে।
কেনো ভাবি কি হলো,,,
মেয়ে টা সেজেছে বলে নিশ্চয়ই পছন্দ হয়নি। বাইরে সাজগোজ করতে দেয়না ঠিক আছে ভিতরে কি সমস্যা।
বাচ্চা টা নষ্ট হওয়ার পর ওদের সম্পর্ক আবারো কেমন হয়ে গেছে বলেই দীপান্বিতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
ইরাবতী বললো আবারো বাচ্চা নিলে হয়তো ওদের সম্পর্ক নতুন করে ঠিক হবে। তুই মুসকান কে বুঝিয়ে বলিস।
হ্যাঁ আমিও সেটাই ভেবেছি।
মুসকানকে ভিতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো ইমন।
এই দৃশ্য ইরাবতী, দীপান্বিতা ছাড়াও চোখে পড়লো শুভর কারন শুভ ও মুসকানকে লক্ষ করছিলো।
মুসকান কে দেখার পর থেকে তার মনেও মুসকানের প্রতি আলাদা এক ভালো লাগার সৃষ্টি হয়েছে। বার বার সুযোগ খুঁজ ছিলো মুসকানের সাথে কথা বলার তার আগেই ঘটে গেলো এমন ঘটনা যা দেখে শুভর বেশ খটকা লাগলো। কোনভাবেই হিসেব মেলাতে পারছে না শুভ।
মুসকান চেঁচিয়ে বললো কি হয়েছে এভাবে কেনো নিয়ে এলে।
ইমন মুসকান কে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো পিছন ঘুরিয়ে শাড়িতে লাগানো পিন খুলে ফেললো।
মুসকানের বুকে ধক করে ওঠলো। এমন সময় এমন ঘটনা তার ভাববার বাহিরে।
কি করতে চাইছে ও মনে মনে ভয় কে চেপে বললো কি করছো,,,
একটানে শাড়ী খুলে ছুঁড়ে ফেললো ফ্লোরে। মুসকানের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো এসব কি করছো,,,প্লিজ এখন এমন করোনা।
সামনের দিকে ঘুরিয়ে কোমড়ে শক্ত হাতে চেপে ধরলো ইমন। মুসকানের পুরো শরীরে এক ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠলো।
নিজের সাথে চেপে ধরে ব্লাউজের ফিতায় এক টান দিলো,,, মুসকানের গলা শুকিয়ে গেলো। বুকের ভিতর শীতল শিহরন বয়ে গেলো সেই সাথে জমলো ভয়।
যে শাড়িতে, যে সাঁজে,পরপুরুষের চোখ আটকে যায় সেই শাড়ি সেই সাঁজ তুই সাঁজবি না।
মূহুর্তেই সব অনুভূতি হাওয়ায় উড়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বললো মানে,,,
ইমন মুসকানের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো শাড়িটা চেঞ্জ করে সেলোয়ার পড়ে সব সাঁজ মুছে আমার সামনে এসো।
ইমন ছেড়ে দিলো মুসকান কে মুসকান কান্না চেপে শাড়ি পালটে সেলোয়ার-কামিজ পড়ে ইমনের সামনে এসে দাঁড়ালো।
ইমন মুসকানের দিকে এগিয়ে এলো খোঁপা টা খুলে চুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে মাথাটা খানিকটা কাছে নিয়ে এলো।
মুসকান মুখ ভাড় করে চোখ সড়িয়ে নিলো।
খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই, বলেই মুসকানের ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো। মুসকান ইমনের বুকে একহাতে শক্ত করে ধাক্কা দিতেই চুল ছেড়ে মুসকানের দুহাত শক্ত হাতে চেপে ধরলো।
বেশকিছুক্ষন পর ঠোঁট ছেড়ে পিছন দিক ঘুরিয়ে বুকের সাথে মুসকানের পিঠ ঠেকালো।
মুসকান ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে যা দেখে ইমন মুসকানের ঘাড়ে তার দাঁড়ি ঘষতে লাগলো। মুসকান আরো দ্বিগুন কেঁপে ওঠলো।
লিপস্টিক টা যদি তোমার মুছতে এতোই কষ্ট হয় তো আমি এভাবেই মুছে দিবো।
মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস ফেলতে লাগলো। হাত,পা চোখের পাতা কাঁপতে শুরু করেছে তার। এতোগুলো মাস বাদে ইমন আবারো তার এতো কাছে। ইমনের প্রত্যেকটা স্পর্শই তার কাছে নতুন মনে হয়। আজ যেনো রাগের বশে ইমন মুসকানকে কাছে টেনে নিজের অজান্তেই ভালোবাসা মেখে দিয়েছে। যা ভাবতেই মুসকানের হৃদয়ে বার বার কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে।
সেই সাথে ইমনের ঘোর লাগা স্পর্শ খুব করেই টের পাচ্ছে।
আমাকে এভাবে দেখে দূরে থাকতে না পেরে এই ছুঁতোয় কাছে টেনে এভাবে আদর করছো,,,
যদি শুধুই রাগ হতো তাহলে তো শুধু শাড়িটাই পাল্টাতে বলতে এভাবে কি কাছে আসতে মনে মনে কথাগুলো ভেবে মুসকান মুচকি হেসে দিলো।
এশা আর রিপা মুসকান কে ডাকছে ডাক শুনে ইমন ছেড়ে দিলো মুসকান কে। মুসকান হাঁপাতে হাঁপাতে খানিকটা দূরে দাঁড়ালো।
ইমন টিস্যু দিয়ে নিজের মুখ মুছে মুসকান কে টিস্যু দিলো। আর বললো সবসময় ভাবীদের আর মা কাকিদের সাথেই থাকবে। লিমন কে বা অন্যকাউকে যেনো তোমার আশে পাশে না দেখি বলেই ইমন দরজা খুলে দিলো।
লিমন মানে তার মানে কি লিমনের আমার দিকে তাকানোটা বুঝে গেছে,,, ওরে বাবা এতো দেখি সাংঘাতিক এর উপরেও সাংঘাতিক। ওরে মুসকান একে কিভাবে জ্বালাবি তুই,,,একে জ্বালাতে গিয়ে তো নিজেই জ্বলে পুরে ভষ্য হয়ে যাবি। পাগলা ঘোরাকে ক্ষেপানোর আগেই এই অবস্থা ক্ষেপালে না জানি কি হতো। ভাগ্যিস বেঁচে গেছি যে টের পায়নি আমি ওকে জ্বালাতে চাইছিলাম তাহলে আমার কপালে শনি ছিলো নিশ্চিত।
রিপা বললো কি ব্যাপার দরজা লাগিয়ে কি করো। বিয়েকি নিপুর না তোমার আর তোমার বউ এর বলেই ভ্রূ নাচালো রিপা।
ইমন বাঁকা হেসে বললো মুসকান শাড়ি সামলাতে পারছিলনা তাই আর কি বললাম সেলোয়ার পড়ে নিতে।
ও বাবা তা সেলোয়ার কি তুমি পড়িয়ে দিলে নাকি,,,
এশা লজ্জা পেয়ে চলে গেলো হাজার হলেও ইমন তার ভাসুর হয়।
ইমন বললো কেনো ভাবী পড়িয়ে দিলে সমস্যা কোথায় বলেই বাঁকা হেসে চলে গেলো।
রিপা ইমনের কথায় হা হয়ে ভিতরে ঢুকলো।
মুসকানকে গিয়ে বললো কি ননদিনী বরের সাথে প্রেম করা হলো এবার চলেন আপনার ভাইকে হলুদ লাগাতে হবে তো।
মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো লজ্জা ভরা মুখ করেই বললো চলো।
রূপম দুদিন আগে এসেছে ইমন আর রূপম দুজন মিলে বাড়ির পিছনে গেছে। বাড়ির পিছনে খোলা জায়গায় দুজন সেই ছোট থেকেই আড্ডা দেয়। আজো তার ব্যাতিক্রম হলো না দুজনই চলে গেলো বাড়ির পিছনের পুকুর ঘাটে। ইয়াবড় শিমুল গাছের নিচে দুজনই বসলো। রূপম একটা সিগারেট ধরালো ইমনও ধরালো।ইমন সিগারেট না খেলেও আজ রূপমের সাথে খাচ্ছে আর গল্প করছে।
নিপুর জন্য বাটা হলুদ নিয়ে এলো রূপমের মা রূপালী। হলুদ সামনে নিয়ে সকলেই বসে আছে।
মুসকান বললো আমি আগে দিবো, আমি আগে দিবো।রিপা আর এশা বললো আচ্ছা দেও। নিপু বললো এই অল্প দিস কিন্তু,,,
মুসকান হলুদ নিতেই সীমা,আর মেঘা কানাঘোসা শুরু করলো।মিম আর লীনার মুখটাও চুপসে গেলো।
রূপালী, ইরাবতী, দিপান্বীতা,ঝুমুর, নাসরিন সবাই এসে মুসকানের হাতে হলুদ দেখে মুখ ভাড় করে ফেললো।
রূপালী আতঙ্ক কন্ঠে বলে ওঠলো একি তোমার হাতে হলুদ কেনো।
মুসকান খুশি খুশি মুখ করে বললো হলুদ মাখাবো তাই বলেই নিপুর গালের দিকে হাত বাড়াতেই নাসরিন গিয়ে হাত ধরে ফেললো। আতঙ্ক কন্ঠে বললো একি কি করছো।
সব ভাবীরা মুখ ভাড় করলেও এশা আর রিপা অবাক হয়ে বললো কেনো কি হয়েছে কাকি।
নাসরিন কিছু না বলে চুপ রইলো। নিপু বললো কি হয়েছে মা?
ইরাবতী, দীপান্বিতা ভয়ে কিছু বলতে পারলো না। স্তব্ধ হয়েই দাঁড়িয়ে রইলো মুসকান অবাক হয়ে বললো কি হয়েছে সবার মুখ এমন কেনো।
রূপালী বললো তুমি হলুদ লাগিও না মুসকান তোমার হলুদ লাগানো যাবে না।
মুসকান মুখটা ভাড় করে বললো কেনো? নিপু ও বললো কেনো ও লাগালে কি সমস্যা।
এশা আর রিপা এবার বুঝতে পারলো এরা সবাই কেনো এমন কথা বলছে।
ঝুমুর মুখ ফসকে বলে ফেললো প্রথম সন্তান মারা গেলে বা যার প্রথম সন্তান নষ্ট হয় তার হলুদ লাগানো নিষেধ। এতে বর বা বউ এর অমঙ্গল হয়। অশুভ ছায়া পড়ে। তাদের সাথেও যদি এমন ঘটনা ঘটে,,,
দীপান্বিতা চাপা গলায় বললো ছোট ভাবি,,,
মূহুর্তেই সকলের মুখে কালো ছায়া নেমে এলো।
মুসকানের বুকের ভিতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল কথা গুলো শুনে। পুরো হাত পা তার অবশ হয়ে যাচ্ছিলো।
কলিজাটা একদম ফেটে যাওয়ার উপক্রম। কোনরকমে নিজেকে সামলে জোর পূর্বক হেসে কাঁপা গলায় বললো ভাবী তোমরা দাও তাহলে।
মুসকান চলে যাচ্ছিলো নিপু জোর গলায় বললো মুসকান তুই আমায় হলুদ দিবি আমি এসব বিশ্বাস করিনা। তোর মতো মেয়ে অশুভ হতে পারেনা।
ইরাবতী মুসকানকে পিছন পিছন ডাকলো তবুও
মেয়েটা দাড়ালো না।
নিচে নেমে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ইরাবতী দিপান্বিতা এশা,রিপা সবাই এসে দরজায় শব্দ করতে লাগলো।
চলবে……